প্রেমিক-অপ্রেমিকের গল্প,১৮

0
449

প্রেমিক-অপ্রেমিকের গল্প,১৮
লেখনীতে- নৌশিন আহমেদ রোদেলা

ডিপার্টমেন্টের গ্রুপে নোটিশ এলো, ভার্সিটিতে পুনর্মিলন অনুষ্ঠান হবে। বিগত দশ বছরের প্রাক্তন ছাত্র থেকে শুরু করে বর্তমানদের নিয়ে আয়োজিত এই মিলনমেলা হবে একদম বাঙালী আঙ্গিকে। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারী, এই ফেব্রুয়ারীই বাঙালিদের আত্মগর্বের নাম। সুতরাং সমাবর্তনের ড্রেস কোডে বাঙালীপনা থাকবে। ব্রিটিশদের ব্রিটিশিয়ান রীতি চলবে না। গোটা ডিপার্টমেন্টে হৈ হৈ পড়ে গেল। সিনিয়ররা ক্লাসে এসে পুনর্মিলনে উপস্থিত থাকার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে হুমকি ধামকি দিয়ে গেলেন। ড্রেস কোড ফলো না করলে কত রকমের আদর-যত্ন করা হবে তার বিশদ ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন। আমি আর প্রিয়তা নিরীহ, ছা-পোষা, বাঙালি ভালো মানুষ। প্রাচীন সংস্কৃতিতে ঠাসা হৃদয়। শাড়ি পরার কথা শুনলেই আনন্দে লাফিয়ে উঠি। এবারও লাফিয়ে উঠলাম। প্রেম, অ-প্রেম, বদমাইশ পুলিশ অফিসারকে নিয়ে জাগতিক সমস্যা ভুলে গিয়ে দু’হাত ভরে কেনাকাটা করলাম। বড় ভাইয়া, ছোট ভাইয়া, বাবা সবার থেকে এক যুগে টাকা আদায় করে একসঙ্গে বারো, তেরো রঙের শাড়ি কিনে হুলস্থুল কান্ড ঘটিয়ে ফেললাম। পরবর্তী তিন-চারদিন কোন রঙের শাড়ি পরা যায় তা নিয়ে বিশদ গবেষণা চলল। লাল পরলে র্যাগ খাওয়ার সম্ভবনা কতটুকু? হলুদটা বড় ম্যারম্যারে। নীল পরব? নাকি বেগুনী? গোলাপিটাও বেশ চলে। আচ্ছা, সাদা রঙটা কেমন হয়? বহু চিন্তা-ভাবনা করে আগাগোড়া বাঙালি সাজার সিদ্ধান্ত নিলাম। ছোট ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বেলীফুলের মালা চেয়ে আহ্লাদী হলাম। বেলী সদা বর্ষাফুল। শীতে সে অভিমানী। দেখা মেলা ভার। আমার জেদী, বেপরোয়া ছোট ভাইয়া কীভাবে কী করলো জানা নেই। তবে বর্ষা ফুলের অভিমান ভেঙে গেল। এক গোছা বেলীর মালা ঠিক ঠিক দুইদিনের মাথায় দরজায় এসে হানা দিলো। বহুদিন পর আমি প্রাণভরে সাজলাম। লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, হাতে-পায়ে আলতা, চোখ ভরা কাজল, মেকাপহীন ফর্সা মুখে রঙ মাখা ঠোঁট। হাতদুটোতে ঝনঝনে কাঁচের চুড়ি। কানে টানা ঝুমকো। কোমরে বিছা। কাছের বান্ধবীগুলোও একই সাজে সাজলো। ধ্রুব জনিত গুজব ছাড়ানোর পর গা ঢাকা দেওয়ার যে চেষ্টা ছিলো, সেই হালকা পর্দাটা এবার খসে পড়লো। পুরোনোদের সাথে আবারও প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠল বন্ধুত্ব। পুনর্মিলনের মাঠে হৈ হৈ আনন্দ বয়ে গেল। চঞ্চল শশকের মতো ছুটলাম। বহুদিন পর আবারও কিশোরীর মতো হাসলাম। প্রিয়তার শাড়িতে অভ্যাস নেই। শাড়ির কুঁচি সামলানো নিয়েও প্রেমিকের সাথে বিপুল ঝগড়া বাঁধালো। তবে তার প্রেমিক মহাশয় বুদ্ধিমান। প্রিয়তার অহেতুক ঝগড়ার ধারেকাছেও গেলেন না। প্রিয়তার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসলেন। অসীম ধৈর্য নিয়ে প্রেমিকার অভিযোগ শুনলেন। সব শর্ত মেনে নিয়ে প্রিয়তমার সুন্দর মুখখানির দিকে বিমুগ্ধ চোখে চেয়ে রইলেন৷ নিজস্ব মেজাজ খারাপটা প্রেমিকের উপর ঝেড়ে দিয়ে ফুরফুরে মনে আমার পাশে এসে দাঁড়াল প্রিয়তা। শাড়ির কুঁচি গোছাতে গোছাতে শুধাল,

‘ ছোট মামা আসেনি নিশু? কোথাও যে দেখছি না?’

আমার এবার চট করেই ছোট মামার কথা খেয়াল হলো। সত্যি তো! ছোট মামাকে যে দেখছি না? ছোট মামার কী পুনর্মিলনের কথা খেয়াল নেই? নাকি দেয়ালে টানানো ক্যালেন্ডারে আজকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনটির কোনো রিমাইন্ডার নেই? ছোট মামা এই ইউনিভার্সিটিরই অনিয়মিত, উদাসীন, আমোদপূর্ণ, ভীষণ বাজে রেজাল্ট করা প্রাক্তন ছাত্র। আর আমার জীবনে খুব প্রিয় একটি চরিত্র। প্রিয়তার প্রশ্নে এদিক-ওদিক চেয়ে ছোট মামাকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম আমি। প্রিয়তা অধৈর্য হয়ে বলল,

‘ মামাকে একটা কল করে দেখ না? ছোট মামার সাথে দেখা হলে কত আনন্দ হতো!’

আমি সম্মত হলাম। এদিকটায় খুব হৈ-হুল্লোড় বলে ফোন হাতে বাগান পেরিয়ে ক্যান্টিনের দক্ষিণ দিকে হাঁটা দিলাম। হাঁটতে হাঁটতেই আমাদের বাড়ির সবচেয়ে অব্যবহৃত, প্রাচীন টেলিফোনটিতে ফোন লাগালাম। সুপ্রসন্ন ভাগ্যটা মৃদু হাসল। ফ্যাকচার হওয়া টেলিফোনটাতে মৃদুমন্দ জীবনের আবাস পাওয়া গেল। কিন্তু ফোন রিসিভ হলো না। আমি ফোনের দিকে একনিষ্ঠ মনোযোগ রেখেই আনমনে সামনে তাকালাম। প্রায় সাথে সাথেই দুটো বিস্মিত, বিমুগ্ধ চোখে চোখ পড়ল। এই প্রথম আমার দৃষ্টি থমকাল না। বিচলিত হলাম না। কপালের ভাঁজে সহজাত চিন্তা নিয়েই চোখ নামিয়ে ফোনের স্ক্রিনে নিবদ্ধ হলাম। তারপর চোখ তুলে সিনিয়রদের প্রতি স্বভাবজ শ্রদ্ধা নিয়ে মৃদু হাসলাম। বিনীত কন্ঠে বললাম,

‘ আসসালামু আলাইকুম।’

সামনে দাঁড়ানো মানুষটিকে এক মুহূর্তের জন্য বোবা বলে বোধ হলো। মুখ ফুটে একটি শব্দও উচ্চারণ করল না। চোখ-মুখের পেশীতে কোনো পরিবর্তন এলো না। আগের মতোই নিশ্চুপ বিস্ময়ে বড় বড় চোখ মেলে চেয়ে রইল। পাশে থাকা অন্যান্যরা সালামের জবাব নিতেই তার সম্বিৎ ফিরল। হন্তদন্ত হয়ে চোখ সরাল। পাঞ্জাবীর কলার ঝাঁকিয়ে চারপাশে কেমন অগোছালো, উদভ্রান্ত দৃষ্টি ছুঁড়ে আবারও আমার মুখের উপরই দৃষ্টি নিবিষ্ট করল। তার নিষ্পলক, বোবা দৃষ্টিতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম আমি। ইতস্তত করে বললাম,

‘ আমি একটু ওদিকে যাব।’

সামনে দাঁড়ানো মানুষটির কোনো ভাবান্তর হলো না। আগের মতোই ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। পাশ থেকে একজন মৃদু ধাক্কা দিতেই মৃদু কেঁশে উঠল সে। অপ্রস্তুত হয়ে বলল,

‘ হু?’

আমি পেছনের দিকে ইঙ্গিত করে বললাম,

‘ ওদিকে যাব।’

এইবারে সে পথ ছেড়ে দাঁড়াল। আবারও আগের চরিত্রে ফিরে গিয়ে ঝুপ করেই গম্ভীর বনে গেল। মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুলগুলো পেছন দিকে ঠেলে দিয়ে মেঘমন্দ্র গাম্ভীর্য নিয়ে বলল,

‘ ওহ! সরি।’

আমি চাইলাম। কন্ঠে তার রাশভারী স্বাভাবিকত্বের ছটা। একটু আগের নির্বোধ, ফ্যালফ্যালে চাহনির জন্য কোনো আত্ম-অনুশোচনা নেই। অনুশোচনাহীন সদা চপল মুখখানিতে আত্মবিশ্বাসের বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই। ধ্রুব একটু সরে দাঁড়িয়ে কোনোরকম রাখঢাকের ধার না ধেরে একদম সরাসরি আমার দিকে চেয়ে রইল। আমি অপ্রস্তুত হলাম। ফোন হাতে জায়গাটা ছেড়ে সরে গেলাম। পেছনে ফেলে গেলাম ধ্রুবর বন্ধুদের ইঙ্গিতপূর্ণ কৌতুক। ক্যান্টিনের দক্ষিণে, দিঘির পাশে দাঁড়াতেই বাড়ির প্রাচীন টেলিফোনটা নড়েচড়ে উঠল। কিছুক্ষণ খসখসে আওয়াজ তুলে খুব গম্ভীর অথচ শক্ত কন্ঠ ভেসে এলো,

‘ কে বলছেন?’

গম্ভীর কন্ঠটিতে স্পষ্ট বিরক্তি টের পেয়ে মৃদু হাসলাম। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললাম,

‘ ছোট মামা কোথায়, বাবা? ছোট মামার সম্পত্তিতে হঠাৎ তোমার হাত পড়ার কারণ কী?’

বাবার গাম্ভীর্য কেটে গেল। কৃত্রিম বিরক্তির সুরে বললেন,

‘ এমন ইডিয়ট একটি ছেলেকে ছোট মামা, ছোট মামা বলে হল্লা করার কোনো কারণ নেই। ওকে দিনরাত ইডিয়ট মামা বলে ডাকা উচিত। তাহলেই সে বুঝবে সে আদ্যোপান্ত একটি ইডিয়ট। তার মাঝে বুদ্ধিমত্তা বলে কোনো পদার্থ নেই।’

ফেব্রুয়ারীর দ্বিতীয় সপ্তাহ। দিঘীর পাড়ে ফুরফুরে বাসন্তী হাওয়া। গায়ের শাড়িটা, আগলা চুলটা এলেমেলো করে দেওয়ার মতো পাগলাটে তার রূপ। একহাতে মুঠোফোন আর অন্যহাতে চঞ্চল শাড়ির আঁচল সামলাতে সামলাতে হিমশিমিয়ে যাওয়া কন্ঠে প্রত্যুত্তর করলাম,

‘ ছোট মামা একদমই ইডিয়ট নয়, বাবা। হি ইজ আ মিসটরিয়াস পার্সোন। সুতার্কিক হিসেবে রূপোর মেডেল পর্যন্ত জিতেছে। বোকারা কখনো সুতার্কিক হয় না। তর্ক করার জন্যও বুদ্ধির প্রয়োজন হয়। তুমি কোনো সুতার্কিককে হুট করে ইডিয়ট বলে ফেলতে পারো না।’

বাবা বিরক্ত হয়ে বললেন,

‘ কোনো সুতার্কিক বাজারের টাকা নিয়ে পালিয়েও যায় না। মানুষ কতটা অশিষ্ট হলে বাজারের টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়? তাও এই দামড়া বয়সে?’

এবারে আমি হেসে ফেললাম। কোনোরূপ প্রতিবাদ খাটলো না। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি থামানোর চেষ্টা করে বললাম,

‘ ছোট মামাকে এখন কোথায় পাওয়া যাবে, বাবা?’

বাবা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

‘ কোথাও পাওয়া যাবে না। পাওয়া যাওয়ার দরকারও দেখছি না। আর যদি দুর্ভাগ্যবশত পেয়ে যাও তবে তাকে বলবে, সে যেন অবশ্যই এ বাড়িতে না আসে। ওর জন্য আমার বাড়ির দরজা বন্ধ। ক্লোজড।’

আমি নিঃশব্দে হাসলাম। বাবার থেকে বিদায় নিয়ে কন্ট্রাক্ট লিস্ট খুঁজে পেতে বহু পুরোনো এক নাম্বার পেলাম। ছোট মামা কালে ভাদ্রে এই নাম্বার ব্যবহার করেন। সেই ‘কালে ভাদ্রে’ সময়টা খুঁজে পাওয়ার জন্য সবসময়ই সুপ্রসন্ন ভাগ্যের প্রয়োজন হয়। এই মুহূর্তে আমার ভাগ্যটা কতটুকু সুপ্রসন্ন, বুঝা যাচ্ছে না। আমি ভাগ্য পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিলাম। কয়েক সেকেন্ড ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে থেকে ‘কালে ভাদ্রে’ জীবিত থাকা নাম্বারটাই ডায়াল করলাম। কিছুক্ষণ বাদেই বুঝলাম, ভাগ্যটা সুপ্রসন্ন। ভাগ্যের সাথে সহৃদয় বিধাতার কোনো কাটাকাটি নেই। ছোট মামা কোনো ভূমিকা টানলেন না। ফোন রিসিভ করেই গড়গড় করে বলতে লাগলেন,

‘ তোর বাপটা কী রকম হারামি রে টুনটুনি। আমি বাড়ি থেকে এক পা বেরিয়েছি কী বেরুইনি তোর বাপ আমার নামে পত্রিকায় খবর ছাপিয়ে দিল? খবরের কাগজে দেওয়া আমার হাসি হাসি ছবিটা কোথায় পেল? তোর বাপের সাথে তো কোনোরকম হাসি হাসি সম্পর্ক আমার নেই। তবে? ভারী চিন্তার বিষয়!’

আমি গলার স্বর গম্ভীর করার চেষ্টা করে বললাম,

‘ তুমি নাকি বাজারের টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছ, ছোট মামা?’

ছোট মামা আকাশ থেকে পড়ার মতো অবাক হলেন। বিস্ময় নিয়ে বললেন,

‘ পালিয়ে গিয়েছি? আমি কী চোর, ডাকাত যে পালিয়ে যাব? আমি তো ঘুরতে এসেছি। বাজারে চা খেতে বসে হঠাৎ মনে হলো, চা বাগানে বসে, গাছ থেকে ইন্সট্যান্ট চা-পাতা তুলে চা বানালে টেস্টটা কেমন হবে?সেই টেস্টটা জানতে সিলেট এসেছি। টেস্ট জেনে চলে যাব। তোর বাপের টাকায় একটা ফ্লাক্স কিনেছি। চমৎকার ফ্লাক্স। ফ্লাক্স ভরে তোর আর নিনিতের জন্য চা নিয়ে যাব। আরাম করে খাবি। খেয়ে রিভিউ দিবি।’

আমি হতাশ হয়ে বললাম,

‘ চায়ের এক্সপেরিয়েন্সটা ক’দিন পর করলে হতো না ছোট মামা? আজ যে তোমাদের পুনর্মিলন জানতে না?’

ছোট মামা গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

‘ পুনর্মিলন অর্থ জানিস? পুনর্মিলন অর্থ হলো বিচ্ছেদের পর আবার মিলন। কিন্তু এখানে তো মিলন টিলন কিছু হচ্ছে না। এখানে চলছে ফাঁকি। ঘন্টাখানেকের দেখা সাক্ষাৎ করিয়ে বলছে মিলন ঘটে গিয়েছে। কিন্তু মিলন এতো সহজ না। এমন মিলন শহরে গেলে চায়ের দোকানেই হয়ে যায়। এমন মিলনের জন্য অতো লাফালাফি করার কিছু নাই।’

আমি হতাশ হলাম। কল কেটে সামনে তাকাতেই ক্যান্টিনের ঠাঁ করে খোলা জানালা চোখে পড়ল। ক্যান্টিনে আজ জনারব নেই। থাকার কথা না। সকলেই পুনর্মিলনের মাঠে ব্যস্ত। আড্ডা, হৈ-হুল্লোড়, নাচ-গানে ঝলমল করছে ওদিকটা। তবুও আমার মনে হলো কেউ একজন আমায় খেয়াল করছে। ওই খোলা জানালার অন্ধকারে লম্বা কোনো ছায়া দাঁড়িয়ে আছে। কেউ একজন একনিষ্ঠ চোখে চেয়ে দেখছে আমারই পূঙ্খানুপুঙ্খ অঙ্গভঙ্গি। আমার গলা শুকিয়ে গেল। মনের গহীনে মৃদুমন্দ ভয় ছড়ালো। দ্রুত পায়ে ক্যান্টিনের এড়িয়া পেরিয়ে, মাঠ পেরিয়ে মূল অনুষ্ঠানের দিকে ছুটলাম। কিন্তু পথিমধ্যেই এক অঘটন ঘটে গেল। মূল অনুষ্ঠান থেকে কিছুটা দূরে, ডিপার্টমেন্টের টানা করিডোরে দাঁড়িয়ে আছেন পরীক্ষার হলের সেই গুণমুগ্ধ স্যার। তাঁর পাশেই বিনীত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে ধ্রুব। কিছু একটা আলোচনা চলছে। আমি মনে মনে বিরক্ত হলাম। কিছুটা শঙ্কিত হলাম। স্যারের নজর বাঁচিয়ে চলার জন্য পেছন দিকে দৌঁড় দেওয়ার পরিকল্পনা করতেই অঘটন যা ঘটার ঘটে গেল। এতো এতো ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে স্যারের নজরটা আমার উপরই পড়ে গেল। আমার পা জোড়া বরফের মতো জমে গেল। প্রচন্ড অসহায় চোখে স্যারের দিকে চেয়ে রইলাম। স্যার আমার করুণ চাহনিকে খুব একটা পাত্তা দিলেন না। হাতের ইশারায় কাছে ডেকে বললেন,

‘ এই মেয়ে? এদিকে। এদিকে আসুন।’

স্যারের দৃষ্টি অনুসরণ করে পাশ ফিরে চাইল ধ্রুব। আমি শুকনো ঢোক গিললাম। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে দুয়েক পা এগিয়ে গিয়ে সালাম দিলাম। স্যার সরু চোখে চাইলেন। ভ্রু কুঁচকে বললেন,

‘ আপনি নিশিতা না? ফার্স্ট ইয়ার?’

আমার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুলো না। আড়চোখে একবার ধ্রুবর দিকে চেয়ে মাথা নাড়লাম। স্যার মৃদু হাসলেন। হাতের ইশারায় একজন ম্যানেজমেন্ট কর্মীকে ডেকে তিন কাপ চা দিতে বললেন। আমার দিকে চেয়ে খুব উৎসাহ নিয়ে বললেন,

‘ চা খান। ক্যাম্পাসের ম্যাগাজিনে আপনার লেখা আমি পড়েছি। ভালো লিখেন।’

শ্রদ্ধেয় স্যার ধ্রুব অথবা পড়াশোনা জনিত কোনো প্রসঙ্গ টানেননি বলে মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আসন্ন বিপদ থেকে বেঁচে গিয়েছি বলে আনন্দ হলো। কিন্তু আনন্দ বেশিদূর টিকলো না। স্যারের বুঝি আমার আনন্দটুকু ঠিক সহ্য হলো না। আমার ঠোঁটের কোণে মিহি হাসি ফোঁটার আগেই খুব সহজ কন্ঠে বলে ফেললেন,

‘ কিন্তু পড়াশোনার অবস্থা তো ভয়াবহ। আপনার পরীক্ষার খাতা আমি দেখেছি। একদম লাড্ডু।’

আমার মাথায় এবার বড়সড় এক বজ্রপাত হলো। লজ্জায়, অপমানে এই পৃথিবী থেকে অন্তর্ধান করতে ইচ্ছে হলো। নয়তো পৃথিবীটাকে দ্বি-খন্ডিত করে আমার ছোট্ট শরীরটাকে জ্বলন্ত লাভার মাঝে ছুঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে হলো। চোখের পলকে নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে অসহায় নারী বলে বোধ হলো। সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভারী অভিমান হলো। পৃথিবীতে এতো মানুষ রেখে ধ্রুবর মতো নাক উঁচু, অহংকারী ছেলের সামনেই বারবার এমন রূঢ় সমালোচনার স্বীকার হতে হবে কেন? তার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে কী এমন হতো? পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতো? আকাশ ফেঁটে লাভা গড়াতো? আমি ফাঁটা বেলুনের মতো চুপসানো মুখ নিয়ে স্যারের দিকে চেয়ে রইলাম। মনের ভুলেও চোখের দৃষ্টি ইঞ্চিখানেক এপার-ওপার করে ধ্রুবর দিকে চাইলাম না। স্যার আমার থেকে চোখ সরিয়ে ধ্রুবর দিকে চাইলেন। ভূমিকাহীন অভিযোগ তুলে বললেন,

‘ মেয়েদের জীবনে পড়াশোনা খুব ইম্পোর্টেন্ট। তুমি একটা পজিশনে গিয়েছ। তোমার উচিত সবার অনুপ্রেরণা হওয়া। মেয়েটার সৃজনশীলতা চমৎকার। কিন্তু পড়াশোনা করে বলে মনে হয় না। বান্ধবীকে পড়তে টড়তে বলো না?’

ধ্রুব অপ্রস্তুত হলো। বয়সে এতো ছোট মেয়েকে স্যার কোন দৃষ্টিতে বান্ধবী বলে সম্বোধন করছেন, তা বুঝতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না। বার কয়েক খুক খুক করে কেশে আড়চোখে আমায় দেখলো। আঙুলের ডগা দিয়ে ভ্রু কুঁচকে, কালচে ঠোঁটদুটোতে কৌতুক ভরা হাসি চেপে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আমার নামে স্যারের সকল অভিযোগ শুনলো। কিছুক্ষণ হু, হ্যাঁ করে সরাসরি আমার দিকে চাইল। আমার মুখটা তখন থমথমে, কালো। রাগে, অভিমানী অমাবস্যার পেঁচা। ধ্রুব আমার দিকে চেয়ে কিছু একটা বলতে গিয়েও হেসে ফেলল। স্যারকে আশ্বস্ত করতে বলল,

‘ এখন থেকে বেশি বেশি পড়াশোনা করবেন নিশিতা হক ত্রপা। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবেন। পরীক্ষায় লাড্ডু পেলে চলবে না।’

আমি মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার মন খারাপ। মনে মনে এই পৃথিবীতে না থেকে বেদুইন হয়ে মহাকাশে পাড়ি জমালে কেমন হবে তাই ভাবছি। ধ্রুব আড়চোখে আমাকে দেখে নিয়ে সুর পাল্টাল। মৃদু কেশে বলল,

‘ লেখিকারা খুব বুদ্ধিমতী হয় স্যার। আমার বিশ্বাস, ফাইনালে তিনি টপ রেঙ্ক করবেন। আপনি চিন্তা করবেন না।’

আমার ভ্রু’জোড়া খানিক কুঁচকে গেল। ধ্রুব কৌতুক করছে নাকি সিরিয়াস বুঝার জন্য আড়চোখে চাইলাম। ধ্রুবও ঠিক সেই সময়টাতেই চাইল। চোখে চোখ পড়ল। তবে ভারতীয় ধারাবাহিকের মতো চোখে চোখে কথা হলো না, পরিবেশের স্বার্থে প্রেমের গান বাজলো না। যা বাজলো তা হলো স্যারের সুতীক্ষ্ণ হাস্যস্বর। প্রবীণ স্যার আকাশ-বাতাস আলোড়িত করে হেসে উঠলেন। চারপাশের উৎসাহী দৃষ্টি, আমাদের অপ্রস্তুত ভাব সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে আমোদিত কন্ঠে বললেন,

‘ আমাদের সময় যে কেন নিজের বয়স থেকে পাঁচ সাত বছরের ছোট বান্ধবী পাওয়া যেতো না, তা ভেবে খুব আফসোস হচ্ছে। আমাদের বান্ধবী হতো সমানে সমানে। ক্লাসের নোটস্ দিতে গিয়ে টুক করে কথা বলা। স্যারের সাথে কমন রুমে যেতে যেতে প্রিয় বান্ধবীর একটুখানি পেছন ফিরে তাকানো। বইয়ের মাঝে চিঠি ঠুসে দেওয়া। এবড়োখেবড়ো মাটির রাস্তায় বান্ধবীদের পেছন পেছন সাইকেল ছুটানো। আমাদের সময় প্রেম ছিল অন্যরকম। বান্ধবীদের দেখে আমাদের লজ্জায় বুক কাঁপতো। তোমাদের কাঁপে ভয়ে। এখন মনে হচ্ছে একটু ভয় পাওয়ার সুযোগ হলেও মন্দ হতো না। কী বলো ধ্রুব?’

ধ্রুব এক নজর আমার দিকে চাইল। তার তীক্ষ্ণ চাহনিতে এক লহমায় পড়ে নিল আমার ভেতরটা। শুষে নিলো মনের সব কথা। তারপর চোখ ফিরিয়ে, ঠোঁটের কোণে অপ্রস্তুতের হাসি নিয়ে বিনীত কন্ঠে বলল,

‘ তেমন কোনো ব্যাপার নেই স্যার। ওসব বাজে কথা। রাণীমা কাকের মা হয়েছেন ধরনের গল্প। কে বা কারা একটা সম্ভবনা ছুঁড়ে দিয়েছে। আর তারওপর ভিত্তি করেই একটা মিথ তৈরি হয়ে গিয়েছে। নিশিতা এবং আমি, দুজনকেই খুব বিব্রত হতে হচ্ছে। আপনি প্লিজ ওসবে কান দেবেন না।’

এতক্ষণ মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থেকে এবারে প্রলম্বিত শ্বাস ফেললাম আমি। ধ্রুব এবার সুন্দর কথা বলেছে। তার আমার পরিচয়ের এই দীর্ঘ সময়ে তার এই একটিমাত্র কথাই আমার পছন্দ হয়েছে। আমি আর ধ্রুব আগ্রহ নিয়ে স্যারের দিকে চেয়ে রইলাম। স্যার মৃদু হাসলেন। মাথা নেড়ে সম্মত হলেন। বিদায় বেলায় হাসি মুখেই অপ্রত্যাশিত এক কৌতুক করলেন। পাশের এক ভদ্রমহিলাকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় বললেন,

‘ ও ধ্রব। তেরো-চৌদ্দ সেশনের ছাত্র। ওয়ান অব মাই ফেবারিট স্টুডেন্ট। এবার বিসিএস দিয়ে এএসপি হয়েছে। ভেরি ব্রাইট স্টুডেন্ট।’

নিজের প্রসংশায় অস্বস্তিতে হাসফাস করে উঠল ধ্রুব। অপ্রস্তুত হলো। ঠোঁটের কোণে জোরপূর্বক হাসি টেনে আমার মতোই বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। স্যার সেই জোরপূর্বক হাসিটাকেও এক লহমায় উধাও করলেন। আমাকে আর ধ্রুবকে স্তব্ধ করে দিয়ে বললেন,

‘ আর ও হলো ধ্রুবর ছোট বোন। দূর্দান্ত লেখালেখি করে। ধ্রুব তোমার ছোটবোনের পুরো নামটা যেন কী? নিশিতা হক?’

ধ্রুব তৃতীয়বারের মতো কেশে উঠল। প্রেমীযুগলের খাতা থেকে নিজেদের নাম কাটার বিপরীতে স্যার যে এমন এক ভয়ঙ্কর সম্পর্কের দাবী টেনে বসবেন তা ধ্রুব বা আমি ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারিনি। যতই ধ্রুব পুলিশ হোক। যতই বাবা পুলিশ বয়কট রীতি নিয়ে হৈ হৈ করুক। ধ্রুবর মা যতই আমায় অপছন্দ করুক। যতই আমাদের অ-প্রেম হোক। তবু, ভাই-বোনটা বড্ড বাড়াবাড়ি। বুকে ব্যথা হওয়ার মতো। মেজাজ খারাপ হওয়ার মতো বাড়াবাড়ি। আমি মনে মনে তওবা পড়লাম। ধ্রুব স্যারের দিকে বিস্ময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার দিকে চাইল। চোখাচোখি হলো। আমাদের দু’জনেরই মন বুঝি একই সাথে, একই রকম ভাবে চেঁচিয়ে উঠল। আকাশ বাতাস আলোড়িত করে প্রতিবাদ করল,

‘ ভাই-বোন! নহে! কদাপি নহে!’

মনের প্রতিবাদ মনেই রইলো। গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুলো না। ধ্রুব মৃদু কেঁশে গলার শ্লেষ্মা পরিষ্কার করল। স্যারের প্রশ্নটা কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলল,

‘ সবাই খেতে বসে গিয়েছে। স্যার-ম্যাম? আপনারও আসুন না।’

সেই আলোচনা সেদিনের মতো সেখানেই সমাপ্ত হলো। কিন্তু আমার জন্য বিশাল এক বিপদ হয়ে গেল। পুলিশ মহাশয়কে চোখ-কান-নাক-মুখ-হৃদয় দিয়ে এড়িয়ে যাব বলে যে কঠোর সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম সেই সিদ্ধান্তটায় মৃদু ফাঁটল ধরলো। ধ্রুবর আজকের ব্যবহারে, চোখের দৃষ্টিতে সূক্ষ্ম পরিবর্তনটা চোখ এড়ালেও মন এড়াতে পারল না। মন বেচারী বুকের পাটাতনে পা ছড়িয়ে বসে পান চিবুতে চিবুতে বিস্তর গবেষণা করলো। পাশের বাসার ভাবিদের মতো ছুঁচালো চোখে চাইল। চোখ কপালে তুলে ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ কী ব্যাপার রে নিশু? এই দামড়া পুলিশ অফিসারের হঠাৎ এমন ভীমরতি ধরার কারণ কী? এমন হা করে দেখছেটা কী? হাওয়ায় কেমন বসন্ত বসন্ত গন্ধ! বিয়ের খুশিতে পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি আবার?’

আমি ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললাম। মন বেচারাকে হৃদয়ের গহীন হিমাগারে বন্দী করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। তবে সে ক্ষান্ত হলো না। শহরের গায়ে সন্ধ্যের চাদর আছড়ে পড়তেই। পথের ধারে রাত বাতির উজ্জ্বলতা ছড়াতেই বন্দী হিমাগারে নিষ্ঠুর পদাঘাত পড়ল। ধ্রুবর লতানো গোলাপ অন্ধকার বারান্দায় বন্য সুবাস ছড়াল। জমিলা আপার চুলোয় হাঁড়ি উঠল। আমিও বাসায় ফিরে, কাপড় পাল্টে নতুন এক লেখার জন্য জার্নাল ঘাটতে বসলাম। চিরপরিচিত সন্ধ্যাটা রাতের প্রহরে পা রাখার সাথে সাথেই শশকের মতো ছুটে এলো প্রিয়তা। আমি বসার ঘরের সোফায় পা উঠিয়ে বাবু হয়ে বসে ছিলাম। নাকের ডগায় হালকা পাওয়ারের চশমা। কপালে ভাঁজ। সোফার গদি আর টি-টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জার্নালগুলোতে নিরবিচ্ছিন্ন মনোযোগ। প্রিয়তা ছুটে এসে গম্ভীর মুখে চেয়ে রইল। ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত করছে এমন ভাব নিয়ে আমায় আগাগোড়া নিরক্ষণ করল। আমি চোখ তুলে চাইলাম। অবহেলা ভরে এক নজর চেয়েই চোখ নামালাম। জার্নালে মুখ ডুবিয়ে দীর্ঘ চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে খুব দায়সারা কন্ঠে শুধালাম,

‘ কী ব্যাপার?’

প্রিয়তা ব্যাপার বলল না। মুঠো ফোনটা চোখের সামনে মেলে ধরে সন্দিহান প্রশ্ন ছুঁড়লো,

‘ সেটাই তো, কী ব্যাপার?’

আমি চোখ তুলে চাইলাম। প্রিয়তার কৃত্রিম গাম্ভীর্যে ঢাকা মুখটির দিকে এক নজর চেয়ে ফোনের দিকে চাইলাম। ধীরে ধীরে কুঁচকে এলো চোখ। হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলাম। চশমাটা নাকের উপর ঠেলে দিয়ে বললাম,

‘ এটা আবার কী?’

প্রিয়তার কৃত্রিম গাম্ভীর্য উবে গেল। অকৃত্রিম উত্তেজনায় ছটফটিয়ে উঠে বলল,

‘ কনফেশন। দিন দিন কত প্রেমিক জুটছে রে তোর! এইটা কে হতে পারে বল তো? গেইস কর।’

আমি গেইস না করে ফোনের স্ক্রিনে মনোযোগ দিলাম। আমাদের ক্যাম্পাসের ‘ক্রাশ এন্ড কনফেশন’ গ্রুপে আমার নামে চিঠি এসেছে। কয়েক লাইনের সাদামাটা ছোট্ট এক চিঠি। প্রেরকের নাম-ধাম নেই। লেখক খুব সাবলীল ভাষায় লিখে দিয়েছে নিজের মুগ্ধতার কথা। প্রেমে পড়ার কথা। সেখানে লেখা,

‘ তোমাকে পাওয়ার উপায় নেই জেনেও তোমায় চাওয়াটা, তোমার প্রতি অন্যায়। সব থেকে অন্যায় আমার নিজের প্রতি। তবুও, এই অন্যায়টা আমি করে ফেলেছি। না চাইতেও তোমাকে কাঠগোলাপের সাথে তুলনা করে ফেলেছি। চাঁদের সাথে তোমার আভিজাত্য নিয়ে বিস্তর তর্ক করেছি। বুনো গোলাপকে বলেছি তোমার মিষ্টতার কথা। বিষণ্ন সন্ধ্যাকে বলেছি আমার প্রেমে পড়ার কথা। আমি খুব নিষ্ঠুরভাবে তোমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি ত্রপা। সবার জন্য নিশু, একমাত্র আমার জন্য ত্রপা। তুমি কাছে এলেই ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে। তুমি আমার এতো কাছে এসো না ত্রপা।’

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here