#অদৃষ্টচর
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_10 (শেষ পার্ট)
রুপের যখন তিন মাস বয়স। তখন ওকে ওর আম্মু মাজারে নিয়ে গিয়েছিলো। রুপের চুল কেটে তাকে পুকুরের গোসলও করিয়েছিলো। সবই ঠিক ছিলো। কিন্তু রুপের কাটা চুলগুলো ওর আম্মু পাশের জঙ্গলে ছুঁড়ে মেরে ছিলো। সেই চুল ছিটকে পড়েছিলো এক পাগলির গায়ে। উনি ছিলেন অভিশপ্ত সর্পকেশী নারী। তার পুরো শরীর নোংরা আর চুলে ছিলো ঝট। সেই পাগলিটা বলেছিলো,
–“আমার গায়ে চুল ফেললি তো। তুইও আমার মত হবি। আমার মত অদৃশ্য ব্যাথায় ছটফট করবি।”
ওই পাগলি এই চুলের মালিককে অভিশাপ দিয়েছিলো। আর চুলের মালিক ছিলো রুপ। আর তখন থেকে রুপ সর্পকেশী অভিশাপ অভিশপ্ত। ওই পাগলিও ছিলো রুপবতী নারী। কোন এক দোষের জন্য তার গুরু তাকে এই অভিশাপ দিয়েছিলেন। তখন থেকে উনি পাগলে পরিণত হয়েছে।
সর্পকেশটা হলো অভিশপ্ত জ্বিণ। যেটা চুল আর সাপ রুপে থাকে। যখন সাপ রুপ ধারণ করে। তখন সাপটা দুধের মত সাদা রংয়ের হয়। আর যখন চুল রুপে থাকে তখন চুল আগা সাপের ফণা মত হতে থাকে। রুপ বড় হওয়ার সাথে সাথে ওর কিছু সমস্যা দেখা দিতো। তবে কাউকে বলতে পারতো না। কাউকে বলতে গেলে ভুলে যেতো। আর না হলে কোন না কোন ভাবে কষ্ট পেতে হতো।
রুপের এই কথা শুধু ওর আম্মু জানতো। উনি কম চেষ্টা করেনি রুপকে মুক্ত করতো। কিন্তু উনার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। উনি কোন ছেলের প্রাণ হারাতে দিতে চাইনি, তাই তিনি রুপের বিয়ে কথা ভাবতেন না। রাহীদকেও উনি না করেছেন। কিন্তু রাহীদ শুনেনি কথা। সে জেদ নিয়ে বসে ছিলো।
শ্রেয়ানের আম্মু খুব অসুস্থ। শ্রেয়ান উনার উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে গিয়েিলো। শ্রেয়ানের সাথে রুপে আর দেখা হয়নি। ওর মনের কথা জানানোর সময়টুকুও সে পায়নি। যখন শ্রেয়ান দেশে ফিরলো। তখন শুনলো রুপের বিয়ে হয়ে গেছে। ওর ভাগ্যেতে হয়তো রুপ ছিলো না। এজন্য সে রুপ পায়নি। এটা ভেবেই সে মনকে বুঝিয়েছে। তবে শ্রেয়ানের আম্মু ওর জন্য পাত্রী দেখছে। উনি যত দ্রুত সম্ভব ছেলের বিয়ে দিতে চাই।
আদ্রিয়ানের সাথে রাহীদ একটা পার্কে দেখা করেছিলো। আদ্রিয়ান রাহীদকে রুপের সর্পকেশের ব্যাপারে জানিয়েছিলো। রাহীদ শুনে তো হতভম্ব। সে প্রথমে বিশ্বাস করতে চাইনি। আদ্রিয়ান রাহীদ সামনের পুকুরের পানিতে তাকাতে বলে। আর সেই পানির মাধ্যমে সে রাহীদকে দেখায় রুপের সর্পকেশের ছবিসহ আরো প্রমান।
রাহীদ আদ্রিয়ানের থেকে রুপের মুক্তির পথ জানতে চেয়েছিলো। আদ্রিয়ান ওকে জানিয়ে ছিলো, একটা
প্রান বিসর্জন দিতে হবে। আর সেটা হতে হবে সাধারণ মানুষের কোন পশু পাখির নয়। আর তার মৃত্যু হতে হবে ধারালো ছুরিকাঘাতে। সেই ব্যাক্তিকে নিজেই নিজের বুকে তিনবার ছুড়ির আঘাত করতে হবে। আর এমনভাবে আঘাত করতে হবে। যেন সেই আঘাতে তার মৃত্যু ঘটে। তারপর রুপকে পানি ছাড়া এক বালতি দুধের মধ্যে কেশর মিশিয়ে গোসল করাতে হবে। সেই মৃত ব্যাক্তির বুকের রক্ত দিয়ে রুপের চুলের ধুয়ে দিতে হবে। সর্পকেশ সেই রক্ত শুষে নিবে। তারপর রুপ মুক্ত হবে। তাছাড়া রুপের মুক্তির পথ খোলা নেই। তবে কোন জ্বিনের সাহায্য নিয়ে এই কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। কারণ সর্পকেশকে সাধারণ মানুষের পক্ষে তাড়াতে সম্ভব নয়।
রাহীদ এসব শুনে আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞাসা করেছিলো,” এসব আপনি কি করে জানলেন?” এর উত্তর আদ্রিয়ান মুচকি হেসেছিলো। রাহীদ বলেছিলো, আমি এখন জ্বিন কোথায় পাবো?” রাহীদের কথার প্রতিউত্তরে আদ্রিয়ান হেসে বলেছিলো,
–“আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই।”
রাহীদ রুপকে অভিশাপ মুক্ত করার জন্য প্রাণ দিয়েছে। আর রাহীদকে সাহায্য করেছিলো আদ্রিয়ান। একথা কেউ জানেনা। রাহীদের প্রাণের বিনিময়ে রুপ অভিশাপ মুক্ত হয়েছে। আদ্রিয়ানের কাছে রাহীদের শেষ একটা আবদার করে গিয়েছিলো। তা হলো,
–“ভাই আপনাকে আমার রুপের রক্ষক হিসেবে রেখে গেলাম। আপনি ওর ছায়া হয়ে থাকবেন।”
আদ্রিয়ান রাহীদের কথা রেখেছে। সে রুপের ছায়া হয়ে থাকে। নিজের সবটুকু ভালবাসা দিয়ে রুপকে বুকে আগলে রাখে। রুপের মাঝে ওর অস্তিত্বকে খুঁজে নেয়। এখন রুপের সর্পকেশের ঘটনা মনে নেই। সে এখন একদম স্বাভাবিক। আদ্রিয়ানের সঙ্গে খুনশুটি, পড়াশোনা, বাবা মায়ের সঙ্গে আড্ডা, পবিত্রের দাদুর সঙ্গে ঝগড়া, শখের বাগান করা, এসব নিয়ে ওর দিন কাটে।
রাত দু’টো বাজে। এখন অাদ্রিয়ান জায়নামাজে বসে আছে। সে বুঝতে পেরেছে রুপ গর্ভবতী। এজন্য আদ্রিয়ান মনে মনে খুব খুশি। পৃথিবীর বুকে ওর অস্তিত্ব আসতে চলেছে। এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে বসেছে। যদিও একথা রুপের অজানা। যে ক্ষুণাক্ষরেও টের পায়নি সে
গর্ভবতী হতে যাচ্ছে। কিন্তু বিগত এক সপ্তাহ থেকে,
অাদ্রিয়ান রুপের শরীর থেকে গর্ভবতী নারীর গন্ধ পাচ্ছে। আর সেই গন্ধটা দিন দিন প্রখর হচ্ছে। ফল পাকলে যেমন মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়। তেমনি গর্ভবতী হলে নারীর শরীর থেকে গন্ধ ছড়ায়। আর গন্ধটা সবাই পায় না। কারণ এটা সাধারণ মানুষের ঘ্রাণশক্তি ক্ষমতার বাইরে।
আদ্রিয়ান জায়নামাজ থেকে উঠে রুপের কপালে আদর দিয়ে বললো,
–“অভিনন্দন! বাবুর আম্মু। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার অংশকে পৃথিবীতে আনার জন্য।”
আদ্রিয়ানের চোখে মুখে খুশির ঝলক। রুপ ঘুমে কাতর হয়ে বললো, “হুম।” কথাটা শুনে আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো। রুপকে ঠিকমত শুয়ে দিলো। তারপর সে একবার রুপের দিকে তাকিয়ে, দেওয়াল ভেদ করে পাশের রুমে চলে গেল। আদ্রিয়ান এখন সুমধুর সুরে কুরআন পড়বে। গভীর রাতে কুরআনের তেলায়াতের মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখবে। সে এখন আর থামবে না। যতক্ষণ না ভোরের আজান হয়।
আদ্রিয়ান রুপের শরীরের গন্ধ পেলো কেন? সে রাহীদকেই বা কেন সাহায্য করতে পারলো? তাহলে সে কি অদৃশ্য জগৎের অদৃশ্য কেউ? যাকে কেউ দেখেই নি, সেই অদৃষ্টচর কি আদ্রিয়ান? সব প্রশ্নের উত্তর খোলাসা করা যায় না। এত গুলো প্রশ্নের মাঝে উত্তরটা ঠিকই দৃশ্যমান। শুধু বুঝে নেওয়া অপেক্ষা।
সমাপ্ত….!!