অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁 #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_18

0
607

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_18

আজকে তনুকার গায়ে হলুদ। কিন্তু কারো মন ভালো নেই। এতগুলো গেস্ট কিভাবে ম্যানেজ করবে; এই চিন্তাই সবাই মাথায় ঘুরছে। কালকে রাতে নবিন মামনিকে বলেছে বাসায় তিনজন গেস্ট এসেছে। এজন্য মামনি আর বসে না থেকে রান্নাঘরে চলে গেলো। বিভা আর তিতিক্ষাও সাথে গেল। মামনি খাবার গুলো ওদের হাতে দিচ্ছে আর ওরা ডায়নিং টেবিলে সাজিয়ে রাখছে। ওইদিকে রায়হানদেরও টেনশনে কাল ঘাম ছুটে গেছে। কে জানতো এমন অশোভনীয় একটা ব্যাপার ঘটে যাবে। বাসাতে দুই একজন কাছের গেস্টরাও এসে হাজির হয়েছে। তারা ফুসুর ফুসুর করা শুরু করে দিয়েছে। রায়হান আর তনুকার টেনশনে মাথা কাজ করছে না। অন্য সব সেন্টারে খোঁজ নিচ্ছে কিন্তু ফাঁকা পাচ্ছে না।
আগে থেকে বুকিং না দিলে যা হয়।

তিতিক্ষার আব্বু আম্মু আজকে ১০ টার মধ্যেই এসে পৌঁছাবে। রায়হান আর তনুকার একসাথে গায়ে হলুদ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি; কি হবে কে জানে! নবিন কারো সাথে কথা বলতে বলতে ওর রুম থেকে বের হলো। তিতিক্ষা পানির জগটা রেখে ঘুরে দাঁড়াতে নবিনের সাথে সাফওয়ান আর রুহানকে দেখতে পেলো। ওদের এখন এখানে দেখে তিতিক্ষা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রুহান আর সাফওয়ান হেসে তিতিক্ষার সাথে কথা বললো,

–“মিসেস নাহিয়ান আপু কেমন আছো?”

-“আলহামদুলিল্লাহ! আপনারা কেমন আছেন ভাইয়া।”

–“আমি ভালো নেই আপু। তোমার বর আমার সাথে থাকলে ভালোর ‘ভ’ ও আমার কাছে আসে না।” (সাফওয়ান মুখ কাচুমাচু করে)

তিতিক্ষা সাফওয়ানের কথা কিছু বুঝলো না। রুহান সাফওয়ানকে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিলো। মামনি তো ওদের দেখে খুশিতে আটখানা। তিতিক্ষা কিছু বুঝতে পারছে না। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুধু দেখছে। সাফওয়ান আর রুহান এখানে, তাহলে নক্ষত্র কই? নবিন রুহানদের ব্রেকফার্স্ট সার্ভ করে দিতে বলে, নিজেও চেয়ার টেনে বসে গেল।

তিতিক্ষার মন বলছে নক্ষত্র এখানে উপস্থিত আছে। তবে এমনটা মনে হওয়ার কারণ তিতিক্ষার জানা নেই। হঠাৎ আপনের থেকেও আপনতর কারো কন্ঠ শুনে তিতিক্ষা পেছনে তাকালো। নক্ষত্র ফোনে কথা বলতে বলতে এদিকেই এগিয়ে আসছে। এখন এখানে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে নক্ষত্রকে দেখে তিতিক্ষার গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। সে দ্রুত তার চোখের অশ্রু বিন্দু মুছে নিলো। তিতিক্ষা ওর মনের বিরুদ্ধেই নক্ষত্রের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। যার জন্য সারারাত ঘুমাতে পারেনি; সে কিনা ওর বাসাতেই উপস্থিত ছিলো। তবুও একটা বার জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি। নক্ষত্রের প্রতি তিতিক্ষার মনে খুব অভিমানের জন্ম নিলো। তিতিক্ষা অভিমানী চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,

–“এই নিষ্ঠুর মানুষটার জন্য আমি শান্তিতে নিঃশ্বাস পর্যন্ত নিতে পারছিলাম না। আর উনি এখন আমাকেই ব্যস্ততা দেখাচ্ছে। একটা বার আমার দিকে তাকালোও না অবধি। ঠিক আছে! বলবো না আর কথা। আর কোনদিনও বলবো না। আমার কি রাগ নেই? আমিও দেখবো, মহারাজের আমাকে মনে পড়ছে কিনা।”

নক্ষত্র বাসার পরিহিত ড্রেস পড়ে আছে। রুহান, সাফওয়ান আর নক্ষত্র ওদের বাংলো বাড়ি থেকে এখানে এসেছে। কালকে রাতে নক্ষত্র ওর ফোনটা অন করতেই নবিনের ফোন আসে। আর নবিন নক্ষত্রকে তনুকার বিয়ের ডেট ঠিক হওয়ার কথা জানায়। সাথে ওদের বুকিং ক্যানসেলের কথাও জানায়। নক্ষত্র নবিনকে টেনশন করতে নিষেধ করে। নক্ষত্র এসব শুনে নবিনকে কিছু প্রস্তাব দেয়। আর নবিনেরও সে প্রস্তাবটা পছন্দ হয়। ফোন লাউডস্পিকারে দিয়ে নক্ষত্র, রুহান, সাফওয়ানও নবিনকে আরো ভাল কিছু আইডিয়া দেয়। তবে ফোনে সব আলোচনা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নবিন নক্ষত্রদের ওদের বাসায় চলে আসতে হবে। নক্ষত্র আসতে না চাইলে নবিন জোর করে। তিতিক্ষাকেও সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে। এটা ভেবে নক্ষত্র কালকে রাতে এখানে এসেছে। যেটা তিতিক্ষার কাছে একেবারেই অজানা ছিলো।

নক্ষত্র এখনো ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত। এক হাতে ফোন কানে ধরে কারো সাথে সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথা বলছে। মাঝে মাঝে হাঁটছে, আবার ভ্রু কুচকে কি কি বলছে। মাঝে মাঝে নিচের ঠোঁট কামড়ে অভিজ্ঞদের মত মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলছে। আবার কথা বলতে বলতে মুচকি হাসছে। সোফাতে বসে মনোযোগ দিয়ে শুনে, আবার সেই কথার আনসার করছে। তবে এত কথার মাঝে সে শব্দ করে হাসছে না। তবে ওর ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা স্পষ্ট। ফোনে কথা বলার মাঝেও একটা অন্য রকম স্মার্টনেস ফুটে উঠেছে ওর মধ্যে। আর তিতিক্ষা দাঁড়িয়ে সবটাই পর্যবেক্ষণ করছিলো। নক্ষত্র ফোনে কথা বলা শেষ করে চেয়ার টেনে বসলো। মামনি নক্ষত্রকে খাবার সার্ভ করে দিলো। তিতিক্ষা ওখান থেকে চলে গেল। নক্ষত্র নবিনের দিকে তাকিয়ে বললো,

–“ভাইয়া টেনশনের কিছু নেই। সবকিছু ম্যানেজ হয়ে গেছে। ইনশাআল্লাহ! আজকেই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটা হবে। আর রায়হান ভাইয়াদের সাথে আমি নিজে কথা বলে নিচ্ছি।”

–“তুমি আমাকে বাঁচালে নাহিয়ান। উফ! কি যে একটা টেনশনে ছিলাম।” (নবিন)

নক্ষত্র মুচকি হাসলো। নবিনের থেকে রায়হানের ফোন নাম্বারটা নিয়ে নক্ষত্র নিজে রায়হানকে সবটা বুঝিয়ে বললো। রায়হান নক্ষত্রের কথা শুনে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। নক্ষত্রের কথা বলা আর এমন ইউনিক চিন্তা ধারার জন্য রায়হান খুব খুশি হলো। বিশেষ করে নক্ষত্রের কথা বলার বচন ভঙ্গি দেখে। তবে রায়হানও কোনো দিক থেকে কম না। সে একজন ডাক্তার হলেও নক্ষত্রের মত এত স্মার্টলি সবটা ম্যানেজ করতে অক্ষম হয়েছে। এটা রায়হানের স্বীকার করতে আপত্তি নেই। যাক অবশেষে সবটা ঠিক হলো।

রুহান, সাফওয়ান, নক্ষত্র আর নবিন খেতে খেতে জরুরী আলোচনা গুলো করে নিলো। মামনির থেকে লোক সংখ্যা আর খাবারের মেন্যুর লিষ্ট নক্ষত্র নিয়ে নিলো। মামনি, নবিনের আব্বু সহ সবাই মিলে আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করলো। বিভা আর তিতিক্ষা এখানে নেই। এজন্য ওরা কেউ কিছুই শুনলো না। নক্ষত্র কাউকে ফোন দিয়ে আবার কিছুক্ষণ কথা বললো। কথা বলা শেষ করে নক্ষত্র নবিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। ওর হাসির মানে বুঝতে পেরে সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

মামনি নক্ষত্রকে এমনভাবে দায়িত্ব নিতে দেখে খুব খুশি হয়েছে। নক্ষত্র এই ব্যাপারটা যে এতো সহজে হ্যান্ডেল করবে; এটা কেউ ভাবতে পারেনি। সত্যি বলতেই হয়, নক্ষত্র প্রশংসা পাওয়া যোগ্য। এর বিশেষ কারণ ওর চিন্তা ধারা আর উপস্থিত বুদ্ধি। মামনি খুশি হয়ে নক্ষত্রকে একটা পাঞ্জাবী উপহার দিবে বলে মনে মনে ঠিক করলেন। মামনি নক্ষত্রকে বেশ কয়েকটা বিয়ের কার্ড দিয়ে ওর সব বন্ধুদের ইনভাইট করতে বললো। মামনি রুহান আর সাফওয়ানকেও বার বার বলে দিলো বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া অবধি কোথাও যেন না যায়। যদি যায় তো পরে ওদের বিচার করা হবে। এই কথা শুনে সবাই হাসলো। এরপর ওরা চারজন ব্রেকফাস্ট করে, রেডি হয়ে, বাসা থেকে বের হয়ে গেল।

তিতিক্ষা ওর রুমে এসে বসে আছে। বিভা বসে বসে তিতিক্ষার মতি গতি ফলো করছে। আহান ফোনে ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলছে। মামনি এসে বললো,

–“সবকিছু গোছগাছ করে নাও। যার যার প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র একেবারেই নিয়ে যাবে। কারণ গায়ে হলুদ আর বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে তবেই আমরা বাসায় ফিরবো।”

মামনির কথা মত তিতিক্ষা আর বিভা গোছগাছ শুরু করে দিলো। মামনির কাছে থেকে তিতিক্ষা শুনলো নক্ষত্র বাসায় নেই, কেবল ওরা বের হয়ে গেলো। এই কথা শুনে তিতিক্ষার তখন রাগে দুঃখে কেঁদে দিতে মন চাইলো। একটু পর কলিং বেলের শব্দ পেয়ে তিতিক্ষা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। অদ্রি তিতিক্ষাকে দেখে জড়িয়ে ধরলো। নক্ষত্র আব্বু আম্মু সন্ধ্যায় আসবে। তিতিক্ষা অদ্রিকে এখন এখানে চলে আসতে বলেছে। অদ্রি তিতিক্ষার কথা ফেললে পারেনি। তাই সে এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে। বিভা, তনুকা, অদ্রি আর তিতিক্ষা বেডের উপর বসে গোছগাছ করছে। তিতিক্ষা তনুকার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আপু ব্লাউজ গুলো চেক করে নাও।”

তনুকা উঠে ব্লাউজটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলো গেলো।
তনুকা ব্লাউজ পড়তে পড়তে ওয়াশরুমে থেকেই বলে উঠলো,

–“কি রে তিতু, এটা কি? একদিকে টানলে অন্য দিকে ছোট হয়ে যাচ্ছে। ইয়া আল্লাহ টেইলার্স ওয়ালা এটা কি বানালো?”

তিতিক্ষা তনুকার কাছে গিয়ে দেখলো সত্যি সত্যি ব্লাউজ তনুকার হচ্ছে না। প্রচন্ড টাইট হচ্ছে ব্লাউজটা। তিতিক্ষা তনুকাকে ব্লাউজটা খুলে ওকে দিতে বললো। ব্লাউজের সাইডে অনেক কাপড় আছে, এজন্য তিতিক্ষা ওর সেলাই মেশিনে বসে পড়লো। তনুকার মাপ মত তিতিক্ষা ব্লাউজটা ঠিক করছে। আজকের গায়ের হলুদের ড্রেস এসেছে রায়হানের বাসায় থেকে। তনুকা ওয়াশরুম থেকে এসে বেডে বসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

–“হাবলুটা একটা কাজ যদি ঠিকমত করে!”

তনুকার কথা শুনে ওরা তিনজন হাসছে। তিতিক্ষা সেলাই মেশিনে বসে সেলাই করছে। আর ওদের কথা শুনছে। অদ্রি বালিশ নিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে আছে। বিভা টান টান হয়ে শুয়ে ফট করে বললো,

–“রায়হান ভাইয়াকে তাও রোমান্টিক ভাবে আদুরে কথা বলতে শুনেছি। কিন্তু নক্ষত্র ভাইয়াকে একদিনও বলতে শুনলাম না। তিতু আপু নক্ষত্র ভাইয়া যে টাইপের ছেলে, তোদের বিয়ের দশ বছরেও আমাদেরকে খালামনি হওয়ার সুযোগ দিবে কি না, এটা নিয়ে আমি খুব চিন্তিত।”

বিভার কথা শুনে তিতিক্ষা বাদে সবাই হো হো করে হেসে দিলো। অদ্রি তো হাসতে হাসতে বলেই দিলো,

–“আমার ভাইয়া বলবে আদুরে কথা। তাহলে তো হয়েই যেতো। ভাইয়া তো আস্ত একটা নিরামিষের ঢেঁকি। ”

অদ্রির কথা শুনে বিভা উঠে বসলো। তিনজন দাঁত বের হাসছে। তিতিক্ষা কিছু বললো না। তবে মনে মনে বললো,
–“রায়হান ভাইয়া যদি আদুরে কথার হাঁড়ি হয়। নক্ষত্র তাহলে আদুরে কথার গোডাউন। বোন তোরা না জানলেও আমি খুব ভালো করে জানি।”

অদ্রি আর বিভা হাসছে৷ তনুকা বিভা আর অদ্রিকে তিতিক্ষার দিকে তাকাতে বললো। তিতিক্ষা লজ্জা পাচ্ছে দেখে, তনুকা তিতিক্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে খোঁচা মেরে বললো,

–“নক্ষত্র আমিষ নাকি নিরামিষ? এটা যার জানার সে জানলেই হলো। শুধু শুধু নক্ষত্রকে নিয়ে আমাদের গবেষণা করে কি হবে? উহুম! উহুম! তাই না রে তিতু?”

কথাটা বলে আবার তিনজন হো হো করে হেসে দিলো। তিতিক্ষা লজ্জামাখা মুখে মুচকি হাসলো। মামনি এসে ওদের রেডি হওয়া জন্য তাড়া দিলো। সবার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয় রাতে। আর তনুকারটা হবে দিনে। আর যেখানে গায়ে হলুদ হবে সেখান গিয়ে তো পৌঁছাতে হবে। অদ্রি রেডি হয়ে এসেছে। তাই তনুকা, বিভা আর তিতিক্ষা শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে নিলো। সবাই নরমাল ভাবে রেডি হয়ে নিলো। ওখানে গিয়ে অনুষ্ঠানের জন্য রেডি হবে। তিতিক্ষার আব্বু আম্মুও চলে এসেছে। তনুকার দাদু বাড়ির সবাই একেবারে ওখানে চলে যাবে; সাথে সব গেস্টরাও। তিতিক্ষারা সব কিছু ভালো মতো গুছিয়ে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।

ওই দিকে রুহান, সাফওয়ান, নবিন সবাই গায়ে হলুদের স্টেজ বানাচ্ছে। নক্ষত্র অন্য কাজে ব্যস্ত। শীতের দিনেও কাজ করে গিয়ে শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা। নবিনের বন্ধুরাও এসে কাজে হাত লাগিয়েছে। নক্ষত্র বলে দিয়েছে কিভাবে সাজাতে ভালো হবে; সে মতো সাজানো হচ্ছে। একটু পরে নক্ষত্র নবিনকে এসে বললো,
–“ভাইয়া মামনিরা কি রওনা দিয়েছে?”
–“হ্যা! আম্মু কেবল ফোন দিয়েছিলো।”
–“আচ্ছা।”

নবিন নক্ষত্রের দিকে তাকালো। সকাল থেকে সে ও খুব ছুটাছুটি করছে। নক্ষত্রও ঘেমে একাকার অবস্থা হয়ে গেছে। তবুও ওকে অগোছালো লাগছে না।
নক্ষত্র মুচকি হেসে অন্য কাজে চলে গেল। নবিন ওর কাজে লেগে গেল। যদিও আজকে সকাল থেকে কোনো কুয়াশা নেই, রোদের তাপও আছে। সাজগোজ, খাবার দাবার সবটা নক্ষত্রকে দেখতে হচ্ছে। একদিনে এতকিছু এ্যারেন্জ করে ঠিকঠাক ভাবে ম্যানেজ করা মোটেও চারটেখানি কথা না। সাফওয়ান, রুহানও নক্ষত্রকে খুব সাহায্য করেছে। গায়ের হলুদের স্টেজটা পাশে একটা বাঁশ দিয়ে পুঁতে দিলে ভাল হয়। এখানে অনেকজনই কাজ করছে। এদেরকে যদিও টাকা দিয়ে ভাড়া করতে হয়েছে। তাদেরই মধ্যে একজন মধ্যে বয়স্ক লোককে ডেকে নক্ষত্র বললো,

–“আংকেল এখানে একটা বাঁশ পুতে উঁচু করে দেন। যাতে কারো মাথায় বারি না লাগে।”

নক্ষত্র উনাকে কথাটা বলে ফোনে কথা বলতে চলে গেল। লোকটি নক্ষত্রের কথা মত বাঁশ আনতে চলে গেল। তিতিক্ষারা দেড় ঘন্টা পর গন্তব্যে এসে পৌঁছাল। তনুকা, অদ্রি, বিভা আর তিতিক্ষার গাড়ি থেকে নেমে এক জন আরেক জনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। হঠাৎ করে চারজনই অবাক হয়ে একসাথে বলে উঠলো,
–“হুমায়ুন স্যারের নুহাশ পল্লি!”

নক্ষত্র তনুকার গায়ের হলুদের সব আয়োজন নুহাশ পল্লিতে করেছে। নুহাশ পল্লি হচ্ছে বাংলাদেশি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বাগানবাড়ী। কার্যত এটি নুহাশ চলচিত্রের শুটিংস্পট ও পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র। তিতিক্ষারা অবাক চোখে আশে পাশে চোখ বুলাচ্ছে। মামনি সবাইকে ভেতরে প্রবেশ করতে বললো। অদ্রি তিতিক্ষার ডান হাত আর বিভা তিতিক্ষার বাম হাত ধরে হাঁটছে। নক্ষত্রের সাথে তিতিক্ষার চোখাচোখি হলো। নক্ষত্র ওদের দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে আসলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের ঘামার্ত মুখটা দেখে নিলো। তবে কিছু বললো না। নক্ষত্র ওদেরকে বৃষ্টিবিলাশ নামে একটা বাংলোতে নিয়ে গেল। আর দ্রুত সবাইকে রেডি হয়ে নিতে বললো। আর কিছুক্ষণ পরেই অনুষ্ঠান শুরু হবে। ওদের সবটা বুঝিয়ে নক্ষত্র চলে যাওয়ার সময় তিতিক্ষাকে মৃদু স্বরে বললো,
–“হ্যালো অভিমানিনী। কিতা খয়রায়?”

ওইদিকে সাফওয়ানে জেসিকাকে নিয়ে মারাত্মক প্যারাতে আছে। সে নাকি এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে। তিতিক্ষা জেসিকাকে পারসোনালী ইনভাইট করেছে। এজন্য সে এখানে এসেছে। যদিও এই তথ্য সাফওয়ান জানে না। সাফওয়ান দ্রুত পায়ে হন্তদন্দ হয়ে যাওয়ার সময় একটা বাচ্চার সাথে ধাক্কা খেলো। সাফওয়ান কিছু বলার আগেই সে বললো,

–“আংকেল আপনি চোখের মধ্যে বল্টু নিয়ে হাটেন নাকি? আর একটু হলেই তো আমার স্পাইক করা চুল গুলো নষ্ট হয়ে যেতো।”

সাফওয়ান বাচ্চাটির মুখে এমন কথা শুনে অবাক হলো। শেষে কি না একটা বাচ্চার কাছেও ওর এমন অপদস্থ হতে হচ্ছে। স্মার্টলি কথাটা বলে ছেলেটি হাইফাই একটা এটিটিউড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাফওয়ান ছেলেটার দিকে তাকিয়ে অবাকের সুরে বললো,

–“ভাই রে ভাই কে তুমি? তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না।”

ছেলেটি ক্রাশ খাওয়ার মত মুচকি একটা হাসি দিলো। এরপর সহজ ও সাবলীল ভাষায় স্পষ্ট করে বললো,

–“আমি হলাম সুদর্শনের শিরোমণি, সবার ক্রাশ বয়।
মেঘ মেহবুব।”

To be continue….!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here