#জলছবি
#পার্ট_৩৪
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া
.
পরদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নোলক। ঘন্টাখানিক সময় নিয়ে গোসল করে। ভেজা চুল ভেজা শরীর নিয়েই আদা-চা বানায়। মগ ভর্তি চা নিয়ে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে থাকে অ-অনুমেয় সময় ধরে। চুলের ডগায় জমে জমে মুক্তর ন্যায় জলের ফোঁটা; তখনও টপটপ করে মেঝেতে পড়ে। স্নিগ্ধ মুখখানা ভারী বিষন্ন! অকল্পনীয় স্বপ্ন বুননে বাঁধা প্রাপ্ত হওয়া দু’খানা অস্বচ্ছ আঁখি। সূর্যের তীর্যক আলো এসে যখন সেই আঁখিতে লাগে; ঠিক তখনই মনটা হুঁ হুঁ করে উঠে!
জানালার পাশ থেকে সরে আসে। সমাপ্ত না করা চা সমেত মগটা ড্রেসিংটেবিলে রেখে
পুনরায় বিছানায় এসে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়ে। নবনী রুমে নেই। কই কে জানে!
নোলকের যখন অত্যাধিক পরিমান মন বিষন্নতায় ছেয়ে থাকে, তখন তার খুব ঘুম পায়! মনের সাথে পাল্লা দিয়ে চোখদুটোও বুঝি অন্ধকারে হারিয়ে যেতে চায়! কী আশ্চর্য!
সারাটাদিন নোলক ঘুমিয়েই কাটায়। মধ্যাহ্ন পেরিয়ে বিকেল নামে। বাড়িতে কি হচ্ছে-না হচ্ছে সেসব সে টেরও পায়নি একটুও!
বিকেলের শেষ দিকে নবনী রুমে আসে। দরজার ধারেই কিছুক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। আগাগোড়া বিশেষণে মোড়ানো তার সেই ছোট্ট দূরন্তপনায় ভরপুর বোনটাকে দেখে। ইশশ, বড় হয়ে গেল মেয়েটা?
নবনী খুব সাবধানে কাছে এসে নোলকের মাথায় হাত রাখে। দু-একবার মাথায় হাত বুলাতেই নোলকের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম না কাটা দৃষ্টিতেই নোলক কপাল কুঁচকে তাকায়। নবনী মিষ্টি করে হেসে বলে,
“ঘুম ভেঙেছে?”
নোলক ইশারায় সায় জানায়। নবনী বার’কয়েক চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
“তবে উঠে ফ্রেস হয়ে নে। সবাই চলে এসেছে।”
নোলক যেন একটু অবাক হলো। ঘুম জড়ানো কন্ঠেই বলে,
“সবাই এসেছে মানে? কারা এসেছে?”
“তোর সব বন্ধুরা। ইশানরাও চলে আসবে কিছুক্ষণ পরই। এই কয়েকদিনেই কত বড় হয়ে গেলি তুই নোলক, আমি বুঝতেও পারলাম না!”
শেষের কথাটা নবনী গভীর আবেগ তাড়িত হয়েই বলল।
নোলক হতবিহ্বল হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মনে করার চেষ্টা করে, আজ কী কোনো বিশেষ দিন? জিজ্ঞেস করে,
“কী হয়েছে? আজ কী? সবাই কেন এসেছে?”
নবনী একটু রসিকতার সুরে বলে,
“সবাইকে রেখে একা একা বিয়ে করতে চাস নাকি? গাধী!”
নোলক হঠাৎ-ই যেন আসমান থেকে পড়ে! রাতের কথা মনে পড়তেই মনটা ভীষণ ভার হয়ে যায়! ইশান তবে সত্যি সত্যি….!
নোলকের কান্না পায় ভীষণ! দুনিয়ার ঐ সবচাইতে নিষ্ঠুর মানুষটার জন্য এক আকাশ, এক সমুদ্র অভিমান জমা হয় মূহুর্তের মাঝেই। গলায় এসে কান্না আটকায়। নোলক কিছু বলবে সেই সুযোগ পেলো না। তার আগেই বন্ধুমহল হুড়মুড় করে রুমে প্রবেশ করল। নোলক অভিমান অনুরাগ কিছু করার ফুরসুরৎ-ই পেল না! বাকিদের দেখে অবাক না হলেও শ্রীতমাকে দেখে অবাক না হয়ে পারলো না। অভিমানেও কিছু ভাটা পড়লো বৈকি! ফয়সালের অসুস্থতায় শায়নের ছুটি না থাকায় যে আসতে পারেনি একা একা, ভিডিও কলে দেখেছে। সে কিনা..! কী মিষ্টি দেখাচ্ছে মেয়েটিকে। সিঁদুর রাঙা উজ্জল প্রাণবন্ত মেয়েটি কাছে আসতেই অস্ফুট স্বরে বলল,
“শ্রী! তুই..!”
শ্রীতমা কাছে এসে নোলকের গলা জড়িয়ে বলল,
“কেমন আছিস দোস্ত! খুব মিস করেছি তোকে!”
ফয়সাল শ্রীতমাকে ব্যাঙ্গ করে, নিজের এলোমেলো চুল আরো এলোমেলো করতে করতে বলল,
“হুম, তুমি যে কী মিস করছো জাতি জানে। জামাই পাইয়া দিন-দুনিয়ার গুইলা খাইয়া ফালাইয়া; আসছে মিসের গল্প শুনাইতে।”
সৃজন ফয়সালের সুরে সুর মিলিয়ে তিক্ততা নিয়ে বলে,
“আর কইস না দোস্ত! মাইয়াগুলান এমনই স্বার্থপর।”
শ্রেয়া বলে,
“ফাজিল! তুই এমন সব কিছুতে মেয়েদের টানিস বলেই মেয়েরা তোরে পাত্তা দেয় না। তোরে আজীবন সন্যাসী সিল মেরে জঙ্গলে আজীবনের জন্য স্থায়ী করে দেয়া উচিত।”
শ্রীতমা বিরক্তি প্রকাশ করে বলে,
“উফফ! সবসময় তোরা এমন ঝগড়া করিস কী করে বল তো? চুপ করবি? আজ অন্তত চুপ থাক বদমাইশের দল!”
নোলক বলে,
“শ্রী তোকে কে…!”
নোলক প্রশ্ন শেষ করার আগেই শ্রীতমা বুঝে ফেলে। নোলকের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে শ্রীতমা বলল,
“ইশান’দা কাল কল দিয়ে বলল, আর্জেন্ট যেন চলে আসি। তোর নাকি খুব দরকার! ওকে বললাম, আর ও নিয়ে এলো। ভাগ্যিস ওর ছুটি ছিল! এসে দেখি এই কান্ড! আ’ম সো হ্যাপি দোস্ত! ফাইনালি তুইও…!”
সৃজন ফোড়ন কেটে বলল,
“হ, তোগোই জিন্দেগী! শালার না পাইলাম একটা গার্লফ্রেন্ড আর না বিয়ে-ফিয়ে! কী করমু এই মরার জিন্দেগী লইয়া?”
“কচু গাছে ফাস দে। বাইচা থাইকা আর কিরবি?” বলল নিষাদ।
খিলখিল ধ্বনিতে মেতে উঠলো সকলে।
এরপর আরোকিছু হাসিঠাট্টা হলো। এক পর্যায়ে ফয়সাল টিটিকারি মেরে নোলককে বলে, “এর জন্য তবে তোমার এতো বিরহ? আগে কইতি, ধইরাবাইন্দা বিয়া দিয়া দিতাম, এর জন্য বিরহ করে জগৎ ভাসানোর কী প্রয়োজন ছিল? আমি আরো চিন্তায় পইরা গেছিলাম। ভাবলাম, মাইয়াডেরে এমন বিবাগী করলো কেডায়! মাইর-টাইর দেয়ার প্রিপারেশনও নিতেছিলাম। শেষে দেখি এই কাহিনী! কী মচেৎকার কান্ড, আহা!”
নিষাদ শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে,
“সবাই তলে তলে টেম্পু, বাস, ট্রাক চালিয়ে বিশ্বজয় করে ফেলছে; মাঝখান থেকে নাম হয় আমার আর শ্রেয়ার।”
বলেই শ্রেয়ার সাথে হাই-ফাইভ দেয়।
ফয়সাল কোনো প্রতিবাদ করে না, পাছে সে ফেঁসে না যায়! তবে সৃজন সায় জানায়।
লুবনা কাছে এসে নোলকের পাশে বসে বলে,
“দোস্ত আই ক্যান্ট বিলিভ! তোর কী সত্যি বিয়ে হয়ে যাবে? শ্রী তো বিয়ে করে ডিরেক্ট কলেজ-ই চেঞ্জ করে ফেলল! তুইও হারিয়ে যাবি? সত্যি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, দোস্ত?”
ফয়সাল লুবনার মাথা আলতো আঘাত করে বলে,
“না বিয়ে বিয়ে খেলা হবে। মফিজের বউ! সর এনতে!”
শ্রেয়া ভাবুক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“দোস্ত মফিজ কে রে?”
সৃজন ফয়সালকে বলে,
“দোস্ত? তুই তো একটা মিসটেইক করে ফেললি! মফিজ তো এই বলদনীর জামাই হবে! তারপর বলদনী থেকে মফিজিনি তে রূপান্তরিত হবে।”
কথাগুলো সে বলে, শ্রেয়াকে উদ্দেশ করে।
বলেই হো হো করে হেসে ওঠে, সাথে বাকিরাও।
শ্রেয়া মুখ ফুলিয়ে বলে,
“তোরা সবসময় আমার সাথে এমন করিস। খারাপ সবগুলা! যাহ, কথাই বলবো না আর।”
সকলে আরো এক দফা হাসে। সকলের আরো কত কথা। কত উৎসাহ! তারা নোলকের মনের ব্যথা টেরও পেলো না।
প্রচন্ড মাথা ব্যথা উঠে যায় নোলকের। মনে হচ্ছিল মাথায় কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে! কী ভীষণ যন্ত্রণা।
নোলক বলে,
“তোরা এখন একটু যা তো।”
নিষাদ বলে,
“ছিঃ ছিঃ! এত বড়ো অপমান’স! কেমন দূরদূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে গাইজ! এর নাকি বিয়ে! মাগো মা! বিয়ের আগেই তো ভাব’স বেড়ে গেছে, বিয়ের পর তো চোক্ষেই দেখবো না!”
ফয়সাল নিষাদের সাথে যুক্ত হয়ে বলে,
“বিয়া করবি আবার ভংও ধরবি! এ কেমন দুই-নাম্বারি! যাহ থাকলাম না তোর রুমে, কী আর হইবো?”
সৃজন বলে,
“বুঝস না? মাইয়া মানুষ মানেই তো ঢং আর ভং এর দোকান! সারাজীবন ঢং আর ভং ধরেই কাটায় দেয়!”
শ্রেয়া লুবনা শ্রীতমা এবার সমস্বরে বলে ওঠে,
“কুত্তা তুই আবার মেয়েদের টানছিস…”
সৃজন এক ছুটে দরজার কাছে গিয়ে নিষাদ আর ফয়সালকে হুশিয়ার করার মতন করে বলে,
“বালক’স? এখন এখানে থাকা মানে দশ নাম্বার বিপদ সংকেত। প্লিজ ফলো মি। চইলে আসো মোর লগে।”
বলেই স্থান ত্যাগ করে দ্রুত। ফয়সাল আর নিষাদ নিজ থেকে বের হওয়ার আগেই তাদের ঠেলে বের করে দেয় শ্রেয়া আর লুবনা। অজ্ঞতা তাদের যেতেই হয়।
লুবনা, শ্রেয়া আর শ্রীতমা আরো খানিকক্ষণ থেকে বেড়িয়ে যায়, নোলকের আবদারে। তার একটু একা সময় চাই!
সকলে বেড়িয়ে যাওয়ার পরপরই নোলক খাটের সাথে হেলান দিয়ে, পা ভাঁজ করে বসে। চোখে টলমল করা পানি, মনে টসটসে অভিমান। রাগ ক্ষোভ আর অভিমানের সংমিশ্রণে বীভৎস অনুভূতির সৃষ্টি হয়। নাক লাল হয়, লাল হয় সমগ্র মুখমণ্ডল। মস্তিষ্কজুড়ে আদ্র’র পাঠানো সেই ভয়েস’টি! কী নিষ্ঠুর, অমানবিক তার ভাবনা! এতো সহজ, এত ঠুনকো, এত অবহেলিত কারো অনুভূতি তার কাছে!
বারবার করে ভাবে, আদ্র’র মনে সত্যিই কী তার জন্য একটুও টান নেই? নিজেই উত্তর দেয়, নেই তো! থাকলে কী অমন বলতে পারতো?
এই যে এত রাগ, এত অভিমান? তবুও কেন, কী ভেবে যেন ফোন দেয় সেই নিষ্ঠুর মানবটিকে!
একবার, দুইবার, ঠিক তিনবারের সময় আদ্র ফোন তোলে। শান্ত অথচ মুগ্ধ কন্ঠটি সারা দেয়, “হ্যালো!”
নোলক কি আর প্রতিত্তুর করতে পারে? তার স্বর, কন্ঠনালী কেউ যেন দু’হাতে চেপে ধরে রেখেছে! অমন কষ্টে কে বা সায় জানাতে পারে?
ওপাশ থেকে পুনরায় ভেসে আসে,
“কাঁদছ তুমি নোলক? আচ্ছা কাঁদো! কাঁদলে তোমায়, অবাক সুন্দর লাগে।”
নোলক তখনও চুপ। ঝরঝর করে কেঁদেই চলেছে, যেন আজ তার কান্নার দিন!
ফোন কানে দুটি মানুষ খানিকক্ষণ চুপটি হয়ে থাকে। নিরবতা ভেঙে আদ্র বলে,
“এই নোলক? আজ কী তুমি খুব সুন্দর করে সেজেছ? সাজলে তোমায় পরী লাগে, সত্যি বলছি! আচ্ছা শোনো? ঐ আহামরি টাইপ গর্জিয়াস শাড়ি পরো না তো! তুমি বরং আকাশের বুকে ফুটে থাকা মায়াবী রঙের অতি সাধারন শাড়িটা পরো! পায়ে নূপুর মাস্ট পরবে, ঠিক আছে? আর দু’হাত ভর্তি কাচের চুড়ি। ট্রাস্ট মি নোলক, তখন তোমায় ‘পৃথীবির সবচাইতে চমৎকারতম মানবী’ লাগবে। শুনতে পাচ্ছো নোলক তুমি? হ্যালো…”
নোলক ফোনটা দূরে ছুড়ে মারলো। ফোন ভাঙলো-কী-ভাঙলো-না তাতে কী এসে যায়? মনটা নিশ্চয়ই ভেঙেছে। অমন করে কথা, আর কেউ বলতে পারে না, কেউ না। অমন করে স্নিগ্ধ মায়ায় বাঁধার মন্ত্র আর কারো জানা নেই, থাকতেই পারে না!
এমন নিষ্ঠুর অশ্রু ঝড়িয়ে কেউ কখনও বলতে পারবে না, তোমার কান্না অতি চমৎকার নোলক!
নোলক হাঁটুতে মুখ গুঁজে চাপা আর্তনাদ করে উঠে। রিনরিনে কষ্টে মরে যেতে ইচ্ছে করে! বুঝতে পারল ফোন করে মেয়েটা মস্ত বড়ো ভুল করে ফেলেছে। এক নিমিষে দুঃখ যেন বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। এই দুঃখ নিয়ে এখন সে থাকবে কী করে?
মাগরিবের পরপর শ্রেয়া, লুবনা, শ্রীতমা, নবনী পদার্পণ করে তার রুমে। নোলক তখনও রুমে হাঁটুমুড়ে বসে ছিল।
তাদের আসার আলাপ পেয়েই খানিক আড়ষ্ট হয়ে বসল। নোলক আড়ালে চোখ মুছল।
নবনী আড়চোখে লক্ষ্য করলেও কিছু বুঝতে দিল না, পাছে অসস্তিতে না পড়ে যায় বোন তার!
তারা হাতের সাজগুজের সরঞ্জাম গুলো রেখে তৈরি হতে বললে নোলক বিরূপ আচরণ করে প্রথমে। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
“যেমন আছি, তেমন অবস্থাতেই যা হওয়ার হবে।”
নবনীও আর জোর করে না। কেননা সে জানে, এই মেয়ের জেদের সাথে কেউ কখনও পেরে উঠবে না! নোলকের গালে, কপালে আলতো হাত বুলিয়ে নবনী বেরিয়ে যায়। বাকিরা থাকে।
নোলকের পরনের কালো রঙের লং স্কার্ট আর খয়েরী টপস। শরীরে নকশা করা ওড়নাটা পেঁচিয়েই বসে ছিল। শ্রীতমা নিচু কন্ঠে বলল,
“তুই কী বিয়ে করার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত না দোস্ত?”
“প্রস্তুত। আমি বিয়ে করবোই। শুধু কোনো প্রকার ড্রামা করতে পারবো না।”
রাত আটটার দিকে নোলকের কাছে কিছু কাগজপত্র নিয়ে আসা হলো। যখন সাইন করতে দিলো ঠিক সেই মূহুর্তে নোলকের মনে হলো, ও যদি এখন মারা যেত তবে কেমন হতো!
নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো। মনে হলো, এক্ষুনি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাবে! হাত কাঁপছিল। কিন্তু কথায় আছে, রাগ আর অভিমানের কাছে সব কিছুই হেরে যায়! নোলকের বেলাতেও ঠিক তাই হলো। কাগজটা নিজের কাছে নিয়ে খচখচ করে সাইন করে দিল। এক ফোঁটা পানি সেই কাগজে পড়ল। পড়ুক, তাতে কী? কবুল বলল। বিয়েও হয়ে গেল। তারপর? তারপর পাশে থাকা শ্রীতমাকে বলল,
“আমায় একটু পানি দিবি দোস্ত? আমি বোধহয় মারা যাচ্ছি!”
শ্রীতমা উঠার আগেই নবনী ঝটপট করে পানি এনে নোলকের মুখচোখ মুছে বলল,
“তুই ঠিক আছিস বোন? খারাপ লাগছে কী?”
“ঠিক আছি আপু।”
তপ্ত দীর্ঘশ্বাঃস ছেড়ে নবনী বলে,
“তোর রাগ, অভিমান, জেদ কিছুই আমি আজও বুঝে উঠতে পারলাম না বোন। তোর ইচ্ছেতেই তো বিয়ে হয়েছে। কষ্ট কেন পাচ্ছিস? যার জন্য কষ্ট পাচ্ছিস, তবে তাকে রেখে ইশানকে কেন বিয়ে করতে চাইলি?”
“আমি কারো জন্য কষ্ট পাচ্ছি না। আমি খুব খুশি! যা হয়েছে বেশ হয়েছে।”
“সত্যি?”
“সত্যি। ভয়ংকর সত্যি। এখন একটু একা থাকতে দিবা? খুব ক্লান্ত লাগছে।”
“আচ্ছা থাক।” বলে নবনী বেড়িয়ে গেল। শ্রেয়া, শ্রীতমা, লুবনা আরো কিছুক্ষণ পরে গেল।
সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই নোলক নিজের রুমের দরজা আটকে দিল। কাঁদল না। আর কোনো কান্না নেই যেন তার। দরজা আটকে দরজার সাথেই ঠেস দিয়ে বসে পড়ল।
বাহিরে তখন তুমুল বৃষ্টি। কারো মন, কারো প্রেম ভাসানো বৃষ্টি। আকাশও তার দুঃখ বুঝল, প্রেম বুঝল, বুঝলো না কেবল একটি মানুষ! অমন করে বসে থেকেই ঘুমিয়ে পড়ল নোলক। রাজ্যের সব, দুঃখ, কষ্ট, অভিমানে ভেজা টইটুম্বুর আঁখিপল্লব অচিন কোনো দেশে পারি জমাল। যেখানে আদ্র’র প্রতি তার কোনো অভিমান নেই, রাগ নেই, ক্ষোভ নেই, আছে কেবল প্রেম, জলের মতন স্বচ্ছ প্রেম!….(চলবে)
(নেটওয়ার্ক জনিত ত্রুটির জন্য, গল্প দিতে পারিনি।)