#এল_এ_ডেইস
পর্ব ২৪
লেখনী মাহীরা ফারহীন
অন্ধকার তবে পরিষ্কার অসীম আকাশ। আবছা অন্ধকার আকাশে ধূয়ো ধূয়ো মেঘ ভাসে। চারিদিকে ঘন বনে ঘুটঘুটে আঁধার। জঙ্গলের দিকে চোখ গেলেই গা শিউরে ওঠে। দূরের পিনাকেল পাহাড়টা এই অন্ধকারেও আবছা আবছা চোখে পরে। যদিও সেটাকে অন্ধকারের ছায়ায় আগ্নেয়গিরি বলে ভুল হয়। প্রায় একশ গজ লম্বা ষাট কিংবা সত্তর গজ চওয়া মাঠে প্রায়
পঁচিশ থেকে ত্রিশটা তাঁবু। নানা রঙের একেকটা তেকোনা তাঁবুগুলোকে হঠাৎ করে দেখে মস্ত দানব বলে মনে হয়। বেশির ভাগ তাঁবুগুলো চারদিক দিয়ে আলো জ্বালানো হয়েছে। একপাশে সারিসারি আটটা টেবিল রাখা যেখানে রান্নাবান্নার পাট চুকানো হয়েছে। তার পাশেই ছয়টা পোর্টেবল স্টোভ রাখা। এখন প্রায় রাত দশটা বাজে। সকলে রাতের খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত। এত দেরিতে রাতের খাবারের আয়োজন করার কারণ সন্ধা নামছে মাত্র সেই সময়ই ওরা লাঞ্চ করেছে। রাতের খাবারে খুব বেশি ভারি কিছুর আয়োজন করা হয়নি। স্যান্ডউইচ, ভেজিটেবল রোল এবং স্যুপ। সকলে মাঠের মধ্যেই খাবার নিয়ে একত্রে ছোট ছোট গোলাকৃতির দল করে বসছে। বড় আটটা টেবিলে খাবার রাখা। সেখান থেকে সকলে নিজে নিজের খাবার নিয়ে এসে মাঠে বসছে। ব্যাপারটা অনেকটা বুফের মতো হয়ে গিয়েছে। মাহীন, সাইলোহ ও ক্যারোট টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের সামনে আরোও অনেকেই খাবার বেড়ে নিচ্ছে। এই অন্ধকার জঙ্গলের মাঝে এক বহর ছেলেমেয়ের হইহট্টগোলের মাঝেও গাছগাছালির কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালে ঝিঁঝি পোকার ডাক কানে আসে। এসিসিয়া ওয়ান টাইম প্লেট হাতে নিয়ে মাহীনকে উদ্দেশ্য করে হাসি মুখে বললো, ‘হেই মেহীন!’
নিজের নামের ভুল উচ্চারণ শুনেও মাহীন চমকে উঠে ফিরে চাইল। এসিসিয়াকে ওর পাশে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হলো। তারপর হাসি মুখে বললো, ‘হ্যালো এসিসিয়া।’
‘সিয়া। জাস্ট সিয়া ডাকো আমাকে। সিয়া নামটা অনেক কুল। ইউ নো দ্যা সিঙ্গার সিয়া।’
‘হ্যা চিনি তো। সর্ট ফর্মটা কিন্তু জোস।’
মেয়েটা আরোও আগ্রহের সঙ্গে বলল, ‘হ্যা সেটাই। আর আমার প্যারেন্টস কে দেখো কোথাকার একটা কঠিন গ্রিক গড অর গডেসের নাম এনে আমার নাম রাখসে।’ কথাটা বলার সময় ওর মুখে বিরক্তি ভাব ফুটে উঠলো। সাইলোহ এসিসিয়াকে দেখে বিরক্ত হচ্ছিল। ফলে ও ঠেলাঠেলি করে আগেভাগে খাবার নিয়ে চলে গিয়েছে। মাহীন বলল, ‘না এসিসিয়া নামটা ইউনিক। বাই দ্যা আমার নাম মা..হী..ন।’
সিয়া বলল, ‘ম্যহীন?’
‘না, মাহীন। এক টানে বলবা মাহীন। মাঝে কোনো অক্ষরে লম্বা টান দিবা না।’
‘মাহিন।’
মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘হ্যা যা হোক হয়েছে।’ তারপরই দেখলো ওর সামনে জায়গা বেশ খালি হয়েছে। ও প্লেট নিয়ে টেবিলের কাছে এগিয়ে গেল।
রায়েদ খাবার নিয়ে নিজেদের তাঁবুর কাছে বসতে যাচ্ছিল তবে রাবিত এসে বাঁধা দিলো। রাবিতের হাতে দুটো প্লেট দেখে রায়েদ বলল, ‘কি ব্যাপার এখানে সবার মাপ মতো খাবার বানানো হয়েছে। একে তো বিশাল বহর তার ওপর তুই একাই দুইটা প্লেট কোন আক্কেলে নিয়েছিস। সত্যিই কি আক্কেল জ্ঞান বাসায় ফেলে রেখে এসেছিস?’
রাবিত বলল, ‘আরে থামো থামো। আমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই দুনিয়ার লেকচার দিয়েই যাচ্ছো তো দিয়েই যাচ্ছো। আমি এত বড়ও খাদক না যে দুইটা প্লেট একাই সাবার করবো। একটা লেক্সির।’
‘ওহ আচ্ছা। তো তুই লেক্সির প্লেট নিয়ে কেন দাঁড়িয়ে আছিস?’
‘ভাই দেখিস না ওখানে অনেক ভির। তো দুইজন গিয়ে ভির বাড়িয়ে কি লাভ? তাই দুইজনের খাবার একজনই আনলাম।’
‘ওহ তো তুই ওর খাবার নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? লেক্সিকে ওর খাবার দিয়ে আয়।’
‘নাহ তোমাকে নিতে এসেছি। তুমি এখানে কেন বসবা? এর কোনো মানে হলো? আমরা সকলে যেখানে গোল হয়ে বসছি তুমিও সেখানেই বসবা। সবার সাথে।’
‘ধ্যাৎ ঝামেলা করিস না তো। তুই তোর মতো যেখানে ইচ্ছা গিয়ে বস না।’ বিরক্ত হয়ে বলল রায়েদ।
রাবিত রায়েদের এক বাহু আঁকড়ে ধরে বলল, ‘তা আর হচ্ছে না ভাই। তুমি আমার সাথে ওখানেই বসবা।’ বলে প্রায় জোড় করে টানতে টানতে নিয়ে গেল।
রায়েদ ঝাজ ভরা কন্ঠে বলছে, ‘ছাড় আমার হাত নাহলে তোর, লেক্সির এবং আমার তিনজনেরই খাবার পরবে।’
রাবিত একটা প্লেট রায়েদের অন্য হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘ধরো তো। হাতে দুইটা প্লেট নিয়ে তোমাকে টেনে নিয়ে যাইতে অসুবিধা হচ্ছে।’ রায়েদ অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রইল। যেখানে জেনেট,লিম,ক্যারোট,
সাইলোহ নায়েল ও লিও গোল হয়ে বসেছে সেখানে, কাছাকাছি এসে পৌঁছলো ওরা। গোল বৃত্তটা পুরন হতে এখনো পাঁচটা আসন খালি। তখনই মাহীনও আসছিলো। রায়েদকে দেখে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
‘আরেহ রায়েদ তুমি আমাদের সাথে বসবা? গ্রেট! আসো,আসো।’
রাবিত বলল, ‘হ্যা হ্যা ভাই এখানেই বসবে।’ নায়েল ও লিম জু তখনও দাঁড়িয়ে আছে। ওরা বসেনি। নায়েল বলল, ‘ভালোই তো।’
লিম জু হাসি মুখে বললো, ‘হ্যালো রায়েদ! আমাকে মনে আছে?’
রায়েদ কখনো কারোর গ্রিটিংয়ের উত্তর দেয় না। তবে এবার লিমের কথার উত্তরে বলল, ‘তুমি কি ভাবসো তোমাকে আমি কখনো দেখতেই পাইনি?’
লিম জু বিচলিত হাসল। এসিসিয়া ওখানে এসে দাঁড়াল। তবে কিছু বললো না। মাহীন রায়েদকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘কি হলো বসো না।’
রাবিত অধৈর্য্য হয়ে বলল, ‘আরেহ ভাই বসো না। আমি আর কতক্ষণ দাঁড়ায় থাকবো তোমাকে ধরে?’
রায়েদ বলল, ‘তোকে কে বলসে আমাকে ধরে দাঁড়ায় থাকতে।’
নায়েল বলল,’ও ভাবছে তুমি বোধহয় চলে যেতে পারো। বসে পরো।’
এসিসিয়া আবার মাঝখান দিয়ে বলল, ‘হ্যা বসো এখানেই।’ লিম, মাহীন, নায়েল, রাবিত ও রায়েদ পাঁচজনই এসিসিয়ার কথায় অবাক হলো। কারণ ও কখনোই ওদের অংশ ছিলোই না। এবং অন্যদের তুলনায় মাহীনের বন্ধুরা রায়েদকে কিছুটা অন্যরকম ভাবেই দেখে ইদানীং কালের ঘটনাগুলোর জন্য। তবে এসিসিয়ার সেসব না জেনেও স্বাভাবিক আচরণ করছে যা অবাক হওয়ার মতো বিষয়। অগত্যা রায়েদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে এখানেই বসতে বাধ্য হলো। বাকি যারা ইতোমধ্যে বসে গিয়েছে ওরা রায়েদকে দেখে বিচলিত না হয়ে বরং ওকে হাসি মুখে গ্রিট করলো। লিম জু গিয়ে জেনেটের পাশে থাকা খালি জায়গায় বসে পরলো। মাহীন নায়েলের সঙ্গে কথা বলছিল তখনই বিল সেখানে এসে দাঁড়াল। বিলকে দেখে রাবিত হাসি মুখে বলল, ‘হেই ক্যাপ্টেন!’
বিলও হাসি মুখে বলল, ‘হেই র্যবিট!’ বলে মাহীনের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘হ্যালো সানসাইন।’
‘হ্যালো বিল’। প্রতুত্তরে বলল মাহীন।
বিল আরোও কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তখনই এসিসিয়া বলল, ‘বিল তুমি এখানে কি করে?’
বিল বলল,’ওহ হ্যা ওটাই বলতে এসেছি। তুমি কি আমাদের সাথে বসছো না এখানে?’
এসিসিয়া বলল,’নেভার মাইন্ড আমি এখানেই বসবো।’
মাহীন সহ রাবিত ও নায়েলও অবাক হয়ে চাইলো এসিসিয়ার দিকে। এই মেয়েটা শুধু অবাক করে দিচ্ছে পদে পদে। বিল বলল,’অলরাইট।’
তখনই রাবিত বলল, ‘বাই দ্যা ওয়ে ক্যাপ্টেন আজ তুমিও আমাদের সাথেই বসো।’
বিল ইতস্তত হেসে বলল, ‘না তা কি করে হয়। আমি তো এখানে তোমাদের কাউকে সেভাবে চিনিই না।’
র্যবিট বলল, ‘কোনো কথা বললা এটা? আমাকে চেনো না তুমি? তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড আছে। আর মাহীনকে তো বোধহয় চেনো। আর..বলতে বলতে থেমে গেলো।’
এসিসিয়া বলল,’থাক না। ও বাকি বন্ধুদের সাথে বসুক।’ বিল এসিসিয়ার কথায় সায় দিতেই যাচ্ছিল তখন নায়েল বলল, ‘না যখন আসছোই একদিন বসো আমাদের সাথে।’ মাহীন নায়েলকে বলল, ‘আচ্ছা তো আমি বসছি গিয়ে।’ নায়েল সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। মাহীন ওপাশে ঘুরে দাঁড়াল। একদিকে লেক্সি মাঝে তিনজনের বসার মতো জায়গা খালি এবং এদিকে রায়েদ। যেহেতু লেক্সিকে মাহীন চেনেই না তাই ওর পাশে বসতে চাইল না। কাজেই রায়েদের পাশেই বসে পরল। লেক্সির পাশে রাবিত বসলো তারপর নায়েল। এখনো বিল ও এসিসিয়া দাঁড়িয়ে ছিলো। মাহীন ভাবছে, ওফ দয়া করে এসিসিয়া জেনো আমার পাশে বসে। বিল যেনো আমার পাশে না বসে। আমি কোনো দুই শত্রুর চিপায় পড়তে চাই না। সিয়া যাই হোক যেমন হোক আমার পাশেই বসুক। রায়েদ বলল, ‘কি ব্যাপার তুমি খাবার ফেলে রেখে এত কি চিন্তা ভাবনা করছো?’
মাহীন চমকে উঠল। বলল, ‘ওহ কিছু না।’ তারপর ও স্যান্ডউইচটা হাতে নিয়ে এক কামড় বসালো। তখনই বিল ও এসিসিয়া ঘুরে দাঁড়িয়েছে বসার জন্য। এসিসিয়া অপর পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। বিল মাহীনের পাশেই বসতে যাচ্ছিল। সিয়া কিছুটা মৃদু স্বরে বলল, ‘আমি ওখানে বসছি। তুমি এপাশে বসো। ওখানে যে রায়েদ আছে দেখো না।’
বিল বলল, ‘তো কি হয়েছে ওকে আমি ভয় পাই নাকি।’
সিয়া বিলকে ঠেলা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে মাহীনের পাশে এসে ধপ করে বসে পরলো। মাহীন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বিল বসতেই সিয়া তীব্রভাবে বলল, ‘তুমি ওকে ভয় পাও আর না পাও এখানে ঝামেলা করে সকলের মন মেজাজ খারাপ করে দিও না।’ বিল কিছুই বললো না। উল্টো দিকে মাহীনের একদম সামনা সামনি বসেছে সাইলোহ। সাইলোহ অত্যন্ত হতাশাজনক দৃষ্টিতে মাহীনের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রথমত রায়েদ সাইলোর একজন অপছন্দের মানুষ। তার মধ্যে এসিসিয়া সেই তালিকায় আপাতত যুক্ত হয়েছে। এবং এই দুইজন মানুষের মাঝেই মাহীন বসে আছে। মাহীন আর কোনো দিকে না তাকিয়ে নিজের খাওয়ার দিকে মন দিলো।
.
.
খাওয়া দাওয়ার পর শুরু হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাট। খাওয়া দাওয়া হয়েছে ওয়ান টাইম কাপ ও প্লেট ব্যবহার করে। সেসব একটা মস্ত কালো পলিথিনে অর্থাৎ গার্বেজ ব্যাগে ফেলে দিয়ে আসতে লাগল সকলে। বড় টেবিলগুলো পরিষ্কার করতে লেগে গেলো সকলে মিলে। এরপর সকলে শুয়ে পরবে। কাজেই অন্যরা নিজের নিজের তাঁবুতে শোয়ার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত। অনেকেই তাঁবুর আশেপাশে পোকামাকড় প্রতিরোধক স্প্রে করছে। এই জঙ্গলের মাঝে পোকামাকড় থাকাই স্বাভাবিক। বড় টেবিলের ওপর বেশ অনেকগুলো ফ্ল্যাশলাইট রাখা হয়েছে। যতক্ষণ না সকলে নিজ নিজ তাঁবুতে ঢুকে পরছে ততক্ষণ পর্যন্ত টিচাররা কড়া পাহাড়া দিচ্ছেন যেন কোনো দিক দিয়ে কেউ আবার ফ্ল্যাশলাইট নিয়ে বনে টনে ঘুরে বেড়াতে না চলে যায়। এই বয়সের ছেলেমেয়েদের অধিক কৌতূহলের বশে এমন কোনো কাজ করে ফেলা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আরকানসাসে এই মৌসুমে সাধারণত তাপমাত্রা তেইশ থেকে সাতাশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা নামা করে। তবে রাতে আরোও কমে যায়। এই মুহূর্তে তাপমাত্রা উনিশ ডিগ্রির কাছাকাছি অবস্থান করছে। এখনো বেশ কথা বলার শব্দে চারিদিক কলরব মুখর। তবুও ক্রমেই পরিবেশটা বেশ নিরব হয়ে আসছে। পরিষ্কার আকাশে ধূয়ো ধূয়ো মেঘের আড়াল থেকে উকি দেয় টিমটিমে রুপোলী তাঁরা। চারিদিকে জ্বালিয়ে রাখা বেশিরভাগ লাইটগুলো টিচাররা নিভিয়ে দিলেন। শুধু অল্প কয়েকটা জ্বলে রইল। রায়েদ ও রাবিত শুয়ে পরেছে। লেক্সি ইতোমধ্যে ঘুমিয়েও পরেছে। চারিদিকে নিরবতা বলে রাবিত মৃদু কন্ঠে বলল, ‘ভাই।’
রায়েদ চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। উত্তর দিলো না।
রাবিত আবারও ডাকল। এবার রায়েদ বিরক্ত কন্ঠে বলল,’কি হলো? কি সমস্যা? ডাকছিস কেন?’
র্যবিট একটু নড়েচড়ে শুলো। ইতস্তত করে টার্কিশ ভাষায় বলল, ‘না মানে দেখছিলাম তুমি ঘুমিয়ে পরেছো নাকি।’ তারপর একটু থেমে বলল, ‘বাই দ্যা ওয়ে তুমিই বলো ওখানে বসে কি তোমার খারাপ লেগেছে? সকলেই তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করছিল। আর মাহীন তো তোমার পাশেই ছিলো।’
‘রায়েদ সোজা হয়ে শুয়ে বলল,’ওহ হ্যা সবই ঠিক ছিলো। কিন্তু তোর কি দরকার ছিলো বিলকে ওখানে টেনে আনার?’
‘আরেহ ও আমার ক্যাপ্টেন তাই যখন ওখান পর্যন্ত খাওয়া দাওয়ার সময় এসেছে তখন তো এটুকু বলতেই হয় তাই না।’
‘কাজের সময় তো তোর কখনো মেহমানদারীর কথা মনে থাকে না।’
‘ওহ হ্যা একটা কথা তো তোমাকে বলতেই ভুলে গিয়েছি।’
‘কথা কাটানোর জন্য তোর কত কি মনে পরে।’
‘আরেহ না সত্যি একটা কথা তোমাকে বলা হয়নি যদি আমি নিজেই গত সপ্তাহে জানতে পেরেছি।’ তারপর একটু থেমে আবার বলল, ‘গত সপ্তাহে বিল জানিয়েছিল, আমাদের টিমের কেউ ম্যাচফিক্সিং করেছে।’
রায়েদ চমকে উঠে বলল, ‘কি! ম্যাচফিক্সিং হয়েছে? কে করেছে?’
রাবিত শান্ত কন্ঠে বলল, ‘হ্যা ভাই। তবে কে করেছে এটা জানি না আমরা এখনো।’
‘কি আশ্চর্য একটা ব্যাপার। কিন্তু বিল এটা কিভাবে জানলো?’
‘মাহীনের কাছ থেকে।’
‘হোয়াট? মাহীন? মানে মাহীন সবকিছুর খবরই রাখে। কিন্তু ওই বা এটা কিভাবে জানলো?’
‘ওহ এটা জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছি।’
‘আমি বুঝলাম না মাহীন এইসব খবর পায় কোথা থেকে।’ নিজেকেই যেন প্রশ্নটা করলো রায়েদ।
‘তুমি ওকেই জিজ্ঞেস করো।’
‘নাহ তাহলে ওর মাথায় প্রশ্ন আসবে না যে আমি কিভাবে জানলাম।’
‘আরেহ ভাই। বিলকে ও এটা বলেছে কারণ বিল টিমের ক্যাপ্টেন। এবং বিল আমাকে বলেছে কারণ আমি টিমের বিশ্বাসী সদস্য। এবং আমি তোমাকে এটা বলতেই পারি কারণ তুমি আমার ভাই। সিম্পল।’
‘হুম সে যা হোক মাহীনের সকলের সাথেই দেখি যোগাযোগ আছে।’
তারপর থেমে আবার বলল, ‘আর এটা তো খেয়াল করেছো যে গত দুইমাস ধরে দজ্জাল মনিটর আর কারো সাথে ঝামেলা করেনি।’
‘হ্যা তা তো খেয়াল করেছিই। তবে হঠাৎ করে ওর সুমতি হলো কিভাবে এটা এখনো বুঝলাম না।’
‘মাহীনের কল্যাণে।’
‘মনে তো হচ্ছে পরবর্তী ভোটে জো বাইডেন যদি হেঁড়ে যায় সেটাতেও মাহীনের ভূমিকা থাকবে।’
রাবিত হেসে উঠল। বলল, ‘আসলে হয়েছে কি একদম প্রথন দিন। মানে যেইদিন মাত্র মাহীন এডমিশনের জন্য এসেছিল সেইদিনই মনিটরকে স্মোকিং করতে ধরেছে। আই মিন দূর থেকে। সেইটা আবার মাহীন ওকে না চিনেও ভিডিও করেছে। এবং ওটা দিয়েই ব্ল্যাকমেইল করে মনিটরকে দমায় রাখসে।’
রায়েদ ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে থেকে অবিশ্বাস্যের স্বরে বলল, ‘আর ইউ সিরিয়াস? ও কি ভেবে এইসব করে বেড়ায়।’
‘দেখো ওই যে একটা থিওরি আছে না, সমগ্র ভির যেদিকে যায়, সেদিকে না যেয়ে নিজের পথে চলো। না এমোনি কিছু একটা..রায়েদ মাঝখান দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘তুই ভেড়া ওয়ালা কাহীনির কথা বলছিস? যেখানে এক ভেড়াকে দেখা দেখি গোটা পাল তার পেছন পেছন পাহাড় থেকে লাফ দিয়েছিল?’
‘অনেকটা সেরকমই তবে এটা অন্য ভির। ভেড়া ওয়ালা না। তো বলছিলাম যে মেজোরিটি অফ পিপল যেই ভাবে চিন্তা ভাবনা করে মাহীনের ব্রেন একটা হোল এনাদার লেভেলেই চলে।’
রায়েদ মুচকি হেসে বলল, ‘এটা একদম ঠিক বলেছিস।’
দূরে কোথাও থেকে শিয়ালের ডাক শোনা গেল। রাবিত লাফ দিয়ে উঠে বসল। রায়েদ বলল, ‘কিরে বাবা তুই শিয়ালকে ভয় পাস? এখানে আলো জ্বলছে, এখানে আসবে না। শুয়ে পর।’
রাবিত দ্বিধান্বিত কন্ঠে বলল, ‘কিন্তু…রায়েদ মাঝখান দিয়ে বলল, ‘কিন্তু কিছু না। শুয়ে পর। এমনিতেই কথা বলতে বলতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।’
রাবিত আর কিছু না বলে আবার শুয়ে পরল। তবে আবার কোনো ডাক শোনার অপেক্ষায় কান খারা করে রইল।
চলবে ইনশাআল্লাহ।