#এল_এ_ডেইস
পর্ব ৩৪
লেখনী মাহীরা ফারহীন
টিংটং…টিংটং শব্দে কলিংবেল বাজচ্ছে। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার কলিংবেল বাজল। তারও কিছুক্ষণ পর দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে গেল। দরজার ওপাশে একজন শ্বেতাঙ্গ, সোনালি কেশ ধারী রুপসি মহিলা দাঁড়িয়ে। স্বচ্ছ নীল চোখের মণি। বয়স ত্রিশের কোঠায়। কিছুটা ফ্যাকাসে ভাব চেহারায়। উনি হালকা হাসলেন। বললেন,
‘ন্যইম, ম্যহীন? তোমরা আমার বাসায়?’ বলতে বলতে একপাশে সরে দাঁড়ালেন। এবং ওদের ভেতরে ঢোকার পথ করে দিলেন। নাইম আন্তরিক হেসে বললো,
‘হ্যা আসলে আপনি যদি কিছু মনে না করেন আমরা আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই।’
উনি বললেন,’অবশ্যই। ভেতরে আসো।’ এবার মাহীন ও নাইম ভেতরে প্রবেশ করল। প্রথমেই মাহীনের নাকে এসে ঢাক্কা দিলো গোলাপের কড়া সুবাস। প্রথমেই লম্বা করিডর। তারপর সামনে এগিয়ে দেখলো ডানে ড্রইংরুম। এবং বামে ডাইনিং রুম এবং রান্নাঘর। ওনার ঘর সুসজ্জিত এবং গুছানো হওয়া সত্ত্বেও কেমন জানি অগোছালো লাগল। বাইজেনটাইন রঙের সোফার পাশে একটা বড় কাঁচের সো-কেস। তার মধ্যে অন্যান্য সো-পিসের সঙ্গে ‘লুই রোডেরার’ এবং ‘ডম প্যারিনন’ এর মতো ব্র্যান্ডের ওয়াইনের বোতল রাখা। মাহীন ও নাইম সোফায় বসল। এবং উনি হেঁটে এসে সামনের সোফায় বসলেন। তারপর বললেন, ‘ওহ হ্যা তোমরা আমার নাম জানো তো? সেলি বিঙ্গ।’
ওরা দুজন সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। নাইম জিজ্ঞেস করল,’ফ্র্যাঙ্ক কোথায়?’
সেলি বললেন,’ও ঘুমিয়ে আছে।’
মাহীন বলল,’আপনি তো সাইকিয়াট্রিস্ট?’
উনি সায় জানিয়ে মাথা নাড়লেন। এবার মাহীন একটু নড়েচড়ে বসল। এবং বলল,
‘আসলে আমাদের কথাও সেই বিষয় নিয়েই। আমার একজন বন্ধুর মায়ের সমস্যা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই। যার কারণে সত্যিই আমার বন্ধুর জীবন দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে গিয়েছে।’
সেলি আগ্রহী কন্ঠে বললেন,’ঠিক কী হয়েছে আমাকে খুলে বলো।’
এবার মাহীন লম্বা এক নিঃশ্বাস গ্রহণ করে আবার ছাড়ল। তারপর ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ ঘটনাটাই খুলে বললো। সব শোনার পর সেলির কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো। উনি বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ভাবলেন। তারপর শান্ত কন্ঠে বললেন,’দেখো তোমার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে তোমার ফ্রেন্ডের মা সেই সময় একটা ডিপ ট্রোওমার মধ্যে চলে গিয়েছিলেন। এখন একধরনের ট্রোওমা আছে যা সাময়িক সময়ের জন্য হয় এবং ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে আপনজনদের সহযোগীতায়ই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তবে শক যদি অনেক বড় ধরনের হয় তখন মানুষ কিন্তু সেরকম ট্রোওমার মধ্যেও চলে যেতে পারে যা মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। এই যেমন মিসেস রাহম্যনের ট্রোওমা খুব সম্ভবত তার মস্তিষ্কের ‘আ্যমিগডেলায়’ প্রভাব ফেলেছে। ‘আ্যমিগডালা’ হলো মস্তিষ্কের সেউ অংশ যেটা অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে। এবং সঠিক সময় তার চিকিৎসা না হওয়ায় তার মন মস্তিষ্ক তো সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে এসেছে ঠিকই কিন্তু তার ‘আ্যমিগডালার’ কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।’ বলে সেলি থামলেন।
মাহীন ও নাইম আগ্রহ ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মাহীন ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। উনি বলে গেলেন,’এখন এভাবে চিন্তা করো যে, এটা বোঝা যাচ্ছে যে উনি ওনার স্বামীকে খুব ভালোবাসতেন। এবং যখন তার মৃত্যু সংবাদ শুনেছেন তার পক্ষে তখন কোনো কিছু লজিক্যালি ভাবা বা দেখা সম্ভব ছিলো না। হয়তো শুধু দুঃখ এবং কষ্টই নয় বরং তার মধ্যে এমন একটা অনুভূতি কাজ করছিল যে তার ছেলেকে বাইরে নিয়ে যেতে গিয়ে তার স্বামী মারা গিয়েছে। সুতরাং এটা তার ছেলের দোষ। ঠিক আছে হঠাৎ করে এমন কথাও যদি মাথায় আসে তা অস্বাভাবিক নয়। তবে অস্বাভাবিক হচ্ছে সেটাই বিশ্বাস করে আঁকড়ে ধরে থাকা। স্বাভাবিক ভাবে এক মুহূর্তের জন্য কষ্টে রাগে এটা মনে হতেই পারে তবে ঠান্ডা মাথায় লজিক্যালি চিন্তা করলে তার আর এরকম মনে হতো না। কিন্তু সমস্যাটা এখানেই হয়েছে। তিনি আর ঠান্ডা মাথায় সেইসব বিষয় চিন্তা করার অবস্থাই পৌঁছতে পারেননি। তিনি ট্রোওমার মধ্যে চলে গিয়েছিলেন। এবং এসব তার ছেলের কারণে হয়েছে এই বিশ্বাসটাও তিনি তখনো কাটাতে পারেননি।
এবং তার ফলেই তার আ্যমিগডালা যেটা তার অনুভুতি নিয়ন্ত্রণ করে তা তার ছেলের জন্য একটা অপছন্দ এবং হেট্রেডের অনুভূতি তৈরি করেছে। যেটা কখনোই চিকিৎসা না হওয়ার কারণে এখনো বহাল আছে।’ বলে শেষ করলেন এবং একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মাহীন ও নাইম দুইজনের মুখেই বিস্ময়। মাহীন গাঢ় কন্ঠে বলল,’কিন্তু এখন তাকে সুস্থ করে তোলা যায় কিভাবে?’
সেলি বললেন,’দেখো এমন ধরনের ট্রোওমায় সুস্থ হতে বেশি সময় লাগে না। হয়তো মাস খানেক লাগবে। মাসখানেক টানা কাউন্সিলিং করাতে হবে। মেডিটেশন করতে হবে। এবং তাকে কিছু ঔষধ দিতে হবে। তবে আমি এভাবেই কোনো ঔষধের কথা বলতে পারবো না। এটা বেআইনি হয়ে যাবে। তাকে সঠিক ভাবে চিকিৎসা করাতে হলে অফিসিয়ালি ট্রিটমেন্টের জন্য আমার কাছে আসতে হবে।’
মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর বলল,’দেখেন ওনাকে এমনিই যদি সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে চাওয়া হয় সেটা তো উনি মানবেন না। কারণ উনি তো নিজেকে সুস্থই ভাবেন। এখন প্রথমে ওনার সঙ্গে পার্সোনালি ইন্টার্যক্ট করতে হবে।’ বলে থামল। তারপর ইতস্তত করে বলল,’আপনি কী আমাদের সাহায্য করতে পারবেন এই বিষয়?’
উনি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকলেন। তারপর বললেন,
‘দেখো আমি একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। এটাই আমার কাজ। এবং আমরা মানুষের মন মস্তিষ্ক নিয়েই কাজ করি। অর্থাৎ যেভাবেই হোক আমরা প্রতিটা রোগীর সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবেই জুড়ে যাই। এখন আমি তোমাদের অবশ্যই সাহায্য করব। যেহেতু এতদিন আমার ছেলেটাকে যদি তোমরা নিজেদের কাছে যখন তখন না রাখতে সত্যিই আমি বিপদে পরতাম। ওর খেয়াল রেখেছ, ওকে সময় দিয়েছো তার জন্য কৃতজ্ঞতা স্বরুপ এখনো আমি কিছুই করতে পারিনি। সুতরাং কৃতজ্ঞতা থেকেই ধরে নাও সাহায্য করব।’
ওদের দুজনের ঠোঁটের কোণেই হাসি ফুটে উঠল। নাইম বলল, ‘প্রথমেই যেহেতু ওনাকে আপনার কাছে অফিশিয়ালি আনা সম্ভব নয়। তাহলে আপনি কী করবেন?’
সেলি কিছু একটা ভাবলেন। তারপর বললেন,
‘প্রথমে তো ওনার সাথে আমার কথা বলতে হবে এবং বুঝতে হবে ওনার মানসিক অবস্থাটা এখন আসলে কোন পর্যায়ে আছে। এবং প্রথমে আমি শুধু কথা বলেই ওনার কাউন্সিলিং করবো। তবে তার জন্য আমার তার সাথে দেখা করতে হবে। এখন ওনার সাথে আমার দেখা করার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব তোমাদের। এবং হ্যা সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত আমি হাসপাতালে থাকি। এরপর বাসায় চলে আসি। সুতরাং যখনই দেখা করার ব্যবস্থা করো না কেন সেটা যেন দুপুরের পর হয়।’
মাহীনের মুখে ঈষৎ হাসি। ও প্রসন্ন কন্ঠে বলল,
‘সেটা নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা সব সামলে নেব।’ বলে উঠে দাঁড়াল। নাইমও উঠে দাঁড়াল। সেলি উঠে দাঁড়িয়ে বলল,’আমার নম্বরটা নিয়ে যাও। প্রয়োজনে ফোন দিও।’
ওরা সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল।
.
.
.
.
একবার কলিং বেল বাজতেই কিছুক্ষণ পর দরজাটা খুলে গেল। দরজার ওপাশে রাবিত দাঁড়িয়ে। দরজার এপাশে মাহীনকে দেখে সরে দাঁড়াল। মাহীন তাড়াতাড়ি ভেতরে প্রবেশ করল। তারপর বলল,
‘মিসেস রহমান বাসায় নেই তো?’
রাবিত না সূচক মাথা নাড়ল এবং দরজাটা বন্ধ করে দিলো। তারপর বলল,’এ্যই তুমি আসলে আমাকে কী বলতে চাচ্ছিলা? তাড়াতাড়ি বলো।’
মাহীন বলল,’নাহ শুধু তোমাকে নয়। মিসেস মাদিহ কে ডাকো। সাথে ওনাকেও বলবো।’
রাবিত চিন্তিত স্বরে বলল,’আল্লাহই জানে তোমার মাথায় আবার কী চলছে।’ বলে একটু থামল তারপর আবার বলল,’আচ্ছা শোনো আমরা পেছনের বাগানের যে চেয়ার টেবিল আছে ওখানে বসি।’ মাহীন সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। তারপর রাবিত ভেতরের একটা কামরায় চলে গেল। কিছুক্ষণ পর মিসেস মাদিহ কে নিয়ে বেরিয়ে আসল ও। উনি মাহীনকে দেখেই প্রসন্ন হাসলেন। তারপর বললেন,
‘বাহ আজ একদম সঠিক সময় এসেছো। রায়েদ রাবিত দুইজনই বাসায় আছে।’
মাহীন কিছুটা অবাক হয়ে বলল,’ওহ আচ্ছা রায়েদও বাসায় আছে।’
মিসেস মাদিহ বললেন, ‘হ্যা তবে দিলারা বাসায় নেই।’
মাহীন মিসেস মাদির এক কাঁধ জড়িয়ে ধরে বলল,
‘আমার কথা তো আপনার সঙ্গে এবং রাবিতের সঙ্গে। চলেন আমি বলি যেটা বলতে আসছি।’
রাবিত বলল,’হ্যা চলো বাগানে। বলতে বলতে সিঁড়ির পেছনের দরজাটা খুললো। এটা বাগানে যাওয়ার দরজা। ওরা সেখান দিয়ে বের হলো। মাহীন মুগ্ধ হয়ে দেখল, খুব সুন্দর করে বাগান করা হয়েছে। বেশির ভাগ সব ফুলের গাছ। ওদের বাড়ির বাগানের মতো এখানেও একপাশে একটা তাল গাছ রয়েছে। সবুজ ঘাসে ঢাকা মাটি। দেয়াল থেকে বেশ কয়েকটা পেতুনিয়া ফুলের ঝাড় ঝুলে রয়েছে। এক কোণায় সাদা একটা টেবিল। এবং টেবিলের তিনদিকে তিনটা চেয়ার। মিসেস মাদিহ প্রথমে একটা চেয়ারে বসার পর মাহীন ও রাবিতও অপর দুইটায় বসল। রাবিত অধৈর্য কন্ঠে বলল,
‘এবার বলো তো তুমি কী বলার জন্য এত আয়োজন করলা।’
মাহীন একবার রাবিতের দিকে চাইল তো একবার মিসেস মাদির দিকে চাইল। তারপর ইতস্তত করে বলল,
”আমি একজন সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে কথা বলেছি।’ এক টানে বলে গেল। রাবিত জিজ্ঞেস করল,’সাইকিয়াট্রিস্ট? কার জন্য?’
মাহীন বলল,’মিসেস রহমানের জন্য।’
মিসেস মাদিহ ভ্রু কুঁচকে বললেন,” দিলারার কী হয়েছে? ওকে সাইকিয়াট্রিস্ট কেন দেখাবা?’
মাহীন মিসেস মাদির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আপনি তো জানেনই চার বছর আগে কী হয়েছে। মিসেস রহমান রায়েদের সাথে যেই আচরণ করেন সেটা কী স্বাভাবিক? অবশ্যই না। এবং এভাবেই তো রায়েদ ওর সম্পূর্ণ জীবন কাটাতে পারে না।’
রাবিত বলল,’সেটা ঠিক। মায়ের সমস্যা তো আছে। কিন্তু সবচাইতে বড় সমস্যা তো এটাই যে তাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানোর জন্য রাজি করাবো কিভাবে? তিনি তো আর ছোট বাচ্চা নন।’
মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,’সেটা পরের কথা। এখন শোনো আগে আমি যেই সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে কথা বলেছি সে আমাদেরই প্রতিবেশী। এবং সে প্রথমে মিসেস মাদির সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে ইন্টার্যক্ট করতে রাজি হয়েছে।’
মিসেস মাদিহ বললেন,’কিন্তু মা, সে না হয় রাজি হয়েছে। কিন্তু দিলারাকে ব্যক্তিগত ভাবে হলেও যদি একজন সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয় ওতো রাজি হবে না।’
রাবিত বলল,’সেটাই। এখন কী করবা?’
মাহীন বলল,’দেখো আমরা মিসেস রহমানকে প্রথমে বলবোই না যে উনি একজন সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে দেখা করছেন। দুজনকে এমন ভাবে দেখা করাবো যেন হঠাৎ করেই এমনিই দুইজনের দেখা হয়ে গিয়েছে। এখন বাকি কথা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা মিসেস বিঙ্গ সামলে নেবেন।’
মিসেস মাদিহ বললেন,’তারপর? তারপর কী করবেন উনি?’
মাহীন বলল,’প্রথমে উনি মিসেস রহমানের সঙ্গে কথা বলে উনার বর্তমান মানসিক অবস্থাটা বিবেচনা করবেন। এবং নিজে থেকেই ওনাকে মোটিভেট করবেন তার কাছে অফিশিয়ালি যাওয়ার জন্য। এবং এদিকে আপনাকে এবং রাবিতকে চেষ্টা করতে হবে তাকে বোঝানোর।’
রাবিত বলল,’হ্যা ঠিক আছে। বোঝানোর কাজটা তখন দেখা যাবে। কিন্তু প্রথম দেখাটা কিভাবে করাবা?’
মাহীন কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল। তারপর চিন্তিত কন্ঠে বলল,’লাইক মনে করো মিসেস রহমান যদি রেগুলার কোথাও যেয়ে থাকেন তেমন কোনো জায়গায় মিসেস বিঙ্গ যেতে পারেন। এবং একজন অপরিচিতের মতো দেখা করতে পারেন। এমন কোনো জায়গা কী আছে?’
রাবিত একটু ভাবল। তারপর বলল,’কোই না তো। মা তো সকালে কাজে চলে যান। দুপুরে বাসায় থাকেন আবার বিকেলের পর কাজে যান।’
মিসেস মাদিহ বললেন,’রাবিত তোর মা কোথায় যায় না যায় সেটাও ঠিক ঠাক বলতে পারিস না। বিকেলে সাড়ে ছয়টায় বাইরে বের হয় দিলারা। এর পূর্বে প্রায় সময় পাঁচটার দিকে হাঁটতে বের হয়। এবং কাছাকাছিই যেই পার্কটা আছে ওখানে প্রায় সময় যায়।’
মাহীন উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল, ‘গ্রেট তাহলে তো হয়েই গেল। মিসেস বিঙ্গ ও এমনি পার্কে হাঁটতে এসেছেন সেরকম ভান করে মিসেস রহমানের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। এবং এখানে প্রায়ই আমরা ওনাদের দেখা করাতে পারি। এরপর তো যেভাবেই হোক ওনাকে রাজি করিয়ে অফিশিয়ালি মিসেস বিঙ্গের কাছে পাঠাতে হবে।’
মিসেস মাদিহ আশাবাদী কন্ঠে বললেন,’এরপর কী দিলারা রায়েদের সঙ্গে যেরকম আচরণ করে সেসব আসলেই বদলে যাবে?’
মাহীন মিসেস মাদির হাত চেপে ধরে আত্নবিশ্বাসের সঙ্গে বলল, ‘ইনশাআল্লাহ হবে। কিন্তু আপনাদেরও চেষ্টা করতে হবে। বাসায় মিসেস রহমানকে মেডিটেশন করতে হবে। এবং আপনাকে ও রাবিতকে মিসেস বিঙ্গের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিমুহূর্তে মিসেস রহমান কে কাউন্সিল করতে হবে।’
রাবিত বলল,’যদি এভাবে মা সত্যিই ঠিক হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই আমি আমার সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব।’
.
.
.
.
নিজের কামরায় টেবিলে বসে পড়ছিলো রায়েদ। জানালার পাশেই টেবিল। বাতাসে পর্দা উড়ছে। শান্তশিষ্ট পরিবেশ ছিলো। তবে বেশ কিছুক্ষণ ধরে কোথা থেকে যেন বেশ কথা বলার শব্দ শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন জানালার বাইরে থেকেই শব্দটা ভেসে আসছে। বেশ কয়েকটা চেনাপরিচিত কন্ঠস্বর। অবশেষে রায়েদ উঠে দাঁড়াল। এবং জানালার উইন্ডোশীলে বসে নিচের দিকে চোখ রাখল। এবং দেখতে পেল ওদের বাগানের সাদা টেবিলে মাহীন, রাবিত ও দাদি বসে আছে। বিস্মিত দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ মাহীনকে এখানে দেখতে পেয়ে যাবে ভাবেনি। তারপর ভাবতে লাগল, এসব কী? মাহীন এখানে কখন আসলো? এবং এই তিনজন বাইরে বসে কী এমন আলোচনা করছে? দেখে তো মনে হচ্ছে অনেক সিরিয়াস আলোচনা। কিন্তু মাহীনের হঠাৎ রাবিত এবং দাদির সঙ্গে কী কথা থাকতে পারে? ওফ এখন মাহীন তো সব কিছু জানেও। আল্লাহই জানে কী গোলমাল পাকায় আবার।’ ভাবতে ভাবতে মাহীনের দিকে তাকিয়ে রইল।
ইনশাআল্লাহ চলবে।