#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_30
নক্ষত্ররা ওদের রুমে যাওয়ার পর সাফওয়ানদের মুখেও হাসি ফুটলো। তাঁরা আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানালো। এরপর রুহান, আফান, সাফওয়ান আর মিঃ আবরার নক্ষত্রের আম্মুর কাছে গেলো। নক্ষত্রের আম্মু কাঁদছিলো। ছেলে-মেয়েকে কিছু বলার পরে উনি এভাবেই পাগলের মতো কান্না করে। সাফওয়ান, রুহান, আফান উনাকে ঘিরে বসলো। সাফওয়ান নক্ষত্রের আম্মুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
–“কাঁদছো কেন আন্টি? একদম কাঁদবে না। আন্টি তুমি আর নক্ষত্রের উপর অভিমান করে থেকো না। একটা বছর ধরে নিজেকে আড়াল করে ও তিতিক্ষাকে ভালবেসে এসেছে। তিতিক্ষার প্রতি একটু একটু ভাললাগা থেকে দিন দিন সর্বনাশা অনুভূতিরা এসে ওকে গ্রাস করেছে। নক্ষত্র তিতিক্ষাদের পাশের নতুন বাসাটা দেখতে গিয়েছিলো। আংকেলের পরিচিতি কারো ওই বিল্ডিংটা। উনি নক্ষত্রকে দিয়েই আর্কিট্রেচারের কাজ করাবে বলে বিল্ডিংটা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলো। আমি তখন ওর সঙ্গে ছিলাম। কারো হাসির শব্দে নক্ষত্রের চোখ যায় পাশের বিল্ডিং এর বেলকনিতে। একটা বাচ্চা ছেলে একটা মেয়ের চুলের খোঁপাতে প্লাস্টিকের গোলাপ গুঁজে দিচ্ছে। কিন্তু ভালো ভাবে গুজতে পারছিলো না। তখন মেয়েটা হেসে উঠছিলো। মেয়েটা আর কেউ না, সে তিতিক্ষা আর বাচ্চাটা ছিলো আহান। আন্টি বুঝোই তো একটা ছেলের মনে একটা মেয়ের প্রতি ভালো লাগার বিভিন্ন দিক থাকে। তিতিক্ষার চোখ আর খোঁপা দেখে নক্ষত্রের মনে একটা সূক্ষ অনূভূতি এসে জমা হয়। দিন দিন সেটা প্রখর হতে থাকে। এমনকি নক্ষত্র তিতিক্ষার সেফটির জন্য একজন ছেলেকেও ওর জন্য রেখেছিলো। সেই তিতিক্ষার সব খবর নক্ষত্রকে দিতো। প্রতি সপ্তাহে তিনদিন নক্ষত্র তিতিক্ষার ইউনিভার্সিটিতে যেতো। শুধু তিতিক্ষাকে দেখে তৃষ্ণার্ত চোখের পিপাসা মিটাতে। ঠিক কতটা ভালবাসলে কেউ এমনটা করে! আন্টি তুমি একটাবার ভেবে দেখো। আন্টি তোমার ছেলে দিন দিন এই মেয়েটার প্রতি মারাত্মক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়েছিলো। সে তোমাদের সরাসরি বলতে পারছিলো না। তাই আমি তোমাদের বলেছি। তোমরা রাজি হলে, আর গিয়ে এনগেজমেন্টও করে রাখলো।”
সাফওয়ানের কথা শুনে সবার চোখে অশ্রু ঝরছে। নক্ষত্র এসব করেছে তিতিক্ষার জন্য। এগুলো তো সবার অজানা। আড়াই ঘন্টার পথ অতিক্রম করে সে যেতো তিতিক্ষাকে একটা বার দেখতে। রুহান ওর চোখের পানি মুছে নিয়ে বলতে শুরু করলে।
–“সেদিন এনগেজমেন্টের পর নক্ষত্র খুশিতে আমাদের জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলো। ওর খুশিটা ও ভাষাতে প্রকাশ করতে পারছিলো না। এজন্য খুব কেঁদেছিলো। আমি নিজেও অবাক হয়েছিলাম নক্ষত্রকে দেখে। সেদিন সে কেঁদেছিলো তিতিক্ষাকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দে। আর রইলো ওদের বিয়ের কথা। তোমার ছেলেকে তো তুমি চিনো। তুমি তো জানো ওর চিন্তা ভাবনা কেমন। আসল সত্যি হলো, নক্ষত্র তিতিক্ষার অপবিত্র ভাবে স্পর্শ করবে না। নক্ষত্রের মনে একটা ভয় কাজ করছিলো, এজন্য ওরা বিয়েটা করেছিলো। কে জানতে এই বিয়েটাই পরবর্তীতে ওর সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে কাজে দিবে। বিয়ের পর নক্ষত্র তিতিক্ষাকেও এই কথাটা কাউকে জানাতে নিষেধ করেছিলো। কারণ তোমরা বড়রা শুনলে কষ্ট পাবে । অনুষ্ঠান তো হতোই। তাই ওরা কাউকে জানাইনি।
মিঃ আবরারও সবটা শুনছে। উনার চোখেও পানি। বাবা হয়ে ছেলেকে নিয়ে বড্ড বেশি গর্ব হচ্ছে। বিশেষ করে উনার ছেলের চিন্তা ধারা দেখে। রুমের মধ্যে নিরাবতা চলছে। এবার আফান বললো,
–“তিতিক্ষার ব্যাপারে আর কি বলবো? ওর ব্যাপারে আমার বেশি কিছু বলার নেই আন্টি। নক্ষত্রের জীবনসঙ্গী হিসেবে তিতিক্ষার থেকে পারফেক্ট কাউকে তুমি পাবে না। এতকিছুর পরেও, এত মার খাওয়ার পরও সে নক্ষত্রের হাতটা আঁকড়ে ধরেছে। বিশ্বাস, আস্থা, ভালবাসা নিয়ে এতদূর অবধি ছুটে এসেছে। ওই পাগলিটা তোমার ছেলেকে খুব ভালোবাসে। তবে সত্য কথা কি জানো আন্টি? এক স্থানে দাঁড়িয়ে ভালবাসি-ভালবাসি করলে হয় না! কঠিন পরিস্থিতিতেও সাহস নিয়ে একটা ধাপ এগোতে হয়। তাহলে সামনের ব্যাক্তিটাও হাতটি শক্ত করে ধরার সুযোগ পাই। তুমিই দেখো, তিতিক্ষাকে কতটা খারাপ ভাবে মেরেছে ওর পরিবার। তবুও দেখো, ও হার স্বীকার করেনি। ওদের শরীর আলাদা হলেও ওরা এক আত্মাতে পরিণত হয়েছে।”
এভাবে চলতে থাকলো ওদের কথোপকথন। উনি রুহানদের সব কথা শুনলো। নক্ষত্রের প্রতি এদের ভালবাসা দেখেও নক্ষত্রের আম্মু খুশি হলো। তিন বন্ধু নক্ষত্রকে আর কষ্ট পেতে দেখতে চায় না। তাই নক্ষত্রের আম্মুর অভিমান ভাঙ্গাতে সবটা জানালো। সাফওয়ান সিরিয়াস মুহূর্তেটাকে কাটানোর জন্য বললো,
–“আমার এত লড়াই করার শক্তি নেই। শ্বশুড়ের মেয়ে নিয়ে আগে ভাগে পালাবো। এক বছর পর বাচ্চা নিয়ে ফিরে শ্বশুড়ের সামনে বলবো, আব্বাজান নাতি-নাতনি তো হয়েই গেছে। আর রাগ করে কি করবেন?”
সাফওয়ানের কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতেও সবাই হেসে দিলো। এরপর তিন বন্ধু গেল নক্ষত্রের রুমের দিকে। সাফওয়ান নক্ষত্রের রুমের দরজাতে নক করলো৷ নক্ষত্র ওদের আসতে বলে, তিতিক্ষার হাতে ক্রিম লাগাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। রুহান মুচকি হেসে বললো,
–“উহুম! উহুম! বউয়ের সেবা করা হচ্ছে? বিয়ে তো হয়ে গেল। রুমটা তো সাজাতে হবে, তাই না? অফটার অল ফাস্ট নাইট বলে কথা।”
তিতিক্ষা মাথা নিচু করে নিলো। আফান রুহানের পিঠে থাবড় মেরে চেপে যেতে বললো। সাফওয়ান বললো,
–“রুমটা কি সাজিয়ে দিবো? নাকি বিনা ফুলে ফুলশয্যা সেরে ফেলবি।”
নক্ষত্র খুব ভালো করে বুঝতে পারছে, ওরা ওকে খোঁচাবো। এজন্য সে শান্ত গলায় বললো,
–“ভাবছি! তুই তোর গার্লফ্রেন্ডের শাড়ির কুচি ধরে হেঁটেছিস, ওই পিকটা আপলোড দিবো।”
কথাটা শুনে সাফওয়ান করুণ চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। বাকি সবাই হো হো করে হেসে দিলো। বেচারা সাফওয়ান আর কথা না বাড়িয়ে সোফাতে দুম করে বসে পড়লো। ওর ইচ্ছে ছিলো তিতিক্ষার সামনে নক্ষত্রকে খোঁচানো। কিন্তু নক্ষত্র একটা কথা বলেই ওর মুখ বন্ধ করে দিলো। একজন সার্ভেন্ট এসে দরজা নক করে তিতিক্ষাকে ডাকলো। নক্ষত্রের আম্মু নাকি তিতিক্ষাকে ডাকছে। তিতিক্ষা উঠে দাঁড়ালো। নক্ষত্র ওকে সাবধানে পা ফেলে যেতে বললো। নক্ষত্র বেডে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে বললো,
–“আমাকে ফ্রেশ হতে সাহায্য কর। পা’টা ব্যাথাতে নড়ানো যাচ্ছে না।”
সাফওয়ান সোফাতে সাহেবী স্টাইলে বসে সব দাঁত বের করে বললো,
–“শালা এতক্ষণ বউয়ের সামনে তো ঠিকই হিরোর মত বসে ছিলে। আমরা আসলাম আর এখন ব্যথা শুরু হয়ে গেলো। পরীক্ষা দেওয়ার আগেই এই অবস্থা।”
আফান ভ্রু কুঁচকে সাফওয়ানকে বললো,
–“আজকে তো কম পরীক্ষা দিলো না। তুই আবার কোন পরীক্ষা দেওয়ার কথা বলছিস?”
নক্ষত্র সাফওয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। সাফওয়ানের মুখে শয়তানি হাসি। রুহান আর আফান মিটিমিটি হাসছে। সাফওয়ান চোখ টিপ মেরে বললো,
–“ওই যে ওই পরীক্ষা। যে পরীক্ষাটা দেওয়ার সময় কেউ কাউকে শিখিয়েও দেয় না, বলেও দেয় না। নিজে থেকে যা পারো সবটা লিখো।”
সাফওয়ানের কথা শুনে রুহান সাফওয়ান আর আফান হো হো করে হেসে হাইফাইফ করলো। নক্ষত্র ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“তুই দিন দিন শেমলেস হয়ে যাচ্ছিস। আমারও দিন আসবে ওয়েট কর।”
আরেকদফা হেসে আফান আর রুহান নক্ষত্রকে ফ্রেশ হতে সাহায্য করলো। আরেকটা সার্ভেন্ট এসে ওদের কফির সাথে নাস্তা দিয়ে গেল। নক্ষত্র পা টান টান করে শুয়ে আছে। আফান নক্ষত্রকে পেইন কিলার দিলো। তিনজনে মিলে নক্ষত্রকে খুব পচালো। এরপর নিজের খেয়াল রাখতে বলে ওরা চলে গেল। তবে যাওয়ার আগে নক্ষত্রকে চোখ মেরে বেস্ট অফ লাক বলে গেল। নক্ষত্র বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। তিতিক্ষা সে যে গেছে এখনো আসেনি। এতক্ষণ কি করছে কে জানে?
শরীরটাও খুব ব্যাথা করছে। নক্ষত্র চোখের উপর একহাত দিয়ে শুয়ে আছে। এভাবে থাকতে থাকতে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে।
মামনি বিভাকে বারবার করে নিষেধ করে দিয়েছে; প্রেম-ভালবাসা যেন না করে। উনি কোনদিনও বিভার এনগেজমেন্ট করে রাখবেনা না। সরাসরি বিয়ে দিবে বলে ভেবে রেখেছেন। নবিন নেই, তনুকা নেই, তিতিক্ষাও নেই; বাসাটা কেমন যেন লাগছে। নবিনের আব্বু মামনির সাথেও ঠিকমত কথা বলে না। বিভা, আহান আগের মত ঝগড়া করে না। সবটা শান্ত হয়ে গেছে। তবুও কিছু ভালো লাগছে না, শান্তি পাচ্ছে না। তিতিক্ষার আব্বু-আম্মুও মামনির ফোন ধরে না। পরিস্থিতি আস্তে আস্তে ঠান্ডা হবে। এক এক করে দিন কাটতে থাকে। হয়তোবা কোনো একদিন নিজেদের কাজের জন্য সবার মাঝেই অপরাধ বোধ কাজ করবে। তবুও হয়তো কেউ কাউকে ধরা দিবে না। ইগোর কাছে হার মেনে সেটা প্রকাশও করবে না।
প্রায় এক সপ্তাহ পর…..!!
নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষার সাথে আগের মতো করে কথা বলে। দু’জনে একসাথে ঘুরতে যাওয়া, শপিং করা, সিরিয়াল দেখা, ছাদে গল্প করা এসব করেই ওদের সময় কাটায়। উনি আর তিতিক্ষার মন খারাপের সুযোগ দেয় না। সময় না কাটলে দু’জনে বসে রুপচর্চা করে। এই নিয়ে নক্ষত্র আর মিঃ আবরার ওদের কম পচায়নি। অদ্রি ওর আম্মুকে দুই বার ফোন দিয়েছে। উনি কোন কথা বলেনি। ধীরে ধীরে বরফ গলবে, তবে সময় লাগবে। নবিনের আর অদ্রির সাথে তিতিক্ষার কথা হয়। নক্ষত্র দেখছে ওদের সাথে বলতে তাও কিছু বলেনি। তিতিক্ষার অনুরোধে নক্ষত্র অদ্রির সাথে কথা বলেছে। বোনের কান্না দেখে সে অভিমান করে থাকেনি। নক্ষত্র এখন সুস্থ হয়ে গেছে। নক্ষত্রও ওর আম্মুর সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে। বাসাটা দিন দিন প্রাণের অস্তিত্ব ফিরে পাচ্ছে। তনুকা, আহান একবার এসে তিতিক্ষার সাথে দেখা করে গেছে। মাঝে মাঝে রুহান, সাফওয়ান জেসিকা, সোনালী চলে আসে আড্ডা দিতে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। এভাবেই দিন গুলো কাটছে। তিতিক্ষা আলাদা একটা নম্বর থেকে ওর আব্বু-আম্মুকে ফোন দিয়েছিলো। তিতিক্ষা চুপ করে ছিলো। তবুও ওর আব্বু বুঝে গেয়েছিলো এটা তিতিক্ষা। হয়তো এটাকেই বলে বাবা-মেয়ের টান। তিতিক্ষার ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ পেয়ে উনি শান্ত কন্ঠে বলেছিলো,
–“যার কাছে ভালো থাকবে বলে আমাদেরকে ত্যাগ করেছো, তাকে নিয়েই ভালো থেকো। আমাদেরকে আর ফোন কোনো দরকার নেই।”
নক্ষত্র কেবল বাসায় ফিরলো। বাসায় ঢুকে ফ্রিজ খুলে ঠান্ডা পানির বোতলটা নিয়ে পানি খেলো। ওর আব্বু-আম্মু সোফাতে বসে ছিলো। নক্ষত্রও উনাদের কাছে গিয়ে বসলো। নক্ষত্রের আব্বু বললো,
–“আব্বু তিতিক্ষাকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে এসো। অন্য পরিবেশ গেলে ওর মনটা ভালো হবে।”
–“কিন্তু আমার তো হাতে অনেক কাজ। কালকে আমাকে ঢাকাতে যেতে হবে। দুই সপ্তাহের মত খুব বিজি থাকবো।” (নক্ষত্র)
–“বেঁচে থাকলে জীবনে অনেক কাজ করার সময় পাবে। এখন কাজটাকে সাইডে রেখে তিতিক্ষাকে সময় দাও।” (আব্বু)
–“তাহলে তোমরাও চলো আমাদের সাথে। চারজনে মিলে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।”
–“ছেলে আর ছেলের বউ যাবে ঘুরতে, আমরা নাকি ওদের সাথে যাবো। আব্বু তোর বুদ্ধি গুলো কি হাঁটুর নিচে চলে গেছে নাকি? তোরা যা, পরের বার একসাথে যাবো।” (আম্মু)
–“ওকে।”
নক্ষত্র আর কথা বাড়ালো না। ড্রায়নিং থেকে একটা আপেল তুলে নিয়ে খেতে খেতে রুমে চলে গেল। নক্ষত্রের বলা কথাটাতে ওর আব্বু-আম্মুও খুশি হলো। যাক বা না যাক, ছেলে যে মুখ ফুটে বলেছে তাতেই খুশি। সত্যি বলতে নক্ষত্রের হাতে আপাতত কোনো কাজ নেই। যেগুলো আছে সেগুলো পরে করলেও চলবে। আব্বু-আম্মু বউকে নিয়ে একবার ঘুরতে যাওয়ার কথা বলাতেই তো আর সাথে সাথে রাজি হওয়া যায় না। উনারা ভাববে ছেলে বউ পাগল হয়ে গেছে। এজন্য একটু অজুহাত দেখালো। সাথে উনাদের যাওয়ার কথাও বললো। বুদ্ধিমান ছেলে তো, এজন্য এক ঢিলে দুই পাখি মেরে দিলো। আব্বু-আম্মুও খুশি, ঘুরতেও যাওয়ার কথা শুনে বউও খুশি।
তিতিক্ষা রুমে বসে নক্ষত্রের শার্ট আইরণ করলো। শার্টগুলো ওয়্যার্ডড্রপে তুলে রাখলো। আইরণটা ঠিক জায়গায় রেখে রুমে থেকে বের হতেই নক্ষত্রের সাথে ধাক্কা খেলো। নক্ষত্র ইচ্ছে করে ধাক্কা লাগালো। আগে বাসায় আসলে শুন্য রুমে ঢুকতো। আর এখন পুন্য রুমে ঢুকে। কারো সিগ্ধ মায়াবী মুখটা দেখে সব কষ্ট, ক্লান্তি এক নিমিষেই দূর হয়ে যায়। একথা ভেবে নক্ষত্র মুচকি হাসলো। আপাতত হাসিটা কনট্রোল করে ধাক্কা খেয়ে তিতিক্ষাকে বললো,
–“তা গঙ্গাফড়িংয়ের মত লাফাতে লাফাতে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?”
–“আব্বু-আম্মু নিচে আছে। আমিও এখন নিচেই যাচ্ছিলাম।”
–“আমি বাসায় আসলাম। আর ওমনি আপনার অজুহাত শুরু হয়ে গেলো। আমি থাকাকালীন রুম থেকে বের হলে আপনার তো আর দেখাও মিলে না। এখন নিচে যেতে হবে না। আমার জামা কাপড় গুছিয়ে রাখুন। আমি দুই সপ্তাহের জন্য বাইরে যাচ্ছি।”
বাইরে যাওয়ার কথা শুনে তিতিক্ষার মুখটা চুপসে গেল। নক্ষত্র চলে গেলে ও কিভাবে থাকবে? তিতিক্ষার চোখে পানি ছলছল করছে। কথাটা শুনে ওর মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে আসছে। সত্যি সত্যি ওকে রেখে গেলে একা রুমে থাকবে কিভাবে? তিতিক্ষার এখন হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
নক্ষত্র ওয়্যার্ডড্রপের কাছে গিয়ে মনে মনে বললো,
–“এমন ভাবে বউকে জ্বালাতন করাও মাঝেও অসীম সুখ বিদ্যামান আছে। বাহ্! দারুণ এক সুখানুভূতি তো।”
নক্ষত্র কোন কোন ড্রেস নিবে, সেগুলো বের করে তিতিক্ষার হাতে দিচ্ছে। আর তিতিক্ষা সেগুলো একটা ট্রলিতে গুছিয়ে রাখছে। মাঝে মাঝে নাক টানার শব্দ হচ্ছে। তিতিক্ষার অবস্থা দেখে নক্ষত্র মিটিমিটি হাসছে।
To be continue….!!