হৃদয়ের_মাঝে_তুই(সিজন-০২) #লেখিকা__ফিহা_আহমেদ #পর্বসংখ্যা_০৭

0
406

#হৃদয়ের_মাঝে_তুই(সিজন-০২)
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_০৭
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ ❌]

ফজরের সময় আজানের ধ্বনিতে ফিহার ঘুম ভেঙে যায়।
ফিহা অযু করে নামায পড়ে। নামায শেষ করে ফিহা তার নিজের হাতে বানানো ছোট্ট ফুল বাগানে
যায়।তার বাগানে………….শিউলি ফুল,বকুল ফুল,হাসনাহেনা, জবা,লাল,সাদা গোলাপ ফুল রয়েছে।

বাগানে ঢুকতেই ফিহা ভীষণ রাগান্বিত হলো………..
ফিহা রেগে চিৎকার করে গাড্ডুকে ডাকতে থাকে।

ফিহাঃ আজকে গাড্ডুর এই কুত্তারে আমি চারমু না। আমার সাদা গোলাপ গুলো সব ছিঁড়ে ফেলেছে।
সাদা গোলাপ গাছের জন্য আব্বুর কাছে গিয়ে অনেক কান্না করছিলাম।পরে ওনার বন্ধুর বাড়ি থেকে আমায় সাদা গোলাপ এনে দিয়েছিলেন।
আজকে ওই গাড্ডু আর ওর কুওারে আমি ছাড়মু না। সবসময় এই কুত্তা আমার বাগানের ফুল নষ্ট করার ধান্দায় থাকে।আর গাড্ডু আমার ফুল চুরি করার ধান্দায় থাকে।

ফিহার চিৎকারে গাড্ডু তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে।

গাড্ডুঃ কি হয়েছে ফিহা আপা।এইরকম চিল্লাচিল্লি করো কেন।

ফিহাঃ বাগানের দিকে তাকাই দেখ। তোর কুওা আমার সব সাদা গোলাপ নষ্ট করে ফেলছে।আর মাএ তিনটা ফুল আছে।

গাড্ডু মন খারাপ করে,,,,,কুওা বইলো না ফিহা আপা ওর একটা নাম আছে “টিনি”।।

ফিহাঃ আর নাম পাইলি না। কিসব আজব নাম রাখলি।

গাড্ডুঃ আমার এই নামটা ভালো লাগছে ফিহা আপা।
আপনার ফুল নষ্ট করার জন্য আমি মাপ চাইছি ওরে মাপ কইরা দেন।এখন থেকে ওরে বেঁধে রাখমু।যেন আপনার বাগানের ফুল নষ্ট না করে।

গাড্ডু মাপ চাইতেই ফিহার মনটা নরম হয়ে গেল,,,,,,

ফিহা গাড্ডুকে তার ফুলের বাগান থেকে একটা লাল টকটকে গোলাপ ফুল হাতে দিয়ে বললো,,,,,,ঠিক আছে যা মাপ করলাম।আর তোর ” টিনিকে” সাবধানে রাখবি না হয় কোনদিন আমার হাতের মাইর খায় ঠিক নাই বলে গাড্ডুর মাথার ঝাঁকড়া চুল গুলো এলোমেলো করে দিলো।

গাড্ডু খুশি হয়ে চলে গেল।(আসলে গাড্ডুর ফিহার বাগানের ফুল গুলো অনেক ভালো লাগে। ফিহা আপা ফুল চাইলে যদি বকে তাই মাঝে মাঝে সে চুরি করে।ফিহা আপার মনটা অনেক ভালা।তার “টিনি” ও ফিহা আপার বাগানের ফুল পছন্দ করে।)

ফিহা গাড্ডু চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

ফিহা তার সাদা গোলাপ ফুলের জন্য মন খারাপ হলে ও গাড্ডুর এমন আচরণে ফিহার খুব ভালো লাগলো।

ফিহাঃ এইরে আমায় ভার্সিটি যেতে হবে কাল অর্ধেক পড়েছি হুমায়ুন আহমেদ এর বইটা। আজকে গিয়ে সবটা পড়ে শেষ করবো।

ফিহা ভার্সিটির জন্য তৈরি হয়ে খাবার খেয়ে মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।

ফিহা ভার্সিটি গিয়ে ক্লাসে ব্যাগটা রেখে লাইব্রেরীতে যাবে।তার আগেই কোথা থেকে একটা কুকুর ওর সামনে এসে…. ঘেউ ঘেউ… করছে।

ফিহা ভীষন ভয় পেয়ে গেল।

ফিহাঃ গাড্ডুর কুওাটা অনেক ছোট তাই তেমন ভয় লাগে না। কিন্তু এই কুওাটা দেখি “টিনির” চাইতে দ্বিগুণ বড়।
এখন কি করবো।দৌড় লাগাবো।

কুকুরটা আবারও…….ঘেউ
ঘেউ………….
করে ফিহার কাছে আসতেই ফিহা দৌড় লাগালো।

কুকুরের দৌড়ে ফিহা দুবার পুরো ভার্সিটি ঘুরে ফেলেছে।বেচারির অবস্থা খারাপ কুকুরের দৌড়ানি খেয়ে। দৌড় দিতে দিতে ফিহা থ্রাড ইয়ারের ক্লাসের সামনে কখন চলে এসেছে নিজে ও জানে না।

ফিহা সামনে কাউকে পিছ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পিছন থেকে ব্যাক্তিটিকে জড়িয়ে ধরলো।
ফিহা কান্না করতে করতে বলে,,,প্লিজ আমাকে ওই শয়তান কুওাটার থেকে বাঁচান। না হলে আমাকে কামড়াবে।

ফিহা যাকে জড়িয়ে ধরেছে সে আর কেউ না ফাহাদ ছিলো।
বেচারা ফাহাদ ফিহাকে এইভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখে নিজেরও অবস্থা খারাপ।ফিহা যদি না ছাড়ে তাহলে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে এতে ফিহা ওকে ভুল বুঝবে।

ফাহাদঃ ফিহা ছাড় ও কিছু করবে না।
ফিহা কন্ঠ শুনে চমকে ওঠলো,,,, তাড়াতাড়ি ফাহাদকে ছেড়ে দিলো।

ফিহাঃ আ,,,আ,,আপনি।

ফাহাদঃ হ্যাঁ আমি।আর এইটা আমার “ডগি”।
তুমি যদি না দৌড় দিতে তাহলে এত দৌড় খেতে হতো না।আজকে ও কিভাবে গাড়িতে ওঠে চলে এসেছে আমি বুঝতে পারিনি। ডগি কে রেখে কেন্টিন থেকে খাবার আনতে গিয়েছিলাম।এই সুযোগে ডগি ক্লাস থেকে বের হয়ে মাঠে চলে গিয়েছে ।

ফিহা বিরবির করে বলে….. মালিক যেমন তার কুওা ও তেমন।
ফাহাদঃ কিছু বললে কি।
ফিহা একটা মলিন হাসি দিয়ে বললো,,,, না,,না, কিছু বলি নি।
ফাহাদঃ তোমার মুখটাকে এমন পেত্নীদের মতো করে রাখ কেন।হাসতে পার না।

ফিহার খুব রাগ হলো পেত্নী বলাতে।
ফিহাঃ আমি পেত্নী না। আপনি পেত্নীর জামাই।আপনার এই কুওার জন্য আজ আমার দৌড়াতে দৌড়াতে অবস্থা খারাপ।
ফাহাদ ফিহার কাছাকাছি এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,,,,ওর একটা নাম আছে ” ডগি”…..বুঝলে।আর ওকে এখন থেকে “ডগি” ডাকবে শুনলে🍂 ফিহুপাখি🍂।।
ফিহা চমকে ওঠলো,,, ফিহুপাখি বলাতে।

ফাহাদকে ফিহা তার এত কাছাকাছি দেখে ফিহার পুরো শরীর যেন বরফের মতো জমে গেছে।
ফিহা কোনোরকম দৌড়ে লাইব্রেরীতে চলে গেল।এখনও তার বুক ধুকপুক করছে। আর একটু থাকলে মরেই যেতাম।কি ডেঞ্জারাস লোক। আমার এত কাছাকাছি আসে অথচ আমি কিছুই বলতে পারি না। কেমন জানি অন্য রকম অনুভূতি জাগে।

ফাহাদ ফিহার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
ফাহাদ ডগিকে আদর করে ধন্যবাদ জানালো।তোর জন্য আমার ফিহুপাখির দেখতে পেয়েছি। মনে আলাদা এক শান্তি অনুভব করছি।ডগি খুশি হয়ে ফাহাদকে তার জিহ্বা দিয়ে চেটে দিলো।
……………………………
ফিহা ক্লাস করছে কিন্তু ক্লাসে মন বসাতে পারছেনা। ফাহাদের কথা মনে পরছে বারবার। কিন্তু কেন মনে পরছে নিজে ও জানে না।
ফিহাকে অন্যমনস্ক দেখে ঝিনুক বলে,,,,,কিরে ফিহা কি হয়েছে। ক্লাস না করে কি এত ভাবছিস।
ফিহাঃ কিছু না ঝিনুক। আজকে ক্লাসে মন বসাতে পারছি না।
ফিহা ক্লাস শেষ করে বাড়ি চলে গেল।

ফাহাদ বাড়ি এসে তার মাকে খুজতে লাগলো।মায়ের রুমে গিয়ে দেখলো সেখানে ও নেই।কিচেনে উ…কি মারলো।দেখলো তার মা রান্নায় ব্যস্ত।

মিসেস মেহেরকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে………আম্মু………..
মিসেস মেহেরঃ হ্যাঁ বল।কিছু বলবি।

ফাহাদঃ আম্মু আমি বিয়ে করমু।
মিসেস মেহের যেন আকাশ থেকে পরলেন,,

মিসেস মেহেরঃ কি তুই বিয়ে করবি।বিয়ের কথা বলতে একটু ও লজ্জা করলো না।।
ফাহাদ হেসে বললো……না।আগে বিয়ে করলে আগে বাচ্চা হবে। তুমি ও দাদী হয়ে যাবে। কি এমন খারাপ কথা বললাম।

মিসেস মেহেরঃ আগে পড়াশোনা শেষ করো তারপর ভেবে দেখবো কি করা যায়।
ফাহাদ মন খারাপ করে মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।
মিসেস মেহের মুচকি হেসে রান্নায় মনোযোগ দিলেন।ফারিন ফাহাদের ব্যপারে তাকে সব বলেছে।

চলবে………
[ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here