#ভালোবাসি_বলে_দাও
#আরিশ❤আরু
#Suraiya_Aayat
19.
সকাল সকাল নীচ থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ কানে আসতেই ঘুম ভেঙে গেল আমার। চোখ খুলে তাকাতেই ঘড়ির দিকে চোখ পড়লো প্রথমে। ঘড়ির অবস্থান দেখে মনে হলো যে উনি বোধহয় ইচ্ছা করেই ঘড়িটা সে জায়গায় রেখেছেন যাতে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার খাতিরে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় বেলা দশটা এগারোটা দেখে মানুষ হার্ট অ্যাটাক করে। কিন্তু উনি তো সবসময় তাড়াতাড়ি ওঠেন। ওনার মতিগতি আমি বুঝি না। নিম পাতার ফ্যাক্টরি উনি, যা খুশি তাই করতে পারেন তা অবশ্যই এমন তেঁতো তেঁতো কাজ। কথাটা ভেবে আমি বিছানা ছাড়লাম জলদি। নীচে বোধহয় কেও জোরে জোরে চিৎকার করে ঝগড়া করছে, আর আমার ঝগড়া শুনতে পুরো টুইটুই লাগে। কথাটা মনে আসতেই আমি দরজার বাইরে থেকে নীচে উঁকি মারার চেষ্টা করলাম যে কে এতো সকাল সকাল ঝগড়া করছে। নীচে তাকাতেই আমার মেজাজ বিগড়ালো খানিকটা। ফারিন আপু আর তার মা, ফুপির সাথে ঝগড়া করছেন। এ ঝগড়া শোনার ইচ্ছাশক্তি আমার বিন্দুমাত্র না থাকলেও আমি শুনবো কারন আরিশ ভাইয়া ফারিন আপুকে কি জবাব দেন আমি জানতে চাই, সত্যিই যদি আমিই ওনার মায়াবতী হয়। আমি নীচে উঁকি দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে কেবল কথাগুলো শুনতে লাগলাম। ফারিন আপুর মা ফুপিকে বললেন,
‘আজ আমি তোমার নিজের বোন না, আমাদের রক্তের সম্পর্ক নেই বলে তুমি আমার মেয়ের সাথে এমনটা করতে পারো না। ‘
উত্তরে ফুপি রেগেমেগে বললেন,
‘আশ্চর্য রেনু, তুই এমনভাবে বলছিস যেন বিয়েটা আমার সাথে হয়েছে। আরিশ বিয়ে করেছে ওর পছন্দ অনুযায়ী। তাছাড়া আরিশ তো ফারিনকে সরাসরি জানিয়েছিল যে সে তাকে পছন্দ করে না। ব্যাস। ‘
কথার মাঝে ফারিন আপু বললেন,
‘ব্যাস ট্যাস কিছু না। মানছি আরিশ আমাকে বলেছে যে সে বিয়ে করতে পারবে না কিন্তু সে এই কথাগুলো আমাকে আগে কেন বলেনি? আর বললেই বা এরকম একটা পর্যায়ে এসে কেন বলবে যেখানে আমি ওর প্রতি দূর্বল। ও তো জানতো যে আমি ওকে পছন্দ করি। শুধু ও কেন, ওর সাথে তোমরাও তো জানতে তাইনা। আর এটা সে ঠিক করে নাই। এখন আবার ওই পিচ্চি কটকটি মেয়েটার সাথে বিয়েও করে নিল। বাহ! ‘
ফারিন আপুর মুখে এমন কথা শুনে রাগ হলো না, বরং হাসি পেল। উনি এবার কাঁদতে শুরু করলেন। আমি লক্ষ করলাম যে সবাই একে অপরের আছে কথা কাটি করছেন, আমি আরিশ ভাইয়া উনি নিশ্চিন্তে টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট খাচ্ছেন। উনি এমনভাবে খেতে লাগলেন যেন কোন কিছু ওনার কাছে যাচ্ছেন না। আমি এই মুহূর্তে খুব করে চাইছি যে আরিশ ভাইয়া ফারিন আপুকে কিছু বলুক। উনি উনি তো কিছু বলছেন না। ঝগড়ায় ক্লাইম্যাক্স আসছে না দেখে আমার বিরক্ত লাগতেই আমি রুমের দিকে চলে আসতে নিলেই হঠাৎ কিছু ভাঙার আওয়াজ পেলাম। আমি তাড়াতাড়ি আবার দেখার জন্য ছুটে গেলাম। আমি তাকিয়ে দেখলাম ফারিন আপু আরিশ ভাইয়ার ব্রেকফাস্টের প্লেটটা ফেলে দিয়েছেন, আরিশ ভাইয়া এখনো শান্ত হয়ে রয়েছেন তবে ওনার চোখে রাগ বিদ্যমান। ফারিন আপু চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলেন,
‘পিচ্চি একটা মেয়েকে বিয়ে শাদী করে তুমি রিল্যাক্স! তুমি যদি তাকেই বিয়ে করবা তাহলে আমাকে এতোদিন ধরে আশা দেওয়ার মানে কি? সেদিন আমার বাসায় গিয়ে ওভাবে আমার সাথে নরম ভাবে কথা বলার মানে কি যদি তুমি ভালোই না বাসো। ‘
ফারিন আপুর কথাতে যুক্তি বিন্দু মাত্র নেই, ওনার মুখ যা আসছে উনি তা ই বলে চলেছেন। আরিশ ভাইয়া এবার রেগে গেলেন।
‘তা না হলে কি করতাম! তোমার সাথে কি তাহলে রাস্তার কুকুরের মতো ব্যাবহার করার দরকার ছিল আমার? ‘
ফারিন আপু কাঁদতে লাগলেন এবার। আরিশ ভাইয়া আর কথা বাড়ালেন না, শুধু বললেন,
‘তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে, ভালো ফিউচার আছে, ইউ ডিজার্ভ বেটার। এসব প্রেম ভালোবাসার পিছনে সময় নষ্ট করোনা। ‘
কথাটা বলে উনি চলে আসতে নিলেই ফারিন আপু বললেন,
‘ খালামনি ওই মেয়ে তোমার ছেলেকে বশ করেছে। আজ ওকে বশ করেছে কাল আরিশ কে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে নেবে তুমি দেখে নিও। ‘
ফুপি রেগে গেলেন বেশ, ওনার কথা শুনে আমারও রাগ হয়ে গেল। ফুপি বলতে লাগলেন,
‘না জেনে শুনে কথা বলো কেন? আর তাছাড়া আরু আমার আর এক মেয়ে। ওর সমন্ধে বাজে কথা বললে আমি সবসময় তা সহ্য করবো না কিন্তু। ‘
ফুপির এই কথাটুকু শুনে আমি রুমে চলে এলাম আমার রাগ হচ্ছে ভীষনরকম। আরিশ ভাইয়া ওনাকে আর কিছু বললেন না কেন। আমি ঘরের এপাশ থেকে ওপাশ করছি ক্রমাগত, তখনই আরিশ ভাইয়া রুমে ঢুকলেন। ওনাকে দেখে আমি ওনার দিকে ছুটলাম আর ঝাঁঝালো কন্ঠে বললাম,
‘ আপনি ওনাকে কিছু বলেননি কেন হ্যাঁ? ‘
আরিশ ভাইয়া অবাক হওয়ার ভান করে বললেন,
‘ কাকে কি বলিনি? ‘
আমার ওনার এই না জানতে পারার মিথ্যা অভিনয়টা একদম ভালো লাগে না, আমি রেগে গেলাম আরও।
‘ কাকে আবার ফারিন আপুকে। ওনাকে কেন আপনি চড় থাপ্পড় মারলেন না। কই আমাকে মারতে গিয়ে তো কখনো দুবার ভাবেন না সপাটে গালে ঠুসঠাস বসিয়ে দেন আর তার বেলায় সাত খুন মাফ হ্যাঁ? ‘
উনি ভ্রু নাঁচিয়ে বললেন,
‘ তাহলে আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছিলেন সব? ‘
‘ তা শুনবো না কেন হ্যাঁ? ওনার সাহস দেয় কে আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলার। যান আপনি ওনাকে চড় মেরে আসুন। যান। এক্ষুনি। ‘
আরিশ ভাইয়া ধমক দিয়ে বললেন,
‘আর ইউ ইনসেন (পাগল)? আর কোন কথা না, জলদি রেডি হও। ‘
কোথায় যেতে হবে সেটা না শুনেই আমি বললাম,
‘ আমি কোথাও যাবো না আগে আপনি ওনাকে দু গালে দুটো চড় দিয়ে আসেন। তারপর যেখানে যেতে বলবেন আমি সেখানে যাবো।’
উনি হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বললেন,
‘ ঘড়ির কাটা পাঁচ এর ঘরে আছে, ছয় এর ঘরে যাওয়ার মধ্যে যেন তোমাকে আমি রেডি হতে দেখি। ‘
আমি তবুও ঠাই বসে রইলাম সেখানে। উনি ঘড়ির দিক তাকিয়েই বললেন,
‘ টাইমের পর যদি আর একটুও লেট হয়েছে তো!’
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
‘তো! তো কি হয়েছে? ‘
‘তাহলে আমি একাই শপিং করতে চলে যাবো একজনকে নিয়ে যাবো না। ‘
শপিং করার কথা শুনে আমি জলদি উঠে দাঁড়ালাম আর বললাম,
‘এই আমিও তো যাবো। আরিশ ভাইয়া ওয়েট আমি রেডি হয়ে আসি। তবে আপনাকে কিন্তু ওনাকে চড় মারতেই হবে। ‘
কথাটা বলে ওনার দিকে হাসিহাসি মুখ করে তাকিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম আমি। ওনার টাকা নষ্ট করার জন্য হলেও আমার শপিং করা লাগবে।
আমি রেডি হতে সময় নিলাম কারন আমি চাই না নীচে গিয়ে ফারিন আপু আর ওনার মা কে দেখতে পেতে। আরিশ ভাইয়া বাইরে থেকে ডাকতে শুরু করলেন,
‘ আর কতখন? ‘
আমি ভিতর থেকে উত্তর দিলাম,
‘ এই তো আসছি আসছি। ‘
উনি ধমকের স্বরে বললেন,
‘ এটা নিয়ে পাঁচবার একই কথা বললে, আর না। তুমি আসবে নাকি আমি দরজা ভেঙে বাইরে নিয়ে আসবো টেনে কোনটা! ‘
ওনার ভাব গতি ভালো বুঝলাম না, দ্রুত বেরিয়ে আসলাম বাইরে, বেরিয়ে আসতেই দেখলাম উনি কটমট করে তাকিয়ে আছেন। আমি জানি আমি এখন ওনার সামনে হেসে ফেললে উনি আমাকে আর কিছু বলতে পারবেন নাহ, আর আমি আমার ট্রিকস অনুযায়ী হাসতেই দেখলাম সত্যিই উনি আর কিছু বললেন না। মাঝে মাঝে নিজের ওপরই নিজের গর্ব হয় আমার বুদ্ধির জন্য।
ফুপিকে বিদায় জানিয়ে আমি সানা আর আরিশ ভাইয়া বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম। সানা আগে আগে গিয়ে গাড়িতে বসে আছে, আরিশ ভাইয়ার কাছে বকা খেতে খেতে আমি আর উনি একটু পিছিয়ে গেছি। মেইনগেটের দিকে যেতে নিলেই হঠাৎ আমার চক্ষুচড়ক গাছ। ওনার হাতটা একপ্রকার খামচি মেরে ধরে বললাম,
‘ আরিশ ভাইয়া দাঁড়ান। ‘
ওনাকে তোয়াক্কা না করে ওনার হাতটা ছেড়ে আমি দৌড় দিলাম কাঠগোলাপ গাছটার দিকে। ওমা সত্যিই দেখি আজকে গাছে একটা কুড়ি ধরেছে। আমি গাছটার দিকে অবাক হয়ে ঝুঁকে দেখছি। আরিশ ভাইয়া আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
‘ আবার কি ড্রামা। ‘
আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম,
‘এই দেখেন গাছে কুঁড়ি ধরেছে লাল রঙের। ‘
উনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
‘হ্যাঁ দেখলাম তো! তোমার জন্য জীবনে অনেক কাঠ গোলাপ দেখে ফেলেছি। উই মে গো নাও। ‘
আমি ওনাকে ধমক দিয়ে বললাম,
‘ আরে আপনি এতো নিরামিষ মানুষ কেন বলতে পারেন? ফুল হচ্ছে ভালোবাসা, ইউ হ্যাভ টু বুঝতে হবে। তাছাড়া আপনি আমাকে কি বলেছিলেন মনে আছে? ‘
আমি জানি ওনার মনে আছে তবুও উনি না জানার ভান করে বললেন,
‘ কি বলেছিলাম? ‘
আমি পা উঁচু করে ওনার দিকে সমান সমান হওয়ার চেষ্টা করে ওনার মাথার চুলটা টেনে বললাম,
‘ আপনি যখন বড়ো হবেন তখন আপনি হবেন আমার মুরব্বী। আপনি মুরব্বী হয়ে আমি তো আপনার থেকে খালি মিথ্যা বলায় শিখবো দেখছি। আপনি কথায় কথায় জেনে শুনে মিথ্যা বলেন। ‘
উনি ভ্রু কুচকে বললেন,
‘ তাহলে আমি কি ছোট? বিয়ে হয়ে গেল আজ কাল একটা বাচ্চা নিলেই হয় তা তুমি বলো আমি বাচ্চা। ‘
আমি যথাসম্ভব উঁচু হওয়ার চেষ্টা করে ওনার মুখ চেপে ধরে ভললাম,
‘চুপ। আপনি দিনদিন কেমন অশ্লীল হয়ে যাচ্ছেন। আমি আর আপনার আছে থাকবো না। ‘
উনি মুখ চাপা অবস্থায় বললেন, ‘ঠিক আছে দেখা যাবে। ‘
আমি ওনার কথা বলার সুযোগ না দেওয়ার জন্য বললাম,
‘ আপনি বলেছিলেন যেদিন আপনার বউ আসবে সেদিন এই গাছে ফুল ফুটবে। আপনার বউ হয়েছে তা এই কাঠ গোলাপ গাছ কি জানলো? নিশ্চয়ই এই গাছ আর আপনার মাঝে প্যাচাল আছে। ‘
উনি আমার কথা শুনে ৩৬০ ডিগ্ৰি ঘুরে আমার হাত ধরে হাটা দিলেন। আর বলতে লাগলেন,
‘ কি এক মেয়েকে বিয়ে করলাম যার কমন সেন্স নাই।রাস্তার মাঝে আজাইরা বকলে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিবো বলে রাখলাম।’
আমি মুখে আঙুল দিয়ে বললাম,
‘ঠিক আছে ঠিক আছে। নো মোর ওয়ার্ডস মুডে চলে যাচ্ছি। ‘
উনি গাড়ি ছাড়লেন। সানা আর আমি দুজনেই বসে আছি। আরিশ ভাইয়া গাড়ি চালাচ্ছেন। প্রায় এক ঘন্টা পর পৌছালাম। গাড়ি থেকে নামতেই দেখলাম একজন পিছন থেকে ডেকে উঠলেন,
‘আরুশি। ‘
আমি পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখলাম সেই ছেলেটা যার হাত ধরে দাঁড়ানোর জন্য উনি আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলেন। আরিশ ভাইয়ার দিকে আমি তাকালাম, উনি আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমি পুনরায় চড় খেতে চাই না। কথাটা ভেবে সানার হাত ধরে আরিশ ভাইয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। ছেলেটা আরিশ ভাইয়াকে দেখা মাত্রই পিছন হাটা শুরু করলো, আমার এবার হাসি পাচ্ছে। আমি বুঝলাম যে সেও এখানে এডমিশন নিতে এসেছে। ছেলেটা চলে যেতেই আমি ওনার হাত ধরে টানতে টানতে বললাম,
‘ কি রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে ছেলেদের দিকে তাকিয়ে আছেন। আপনার কি তাকে ভালো লাগছে? আপনার ব্যাটা নজর খারাপ। ‘
আমার কথা শুনে উনিও বোধহয় ছ্যাকা খেলেন বেশ। তবে এতোটাও অবাক হননি কারন উনি জানেন যে কোন কথাকে তিল থেকে তার বানানোর মতো ক্ষমতা আমার আছে। সানা আহাম্মকের মতো চেয়ে রইলো, কিছুই বুঝছেনা সে। আমি ওদের দুজনকে নিয়ে হাটতে শুরু করলাম যেন আমি তাদেরকে এনেছি এডমিশন করাতে, এজ আ মুরব্বী মানুষ।
#চলবে,,,
জানি অগোছালো হয়েছে। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি। আর কালকে শরীর ভালো ছিল না বলে গল্প দিতে পারিনি।