#হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ২৮
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
,,
,,
-“আরে নীলা, তুমি উঠে পরেছ! যাও তাহলে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আস।” নীলাকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রোকসানা বেগম বললেন কথাটা।
-“আমি ফ্রেশ হয়েই এসেছি আন্টি।”
-“তাহলে আর দাঁড়িয়ে আছ কেন আস নাস্তা করতে বস।”
রোকসানা বেগমের কথায় নীলা ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো। তখন রোকসানা বেগম একটা প্লেটে করে নীলার জন্য নাস্তা নিয়ে এসে তাকে খেতে দিলেন। নাস্তা সামনে নিয়ে বসে আছে সে কিন্তু নাস্তা খাচ্ছে না। এ দেখে রফিক আহমেদ বলে উঠলেন, “কি হলো মা খাচ্ছ না কেন?”
-“আংকেল, যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলি?”
-“কি কথা বল?”
-“আমি এতিম মেয়েকে যে আপনি নিজের বাসায় থাকার জায়গা দিয়েছেন এটাই আমার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আমি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছি না আংকেল। তবে আপনার যদি আমার ভরনপোষণ করতে কোনোপ্রকার সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আপনি আমাকে যেখানে ইচ্ছা সেখানে বিয়ে দিতে পারেন আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আপনি ফারহান স্যারকে আমায় বিয়ে করার জন্য অযথা জোর করবেন না প্লিজ।” নিচু কণ্ঠে কথাগুলো বললো নীলা।
-“তোমাকে আমি সারাজীবন এখানে বসিয়ে খাওয়াতে পারবো, এতে আমার কোনো সমস্যা হবে না। তবে তুমি একজন মেয়ে মানুষ, তোমার তো বিয়েসাদী করে অন্য সংসারে যেতে হবে। তবে আমি চাচ্ছি না তোমাকে অচেনা কারও সংসারে পাঠাই। কারণ তোমার মা আমাকে বিশ্বাস করে আমার কাছে তোমাকে রেখে গেছেন। তাই আমি চাচ্ছি তোমাকে ফারহানের সাথে বিয়ে দিয়ে নিজেদের কাছেই রেখে দিতে।”
-“কিন্তু আংকেল, যে আমাকে বিয়ে করতে রাজি না তার সাথে আমার বিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক হবে?”
-“দেখ মা, কিছুদিন আগে একবার আমরা ফারহানের এক কাজিনের সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু একটা সমস্যার কারণে আর তার সাথে ফারহানের বিয়ে হয়নি। তাই আজকে আবার বিয়ের ব্যাপারে কথা বলাতেই ছেলেটা রেগে গিয়ে ওইসব কথা বলে চলে গেছে। তবে ওকে ভালো করে বুঝালে ও ঠিকই বুঝবে।”
-“তারপরও আংকেল শুধু শুধু…”
-“এখন এইসব কথা বাদ দাও আর নাস্তা কর।”
তারপর নীলা আর কোনো কথা না বলে নিজের মতো নাস্তা করতে লাগলো। ততক্ষণে রফিক আহমেদ নাস্তা শেষ করে উঠে নিজের রুমে চলে গেলেন। এখন শুধু রোকসানা বেগম আর নীলা বসে বসে নাস্তা খাচ্ছেন। হঠাৎ কি মনে করে যেন নীলা বলে উঠলো, “আচ্ছা আন্টি আরশি কে? না মানে তখন ফারহান স্যারকে বলতে শুনলাম উনি নাকি আরশি নামের কাকে ভালোবাসেন।” বলেই নীলা উত্তরের আশায় রোকসানা বেগমের মুখের পানে তাকিয়ে রইলো।
-“আরে আরশি আমার ভাইয়ের মেয়ে। তবে ওর সাথে ফারহানের কোনো সম্পর্ক নেই।”
-“তাহলে ফারহান স্যার যে বললেন উনি আরশিকে ভালোবাসেন।”
নীলার কথা শুনে এবার রোকসানা বেগম কিছুটা ভাবনায় পরে গেলেন যেন। আরশির সাথে ফারহানের কোনো সম্পর্ক নেই এটা তারা ভালো করেই জানেন। কিন্তু আজ হঠাৎ ফারহান কেন তাদেরকে এই কথাটা বললো যে সে আরশিকে ভালোবাসে? এটা উনারও বুঝে আসছে না। এখন নীলাকে এর কি উত্তর দিবেন সেটাই ভেবে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ ভাবার পর তিনি বলে উঠলেন, “আরে ওইযে একটু আগে তোমার আংকেল যে কথাগুলো বলে গেলেন মনেই নেই? কিছুদিন আগেও আমরা ওর বিয়ে ঠিক করেছিলাম আমার বোনের ছেলের সাথে কিন্তু কিছু সমস্যার জন্য ওর সাথে আর ফারহানের বিয়ে হলো না। তাই এখন আবার বিয়ের কথা তুলাতে হয়তো বিয়ে না করার জন্য তখন ফারহান ওই কথাটা বলেছে।”
-“হতেও তো পারে ফারহান স্যার উনাকে সত্যিই ভালোবাসেন।”
-“আরে নাহ, ও এমনিই বলেছে কথাটা। তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক থাকলে কি আমি জানতাম না?”
রোকসানা বেগমের এই কথায় নীলা আর কিছু বললো না, চুপচাপ নিজের নাস্তা শেষ করে উঠে পরলো। কিন্তু রোকসানা বেগম নাস্তার টেবিলেই বসে রইলেন আর মনে মনে ভাবতে লাগলেন, “সত্যিই কি ফারহান আরশিকে ভালোবাসে? নাকি সে নীলাকে বিয়ে করবে না বলে কথাটা বলেছে? কিন্তু এর জন্য ফারহান আরশির নাম-ই কেন নিল? অন্য কারও নামও তো নিতে পারতো। একটু তদন্ত করা লাগবে বিষয়টার উপর।”
.
-“আমি কি ভিতরে আসতে পারি?”
রাতেরবেলা ফারহান বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে তার রুমে চলে আসে। তার ঠিক কিছুক্ষণ পর হঠাৎ সেখানে রফিক আহমেদের আগমন ঘটলো। তিনি এসেই ফারহানের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উক্ত কথাটা বললেন। ফারহান তার আব্বুর এমন কাজে কিছুটা অবাক হলো বটে কেননা তিনি আগে কখনো তার রুমে আসার জন্য অনুমতি নেননি কিন্তু আজ হঠাৎ কি মনে করে তিনি এমনটা করলেন?
-“আরে আব্বু! দাঁড়িয়ে আছ কেন ভিতরে আস। তোমার বাসা তোমার রুম এতে অনুমতি নেওয়ার কি আছে?”
-“কারও থেকে অনুমতি না নিয়ে কোনো কাজ করলে তো আবার পরে কথা শুনা লাগবে, তাই অনুমতি নিয়ে কাজ করাই ভালো।” ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা বললেন রফিক আহমেদ।
-“মানে ঠিক বুঝলাম না।”
-“থাক এতকিছু বুঝা লাগবে না। তা ঘুমাবে কখন?”
-“এইতো একটু পরেই ঘুমিয়ে যাব। তা কিছু বলবা নাকি? না মানে রাতে তো কখনো আমার রুমে আস না তাই জিজ্ঞেস করলাম কিছু বলতে আসছ নাকি।”
-“হ্যাঁ তোমার সাথে একটা বিষয়ে কিছু কথা বলতে আসলাম।”
-“কোন বিষয়ে?” কপাল ভাঁজ করে জিজ্ঞেস করলো ফারহান।
রফিক আহমেদ এবার ফারহানের পাশে গিয়ে বিছানার উপর বসলেন। এরপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলেন, “দেখ নীলার আম্মু আমার ছোটবেলার বন্ধু, নীলার আব্বুও আমার ছোটবেলার বন্ধু। এইসব ব্যাপারে তুমি তেমন কিছু জান না কারণ ওরা এতবছর এই শহরে ছিল না। নীলার আব্বু মা*রা যাবার পর রাবেয়া নীলাকে নিয়ে এই শহরে চলে আসে আর আমার কাছে এসে নীলার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে বলে। তখন আমাদের অফিসে একটা চাকরির পোস্ট খালি ছিল বিদায় আমি তাকে সেখানে সেট করে দেই। তো নীলার আম্মু মা*রা যাওয়ার আগে তার দায়বার আমার কাছে দিয়ে গেছেন। এখন আমার কি উচিত না নীলাকে একটা ভালো পরিবারে বিয়ে দিতে?”
-“হ্যাঁ উচিত। তাই বলে কি আমারই ওকে বিয়ে করা লাগবে?”
-“আহা তুমি বুঝতেছ না। এতিম একটা মেয়েকে অন্য কোথায় বিয়ে দিলে যদি পরে দেখা যায় তার স্বামী খারাপ অথবা পরিবারের লোকজন খারাপ। তখন তো ওরা সবাই মিলে ওর উপর অযথা নির্যাতন করবে। তখন কি আর ওর ভবিষ্যৎ আবার ওকে ফিরিয়ে দিতে পারবো বল? তাই আমি বলছিলাম…”
-“আব্বু, আমি কিন্তু তোমাকে সকালেই বলে দিয়েছিলাম আমি ওই মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না। কারণ আমি আরশিকে ভালোবাসি। কথাটা তোমাদেরকে অনেক আগেই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বলবো বলবো করে আর বলাই হয়নি তবে আজ সকালে কীভাবে যেন কথাট মুখ থেকে বের হয়ে গেছে। এখন তোমরা যদি আমার বিয়ে করাতেই চাও তাহলে একদিন সময় করে আরশিদের বাসায় গিয়ে আমাদের বিয়ের আলাপ আলোচনা করে ফেল।”
-“ফারহান, আরশি তোমার মামাতো বোন হয়। মামাতো বোনকে কি কেউ বিয়ে…”
-“দাঁড়াও দাঁড়াও, আমি জানি তুমি কি বলবা। আমার আর তানিশার বিয়ে করানোর জন্য যখন আম্মু উঠেপড়ে লেগেছিলেন তখন এইসব কথা বলতে পারলা না? এখন কেন আমায় এইসব কথা শোনাচ্ছ?”
-“তুমি কি জান তোমার মামা আরশির জন্য একটা ছেলেকে পছন্দ করেছেন?”
-“হ্যাঁ জানি, তবে ওই ছেলেটার সাথে তো আরশির বিয়ে হবে না।”
-“কেন?”
-“সেটা নাহয় সময় হলেই জানতে পারবা। এখন তোমার যদি এই বিষয় ছাড়া আর কোনো বিষয়ে কথা বলার থাকে তাহলে বল নাহলে তুমি এখন যাও, আমার এইসব কথা শুনতে ভালো লাগছে নাহ।”
ফারহানের কথা শুনে রফিক আহমেদ কিছু একটা বলতে গিয়েও বললেন না। এরপর তিনি ফারহানের রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। রফিক আহমেদ চলে যাওয়ার পর ফারহান দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
.
.
Loading…….