#অদৃষ্টচর
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_01
–“শ্রেয়ান! শ্রেয়ান! আব্বু কই তুমি?”
শ্রেয়ান কেবল বাইরে থেকে এসে ফ্রেশ হওয়ার জন্য টাওয়াল হাতে নিয়ে নিয়েছে। তখনই শ্রেয়ানের আম্মু হন্তদন্ত হয়ে আতংকিত গলায় ডাকতে ডাকতে
শ্রেয়ানের রুমে প্রবেশ করলো। আম্মুকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে শ্রেয়ান কয়েক ধাপ এগিয়ে ওর আম্মুকে ধরে সোফাতে বসালো৷ উনি থরথর করে কাঁপছে। উনার চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। শ্রেয়ান হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাসটা নিয়ে ওর আম্মুকে পানি খাওয়ালো। উনি শ্রেয়ানের হাত দুটো শক্ত করে ধরে আছে। উনার চোখ বলে দিচ্ছে উনি ভয়ংকর কিছু দেখে এসেছে। শ্রেয়ান ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বললো,
–“কি হয়েছে আম্মু? তুমি এভাবে ভয় পাচ্ছো কেন? বলো আমাকে।”
শ্রেয়ানের আম্মু ঢোক গিলে ভয়ার্ত গলায় বললো,
–“সাদ্দাম ভাইয়ের ছেলে সবুজ মারা গেছে। কে যেন ধারালো কিছু দিয়ে ওর গলা কেটে গিয়েছে, নাক থেতলে দিয়েছে, হাত দুটোতেও খুব ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করেছে। ডান চোখটা তুলে নিয়েছে আর বাম চোখে সুচালো কাটা ঢুকিয়ে দিয়েছে। মাথার একপাশে চুল টেনে তুলে নিয়েছে। পুরো শরীর রক্তে মাখামাখি। উফফ বাবা! কি ভয়ানক মৃত্যু! কে এমনটা করলো? এত নিষ্ঠুর ভাবে কে ওকে মারতে পারলো। কোনো মানুষের হৃদয় এতটা নির্দয় কিভাবে হতে পারে?”
–“আচ্ছা তুমি শান্ত হও। না হলে তোমার প্রেশার হাই হয়ে যাবে।”
শ্রেয়ান শুনেছে, কেউ একজন সবুজকে খুব ভয়ংকর ভাবে মেরেছে। বাসায় আসার সময় ওর ড্রাইভার ওকে বলেছে। শ্রেয়ান শাহরিয়ার একজন নামকরা আর.জে। আজকে দুপুরে ওর প্রোগ্রাম ছিলো। প্রোগ্রাম শেষ করে ফিরতে ফিরতে মাগরিবের আজান পড়ে গেছে। তবে সবুজের এমন ভয়ংকর মৃত্যুর কথা শুনে শ্রেয়ানের একটুও খারাপ লাগছে না। কারণ ছেলেটা মোটেও ভালো ছিলো না।
শ্রেয়ান পরশুদিন নিজের চোখে দেখেছে, সবুজ দুপুরের দিকে ছাদে গিয়ে মেয়েদের অর্ন্তবাস হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে গন্ধ শুকছিল। সে এত বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে গন্ধ শুকছে, যেন এটাই হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম সুগন্ধি মিশ্রিত প্রোর্ডাক্ট। এই কাজের মাধ্যমেই সে যেন একটা নারীর নগ্ন শরীরে নিজেকে ডুবাতে সক্ষম হচ্ছে। তখন তার ঠোঁটে ছিলো বিদঘুটে আর জঘন্যতম হাসির রেখা। ছাদে বেশ কয়েকটা রশিতে অনেকে কাপড় মেলে দেওয়া ছিলো। তার মধ্যে সবুজ মেয়েদের অর্ন্তবাস গুলোই হাতে নিচ্ছে। আর একই কাজ করে সেগুলো জায়গা মতো রেখে দিচ্ছে।
শ্রেয়ান ছাদে এসেছিলো ওর টি-শার্ট টা নিতে। ওর আম্মু তখন ঘুমিয়ে ছিলো। এক ঘন্টা পর প্রোগ্রাম ছিলো এজন্য ওকে দ্রুত বের হতে হতো। এজন্য সে নিজে ছাদে এসেছিলো ওর টি-শার্ট নিতে। শ্রেয়ান ছাদের দরজাতে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে সবুজের এই কার্যকলাপ দেখে। তখনও সবুজের হাতে একটা অর্ন্তবাস ছিলো। অনেকের বেলকনি ব্যাক সাইডে হওয়ার জন্য তাদের বেলকণিতে রোদ আসে না। অথবা বেশি কাপড় ধুয়ে দেওয়ার ফলে কাপড় শুকানোর জায়গা থাকে না। তাই অনেকেই নিজেদের কাপড় ছাদের এনে রোদে শুকাতে দেয়। মধ্য দুপুরে ছাদে প্রখর রোদ থাকে। বিধায় তেমনভাবে কেউ ছাদেও আসে না। আর এই সময়টাই সবুজ ওর নোংরা মনের ফাইদা উঠায়।
সেদিনই শ্রেয়ান বুঝে ছিলো; সবুজ বিকৃত আর নোংরা মস্তিষ্কের একটা ছেলে। শ্রেয়ানকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সবুজও ভয় পেয়ে যায়। শ্রেয়ান ওর টি-র্শাট নিয়ে নিচে যাওয়ার আগে কড়া ভাবে সবুজকে লাস্ট ওয়ানিং দিয়েছিলো। সবুজও ভয়ে পেয়ে কথা দিয়েছিলো, সে এমন জঘন্য কাজ আর কোনদিনও সে করবে না।
সবুজরা স্বপরিবারে শ্রেয়ানদের বিল্ডিংয়ের নবম তলাতে থাকে। আজকে বিকেলবেলা কেউ ছাদে কাপড় আনতে গিয়ে সবুজকে এভাবে দেখে চিৎকার করে সবাইকে ডাকে। আশেপাশে মানুষের হইচই শুনে শ্রেয়ানের আম্মুও ছাদে গিয়েছিলো। ওখানে পড়ে থাকা সবুজের বিভৎস লাশ দেখেই উনি ভয় পেয়েছে। আর আতংকিতে শ্রেয়ানের কাছে ছুটে এসেছে। এখন এই ১০ তলা বিল্ডিংয়ের পুরো এ্যাপার্টমেন্টা থমথমে হয়ে গেছে। শ্রেয়ানরা থাকে ৫ তলাতে। এই ঘটনাতে সবার মাঝে অজানা একটা ভয় কাজ করছে। শ্রেয়ান ওর আম্মুর হাতটা ধরে বললো,
–“আম্মু! মানুষের পাপের ঘরা পূর্ণ হলে স্বয়ং মৃত্যু তাকে আপন করে নেয়। এমনি এমনি কেউ কেনই বা ওকে মারবে, তুমিই বলো? এখানেও হয়তো অজানা একটা রহস্য লুকিয়ে আছে।”
–“আব্বু বিল্ডিংয়ে পুলিশ এসেছে। খবরদার তুমি এসবের মধ্যে একদম ঢুকবে না। পুলিশের তো কাজ ছাইয়ে দড়ি পাকানো। যত যাই হোক, তুমি এসব থেকে বিরত থাকবে।”
–“আচ্ছা! ঠিক আছে।”
শ্রেয়ান ওর আম্মুকে শান্ত করালো। এরপর ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো৷ শ্রেয়ান শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে ভাবছে কার এত সাহস, যে দিনের বেলা ছাদে জলজ্যান্ত একটা মানুষকে এমন ভয়ানকভাবে মেরে ফেললো? এখানে অদৃশ্যভাবে জটিল একটা গোলকধাঁধা তো আছেই। এর পেছনে একটা কিছু তো আছেই! তবে এর পেছনে যেই রহস্যই থাকুক, সত্যি হলো এটাই যে ভালোর সাথে ভাল আর খারাপের সাথে খারাপ কিছুই ঘটে। শ্রেয়ান আপাতত এসব ব্যাপার মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে শাওয়ার নেওয়াতে মনোযোগী দিলো।
সন্ধ্যার আজান হয়ে গেছে। রুপ আর মিঠি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। একটাও রিকশার দেখা মিলছে না। রুপের তো ভয়ে বুকটা দুরুদুরু কাঁপছে। সন্ধ্যা পর বাইরে থাকা ওর জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আজকে ওর আম্মু ওকে আস্ত রাখবে না। কোচিংয়ের লাস্ট ক্লাসের স্যার দেরী করে ক্লাসে এসেছিলো। কালকে দেওয়া এক্সামের খাতা সবাইকে দেখাচ্ছিলো। খাতা দেখে কোচিং থেকে বের হয়ে, মিঠিকে ড্রয়িং ক্লাস থেকে আনতে গিয়ে ওর আরো দেরী হয়ে গেলো।
মিঠি ছোট ছোট পায়ে রুপের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে পারছে না। এজন্য রুপ মিঠিকে কোলে তুলে নিয়ে দ্রুত পায়ে হাঁটতে শুরু করলো। আকাশের অবস্থাও খুব একটা ভালো না। ঘন ঘন আকাশ কাঁপিয়ে মেঘ ডাকছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামবে। রুপ একটু সামনে এগোতেই এটা রিকশা এসে ওদের সামনে দাঁড়ালো। সে আর দেরী না করে মিঠিকে নিয়ে রিকশাতে উঠে বসলো। বাসার সামনে গিয়ে ওরা রিকশা থেকে নামলো। রুপ ভাড়া মিটিয়ে মিঠিকে নিয়ে বাসায় গলিতে ঢুকে পড়লো। ওদের বাসার পাশে একটা বাগান আছে। সেই বাগানে গাব গাছ, দেবদারু, আকাশমণি, বটগাছ, সাথে নাম না জানা গাছও আছে। কয়েকটা গাছ অনেক পুরোনো। সেই গাছে বাদুড় গুলো উল্টো করে ঝুলে চ্যা চ্যা করে শব্দ তুলেছে।
রুপ ভুলেও সে দিকে তাকালো না। কারণ সন্ধ্যার আজান অনেকক্ষণ আগেই হয়ে গেছে। দিনের আলোকে বিদায় জানিয়ে অন্ধকার চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বাগানটাতেও ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে। পুরো কলোনিতে লাইট জ্বালানো, তবুও মনের ভয় যাকে বলে। ছোট থেকেই ও খুব ভীতু টাইপের মেয়ে। ওরা দু’জন বাসায় ঢুকতেই রুপের আম্মু রুপকে বকতে শুরু করলো। রুপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মিঠি ওর পি-মণিকে বকা খেতে দেখে মুখ টিপে হাসছে। রুপের আম্মু রুপের মাথায় একটা ঠুয়া মেরে বললো,
–“তোকে আর কতদিন বলবো সন্ধ্যার পর বাসার বাইরে থাকবি না? আমার কথা কি তোর কানে যায় না?”
রুপ ওর আম্মু অগ্নি দৃষ্টি দেখে আমতা আমতা করে বললো,
–“আম্মু কোচিংয়ের ক্লাসের পরীক্ষার খাতা দেখাচ্ছিলো। খাতা দেখে মিঠিকে আনতে গিয়ে দেরী হয়ে গেছে।”
রুপের ভাবি নিপা রুপের কথা শুনে তাচ্ছিল্যের সুরে
বললো,
–“মা! এই মেয়ে আপনার কথা শুনলে তো হতোই। নিজের রুপেই সে নিজেকে গুনবতী ভাবে। ওর মাথায় আদও বুদ্ধি বলে কি কিছু আছে? শয়তানি কাজ কারবারেই তো সব বুদ্ধি খরচ করে ফেলে।”
রুপের ভাবি রুপকে খোঁচা মেরে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল। ব্যস! ছোট খাটো ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেল রুপের উপর দিয়ে। সবার ভাবি এত ভালো আর মিশুক হয়। ননদ ভাবি মিলেও তো অনেকে দুইবোনের মতো থাকে। কিন্তু রুপ ওর কপাল গুনে একটা ভাবি পেয়েছে। সারাটা দিন ওর পেছনেই লেগে থেকে খ্যাচ খ্যাচ করে। একটু কিছু হলেই রুপের আম্মুকে বলে দিয়ে রুপকে বকা খাওয়াই।
আজকে যেহেতু রুপের ভুল হয়ে গেছে। তাই সে কারো কথায় কোনো প্রতিউত্তর করলো না। মাঝে মাঝে নিজের ভুল গুলো চুপ করে মেনে নিতে হয়। রুপ বকা খেয়ে ওর রুমে চলে গেলো। বাইরে খুব বাতাস বইছে। জানালার পর্দা গুলো অনবরত উড়ছে। রুপ দ্রুত পায়ে হেঁটে জানালা আটকে পর্দা টেনে দিলো। ততোক্ষণে বাইরের বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। আর একটু দেরী করলে ওরা বৃষ্টির মধ্যে আটকে যেত। যার ফলাফল, আরো কয়েক দফা বকা খেতে হতো। রুপ ওর বুকে হাত দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
–“উফফ! যাক বাবা, বাঁচলাম। বাবা বৃষ্টির আগে ফিরতে পেরেছি।”
কথাটা বলে মিষ্টি হেসে রুপ ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।
রাহীদ ওর রুমের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ওর আম্মু রাহীদের দিকে কফির মগ এগিয়ে দিলো। রাহীদ পাশে তাকিয়ে ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কফির মগটা হাতে তুলে নিলো। বাইরে অনবরত বৃষ্টি ঝরছে। রাস্তার লাইটের কারণে সেটা থাই গ্লাস দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রাহীদের আম্মু ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে রাহীদকে বললো,
–“বাইরে তো খুব বৃষ্টি হচ্ছে! তা আমার রাজকুমার ডিনারে কি খাবে শুনি?”
–“তোমার যা ইচ্ছে হয় করো । আমার একটা হলেই হয়।”
–“আচ্ছা।”
রাহীদের আম্মু ছেলের কথা শুনে হেসে চলে গেলেন। রাহীদ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে মনোযোগী হলো। বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা পিচ ঢালা রাস্তায় আছড়ে পড়ছে। বৃষ্টির পানি মাটিতে পড়ে একটা পোড়া পোড়া গন্ধ নাকে লাগছে। গাছের পাতা গুলো একটার সাথে আরেকটা বারি খাচ্ছে। রাস্তা দিয়ে কয়েকটা প্রাইভেট কার দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে। কেউ কেউ ফুটপাতের রাস্তা দিয়ে ভিজে ভিজে হেঁটে যাচ্ছে। রাহীদ থাই গ্লাসটা পুরোপুরি সরিয়ে দিলো। বৃষ্টির ঝাপটার সাথে ঠান্ডা বাতাস ওর গায়ে মাখছে। ঠান্ডা বাতাস ওর শরীরে লাগতেই রাহীদ চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। ও বৃষ্টি খুব ভালোবাসে। এখন ঠান্ডা বাতাসের ওর শরীর মন দু’টোতেই যেন প্রশান্তি এনে দিচ্ছে। ধোঁয়া ওঠা কফির মগে আলতো ভাবে চুমুক দিলো। ওর মনটা এখন খুব ভালো আছে। রাহীদ ওর মুখে প্রশান্তির এক টুকরো হাসি ঝুলিয়ে বিরবির করে বললো,
— তুমি আর অর্ধভেজা আমার ভালোবাসা। এই তো আছি বেশ!”
রুপ ফ্রেস হয়ে মাথা ধরে বেডে বসে পড়লো। ওর মাথার ডান পাশটা বড্ড বেশি ব্যথা করছে। শরীরটা ভার ভার লাগছে। ডান চোখের পাতাটা যেন অবশ হয়ে আসছে। সে মাথা ধরে আস্তে করে উঠে বালিশটা সোজা করে শুয়ে পড়লো। চুলের কাটা খুলে দিতেই চুলগুলো আছড়ে পড়লো বালিশ জুড়ে। ওর চুল গুলো বেশি বড় না হলেও ওর কোমরের নিচে অবধি। রুপ হাত বাড়িয়ে পাশের ড্রয়ার থেকে মুভটা নিয়ে, নিজেই নিজের কপালে লাগিয়ে নিলো। তখনই মিঠি এসে রুপের হাত ধরে টানাটানি শুরু করলো, দু’জন মিলে বৃষ্টির পানিতে হাত ভেজানোর জন্য। মিঠির জোরাজুরিতেও রুপ উঠলো না। তার সব শক্তি যেন কেউ শুষে নিয়েছে। রুপ উঠলো না দেখে মিঠি রেগে রুপকে বকা দিয়ে চলে গেল। রুপের মাথার ডান পাশের ব্যাথাটা ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে। ওর মাইগ্রেনের সমস্যা আছে। এজন্য রুপ আর ওর আম্মুকে কিছু বললো না। কিছু বললেই তো উনি বকাবকি শুরু করবে। এটা ওর মাইগ্রেনদের ব্যথা ভেবে রুপ চুপ করে শুয়ে রইলো।
এদিকে বৃষ্টি থামার কোনো নামই নেই। অকারণেই অঝর ধারায় বৃষ্টি ঝরে পড়ছে। চোখ বন্ধ করে রুপ ভাবছে, আচ্ছা! মাথার উপরের আকাশটার মনটা কি খুব খারাপ? আকাশের মন খারাপ হলেই তো চারদিকে মেঘ ঘনীভূত হয়ে আসে। তারপর শুরু হয় বৃষ্টি। অঝর ধারায় বৃষ্টি ঝরে মাটির বুকের আছড়ে পড়ে। বৃষ্টি মাটির বুকে আছড়ে পড়লে কি আকাশের মনটা ভালো হয়? নাকি আকাশের মন খারাপ হলে বৃষ্টির মাধ্যমে কান্না করে। এত জটিল কেন এসব প্রশ্নের উত্তর? কেন এত রহস্য সবকিছুতে। রুপ এসব আর ভাবতে পারলো না। ওর দু’চোখে ঘুমে লেগে গেল।
পরের দিন সকালে শ্রেয়ানদের বিল্ডিংয়ে আরেকটা আতংক ছড়িয়ে পড়লো। সবুজের মামা আসাদ সবুজের এমন মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনের দায়িত্ব নিয়েছিলো। উনি একজন গোয়েন্দা ছিলেন। উনি একা ছাদে গিয়েছিলো, খুনীর ফেলে যাওয়া কোন ক্লু খুঁজতে। কালকে রাত একটা অবধিও উনি ঠিক ছিলেন। কিন্তু ভোর চারটার পর থেকে উনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পাগলে পরিণত হয়েছে। একা একা বিরবির করে কিছু একটা আওড়াতেই থাকছে। কিন্তু উনি আসলে কি বলছে, এটা কেউ বুঝতে পারছে না। উনি অদ্ভুত এক ভাষাতে বিরবির করছে। উনার হাতে আছে একটা কয়লা। যেটা দিয়ে উনি শতশত বার একটা চিহ্নই পুরো ঘরজুড়ে লিখে যাচ্ছে। চিহ্নটা না আরবিতে আর না কোন দেশের ভাষার। অদ্ভুত একটা চিহ্ন। এই চিহ্নের মানেটা কি? আর এই চিহ্ন দ্বারা আসাদ কি বা বুঝাচ্ছে? তবে গভীর এক রহস্য তো আছেই এই চিহ্নের পেছনে। সহজতর কিছু? নাকি জটিল কোনো একটা রহস্যের গোলকধাঁধা? এটা নিয়েই বিল্ডিংয়ে উপস্থিত সবার মনে প্রশ্নের পাহাড় জমা হচ্ছে।
To be continue…..!!