#সেদিনও_জ্যোৎস্না_ছিল
#তানিয়া
পর্বঃ১৬
সকালে সূর্যের আলোটা মুখে এসে পড়তেই ঘুম ভাঙল আদ্যর।মাথাটা ঝিমঝিম করছে। কাল অনেক রাত করে ঘুম আসায় সকালে ঘুম ভাঙতে দেরি হয়।ঢুলুঢুলু চোখ খুলতে পাশে তাকায়,না বিছানা খালি।তার মানে মেহু উঠে গেছে। ওয়াশরুমের দিকে তাকায়, না দরজা ভেজিয়ে দেওয়া। মেহু গেল কোথায়?
আদ্যর বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা কিন্তু আজ তাকে অফিসে যেতেই হবে।বেশকিছু কাজ বাকি আছে। কিছুদিনের মধ্যে বাবা ফিরবেন তখন আবার কাজ নিয়ে রাগারাগি করবেন।বাবার কথা মনে হতে চট করে বিয়ের কথাটা মনে পড়ল।আদ্য জানে যা ঘটছে তাতে ভালো কিছু হবে না।তবে সামাল দিতে সবাইকে বেগ পেতে হবে।
ওয়াশরুমে গিয়ে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায় আদ্য।ততক্ষণে বাড়ির বড়রা ছোটরা সবাই খেতে বসে গেছে। অন্য সময় সকালের খাওয়ার সময়টা সবাই আনন্দে কাটালেও আজ মনমরা হয়ে আছে। বড় ভাবি আর মেহু সার্ভ করছে।ছোট চাচি মুখ গোমড়া করে বসে আছে। খাওয়ার মাঝে হুট করে আরাকান আদ্যকে জানায় সামনেই তার ভর্তির ডেট দিবে।তাই তার বেশকিছু টাকা লাগবে।আদ্য খাওয়ার মাঝে সম্মতি জানায়।হঠাৎ তার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় কারণ আরাকান আর মেহু একি ব্যাচের তার মানে সামনে তো মেহুরও এডমিশন আছে। আদ্য অল্প জানতে পেরেছিল যে মেহু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এসেছে। এরপর তো আর কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি।কথা ছিল আদ্য তাকে সাহায্য করবে কিন্তু কি থেকে যে কি হয়ে গেলো?
খাবার শেষে আদ্য উঠে দাঁড়ায়।পকেটে হাত দিতে দেখে রুমালটা নেই। সে মেহুকে ডেকে উপরে রুমাল আনতে পাঠায়।১৫ মিনিট হওয়ার পরও যখন মেহু নিচে আসে না এক প্রকার রাগে গদগদ করতে করতে সে উপরে উঠে।রুমের সামনে গিয়ে দেখে মেহু তখনও ড্রয়ার হাতড়াহাতড়ি করছে কিন্তু রুমাল পাচ্ছে না।আদ্য গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করল,
“কি হলো রুমাল পেয়েছো কি?”
আদ্যের স্বর শুনে মেহুর স্বরটাই বন্ধ হয়ে যায়। আমতাআমতা করে জানায় কাছাকাছি সব জায়গায় খোঁজার পরও রুমাল কোথাও মিলে নি।আদ্য একই ভঙ্গিতে জানাল,
“রুমাল খুঁজতে হবে না কারণ রুমাল আমার কাছে।আসলে তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা বলার জন্য উপরে আসতে বলেছি।”
‘মেহু হা হয়ে যায়। কারণ ওনি মিথ্যা বলে তাকে উপরে আসতে বলেছে।কেন? মিথ্যা বলার কি দরকার ছিল?তাছাড়া তাদের সম্পর্ক তো অন্য পাঁচটা সম্পর্কের মতো স্বাভাবিক নয় যে বিয়ের প্রথমে এভাবে লুকোচুরি করে আলাপ করতে হবে?’
মনে মনে এসব ভাবতে থাকে মেহু।
“মিথ্যা কেন বলেছি সেসব নিয়ে আবোলতাবোল না ভেবে যা বলছি তা শোনো।তুমি তো এবার অনার্স প্রথম বর্ষ তাই না?”
মেহু আদ্যর আন্দাজ শক্তি বুঝে লজ্জা পায়।মাথা নাড়ে আদ্যর কথায়।
“মাথা নাড়ছ কেন?মুখ নেই,মুখ দিয়ে আওয়াজ করে উত্তর দাও।”
“জ্বি এবার নতুন এডমিশন নিব।”
“কোথায় যেন বলেছিলে?”
“জ্বি জগন্নাথে,রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে কিন্তু কেন?”
“তোমার ভর্তির তারিখ কখন?”
“জ্বি আগামী তিনদিন পর্যন্ত সময়।”
“কি?আগামী তিনদিন সময় আর তুমি আমাকে এখন বলছ?তোমাকে বলেছিলাম না ভর্তির ডেট দিলেই আমাকে জানাতে। এত দেরি করে বললে কেন?”
রাগে কথা গুলো বলে আদ্য।
“আসলে আমি বলেছিলাম আজ বা কালকের মধ্যে বলব কিন্তু হঠাৎ সব এমন তালগোল পাকিয়ে গেল যে আর…”
“তুমি এতটা কেয়ারলেস তা তো আমার জানা ছিল না।আমি তো ভেবেছিলাম তুমি বুদ্ধিমতি।ড্যামেজ! ”
আদ্যর এমন অবহেলা সুরে বলা কথায় মেহুর চোখে জল চলে আসে।মাথা নিচু করে জল সামালায়।
“দুপুরে তৈরি হয়ে থাকবে আমি অফিস থেকে গাড়ি আসবে।তোমাকে নিয়ে ভার্সিটি যাব।আজই তোমাকে এডমিট করিয়ে দিব।”
মেহু জলভরা চোখে আদ্যর দিকে তাকায়।
বড় ভাবির সাথে হাতে হাতে কাজ করতে থাকে মেহু।মেহু ভাবতেও পারে না একসময় যার সাথে তার দূরত্ব ছিল সেই মানুষটার সাথে এখন জা এর সম্পর্ক পেয়েছে।এদিক দিক নীলা খুব খুশি মেহুর সাথে আলাপ করতে পারবে।কেননা আগে সামান্য কথা বললে ছোট চাচি এসে ধমকাত বলত কাজের মেয়ের সাথে এত কীসের কথা? এখন তিনি সেটা করতে পারবেন না।ভাবতেই হাসির রেখা ফুটে ওঠে।
“আচ্ছা মেহু তুমি এমন কেন বল তো?”
নীলার কথায় মেহু কাজ বন্ধ করে স্বপ্রশ্নে তাকায়। নীলা মুখ ভার করে জানায়,
“এ যে তুমি কে,তোমার পরিচয় কি?আমি তোমাকে কত করে জিজ্ঞেস করতাম তোমার সম্পর্কে কিন্তু তুমি মুখে কুলুপ এঁটে চুপচাপ কাজ করতে।তোমার জীবনে এত সমস্যা তুমি একটু বন্ধুর মতো করেও আমাকে বললে না।কিছু না করতে পারলেও অন্তত সাত্বনা তো জানাতে পারতাম তাই না!”
“সরি ভাবি আসলে আমি যে কোন পরিস্থিতিতে ছিলাম তা আপনি বুঝবেন না।আমি সবার থেকে নিজেকে আড়াল করতে চেয়েছিলাম।এত মাস সেটা পারলেও শেষ রক্ষা হলো না।”
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মেহু।নীলা বুঝতে পারে আবারও সে ক্ষতে নাড়া দিয়েছে।তাই এগিয়ে গিয়ে মেহুর হাতটা ধরে।
“এতটা ভয় পেয়ো না মেহু।দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া আমরা সবাই তোমার পাশে আছি।আর আমার দেবর তো আছেই!”
কথাটা বলেই চোখ টিপ্পনী দেয় নীলা।মেহু লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়। মেহুর লজ্জা দেখে নীলা হো হো করে হেসে দেয়।হাসির শব্দে মিসের সুজাতা রান্নাঘরে চলে আসেন।নীলার হাসি থেমে যায় চাচিকে দেখে। মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“এত হাসি কীসের?মনে তো হচ্ছে রান্নাঘরটা সার্কাস কেন্দ্র হয়ে গেছে। এতদিন তো কাজের মেয়ের সাথে গুজগুজ করতে।এখন তো একেবারে কাজের জায়গা ছেড়ে বাড়ির বৌ হয়ে গেল।তা বৌ হলেই কি পরিচয় গুজে যায় তুমি আগেও যেমন কাজের মেয়ের পরিচয়ে ছিলে এখন তেমন, বুঝেছ?
“আর তুমি, নীলা; এতটা মাখামাখির কি আছে বুঝলাম না?বৌ হয়েছে তো কি হয়েছে?ওর সাথে তোমার জায়গা টা দেখো তাহলে বুঝবে পার্থক্য কোথায়?”
প্রথম কথাগুলো মেহুকে বললেও শেষেরগুলো বলে নীলাকে। হাসিখুশি মুখ জোড়া পাংগুটে হয়ে যায়। একদমে কথা শেষ করে রাগ গজগজ করে চলে যায়। সুজাতা চলে যেতেই নীলা ফিক করে হেসে দেয়।
“আরে দূর এসব কথায় কান দিয়ো না তো।ওনি এমনি।সারাদিন রাগের ঝুলি নিয়ে থাকে।যখন যাকে পায় তার ওপর রাগ ঝারে।ওসবে কান দিও না বুঝলে মেহু।”
“জ্বি ভাবি। আপনি চিন্তা করবেন না আমাকে নিয়ে! ”
“কি জ্বালা এখনো কি আমকে আপনি বলবে?আগে নিষেধ করলে মনিব বলে পার পেতে এখন তো সেই সম্পর্ক না।তুমিও এ বাড়ির বৌ আর আমিও।তাই দুজনে দুজনকে তুমি বলে ডাকব ঠিক আছে? ”
মেহু ফিক করে হেসে দেয়।এ মেয়েটা বড্ড ভালো।এ বাড়িতে প্রথম যখন এসেছিল তখন সবার আগে নীলার সাথে সম্পর্কটা গাঢ় হয়।খুব ভালো লাগে মেহুর নীলাকে।
রান্নার কাজটা শেষ করে রুমে আসে মেহু।গা টা এলাতে গিয়ে আবার সোজা হয়ে বসে পড়ে কারণ দুপুরে তাকে নিতে গাড়ি আসবে।আজ তাকে ভর্তি করানো হবে।তাই নিয়ে ভাবতে থাকে।এটা তো তার শাশুড়িকে বলা হয় নি তাই কোনোরকমে শাশুড়ির রুমের দিকে হাঁটা শুরু করে। দরজার দোরগোড়ায় এসে নক করে।লুৎফা আহসান বিছানায় শুয়ে ছিলেন। দরজায় আওয়াজ শুনে অনুমতি দেন আসার।মেহুকে দেখে উঠে বসেন।মেহুকে লক্ষ্য করেন, কিছু বলতে চায়ছে অথচ বলার সাহস পাচ্ছে না তাই তিনি অভয় দিয়ে বলতে বলেন।
“খালাম্মা আদ্য স্যার বলেছেন আজ আমাকে ভার্সিটিতে ভর্তি করাবেন।দুপুরের পর ওনি গাড়ি পাঠাবেন।আমি কি যাব?”
মেহুর এমন ভীতিকর কথায় লুৎসা আহসান খিকখিক করে হেসে দেয়।শাশুড়ির এমন হাসিতে মেহু ভয়ে জমে যায়।
“আরে বোকা মেয়ে তুমি এসব কি বলে ডাকছো।স্যার, খালাম্মা। হা হা।এখন কি এসবে নামে ডাকবে।ভুলে যাচ্ছো কেন তোমার সাথে আমাদের সম্পর্কটা এখন পরিবর্তন হয়েছে। যেখানে আমি নিজেই তোমাকে বৌমা হিসেবে মানতে আপত্তি করছিনা সেখানে তুমি কেন আমাকে খালাম্মা ডাকছো?দেখো আমার তিন ছেলে আর নীলা যেভাবে আমাকে মা হিসেবে ডাকে তুমিও আমাকে মা ডাকবে।আদ্যর ব্যাপারটা বলতে পারছিনা তবে সেটা তোমরা আলাপ করে ঠিক করে নিবে।
আর কি যেনো বলছো ভর্তির কথা? ওটা আদ্য আমাকে জানিয়েছে। আমি নিজেই তোমাকে এটার কথা বলতে যেতাম তুমি চলে এলে।তুমি দুপুরে আদ্যর সাথে ভার্সিটি যাবে যা যা কাগজ লাগবে সব সংগ্রহ করে নিবে।এ জায়গায় আসতে,নিজের পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছাকে পূরণ করতে তুমি অনেক বিপদকে উপেক্ষা করেছ তাই এটাতে তোমাকে জিততে হবে।আমি চাই তুমি এ বাড়ির যোগ্য মত বৌ হও যাতে তোমাকে কেউ আমার বিবেচনায় ভুল বলতে না পারে!যাও মা তৈরি হয়ে নাও।জানোই তো আদ্য দেরি করা পছন্দ করে না।”
শাশুড়ির বলা কথা গুলোতে মেহুর হৃদয়টা মুচড়ে উঠে। এত ভালো মানুষও দুনিয়ায় আছে তা এ মহিলাকে না দেখলে বোঝা যেতো না।কতো অনায়াসে মেহুকে সহজ করে মেনে নিয়েছে।অনেক দিন পর মেহু শাশুড়ির মাঝে মায়ের ভালোবাসাটা দেখতে পেলো।লুৎফা মেহুর অবস্থা বুঝতে পেরে বুকে জড়িয়ে নেয়। জমিয়ে থাকা জল উপচে পড়ছে শাশুড়ির বুকে।মেহু ভয় পাচ্ছে এত সুখ কপালে সইবে তো তার!
গাড়িতে পাশাপাশি বসে আছে আদ্য আর মেহু।মেহু কিছুটা দূরত্ব নিয়ে বসেছে।মুখ তার থমথমে। দুপুরে রান্নার কাজ শেষ করতেই মেহুর লেট হয়ে যায়। যার কারণে খেতে পারে নি।তাড়াতাড়ি না খেয়ে ভার্সিটির জন্য বের হয়ে যায় কেননা আদ্যর অফিসের গাড়ি চলে এসেছিল।ভার্সিটিতে পৌঁছেই দেখে আদ্য কিছু প্রয়োজনীয় কাগজ নাড়াচাড়া করছে যেগুলো আগে থেকে বের করে রেখেছিল।সকাল থেকে এতবেশী স্টুডেন্ট ছিল যে লাইন বহুদূর পর্যন্ত গড়িয়ে ছিল।তবে দুপুর হওয়াতে অনেকটা ফাঁকা হয়েছে। বাঙালি জাতির এ সমস্যা। সময় থাকতে দৌড়বে না যেই না সময় ফুরোবে ওমনি দৌড় শুরু করে।আদ্য আগেই এসে গিয়েছিল যাতে মেহুর কাজটা তাড়াতাড়ি হয়।কিন্তু মেহু আসার পর যখন তার কাছ থেকে বাকি কাগজ গুলো কালেক্ট করতে যায় তখনি দেখা যায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজটা সে আনেনি।আদ্যর মেজাজ দেখে কে?সকালে এক বকুনি এখন আরেক বকুনি।দিনের সামান্য ব্যবধানে দুই বকুনিতে মেহুর নাজেহাল
অবস্থা। বেচারির বুকটা ধড়াস ধড়াস করছে বিয়ের একদিনে এ অবস্থা সামনে তো আরো অনেক সময়।এসব ভয়ংকর স্মৃতি ভাবলে মনটা বিষিয়ে উঠে।
আদ্য এতক্ষণ ল্যাপটপে কাজ করছিল।ভেবেছিল ভর্তির কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ হবে তারপর মেহুকে বাড়ি দিয়ে অফিসে যাবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে এটা ওটা করতে লেট হয়।তাই আর অফিসে না গিয়ে সোজা বাড়ি যাচ্ছে। হঠাৎ আদ্যর মেহুকে জিজ্ঞেস করে,
“মেহু দুপুরে খেয়েছো কি?”
প্রশ্ন শুনে মেহুর মাথা ঘুরে উঠে কারণ এত কাজের মধ্যে তার না খাওয়ার কথা মনে ছিল না তার ওপর বাসায় কাজ শেষ করতে দেরি হওয়ায় না খেয়ে বেরিয়ে পড়ে।কিন্তু আদ্যকে তো মিথ্যা বলা যাবে না যদি বাসায় গিয়ে জানতে পারে মেহু খায় নি অথচ তাকে মিথ্যা বলেছে তাহলে তুলকালাম বাঁধাবে।শেষ পর্যন্ত মেহু চুপ থাকবে ভাবলো।কিন্তু আদ্য বারবার তাকে খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস
করছে।এবার মেহু ভীতি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে না খাওয়ার কথা বলে।ব্যস আদ্য ল্যাপটপটা বন্ধ করে অগ্নি চোখে মেহুর দিকে তাকায় আর হতভাগি মেহু চোখের জল ছেড়ে দেয়। আদ্য রাগী মুডে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু মেহুর কান্নায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে ফেলে।রাগটাকে সংবরন করে সে চুপ মেরে কিছুক্ষণ দম ফেলে।ড্রাইভারকে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে থামতে বলে।কথামতো ভালো একটা হোটেলের সামনে গাড়ি থামালে দুজনে গাড়ি থেকে বের হয়ে হোটেলে ঢুকে।একটা আলাদা সেক্টরে দু’জনে বসে।ওয়েটার একটা ফুড লিস্ট দিতেই আদ্য সেটা মেহুর দিকে এগিয়ে দেয়।
“এখান থেকে কি কি খাবে বলো, ওয়েটার নিয়ে আসুক?”
“বলছি কি এখন আর খেতে ইচ্ছে করছেনা।দুপুরে না খাওয়াতে খিদে টা মরে গেছে। চলুন বসায় চলে যায় একেবারে সন্ধ্যায় খাবো।”
রাগান্বিত চোখে আদ্য মেহুর দিকে তাকায়।মেহু ভয়ে ঢোক গিলে।মেহু লিস্ট দেখার আগেই আদ্য সেটা টেনে নিজে অর্ডার দেওয়া শুরু করে।খাবারের প্রকারতা আর আদ্যর
অর্ডার দেওয়ার পরিণতি দেখে মেহু সাথে সাথে কান্না জুড়ে দেয়।ওয়েটার চলে গেলে আদ্য শান্ত চোখে মেহুর দিকে তাকায় মেহু তখনও কান্নায় ব্যস্ত। আদ্য একটা ঝাটকি দিতেই কান্না আরেকটু বেড়ে গেলো।
“এ মেয়ে তুমি বাচ্চাদের মতো এভাবে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছো কেন?চোখের জল কি বেশি হয়ে গেছে? ”
“আপনি এত্তগুলো খাবার কার জন্য অর্ডার দিয়েছেন বলুন তো?আমাকে দেখে কি হাতি মনে হয় নাকি রাক্ষসী লাগে?”
“তোমাকে দেখে তাল পাতার সিপাহী লাগে তাই এসব খাবার অর্ডার করেছি যাতে খেয়ে একটু মোটা হও।”
“একদিনে এত খাবার খেয়ে কি মোটা হওয়া যায়? আমি তো বেলুনের মত ফেটে যাবো।”
বলেই আবারও কান্না শুরু করে।মেহুর এহেন কথায় আদ্যর হাসি আসে কিন্তু পেটে চেপে রেখে মুখটা গম্ভীর করে।
“আসলে আমিও কিছু খাই নি তাই ভাবলাম তোমার সাথে খাবো কিন্তু তুমি যেভাবে কান্না শুরু করলে বলার তো অবকাশ রইলো না।”
হুট করে মেহুর কান্না থেমে যায়। মেহু মনে মনে চিন্তা করে সত্যিই তো সারা দুপুর তার সাথে ছিল আদ্য তার মানে ওনার ও খাওয়া
খাওয়া হয় নি।আর মেহু কি না কি ভেবে..। ভাবতেই লজ্জায় মাথাটা নিচু করে রাখে মেহু।এদিকে আদ্য মনে মনে ভাবে অন্য কথা।
আসলে আদ্য ভার্সিটি যাওয়ার আগে লাঞ্চ সেরে গিয়েছিল কিন্তু যখন শুনল মেহু খায় নি তাই নিজেই খাওয়াতে নিয়ে আসলো।কিন্তু না খাওয়ার বিষয়টা মিথ্যা বলার কারণ হচ্ছে যাতে একলা খেতে গিয়ে মেহু অস্বস্তি বোধ না করে।কারণ কেউ খেলে তার সামনে অন্য কেউ বসে থাকলে খেতে অস্বত্বি লাগে তাই আদ্য মিথ্যা বলেছে সে খায় নি।কথাটা শুনেই মেহু একটু স্বাভাবিক হলো।মনে মনে ভাবলো,
“যাক বাবা এত খাবার তাহলে তার জন্য নয়
কিন্তু সে তো অল্প করে খাবে তাহলে বাকি খাবার কি আদ্য খাবে?এত বড় রাক্ষস ওনি?কই বাসায় তো এত খায় না?”
“বাসায় খায় না বলে কি আমি অত খাবার খেতে পারি না।তাছাড়া এভাবে রাক্ষস ভেবো না বুঝলে খেতে জানতে হয়, টেকনিক শিখতে হয় নাহলে তো শরীর ফিট থাকে না।তাছাড়া নিজেকে দেখো পাটিসাপটা পিঠার মত লেপ্টে আছে হাড় মাংস। ”
মেহুর মনের কথা গুলো আদ্যর মুখে শুনে চমকে উঠে মেহু।সাথে রেগেও যায় কারণ আদ্য তাকে পাটিসাপটা পিঠা বলেছে।মেহু
চোখ ঘুরিয়ে একবার নিজেকে দেখে। কই এত খারাপ তো না তার স্বাস্থ্য তাহলে আদ্য তাকে এভাবে কথা শোনাল কেন?অবশ্যই আদ্য তাকে শুরু থেকেই সুযোগ পেলে কথা শুনাতে ওস্তাদ।আর এখন তো সেটা হাতের মুঠোয়।
খাবার আসতেই আদ্য খিদে পেয়েছে এমন ভঙ্গিমা নিয়ে খাওয়া শুরু করে।মেহু এতক্ষণ ঠিক থাকলেও এবার তার পেটের মাঝে খিদারা পীড়াপীড়ি শুরু করে। আসলে সকালে হালকা খাবার,দুপুরে অভুক্ত তার ওপর দৌড় ঝাপ সব মিলে খিদে যেন দশ গুণ বেড়ে গেলো। তাই সামনে যা পেলো সবটা নিয়ে গপাগপ খেতে শুরু করলো।অনেকটা সময় নিয়ে খাওয়ার পর একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে চোখ পড়ে আদ্যর দিকে।আদ্যর প্লেটে চোখ পড়তে দেখে শুরুতে যেসব খাবার আদ্য নিয়েছিল এখনও সেগুলো পড়ে আছে। তার মানে কি আদ্য না খেয়ে তার খাওয়া দেখছিলো।টেবিলে চোখ পড়তে দেখলো প্রায় খাবার ফিনিশড।এতক্ষণ মনে মনে আদ্যকে রাক্ষস ডাকলেও এখন তো সেই নিজেই রাক্ষসীর মত সব খেয়ে নিলো।লজ্জায় সে মাথা তুলে তাকাতে পারছেনা।ইচ্ছে করছে মাটির সাথে মিশে যেতে। ছিঃ ছিঃ কি লজ্জার ব্যাপার!
“এতক্ষণ তো বলছিলে তুমি খেতে পারবেনা এখন এতো খাবার কার পেটে গেলো শুনি?”
মেহু মাথা তুলতে পারছেনা এতোটা লজ্জা লাগছে।তাছাড়া খিদে লেগেছিল বলে একটু না হয় বেশিই খেয়ে ফেলেছে তাই বলে খোটা দিতে হয়।আর সেও বা কেমন?খাবার দেখে ঠাকুমার ঝুলির রাক্ষস হয়ে গেলো।ধ্যাত!!
“আরে তুমি এমন মাথা নিচু করে আছো কেনো?খিদে লেগেছে খেয়েছো কিন্তু পেটে খিদে রেখে মুখে লাজ লাগলে তো হবে না।পেটই কষ্ট পাবে বুঝলে।যাও গাড়িতে গিয়ে বসো আমি বিল পে করে আসি।”
মেহু তাড়াতাড়ি উঠে হাঁটা ধরলো।এ মুহূর্তে আদ্যর সামনে থাকতে লজ্জা লাগছে।তার চেয়ে চলে যাওয়া ভালো।মেহুর হাঁটার গতি দেখে আদ্য হেসে উঠে। ঠোঁট নেড়ে বলে উঠে ,
“পাগলি!”
,
,
,
চলবে…….
(গতকালের পর্ব ছোট বলে চিল্লাচ্ছেন তাই আজ বিরাট করে দিলাম।একটু বিরাট করে কমেন্ট করেন তো🥱🥱)