#হৃদয়ের_মাঝে_তুই
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা__০৫
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হওয়ার পর থেকে ফিহা ফাহাদের সাথে আগের মতো কথা বলে না। শুধু পড়ানোর সময় ফাহাদ পড়া জিজ্ঞেস করলে ফিহা পড়া দেয়।আর কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধু হু হা বলে উওর দেয়।
ফিহা আর আগের মতো দুষ্টমি করে না।অনেকটাই বদলে গেছে। কিন্তু এখনও তার ইংরেজি প্রিয় বই হতে পারলো না।
ফাহাদ ফিহার এই বদলানোতে কেমন সন্দেহ হলো।ফিহা আর আগের মতো দুষ্টুমি করে না।কিন্তু এখনও ইংরেজিতে টেনেটুনে পাশ করে।
হঠাৎ করে ফিহার কি হলো। আগেই বেশি লাগতো ফিহার দুষ্টুমি গুলো।
আর একমাস পর ফিহার পরীক্ষা ফিহা সিরিয়াস হয়ে পড়াশোনা করছে।যে করেই হোক তাকে পাশ করতে হবে।
ফাহাদ যানে ফিহা ইংরেজিতে ভালো না করলে ও পাশ করবে সে শিউর।
তাইমুর আহমেদ খান ইন্ডাস্ট্রির মালিক আজাদ খান এর পিএ। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল দেখছিলেন তিনি। তখন অনিক চৌধুরীর ফোন আসলো।
অনিক চৌধুরী তার বন্ধুকে ফোন দিয়ে জানালেন তার সাথে দেখা করতে।গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
তাইমুর আহমেদ অফিসের কাজ শেষ করে তার বন্ধুর সাথে দেখা করতে তার বাড়িতে গেলেন।
অনিক চৌধুরী তখন তার স্ত্রী মেহের এর সাথে খুনসুটি করছিলেন।
তাইমুর আহমেদকে দেখে তার পাশে বসতে বললেন।
আর মেহেরকে চা করে আনতে বললেন।
অনিক চৌধুরীঃ দোস্ত কেমন আছিস।
তাইমুর আহমেদঃ আমি একদম ফিট্ আছি।তুই।
অনিক চৌধুরীঃ তোর মতো ফিট্ আছি ।
আর কিছুক্ষণ গল্প করলো।
মেহের চা নিয়ে আসলো।
মিসেস মেহেরঃ ভাইজান তুমি কেমন আছেন।বাসার সবাই ভালো আছে তো।
তাইমুর আহমেদঃ সবাই ভালো আছে।
অনিক চৌধুরীঃ এইবার আসল কথায় যাওয়া যাক।
তার বন্ধুর হাত নিজের হাতের ওপর রেখে বলে,, বন্ধু আমি চাচ্ছি তোর বড় মেয়েকে আমার বাড়ির পুএবধূ করে আনতে।তোর যদি কোনো আপওি না থাকে।
তাইমুর আহমেদ হাসি মুখে তার কথা মেনে নিলেন।তারপর আর কিছুক্ষণ গল্প করে দু বন্ধু একসাথে খাওয়া দাওয়া করলো।তাইমুর আহমেদ বাড়িতে চলে গেলেন।
তাইমুর আহমেদ বাড়িতে এসে মিসেস রাজিয়াকে বর্ন আর ফাহাদের কথা বললেন।ওনি এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন।
তাইমুর আহমেদ ঠিক করলেন ফিহার পরীক্ষা শেষ হলে বর্ন আর ফাহাদ এনগেজমেন্ট টা করে ফেলবেন।
দেড় মাস পর,,,,,,,
ফিহার পরীক্ষা শেষ হলো আজ।
ফিহা এখন খুব খুশি কিছুদিন শান্তিতে থাকতে পারবে।পড়াশোনা করতে হবে না। আহ্ কি মজা।
ফাহাদকে তার বাবা অনিক চৌধুরী বললেন বর্নের সাথে বিয়ের কথা।
ফাহাদ যেন আকাশ থেকে পড়লো। সেতো তার ফিহুপাখি কে ভালোবাসে। তাকে ছাড়া তার পক্ষে কাউকেই বিয়ে করা সম্ভব নয়।
ফাহাদ না করে দিলো। আর সরাসরি ফিহার কথা বললো।ও বিয়ে করলে ফিহাকেই করবে। অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে না।অনিক চৌধুরী পরলেন বিপদে সে তো তার বন্ধুকে কথা দিয়ে ফেলেছেন।বর্নের সাথে বিয়ে দিবেন বলে।এখন আবার ফিহার কথা কিভাবে বলবো আমি।
ফাহাদ ফিহাকে ফোন দিলো।
মোবাইলের টুংটাং আওয়াজে ফিহার ধ্যন ভাঙলো।এতক্ষণ ফিহা তার স্যারকে নিয়েই ভাবছিলো।
ফিহার মুখে হাসি ফুটে ওঠলো স্যার ফোন নাম্বারটা স্কিনে জ্বলজ্বল করতে দেখে।
ফিহাঃ আসসালামু আলাইকুম স্যার।
ফাহাদঃ সালামের জবাব দিয়ে বললো। আমি গাড়ি নিয়ে নিচে ওয়েট করছি তাড়াতাড়ি এসো।কথা আছে তোমার সাথে।
বলে ফোন কেটে দিল ফাহাদ।
ফিহাঃ যাহ্,,,,বাবা এর আবার কি হলো।হঠাৎ এইভাবে যেতে বললো।আবার কিছু করলাম না তো আমি।
ফিহা গায়ের জামাকাপড় গুলো ও চেঞ্জ করেনি। গোলাপি রঙের থ্রী পিচ পরেছিলো ওগুলো পরেই ছুট লাগালো।
দরজা খুলে দেখলো ফাহাদ দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে।
ফাহাদ গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে গাড়িতে ওঠে বসতে বললো।
স্যারকে এমন দেখাচ্ছে কেন চুলগুলো কেমন এলোমেলো হয়ে আছে।মুখটা শুকিয়ে গেছে। ফিহার কেমন জানি খারাপ লাগছে ফাহাদকে এমন অবস্থায় দেখে।
ফিহা কিছু না বলে গাড়িতে ওঠে বসলো।
ফাহাদ গাড়ি স্টার্ট দিলো।
এইদিকে বর্ন ছাঁদে তার বান্ধবী জেরিন এর সাথে কথা বলছিলো। নিচে তাকাতেই ফাহাদ আর ফিহাকে গাড়ি করে কোথাও যেতে দেখলো।বর্নের কেমন যেনো সন্দেহ হচ্ছে।
ফাহাদের সাথে ফিহার কি এমন কাজ ওকেই নিয়ে যাচ্ছে। বর্ন ও ওদের পিছু নিলো।
দীর্ঘ দু ঘন্টা পর…………..
ড্রাইভ করার পর ফাহাদ একটা বড় মাঠের সামনে এসে গাড়ি থামলো। ফিহা একবার ফাহাদের দিকে তাকাচ্ছে আবার মাঠটার দিকে তাকাচ্ছে।
ফিহাঃ বিরক্তিকর কন্ঠে বললো,,, এই আপনার গুরুত্বপূর্ণ কথা।আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন ফুটবল খেলতে নাকি। আপনি ঠিক আছেন স্যার।আরও কতক্ষণ বকবক করলো।কিন্তু ফাহাদ কোনো কথা বলেনি।ফিহা চুপ হয়ে গেল ফাহাদকে কথা বলতে না দেখে।
ফাহাদ ফিহাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ফিহার হাত ধরে টেনে মাঠের মাঝখানে নিয়ে গেলো।
ফিহা কিছুই বুঝতে পারছে না সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। স্যারের কি হলো এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছে কেন।
ফাহাদঃ এইখানে দাঁড়াও আমি একটু আসছি।এইখান থেকে এক পা ও নড়বে না।ফিহা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
ফাহাদ কাউকে ফোন দিলো।ওই পাশ থেকে বললো কাজ হয়ে গেছে। ফিহার কাছে আসলো।ফিহাকে কিছু না বলতে দিয়ে ফিহার পিছনে দাঁড়িয়ে ফিহার চোখে কাপড় বেধে দিলো।
ফিহাঃ স্যার বিশ্বাস করুন আমি কি,,কিছু করিনি আমাকে মেরে ফেলবেন না প্লিজ স্যার।আমাকে মেরে ফেললে আমার জামাইটা বিধবা হয়ে যাব আর আমার বাচ্চাগুলো মা হারা হয়ে যাবে।
ফিহার এমন বাচ্চামো কথা শুনে ফাহাদ নিশব্দে হাসলো কিন্তু কিছু বললো না।
একটু পর ফাহাদ ফিহার চোখ থেকে কাপড় টা খুলে দিল।
ফিহা অবাক হলো তার সামনে কিউট কিউট অনেকগুলো বাচ্চা তাকে পুরোপুরি ঘিরে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। সব বাচ্চাদের হাতে একটা করে গোলাপ ফুল। সবাই ফিহার দিকে গোলাপ ফুল গুলো এগিয়ে দিলো।ফিহাও বাচ্চাগুলোকে আদর করে দিলো আর গোলাপ গুলো ও নিলো।
পিছনে তাকাতেই ফিহা থমকে গেল।
ফাহাদ হাঁটু গেড়ে ফিহার সামনে একটা গোলাপ নিয়ে বললো,,,,,,
🌺ভালোবাসি ফিহুপাখি🌺
ফিহা যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না স্যার ওকে ভালোবাসে। এইটা কি করে সম্ভব। ফিহার মনে বিভিন্ন প্রশ্নরা ঘুরপাক খাচ্ছে।
ফাহাদ আবার ও বললো,,
°আই লাভ ইউ°
🌺ফিহুপাখি🌺
আমায় বিয়ে করবে…………..
🌺ফিহুপাখি🌺
তোমার হাত ধরে সারাজীবন থাকতে চাই, তোমার সব দুঃখ আমার করে নিতে চাই,আমার সব সুখ তোমায় দিতে চাই, আমার হৃদয়ের মাঝে তোমায় রাখতে চাই, আমার বাবুদের আম্মু করতে চাই,দিবে কি সেই অধিকার 🌺ফিহুপাখি🌺।
ফিহাও তার স্যার কে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে। কিন্তু সে ভাবতে পারেনি সত্যি সে তার স্যার কে নিজের করে পাবে।ফিহার খুশিতে চোখের জল গড়িয়ে পড়লো। ফিহা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।মুখ দিয়ে কিছু বললো না। হ্যাঁ বলে ফাহাদের হাত থেকে গোলাপ টা নিলো।
ফাহাদ ওঠে দাঁড়িয়ে ফিহার মাথাটা তার বুকের বা পাশে রাখলো।আর এক হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
আজ ফাহাদের খুব শান্তি লাগছে। সে তার প্রেয়সীকে মনের কথা বলতে পেরে।তার হৃদয়টা এতদিনে শান্তি পেলো।ফিহার মাথা তার বুকের বা পাশে রাখার সাথে সাথে তার আগুনে জ্বলা হৃদয়টা নিমিষেই শান্তি অনুভব করছে।ভালোবাসা এতই সুন্দর। প্রিয় মানুষটার ছোঁয়া পাওয়ার সাথে সাথে সব শান্তি হয়ে গেছে।
ফিহা ও তার স্যারের বুকে মাথা রেখে পরম শান্তি অনুভব করছে। কিছুক্ষণ দুজন নিরব রইলো।নীরবতা ভেঙে ফিহা বললো,,স্যার
ফাহাদঃ ফিহুপাখি কিছু বলবে।
ফিহাঃ হুম। ফিহা ফাহাদের চোখে চোখ রেখে বললো,
জানেন স্যার আমি অনেক আগেই আপনার ওই চোখের প্রেমে পরেছি, আপনার হাসির প্রেমে পরেছি,আপনার ওই রাগী রাগী কথার প্রেমে পরেছি,আমাকে দেওয়া প্রতিদিনের শাস্তির প্রেমে পরেছি।
ফাহাদ কিছু না বলে মুচকি হাসল।
ফিহা ফাহাদের বুকে মাথা রেখে বললো,,
স্যার একটা গান শুনাবেন।প্লিজ শুনান না।
ফাহাদ মুচকি হেসে ফিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ফিহাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ফিহার চোখে চোখ রেখে গান বলা শুরু করলো…………..
মনে মন মিলে গেছে
প্রেম তাই হয়ে গেছে
খুব ভালো আছি দুজনে….এ……
এভাবেই দিন চলেছে।
পাশাপাশি দুজন রবো সারাটি জীবন
আর কিছু নেই প্রয়োজন…ও..ও।
ও…..মনে মন মিলে গেছে
প্রেম তাই হয়ে গেছে।
খুব ভালো আছি দুজনে
এভাবেই দিন চলেছে।
তোমাকে….এ….পেয়ে…এ…যেন সবকিছু ভুলেছি…..ই…ই
স্বপ্নের পাড়াতে দুজন বাসা বেধেছি…. ও……(২)
পাশাপাশি দুজন রবো সারাটি জীবন
আর কিছু নেই প্রয়োজন।।
ও….মনে মন মিলে গেছে
প্রেম তাই হয়ে গেছে
খুব ভালো আছি দুজনে…এ…..
এভাবেই দিন চলেছে।।
দুজনে একইসাথে চলেছি যে পথে
সর্বনাশ এই পথ থেকে কোন মতে(২)
পাশাপাশি দুজন রবো সারাটি জীবন
আর কিছু নেই প্রয়োজন ।।
মনে মন মিলে গেছে
প্রেম তাই হয়ে গেছে
খুব ভালো আছি দুজনে… এ……
এভাবেই দিন চলেছে।।
বর্ন এতক্ষণ লুকিয়ে দেখছিলো।ওর হৃদয়টা যেন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো । এতবড় একটা সত্যের মুখোমুখি হবে সে কোনোদিন ভাবতে পারেনি। বর্ন আর এক মুহূর্ত দাড়ালো না। কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে চলে গেল।
ফিহা আর ফাহাদ আরও কিছুক্ষণ একসাথে সময় কাঁটালো।
তারপর দুজন গাড়িতে ওঠলো। বাসায় আসার পথে ফিহা বায়না ধরলো আইসক্রিম খাবে।ফাহাদ ফিহাকে গাড়িতে বসিয়ে আইসক্রিম কিনে ফিহাকে দিলো।
বাসায় পৌঁছে ফিহা নিজের রুমে চলে গেল আর ফাহাদ একটা প্রয়োজনে বর্নের রুমে গিয়ে দরজা ঠেলে ডুকতেই যা দেখলো ফাহাদের পায়ের নীচ থেকে যেন মাটি সরে গেলে…………….
চলবে………
[ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]
————————————————————-
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]
#ফিহা আহমেদ 🍂