ভালোবাসি_বলে_দাও #আরিশ❤আরু #Suraiya_Aayat 13.

0
420

#ভালোবাসি_বলে_দাও
#আরিশ❤আরু
#Suraiya_Aayat

13.

টানা এক সপ্তাহ ধরে চোখ কান বুজে কেবল পড়াশোনা করেছি, সববিষয়ের সবরকম পড়া কভার করেছি। কাল রাতে টানা এক সপ্তাহ পর আরিশ ভাইয়া ফোন করেছিলেন। ওনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা না করলেও বলতে হয়েছে, রাগ হচ্ছিল তার একটাই কারন যে উনি টানা এক সপ্তাহ আমার কোন খোঁজ খবর নেননি। উনি কল কাটার আগ অবধি একটাই কথা বলেছেন যে,
‘ যদি গোল্ডেন এ প্লাস পাই তো আমি যা বলবো উনি আমার সেই কথাটা রাখবেন। ‘

আর কিছুর জন্য না হলেও আমার ওয়াইল্ডেস্ট ফ্যান্টাসি ওনাকে জানানোর জন্য হলেও আমাকে সেই সুযোগ হাসিল করতে হবে আর তার একটাই উপায় গোল্ডেন এ প্লাস।

সকাল সকাল হালকা কিছু ব্রেকফাস্ট করে বাবা আর আম্মুকে সালাম করে বেরিয়ে এলাম বাসা থেকে, গেটের কাছে আশরাফ চাচাকে দেখে ওনাকে সালাম করতে নিলেই উনি তার আগেই মাথায় হাত রেখে বললেন,
‘ভালো করে পরিক্ষা দিয়ো গো আরুমা নাইলে এই আরিশ বাবার কাছে তোমার খবর আছে। ‘

কথাটা শুনতেই আমি ওনার দিকে তাকালাম। উনি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আর আমার দিকে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছেন। ওনার এমন চাহনি দেখে আমার গলা শুকিয়ে এলো। আশরাফ চাচাকে সালাম করে ওনার সামনে এসে দাঁড়াতেই ওনার দিকে কাচুমাচু মুখ করে একবার মাথা নীচু করে নিলাম। উনি সানগ্লাসটা পকেটে পুরে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
‘কি হয়েছে?’

আমি ওনাকে সালাম করবো কি করবো না তা নিয়ে কনফিউজড। ওনার দিকে আর একবার তাকিয়ে নিয়ে আবার মাথা নীচু করে দিলাম। উনি বোধহয় বিরক্ত হলেন এবার। গাড়ির দিকে চলে যেতে নিলেই আমি বেশ তড়িঘড়ি করে বললাম,
‘এই আরিশ ভাইয়া দাঁড়ান। ‘

উনি দাঁড়িয়ে গেলেন, আমি ওনাকে সালাম করার জন্য নীচু হতে গেলেই উনি আমার হাত ধরে আমাকে আটকে নিলেন। আর ছোটখাটো ধমক দিয়ে বললেন,
‘ আমি বলেছি আমাকে সালাম করো? যখন সময় হবে তখন করবে এখন না। ‘

আমি ওনার দিকে ভ্যাবলার মতো করে বললাম,
‘ আবার কবে সময় হবে? এক্সামের সময়ই তো মানুষ সালাম করে। ‘

উনি আমার এমন কথা শুনে উত্তর দিলেন না কেবল হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে সানার পাশে বসালেন। এই মেয়ের কাছে এই মুহূর্তে দুনিয়া ওলট পালট হয়ে গেলেও সে বুঝতে পারবে না কারন সে ভীষনরকম ভাবে মনযোগ দিয়ে পড়ছে। পরীক্ষার আগে আমার আর পড়তে ভালো লাগে না, না হলে সব ঘেটে ঘ হয়ে যায়। সানার পাশে বসে ওকে একটা গুতা দিয়ে বললাম
‘এই মেয়ে? ‘

আমার মুখে এই মেয়ে ডাক শুনে আরিশ ভাইয়া আমার দিকে লুকিং গ্লাসে একবার তাকালেন। আমি তা তোয়াক্কা না করে সানকে বললাম,
‘দোস্ত তুই তো আমার পিছনের পরের বেঞ্চ। আমি ডাকলে সাড়া দিবি। ‘

তৎক্ষণাৎ সানা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘হমম জানু।’

আমার সুখ বোধহয় ওনার সহ্য হয় না তাই উনি সানকে ধমক দিয়ে দমিয়ে দিলেন,
‘ওকে এক্সাম এ হেল্প করবি না তুই। আরু পাখি তুমিও সানাকে হেল্প করবে না। আর যদি রেজাল্ট খারাপ আসে তো দুজনেরই বিয়ে দিয়ে বিদায় করবো বাসা থেকে। ‘

আমরা দুজন ওনার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালাম।

বেশ কিছুখন পর কলেজ এর সামনে এসে গাড়ি থামালেন উনি, আমরা দুজনে নামতেই দেখলাম আশেপালে কেও কেও তাদের প্রেমিকের হাত ধরে তো কেও আবার বাবা মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকালাম। এই মুহূর্তে উনি আমার আর সানার অভিভাবক। কিভাবে সামলান উনি এতো গুরুতর দায়িত্ব? নিজের হাতে আমার সব দায়িত্ব উনি তুলে নিয়েছেন, আমআর বাবা মা তাতে আপত্তি করেনি কখনো।
আমি ওনার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছি দেখে সানা পাশ থেকে চিমটি দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
‘দোস্ত পড়া ভুলে যাস না আবার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে। ‘

আমার মতিভ্রম হয়েছে তা বুঝতে পারছি। ওনার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বললাম,
‘আমরা আসি? ‘

উনি মাথা নাড়িয়ে কেবল বললেন,
‘হমম। ‘

সানা আর আমি হাটতে শুরু করলাম তারপর কি মনে হতেই আমি আবার ওনার সামনে এসে দাঁড়ালাম। আমাকে ফিরে আসতে দেখে উনি বললেন,
‘ কোন ড্রামাটা করতে ভুলে গেছেন মিস ড্রামা কুইন? ‘

আমি মিনমিন করে বললাম,
‘অল দা বেস্ট বলবেন না? ‘

ওনার দিকে চোখ ছোট ছোট করে পিটপিট করে তাকাচ্ছি আমি। উনি কিছু জবাব দিলেন না, আমার মাথার ওপর পড়া একটা ছোট ময়লা উনি ফেলে দিতে দিতে বললেন,
‘ বলাটা কি ম্যান্ডেটারি? ‘

আমি চারবার ওপর নীচ করে মাথা নাড়িয়ে বললাম,
‘হমম। ‘

উনি আমার মুখের ওপর একটা ফু দিয়ে বললেন,
‘অল দা বেস্ট মিস টুইটুই। ‘

ওনার কথা শুনতেই আমি হেসে ফেললাম। আমি এক গাল হেসে ওনাকে বললাম,
‘ থ্যাঙ্কিউ নট। ‘

কথাটা বলে আমি কলেজে ঢুকলাম। আমি আর ওনার দিকে তাকালাম না।
উনিও হয়তো আমার এমন কাজকর্ম দেখে হাসছেন অথবা বলছেন,
‘মিস টুইটুই আপনি কবে বড়ো হবেন? ‘

/

আমি আর সানা এক্সাম হলে ঢোকামাত্রই আরিশ ভাইয়া চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সেই মুহূর্তে রিকশা থেকে নেমে কারোর পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে উনি থেমে গেলেন। পিছন দিকে তাকিয়ে দেখলেন ফারিন আপু। উনি এই কদিনেই ওনার চোখ মুখ এর করুন দশা করে ফেলেছেন তা ওনার চোখ মুখ দেখলে যে কেও সহজে বুঝতে পারবে। উনি আপুকে উপেক্ষা করে চলে যেতে নিলে আপু রিকশার ভাড়া মিটিয়ে ওনার কাছে দৌড়ে ছুটে গেলেন।

আমার জানালার ধারে সিট পড়ার দরুন আমি তাদের দুজনকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। তাদের দুজনকে একসাথে দেখলেই আমার বুকের ভিতর মোচড় দেয়। আমি মাঝেমাঝে তাকাচ্ছি আর চোখ সরিয়ে নিচ্ছি। এতখন আমি আরিশ ভাইয়ার দিক চেয়ে ছিলাম তবে হঠাৎ করে ফারিন আপুকে যে দেখতে পাবো এটা আশা করিনি। উনি খুব ভালো ভাবেই জানতেই যে আজ আমাদের এক্সামে আরিশ ভাইয়াই দিতে আসবেন। টিচার রুমে ঢুকতেই আমি চোখ সরিয়ে নিলাম সেদিক থেকে আর কিছু দেখা আর জানা হলো না আমার।

/

এক্সাম হল থেকে বেরিয়ে এলাম আমি আর সানা, আমাদের দুজনেই পরিক্ষায় ভালো হয়েছে। দুজনে এক্সাম দিয়ে ক্লান্ত। আরিশ ভাইয়া গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ফ্রেশ মুডে যেন কিছুই হয়নি। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে যে উনি ফারিন আপুকে কি কি বলেছেন কিন্তু আমি যে এক্সামের আগ মুহূর্ত অবধি তাদের দিকে তাকিয়ে ইছলাম সেটা জানলে উনি আর আমাকে আস্ত রাখবেন না তাই নিজেকেই নিজে বোঝালাম যে কিছু কিছু জিনিস না জানায় শ্রেয়। আরিশ ভাইয়া সানার থেকে সব খবরাখবর নিলেন, আমি দাঁড়িয়ে আছি সানার পাশে। উনি আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করছেন না দেখে আমার রাগ হয়ে গেল। সানা গাড়িতে উঠলো, ওর পরে আমিও নিরবে গাড়িতে উঠতেই উনি আমার হাত ধরে আটকালেন।

‘দাঁড়াও। কোথায় যাচ্ছো? ‘

আমি ওনার দিকে অবাক হয়ে বললাম,
‘ কোথায় মানে। বাসায় যাবো। ‘

উনি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে অন্যদিকে যেতে গেলেই আমি ভাবলাম উনি বোধহয় আমাকে রিকশায় তুলে দেওয়ার বন্দোবস্ত করছেন। আর সত্যি বলতে ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট আমার কোনটাই চেনা নেই। আমি ঘাবড়ে গেলাম বেশ। উনি হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,
‘ছাড়ুন আমি রিকশা করে যাবো না। ‘

উনি থেমে অবাক হয়ে চেয়ে বললেন,
‘মাথার ঠিক আছে? নাকি এস্কাম খারাপ হয়েছে তাই মাথা গেছে কোনটা? ‘

আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
‘কে বলেছে আমার এক্সাম খারাপ হয়েছে হ্যাঁ? আপনি কি একবার ও আমার থেকে জানতে চেয়েছেন হু যে আপনাকে বলবো। বয়েই গেছে আমার। ‘

উনি আমার এমন কথা শুনে নির্বিকারে তাকালেন।
কিছু বললেন না পুনরায় হাত ধরে নিয়ে যেতে নিলেই আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। উনি হাত তো ছাড়লেন না বরং আরও আকড়ে ধরলেন। উনি আমকে নিয়ে একটা হাওয়াই মিঠাই ওয়ালার সামনে নিয়ে গিয়ে বললেন,
‘ যতগুলো নেবে নাও। ‘

আমি খুশি হয়ে গেলাম এক নিমেষেই। ওনার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে বললাম,
‘সবকটা নিই? ‘

উনি পকেট থেকে সানগ্লাসটা পরে বললেন,
‘ একদম না। অন্যদিন দেখা যাবে। আপাতত তুমি আর সানা যতগুলো খেতে পারবে যতগুলো নাও। ‘

‘কিন্তু আমি তো সবই খেতে পারবো। সবই নেওয়া উচিত আমার তাইনা? ‘

উনি বিরক্ত হয়ে হাওয়াই মিঠাই ওয়ালাকে বললেন,
‘মামা চারটে দেন তো। ‘

আমি নাচক করে বললাম,
‘এতো কিপ্টে কেন আপনি? এতো কম কেন? কম সে কম দশটা তো নেবোই।’

উনি মামাকে ইশারা করে দশটা দিতে বললেন।
উনি একে একে সবকটা হাওয়াই মিঠাই নিচ্ছেন। আমার ওনার সানগ্লাসটার দিকে নজর গেল। মনে মনেই ভেবে নিলাম যে ওটা আমাকেই মানাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ওনার চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিয়ে নিজের চোখে পরতেই উনি বাকা চোখে তাকাতেই আমি বললাম,
‘কেমন লাগছে আমাকে? সুন্দর না? আমি জানি সুন্দর লাগছে। ‘

উনি হাওয়াই মিঠাই ধরে হাটতে হাটতে বললেন,
‘লেডি গাগা লাগছে পুরো! ‘

আমি হি হি করে হেসে উঠলাম। উনি সব হাওয়াই মিঠাই ধরে হাটছেন আর আমি একপাশ থেকে ওনার হাতটা ধরলাম। নিজেকে কেমন প্রধানমন্ত্রী ফিল হচ্ছে আর ওনাকে আমার বডিগার্ড। দূর থেকে দেখলাম সানা আমাদের ছবি তুলছে আর হি হি করে হাসছে। তা দেখে আমি ওনার হাতটা ছেড়ে দূরত্ব বজায় করে দাঁড়াতেই উনি বলে উঠলেন,
‘হ্যাপি মিস টুইটুই? ‘

আমি হেসে বললাম,
‘হমম হমম আমার হাওয়াই মিঠাই ওয়ালা। ‘

উনি বিড়বিড় করে বললেন, ‘মিস ড্রামা কুইন। ‘

#চলবে,,,,

সবাই অভিযোগ করছেন যে ছোট করে লিখছি। বড়ো করে লিখলেও আপনারা বলেন ছোট। আমি আগে অনেক অনিয়মিত লিখতাম, এখন যখন নিয়মিত দেওয়ার চেষ্টা করছি তবুও আপনারা এতো অভিযোগ করছেন। তাহলে দু দিন পরপর বড়ো করে একটা পর্ব দিই ভালো লাগবে তো? আর কমেন্ট করেন না কেন বলুন তো আপনারা। বেশি বেশি লাইক কমেন্ট করে উৎসাহ দিলেই তবে না বড়ো বড়ো করে লিখবো😒।

Part14
https://www.facebook.com/102608248176901/posts/542622960842092/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here