অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁 #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_02

0
1013

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_02

–“এমন মায়াবী অনায়াসে ঘায়েল করা কাজল কালো দু’নয়নে অশ্রুর ফোঁটা বড্ড বেমানান। প্রিয় থেকে প্রিয়তরও মানুষটার চোখে অশ্রু দেখলে, কোন একজনের কলিজাটাও যে কেঁপে ওঠে।এটা কি কেউ বোঝে?” (আদুরে সুরে)

নক্ষত্রের মুখে এমন কথা শুনে তিতিক্ষা অবাক হয়ে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। চোখের কোণে জমে থাকা এক বিন্দু পানি টুকুও না চাইতেও ওর গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো। তিতিক্ষা নক্ষত্রের চোখের দিকে সাত সেকেন্ডের মত তাকিয়ে ছিলো। আচানক ক্যামেরাতে পিক তোলার শব্দে তিতিক্ষা দৃষ্টি সরিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। এত সুন্দর মুহূর্তটাকে সাফওয়ান ক্যামেরা বন্দি করে নিয়েছে। তিতিক্ষা অবাক হয়ে তাকানোর সময় নক্ষত্র চোখে ওর চোখ পড়েছে। কেমন অদ্ভুত চোখের চাহনি। চোখ দিয়েই যেন অপ্রকাশিত না বলা ভাষা বুঝে নেওয়া সম্ভব হবে। চোখের এমন মারাত্মক চাহনি যে কোন মেয়ের মন কেড়ে নিতে সক্ষম হবে।

তিতিক্ষা এর আগে কোন ছেলে চোখে চোখ রেখে কথা বলেনি। এজন্য হয়তো ওর জানা নেই।যে কিছু কিছু ছেলের চোখের চাহনিতে মারাত্মক কোন এক মায়া
লুকিয়ে থাকে। নক্ষত্রের এমন অদ্ভুত দৃষ্টি তিতিক্ষার বুকের ভেতর তোলপাড় সৃষ্টি করছে। ওর পুরো শরীর এখনও মৃদুভাবে কাঁপছে। বার বার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। হৃদপিণ্ডটা ঢোল বাজানোর মত করে কম্পিত হচ্ছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি ছিটকে বেরিয়ে যাবে। এ কেমন অদ্ভুত অনুভূতি! এর আগে তো এমনটা হয়নি। তিতিক্ষার মনে হচ্ছে ওর কানের কাছে নক্ষত্রের বলা প্রতিটা শব্দ প্রতিধ্বনি হয়ে চারদিকে বেজে উঠছে। তিতিক্ষার অবস্থা বুঝতে পেরে নক্ষত্র আর কথা বাড়ালো না। নিজেই তিতিক্ষার হাতটা টেনে নিয়ে ওর অনামিকা আঙ্গুলে রিং পড়িয়ে দিল। তিতিক্ষা তখনো মাথা নিচু করে ছিলো।এরপর কাঁপা হাতেই তিতিক্ষা নক্ষত্রের আঙুলেও রিং পড়িয়ে দিলো।বাসার সবাই তখন আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো। তিতিক্ষা যে কাঁপছে নক্ষত্র ওর হাত ধরেই বুঝতে পারছিলো। ওর হাতটাও তখন ঘেমে একাকার অবস্থা।

রিং পড়ানো হয়ে গেলে সবার করতালিতে নক্ষত্রের ধ্যান ভাঙ্গলো। নক্ষত্রের আব্বু তো বলেই ফেললো,

–“আব্বাজান এবার আপনি খুশি তো”?

নক্ষত্রের মুখে তখন বিশ্বজয় করা হাসি। নক্ষত্র ওর আব্বু আম্মুর দিকে তাকিয়ে ইশারাতে কৃতজ্ঞতা জানালো। ছেলের এমন কাজে নক্ষত্র বাবা-মা দুজনেই মুচকি হাসি দিলো। নক্ষত্রের আব্বু আম্মু দুজনেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
তিতিক্ষার খালু সবাইকে মিষ্টি মুখ করালেন। সবার মুখে তৃপ্তির হাসি বিরাজমান। রুহান আর সাফওয়ান নক্ষত্রকে খোঁচাচ্ছে। কিন্তু নক্ষত্রের সেদিকে খেয়াল নেই। সে আড়চোখে তিতিক্ষাকে দেখতে ব্যস্ত। এত হালকা সাজে একটা মেয়েকে এত মায়াবী লাগতে পারে? এটা নক্ষত্রের জানা ছিল না। এই মায়াবী পরীটাই এখন থেকে ওর হবু বউ। একথা ভাবলেই নক্ষত্রের নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হিসেবে গন্য করতে মন চাচ্ছে । রুহান নক্ষত্রের পেটে কনুই দিয়ে গুঁতো মেরে বললো,

–“শালা হামলার মত তাকিয়ে আছিস কেন? বাচ্চা মেয়েটার এবার সত্যি সত্যিই নজর লেগে যাবে তো।” (রুহান ফিসফিস করে)

–“বিয়ে না হতেই ওর এই অবস্থা মাম্মা। না জানি বিয়ের পর তো ও রুম থেকেই বের হবেনা।” (সাফওয়ান বিরবির করে)

–“ভাই তোরা এমন করিস না তো। তৃষার্ত চোখ দুটোকে তৃষ্ণা মিটাতে দে। কোনটাই তো তোদের অজানা নয়।” (আফান মুখে হাত দিয়ে বিরবির করে)

তিতিক্ষার খালু আর ওর আব্বু দুপুরে লাঞ্চের জন্য সবাইকে ডাইনিং টেবিলে যাওয়ার আহ্বান জানালো। নক্ষত্র আশে পাশে একবার চোখ বুলিয়ে চেয়ার টেনে বসলো। নক্ষত্রের আম্মু, তিতিক্ষার আম্মু আর মামনি তিনজন তো গল্প জুড়ে দিয়েছে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে, ওরা কতকাল আগের পরিচিত। নক্ষত্রের আম্মুর যথেষ্ট মিশুক আর বন্ধুসুলভ আচরণ করে ছেলেমেয়েদের সাথে। নক্ষত্র আর অদ্রি ওদের সব পার্সোনাল কথা ওদের আম্মুকে শেয়ার করে। তখন নক্ষত্রের আম্মু নক্ষত্রের সাথে তিতিক্ষা কে নিয়ে এজন্যই মজা করছিলো। আর এই ব্যাপারটাতে প্রথমে তিতিক্ষার পরিবার অবাক হলেও পরে বুঝলো যে, নক্ষত্রের আম্মু যথেষ্ট বন্ধুসুলভ এবং রসিক টাইপের একজন মহিলা।

সবাই খেতে শুরু করেছে। নক্ষত্রের আব্বুর সাথে তিতিক্ষার খালু আর আব্বু কথা বলছে। মাঝে মাঝে তিতিক্ষার আব্বু নক্ষত্রকে কিছু জিজ্ঞাসা করছে। নক্ষত্র মুচকি হাসির সাথে উনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষা কে শাড়ি চেঞ্জ করে আসার জন্য রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে। উনি বুঝেছে, যে তিতিক্ষা শাড়িতে আনইজি ফিল করছে। শাড়িতে অভ্যস্ত না থাকলে যা হয় আর কি। নক্ষত্রের আব্বু আতিফ আবরার তিতিক্ষার আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললো,

–“ভাই! আমরা দুই পরিবার আজকে থেকে নতুন একটা সম্পর্ক স্থাপন করলাম। আমাদের ছেলে মেয়েরা সুখে থাকুক এটাই আমরা কামনা করব। তারপরেও কথা হলো, শুধু ছেলে মেয়ে না আমরা দুই পরিবারও আমাদের সম্পর্কটাকে সুন্দর করে গড়ে তুলবো। আমরা মানুষ আর আমাদের পদে পদে ভুল হয়েই থাকে। ভাই আমাদের যদি কোন ভুল হয়ে থাকে। তাহলে আপনারা সেটা সোজাসুজি বলবেন। কারন কোন ভুল পরবর্তীতে সেটা যেন বিরাট আকার ধারণ করতে না পারে । আমরা দুজনেই কিন্তু সবার সাথে খুব মজা করি।আমাদের কথায় কেউ মাইন্ড করবেন না। আর যদি মাইন্ড করেন। তাহলে আরো বেশি করে মজা করবো।” (নক্ষত্রের আব্বু হেসে হেসে)

–“হা হা হা। ভাই এজন্য আপনাদের আমার খুব পছন্দ হয়েছে । নাহিয়ান শুধু আমার জামাই না। যেদিন ওর সাথে আমার প্রথম কথা হয়েছিলো। ওকে আমি আমার ছেলের আসনে বসিয়েছি। নাহিয়ান আপনার ছেলে, আর তিতিক্ষা শুধু আমার মেয়ে। একথাটা আমি আমার মনে ধারণ করিনি। আমি একটা কথায় মনে করি, যে ছেলে মেয়ে দুটোই আমাদের।” (তিতিক্ষার বাবা)

তিতিক্ষা রুমে বসে এখনো নক্ষত্রের বলা কথা গুলোই ভাবছে। অদ্ভুত এক অনুভূতি তিতিক্ষাকে যেন গ্রাস করে নিচ্ছে। নক্ষত্র কি তিতিক্ষাকে আগে থেকে চেনে? নক্ষত্রের বলা প্রতিটা শব্দ যেন তিতিক্ষাকে অদ্ভুত ভাবে ভাবাচ্ছে।তিতিক্ষার মাথায় এখন একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,

–“প্রথম দেখায় একটা মেয়ের সাথে কি এত সহজ ও সাবলীলভাবে কথা বলা যায়?”

তনুকা এসে মামনির পাশে দাঁড়ালো। তিতিক্ষার আম্মু সবার সাথে তনুকার পরিচয় করিয়ে দিলো। তিতিক্ষা যাওয়ার সময় তনুকার ফোন এসেছিলো। এজন্য তনুকা তখন উপস্থিত হতে পারে নি। ওর হবু বর ফোন দিয়েছিল। এজন্য কথা বলা শেষ করে ওর আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে। তনুকা সবার সাথে খুব সুন্দর ভাবে কথা বললো। তিতিক্ষার আম্মু এটাও বললো যে, তনুকার এংগেজমেন্ট করা আছে। ছেলে আপাতত দেশের বাইরে আছে। সামনেই মাসেই চলে আসবে। আর তখনই বিয়ের ডেট ধার্য করা হবে। তনুকা এখন ডাক্তারী পড়ছে। বিয়ের ঝামেলার জন্য পড়াশোনার যেন ক্ষতি না হয়। তাই ওরা দুজন মিলে বিয়েটা পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। ওদের এমন সিদ্ধান্তটা বড়রা সবাই মেনে নিয়েছিলো। তনুকার ইন্টার্নি শুরু করার আগেই বিয়ের ডেট ঠিক করা হবে। এসব কথার মাঝেই নবিন তখন তনুকাকে ভিডিও কল করলো। নবিন উপস্থিত সবার সাথে কথা বললো। আজকে ওর একটা এক্সাম ছিলো। এজন্য এখানে সবার মাঝে উপস্থিত হতে পারেনি। কেবল এক্সাম দিয়ে বের হয়েই কল দিয়েছে। এদিকে আহান কুটুর কুটুর করে খাচ্ছে । আর নক্ষত্রকে পর্যবেক্ষণ করছে। নক্ষত্রও এই ব্যাপারটা অনেকক্ষণ ধরেই লক্ষ্য করছে। নক্ষত্র মুচকি হেসে আহানকে বললো,

–“আহান আমাকে কিছু বলতে চাও?”

আহান মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। নক্ষত্র তখন আর কিছু না বলে খাওয়াতে মনোনিবেশ করলো।

তিতিক্ষা আপাতত ওর সব চিন্তা বাদ দিলো। বেড থেকে উঠে শাড়ি বদলে, ব্লু কালারের একটা থ্রি-পিস পড়ে নিল। মাথাতে খুব সুন্দর করে ওড়না টেনে দিলো। আয়নাতে একনজর নিজেকে দেখে মৃদু পায়ে সবার সামনে গিয়ে উপস্থিত হলো। তিতিক্ষাকে দেখে মামনি এগিয়ে এসে ট্রে ভর্তি দইয়ের পিরিচ গুলো তিতিক্ষার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
–“যাও সবাইকে দিয়ে এসো”।

তিতিক্ষাও ভদ্র মেয়ের মত আর কথা না বাড়িয়ে একে একে সবাইকে দিলো। আহানকে দেওয়ার সময় বেখেয়ালেই নক্ষত্রের সাথে তিতিক্ষার চোখাচোখি হয়ে গেল। তিতিক্ষা দ্রুত চোখ সরিয়ে ওখান থেকে সরে দাঁড়ালো। সবার আড়ালে দাঁড়িয়ে তিতিক্ষার মামনি অগ্নি দৃষ্টিতে ওনার হাজবেন্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। কারন উনার হাজবেন্ডের হাইপ্রেশার থাকা সত্ত্বেও, উনি গরুর মাংস খেয়েই যাচ্ছে। সবার কথা যেন উনার কানে যাচ্ছেই না। উনি আছে উনার ভোজন রাজ্যে মশগুল। এর মধ্যে তিতিক্ষার আব্বু নক্ষত্রের প্লেটে মাংস তুলে দিতে দিতে বললো,

–“পেট শান্তি তো দুনিয়া শান্তি। আর পেট শান্তিতে থাকলে মস্তিষ্কও শান্ত থাকে। তখন বউয়ের তিতা কথাও মিঠা লাগে।এখন থেকে নিজেকে এমনভাবেই অভ্যস্ত করো।” (তিতিক্ষার আব্বু)

তিতিক্ষার আব্বুর এমন কথা শুনে, সবার মাঝে আরেক দফা হাসির রোল পড়লো। সবাই উচ্চশব্দে হাসলেও নক্ষত্র মুচকি হাসিতেই বিদ্যামান। কেউ লক্ষ্য না করলেও তিতিক্ষা এটা লক্ষ্য করেছে। নক্ষত্র এখনও জোরে শব্দ করে হাসেনি। তবে মানুষটাকে মুচকি হাসিতে মনে হয় একটু বেশী মানায়। ডেনিম এ্যাশ কালারের শার্টের সাথে কালো প্যান্ট ইন করে পড়া। আর এমন ফর্মাল লুকে উনাকে ভালোই মানিয়েছে। হাতে একটা ইউনিক ডিজাইনের ওয়াচ। তিতিক্ষা আড়চোখে নক্ষত্র কে এতোটুকুই খেয়াল করলো। এরপর অনেক কথা , খুনসুটি দুষ্টুমির মধ্যে ওরা ওদের খাওয়া শেষ করল। ছেলেরা উঠে গেলে। সব মেয়েরা একসাথে বসে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব সমাপ্ত করল।

বড়রা উনাদের মত করে কথা বলছে। আর বাকিরা বিভা, আহান ,রুহান, অদ্রি,সাফওয়ান, আফান,তনুকা ,নক্ষত্র ,আর তিতিক্ষা। এরা সবাই গোল হয়ে বসে একটা রুমে আড্ডা দিচ্ছে। সাফওয়ানের এক একটা কথা শুনে সবাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। সাফওয়ান ওর প্রেমের কাহিনী শোনাচ্ছে। ওর গার্লফ্রেন্ড ওকে কত রকমের প্যারা দেয় । এটাই সবার সামনে অসহায় মুখ করে প্রকাশ করছে। এদিকে নক্ষত্র আড়চোখে তিতিক্ষা কে দেখতে ব্যস্ত। তখনই ওদের আড্ডার মাঝেই নক্ষত্রের আম্মু প্রবেশ করলো। নক্ষত্র আর তিতিক্ষাকে ডেকে নিলো। এরপর ওদেরকে আলাদা করে কথা বলার একটা সুযোগ করে দিলো। এটা নিয়েও রুহানরা নক্ষত্রকে পিঞ্চ মেরে কথা বললো।

তিতিক্ষা নক্ষত্রকে ওর রুমে নিয়ে গেল। নক্ষত্র চারিদিকে একবার করে চোখ বুলিয়ে নিল। রুমের এক পাশের দেওয়ালে বিভিন্ন ধরনের পেইন্টিং ঝুলানো। তার পাশের দেওয়ালে তিতিক্ষার অনেকগুলো ফটো ফ্রেম। বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র দিয়ে রুমটা পরিপাটি করে সাজানো গোছানো। গোলাপি আর কালোর সংমিশ্রণে সুন্দর একটা বেডশীট বেডে বিছানো আছে। নক্ষত্র রুমের এক কোনায় রাখা সিঙ্গেল একটা সোফায় বসল। তিতিক্ষা তখনও রুমের এক কোণে গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন নক্ষত্র ওকে কি বলবে? কি জিজ্ঞাসা করবে? এসব ভাবলেই তিতিক্ষা যেন কাল ঘাম ছুটে যাওয়ার উপক্রম।

নক্ষত্র তিতিক্ষার অবস্থা বুঝতে পেরে উঠে দাঁড়ালো। এরপর তিতিক্ষার দিকে কয়েক পা এগিয়ে গেল। মুচকি হেসে তিতিক্ষাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“আচ্ছা তুমি কি আমাকে কোন কারনে ভয় পাচ্ছো? আমার সাথে এই রুমে তোমার যদি কথা বলতে সমস্যা হয়। তাহলে চলো আমরা ছাদে যাই?”

তিতিক্ষার কেন জানি সত্যিই ভয় করছিল। নক্ষত্র যে এত সহজে যে ব্যাপারটা বুঝে যাবে। তিতিক্ষা এটা ভাবতে পারেনি। আর কোন ভনিতা না করে মৃদু সুরে তিতিক্ষা নক্ষত্র কে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“আমরা বেলকনিতে যাই?”

নক্ষত্র তিতিক্ষার কথা অনুযায়ী বেলকনির দিকে পা বাড়ালো। বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো বেলকনি। অনেক রকমের ফুলও ফুটে আছে। পাশে রাখা একটা গোলাপের টবে তিনটে সাদা গোলাপের কলি ফুটেছে। নক্ষত্র বেলকনির রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালো। ওর দুই হাত বুকের কাছে ভাজ করে তিতিক্ষা দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

—“তোমার কাছে আমার কিছু একটা চাওয়ার আছে। জানিনা সে চাওয়াটা আমার কবে পূর্ণ হবে? তুমি কি শুনবে আমার চাওয়াটা কি?” (শান্ত কন্ঠে)

তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে না তাকিয়েই বলল,
–“বলুন আপনার কি চাই?”

নক্ষত্র আবারও মুচকি হেসে বলল,

–“আমি তোমার চুলের হাতখোঁপাটা শুধু একটাবার ছুঁয়ে দেখতে চাই।” (আদুরে সুরে)

তিতিক্ষা এবার যেন অবাকের চরম শিখরে। কারণ তিতিক্ষার যতটুকু মনে আছে। তিতিক্ষা যখন শাড়ি পড়েছিল তখন সে মাথায় ঘোমটা দিয়ে ছিল। এখনো মাথায় ওড়না দেওয়া আছে। তাহলে তো নক্ষত্র ওর চুল বা চুলের খোপা দেখার কোনো সুযোগই পায়নি। আর নক্ষত্র কি করেই বা জানল তিতিক্ষা চুলে হাত খোঁপা করে। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে আবার বললো,

—“তবে তোমার মন সায় না দিলে থাক। কারণ মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কোন কিছু করা উচিত নয়। আমি তোমাকে জোর করছিনা আর করবোও না। ইনশাআল্লাহ! খুব শ্রীঘই আমার চাওয়াটা পূর্ণ হবে।” (নক্ষত্র মুচকি হেসে)

কথা বলতে বলতে নক্ষত্র ওর পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করল। সেটা তিতিক্ষার দিকে এগিয়ে দিল। তিতিক্ষা বক্সটা নিয়ে হাতেই ধরে রাখলো। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে বলল,

–” গিফ্টটা খুলে দেখো।”

তিতিক্ষা বক্সটি খুলে দেখল একটা ছোট্ট সাদা পাথরের নোজ পিন। নোজপিনের পাথরটা নরমাল পাথরের তুলনায় একটু বেশি জ্বলজ্বল করছে। নোজপিনের পাথরটা গোল আকৃতির নয়। সেটা দেখতে স্টার (নক্ষত্র ) আকৃতি। তিতিক্ষা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নক্ষত্রকে কিছু বলার আগেই নক্ষত্র বললো,

–“তোমার ঘামার্ত নাকটা আমার বেশ পছন্দের। অদ্ভুত এক সৌন্দর্য মিশ্রিত আছে, তোমার এই ঘামার্ত নাকটাতে। এজন্যই আমার তরফ থেকেই তোমার ঘামার্ত নাকের জন্য খুব ছোট্ট একটা উপহার।” (নক্ষত্র মুচকি হেসে)

To be continue….!!
(গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাতে ভুলবেন না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here