#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_23
নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষাকে একটা রুমে নিয়ে গেল। একটু পর অনুষ্ঠান শুরু হবে। মিঃ আবরার রেডি হয়ে বাগানে উপস্থিত হলেন। উনার বিজনেস পার্টনাররা এখানে উপস্থিত। তাদের সাথে উনি এখন কথা বলছেন। নক্ষত্ররা চেয়ার পেতে বসে আড্ডা দিচ্ছে। একটু পর পর নক্ষত্র বাসার দিকে তাকাচ্ছে। সেই কখন তিতিক্ষা বাসায় ঢুকেছে, এখনো বের হওয়ার নাম নেই। পানি খাওয়ার নাম করে নক্ষত্র এর আগে একবার দেখেও এসেছে। নক্ষত্রের আম্মু, তিতিক্ষা, অদ্রি একটা রুমের মধ্যে ঢুকে কি করছে, আল্লাহ মালুম। তিতিক্ষাকে আজকে এখানে নিয়ে আসার কারণ হলো, তিতিক্ষাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। অনেকে মানতেই চায় না, নক্ষত্রের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। নক্ষত্রের আব্বুর কাছে নক্ষত্রের জন্য অহরহ বিয়ের প্রস্তাব আসে। এজন্য আজকে এখানে তিতিক্ষার আগমন ঘটেছে।
নক্ষত্র আর একবার বাসায় ঢুকলো। ওর আম্মুরা যে রুমে আছে। ওই রুমে নক করে বললো,
–“আম্মু কি করছো তোমরা? তারাতাড়ি এসো। আব্বু তোমাকে ডাকছে।”
–“আব্বু একদম মিথ্যা কথা বলবি না। আমরা আসছি একটু পর। তুই যা।”
–“আম্মু তিতিক্ষা কি রুমে আছে?”
–“না নেই। তোর বউকে আমি বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন যা তুই।”
–“আমার বউটাকে আমাকে দিয়ে দাও। আমি চলে যাচ্ছি। ”
–“ফাজিল ছেলে এখন জ্বালাবি না। না হলে তোর বউয়ের সামনে তোর কান মুলে দিবো।”
–“না থাক, লাগবে না। তোমরা তারাতাড়ি এসো, আমি যাচ্ছি।”
অদ্রি আর নক্ষত্রের আম্মু হাসছে। তিতিক্ষা মাথা নিচু করে আছে। এই ছেলেটাকে দেখে মন হয় কথায় জানে না। কিন্তু সে যে এতটা ফাজিল, তা বলার বাইরে। এর মাঝে কি লজ্জার ল ও নাই। ইস! কি লজ্জা। আম্মুর সাথে কেউ এভাবে কথা বলতে পারে? অদ্রি, নক্ষত্রের আম্মু আর তিতিক্ষা বের হলো। বাগানে সবাই বসন্তের ড্রেসে পরিহিত। নক্ষত্রের আম্মু, অদ্রি, তিতিক্ষাও আসলো বসন্তের সাজে নিজেদের সজ্জিত করে।
আজকে বসন্ত উৎসবে মুখোরিত চারপাশ। হিমেল হাওয়া বইছে অথচ তপ্ত নয়। আবার তপ্ত বাতাস অথচ হিমেল নয়। এক অপূর্ব অনুভুতির হাওয়া প্রকৃতিতে বয়ে চলে, পুরো বসন্ত জুড়ে। ফাল্গুনের প্রথম প্রহরে উপস্থিত মানুষ গুলোর নাচে, গানে, বাগানটা মুখরিত করে হয়ে উঠেছে। এত এত আয়োজনে বরণ করে নিচ্ছে বসন্তকে। বাঙ্গালী সংস্কৃতিতে বৈশাখের পরেই পহেলা ফাল্গুনের জনপ্রিয়তা সবচাইতে বেশি। এজন্য এত আয়োজন।
নক্ষত্রের আম্মু, অদ্রি আর তিতিক্ষা বাসন্তি রংয়ের শাড়ি পড়ে বাগানে উপস্থিত হলো। তিনজনেই এক সাথে হেঁটে আসছে। সবার নজর এখন ওদের দিকে।
তিনজনের খোঁপাতে কাঠবেলীর মালা। বাসন্তী রঙের চওড়া সবুজ পাড়ের শাড়ি। সিম্পল সাজেও গর্জিয়াস লাগছে ওদের। সাফওয়ান আর রুহান তো সিটি বাজানো শুরু করলো। নক্ষত্রের আম্মু ওদের দিকে তাকিয়ে মার দেওয়ার ইশারা করলো। মা, বোন, বউকে দেখে নক্ষত্রের মুখে হাসি ফুটলো। তিনজনের সাজ, ড্রেসআপ এখানকার সবার থেকে ভিন্ন। আর্কিট্রেক্ট নাহিয়ান আবরারের মা, বোন, বউ বলে কথা। তাদের একটু ভিন্ন সাজে উপস্থিত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
নক্ষত্রের আব্বু তিতিক্ষাকে উনার পাশে দাঁড় করালো। তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে, মুচকি হাসি দিয়ে এনাউন্স করার জন্য মাইক্রোফোন হাতে নিলো।
নক্ষত্রের আব্বু নক্ষত্রকেও ডেকে নিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। দু’জনকে দেখে সবার মুখ দিয়ে একটা কথায় বের হলো; সেটা হলো মাশাল্লাহ। তিতিক্ষাকে শাড়ি আর নক্ষত্রকে পাঞ্জাবীতে মনে হচ্ছে, নতুন বর বউ। নক্ষত্রের আব্বু তিতিক্ষার দিকে তাকি বললো,
–“এই হলো তাবিয়া নুজহাত তিতিক্ষা। তিতিক্ষা আগে আমার আম্মু, পরে আমার পুত্রবধূ। আপনারা হয়তো জানতেন না, আমার ছেলে নাহিয়ান এনগেঞ্জড। এজন্য আজকে সবাইকে জানিয়ে দিলাম। সাথে পুত্রবধূকেও দেখিয়ে দিলাম।”
এতকিছু হবে তিতিক্ষা ভাবতেও পারেনি। মৃদুভাবে সে কাঁপছে। আজকে নিজেই অবাক হচ্ছে নিজের সৌভাগ্য দেখে। কতটা ভাগ্যবতী হলে কেউ এমন শ্বশুড়-শাশুড়ি পায়।
তিতিক্ষার চোখে কোণে পানি জমে গেছে। এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো ওর গাল বেয়ে। নক্ষত্র তখন ধীর কন্ঠে বললো,
–“মিসেস নাহিয়ান, আপনি কাঁদছেন কেন? শরীর খারাপ লাগছে?”
তিতিক্ষা মাথা নাড়িয়ে না বলে মুচকি হাসলো। সবাই ওদের অভিনন্দন জানালো। বড়রা একদিকে মজা করছে, ছোটরা আরেকদিকে। আবির দিয়ে সবাই সবাইকে রঙে রাঙিয়ে দিচ্ছে। তবে নক্ষত্র ও নিজে ছাড়া অন্য কাউকে তিতিক্ষাকে আবির লাগাতে দেয়নি। নক্ষত্র সিঁদুর লাল আবির নিয়ে তিতিক্ষার দুই গালে একটু করে লাগিয়ে দিয়েছে। তিতিক্ষা লজ্জায় নক্ষত্রকে দেয়নি। তবে বাকিরা আবির দিয়ে ভূত সেজেছে। সাফওয়ান, রুহান নক্ষত্রের অবস্থা দফারফা করে দিয়েছে।
সন্ধ্যা অবধি অনুষ্ঠান চললো। এরপর সবাই আস্তে আস্তে বিদায় নিলো। তবে যাওয়ার আগে তিতিক্ষাকে প্রায় সবাই কিছু না কিছু উপহার দিয়ে গেছে। নক্ষত্রের আব্বু, আম্মু, অদ্রি, তিতিক্ষা ফ্রেশ হয়ে এসেছে। নক্ষত্র রুহানকে এগিয়ে দিয়ে কেবল বাসায় ফিরলো। রুমে গিয়ে একেবারে শাওয়ার নিয়ে নিচে আসলো। নক্ষত্রকে রান্না ঘরে ঢুকতে দেখে সার্ভেট জিজ্ঞাসা করলো,
–“স্যার কিছু লাগবে?”
–হুম! আমি করে নিচ্ছি। আপনি যান।”
–“ওকে।”
নক্ষত্রের আব্বু আম্মু গল্প করছে। অদ্রি তিতিক্ষাকে ওদের পুরো বাসাটা ঘুরে দেখাতে নিয়ে গেল। অনেক বড় আর অসম্ভব সুন্দর করে বাসাটা সাজানো। নক্ষত্র নাকি নিজে এই বাসাটা সাজিয়েছে। আগে যেটাতে থাকতো, ওটা ভাড়া দেওয়া হয়েছে। নিচে পাঁচটা রুম, নিচের রুমগুলোতে সার্ভেন্টরা থাকে। দোতলায় ওরা সবাই থাকে। তিতিক্ষার বার বার চোখ আটকে যাচ্ছে দেয়ালের কালারের উপর বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন গুলোতে। অদ্রি ওর আব্বু আম্মুর রুমটাও ঘুরে দেখালো। সব শেষে ওকে নিয়ে গেল নক্ষত্রের রুমে। তিতিক্ষা বুঝতে পারছে না এটা রুম নাকি গড়ের মাঠ। রুমের মধ্য ঢুকে আরো দুইটা রুম। নক্ষত্রের আর্কিটেকচার সহ আরো বিভিন্ন জিনিস একটা রুমে। ওর পারসোনাল কাজের ঘর আর কি। সেটাও পরিপাটি করে সাজানো। এত বড় বড় রুমে একটু জায়গাও ফাঁকা নেই। রুচিসম্মত, আসবাবপত্র, রং, পেইন্টিং, সোফা থেকে শুরু করে আরো জিনিসে পরিপূর্ণ করা। জানালার পর্দা, বেডশীট থেকে শুরু সব নজর কাড়া। তিতিক্ষা মনে মনে বললো,
–“আর্কিট্রেক্ট সাহেবের পছন্দ আছে বলতে হবে। উনার পছন্দ আর পেশা দুটোই পারফেক্ট। ”
তিতিক্ষার সব চেয়ে মন কেড়েছে রুমের মধ্যে আলাদা করে নামাজের জায়গা দেখে। একদম নিরিবিলি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা নামাজের জায়গাটা। এখানে কোনো প্রকার পেইন্টিং নেই।
ছোট একটা আলনাতে দুইটা জায়নামাজ, ছোট একটা সেন্টার টেবিলে কুরআন আর তসবিহ্ রাখা। বড় বড় ফ্ল্যাটে এত এত জিনিস থাকলেও, নামাজের জায়গা থাকে না। তিতিক্ষা এর আগে দেখেনি এভাবে আলাদাভাবে নামাজে জায়গা রাখতে। এই ব্যাপারটা তিতিক্ষার খুব মন কেড়েছে। নামাজের প্রতি যত্নশীল না হলে এমন আইডিয়া মাথায় আসার কথা না। নক্ষত্র যতই মর্ডাণ, হাই সোসাইটির মানুষ হোক, সে যে নামাজের প্রতি খুব যত্নশীল, এটা বুঝতে পেরে তিতিক্ষার মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেল।
অদ্রির একটা ফোন এসেছে। এজন্য সে ওর রুমে চলে গেল। নক্ষত্রের বেডের সামনে একটা পিকের দিকে তিতিক্ষার নজর আটকে গেল। এটা ওদের এনগেজমেন্টের দিনের পিক। নক্ষত্রের দিকে তিতিক্ষা যখন কান্নাভেজা চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো। সেই মুহূর্তে তোলা এই পিকটা। তিতিক্ষা পিকটার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। নক্ষত্র কখন এসে ওর পাশে দাঁড়িয়েছে, ওর খেয়ালই নেই। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে কফি এগিয়ে দিয়ে বললো,
–“উহুম!উহুম! ম্যম আপনার কফি।”
তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে কফিটা নিলো। কফির মগটা নিয়ে তিতিক্ষা চুমুক দিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে ওর বারান্দায় গেল। বারান্দাটা আরো সুন্দর করে সাজানো। নক্ষত্র ওর কফির মগটা পাশে রেখে ঝুলানো একটা খাঁচা থেকে একটা ঝুঁটি ওয়ালা পাখি বের করলো। পাখিটার নাম কোকাটিয়েল। পুরো বডি এ্যাশ কালার আর মাথাতে হলুদ রংয়ের বড় একটা ঝুঁটি। অবাক করা ব্যাপার, পাখিটা নক্ষত্রের উপর রেগে আছে। প্রচন্ড রেগে ওর মাথার ঝুঁটিটা খাঁড়া করে রেখেছে। খাঁড়া করা ঝুঁটি দেখে মনে হচ্ছে, কেউ ওর ঝুটিয়ে জেল দিয়ে খাঁড়া করে দিয়েছে। রাগে সে গজগজ শব্দ করছে। নক্ষত্র ধরতে গেলেই সে নক্ষত্রের হাত কামড়াচ্ছে। তিতিক্ষা অবাক হয়ে ওদের কান্ড দেখছে। নক্ষত্র পাখিরার মান ভাঙ্গাতে বলছে,
–“আচ্ছা বাবা, আমি সরি। খুব সরি। আর কোনদিন সারাদিন তোকে বন্দী করে রাখবো না। ”
পাখিটা নক্ষত্র দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ধরতে গেলে নক্ষত্র হাত কামড়ে দিচ্ছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“এর নাম ইতু। আমার উপর সে খুব রেগে আছে। আজকে সারাদিন ওকে বন্দী করে রেখেছি। এজন্য উনার খুব রাগ হয়েছে।”
একটু পর ইতুর রাগ কমলো। তিতিক্ষা পাখিটাতে গলাতে হাত বুলিয়ে দিলো। পাখিটাকে কোলে নিয়ে আদর করলো। তিতিক্ষা ছাড়তেই ইতু নক্ষত্রের হাতের উপর বসলো। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা নিচে গেল। ইতুকে দেখে নক্ষত্রের আম্মু বললো,
–“আজকে সারাদিন ইতু একটুও ডাকাডাকি করে নি। এটা এত ভদ্র হলো কি করে?”
নক্ষত্র মুচকি হেসে বললো,
–“সে খুব রেগে ছিলো। এজন্য ডাকাডাকি করেনি।”
নক্ষত্রের আব্বু পর পর নক্ষত্রের পিঠে দুবার শব্দ করে মারলো। ইতু উড়ে গিয়ে নক্ষত্রের আব্বুকে কামড়াতে লাগলো। চি চি শব্দ করছে আর নক্ষত্রের আব্বুকে কামড়াচ্ছে। তিতিক্ষা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দেখছে। ইতু যে নক্ষত্রের অন্ধভক্ত, এটা তিতিক্ষার বুঝতে একটুও অসুবিধা হলো না। ইতুর কান্ড দেখে সবাই হো হো করে হেসে দিলো। অদ্রি এসে ইতুকে নিয়ে গেল। ওর ফোনে ওর বান্ধবীর কল এসেছে। এজন্য কথা বলতে বলতে আবার রুমে চলে গেল। তিতিক্ষা নক্ষত্রের আম্মুর দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা বললো,
–“আম্মু বলছিলাম, যে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। বাসায় যেতে হবে।”
নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। উনার এভাবে তাকানো দেখে তিতিক্ষা ঢোক গিললো। নক্ষত্রের আম্মু বললো,
–“আমাদের সাথে থাকতে তোর ভালো লাগছে না?”
–“আসলে তা না!”
–“তাহলে থাকতে সমস্যা কোথায়? কালকে নক্ষত্র তোকে দিয়ে আসবে। আজকে আর যাওয়ার দরকার নেই। একটা দিন এখানে থাক। কয়েকদিন পর তো এখানে এসেই তো থাকতে হবে।
–“(নিশ্চুপ)
–“শোন! আমি তোর আম্মুর থেকে পারমিশন নিয়েছি।”
–“আম্মু এখানে কয়েকদিন থাকো। তোমার কি খারাপ লাগছে?” (মিঃ আবরার)
–“জ্বি না আব্বু।”
তিতিক্ষা মুচকি হাসলো। নক্ষত্রের আব্বুর ফোনে কল আসলো। উনি কথা বলতে বলতে চলে গেলেন। নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষার সাথে গল্প করছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে আছে। তিতিক্ষা না তাকালেও বুঝতে পারছে, নক্ষত্রের দৃষ্টি ওর দিকে। বিভা তিতিক্ষাকে ফোন দিলো। তিতিক্ষা বিভার সাথে কথা বললো। নক্ষত্রের আব্বুর ডাকে নক্ষত্রের আম্মু চলে গেল। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে ছাদে গেল। ফুলের মাতোয়ারা ঘ্রাণ চারদিকে ছড়িয়ে গেছে। আকাশে ইয়া বড় চাঁদ উঠেছে। নক্ষত্র আর তিতিক্ষা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। বাগানের মাঝখানে পানির ফোয়ারাটা দেখা যাচ্ছে। পানির মাঝখান থেকে নীল লাইট জ্বলছে। দেখতে আরো আকর্ষণীয় লাগছে। নক্ষত্রকে চুপ থাকতে দেখে তিতিক্ষা বললো,
–“আপনার কি মন খারাপ?”
–“উহুম, না! তবে তোমার আব্বুর উপর খুব রাগ হয় আমার।”
তিতিক্ষা নক্ষত্রের দিকে তাকালো। নক্ষত্রে দৃষ্টি একটু অন্য রকম। তিতিক্ষা মৃদু হেসে বললো,
–“কেন? আমার আব্বু আপনার কি করেছে শুনি।”
নক্ষত্র তিতিক্ষাকে নিয়ে ছাদের দোলনাকে বসলো। তিতিক্ষার কাঁধে ওর মাথা রেখে বললো,
–“তোমার আব্বুকে আমি সরাসরি আমাদের বিয়ে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। উনি বিয়ে না দিয়ে এনগেজমেন্টটা করে রেখে দিলেন।”
তিতিক্ষা শব্দহীন ভাবে হাসলো। নক্ষত্রের কথার মাঝে অভিমানের সুর স্পষ্ট। তিতিক্ষা চাঁদের দিকে তাকালো। নক্ষত্র তিতিক্ষার হাতের আঙ্গুলের ভাজে নিজের আঙ্গুল রেখে বললো,
–“পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়ে গেলে আমরা তো আর আলাদা থাকতাম না।”
–“ইনশাআল্লাহ! খুব দ্রুত আসবে সেই দিন।”
আকাশের চাঁদটা ওদের সঙ্গ দিচ্ছে। মৃদু বাতাসে নক্ষত্র দুষ্টু চুল নড়ে উঠছে। তখন তিতিক্ষার গলাতে সুড়সুড়ির লাগছে। তবুও তিতিক্ষা চুপ করে থাকে। নক্ষত্র এখনো তিতিক্ষার কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার চুলের কাটা টা খুলে দিলো। চুল গুলো দূরন্ত গতিতে তিতিক্ষার পিঠে ছড়িয়ে পড়লো। তিতিক্ষা শুধু নক্ষত্রের কান্ড দেখছে। নক্ষত্র যে ওকে সব সময় পাশে চাই, এটা তিতিক্ষাও বুঝতে পারে। কালকে তিতিক্ষা চলে যাবে, আবার কবে ওদের দেখা হবে, এটা ভেবে তিতিক্ষার মনটাও কেমন জানি করছে। দু’জনের মনে চলেছে একই অনুভূতির ছুটাছুটি। রাতের আঁধারটা আজকে খুব ভালো লাগছে। মৃদু বাতাসে এসে শরীর লাগছে। অনেকক্ষণ ওরা গল্প করলো। আজকে এই মুহূর্তটা ওদের কাছে স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
সবটা যে এভাবে লন্ড ভন্ড হয়ে যাবে, নক্ষত্র আর তিতিক্ষা কেউ এসবের জন্য প্রস্তুত ছিলো না।
তিতিক্ষা ওর রুমের বারান্দায় বসে অঝোরে কাঁদছে। চোখে অবাধ্য পানি গুলো গাল গড়িয়ে পড়ছে। শব্দ করে কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেছে। বাসাটা একদম নিশ্চুপ হয়ে গেছে। সাজানো গুছানো সম্পর্ক গুলো এভাবে নষ্ট না হলেও তো পারতো। এমন ভয়ংকর পরিস্থিতির সম্মুখীন ওদের কেন হতে হলো? ওদের এত সুন্দর সম্পর্কের মাঝে এত দ্বিধা দ্বন্দের সৃষ্টি কেন হলো? এত ভাল সময় কাটানো, নিজেকে ভাগ্যবতী ভাবাটাই কি তাহলে কাল হয়ে দাঁড়ালো? এজন্যই কি এত সুখের পরে নিষ্ঠুর এক কষ্টের আগমন ঘটলো। সবার সাথে সবার এত ভাল সম্পর্ক তৈরী হওয়াটাই কি তাহলে ঝড়ের আগের পূর্বাভাস ছিলো?
To be continue…..!!