অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁 #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_32 (last part)

2
1070

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_32 (last part)

তিতিক্ষা হাসলো নক্ষত্রের কথা শুনে। নক্ষত্র তখন দুষ্টু হেসে তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,

–“তোমার আগমনে আমি পরিপূর্ণ হয়েছি৷ এবার আমাদের ভালবাসার অংশ হয়ে ছোট একটা প্রিন্স/ প্রিন্সেস আসবে। বেবিদের আগমনে তখন আমাদের পুরো বাসাটা পরিপূর্ণ করবে।”

তিতিক্ষা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে হাসলো৷ নক্ষত্র নিজেও খাচ্ছে তিতিক্ষাকেও খাইয়ে দিচ্ছে। দু’জন খেয়ে বেলকণিতে গেল। ওখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করলো। আজকে সারাদিন অনেক জার্নি করেছে। এজন্য আর রাত জাগলো না। দ্রুত ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।

পরেরদিন ভোর পাঁচটার দিকে নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে রিসোর্ট থেকে বের হলো মেঘ আর সূর্যোদয় দেখার উদ্দেশ্যে। দু’জনে মিলে হ্যালিপ্যাডের দিকে পদযাত্রা শুরু করলো। সকাল বেলা একটু শীত শীত লাগছে। পাতলা চাদরে শরীর জড়িয়ে আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল রেখে দু’জনে হাটছে। কারো মুখে কোন কথা নেই। শুধু একে অপরের সাথে পথচলাটাকে গভীর ভাবে উপভোগ করছে। কোন রকম নোংরামি ছাড়াই চলছে ওদের মাঝে একট টুকরো অনুভূতি আদান-প্রদানের অদৃশ্য এক খেলা।

কিছুক্ষণ হাঁটার পর দেখা যায়, ওই দূর পাহাড়ের পেছন থেকে সূর্যের রক্তিম লালচে আভা থেকে আস্তে আস্তে আলো ছড়াচ্ছে। পাহাড় আর গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে ধীরে ধীরে সূর্যের মাথা উঁকি দিচ্ছে। দু’জনে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে সূর্যোদয় উপভোগ করছে। যদিও সূর্য প্রতিদিন ওঠে এবং সেটা আমাদের চোখে প্রায়ই পড়ে। কিন্তু এখানকার সূর্যোদয় অন্য রকম। এখানকার সূর্যোদয় এক সৌন্দর্যের মনোরম দৃশ্যের সৃষ্টি করে। যা অন্য সব সূর্যাস্তের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অন্যদিকে স্পষ্টভাবে মেঘেদের ভেলা দেখা যাচ্ছিল। তুলার মতন সাদা মেঘগুলো ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে। এটা অপরূপ এক দৃশ্য। যেটা ভাষায় প্রকাশ করাটা অসম্ভব।

পাহাড়ের উপর এসে তিতিক্ষা নক্ষত্রের বুকে মাথা এমন সৌন্দর্য উপভোগ করছে। নক্ষত্র পেছনে থেকে তিতিক্ষাকে জড়িয়ে ধরে আছে। তিতিক্ষা মাঝে মাঝে হাত দিয়ে মেঘ ছুয়ে দিচ্ছে। মেঘগুলো তখন ওর হাতের সাথে বারি খেয়ে পানি হয়ে যাচ্ছে। তিতিক্ষার মুখে তখন হাসি ফুটছে। পাহাড়ের উপর এসে এত অপরুপ সৌন্দর্য দেখে খুশিতে ওর চোখ থেকে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে ঘুরে নক্ষত্রকে জড়িয়ে ধরলো। এত কাছে থেকে এসব দেখে ওর শরীর খুব কাঁপছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার চোখ মুছে ওর দুই গালে হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বললো,

–“এই অশ্রুফোঁটা শুধু আমার জন্য ঝড়বে। তোমার চোখের প্রতিটা অশ্রুুকণা আমার নামে লিখিত থাকবে। এছাড়া অন্য কোন কারণে তোমার চোখে অশ্রু দেখাটা আমার সহ্য হবে না।”

নক্ষত্র তিতিক্ষার অশ্রুভেজা দু’চোখে আদর দিলো। তিতিক্ষা সরাসরি নক্ষত্রের চোখের দিকে তাকালো। প্রতিবারের মতো তিতিক্ষা হার মেনে ওর চোখ সরিয়ে নিলো। নক্ষত্রের এই চোখ দুটি মারাত্মক ভাবে মাদকাসক্ত। তিতিক্ষা নক্ষত্রের চোখের চাহনিতে এক ধরণের নেশাক্ত কিছু খুঁজে পায়। যে নেশার মাঝে তিতিক্ষা অনায়াসে অতলে ডুবে যাবে। তিতিক্ষার দ্রুত চোখ সরিয়ে নেওয়া দেখে নক্ষত্র মুচকি হাসলো। আজকেও তিতিক্ষা হেরে গেল। তবে মাঝে মাঝে হেরে যাওয়ার মাঝে রয়েছে অসীম সুখানুভূতি। তিতিক্ষাও শত’বার নক্ষত্রের চাহনির কাছে নিজেকে হার মানতে সর্বদা প্রস্তুত।

হঠাৎ করে নক্ষত্র তিতিক্ষার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। তিতিক্ষা অবাক হয়ে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। নক্ষত্র মুচকি হেসে তিতিক্ষার সামনে বুনো গাছের লতা আর বুনো ফুল দিয়ে তৈরীকৃত রিং এগিয়ে দিয়ে বললো,

–“মনোপ্যাথি! তুমি আমার সব অনুভূতির শীর্ষবিন্দু। তোমার প্রতি আমি মারাত্মক ভাবে আসক্ত। তুমি কি আমার মনের ব্যাধি সারানোর জন্য সর্বদা মনোপ্যাথি হয়ে আমার সাথে থাকবে? আমার শেষ নিঃশ্বাস অবধি তোমার সাথে পথচলার সুযোগ দিবে? আমার অনুভূতি দিয়ে তোমার অনুভূতিকে স্পর্শ করার অনুমতি দিবে? তোমার ঘামার্ত নাক, লজ্জারাঙ্গা মুখশ্রীটা দেখে আমি শত শত বার নেশাগ্রস্ত হতে চাই। তোমার চুলের মাদকাতায় নিজেকে হারাতে চাই। তোমার অর্ধভেজা মুখশ্রী, মায়াবী চোখ, নজরকাড়া চুলের খোঁপা, তোমার হাসিতে আমি পরিপূর্ণভাবে নিজেকে বিলীন করতে চাই। তুমি নামক মায়াজালে আমি পুরোপুরি ভাবে ডুবে যেতে চাই। ওহে! আমার মনের মন্দিরের মনোহরণী, তোমার অনুভূতির শীর্ষবিন্দুটা শুধুমাত্র আমার নামে খোদাই করতে চাই। পাবো কি সেই সুযোগ? হবে কি আমার সেই সৌভাগ্য?”

তিতিক্ষা ছলছল চোখে নক্ষত্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। নক্ষত্র মুচকি হেসে তিতিক্ষার আঙ্গুলে বুনো ফুলের রিং পড়িয়ে দিলো। মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, প্রকৃতিক দান লতার তৈরী বুনোর ফুলের রিং আর নক্ষত্রের বলা প্রতিটা শব্দ তিতিক্ষার মন কেড়েছে। নক্ষত্র অতি যত্ন সহকারে ভালবাসা মিশ্রিত করে ওর জন্য রিং টা বানিয়েছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রের হাত ধরে ওকে উঠালো। এই আকাশ, বাতাস, মেঘ, এক কথায় প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে নক্ষত্রের প্রতিটা আবদার তিতিক্ষা সাদরে গ্রহন করলো। তবে মুখে কিছু বলতে পারলো না। খুশিতে চোখ থেকে ঝরঝর করে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। নক্ষত্রের এত আদুরে কথা গুলো শুনে ওর শরীরে কম্পণ সৃষ্টি করেছে। কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু কথা গুলো যেন গলাতে এসে জমা হয়ে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।

তিতিক্ষা নক্ষত্রের কাছে গিয়ে নক্ষত্রের পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালো। দুই হাত নক্ষত্রের কাঁধে রেখে কম্পিত ঠোঁটে নক্ষত্রের কপালে আদর দিলো। নক্ষত্র ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলো। এই প্রথম তিতিক্ষা নক্ষত্রের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তিতিক্ষা এমন ভাবে যে ওর ভালবাসায় মুড়ানো অনুভূতি গুলো গ্রহন করবে, এটা নক্ষত্র নিজেও ভাবেনি। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে অনেকটা সাহস নিয়ে কম্পিত কন্ঠে বললো,

–“আমি পুরোপুরিটাই শুধু তোমার। নাহিয়ান তুমি শুধু আমার অর্ধাঙ্গ। তুমি আমার শরীরের একটা অংশ হয়ে আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছো। অনেক আগেই তোমার নামটা আমার অনুভূতির শীর্ষবিন্দুর নামে খোদাই করার কাজ সমাপ্ত হয়েছে। তোমাকে পেয়ে আমার অনুভূতিরা স্বার্থক।”

নক্ষত্র ওর মনোপ্যাথিকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো।

দু’জনে আর কিছুক্ষণ ওখানে থেকে ওরা রিসোর্টের দিকে পা বাড়ালো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের হাত ধরে হাঁটছে। ওদের মুখে লেগে আছে অজস্র সুখের চিহ্ন। দু’জনকে দেখলে মনে হবে ওরা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দম্পত্তি। দু’জনে গল্প করতে করতে রিসোর্টে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষা, সাফওয়ান আর জেসিকাকে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে গেল। চারজন মিলে একসাথেই বসলো। সাফওয়ান উঠার ভয়ে আগেই নক্ষত্রকে বললো,

–“ভাই তারাতাড়ি কিছু অর্ডার কর। আমর খুব ক্ষুধা লেগেছে। উহ্ বাবারে! আমি ক্ষুধাতে নড়তে পারছি না।”

নক্ষত্র সাফওয়ানের চালাকি বুঝতে পারলো। তাই কথা না বাড়িয়ে নিজেই উঠে অর্ডার দিয়ে আসলো। জেসিকা মুখ ভেংচি দিলো। সাফওয়ান ওর দিকে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিলো। জেসিকা লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকালো। তিতিক্ষা ওদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে মিটিমিটি হাসছে। ওরা খাওয়া-দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে পুরো রিসোর্টটা ঘুরে দেখলো। এরপর চারজনে মিলে আশে-পাশে ঘুরতে বের হলো।

তিতিক্ষা হাঁটতে হাঁটতে নক্ষত্রের আব্বু-আম্মুর সাথে কথা বলে নিলো। তখনই তনুকা তিতিক্ষাকে ফোন দিলো। তনুকা আর রায়হান থাইল্যান্ড যাচ্ছে। ওখানে ১ বছরের মতো যাচ্ছে। তনুকা তিতিক্ষাকে সাবধানে থাকলে বলো। তনুকা আর রায়হান নক্ষত্রেও সাথে কথা বললো। তিতিক্ষা তনুকার থেকে মামনির খোঁজ খবর নিলো। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা পাশাপাশি হাঁটছে, সাফওয়ান আর জেসিকা আছে ওদের সামনে।

নক্ষত্র তিতিক্ষার বুটিক শপটা নিয়ে কথা তুললো। নক্ষত্র জানে তিতিক্ষার ওর ছোট বুটিক শপটা আরো বড় করার পরিকল্পনা আছে। কিভাবে কি করবে? এসব নিয়েই ওরা কথা বলছিলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের বাসায় আসার পরেরদিন রাতেই নক্ষত্র তিতিক্ষার হাতে দশ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলো। এই দশ লাখ টাকা ছিলো ওদের দেনমোহরের। দশ লাখ টাকা ধার্য করারও কারণ আছে৷ তিতিক্ষার দিকে আঙ্গুল তুলে যাতে কেউ বলতে না পারে যে, একা বিয়ে করেছে বলে দেনমোহর কম হয়েছে। এজন্য কবুল বলার আগে নক্ষত্র দশ লাখ টাকা দেনমোহর বেঁধেছিলো। এতগুলো টাকা তিতিক্ষা নিতে চাচ্ছে না। এজন্য নক্ষত্র তিতিক্ষার বুটিক শপটা আরো বড় করার বুদ্ধি দিলো। নক্ষত্র ওকে সর্বদা সাপোর্ট করবে বলে আশ্বাস দিলো। নক্ষত্র এসব ভাল বুঝবে তাই তিতিক্ষা রাজি হলো।
যেখানে বুটিক শপটা ছিলো, ওখানেই করা হবে। নক্ষত্র যত দ্রুত সম্ভব কাজ করবে সিদ্ধান্ত নিলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে দাঁড়ালো। সে কিছু বলার আগেই নক্ষত্র শান্ত কন্ঠে বললো,

–“দেনমোহরের টাকা দিয়ে তোমাকে আমি কিনে নেইনি। এটা তো শুধু একটা রীতি। আমি আমার সবটুকু অনুভূতি দিয়ে মন থেকে তোমাকে আমার অর্ধাঙ্গিনী করেছি।”

তিতিক্ষা নক্ষত্রের এই কথা শুনে বললো,

–“সবই বুঝলাম। তবে দেনমোহর হিসেবে এত টাকা ধার্য করছিলে কেন?”

তিতিক্ষার কথা শুনে নক্ষত্র মুচকি হেসে বলেছিলো,

–“কাউকে কিছু দিতে চাইলে দুই হাত ভরেই দিতে হয়। পরবর্তীতে যেন সে স্বাবলম্বী হয়ে নিজে কিছু একটা করতে পারে। যদিও বা এটা আমার নিজস্ব মতামত। আমি চাই তুমি নিজে স্বাবলম্বী হও। আর বুটিক শপের মাধ্যমে অন্যকেও কিছু করার সুযোগ প্রদান করো।”

তিতিক্ষা আর কিছু বললো না। আইডিয়াটা মোটেও খারাপ না। আর বুটিক শপটা বড় হলে অনেক মেয়েরা এখানে নিযুক্ত হবে। ওই মেয়ে গুলোও কিছু করতে পারবে। নক্ষত্রের এমন মনোভাব দেখে তিতিক্ষা মন থেকে নক্ষত্রের জন্য দোয়া করলো। যাতে নক্ষত্রের চিন্তা ধারা সব সময় এমন পবিত্রই থাকে। তিতিক্ষার মনে নক্ষত্রের প্রতি দিন দিন সন্মান আর ভালবাসা দুটোই বেড়ে চলেছে; শুধু মাত্র নক্ষত্রের চিন্তা-ধারা আর ওর পার্সোনালিটির জন্য। চারজনে সারাদিনে আশে-পাশের জায়গাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখলো। পাহাড়িদের থেকে টুকটাক জিনিস কিনলো, খাওয়া-দাওয়া, মজা করে সন্ধ্যার দিকে ওরা রিসোর্টে ফিরলো।

ওইদিকে বিভা মার খেয়ে মুখ থুবকে মেঝেতে পড়ে আছে। হেলাল নামের একজন টিচারকে সে পছন্দ করে। সে টিচার অনেক করে বিভাকে বুঝিয়েছে। কিন্তু বিভা বুঝতে নারাজ। বরং বিভা হেলালকে থ্রেট দিয়ে বলেছে ওকে না গ্রহন করলে সে সুইসাইড করবে। আর সুইসাইড নোটে হেলালের নাম উল্লেখ করবে। একথা শুনে হেলাল আর রিস্ক নেয়নি। সে নিজে বিভাদের বাসায় এসে মামনিকে সবটা জানিয়ে গেছে। এসব শুনে মামনি বিভাকে আচ্ছা মতো মেরেছে। মার খেয়েই সে আধমরা হয়ে রুমের এক কোণে পড়ে আছে।

তিতিক্ষার আব্বু-আম্মু এখনো তিতিক্ষার সাথে কথা বলে না৷ তবুও তিতিক্ষা আননোন নাম্বার দিয়ে দু’জনকেই ফোন দেয়। শুধুমাত্র উনাদের কন্ঠ শোনার জন্য৷ উনারাও বুঝতে পারে এটা তিতিক্ষা। তাও উনারা ধরা দেয় না। হ্যালো হ্যালো করে ফোনটা কেটে দেয়। এমন ভাব করে যেন উনারা কিছু বুঝতেই পারে না। মেয়ের কাছে কিছুতেই উনারা ধরা দিবে না। একমাত্র মেয়েকে ছাড়া থাকতে উনাদেরও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু উনারা সেটা কিছুতেই স্বীকার করবে না৷ ভাঙলে ভাঙবে, তবুও তাঁরা মচকাবে না।

জীবন বহমান স্রোতের মতো। একদিন হয়তো সবার মনের অন্ধকার কেটে গিয়ে আলোর দেখা পাবে। নক্ষত্রের আম্মু এখনও অদ্রির উপরে রেগে আছে। কোন এক মুহূর্তে উনিও হয়তো অদ্রিকে কাছে টেনে নিবে। মামনি, তিতিক্ষার আব্বু-আম্মুও একদিন তিতিক্ষাকে মেনে নিব। ভাইবোনদের সম্পর্ক গুলো আগের মত খুনশুটিময় হয়ে যাবে। মামনি অদ্রির বাবুকে দেখলে হয়তো উনার অভিমানের পাহাড় গলবে। সাফওয়ান, রুহান, আফান, নক্ষত্র ওদের বন্ধত্ব আরো গাঢ় হবে। কোন একদিন হয়তো দুই পরিবারের সম্পর্ক কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হবে। আল্লাহ ভরসা! একদিন সব মনমালিন্যের অবসাদ ঘটে সবটা আগের মতো হবে। হোক বা না হোক, আশা রাখতে সমস্যা কি!

নক্ষত্র শাওয়ার নিয়ে বের হলো। তিতিক্ষার ড্রেস ওয়াশরুমে রেখে তিতিক্ষাকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললো। তিতিক্ষা বেড থেকে উঠে চুলের কাটা খুলে ওয়াশরুমে চলে গেল। শাওয়ার শেষে সে পড়লো আরেক বিপদে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে অন্য ধরনের ড্রেস দিয়ে গেছে। পাহাড়ি মেয়েদেরা যে থামি পড়ে সেই থামি। ব্ল্যাক এ্যান্ড পিংক কালারের সংমিশ্রণে তৈরী। থামিটা দেখতে খুব সুন্দর। ৩০ মিনিট পেরিয়ে ৪০ মিনিট হয়ে গেছে। তবুও তিতিক্ষার বের হওয়ায় নাম নাই। নক্ষত্রের ডাকাডাকিতে তিতিক্ষা থামি পড়েই বের হলো। নক্ষত্র বেতের সোফাতে বসে তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। তিতিক্ষা হাঁটতেও পারছে না।

ওর মনে হচ্ছে পায়ে সাথে পা বেধে দুম করে পড়বে। আস্তে আস্তে হেঁটে ভেজা চুল ভাল করে মুছে, কাপড় গুলো বেলকনিতে মেলে দিলো। তিতিক্ষা আড়চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আর না দাঁড়িয়ে
ব্ল্যাঙ্কেটের ভেতর ঢুকে চোখ মুখ ডেকে নিলো।

২০ মিনিট পর নক্ষত্র এসে তিতিক্ষাকে উঠে বসালো। তিতিক্ষা মাথা নিচু করে আছে। লজ্জায় লালবর্ণ ধারণ করেছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার খুব কাছে গিয়ে মিটিমিটি হাসতে হাসতে আদুরে কন্ঠে বললো,

–“থামিটা দেখে মনে হলো এটা পড়লে তোমাকে ভাল লাগবে। কিন্তু এখন বুঝছি, শুধু ভাল না অসম্ভব ভালো লাগছে।”

তিতিক্ষা চুপ করে আছে৷ নক্ষত্র দুষ্ট হেসে তিতিক্ষার কানের কাছে স্লো ভয়েজে বললো,

–“টমেটো বউ তুমি কি লজ্জা পাচ্ছ? এমন ভাবে লজ্জা পেও না। তা নাহলে আমি তোমাকে টমেটো ভেবে টুপ করে খেয়ে নিতে পারি।”

তিতিক্ষাকে লজ্জারা এসে যেন পুরোপুরি ভাবে গ্রাস করেছে। ওর মনে হচ্ছে মাটিটা গর্ত করে ঢুকে যেতে। ইস! এই ছেলেটা আবারও উঠে পড়ে লেগেছে ওকে লজ্জা দেওয়ার জন্য। তিতিক্ষার বুকের ভেতর ওর হৃদস্পন্দনটা দ্রুত গতিতে দৌড়াচ্ছে। গাল দুটো গরম হয়ে মনে হচ্ছে কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। লজ্জায় নতজানু হয়ে নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার দুই গালে হাত রেখে মাদকাসক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আদুরে কন্ঠে বললো,

–“লাজুক লতা আজকে আমরা দু’জনে নিষিদ্ধ অনুভূতিতে ডুবতে চাই।”

তিতিক্ষা চুপ করে করে আছে। ওর পুরো শরীর কাঁপছে। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। নক্ষত্রের ভয়েজে তিতিক্ষার সবটা গুলিয়ে যাচ্ছে। নাক, কপাল, থুতনিতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে৷ নক্ষত্র আবারও বললো,

–“ওহে মায়াবতী তোমাতে বিলীন করতে চাই। আজকে পরিপূর্ণ ভাবে তোমার হতে চাই।”

তিতিক্ষা বসে থাকার আর শক্তি পাচ্ছে না। নক্ষত্রের বলা এক একটা উক্তি তিতিক্ষার হৃদস্পন্দনে সর্বনাশা কম্পনটাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিতিক্ষাকে গভীরভাবে স্পর্শ না করেও, শুধু কথা দিয়ে ঘায়েল করার টেকনিকটা নক্ষত্র খুব ভাল ভাবে আয়ত্ত করে নিয়েছে। আজকে নক্ষত্রের বলা এক এক উক্তি তিতিক্ষার বাক শক্তিকে গ্রোগ্রাসে গিলে খাচ্ছে। এজন্য হয়তো তিতিক্ষা কিছু বলার জন্য কোন বাক্য খুঁজে পাচ্ছেনা৷ নক্ষত্র আবারও বলে উঠলো,

–“মনোপ্যাথি আমি পুরোটাই তোমার হতে চাই। শুধু মাত্র আমাদের অনুভূতির শীর্ষবিন্দুর প্রত্যাশা পূরণের আশায়।

তিতিক্ষা আর পারছে না নক্ষত্রের এমন আদুরে কথার অত্যাচার সহ্য করতে। সে মুখ ফুটে না পারছে নক্ষত্রকে আবদারে সামিল হতে, আর না পারছে ওকে দূরে সরাতে। এত চেষ্টা করেও তিতিক্ষা কোন পন্থা অবলম্বন করতে সক্ষম হলো না। নক্ষত্র ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে তিতিক্ষার মুখ পানে চেয়ে আছে৷ তিতিক্ষা একবার চোখ তুলে তাকিয়ে দুই হাত দিয়ে ওর মুখ ঢেকে নিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার কান্ড দেখে মুচকি হেসে তিতিক্ষাকে ওর বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো। নক্ষত্রও যেন ওয়াদা করেছে, সে আজকে তিতিক্ষাকে লজ্জার চুড়ান্ত সীমানায় গিয়ে দাঁড় করিয়েই ছাড়বে। এজন্য সে আবারও দুষ্টু হেসে তিতিক্ষার কানে কানে বললো,

–“ইস! এত লজ্জা পেলে হবে? তোমার বরের পেট টানটান আছে কি না সেটা তো তোমাকে পরখ করতে নিতে হবে। তুমি চাইলে এখনই চেক করে নিতে পারো। আমি কিন্তু একদম প্রস্তুত।”

তিতিক্ষা দুই হাতে মুখ ঢেকে মৃদুসুরে কম্পিত কণ্ঠে বললো,

–“আপনি দুষ্টু! মারাত্মক দুষ্ট! যে দুষ্টুর কোন সীমা নেই। পঁচা ছেলে একটা।”

একথা বলে তিতিক্ষা নক্ষত্রের টিশার্ট খামছে ধরে নক্ষত্রের বুকেই মুখে লুকালো। নক্ষত্র ওর মনোপ্যাথির কথা শুনে হাসতে হাসতে ওকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলো। অবশেষে জয় হলো ওদের পবিত্র বন্ধনের। আজকে পূর্ণতা পেলে ওদের সব অনুভূতির। আর এখানে সমাপ্ত হলো ওদের একে অপরের অনুভূতির শীর্ষবিন্দু হয়ে ওঠার গল্প। আর সাথে নতুন করে উদ্ভব হলো,

–“ভাগ্য + পবিত্রভাবে চাওয়া + প্রিয়মানুষটা + বিশ্বাস
=অনুভূতির শীর্ষবিন্দু।”🍁🍁

#সমাপ্ত…!!
#আলোমণি_______!!

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here