এল_এ_ডেইস পর্ব ২৩

0
278

#এল_এ_ডেইস
পর্ব ২৩
লেখনী মাহীরা ফারহীন

মরুর বুক চিরে টানা চলেছে বাস। শুষ্ক মরু অঞ্চল ছেড়ে সবুজ অভয়ারণ্যও পার হলো এক সময়। পরের দিন সকাল সাতটার দিকে টেক্সাস অতিক্রম করেছে। এখন প্রায় ঘড়িতে দুপুর দুইটার কাটা ছুঁই ছুঁই করছে। ওরা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই পিনাকেল মাউন্টেইন পৌঁছে যাবে।প্রায় আধঘন্টা পূর্বে বাস আরকানসাসে প্রবেশ করেছিল। বাসের মধ্যে সকলেই ব্যস্ত হয়ে নিজের নিজের জিনিস পত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। অনেকের জুতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তো অনেকের হেডফোন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সামনের দিকে একটা মেয়ের পরনে ছিলো অদ্ভুত ঝুলমুলে জামা। সেটা নাকি সিটের চিপায় কোনো ভাবে আটকে গিয়েছে বলে ভালোই কোলাহল হচ্ছে সেখানে। র‌্যবিট ও লেক্সি নিজেদের মস্ত সাউন্ড বক্সটাকে প্যাকেট করতেই হিমশিম খাচ্ছে। গত রাতে বাসের সিটে বসে ঘুমানোর ফলে অনেকেরই ঘাড়ে ব্যথা হয়েছে। ফলে বারবার ঘাড় এদিকওদিক ঘুরিয়ে ব্যাথা সারানোর চেষ্টা করছে। সকলেই প্রস্তুত হয়ে বসে আছে। আরোও আধাঘন্টা পর বাস দুইপাশে ঘন জঙ্গলে ঘেরা বড় একটা প্রসস্থ রাস্তায় প্রবেশ করল।
মনে হয় যেন গহীন বন হঠাৎ করেই উবে গিয়ে এক প্রসস্থ রাস্তা আপনাআপনি গজিয়ে গিয়েছে। বাস আরো বেশ কিছুক্ষণ পূর্বেই এখানে পৌছে যেত কিন্তু মিইউ মেক্সিকোতে বেশ অনেকক্ষণ জামে পরেছিল বাস। বাস মাত্র থেমেছে। বাসের মধ্যে বাইরে বের হওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে। চিৎকার চেচামেচি এবং হইচই হচ্ছে ফলে কেউ পাশের মানুষটার কথাও শুনতে পাচ্ছে না। মাহীন নিজের ছোট ব্যাকপ্যাক টা কাঁধে এবং স্যুটকেসটা নিচে রেখে দাঁড়িয়ে আছে। লিম জু এখনই একটা বড় ভিডিও ক্যামেরা বের করে ভিডিও করা শুরু করেছে। র‌্যবিট ও লেক্সি খুব কষ্টে সাইন্ড বক্সটাকে প্যাকেট করে পেছনের সিট থেকে নিচে নামিয়েছে। জেনেট কিছুক্ষণ পূর্বে ওর মেকআপের বড় একটা সেট খুলে বসেছিল। সেটা এখন গুছাচ্ছে মাত্র। রায়েদের সবকিছুই গুছানো আছে। ফলে ও চুপচাপ বসে আছে। টিচাররা প্রথমে বাইরে বের হলেন। তার কিছুক্ষণ পর সকল শিক্ষার্থীকে সারিবদ্ধ হয়ে বাইরে বের হয়ে আসার অনুমতি দিলেন। সাথে সাথে একে একে প্রথম দিকে যারা ছিল তারা বের হয়ে যেতে লাগল। একে একে সকলে বেরিয়ে যাচ্ছে। মাহীন, লিম জু, ক্যারোল এবং সাইলোহ একসাথে পরপর বের হলো। ওদের বাস থেকে কয়েক গজ দূরে সামোহির আরেকটা হলুদ বাস রাখা। এই বাসটা বোধহয় আরো কিছুক্ষণ পূর্বেই পৌঁছে গেছে। বাইরে রাস্তার দুইপাশের বড় গাছগুলোর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিস্তর ডালপালা একটা প্রাকৃতিক ছাউনি তৈরি করেছে রাস্তার ওপর। তবুও ডালপালার ফাঁক ফোকর থেকে ঝুড়িঝুড়ি হয়ে রোদ উঁকি দেয়। অচেনা পাখির অনেক ধরনের সুরেলা ডাক মিলেমিশে একাকার। ছেলেমেয়েদের হইচই ছাপিয়ে যাচ্ছে সেসব সুরেলা সুমিষ্ট গান। খালি নির্জন রাস্তা ক্রমেই ছেলে মেয়েদের হইচইয়ে মুখরিত হয়ে উঠল। সকলে পূর্ণ উদ্যমে জিনিস পত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ক্যাম্পিংয়ের জিনিসপত্রও সকলে ভাগ ভাগ করে বহন করে নিয়ে চলেছে। ছেলে মেয়েদের বিশাল দলটা হেঁটেই চলেছে বেশ কিছুক্ষণ ধরে তবে রাস্তা আর শেষ হয় না। জেনেট ক্লান্ত স্বরে বলল, ‘আহ মাত্র মেকআপ ঠিক করলাম আর এখন লম্বা রাস্তা ধরে মালপত্র নিয়ে শুধু হেঁটে চলেছি।’

সাইলোহ বিরক্ত কন্ঠে বলল, ‘তুমি কি ভেবেছিলা এখানে আমরা প্রম পার্টিতে এসেছি?’
জেনেট বিরক্ত মুখে শ্রাগ করল। ক্যারোট জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কে কে ক্যাম্প করতে পারো?’

সাইলোহ শ্রাগ করে বলল, ‘কেউ না।’

নায়েল দ্রুত হেঁটে ওদের পাশাপাশি এসে বলল, ‘আমি পারি।’

লিও বলল, ‘হ্যা নায়েল তো বিভিন্ন ক্যাম্পিং ফেস্টিভ্যালে গাইড হিসেবে কতবার কাজ করেছে। ও তো পারবেই।’

‌রাবিত সাউন্ড বক্সের পুরো ভার হঠাৎ করে লেক্সির ওপর ছেড়ে দিয়ে ঘুরে পেছনের দিকে চলে গেল। লেক্সি হাতির মতো ভারি সাউন্ড বক্সটা নিয়ে টলমল করে উঠল। কোনো রকমে রাস্তায় ধপ করে রেখে দিয়ে উচ্চস্বরে বলতে লাগল, ‘র‌্যবিট ওয়াট দ্যা হেল ইজ দিজ! কোথায় গেলি। আমি এটাকে একা ধরে রাখতে পারব না।’ কিন্তু ‌‌‌‍র‌্যবিটের সেসব দিকে কান নেই। রায়েদ ইচ্ছাকৃত ভাবেই শেষের দিকে ধীরে ধীরে হাঁটছে। রাবিত পেছনে গিয়ে ওর পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলল,’ভাই তুমিও না ক্যাম্পিং করতে পারো?’

রায়েদ বলল, ‘হুম পারি। কিন্তু অনেকদিন করা হয়নি।’

র‌্যবিট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘তোমার সবই তো অনেক ধরে করা হয়নি।’

ওরা লম্বা রাস্তাটা পার করে এসেছে। সামনে জঙ্গল কমে এসেছে। এবং রাস্তাও সরু হয়ে এসেছে। আরেকটু সামনে এগোতেই একটা বড় লোহার গেট চোখে পরল। সেটা ভেজিয়ে রাখা ছিল। নকশা করা জং ধরা লোহাা গেট গুল্ম লতায় ভরে রয়েছে। টিচাররা সেটা খুলে দিতেই কর্কশ শব্দে চেঁচিয়ে উঠল। সকলে গেট পার হয়ে সারি বেঁধে ভেতরে প্রবেশ করছে। অপর পাশে কোনো গাছপালা বা জঙ্গলের চিহ্ন মাত্র নেই। সেখানে বিস্তারিত মাঠ এবং মাঠের অপর পাশে আবারও জঙ্গল। জঙ্গল পার করে দূরে পিনাকেল মাউন্টেইন দেখা যায়। পাহাড়টা কুয়াশায় ঢেকে নীলচে ধূসর পিরামিডের মতো দেখাচ্ছে। পিনাকেল পাহাড় উত্তর মাউমেল ও পশ্চিমে মাউমেল নদীর মাঝে পরেছে। এই মাউমেল নদী আবার আরকানসাস নদীতে গিয়ে মিশেছে। সকলে মাঠে প্রবেশ করেই এদিক ওদিক ছুটে যাচ্ছে। ওদের পূর্বেই আরেকটা যেই বাস এসেছিল সেটার শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে তাঁবু খাটানোর কাজ প্রায় সেরে ফেলেছে। যে যার যার পছন্দ মতো জায়গা বেছে নিলো তাঁবু খাটানোর জন্য। তাঁবুতে তিনজন করে থাকতে পারবে। এখন সাইলোহ, জেনেট, লিম ও ক্যারোটের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়েছে কে কোন তাবুতে থাকবে। মাহীন যদিও তর্কাতর্কির মধ্যে নেই। তবুও ওরা ওকেও টেনে আনছে এর মধ্যে। রাবিত ও রায়েদের একসাথে তাঁবু। এর মধ্যে লেক্সিও থাকবে। আকাশ একদম পরিষ্কার এবং গাড়ো নীল। মস্ত মাঠ জুড়ে টিয়া রঙা নরম ঘাসের চাদর বিছানো। মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। কপাল বিরক্তিতে কুঁচকে রয়েছে। অবশেষে অতিষ্ঠ হয়ে বলল, ‘আচ্ছা শোনো আমরা কয়েন ফ্লিপ করে ঠিক করবো কে কোন তাঁবুতে থাকবে।’
‘ওহ হ্যা এই আইডিয়াটা ভালো।’ সন্তুষ্ট কন্ঠে বলল লিম।

সাইলোহ সম্মতি দিয়ে বলল, ‘আচ্ছা তো কয়েন ফ্লিপ করি।’ মাহীন জিনসের পকেট থেকে ফিফটি সেন্টের পয়সা বের করল।তারপর বলল, ‘হেডস নীল তাঁবুর জন্য এবং টেলস হলুদ তাঁবুর জন্য।’

ক্যারোট বলল, ‘যদি আমাদের সকলেরই হেডস পরে? বা টেলস পরে?’

মাহীন বলল, ‘প্রথম যেই তিনজনের হেডস পরবে বা টেলস পরবে তাদের ধরা হবে।’

ওর এই বুদ্ধিতে সকলে সম্মতি জানালো। মাহীন বলল,
‘প্রথমে লিম জু।’এই বলে কয়েনটা উল্টে শূন্যে ছুঁড়ে দিল। ওটা মাটিতে পরার পর দেখা গেল টেলস। অর্থাৎ ও হলুদ তাবুতে। এবার জেনেটের পালা। ওর হেডস পরলো অর্থাৎ ও নীল তাঁবুতে। এরপর ক্যারোটের পালা। ওরও পরল হেডস। এখন শুধু সাইলোহ ও মাহীন বাকি রয়েছে। সাইলোর পরল টেলস। অর্থাৎ দুই তাবুতেই দুইজন দুইজন। মাহীন এবার নিজের জন্য পয়সাটা ফ্লিপ করলো। ওর পরলো হেডস। ক্যারোট ও জেনেট আনন্দে লাফিয়ে উঠল। সাইলোহ এবার নিরাশ কন্ঠে বলল, ‘ওফ এখন আমাদের একটা জায়গা ফিলআপ করতে অন্যকেউ আমাদের জয়েন করবে।’
জেনেট বিজ্ঞের মতো বলল, ‘পিকনিক মানেই তো মিলেমিশে থাকা এবং শেয়ার করা।’

মাহীন এবার টিপ্পনি কাটতে ছাড়লো না, ‘এতক্ষণ এটা নিয়েই আপনিও ঝগড়া করতেসিলেন।’
জেনেট ইতস্তত হাসল। নায়েল ও লিও এগিয়ে আসল ওদের তাঁবু খাটাতে সাহায্য করতে। ওদের নিজেদের তাঁবু খাটানো হয়ে গিয়েছে। নীল তাঁবুটাই খাটাতে দশ পনেরো মিনিট চলে গেল। মাহীন তাঁবু থেকে কিছুটা দূরে সরে গেল এবং নিজের সেলফোনটা বের করল। মায়ের নম্বরটা ডায়েল করে কানে ধরল। কিছুক্ষণ রিং হতেই কল রিসিভ হলো এবং ওপাশ থেকে মিসেস নাসরিনের উদ্বিগ্ন কন্ঠস্ব ভেসে এলো, ‘তুই ঠিক ঠাক পৌঁছেছিস?’
‘হ্যা মা। কিছুক্ষণ পূর্বে আমরা এখানে এসে পৌঁছেছি। মাত্র তাবু খাটানোর কাজ চলছে।’
‘দেখিস এদিকওদিক জঙ্গলের মধ্যে ভুলেও যাবে না। একা কোথাও যাবি না।’
‘মা তুমি এই উপদেশগুলো অলরেডি কয়েকশো বার বলে ফেলেছো।’
‘তাও তো তোর কানের পাশ কাটিয়ে চলে যায়।’ মাহীন চোখের মণি ঘোরাল। তারপর আরো অল্প কিছু টুকটাক কথা বলে ফোন রেখে দিলো। ওদের থেকে প্রায় পনেরো গজ দূরে রায়েদের তাঁবু। এবার মাহীন দৃষ্টি দিয়ে ওদের খুঁজে বের করে সেদিকে এগিয়ে গেল। কাছাকাছি পৌঁছে দেখল রায়েদ তাঁবুর পাশে ব্যাগের মধ্যে কিছু একটা করছে। রাবিত একটা ডোরিটোস চিপসের প্যাকেট হাতে নিয়ে ওর সাউন্ড বক্সের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মাহীন ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
‘রাবিত তোমার সাথে কিছু কথা বলবো।’
ওকে দেখেই র‌্যবিটের কপাল কুঁচকে গেল। কেমন জানি ঘাবড়েও গেল। বেশ দ্বিধান্বিত কন্ঠে বলল,’হ্যা বলো।’
মাহীন শান্ত কন্ঠে বলল, ‘রায়েদ কিভাবে জানলো আমি আসব না?’
র‌্যবিট অন্য দিকে দৃষ্টি ফেরাল। শুকনো ঢোঁক গিলে বলল, ‘আমি কি জানি। তোমার ফ্রেন্ডরা কথা বলছিল শুনেছে হয়তো।’
মাহীন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর পানে তাকাল। তীব্র গলায় শুধালো, ‘আমার তো মনে হয় না রায়েদ ওদের কাছ থেকে শুনেছে। তুমিই বলেছো তাই না? সত্যি করে বলো?’
‘আরেহ না। আমি কিছু জানি না। আমি কিভাবে বলবো?’
‘র‌্যবিট শোনো আমি জানি। আর লুকাচুরি করে লাভ নেই। আর ওর কেনো মনে হলো ওই নিতে আসলেই আমি যাবো?’
‘আমি তো জানি না। তুমি ভাইকে জিজ্ঞেস করো।’
মাহীন ভাবলেশহীন মুখে বললো, ‘ঠিক আছে তোমার ভাইকেই জিজ্ঞেস করছি। এবং সাথে আরোও জিজ্ঞেস করছি বিলের সাথে তোমার ভাইয়ের কি ঝামেলা লেগেছিল।’
র‌্যবিট চমকে উঠে উত্তেজিত কন্ঠে বলল, ‘এ্যই না! মানে…বলতে বলতে থেমে গেল। আমতা আমতা করে বলল, ‘আচ্ছা..মানে ঠিক আছে, আমিই বলছি। ভাইকে কিছু জিজ্ঞেস করার দরকার নেই।’
মাহীনের ঠোঁটের কোণের কোণে ফিচেল হাসি ফুটে উঠলো। র‌্যবিট ইতস্তত করে বলল, ‘তো হয়েছে কি আমি আর ভাই দুইজনেই মিসেস রেয়ের সাথে কথা বলছিলাম তখন কি কথায় কথায় যেন মিসেস রে বললেন যে, উনি তোমাকে বলেছেন ভাই আসছে না। এবং পরে তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলতে গিয়ে জানলাম তুমিই নাকি না আসার জেদ ধরেছো। তখন আমিই ভাইকে গিয়ে এই কথা জানিয়েছি। এবং আরকি ভাইয়ের মনে হয়েছে আবারও ওর কিছু একটা ঠিক করার আছে। তাই ও তোমাকে নিতে গিয়েছে।’
মাহীন তুড়ি বাজিয়ে বলল, ‘আমার মনেই হয়েছিল এমন কিছু একটা ঘটনা ঘটেছে।’
তারপর একটু থেমে বলল, ‘আচ্ছা কাল মাছ ধরতে যাচ্ছো?’

‘আরেহ মাছ ধরার মতো এক্টিভেটি হবে আর আমি যাবো না? অবশ্যই যাচ্ছি।’ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলল র‌্যবিট।

‘আচ্ছা আমি আমাদের তাঁবুর কাছে গেলাম।’ বলেই হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল মাহীন। রাবিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবল, ওফ! এতো মহা ঝামেলা। ভাই তো আছেই সাথে মাহীনও দেখি আমার মুখ থেকে সব কথা বের করে নিয়ে যায়। কিভাবে নিজের সিকিইউরিটি সিস্টেম অাপডেট করে নিজেকে সেভ করতে পারি সেই ফন্দি বের করতে হবে।’ ভাবতে ভাবতে হাঁটছিল এবং তাবুর খিলের সাথে পা বেঁধে হুমড়ি খেয়ে পরল। এবং খিলটা খুলে গিয়ে খাটানো তাঁবুটা ঝুপ করে গুটিয়ে পরল। রায়েদ পাশেই বসেছিল। রায়েদ ওর দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকাল। র‌্যবিট বিচলিত হাসল। লেক্সি সেদিকে ছুটে গেল। রায়েদ কঠিন স্বরে বলল, ‘তোকে আমার কি করা উচিৎ বলতো?’
র‌্যবিট বিচলিত ভাবে হাসিটা ধরে রেখেই ইতস্তত করে বলল, ‘খালি জ্যান্ত কবর না দিলেই হবে।’ রায়েদ চোখের মনি ঘুরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

মাহীন নিজের তাঁবুর কাছে ফিরে দেখে হলুদ তাঁবুর আরেকটা ফাঁকা স্থান সম্ভবত দখল করেছে একটা মেয়ে। মেয়েটা ক্রসলেগে একটা টুলের ওপর বসে নিজের ফোনের স্ক্রিনে ডুবে আছে। মেয়েটার চুল বাদামি সোনালি। ফরসা হলেও বোধহয় ত্বক ট্যান করিয়েছে। চোখেমুখে কী অদ্ভুত ধার আবার রুক্ষতাও আছে। ক্যারোট নীল তাবুটার ভেতরে ছিলো। ভেতরে সব গুছিয়ে রাখছে ও। মাহীনও হামাগুড়ি দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। তাঁবুটা নীল হওয়ায় ভেতরে সবকিছুই নীল আলোকিত মনে হচ্ছে। মাহীন পা মুড়িয়ে বসলো। ক্যারোটের কমলা লাল চুলগুলো খোঁপা করেছে। ক্যারোটকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ক্যারোট বাইরে যেই মেয়েটা টুলে বসে আছে ওকি সাইলোর তাঁবুতে থাকবে?’

ক্যাটোর মুখ তুলে তাকাল। বলল, ”হ্যা। ওর নাম এসিসিয়া জুহোড।’
মাহীন সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। ক্যারোট আরোও বলল, ‘বাই দ্যা ওয়ে ও বিলের বেস্ট ফ্রেন্ড।’

মাহীন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, ‘বিল মুরেই?’

‘হ্যা।’ তখনই তাঁবুতে জেনেট হামাগুড়ি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। তারপর হাঁটু উঁচু করে বসে। মুখ ভর্তি এক রাশ বিরক্তি এবং ক্লান্তি। বলল, ‘আহ দেখো আমার হাঁটুর অবস্থা। হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে বের হতে আমি শেষ।’
মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘তোমাকে মিনি স্কার্ট পরতে কে বলেছিল? এমন তো হবেই।’
জেনেটকে হতাশ দেখাল। তারপর বলল, ‘আহারে সাইলোহ খুবই বিরক্ত এবং নিরাশ হয়ে পরেছে।’

মাহীন জিজ্ঞেস করল,’কেন?’

‘তুমি ওই মেয়েটাকে বাইরে দেখোনি? এসিসিয়া?’ জিজ্ঞেস করল জেনেট।

মাহীন কপাল কুঁচকে বলল, ‘হ্যা দেখেছি তো। ওকে নিয়ে সাইলোহ বিরক্ত কেন?’

জেনেট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘কি জানি। আসলে এত বছরে জীবনেও এসিসিয়াকে আমাদের ধারে কাছে দেখিনি। ও তো সবসময় বিলের আগে পিছে ঘুরে বেড়ায় অথবা নিজের অতি বড়লোক ঢঙ্গি বান্ধবীদের সাথে ঘুরে বেড়ায়। সেখানে ও ওরা থাকতে আমাদের সাথে কেন এসে জুটেছে সেটা ভাবার মতো বিষয়।’

ক্যারোট বলল, ‘সোজা কথায় এসিসিয়া হলো পিওর পশ। যদিও আমি এসব কাহিনী জানি না এবং ওকে চিনিও না তবুও ওকে দেখে মনে হলো ও আমাদের সাথে থাকার মতো মেয়ে না।’

জেনেট বলল, ‘আর এমনিতেই আমি কোই সামান্য একটু মেকআপ করি এবং স্টাইল করি দেখে সাইলোহ তো আমাকে দেখতেই পারে না সেখানে এসিসিয়া তো আমার আলট্রা ম্যাক্স প্রো ভার্সন।’ মাহীন ও ক্যারোট দুইজনই হেসে ফেললো।

বিকেল পৌঁনে পাঁচটা বাজে। বাইরে ইতোমধ্যেই রান্নাবান্নার আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছে। এখানে বেশ কয়েকটা পোর্টেবল স্টোভ আনা হয়েছে। রান্নার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সবই বয়ে আনা হয়েছে। তবে রান্নার জন্য খাবার কাছাকাছি ছোট শহর ‘লিটল রক’ থেকে আসার সময় কেনা হয়েছে। কারণ স্যান্টা মনিকা থেকে আনলে একদিনের বাস যাত্রায় সেসব কিছুই তরতাজা থাকত না। ছাত্র ছাত্রীরাই সবকিছুতে হাত লাগিয়েছে। সঙ্গে টিচাররাও সাহায্য করছেন।এখানে প্রায় আটটা বড় বড় ফোল্ডিং টেবিল রাখা হয়েছে। তার ওপরই সব কাজ করা হচ্ছে। সাথে ওপরে ছাউনির ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে মাত্র দুটো টেবিলে ছাউনি লাগানো হয়েছে। বাকিগুলো এখন খালি রয়েছে। রায়েদ দাঁড়িয়ে মি.ডিইউটের সঙ্গে ক্যাপসিকাম কাটছে। অন্যরা ওকে পছন্দ করুক না করুক সকল টিচাররা রায়েদকে অসম্ভব স্নেহ করেন। তার কারণ সর্বদাই রায়েদ পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং রেজাল্টও ভালো করে। এবং কখনোও ওকে ক্লাস ফাঁকি দিতেও কেউ দেখেছে বলে মনে পরে না। সাইলোহ ও লিম এতক্ষণ তাঁবুর মধ্যে গোছগাছ করছিল। মাত্র বেরিয়ে আসল সাইলোহ। এসিসিয়া টুল নিয়ে তাঁবুর সামনেই বসেছিল। সাইলোহ ওকে দেখা মাত্রই টিটকারির স্বরে বলল,
‘এভাবে বসে না থেকে কোনো কাজও তো করতে পারো।’
মেয়েটা ফোন থেকে মুখ তুলে চেয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘কি কাজ করব?’

‘ওইযে সামনে সকলে রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত। সেখানে তো সাহায্য করতে পারো। রান্না তো পারো বলে মনে হয় না। এট লিস্ট তুমি কাটাকুটি তো করতে পারো।’

মেয়েটা মুখ কুঁচকে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল, ‘আমি? করব কাটাকুটি?’ বলে নিজের একটা হাত সামনে তুলে ধরে বলল, ‘দেখো আমার এখানে আসার আগেই মাত্র মেনিকিওর করা নখ সব নষ্ট হয়ে যাবে। এই নখ মেনিকিওর করতে আমার একবারেই আটশ ডলার খরচ হয়েছে।’ এসিসিয়ার নখগুলো অন্তত দুই ইঞ্চি লম্বা। ফিরোজা রঙের এবং দুনিয়ার চুমকি পুঁতি বসানো। সাইলোহ দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত কন্ঠে বলল,
‘আমার তাঁবুতে জায়গা দেওয়ার আগে তোমাকে কি শর্ত দিয়েছিলাম মনে আছে? এখন হাতের সাজসজ্জা উঠাও সে তা আটশ ডলারের হোক আর হাজার ডলারের। এবং বসে না থেকে গিয়ে কিছু করো।’
এসিসিয়া মনে মনে ভাবল, ওফ ভালো জ্বালা তো। এখানে আসাটাই ঘাট হয়েছে। কিন্তু যখন আমি একবার আসছি এখানে, তখন সহজে নড়ব না সে আমার নখের বিসর্জন দিতে হলেও হোক।’
ভেবে উঠে দাঁড়াল তারপর জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা ওই মেয়েটা মিহীন কোথায়?’
সাইলোহ ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘কি? মিহীন আবার কে?’

‘আরেহ ওই যে ওই ট্যান মেয়েটা যে রায়েদ মাদির সঙ্গে ইভেন্টে কাজ করেছে। গতকাল আবার ওর সাথেই সাইকেলে করে স্কুলেও এসেছে।’
সাইলোহ বলল, ‘ওহ আচ্ছা। ওটা মা..হী..ন। মিহীন না। এবং ও তোমাদের মতো ট্যান না। ও আসলেই শ্যামলা। এবং তোমার ওকে দিয়ে কি কাজ?’

‘না এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম। মেয়েটাকে আমার অনেক ইন্টারেস্টিং লাগে। মিহীন মেহীন এনিওয়েজ।’
সাইলোহ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল এসিসিয়ার দিকে। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্য দিকে চলে গেল।

ইনশাআল্লাহ চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here