#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_11
নক্ষত্র তিতিক্ষার বেডে বালিশে হেলান দিয়ে বসে বললো,
–“বউয়ের এটো করা খাবার খেলে নাকি সম্পর্কটা সুমিষ্ট হয়। আমি ভেবেছি সেই পথটাই এখন থেকে অবলম্বন করবো।” (মুচকি হেসে )
নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষা মাথা নিচু করে নিলো। ইস! আবারও এই ছেলেটা ওকে লজ্জাতে ফেললো। নক্ষত্র বেড থেকে উঠে ওর কফির মগটা তিতিক্ষার হাতে ধরিয়ে দিলো। আর তিতিক্ষার মগটা নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল। তিতিক্ষা চুপ করে বসে রইলো। নক্ষত্রের এমন কাজে তিতিক্ষা রাগ করেনি। বরং মনে মনে খুশি হয়েছে। একটু পর নক্ষত্রের ডাকে তিতিক্ষা ধীর পায়ে বেলকনিতে গেলো। বেলকনিতে পেতে রাখা বেতের সোফাটাতে দুজনেই পাশাপাশি বসলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের কফির মগে ঠোঁট ছোয়ালো। নক্ষত্র মুচকি হেসে দেখেও না দেখার ভান করে থাকলো। তিতিক্ষা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো একটাও নক্ষত্র নেই। চাঁদটাও মেঘের আড়ালে মুখ লুকিয়েছে । তখন নক্ষত্র তিতিক্ষাকে বলে উঠলো,
–“ডিনারটা সেরে তারাতারি ঘুমিয়ে যাবে। কালকে উঠে আমাদের আরেকটা জায়গাতে যেতে হবে।”
তিতিক্ষা কফির মগে চুমুক দিলো। ওর মাথা ব্যাথা করছিলো। কফিটা খেয়ে আপাতত ভালোই লাগছে।
কালকেও ঘুরতে যাবে শুনে তিতিক্ষার মুখে খুশির ঝলক দেখা দিলো। নক্ষত্র ঘাড় ঘুরিয়ে তিতিক্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে কফি খাওয়াতে মন দিলো। তিতিক্ষা কফির মগটা পাশে রেখে বললো,
–“কালকে আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
নক্ষত্র মুচকি হেসে ছোট্ট করে বললো,
–“বিছানাকান্দি।”
বেলকনিতে শীত শীত লাগছে। এজন্য নক্ষত্র তিতিক্ষাকে আর বসতে দিলো না। দুজনেই ওদের বাসায় কথা বলে নিলো। এরপর রাতের খাবার খেয়ে দ্রুত শুয়ে পড়লো। তিতিক্ষা যতক্ষণ না ঘুমিয়ে নক্ষত্র তিতিক্ষার রুমের সোফাতে শুয়ে ছিলো। বেশ কিছুক্ষণ পর তিতিক্ষা ঘুমিয়ে গেলে এসির পাওয়া কমিয়ে, জানালা আটকানো কি চেক করে, নক্ষত্র তিতিক্ষার গায়ে ব্ল্যাঙ্কেট টেনে দিলো। চলে যাওয়ার সময় নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
–” মনের বিরুদ্ধেই এখন আমাকে চলে যেতে হচ্ছে। কারন যে কোন মুহূর্তে আমার মাথাতেও কু বুদ্ধির উদয় হতে পারে। তোমার পবিত্র শরীরে আমার অপবিত্র স্পর্শের কালিমা কিছুতেই লাগাতে দিতে পারবো না।”
নক্ষত্র আর না দাঁড়িয়ে তিতিক্ষার রুম লক করে ওর রুমে চলে গেল। বন্ধ রুমে একটা অবিবাহিত ছেলে আর মেয়ের সাথে অদৃশ্য ভাবে থাকে শয়তান। আর শয়তানের কু বুদ্ধিতেই এখন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটবে না। এটা বলাও যায় না, আর এমন রিস্ক নক্ষত্র নিতেও চাইনা। তবে সব সময় যে পরিস্থিতি নাগালে মধ্যে থাকে, এমন ভাবাটাও বোকামি। আর সেটা স্ট্রং পারসোনালিটির ছেলেদের ক্ষেতেও।
পরেরদিন সকালে____!!
একেবারে রেডি হয়ে ওরা রিসোর্ট থেকে বের হলো।
বাইরে থেকে ব্রেকফাস্টও সেরে নিলো। নক্ষত্র একটা সিএনজি নিলো, পাশাপাশি দুজনেই বসে আছে। নক্ষত্র ফোনে কথা বলছে। একটু পর পর ওর ফোনের রিংটোন বেজে উঠছে। তিতিক্ষা রাস্তার পাশে গাছগুলো দেখছে। সিএনজি ছুটে চলছে এয়ারপোর্টের সিএনজি স্টেশনের দিকে। ওদের বিছনাকান্দি যেতে হলে সর্বপ্রথম সিলেট নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে।
এই সিএনজিটা সরাসরি বিছানাকান্দি অবধি যাবেনা। এজন্য বিমানবন্দর রোডের দিকে সিএনজি স্টেশন আছে। ওই সিনএনজি গুলো সরাসরি হাদারপার নামক জায়গা পর্যন্ত যাবে। হাদারপার একটি বাজারের নাম। তবে হাদারপার বাজারটি খুব একটা বড় না আবার ছোটও না। মোটামুটি সবকিছুই পাওয়া যায়। খাবার, পানি, কাপড় সবই কিনতে পাওয়া যায়।
নক্ষত্র হাদারপার বাজারে নেমে তিতিক্ষাকে নিয়ে বাজারে ঢুকলো। তিতিক্ষার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে স্থানটা পর্যবেক্ষণ করছে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে লেডিস শপে ঢুকে তিতিক্ষাকে ড্রেস নিতে বললো। তিতিক্ষার ফট করে বলে উঠলো,
–“ড্রেস লাগবেনা। আমার অনেকগুলো ড্রেস আছে।”
নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকালো। তিতিক্ষা ড্রেস নিবে না বলে চলে যাচ্ছিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে আস্তে করে বললো,
–“বিছানাকান্দিতে গিয়ে পানিতে নামবে। পানিতে নামলে তো ড্রেস ভিজে যাবে। ভেজা ড্রেস নিয়েই কি সারাদিন ঘুরবে?”
নক্ষত্রের কথা শুনে তিতিক্ষা জিভে কামড় দিল। তিতিক্ষা এবার বুঝতে পারলো, নক্ষত্রের ওকে ড্রেস নিতে বলার কারন। তিতিক্ষা বেশ কয়েকটা ড্রেস নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল। কিন্তু কোনটা নিবে বুঝতে পারছেনা । তিতিক্ষার মতিগতি বুঝতে পেরে নক্ষত্র এবার নিজেই ড্রেস চুজ করতে লাগলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার জন্য ব্ল্যাক এ্যান্ড ব্লু কালারের লেডিস টি-শার্ট নিল। সাথে দুইটা হোয়াইট এ্যান্ড পিঙ্ক কালারের স্কার্ট , দুইটা ওড়না, আর লেগিংস নিল। তিতিক্ষা পাশে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে নক্ষত্রের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। কারণ নক্ষত্র কালারের সাথে কালার মিলিয়ে ড্রেস গুলো কিনেছে। নক্ষত্র বিল মিটিয়ে তিতিক্ষাকে বলল,
–” এই ড্রেসটা পড়ে পানিতে নামবে। আর পানি থেকে উঠার পরে চেঞ্জ করে এর মধ্যে থেকে একটা পড়বে।”
দুজনে মিলে আবার একটা অটোতে উঠলো। আর
এগিয়ে গেল কাঙ্ক্ষিত সেই জায়গাটির উদ্দেশ্যে। একটু পরে ওরা পৌঁছালো সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তম ইউনিয়নে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত একটি গ্রামের নাম বিছানাকান্দি। বাগান এবং পাহাড়ের নজরকাড়া সৌন্দর্যের মাঝে অবস্থিত প্রকৃতির এই অপরূপ লীলাভূমির উভয় প্রান্ত থেকে খাসি পাহাড় এসে যুক্ত হয়েছে। তিতিক্ষা বিস্ময় নিয়ে চারদিকে তাকাচ্ছে। আল্লাহর সৃষ্টি যে এতোটা সুন্দর হতে পারে । সেটা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করা যাবেনা। নক্ষত্রের তিতিক্ষার রিয়াকশন দেখে মুচকি হাসলো। তিতিক্ষা এখনো চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। হালকা হালকা কুয়াশার মাঝে পাহাড়ের এক কোণে সূর্যি মামা উঁকি দিচ্ছে। মৃদু বাতাস শরীরে লাগলে শরীর শিহরিত হচ্ছে। মিষ্টি রোদের দুষ্টু আলোর ছোটাছুটিতে পাহাড়ের সবুজ গাছ গুলো যেন আরো আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে।
তিতিক্ষা বিষ্ময়কর চাহনী নিয়ে মনোরম দৃশ্যটাতে চোখ বুলাচ্ছে। নক্ষত্র দুই পা পিছিয়ে ওর ফোনটা বের করে তিতিক্ষার বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নিল। তিতিক্ষার সেদিকে খেয়াল নেই। সে মনোরম সৌন্দর্য দেখে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিতিক্ষা একপা একপা করে সামনের দিকে এগুলো। তিতিক্ষার পেছন পেছন নক্ষত্রও আসছে। শীতের হালকা কুয়াশাতেও যেন, আকাশ, গাছপালা, স্বচ্ছ পানি, পাথর, ঝর্না এসবের সৌন্দর্য যেন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও বর্ষা মৌসুমে পাহাড়গুলো একটু বেশিই সবুজ, পাহাড়ের গায়ে ঝরণাগুলোও প্রাণবন্ত। তবে এসব ঝরণার কাছে গিয়ে পানি ছোঁয়ার কোনও সুযোগ নেই। শুধুই দুই চোখ ভরে উপভোগ করা। এর কারণ সবগুলোই ভারতে। তিতিক্ষা শুনেছিলো বিছানাকান্দি এই স্থানটি অপূর্ব সৌন্দর্যের সমাহার। কিন্তু এতটা যেন সুন্দর হতে পারে এটা তিতিক্ষা কল্পনাও করতে পারেনি। নক্ষত্র নিজেও প্রকৃতিপ্রেমী। মাঝে মাঝে ওর আসা হয় এদিকে। তবে আজকে নক্ষত্রের নিজেকে একটু স্বার্থক মনে হচ্ছে । কারণ তিতিক্ষাকে এমন সৌন্দর্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পেরেছে। তিতিক্ষা এমন মনোরম সৌন্দর্য দেখে খুব খুব খুশি হয়েছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার চোখের চাহনি আর ঠোঁটে হাসি দেখে এটা অনায়াসেই বুঝে গেছে। আর মোট কথা হলো, তিতিক্ষার খুশির থেকে নক্ষত্রের আর কিছু পাওয়ার থাকতেই পারে না।
তিতিক্ষা পাহাড় দেখতে দেখতে এক পা এক পা করে সামনের দিকে এগোচ্ছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার
হাত ধরে সাবধনতার সুরে বলল,
–” সাবধানে পা ফেলো পায়ের নিচে অনেক পাথর।”
তিতিক্ষা নক্ষত্রের কথা শুনে ছল ছল চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। তিতিক্ষার চোখের কোণে অশ্রুকণা দেখে নক্ষত্র অবাক হয়ে তিতিক্ষার দিকে তাকালো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের সামনে এসে মাথা নিচু করে বলল,
–“আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।”
তিতিক্ষার এমন কথা শুনে নক্ষত্র অবাক হল। এই মুহূর্তে তিতিক্ষার কেন কাঁদতে ইচ্ছে করছে? এটাই নক্ষত্রের ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। তিতিক্ষার কথা শুনে নক্ষত্র ধীর কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
–“কেন? কি হয়েছে, কোন সমস্যা? আমাকে বল?”
নক্ষত্র জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তিতিক্ষার দিকে তাকালো। তিতিক্ষা কম্পিত ঠোঁটে নক্ষত্র কে বলল,
–“এমন মনোরম সৌন্দর্য আমি নিজের চোখে কখনো দেখিনি। আজকে স্বশরীরে দাঁড়িয়ে এত কাছে থেকে দেখতে পেয়ে আমার খুব কান্না পাচ্ছে।”
নক্ষত্র এবার তিতিক্ষার ব্যাপারটা বুঝতে পারল। মানুষ যখন অতিরিক্ত খুশি হয় তখন তার সাথে এমন টাই হয়ে থাকে। এ কান্না কান্নার অনুভূতিটা হয় সেরেব্রাম থেকে। সেরেব্রাম হলো মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ। এজন্য সেরেব্রামকে বলা হয় ‘গুরুমস্তিষ্ক’। সেরেব্রামেই থাকে আমাদের সব ধারণা, কল্পনা, চিন্তা-ভাবনা, মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্ত। অন্তঃক্ষরা তন্ত্র আমাদের চোখে হরমোন পাঠায়। এটিই জল হয়ে চোখের ভেতরে থাকে। যখনই আমরা কান্না, বেদনা, আঘাত বা শোকে থাকি তখন এ জল কান্না হয়ে চোখ দিয়ে পড়তে শুরু করে। নক্ষত্র মুচকি হেসে তিতিক্ষার দুই গালে হাত রেখে আদুরে সুরে বললো,
–“আপনার চোখের অশ্রুুকণা আমার হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টির অন্যতম একটা কারন।”
নক্ষত্রের কথাটা বলতে বলতে তিতিক্ষার চোখের কোণা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। নক্ষত্র মুচকি হেসে ওর বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে তিতিক্ষার চোখের পানি মুছে দিলো। নক্ষত্র আলতো করে তিতিক্ষার হাত ধরে সামনের দিকে এগোলো। পাহাড়ের কাছেই দাঁড়িয়ে মেঘে ঢাকা মেঘালয় পর্বতমালা। আর সে পাহাড় থেকে প্রবাহিত সু-শীতল ঝর্নাধারার তীব্র প্রবাহ। এখানে পাথরে ভরা পুরো এলাকা। পানিতে বিছানো রয়েছে মোটা-শক্ত, ছোট-বড় হাজার কোটি পাথর। সে সব পাথরের কোনোটাতে মোটা ঘাসের আস্তরণ। আবার কোনোটা বা ধবধবে সাদা। এ সব পাথর মেঘালয় পর্বতমালার ওপর থেকে প্রবাহিত ঝর্নার ধারায় চলে এসেছে, পিয়াইন নদীর বিছনাকান্দির অংশে।
দুজনেই মুগ্ধ চিত্তে চেয়ে চেয়ে দেখছে বিছনাকান্দির চারপাশ। তিতিক্ষা যতই দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে। ওর ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করবে পাথর ভরা পিয়াইন নদীর সু-শীতল সেই পানিতে। তিতিক্ষা সেই পানিতে পা ডুবালো সাথে শরীর এলিয়ে দিয়েই পাথর জলের বিছানায়।
রোদের তাপে পানি খুব বেশি ঠান্ডা নেই। রোদের কিরণের উত্তাপে কুয়াশাও অনেক আগে কেটে গেছে। পিয়াইনে চলতে চলতে দূরে দেখা যাচ্ছে আকাশে হেলানো উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি। চারপাশের চোখ ধাঁধানো সব দৃশ্য দেখতে দেখতে এক সময় এই পাহাড়ের কোলে এসে চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ পাথর কেয়ারি। তবে বর্ষায় পাথর কেয়ারি পানিতে ডুবু ডুবু থাকে। এখান থেকে একটু সামনেই সীমান্ত ঘেঁষা পাথর-জলের বিছনাকান্দি। বিছনাকান্দিতে পাথর-জলের বিছানা মুগ্ধ হওয়ার মতো। এখানে পাথরের বিছানার উপরে পাশের পাহাড় থেকে অনবরত স্বচ্ছ পানির ধারা বহমান। তবে বর্ষায় পানির প্রবাহ বেড়ে যায় কয়েকগুন। এ সময়ে মূল ধারায় স্রোত অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তবে বিছনাকান্দির বিছানা বাংলাদেশ আর ভারত মিলিয়ে। এই তথ্যটাও সবার জেনে রাখা প্রযোজ্য।
নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে পানিতে নামলো। তিতিক্ষা খুব মজা করেছে। স্বচ্ছ পানিতে স্পষ্টভাবে পানির নিচের সবটা দেখা যাচ্ছে। নক্ষত্র ওর প্যান্ট জড়িয়ে শুধু পা ভিজিয়ে একটা পাথরের উপরে বসে তিতিক্ষার হাসামাখা মুখটা দেখছিলো। কিছুক্ষণ পর ওরা পানি থেকে উঠলো। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে একটা স্থানে গিয়ে ড্রেস বদলে নেওয়া সুযোগ করে দিয়েছে। তিতিক্ষা থ্রি কোয়াটার ব্লু টি-শার্টের সাথে সাদা স্কার্ট আর গলায় স্মার্টলিভাবে সাদা ওড়না পেচিয়ে নিলো। ওর ভেজা ওড়না দিয়ে প্রথমে চুল মুছে নিলো পরে নক্ষত্রের রুমাল দিয়ে মুছলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার পাশে দাঁড়িয়ে ওর চুলের পানি ঝরানো দেখনো। তবে একটু দুরে দাঁড়িয়ে ওদের দুইজনকে মাঝ বয়সী একটা মহিলা অনেকক্ষণ ধরেই লক্ষ্য করছিলো। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা যখন চলে আসবো তখন ওই মহিলাটি এসে তিতিক্ষাকে
বললো,
–“তোমরা কি হাজবেন্ড-ওয়াইফ? আই মিন তোমরা কি লিগ্যাল হাজবেন্ড ওয়াইফ?”
তিতিক্ষা মহিলার কথাটা শুনে মাথা নাড়িয়ে বললো,
–” না! আমাদের শুধু এনগেজমেন্ট হয়েছে।”
মহিলাটি আর কিছু বললো না। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা ওখানে আর সময় অপচয় করলো না। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে আশে পাশের আরো বেশ কয়েকটা স্থান ঘুরে দেখালো। এরপর হাদারপাড় বাজারে গিয়ে দুজনেই খেয়ে নিলো। খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে ওরা রাস্তায় এসে ওরা দাঁড়ালো একটা সিএনজির জন্য। কিন্তু নক্ষত্র আশেপাশে একটাও সিনএনজি দেখতে পেলো না। এজন্য তিতিক্ষাকে দাঁড়াতে বলে নক্ষত্র কয়েকপা সামনে এগোলো। হঠাৎ গাড়ির শব্দ পেয়ে সিএনজি আসছে ভেবে নক্ষত্র বামে তাকিয়ে ডানে তাকালো। আর তখনই দেখতে পেলো একটা ব্রেকফেল গাড়ি তিতিক্ষার দিকে দ্রুত বেগে ছুটে আসছে। তিতিক্ষা গাড়িটাকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে উপস্থিত বুদ্ধি হারিয়ে চোখ মুখ খিঁচে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মারাত্মক কিছু কিছুর সম্মুখীন হতে হবে। এটা ভেবে
নক্ষত্রের মস্তিষ্কও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ওর নিঃশ্বাসটাও যেন কয়েক সেকেন্ড জন্য থমকে গেছে।
হঠাৎ স্বজোরে টান খেয়ে তিতিক্ষা কারো বুকের হুমড়ি খেয়ে পড়লো। তিতিক্ষা মুখ তুলে নক্ষত্রকে দেখে নক্ষত্রের বুকে মুখ লুকালো। তিতিক্ষার শরীর থরথর করে কাঁপছে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে ওর বাহুডোরে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো। যেন এখন তিতিক্ষাকে ছেড়ে দিলেই সে হারিয়ে যাবে। নক্ষত্র চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলো। ওর হৃদপিন্ডটা দ্রুত গতিতে বিট করছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রের বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। নক্ষত্র মুখে কিছু না বললেও, নক্ষত্রের বুকে মাথা রেখে তিতিক্ষা নক্ষত্রের বুকের হৃদস্পন্দের কম্পনের গতিবেগ অতি সহজেই অনুভব করতে পারছে।
নক্ষত্র নিজেকে একটু স্বাভাবিক করার জন্য শুকনো ঢোক গিলে নিলো। কপাল বেয়ে ঘাম বেয়ে পড়ছে। কয়েকজন পথচারী ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। আর একটু হলেই কত্তবড় একটা এক্সিডেন্ট ঘটতে যাচ্ছিল। নক্ষত্রের এটা ভাবতেই বুক কেঁপে উঠছে। তিতিক্ষা এখনো মুখ লুকিয়ে আছে নক্ষত্রের বুকে। নক্ষত্র তিতিক্ষার দুই গালে আলতো করে হাত রাখলো। তিতিক্ষার অশ্রু ভেজা চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্র ছলছল চোখে ধরা গলায় তিতিক্ষাকে বললো,
–“তুমি নামক আমার মনোপ্যাথির কিছু হলে আমার মৃত্যু অনিবার্য।”
To be continue…..!!