#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_17
ভোরের আজান দিচ্ছে। তিতিক্ষা ওর কান থেকে ইয়ারফোন খুলে রাখলো। আর আজানের সুরটা মনোযোগ দিয়ে শুনলো। আজান শেষ হয়ে গেলো। তিতিক্ষা এখনো চুপ করে শুয়ে আছে। নক্ষত্রের মুচকি হাসি, আদুরে কথা, ওকে রাগানো, লজ্জা দেওয়া, এসব কথা আবার মনে পড়ে গেল। তিতিক্ষা মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললো,
–“আল্লাহ! আমার পাগলটাকে সব বিপদের হাত থেকে রক্ষা করো। পৃথিবীর সব সুখ দিয়ে ভরিয়ে দিও ওর জীবন। আর সব সময় ওর মুখের হাসিটা বজায় রেখো।”
তিতিক্ষা বেড থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো। তিতিক্ষা ওর মোনাজাতে নক্ষত্রের জন্য মন থেকে দোয়া করলো। নামাজ পড়ে, ফোনটা চার্জে দিয়ে, দরজা হালকা করে লাগিয়ে তিতিক্ষা শুয়ে পড়লো। সকাল সাড়ে আটটার দিকে বিভার ডাকে তিতিক্ষার ঘুম ভাংলো। আহান দৌড়ে এসে তিতিক্ষার ব্ল্যাঙ্কেটের মধ্যে ঢুকে গেল। বিভাও আর না দাঁড়িয়ে সেও শুয়ে পড়লো। শীতটাও বেড়েছে আর সকাল বেলা ব্ল্যাঙ্কেট ছেড়ে উঠাটাও যেন কষ্টসাধ্য। শীতকালে ব্ল্যাঙ্কেটই যেন জীবন-মরন। এটাই সবার নিত্য সঙ্গী। তিতিক্ষা আহানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। ইস! কত দিন পর তিতিক্ষা আহানকে দেখছে। বাসার সবচেয়ে ছোট সদস্য। এজন্য ওর ভাগে ভালবাসাটাও একটু বেশি। তিতিক্ষা আহানের গালে আদর দিলো। আহানও তিতিক্ষার গলা জড়িয়ে ধরলো।
আহান শুয়েছে ওদের দু’জনের মাঝখানে। বিভা তিতিক্ষাকে ওখানে কি করলো, না করলো এসব জিজ্ঞাসা করছে। তিতিক্ষা হেসে হেসে সে গুলো বলছে। বিভা আর আহান তিতিক্ষার ফোনটা নিয়ে নক্ষত্রের সাথে ওদের বেড়ানোর পিক গুলো দেখছে। তিতিক্ষার মুখে এত কিছু শুনে বিভা তো নক্ষত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ওদের কথার মাঝখানে হঠাৎ আহান উঠে দৌড়ে চলে গেল। আহান যাওয়ার ৫ সেকেন্ডের মধ্যে তিতিক্ষার আর বিভাও নাক চেপে ধরে বেডে ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। ফাজিল আজকেও একই কাজ করেছে। বিভা তো পারছে না আহানকে গিলে খেতে। এই ফাজিলটার জন্য শান্তিমত শুয়ে বসে থাকাও যায় না। বিভা আর তিতিক্ষা অসহায় চোখে দু’জন দুজনের দিকে তাকালো। আহান ওদের শুয়ে থাকার ইচ্ছেটাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিলো। আর বিভা আর তিতিক্ষার এভাবে উঠে দাঁড়ানোর কারণ আহান ব্ল্যাঙ্কেটের ভেতরে সর্তকতার সাথে বায়ু দূষণ করে পলায়ন করেছে। আর বায়ু দূষণের সাইড ইফেক্ট পুরো ব্ল্যাঙ্কেটে ছড়িয়ে গিয়েছে।
এজন্যই আর শুয়ে থাকার চিন্তা বিভা বা তিতিক্ষার কেউই করতে পারছে না।
অদ্রি কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। এই কয়েকদিন নোট গুলো ওর কালেক্ট করতে হবে। নক্ষত্রের আব্বু-আম্মু ড্রয়িংরুমে বসে আছে। নক্ষত্র কালকে রাতে বাসায় ফিরেনি। তবে রাতেই ওর আব্বুকে ফোন দিয়ে বলেছে, ও কোনো একটা কাজে যাচ্ছে। ওর সাথে রুহান আর সাফওয়ানও যাচ্ছে। মিঃ আবরার আর কিছু বলেনি। কারণ মাঝে মাঝে বন্ধুদের নিয়ে গায়েব হওয়া ওর পুরনো অভ্যাস। নক্ষত্র ওর ফোনটা ইচ্ছে করেই সুইচ অফ করে রেখেছে। এখানেও হয়তো কোন কারণ আছে।
নক্ষত্র আপাতত ওদের বাংলো বাড়িতে আছে। এই কথাটা কাউকেই সে জানায় নি। মন খারাপের দিনগুলোতে মাঝে মাঝে নিজেকে সময় দিতে ও এখানে আসে। তিনজন মিলে এখানে কয়েকদিন থাকবে বলে ঠিক করে। সাফওয়ান, রুহান আর নক্ষত্র বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। এখন বাজে সকালে ১১ টা ২৩; তবুও এদের উঠার নাম নাই। ১২ টার দিকে নক্ষত্র আর রুহান উঠে খাবার অর্ডার করে খেয়ে নিলো। রুহান এতবার ডেকেও সাফওয়ানকে তুলতে পারলো না। অবশেষে রুহান সাফওয়ানের প্যান্ট ধরে টানাটানি করতে লাগলো। এতেও সাফওয়ানের কোন বোধগম্য হলো না। বরং সে শান্ত সুরে বললো,
—“তুই কি আমার ইজ্জত লুটতে চাচ্ছিস? তাহলে ভালো করেই লুট। এই প্যারাময় জীবন নিয়ে আর বাঁচতে ইচ্ছে করছে না।”
এই কথা বলে সে আবার ঘুমিয়ে গেল। রুহান অসহায় চোখে নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্র চুপ করে ওদের কান্ড দেখছে। রুহান আবার সাওয়ানকে গুঁতো দিয়ে বললো,
–“তোর লজ্জা করছে না আমাকে তোর ইজ্জত লুটতে বলছিস? শালা তুই আসলেই নির্লজ্জ।”
সাফওয়ান এবারও চোখ বন্ধ করে বললো,
–“লজ্জা? সেটা আবার কি? খায় নাকি মাথায় দেয়। আচ্ছা শোন, আমার প্যান্টটা তোর পছন্দ হলে খুলে নে। শুধু শুধু এভাবে টানানটানি করে আমাকে বিরক্ত করিস না। আমাকে একটু ঘুমোতে দে ভাই।”
রুহান হাল ছেড়ে দিয়ে বসে পড়লো। নক্ষত্র উঠে ফ্রীজ খুলে আইস কিউব নিয়ে আসলো। এরপর রুহানকে ইশারা করতেই রুহান সবটা বুঝে গেলো। নক্ষত্র মিটিমিটি হেসে আবার সোফাতে গিয়ে বসলো। এমন ভাব করলো যেন সে কিছুই জানেনা।
একটু পরেই সাফওয়ান হুড়োহুড়ি করে বেড থেকে উঠে দাঁড়ালো। রুহান আর নক্ষত্র সাফওয়ানের কান্ড দেখে হো হো করে হেসে দিলো। রুহান সাফওয়ানের প্যান্টের ভেতর আইস কিউব ঢুকিয়ে দিয়েছে। শীতের মধ্যে প্যান্টের ভেতর তো আর আইস কিউব নিয়ে শুয়ে থাকা যায় না। এজন্য সাফওয়ানকে অগত্য বেডে ছেড়ে উঠতেই হলো। সাফওয়ান রেগে ওদের গালি দিয়ে বললো,
–“শালা হারামিরা তোরা কি মানুষ হবি না? আমার সাদের ঘুমটার সাথে তোদের এত শত্রুতা কিসের বলবি?”
নক্ষত্র আর রুহান চুপ করে আছে। ওরা এমন ভাব ধরে আছে, যে ওরা এসববের কিছু জানেই না। সাফওয়ান রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বললো,
–“শালা তোদের বদদোয়া দিলাম। তোদের বাসর রাতে তোদের বউ তোদের মান ইজ্জত লুটে নিবে।”
সাফওয়ানের কথা শুনে নক্ষত্র আর রুহান হাসতে হাসতে একসাথে বলে উঠলো,
–“আমিন।”
সাফওয়ান ওদের সাথে না পেরে গালি দিতে দিতে ওয়াশরুমে চলে গেল। রুহান আর নক্ষত্র হাসতে থাকলো। ওরা বেচারাটাকে একটু শান্তি মত ঘুমোতেও দিলো না। সাফওয়ান ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিলো। নক্ষত্র আর রুহান দুজনেই ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। একটু পর সাফওয়ানের কাছে ফোনের পর ফোন আসতেই থাকলো। সাফওয়ানের ফ্রেন্ড সার্কেলের ফ্রেন্ডরা সাফওয়ানকে ফোন দিতেই আছে। সাফওয়ান তো খুব ভাব নিয়ে কলটা রিসিভ করলো। এরপর যা শুনলো ওর পিলে চমকে উঠলো। সাফওয়ানের তাকানো দেখে নক্ষত্র আর রুহান আস্তে করে উঠে দাঁড়ালো। এরপর দু’জনেই দৌড় দিলো। এখন ওদের ধরতে পারলে সাফওয়ান গিলে খাবে। কারণ শ্রী-পুর চা বাগানে জেসিকার হ্যান্ড ব্যাগ ঝুলানো সাফওয়ানের সেই পিকটা নক্ষত্রের কথা মত রুহান ফেসবুকে আপলোড করেছে। তাও আবার ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাইকে ট্যাগ করে। বেচারা সাফওয়ানের এখন ইজ্জতের দফারফা। সে পারছে না চিৎকার দিয়ে কাঁদতে।
তনুকা আর রায়হানের বিয়ের ডেট ঠিক হয়ে গেছে। এই নিয়ে বাসাতে হৈচৈ হচ্ছে। বিভা আর তিতিক্ষার তো সব প্ল্যান করা শেষ। মামনি বিয়ের কার্ড অলরেডি বিলানো শুরু করে দিয়েছে। নবিন বাসায় এসেছে ছুটি নিয়ে। মামনির মেয়ের বিয়ে বলে কথা; এজন্য উনি পার্লারে গিয়ে রুপচর্চাও করছে। মেয়ের মা একটু বেশি চকচক না করলে হয়! আহান বিয়ের পাঁচটা কার্ড নিলো। ওর বন্ধুদের ইনভাইট করবে তাই। মামনি নক্ষত্রকে ফোন দিলো, কিন্তু সুইচ অফ দেখাচ্ছে। উনি নক্ষত্রের আম্মুকে ফোন দিয়ে বিয়ের কথা জানালো। আজকে সকালে তিতিক্ষার ফোনে নক্ষত্রের কোনো মেসেজ আসেনি। তিতিক্ষা রেডি হয়ে ইউনিভার্সিটিতে গেল। একটা ক্লাস করে বিভা আর তিতিক্ষা শপিংমলে গেল। প্রয়োজনীয় কিছু কেনা কাটা করে দু’বোন বাসায় ফিরলো। সন্ধ্যার দিকে সবাই মিলে আড্ডাতে বসেছে। নবিন বললো,
–“তনুকা রায়হানরা কি কমিউনিটি সেন্টার বুক করেছে? সব কিছু কি ওদের এ্যারেঞ্জ করা শেষ?”
–“জ্বি ভাইয়া।”
আহান বিভার কাছে অনেকক্ষণ ধরে ঘুরঘুর করছে। কারণ সে এখন বিভার ফোনটা নিবে। বিভার আজকে সকালের কথা মনে করে আহানের পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে দিলো। আহান বিভার চুল ধরে মারামারি শুরু করে দিলো। নবিন এসে আহান থামালো। বিভা নবিনকে বলে দিলো আহান সকালে কি করেছে? এমন বেয়াদবি করার জন্য নবিন আহানকে বকলো। আর এমন করলে মার খাবে এটাও বললো। এই কথা শুনে আহান চিৎকার করে নবিনকে বলে উঠলো,
–“ভাইয়া আমাকে একদম বকবে না। আমি তো ছোট ছোট দুইটা দিয়েছি। আর তুমি যে ইয়া বড় বড় দাও। পুরাই এক একটা নদীর সমান।”
আহানের কথাটা ড্রয়িংরুমের যেন বিষ্ফোরিত হলো। কয়েক সেকেন্ড সবাই চুপ হয়ে গেল। এরপর নবিন বাদে সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। বিভা আর তিতিক্ষা হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পড়লো। নবিন অগ্নি দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। তনুকা মুখে ওড়না দিয়ে না হাসার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু তার চেষ্টা বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। আহান নবিনের তাকানো দেখে সে চুপটি করে সোফাতে বসলো। বিভা আর তিতিক্ষার হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। বড় ভাইবোনের ইজ্জতের ফালুদা করতে বাসার কনিষ্ঠ সদস্যরাই যথেষ্ট। নবিনের বকুনিতে দু’জনেই কোনমতে হাসা থামালো। তখনই মামনি বিয়ের কার্ড এনে যার যার ফ্রেন্ডকে ইনভাইট করতে বললো। মামনি তিতিক্ষাকে বললো,
–“তিতিক্ষা সকাল থেকে নক্ষত্রের ফোন বন্ধ কেন? নক্ষত্র এখন আমাদের বাসার জামাই,ওকে আগে থেকে না বললে হয়। তোকে ফোন দিলে বলিস আমি ওর সাথে কথা বলবো।”
তিতিক্ষা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো। নক্ষত্রের ফোনটা বন্ধ তিতিক্ষার জানা ছিলো না। কারণ তিতিক্ষা নক্ষত্রকে ফোন দেয়নি। সকাল থেকে নক্ষত্র ফোন বন্ধ? ব্যাপারটা নিয়ে তিতিক্ষাকে অন্যমনস্ত দেখে, নবিন তিতিক্ষার মাথায় ঠুয়া মারলো। তিতিক্ষা মাথায় হাত বুলাতে বুলতে নবিনের দিকে তাকালো। নবিন হাসতে হাসতে বললো,
–“বরের ফোন বন্ধের কথা শুনে মুখটা চুপসে গেলো।তুই তে দেখছি বরপাগল হয়ে গেছিস। যদিও হওয়ার কথায় ছিলো।”
বিভা ফট করে বলে উঠলো,
–“কেন ভাইয়া? হওয়ার কথা ছিলো বললে কেন?”
নবিন তিতিক্ষার দিকে তাকালো। বিভা, তনুকা আর আহান নবিনের দিকে তাকিয়ে আছে। নবিন ভাব নিয়ে বসে অভিজ্ঞদের মতো করে বললো,
–“যে ছেলের নাক ঘামে তার বউ নাকি বর পাগলী হয়। আমি নাহিয়ানের নাক ঘামতে দেখেছি। এখন কথা হচ্ছে, বউয়ের ভালবাসার চোটে সে পাবনার মেন্টাল হসপিটালের বাসিন্দা না হলেই হয়।”
নবিন কথাটা শেষ করেই ওখান থেকে স্থান ত্যাগ করলো। তিতিক্ষা নবিনের কথা শুনে চুপ করেই আছে। বড় ভাইকে তো কিছু বলাও যাচ্ছে না। তবে নবিনের কথা শুনে খুব লজ্জা পেলো তিতিক্ষা। নক্ষত্রের যে খুব নাক ঘামে এটা তিতিক্ষাও খেয়াল করেছে। সিলেটে ঘুরাঘুরির সময় তাকে বার বার টিস্যু দিয়ে নাক মুছতেও দেখেছে। তাই বলে সে নাকি বর পাগলী? এই ব্যাপারটা ভাবলেই ওর খুব লজ্জা লাগছে। নক্ষত্রের নাক ঘামে তো কি হয়েছে ? তাই বলে অবশেষে কি না বরপাগলীর খেতাব।
বিভা, আহান আর তনুকা হো হো করে উচ্চ শব্দে হাসছে। তিতিক্ষার মুখটা লজ্জাতে লাল হয়ে গেছে। বিভা তো হাসির চোটে কথাও বলতে পারছে না।
তিতিক্ষা ওখানে আর না থেকে ওর রুমে চলে গেলো। এখানে থাকলে এরা ওকে লজ্জা দিয়েই যাবে। রাতের খাবার খেয়ে তিতিক্ষা নক্ষত্রকে নিজে থেকেই ফোন দিলো। কিন্তু নক্ষত্রের ফোনটা এখনো সুইচ অফ বলছে। তিতিক্ষা বেশ কয়েকবার ট্রাই করলো কিন্তু লাভ হলো না। মন খারাপ করে নক্ষত্রের গানটা শুনছে আর ওর পিক গুলো দেখছে। নক্ষত্রকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে সে একটা সময় ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।
দুই দিন পর…….!!
তিতিক্ষার এখন খুব ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। ইউনিভার্সিটি, পড়াশোনা, তনুকার বিয়ের শপিং, বিয়ে উপলক্ষে করা নিজেদের করা প্ল্যান; এসব নিয়েই দিন কাটছে। এতকিছুর মাঝেও তিতিক্ষা মন খুলে হাসতে পারেনি। অজানা এক কারণে নক্ষত্র এই দুই দিন তিতিক্ষার সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। তিতিক্ষা প্রতিটা সেকেন্ড ফোন চেক করেছে। কিন্তু নক্ষত্রের না এসেছে একটা কল, আর না এসেছে কোনো মেসেজ। এই দুইদিন তিতিক্ষা অস্থির হয়ে আছে। শুধু একটাবার নক্ষত্রের সাথে একটু বলার জন্য। তিতিক্ষা অদ্রিকেও ফোন করেছিলো, নক্ষত্রের খোঁজ জানার জন্য। কিন্তু লজ্জাতে তাকেও কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেনি। অদ্রি তিতিক্ষার অবস্থা বুঝতে পেরে নিজেই বলেছে, নক্ষত্র দুইদিন ধরে বাসায় ফিরেনি। এটা শুনে তিতিক্ষার মাথাতে হাজার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। রাতে কোনো রকম একটু খেয়ে এসে শুয়ে পড়েছে। নক্ষত্রের চিন্তায় সর্বক্ষণ ওর মাথাতে ঘুরছে।
রাত প্রায় ১ টার দিকে নবিন তিতিক্ষার দরজাতে নক করলো। তিতিক্ষার শুয়ে থেকেই জিজ্ঞাসা করলো।
–“কে?”
নবিন বললো,
–“তিতু তুই কি শুয়ে পড়েছিস?”
–“জ্বি ভাইয়া। কিছু লাগবে তোমার?
–“ওহ আচ্ছা। না থাক, তুই ঘুমা।”
–“আচ্ছা।”
নবিন চলে যাওয়া পর তিতিক্ষা আবার বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো। আবার ওর বেহায়া চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। কেন জানি ওর কিচ্ছু ভালো লাগছে না। নক্ষত্রের এমন করার পেছনে কি কারন থাকতে পারে? তিতিক্ষার এবার নক্ষত্রের উপর বড্ড অভিমান হচ্ছে। এমন লুকোচুরি করার মানে কি?
তিতিক্ষা ওর চোখের পানি মুছে কান্নামাখা সুরে বললো,
–“একটাবার কি আমার কথা মনে পড়ে না? একটা বার কি আমাকে ফোন দেওয়া যায় না? এত নিষ্ঠুর কেন আপনি?”
পরেরদিন সকালে…….!!
আজকে তনুকার গায়ে হলুদ। তিতিক্ষা ওর মন খারাপের অধ্যায়টাকে আড়ালে লুকিয়ে ফেললো। বাসায় কাউকেই বুঝতে দেওয়া যাবে না যে, ও বরের বিরহে গভীর শোকে আছে। এমনিতেই বরপাগলের খেতাব পেয়েছে। আর এটা কাউকে জানলে তো তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।
সকালবেলা বিভা আর আহানের অত্যাচারে ওর ঘুমের দফারফা হয়ে গেছে। তবে ষএকটা অঘটন ঘটে গেছে। রায়হানরা ওদের গায়ের হলুদ আর বিয়ের জন্য যে কমিউনিটি সেন্টার বুক করেছিলো, সেই সেন্টারের কতৃপক্ষ সব বুকিং ক্যাসেল করে দিয়েছে। এই নিয়ে বাসার সবার মুখে চিন্তার ছাপ। এমন কথা শুনে তিতিক্ষার এই সকাল বেলাতে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। মামনি আইস ব্যাগ মাথাতে নিয়ে বসে আছে। টেনশনের উনার মাথায় আগুন জ্বলে যাচ্ছে।
To be continue…!!
(রেসপন্স বাড়ছে না। কি করা যায়? গল্প দেওয়া বন্ধ করে দিতে ইচ্ছে করছে।)