#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_19
(গল্পে রেসপন্স বাড়ছে না। তাই এতদিন গল্প পোস্ট করিনি। আজকে থেকে রেসপন্স না বাড়লে এই গল্পটাও অফ করে দিতে বাধ্য হবো।)
ছেলেটি ক্রাশ খাওয়ার মত মুচকি একটা হাসি দিলো। এরপর সহজ ও সাবলীল ভাষায় স্পষ্ট করে বললো,
–“আমি হলাম সুদর্শনের শিরোমণি, সবার ক্রাশ বয়।
মেঘ মেহবুব।”
সাফওয়ান হতবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকে চলে গেল। মেঘ পরীর হাত ধরে সামনের দিকে নিয়ে গেল। আর শাসনের সুরে বললো,
–“একদম দুষ্টুমি করবি না। আর অন্য ছেলেদের সাথে খেলা তো দূরে থাক, কথা বললেও তোর খবর আছে। বুঝলি আমার কথা?”
পরী মেঘের কথা শুনে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো। মেঘ আর পরী আহানের বেস্টু। এজন্য ওদের এখানে আগমন ঘটেছে। আহান মেঘ আর পরীকে দেখে দৌড়ে আসলো। মেঘ আর আহান কথা বলছে আর পরী ফোন বের করে ওর সেলফি তুলছে। মেঘ পরীর মাথায় ঠুয়া মেরে ওর ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললো,
–“আমি এত হ্যান্ডসাম তবুও সেলফি তুলছি না। তাহলে তুই ফাজিলদের মতো এতো সেলফি তুলছিস কেন?”
মেঘের কথা শুনে পরী অসহায় দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকালো। পরী মেঘকে খুব ভয় পায়। এজন্য সে মেঘের মুখের উপরে কথা বলতে পারে না। আহান মেঘকে বললো,
–“দে না, তুললে সমস্যা কি? ও তো ছোট, একটা সেলফি তুললে কিচ্ছু হবে না।”
মেঘ পরীকে ফোন তো দিলোই না। বরং পরীকে আরেকটা ঠুয়া মেরে রাগি চোখে তাকিয়ে চলে গেল। আহান আর কি করবে, সে পরীর হাত ধরে সামনের দিকে এগোলো। সে জানে মেঘকে এখন কিছু বলা আর না বলা দু’টোই সমান।
তনুকার জন্য পার্লারের একটা মেয়ে ওদের সাথে এসেছে। উনি তনুকাকে সাজাচ্ছে৷ বিভা আর অদ্রিও শাড়ি পড়বে, এজন্য তিতিক্ষা ওদের সাহায্য করছে। তনুকার গায়ে হলুদের খাবারের আইটেমগুলো জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে সাজানো হয়েছে। আর এখানে এক একটা প্লেট একদম ইউনিক ভাবে সাজানো। নক্ষত্র এসব গুলো শেফ দিয়ে করিয়েছে। উনাদের অভিজ্ঞ হাতে করার জন্য দেখতেও অসাধারণ লাগছে। এক সাইডে মিষ্টি, এরপর যথাক্রমে ফল, নোনতা, ঝাল, টক আর তারপাশে বিভিন্ন ধরনের পানীয়। প্লেটে একবিন্দু জায়গাও ফাঁকা নেই।
স্টেজ পরিপূর্ণ ভাবে সাজানো হয়ে গেছে। এখন শুধু তনুকার আসার অপেক্ষা মাত্র।
সাফওয়ান করুণ দৃষ্টিতে জেসিকার দিকে তাকিয়ে আছে। জেসিকা আজকে শাড়ি পড়েছে। ওকে দেখতে মন্দ লাগছে না। তবে মাইনকা চিপায় পড়েছে সাফওয়ান। জেসিকা শাড়ি পড়ে এক ধাপও হাঁটতে পারছে না। এজন্য জেসিকা ওর সবগুলো দাঁত বের করে শাফওয়ানকে কিউট করে বলল,
–“বাবু! তুমি আমার শাড়ির কুচি গুলো ধরে হাঁটো না, প্লিজ।”
সাফওয়ান চোখ বড় বড় করে জেসিকার দিকে তাকালো। শাড়ি পড়ে আছে জেসিকা আর শাড়ির কুচি ধরে হাঁটছে সাফওয়ান। এই মর্মান্তিক ঘটনাটা চোখ বন্ধ করে একবার সে কল্পনা করে নিলো। আর কল্পনা করার পর সাফওয়ান ওর চোখে শর্ষেফুল দেখলো। শ্রীপুরের চা বাগানের ওই পিকটার কথা মনে হতেই সাফওয়ান জোরে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো।
নবিনের বন্ধুরা সকাল থেকে নক্ষত্রকে লক্ষ্য করছে। বউয়ের কাজিনের জন্য এভাবে কেউ দৌড়াদৌড়ি করে বলে ওদের জানা ছিলো না। ওরা নক্ষত্রের সাথে কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথাও বলেছে। নক্ষত্রকে দেখে ওরাও ভেবেছিলো, নক্ষত্র যথেষ্ট সুদর্শন আর এজন্য হয়তো নক্ষত্রের মাঝে আলাদা একটা এটিটিউড থাকবে। কারো সাথে হয়তো সে মিশবে না। কিন্তু ওদের ধারণা নক্ষত্র ভুল প্রমান করে দিয়েছে। ওরা সবাই নক্ষত্র কে ছেলে হিসেবে খুব পছন্দ করেছে। নবিনের বন্ধু হিমেল নবিনকে বললো,
–“নক্ষত্র তোর বোনের জন্য এমন ভাবে পুরোটা ইউনিক ভাবে সাজাচ্ছে। তাহলে ওর বোনের বিয়েতে বা ওর অনুষ্ঠানে কি করবে ভাবলেই আমার মাথা হ্যাং করছে।”
নবিন হিমেলের কথায় মুচকি হাসলো। বাম দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। প্রথমে নবিনও ভেবেছিলো নক্ষত্র খুব অহংকারী আর এটিটিউড ওয়ালা হবে। সে এত বড় একজন আর্কিট্রেক্ট আর বাবার তো উচ্চবিত্তদের মধ্যে একজন। ওদের চালচলন হাইফাই লোকদের মত। কিন্তু নক্ষত্রদের পরিবারের মেশার পর বুঝেছে, নক্ষত্রদের পরিবারের কারোর মধ্যেই বিন্দুমাত্র অহংকার নেই। বরং তারা যথেষ্ট ভালো মনের অধিকারী।
একটু পরে আরো অন্যান্য গেস্টরাও চলে আসলো। এখন জায়গাটা আরো গমগম করছে। সাউন্ড বক্সে গান বাজছে, বাচ্চারা নাচানাচি করছে। গেস্টদের খাবারও সব রেডি। নক্ষত্র লোক সংখ্যা আর খাবারের মেনু এ্যারেঞ্জ কমিটির লোকদের দিয়ে দিয়েছে। আর উনারা সব রেডি করে পাঠিয়ে দিয়েছে। সাথে পনেরো জন ওয়েটারও এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে; যাতে গেস্টদের কোনো ধরনের সমস্যা না হয়। নক্ষত্র এসব ছোটখাটো দিকগুলো কালকে রাত্রে ম্যানেজ করে রেখেছিলো। আর এখন ডিজিটাল যুগ বলে কথা। এখন কেউ কোনো কিছুতে পিছিয়ে থাকবে না; যদি সেটা ম্যানেজ করার মতো মাথাতে বুদ্ধি থাকে তো।
একটু পর নক্ষত্রের আম্মু আর আব্বুও চলে আসলো। ছেলের দিকে তাকিয়ে নক্ষত্রের আম্মু মুচকি হাসলো। ঘামার্ত মুখটাতেও অসম্ভব মায়া জড়িয়ে আছে। নক্ষত্রের আম্মু নক্ষত্রের সামনের চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বললো,
–“আব্বু কোনো কিছুর কমতি যেন না থাকে৷ সবটা তুমি নিজে হাতে তুমি সামলে নিবে।”
নক্ষত্র মুচকি হেসে ওর ঘামে ভেজা মুখটা ওর আম্মুর শাড়িতে মুছে নিলো। নক্ষত্রের আম্মু নক্ষত্রের পিঠে হালকা করে একটা থাপ্পড় দিল। আর অভিযোগের সুরে বলল,
–“এই ফাজিল আমার এত সুন্দর শাড়িতে ঘাম মুছবি না। এবার মায়ের আঁচল ছাড়ো আর বউয়ের আঁচল ধরো।”
নক্ষত্র ওর আম্মুর কথা শুনে মুচকি হাসলো। ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসির রেখা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে বলল,
–“আমার বউটাকে তো পুরোপুরি এনে দাও নাই। অর্ধভাবে দিয়েছো। তাহলে কিভাবে আর তার আঁচল ধরে ঘুরবো বলো? যদি পুরোপুরি দিতে তাহলে…।”
নক্ষত্রের কথা শুনে নক্ষত্রের আম্মু ওর পিঠে আরেকটা থাপ্পর দিল। নক্ষত্র দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে ।
নক্ষত্রের আম্মু নক্ষত্রকে তিতিক্ষার কথা জিজ্ঞাসা করলো। নক্ষত্র ওর আম্মুকে ওই বাংলোতে নিয়ে গেল। নক্ষত্রের আব্বু তিতিক্ষার খালু আর আব্বুর সাথে জমিয়ে গল্প করা শুরু করলো। ওই বাংলোতেই মামনি, তিতিক্ষার আম্মুরা ছিলো।
নক্ষত্রের আম্মুকে দেখে ওনারা সামনে এগিয়ে গেল। নক্ষত্রের আম্মুকে পেয়ে উনারা যেন আরো ডগোমগো হয়ে উঠলো।
তিতিক্ষা কোমরে হাত রেখে বিভার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। বিভা অসহায় বিড়ালছানার মত তাকিয়ে জোরপূর্বক একটা হাসি দিলো। বিভার শাড়ির কুঁচি গুলো ঠিক করে দিলো তিতিক্ষা। এরপর অদ্রিকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে। অদ্রির প্রচন্ড কাতুকুতু। তিতিক্ষা ওর কোমরে শাড়ি গুজতেই সে এক লাফ দিয়ে উঠে। তিতিক্ষা এই দুটোকে নিয়ে পড়েছে মহা বিপদে। ওদের শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে ওদের দু’জনকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিচ্ছে। দু’জনের চোখে আইলাইনার দেওয়ার জন্য দু’জনেই চোখ বন্ধ করে আছে। তিতিক্ষা ওদেরকে গায়ে হলুদের জন্য কেনা গয়নার সেট পড়িয়ে দিলো। নক্ষত্রের আম্মু ওদের কাছে এসে তিতিক্ষাকে বকা দিয়ে বললো,
–“তিতিক্ষা ওদের নিয়ে পড়ে থাকলে তুই কখন রেডি হবি?”
তিতিক্ষা নক্ষত্রের আম্মুকে দেখে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের আম্মুর দিকে তাকালো। উনাকে দেখে বোঝা যায় না উনার এতো বড় বড় ছেলে-মেয়ে আছে। এখনো উনি নিজেকে সেই রকম ভাবেই ফিট রেখেছে।
তিতিক্ষা নক্ষত্রের আম্মুকে বললো,
–“ওয়াও! আম্মু, তোমাকে জাস্ট অসাম লাগছে।”
নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষার কথা শুনে হাসলো। ওইদিকে তনুকার সাজ কমপ্লিট হয়ে গেছে। তিতিক্ষা ওর হলুদ আর সবুজ সংমিশ্রণের জামদানি শাড়িটা পড়ে নিলো। নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষাকে শাড়ি পড়িয়ে দিলো। তিতিক্ষা কেন জানি খুব লজ্জা পাচ্ছিলো। ওকে শাড়ি পড়ানোর সময় নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষার মুখে দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
–“আমি তাই এত লজ্জা পাচ্ছিস। আমার ছেলে হ..।”
নক্ষত্রের আম্মু পুরো কথাটা শেষ করেতে পারেনি। তার আগেই তিতিক্ষা নক্ষত্রের আম্মুর কথা শুনে দুইহাত দিয়ে ওর মুখটা ঢেকে নিলো। অদ্রি, বিভা, নক্ষত্রের আম্মু হো হো করে হেসে দিলে। কোনো শাশুড়ি যে তার ছেলের বউকে এভাবে লজ্জা দিতে পারে; সেটা নক্ষত্রের আম্মুকে না দেখলে জানায় যেতো না। অদ্রি আর নক্ষত্র আগে ওকে লজ্জাতে ফেলতো এখন ওদের আম্মুও যোগ হলো। তিতিক্ষা এখনো লজ্জায় মুখ তুলে তাকাতে পারেনি।
তিতিক্ষা নক্ষত্রের আম্মুর সাহায্য নিয়ে ওর চুল খোঁপা করে নিলো। চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা চ্যাপস্টিক দিয়ে নিলো। নক্ষত্রের মেলাতে কিনে দেওয়া সবুজ আর হলুদ চুড়ি মিশিয়ে একমুঠো করলো। আর ডানহাতে সেটা পড়ে নিলো। আর কপালে একদম ছোট্ট কালো একটা টিপ দিলো। আপাতত ওর সাজ কমপ্লিট।
নক্ষত্র, রুহান, সাফওয়ান, নবিনসহ ওর সব বন্ধুরা রেডি হয়ে আসলো। তনুকা এখন বের হয়ে স্টেজে বসবে। এজন্য সবাই দাঁড়িয়ে আছে। ক্যামেরা ম্যান তনুকার কয়েকদফা পিক তুলে ওই বাংলো থেকে বের হলো। সাফওয়ানের পাশে জেসিকা সেলফি তুলতে ব্যস্ত। আর কোনো দিকে ওর ধ্যান জ্ঞান নেই। একটু পর অদ্রি আর তিতিক্ষা একটা লাল নেটের ওড়না ধরে রুম থেকে বের হলো। বিভা আর ওর কাজিন ওড়নার পেছনের দুই কোণা ধরে আছে। তিতিক্ষা বিভাকে সামনে আসতে বলেছে। কিন্তু বিভার শাড়ির অবস্থা খুব করুণ। এজন্য বাধ্য হয়ে তিতিক্ষা আর অদ্রিকে সামনে আসতে হয়েছে। আর তনুকা আছে ওদের ঠিক মাঝখানে।
ওদের বের হতে দেখে সবাই সিটি বাজানো শুরু করলো। সাউন্ড বক্সে তখন গায়ে হলুদের গান গান বাজছে। তবে হাস্যকর ব্যাপার হলো, অদ্রি শাড়ি পড়ে কোনো রকম পা ফেললেও তিতিক্ষা খুব ধীরে পা ফেলছে। তিতিক্ষা সামনের দিকে তাকাতেই সবার প্রথমে চোখাচোখি হলো নক্ষত্রের সাথে। নক্ষত্র চুপ করে এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিল। এতগুলো মানুষের সামনে তিতিক্ষার খুব লজ্জা লাগছিলো। আর ওর লজ্জা পাওয়ার বিশেষ কারণ নাহিয়ান আবরার নক্ষত্রের মারাত্মক দৃষ্টি। যে দৃষ্টির গভীরতায় তিতিক্ষা অনেক আগেই আত্মসমর্পণ করেছে।
শাড়ি পড়ে চলাফেরাতে ওরা সবাই আনাড়ি। এজন্য অদ্রি আর তিতিক্ষা ধীরে পা ফেলছে। কারণ সবার সামনে কোনো অ্যাক্সিডেন্ট ঘটাতে তাঁরা চাচ্ছে না। তবে ওদের হাটা দেখে তনুকার বড় ফুপি হাসতে হাসতে বললো,
–“কি রে তিতিক্ষা, নয় মাসের প্রেগনেন্ট মেয়ের মতো হাটছিস কেন মা? একটু জোরে হাঁট, তা না হলে তোদের যেতে যেতেই রাত ১০ টা বেজে যাবে।”
এই কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে দিলো। তিতিক্ষার এখন মন চাচ্ছে একদৌড়ে রুমে চলে যেতে। ইস! কি লজ্জা, কি লজ্জা। তিতিক্ষা আড়াচোখে নক্ষত্রকে দেখে নিলো। সে ওর দিকেই তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। এরপর স্টেজের কাছে ওরা যেতেই দেখলো রায়হান আগে থেকে বসে আছে। তনুকা বাদে সবাই জানতো ওর আর রায়হানের একসাথে গায়ে হলুদ হবে। শুধু তনুকা জানতো না তাই সে অবাক হয়েছে। তিতিক্ষা, বিভা, অদ্রি, ওর সাথের মেয়েদের মুখেও দুষ্টু হাসির রেখা দেখা দিলো। তনুকা দাঁড়িয়ে আছে, বিভারা কিছুতেই রায়হানের পাশে তাকে বসতে দিচ্ছে না। আপাতত শালিকা আর দুলাভাইদের মাঝে দর কষাকষি হচ্ছে। বিভাদের সাথে না পেরে রায়হান ওদের প্রস্তাবে রাজি হলো। তনুকাকে দেখেই রায়হানের মাথা ঘুরে গেছে। তাই আর কথা বাড়ালো না। রায়হান কার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ওহে শালিকাগণ তোমাদের যা নেওয়ার নিয়ে যাও। শুধু আমার বউকে আমার বুকে দিয়ে যাও।”
বিভারা পাক্কা ১০ হাজার তিনশ টাকা নিয়ে তনুকাকে ছাড়লো। এরপর শুরু হলো অনুষ্ঠান। গায়ে হলুদে মেয়েদের সাজ হলুদ আর সবুজ শাড়ি। আর ছেলেদের সবুজ পান্জাবী, সাদা জিন্স আর মাথায় বাঁধা গ্রামীন চেকের গামছা। এটা গ্রামীন টেডিশন আর কি। গামছা বাঁধার আইডিয়াটা নবিন ঠিক করেছে। নক্ষত্র মাথায় গামছা বেঁধেছিলো; পরে খুলে ফেলেছে ওর স্বযত্নে গড়া চুলের কথা ভেবে। তবে খোলার আগে শত শত পিক তুলতে হয়েছে ওখানকার সবার সাথে। ওর আর তিতিক্ষার অনেক কাপল পিকও তোলা হয়েছে।
অদ্রি আর তিতিক্ষা এসে একটু দূরে দাঁড়ালো। নক্ষত্র ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই অদ্রি খুশিতে গদোমদো হয়ে বললো,
–“ভাইয়া শাড়িতে আমাদের কেমন লাগছে দেখতে?”
নক্ষত্র অদ্রির দিকে তাকিয়ে ওর ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। অদ্রি আবারও একই কথা বললো। নক্ষত্র অতি শান্ত সুরে বললো,
–“তোকে দেখতে পুরো রানু মন্ডলের মতো লাগছে।”
নক্ষত্রের কথা শুনে অদ্রির মুখটা চুপসে গেল। তিতিক্ষা দুই ভাইবোনের কান্ড দেখছে। অদ্রি বেচারা নক্ষত্রের মুখে এমন প্রশংসা শুনে চলে গেল। নক্ষত্র তিতিক্ষার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। নক্ষত্র ওর ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলো। তিতিক্ষাকে কিছু বলার আগেই নক্ষত্রের আম্মু ওদের দু’জনকে ডাকলো। কয়েকজনের সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিলো।
তনুকা আর রায়হানের বাবা-মায়ের হলুদ দেওয়া শেষ। স্টেজের কাছে নক্ষত্র গিয়ে রায়হানকে বললো,
–“ভাইয়া এবার আপনি আপিকে হলুদ ছুঁয়ে দেন।”
এই কথাটা ওখানে যেন উপস্থিত সবার কাছে বজ্রপাতের মত ঠেকলো। সবাই কথা বন্ধ করে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। নক্ষত্র নিজেও বুঝতে পারছে, সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। নক্ষত্র মুচকি হেসে বললো,
— “আত্মীয়স্বজনসহ পুরো পাড়ার মানুষ এসে বর বউদের হলুদ ছুঁয়ে দিয়ে যায়। সেখানে বর বউ নিজেদের হলুদ ছুঁয়ে দিলে সমস্যাটা কোথায়?”
নক্ষত্রের কথাতে যুক্তি আছে। এজন্য আর কেউ আর কথা বাড়ালো না। সবাই মিটি মিটি হাসছে।
রায়হান তনুকার গালে হলুদ ছুঁয়ে দিলো। আর তনুকা লজ্জামাখা মুখে রায়হানের গালে হলুদ দিলো। রায়হান আর তনুকা দুজনের চোখেই খুশির ঝলক স্পষ্ট। এর মধ্যে মাঝবয়সী একটা লোক এসে নক্ষত্রের দিকে একটা হাঁস এগিয়ে দিলো। নক্ষত্র বুঝতে পারছে না, উনি হঠাৎ ওকে হাঁস দিচ্ছে কেন? লোকটি সব দাঁত বের করে হাসলো আর বললো,
–“স্যার এই যে হাঁস নিয়ে এসেছি।”
নক্ষত্র যতটুকু মনে আছে, সে কাউকে হাঁস আনতে বলেনি। সে কিছু বুঝতে পারছে না। সবাই আপাতত ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে৷ ক্যামেরা ম্যানও বেহুদার মত এই দৃশ্যটাও ভিডিও করছে। নক্ষত্রের হঠাৎ করে একটা কথা মনে পড়ে গেল। লোকটি নক্ষত্রের মুখ পানেই তাকিয়ে আছে। নক্ষত্র বললো,
–“আংকেল আমি তো সকালে আপনাকে বাঁশ আনতে বলেছিলাম। আর আপনি এখন হাঁস নিয়ে আসলেন।”
নক্ষত্রের কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে দিলো। আনতে বলেছে বাঁশ আর উনি আনলেন হাঁস। এবার কারো হাসি থামছে না। লোকটি উনার বোকামির কান্ড বুঝতে পেরে মাথা চুলকে চলে গেল।
তারপর আবার যথারীতি অনুষ্ঠান চলতে থাকলো। বড়রা ওদের গায়ে হলুদ ছুঁয়ে উনারা অন্যদিকে চলে গেছ। আর ছোটরা এখানে উপস্থিত আছে। এদিকে আহান, মেঘ আর পরী এরা বিভাদের মত রায়হানের থেকে টাকা হাতানোর জন্য অনেক যুক্তি, পরামর্শ করে অতি সর্তকতার সাথে রায়হানের পকেট থেকে ফোনটা বের করে নিল। রায়হান অন্য মনস্ক থাকায় বুঝতেই পারেনি। রায়হানের ফোনটা হাতে নিয়ে ওরা বিশ্ব জয় করা হাসি দিল। মেঘ ফোনটা হাতে নিয়ে অন বাটনে চাপ দিতেই সামনের লকস্ক্রিনে একটা পিক ভেসে উঠলো। আর পিকটা দেখেই আহান আর মেঘ দুইহাতে চোখ বন্ধ করে স্বজোরে ফোনটা ছুড়ে মারলো। ফোনটা গিয়ে পড়ল নক্ষত্রের পায়ের কাছে। নক্ষত্র ফোনটা তুলে মেঘেদের দিকে তাকালো। ফোনটা হাতে তুলে নক্ষত্র ওদের জিজ্ঞাসা করলো,
–“আহান, মেঘ কি হয়েছে? এভাবে ফোনটা ছুড়ে মারলে কেন?”
ওরা দুই হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। মেঘ চোখ বন্ধ করেই নক্ষত্রকে ফোনের লক স্ক্রিন এর পিক টা দেখতে বললো। ওদের কথামত নক্ষত্র পিকটা দেখে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবার দৃষ্টি এখন ওদের দিকে। তিতিক্ষা ভুরু কুঁচকে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের মতিগতি বুঝতে না পেরে বিভা এসে নক্ষত্রের হাতে থেকে ফোনটা নিলো। আর লকস্ক্রিনের ওয়ালপেপারটা দেখার পর বিভা অবাক অবাকিত সুরে বলে উঠলো,
–“এটা তো রায়হান ভাইয়ার ফোন। ওমা! এটা তো তনুকা আপুর ব্লাউজের পিক।”
নক্ষত্র না পারছে হাসতে না পারছে চুপ থাকতে। ভাইরা ভাইয়ের এমন করুণ অবস্থা, হাসাটা বড্ড বেমানান। তবে উপস্থিত সবাই লুটোপুটি খাচ্ছে। বিভা, তিতিক্ষা, অদ্রি, নবিনের বন্ধুরা, নক্ষত্রের বন্ধুরা তো হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পড়েছে। সাফওয়ান তখন বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে গর্বের সাথে বলল,
–“জিও ব্রো। আপনার মতো আমারও করুণ একটা অবস্থা। আপনি আপনার বউয়ের ব্লাউজের পিক নিয়ে ঘুরছেন। আর আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের শাড়ির কুচি ধরে হাঁটছি। কি সোনা বাঁধানো কপাল আমাদের।”
সাফওয়ানের কথা শুনে আরেক দফা হাসির রোল পড়লো।
To be continue…….!!
(নিজের পড়ুন আর এত এত শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দেন।)