হৃদয়ের_মাঝে_তুই #লেখিকা___ফিহা_আহমেদ #পর্বসংখ্যা__০৬

0
699

#হৃদয়ের_মাঝে_তুই
#লেখিকা___ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা__০৬

বর্ন বলে ফাহাদ একটা চিৎকার দিলো। ফিহা রুমে ঢুকতে যাবে বোনের রুম থেকে ফাহাদের চিৎকার শুনে দৌড়ে বর্নের রুমে গেল। বর্ন বাম হাত কেটে ফেলেছে। হাতের রক্ত ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। বর্নের এই অবস্থা দেখে ফিহা কান্না শুরু করলো।

ফাহাদ ফিহাকে একটা ধমক দিয়ে বললো,এখন কি কান্না করার সময় ডাপার। ওর ডান হাত তোমার কাঁধে রাখ, আর বাম হাত আমার কাঁধে রাখছি। তাড়াতাড়ি করো।

বর্নকে ফিহা আর ফাহাদ দুজনে গাড়ির পিছনের সিটে শুইয়ে দিলো। ফিহার হাঁটুর ওপর বর্নের মাথা রাখলো।ফাহাদ দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করছে।

হাসপাতালে,,,,,,,,,,,

তিন ঘন্টা পর,,,,,,,,

বর্ন চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিস্কার করলো। নার্স বর্নের জ্ঞান ফিরতে দেখে ডাক্তারকে বললো।ডাক্তার এসে বর্ন কে দেখলো। সব ঠিকঠাক আছে আর একটু দেরি হয়ে গেলে বাঁচানো কষ্ট হতো।অনেক রক্ত বের হয়ে গেছে। দু বেগ রক্ত দিতে হবে আর। তাহলে শরীর ঠিক হয়ে যাবে।

ফাহাদ ফিহার মাকে ফোন দিয়ে জানালো। ফিহার মা মেয়ের এই অবস্থা শুনে বোনের বাড়ি থেকে ছুটে আসলেন। ফিহার বাবা অফিসের কাজে কিছুদিনের জন্য বাহিরে যেতে হয়েছে। এমনিতে হার্টের রুগী তাই আর তাকে জানানো হলো না।টেনশনে আবার কি করে বসে। মিসেস রাজিয়া হাসপাতালে এসে কান্নাকাটি শুরু করলো। ফিহা কিছুতেই সামলাতে পারছেনা।ফাহাদ অনেক কষ্টে বুঝিয়ে থামিয়েছে।

ডাক্তার বের হয়ে আসলে সবাই ডাক্তারকে ঘিরে ধরে।
ফাহাদঃ ডাক্তার বর্ন ঠিক আছে।
ডাক্তারঃ মুচকি হেসে বললো,, টেনশন করবেন না সব ঠিক আছে। আর একটু দেরি হলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত।এখন পেশেন্ট এর জন্য দু বেগ বি+ ব্লাড লাগবে।অনেক ব্লাড বের হওয়ার কারনে শরীর দুর্বল হয়ে আছে।
আমাদের হাসপাতালে বি+ ব্লাড শেষ আর চেষ্টা করছি পাওয়ার জন্য। আপনারা ও দেখেন কোথাও পাওয়া যায় কিনা বলে ডাক্তার চলে গেল।

এইখানে ফিহা, মিসেস রাজিয়া,ফাহাদ কারোরই ব্লাড এর সাথে বর্নের ব্লাডগ্রুপ মিলেনা।
ফাহাদ তার বন্ধু রুহান কে ফোন করলো।
রুহানকে ফোন করে মিসেস রাজিয়া কে বললো,আন্টি রুহান ব্লাড দিতে পারবে ও আসছে। চিন্তার কোনো কারন নেই।
সবাই সস্তির নিশ্বাস ফেললো। যে ভয়টা ছিলো ওদের এখন সবার নিজেদের কিছুটা স্বাভাবিক লাগছে।

ফাহাদ ডাক্তার এর কাছে গিয়ে বললো বর্নের সাথে দেখা করতে পারবে কি।ডাক্তার বললো,, ব্লাড দেওয়ার পর দেখা করতে এখন না।
আচ্ছা বর্ন এমন কিছু কেন করবে কিছু তো একটা ঘাপলা আছেই। ওর কি কার সাথে কোনোরকম সম্পর্ক আছে। আমার জানামতে বর্নের মতো মেয়ের কারো সাথে কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।ফাহাদের মাথায় কিছুই আসছে না। সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে।

রুহান এসে বর্নকে দু বেগ ব্লাড দিলো।
ডাক্তার কেবিনে প্রবেশ করে রুহানের দিকে তাকিয়ে বললো, কি ইয়াংমেন দুর্বল লাগছে।

রুহান মিনমিন কন্ঠে বললো,, কিছুটা।
ডাক্তার একটা মুচকি হাসি দিলো। নার্সকে ওষুধগুলো কিভাবে খাওয়াতে হবে বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেল।

ডাক্তারফাহাদকে গিয়ে বললো,, এইবার দেখা করতে পার পেশেন্ট এর সাথে। পেশেন্ট কি তোমার স্রী ।ডক্টরের মুখে এমন কথা শুনে ফাহাদ চমকে উঠে। ফিহা অনেক বেশি অবাক হয়।ডাক্তার হঠাৎ এই কথাটি কেন বললো।
ডাক্তারঃ আসলে পেশেন্টর যখন জ্ঞান ফিরছিলো তখন তোমার নাম নিয়েছিলো।খুব ভালোবাসে তোমায় তোমার স্রী। সুখী হও।ফাহাদকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ডাক্তার চলে গেল।
ফাহাদের কিছুই মাথায় ঢুকছে না। বর্নই বা কেন আমার নাম নিবে।
ফিহার অজানা কোনো ভয় কাজ করতে লাগলো।আচ্ছা আপু আবার স্যারকে ভালোবাসে নাতো।ফিহার খুব কষ্ট হচ্ছে। যদি আমার জন্য হয়ে থাকে কোনোদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো ফিহার চোখ থেকে।

রুহান ব্লাড বর্নের কেবিনে দিয়েছে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। বর্নকে ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়েছে। বর্নের ঘুম ভাঙলে নার্স বর্নের বাড়ির সবাইকে বর্নের সাথে দেখা করতে বলে।
মিসেস রাজিয়া বর্নের কাছে গিয়ে পাশে বসলেন।বর্নের ডান হাতটা আলতো করে ধরে চুমু খেলেন হাতের তালুতে।আর নিঃশব্দে কাঁদছেন।
মাতৃত্বের স্পর্শ পেয়ে বর্ন চোখ খুললো। এতক্ষণ সে চোখ বন্ধ করে ছিলো।মাকে কাঁদতে দেখে বর্ন আলতো করে বললো,আম্মু কান্না করো না এই দেখ আমি পুরো ঠিক আছি।প্রমিজ করছি আর এমন কাজ করবো না।প্লিজ আম্মু কান্না করো না।মিসেস রাজিয়া কিছু না বলে বর্নের হাতটা বুকে চেপে ধরে নিঃশব্দে কাঁদছেন। ফিহা আর ফাহাদ দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো।তাদের চোখে ও জল টলমল করছে।

ফিহাকে দেখে বর্ন মুখ ঘুরিয়ে নিলো।কিছু বললো না। ফিহা বুঝলো না তার বোন কেন কথা বললো না।কোনোভাবে কি আমার ওপর আপু রেগে আছে। ফিহা কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।

ফাহাদ বর্নের সামনে এসে বললো,,, বর্ন তোমার শরীর ঠিক আছে এখন।বর্ন অস্পষ্ট কন্ঠে হ্যাঁ বললো। ফাহাদকে দেখলে যে তার অনেক কষ্ট হয়।কি করে ফাহাদ এইটা করতে পারলো।আমি কি ফিহার চাইতে কম যাই। আমাকে ভালোবাসলে কি এমন ক্ষতি হতো।কি এমন আছে ফিহার মাঝে যা আমার নেই।আর ফিহা ও পারলো কি করে ফাহাদকে ভালোবাসতে। এইসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো বর্ন।চোখ বন্ধ করে ফেললো তার কিছুই ভালো লাগছে না।আর কক্ষনও এমন করবো না আম্মু- আব্বুর কথা ভাবা উচিত ছিলো আমার। ফাহাদ যদি ফিহাকে নিয়ে খুশী থাকে তাহলে থাক।আমি ওদের মাঝে কোনো সমস্যা হতে চাই না। ওরা ভালো থাকুক।বোনের জন্য না হয় নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিলাম। মনের ছোট্ট কুঠিরে লুকিয়ে রাখবো কিছু মুহূর্ত।

তিন দিন পর বর্নকে বাড়িতে আনা হলো। ফিহার সাথে তেমন কথা বলেনি। ফিহা কিছু বললে শুধু হু হা করেছে। ফিহার খুব খারাপ লেগেছে বর্নের এমন পরিবর্তন দেখে। কিন্তু বোনকে কিছু বললো না।

তাইমুর আহমেদ ইউকে থেকে অফিসের কাজ শেষ করে বাড়িতে আসলেন।

বর্ন এখন আগের থেকে কিছুটা সুস্থ হলো।

তাইমুর আহমেদকে মিসেস রাজিয়া বর্নের ব্যপারে কিছু বললো না।না হয় টেনশনে শরীর খারাপ করবে।
তাইমুর আহমেদ সবাইকে একসাথে ডাকলেন জরুরি কিছু বলবেন বলে।
মিসেস রাজিয়া, ফিহা, বর্ন আসতেই তিনি যা বললেন,,ফিহা যেন আকাশ থেকে পরলো তার মানে এইজন্য বর্ন আপু,,,,,,,,ফিহা আর কিছু ভাবতে পারলো না শরীর যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে। বুকে খুব কষ্ট হচ্ছে।,,,,,

চলবে,,,,,,,,,

[ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]
————————————————————–
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]
#ফিহা আহমেদ🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here