#এল_এ_ডেইস
পর্ব ৩৭
লেখনী মাহীরা ফারহীন
মাত্র প্রচন্ড শব্দে ঘন্টা বাজতেই সকল ক্লাসে হইচই পরে গেল। শিক্ষকরা সকলেই একে একে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পরপরই শিক্ষার্থীরাও স্রোতের মতো বেরিয়ে আসছে। ছুটির ঘন্টা পরেছে। মাহীন নিজের ক্লাস থেকে বেরিয়ে র্যবিটকে খুঁজছিল। র্যবিটের ক্লাসের আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পাশের করিডর দিয়ে ধীরে সুস্থে হেঁটে আসতে দেখা গেল তাকে। গুনগুন করে আবার গানও করছে,
‘উড়ি উড়ি যায়, উড়ি উড়ি যায়।
উড়তি পাতাং দ্যাখো উড়ি উড়ি যায়।’
মাহীন অবাক হয়ে বলল, এ্যই তুমি কী গান গাইছ?’
রাবিত থেমে গিয়েছে। বলল, ‘তুমি চিনবা না। একটা হিন্দি গান।’
‘আমি চিনবো না মানে? তুমি হিন্দি পারো?’
‘হ্যা। আমার মা উর্দু পারে জানো তো। আর সিরিয়াসলি আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম এটা দেখে যে এই হিন্দি আর উর্দু একেবারেই সেম।’
মাহীন হেসে বলল, ‘হেল! তুমি আমাকে আগে বলবা তো। জানো না যে আমিও হিন্দি পারি!’
রাবিত উচ্ছ্বসিত গলায় বলল, ‘ওহ ওয়াও। দেন তুমি এই গানটা শুনছো আগে?’
‘অফ কর্স!’
মাহীন বলল, আচ্ছা এখন এটা বলো আন্টির কী অবস্থা চলছে?’
র্যবিটকে হতাশ দেখা গেল। শুকনো কন্ঠে বলল,
‘গতকালও মাকে নিয়ে পার্কে গিয়েছিলাম। সেলিও এসেছিলেন।’
মাহীন আগ্রহী কন্ঠে বলল, ‘তো সব কেমন গেল?’
রাবিত দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বলল,’ওখানে তো সব ঠিকই গিয়েছে। এখন আমি আপ্রাণ চেষ্টায় আছি ওনাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানোর জন্যে রাজি করাতে।’
লিম সামনের চত্ত্বর থেকে চিৎকার দিয়ে বলল,
‘মাহীন আজ বিকেল চারটায় কিন্তু!’
মাহীন ও রাবিত দুইজনই সেদিকে দৃষ্টি ফেরাল। ওরা খোলা করিডর ধরে হাঁটছে। সামনে চত্ত্বরে কড়া রোদ পরেছে। মাহীন মাথা হেলিয়ে সায় জানাতেই লিম জু দ্রুত গতিতে গেটের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আবার উষ্ঠা খেয়ে পরল। মাহীন ভ্রু কুঁচকে তাকাল সেদিকে। সবসময়ের মতোই মিনি স্কার্ট পরে আছে। নির্ঘাত হাঁটুটা ছিলে গিয়েছে। রাবিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘অনেক দিন পর আবার এক্সিডেন্ট করল।’
‘কীভাবে যে চলা ফেরা করে আল্লাহই জানে।’ তারপর থেমে আবার বলল,’তো, মিসেস মাদিহ ওনাকে একবারও কিছু বলেছেন?’
‘এখনো সেভাবে কিছু বলেননি। তবে তিনিও ভাবছেন সেভাবে মাকে বুঝিয়ে বলবেন।’
মাহীন সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। তারপর বলল,
‘উনি রাজি হলে আমাকে জানিও।’
‘অবশ্যই।’
ওরা হাঁটতে হাঁটতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে। এবার মাহীন বলল,’এই আজকের বিকেলে নাকি তোমার ডেট আছে?’
রাবিত ইতস্তত হাসল। বলল,’হ্যা আছে তো। কিন্তু আমি তো তোমাকে বলেছিলাম সাহায্য করতে। এখন দেখছি ব্যাপারটা সাইলোহ, জেনেট আর লিম সামলাচ্ছে?’
মাহীন টিটকারির সুরে বলল,’আমি এমনিই মিসেস রহমানকে কিভাবে সুস্থ করে তোলা যায় সেই চিন্তায় বাঁচি না আবার তোমার ডেট ফিক্স করা। তাও তো শোকর করো তোমার জন্য একটা রফাদফা করেছি।’
রাবিত হঠাৎ বলল,’আচ্ছা শোনো এই ব্যাপারে ভাইকে কিছু বলো না।’
‘তোমার ডেটের ব্যাপারে?’
‘উম হ্যা।’
মাহীন ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
‘কিন্তু কেন? ও জানলে কী হবে?’
রাবিত ইতস্তত করে বলল,
‘কি আর হবে প্রথমে আমাকে দুটো থাপ্পড় দিবে। তারপর ঝাড়ি দিবে দশ মিনিট। এরপর লেকচার দিবে পঁচিশ মিনিট।’
তারপর একটু থেমে বলল,’ইভেন আমাকে সাহায্য করার জন্য তোমার ওপরও রেগে যেতে পারে।’
মাহীন হেসে উঠল। বলল,’আমি তো তোমাকে সাহায্য করিইনি! তোমাকে সাহায্য ওরা করছে আমি নাহ। আমি এগুলো কিছুই জানি না। ইভেন ভুলেও গিয়েছি তুমি আমাকে এমন কিছু বলেছো।’ বলেই ঝড়ের বেগে গেটের দিকে এগিয়ে গেল। রাবিত হা করে দাঁড়িয়ে রইল। মনে মনে ভাবল, ‘দেখো তো কিভাবে পাল্টি খেলো। ভাই যেমন বালদিজও পেয়েছি তেমন।’ ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
.
.
.
.
মিউ!’ বলে উঠল টঙ্কস। মাহীন টঙ্কসের মখমলের মতো নরম গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,’তোর আবার মিকিমাউসের সঙ্গে শত্রুতা কবে থেকে?’
‘মিউ’ লেজ নেড়ে আবার বলল টঙ্কস।’
মাহীন বলল,’ওহ হ্যা আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম মিকিমাউস আসলে ইঁদুর।’
মাহীন টঙ্কসকে নিয়ে নিজের বিছানার ওপর বসে আছে। এবং বোর হচ্ছে। খোলা জানালা দিয়ে শুধু ঝলমলে রোদই আসছে। কিন্তু এক বিন্দু বাতাস হচ্ছে না বাইরে। হঠাৎ টিং করে নোটিফিকেশনের শব্দ হলো। মাহীন ততক্ষণাৎ চার্জার থেকে ফোনটা খুলে নিল। দেখল রাবিত টেক্সট করেছে,’গেস ওয়াট? বুম! মা সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে রাজি হয়েছে!’
মাহীন ম্যাসেজটা দেখা মাত্র লাফ দিয়ে উঠল। টঙ্কস ওর কোল থেকে পরে গেল এবং ভয়ে পেয়ে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেল। মাহীন প্রায় লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামল। ওর সারা মুখে উচ্ছ্বসিত হাসি ছড়িয়ে পরেছে। ধুপধাপ পদক্ষেপ ফেলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামল। এবং সোজা গিয়ে মা-বাবার বেডরুমের দরজার সামনে দাঁড়াল। দরজাটা খোলাই ছিল। মিসেস নাসরিন বিছানায় বসে কাপড় গোছাচ্ছেন। মাহীন ভেতরে প্রবেশ করে বিছানায় ধপ করে বসল। মিসেস নাসরিনের কামরা সবসময় পরিপাটি করে গোছানো থাকে। বিছানারও বেড শীট টান টান করে গুছানো ছিল। মাহীন ঝড়ের মতো অবতরণ করতে কিছুটা ঘেঁটে গেল। মিসেস নাসরিন বললেন, ‘হঠাৎ করে তুই তিড়িংতিড়িং করছিস কেন? কী হয়েছে?’
মাহীন প্রফুল্লচিত্তে বলল,’মা! জানো কী হয়েছে!’
মিসেস নাসরিন ভাবলেশহীন মুখে জিজ্ঞেস করলেন,
‘না জানি না। কি হয়েছে?’
মাহীন এখনো একই স্বরে বলল,’রায়ে…আই মিন ওইযে তোমাকে যেই ফ্রেন্ডের মায়ের মানসিক সমস্যা আছে বলেছিলাম না?’
‘হ্যা তো?’
‘আমি ওই ফ্রেন্ডকে মিসেস বিঙ্গের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিয়েছি। এবং ওই ফ্রেন্ডটা জানাল ওর মা অফিশিয়ালি সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে রাজি হয়েছেন!’
মিসেস নাসরিন এবার আনন্দিত কন্ঠে বললেন,
‘আলহামদুলিল্লাহ। এখন সেলি কী বলেছে?’
মাহীন বলল,’এখন পর্যন্ত সেলির সঙ্গে ওনার পার্কে দুইবার অনেক কাঠখড় পুরিয়ে দেখা করানো হয়েছে। সেলি বলেছেন যে, ওনার পুরোপুরি ঠিক হতে হলে নিয়মিত কাউন্সিলিং করতে হবে এবং কিছু ঔষধ দিতে হবে। যেটা তাকে অফিসিয়ালি দেখালেই দিতে পারবেন। এবং এখানে মিসেস র..মানে আমার ফ্রেন্ডের মায়ের ঠিক হতে দুই তিন মাস এট লিস্ট লাগবে।’
মিসেস নাসরিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,’যাক ভালোই হয়েছে।’ একটু বিরতি দিলেন। কিছু একটা ভাবলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন,’আচ্ছা এটা বললে সমস্যা কী সেটা তোর কোন ফ্রেন্ড?’
মাহীন বিভ্রান্ত হলো। মায়ের প্রশ্নসূচক দৃষ্টি থেকে চোখ সরিয়ে নিল। তারপর শান্ত কন্ঠে বলল,’কারণ আমিই প্রথম বাইরের মানুষ যাকে ও নিজে থেকে এই কথাগুলো বলেছে। তাছাড়া আমি জানি না তুমি কী মনে করবা এটা কে জানলে।’
মিসেস নাসরিন লম্বা এক শ্বাস ফেললেন। মাহীনের দিকে ভালো ভাবে ঘুরে বসলেন। বললেন,’কী এমন আর ভাবতে পারি? তোর ফ্রেন্ড তো কোথাও কোনো অপরাধ করেনি যে আমাকে ওর ব্যাপারে জানানো যাবে না।’
মাহীন পানসে কন্ঠে বলল, ‘না আমি সেটা বলিনি। বলছি যে ওর তো এটা ভালো লাগবে না যদি তুমি জানো এই ব্যাপারে।’
মিসেস নাসরিন বললেন, ‘ওকে তুই না বললে ও জানবে কিভাবে আমি জানি। আর এমনিতেও তোর কোন ফ্রেন্ডকেই বা আমার ভালো লাগে।’
মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,’হ্যা সেটাই তো। যেই একটা মাত্র ফ্রেন্ডকে তোমার পছন্দ সেই ফ্রেন্ডই এটা।’
মিসেস নাসরিন ভ্রু দয় প্রসারিত করে বললেন,
‘তুই কার কথা বলছিস? তোর কোন ফ্রেন্ড কে আমার পছন্দ?’ বলে নিজেই ভাবতে ভাবতে বললেন,’রায়েদ!’
মাহীন সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। মিসেস নাসরিনের মুখে বিস্ময় ছড়িয়ে গেল। এতটাই বিস্মিত হলেন তিনি যে কিছুক্ষণ পর্যন্ত তার চোয়াল ঝুলে রইল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে ধীরে ধীরে বললেন,’রায়েদ এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে চার বছর কাটিয়েছে! কী আশ্চর্য।’ এখন তার মুখে বিস্ময়ের বদলে ক্লেশ ফুটে উঠল। তার চোখে কী অদ্ভুত বেদনার ছোঁয়া। মাহীন অবাক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে চেয়ে রইল। মিসেস নাসরিন বললেন,
‘এটা বলতেই হবে যে অন্তত তুই প্রথম বার একটা ঠিক কাজই করেছিস এবার। ভাগ্যিস ওর তোর সাথে দেখা হয়েছিল। ইশ আবার আমাদের বাসায় আসলে ভালো ভাবে আপ্যায়ন করব।’
মাহীন ভাবল, আমি প্রথম বার একটা ঠিক কাজ করেছি? বাহ তাও ভালো আমার কোনো একটা কাজকে তো মায়ের ঠিক মনে হয়েছে।’
মিসেস কী যেন ভাবছেন। তাকে বেশ গম্ভীর দেখাচ্ছে। আর কিছু বলতে পারেন হয়তো সেই অপেক্ষায় রইল মাহীন।কিছুক্ষণ বাদে মিসেস নাসরিন অবশেষে ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে বললেন, ‘শোন এরপরের বার রায়েদের সাথে দেখা হলে ওকে আমাদের বাসায় দাওয়াত দিবি।’
মাহীন ইতস্তত হাসল। এটাই শোনা বাকি ছিল। হয়তোবা ও আশাই করেছিল এমন কিছু একটা শুনবে বিধায় খুব একটা অবাক হলো না। মিসেস নাসরিন বলে গেলেন,’এবং ওর ছোট ভাইকেও দাওয়াত দিবি।’ বলে এক মুহূর্ত থামলেন তারপর আবার বললেন,
‘আচ্ছা এটাতো ষোলো তারিখ। তুই ওকে তেইশ তারিখ দাওয়াত দে। শুক্রবার দুপুরে। জুম্মার পর।’
মাহীন এক লম্বা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হালকা হাসল।
.
.
.
.
টিং টিং শব্দে কলিং বেল বেজে উঠল। মাহীন নিজেই শব্দটায় চমকে উঠল। শব্দটা একটু বেশিই তীক্ষ্ণ ছিলো। আরেকবার বাজানোর প্রয়োজন হলো না এর পূর্বেই দরজা খুলে ছিলো। যেন দরজার ওপারেই কেউ অপেক্ষা করেই দাঁড়িয়ে ছিলো। দরজা খুলেছে লিম জু। হাসি মুখে সরে দাঁড়িয়ে বলল,’ওহ অবশেষে তুমি এসেছো।’
মাহীন ভেতরে প্রবেশ করতে করতে প্রসন্ন কন্ঠে বলল,
‘আসতাম না কেন।’
বলে ভালো ভাবে এদিকওদিক চোখ ঘোরাল। প্রথমেই লিভিং রুম। কামরার মাঝে ফ্যাকাসে সবুজ রঙের সোফা সেট। অদ্ভুত প্রাচীণ ধরনের জিনিসপত্রে ঠাসা একটি সো-কেস। আরেকটি সরু বুক কেস রয়েছে। এবং ছোট একটি কর্ণার টেবিলের ওপর একটি বনসাই রাখা। তা আসল কিনা বোঝা গেল না। কাঠের বাড়ি। তবে মেঝেটা সম্পূর্ণ মোলায়েম ধূসর কার্পেটে মোড়া। দেয়ালের সঙ্গে লাগোয়া সিঁড়ি উঠে গেছে দুই তলায়। লিম সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে মাহীনকেও ইশারা করল। মাহীন ও পেছন পেছন উঠে গেল। ওপরে উঠেই বামে এক সরু করিডরের শেষ প্রান্তে একটি মাত্র দরজা। সরু করিডরেও ভেন্টিলেটরের মোত ছোট একটি জানালা দিয়ে সোনালি রোদ চুইয়ে পরছে। কাঠের মেঝে রোদ পরে ঝিলিক দিয়ে উঠছে। করিডরের শেষ মাথায় থাকা দরজাটি ভেজানো রয়েছে। ভেতর থেকে কথা বলার শব্দ ভেসে আসছে। দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখল জেনেট ও ক্যারোট বিছানায় বসে আছে। সাইলোহ ড্রেসিং টেবিলের চেয়ারে বসে রয়েছে। কামরাটা যথেষ্ট এলোমেলো। মাহীনের মনে হলো ওর নিজের কামরাও বোধহয় এর থেকে বেশি গোছানো হবে। কামরার মাঝে বিছানা, বামে কাবার্ড ও ডানে কাঁচের থাই গ্লাসের স্লাইডিং ডোর দেওয়া বেলকোনি।
মিষ্টি ঝলমলে রোদ এসে গড়াগড়ি খাচ্ছে বারান্দায়। সেই আলো সারা কামরায় এক অদ্ভুত সোনালি আলো বিকিরণ করছে। জেনেট বলল,
‘আহ অবশেষে আমরা সকলে একত্রে হতে পেরেছি। পিকনিকের পর থেকে তো স্কুল ছাড়া একসাথে হওয়া দুষ্কর হয়ে পরেছিল।’
মাহীন বিছানায় ক্যারোলের পাশে বসল। লিম ড্রেসিং টেবিলের পাশে রাখা টুলটায় বসল। লিম বলল,
‘তা ঠিক। সামনেই মিডটার্ম পরীক্ষা। সকলেই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত।’
‘কার এই পরীক্ষার আগে আগে আমার সাথে ডেটে যাওয়া শখ উঠেছে?’ বিষন্ন শোনাল ক্যারোলের কণ্ঠ।
সাইলোহ আমুদে গলায় বলল,’আহা একটা সিম্পল ডেটই তো। তোমাকে তো কেউ বলেনি যে এক ডেটে গেলেই তুমি সেই মানুষের গার্লফ্রেন্ড হয়ে যাবা।’
জেনেট বলল,’লাইক সিরিয়াসলি তুমি কখনো এর আগে ডেটে যাওনি?’
ক্যারোট ড্যাব ড্যাব করে তাকাল একে একে সকলের দিকে। তারপর নির্বিকার চিত্তে বলল,’নাহ!’
সাইলোহ ও জেনেট দুজনেই অবাক হলো। লিম বলল,
‘এত অবাক হচ্ছো কেন? আমিও তো কখনো যাইনি।’
মাহীন বলল,’এবং আমিও!’
সাইলোহ বলল,’তুমি না সেদিনই গেলা?’
‘কোথায়?’ জিজ্ঞেস করল মাহীন।
জেনেট বলল,’ডেটে।’
মাহীন বুঝতে না পেরে দ্বিধান্বিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘কোন ডেটে? আমি ডেটে গেলাম আর আমি নিজেই জানি না দেখছি।’
ক্যারোট চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ওমা সেকি! ওই যে তুমি ডিজনিল্যান্ডে গেলা ডেটে।’
মাহীন বিচলিত হলো। পানসে কন্ঠে বলল,
‘হ্যা ঠিক আছে। তোমার যদি মনে হয় আমি ডেটে গিয়েছিলাম তাহলে ডেটে গিয়েছিলাম। ওহ হ্যা এবং রায়েদ আমাকে প্রপোজও করসে। শান্তি?’ শেষের কথাটা নাটকীয়ভাবে বলল। যদি তা এক অর্থে সত্যি। জেনেট লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,’এই মেয়ে কখনো মানবে না।’
লিম তাড়া দিয়ে বলল,
‘আচ্ছা যাই হোক। এখন ক্যারোটের তৈরিও তো হতে হবে। সময় তো চলে যাচ্ছে।’
জেনেট লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল। বলল,’এই ক্যারোট অনেক দোনোমনা করেছো। এখন ওঠো তো তৈরি হয়ে নাও।’ ক্যারোল মুখ ফুলিয়ে উঠে গেল। মাহীন বারান্দায় এসে পরা সোনালি রোদের দিকে তাকাল। বারান্দার সামনেই এক পাইন গাছ। মাহীন আনমনে তাকিয়ে রইল। ভাবতে লাগল, একটা কথা তো আগে মাথায় আসেনি। ক্যারোট তো অন্য ধর্মের মেয়ে। আর রাবিত মুসলিম। ওদের কোনো প্রকার সম্পর্কই ঠিক নয়। রাবিতের কথায় তখনই রাজি হয়ে যাওয়া উচিৎ হয়নি। ব্যাপারটা নিয়ে ভেবে দেখা উচিৎ ছিল। এখন তো এটা ঠিক হচ্ছে না। এই জন্যেই কী রাবিত রায়েদকে বলতে মানা করেছিল? যাই হোক আমি আর এসবের মাঝে নেই। সবকিছুতেই সাহায্য করতে যাওয়া উচিৎ নয়।’
ইনশাআল্লাহ চলবে।