অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁 #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_25

0
605

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_25

(রেসপন্স আরো কম করো। যাতে পরের পার্ট আর না দেওয়া লাগে।)

নবিন অদ্রিকে নিয়ে দুই রুমের সেই ফ্ল্যাটে উঠলো। অদ্রি রুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। নক্ষত্র আর তিতিক্ষার মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। অদ্রি ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। নবিন হাতের ব্যাগটা রেখে অদ্রিকে ফ্রেস হয়ে নিতে বললো। অদ্রির পেটেও তো কেউ বেড়ে উঠছে। তার জন্য হলেও তো নিজের যত্ন নিতে হবে। নবিন অদ্রিকে জোর করে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো। সে চোখে মুখে পানি দিয়ে আসলো। মাথাটা খুব ঘুরছে। নবিন খাবার বেড়ে অদ্রির মুখের দিকে বাড়িয়ে দিলো। অদ্রি নবিনের হাত ধরে কেঁদে দিলো। নবিন শান্ত কন্ঠে বললো,

–“খেয়ে নাও। ছোট একটা নিষ্পাপ প্রাণের জন্য তোমাকে নিজের প্রতি যত্ন নিতে হবে। কেঁদো না, সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন আর একটা কথাও না, চুপ। হা করো, লক্ষী মেয়ের মত খেয়ে নাও। ”

অদ্রিকে খাইয়ে নবিন ওয়াশরুমে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। অঝোরে চোখের পানি ঝরে যাচ্ছে। বোনের অসহায় মুখটার কথা মনে হচ্ছে। নবিন দেওয়ালের সাথে দুই হাত রেখে নিশব্দে কাঁদছে। এতক্ষণ নিজেকে স্বাভাবিক রাখলেও, এখন আর পারছে না। পুরুষ মানুষের অসাধারণ একটা গুন আছে। সেটা হলো, সবার সামনে নিজেকে শান্ত রাখলেও, নির্জন একাকীত্বের সময় তাঁরা নিজের কাছেই নিজে হেরে যায়। আড়ালে তখন তারাও ভেঙ্গে পড়ে। লোকচক্ষুর আড়ালে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে। তবে সে কান্নার না আছে শব্দ, আর না আছে সেই সময়টুকুর জন্য নিজেকে গুটিয়ে রাখার ক্ষমতা।

তনুকা সব শুনে বাসায় আসলো। এসব শুনে ওর কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে। এটা কি হলো? নক্ষত্র আর তিতিক্ষার পরিণতি কি হবে? তনুকা তিতিক্ষার রুমে গেল। এলোমেলো অবস্থায় রুমের এক কোণে বসে আছে। ওর দৃষ্টি সিলিং ফ্যানের দিকে। চোখের পানি চোখের কোণা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। তনুকা তিতিক্ষাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। তনুকা তিতিক্ষার এমন অবস্থা দেখতে পারছে না। ওই দিকে নক্ষত্রের কি অবস্থা কে জানে? তিতিক্ষার মুখে কথা নেই, চুপ করে বসে আছে। তনুকা তিতিক্ষাকে জোর করেও ওখান থেকে উঠাতে পারলো না। তনুকা হার মেনে কাঁদতে কাঁদতে রুমে থেকে চলে গেল। তিতিক্ষার আব্বু-আম্মুর কাছে ব্যাপারটা খুবই দৃষ্টিকটু লাগছে। তিতিক্ষার হাতে থেকে এভাবে রিং খুলে নেওয়াটাতে উনারাও রেগে গেছে। এই বাসার সবাই এখন নক্ষত্রদের কাউকে সহ্য করতে পারছে না। সবার একটাই কথা, যা হয় আমাদের মঙ্গলের জন্যই হয়। তিতিক্ষা যেন নক্ষত্রকে ভুলে নতুন করে আবার শুরু করে।

নক্ষত্রের আম্মু এসে রুমে দরজা দিয়েছে। মিঃ আবরার এত ডাকাডাকি পরেও উনি রুম থেকে বের হয়নি। নবিনদের বাসা থেকে ফেরার চার ঘন্টা পর নক্ষত্র বাসায় ফিরলো। বাসায় এসে মিস্টার আবরারকে থমথমে অবস্থায় বসে থাকতে দেখলো। গম্ভীর মুখে বসে থাকতে দেখে নক্ষত্রের ভুরু কুঁচকে গেল। অফিসে যত সমস্যাই হোক উনি তো বাসায় কাউকে জানাই না। নক্ষত্র হাতের ফাইলগুলো সোফার উপর রাখলো। চার্জ না থাকায় ফোনটাও বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্লাইটে আসার সময় ওর পাশে একটা বাচ্চা বসেছিলো। তার সাথে নক্ষত্র খুব ভাব জমেছে। সেই বাচ্চাটাই নক্ষত্রের ফোন নিয়ে খেলতে খেলতে চার্জ শেষ করে ফেলেছে। নক্ষত্র ওর বাবার পাশে বসার পরেও মিঃ আবরারের কোনো হেলদোল নেই। উনি গভীর চিন্তায় নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছে। নক্ষত্র
নরম কন্ঠে বাবাকে বললো,

–“বাবা।”
বাবা ডাকটা শুনে মিঃ আবরার পাশে তাকালো। নক্ষত্রকে দেখে উনার কলিজা কেঁপে উঠলো। এখন উনি কিভাবে নক্ষত্র সবটা বলবে? নক্ষত্রই বা কি করবে? বাবা হয়ে ছেলের অসহায় চাহনি কিভাবে সহ্য করবে? মিঃ আবরারের চোখে পানি ছলছল করছে। নক্ষত্র ওর আব্বুর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো। নক্ষত্রের বাবার চোখের অশান্ত চাহনির কারণ নক্ষত্রের অজানা। নক্ষত্র ওর বাবার হাতটা ধরে মুচকি হেসে বললো,
–“কিছু হয়েছে? বলো আমাকে?”

মিঃ আবরার নক্ষত্রকে জড়িয়ে ধরলো। নক্ষত্রও ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। ওর বাবার এমন করুণ চাহনি নক্ষত্র এর আগে কখনো দেখেনি। মিঃ আবরারের সব কথা ফুরিয়ে গেছে। টেনশনে বুকে খুব ব্যাথা করছে। একদিকে আদরের মেয়ের করুণ অবস্থা আর অন্যদিকে ছেলের মুখের হাসি। এমন একটা পরিস্থিতি যে, না পারছে ছেলেকে কিছু বলতে আর না পারছে মেয়েকে সাপোর্ট করতে। উনার একফোঁটা চোখের পানি নক্ষত্রের কাঁধের গিয়ে পড়লো। নক্ষত্র বুঝতে পারল ওর বাবার কাঁদছে। বাবার চোখের পানি দেখে নক্ষত্রের কলিজা শুকিয়ে গেলো। নক্ষত্র দ্রুত ওর বাবাকে বুক থেকে সরিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,

–“কি হয়েছে বাবা? কোনো সমস্যা? বলো আমাকে? কেউ কিছু বলেছে? কথা বলো? তোমার চোখে পানি কেন?”

নক্ষত্র দ্রুত এক গ্লাস পানি এনে ওর বাবাকে দিলো। মিঃ আবরার পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করলো। এরপর উনি আস্তে আস্তে পুরো ঘটনাটা নক্ষত্রকে জানালো। মিঃ আবরার চোখ বন্ধ করে সোফায় মাথা হেলান দিয়ে আছে। নক্ষত্র স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। বুকের বা পাশটা চিনচিনে ব্যাথা করছে। অদ্রি এমন করতে পারলো ? আর তিতিক্ষা? নক্ষত্র মাথা কাজ করছে না। শান্ত ভাবে সে চুপ করে করে বসে আছে। মিঃ আবরার আর বসে থাকতে পারলো না। উনি দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেল। উনি সহ্য করতে পারছে না, উনার ছেলের এমন স্তব্ধতা।

তিতিক্ষার আব্বু আম্মু মামনির বাসায় আসলো। তিতিক্ষার এমন অবস্থায় সবচেয়ে উনাদেরকেই তো দরকার। তিতিক্ষার আম্মু রুমে ঢুকে দেখে তিতিক্ষা চুপ করে বসে আছে। চোখের কোণা বেয়ে ঝরে পড়ছে অশ্রুকণা। তিতিক্ষার আম্মু তিতিক্ষার পাশে বসে ওর মাথায় হাত রাখলো৷ মাথাতে কারো স্পর্শ পেয়ে তিতিক্ষা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। ওর মাকে পাশে দেখে তিতিক্ষার উনার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। মায়ের বুকের মুখ লুকিয়ে, শাড়ি আঁকড়ে ধরো উচ্চ শব্দে তিতিক্ষা কেঁদে উঠলো। মেয়ের এমন আত্মানার্দে তিতিক্ষার আব্বু আম্মু দু’জনেই কেঁদে দিলো। মেয়ে যে মারাত্মক ভাবে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে, উনারা খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছে। তিতিক্ষার মতো ঠান্ডা স্বভাবের স্বল্পভাষী মেয়ে, আজকে প্রিয় মানুষটাকে হারানোর ভয়ে কাঁদছে। বুকের মধ্যে অসহ্য যন্ত্রনার সৃষ্টি করছে। মাথার মধ্যে একটাই কথা ঘুরছে, ‘নাহিয়ান ছাড়া তিতিক্ষা একেবারে নিঃস্ব। নাহিয়ান যে ওর মুখের হাসির কারণ। মানুষটা দিনে দিনে ওর বেঁচে থাকার অনিবার্য কারণ হয়ে উঠেছে।’

অদ্রি বমি করে একাকার অবস্থা। নবিন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে অদ্রি বমি করছে। বমি করতছ ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। নবিন দৌড়ে যায় অদ্রির কাছে। অদ্রির মাথা চেপে ধরে কুলি করিয়ে পানি খাওয়ায়। অদ্রি বমি করতে করতে হাঁপিয়ে গেছে। মুখটা লাল হয়ে গেছে। মৃদুভাবে কাঁপছে। নবিন অদ্রিকে শুইয়ে দিতে চাইলে অদ্রি নবিনের কোমর জড়িয়ে ধরে। অদ্রি কাঁদছে, শব্দ করে কাঁদছে। নিজের অপরাধবোধ, ভাইয়ের সুখ কেড়ে নেওয়া, বাবা মাকে কষ্ট দেওয়া; সব মিলিয়ে কষ্টে নিঃশ্বাস নেওয়াও যেন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। অদ্রির কান্না দেখে নবিন আলতো ওর মাথায় হাত রাখলো। ওকে শান্ত করাতে অদ্রির মাথাতে আলতো করে হাত রাখলো।

নক্ষত্র ওর রুমে আসলো। ফোনটা দ্রুত চার্জে দিয়ে শুয়ে পড়লো। নক্ষত্রের দৃষ্টি তিতিক্ষার ছবিটার দিকে। নক্ষত্র উঠে বসে মাথা নিচু করে ভাবলো। এরপর উঠে দাঁড়িয়ে ওর আম্মুর রুমে গেল। বেশ কয়েকবার ডাকার পরও ওর আম্মু দরজা খুললো না। নক্ষত্র অনেক দাঁড়িয়ে চলে আসার জন্য যখন পা বাড়াবে তখন ওর আম্মু দরজা খুলে দিলো। নক্ষত্র রুমে ঢুকলো। ওর আম্মু ওর দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। নক্ষত্র ওর আম্মু হাত ধরে বললো,

–“তোমার যা ভালো মনে হয় করেছো। আমিও তোমাকে অভিযোগ জানাতে আসিনি৷ তাহলে এখন ঘরবন্দী হয়ে আছো কেন?”

নক্ষত্রের আম্মু নক্ষত্রের দিকে তাকালোও না। পাশের সেন্টার টেবিলের উপরে ওদের এনগেজমেন্টের রিংটা পড়ে আছে। সেটা দেখে নক্ষত্র হৃদপিন্ডটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। নক্ষত্রের হাত থেকে ওর আম্মু হাত সরিয়ে নিলো। উনার রাগ এখনো কমেনি। রিংটার দিকে তাকাতে দেখে নক্ষত্রের আম্মু আরো রেগে গেলেন। উনি ভেবেছেন নক্ষত্র হয়তো তিতিক্ষার কথা বলবে। মামনির কথা গুলো মনে করে নক্ষত্রের আম্মু আরো রেগে গেলেন। নক্ষত্রকে কিছু বলতে না দিয়ে নক্ষত্রের গালে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। নক্ষত্র টু শব্দ করলো না। নক্ষত্রের আম্মু উচ্চশব্দে কেঁদে কেঁদে বললো,

–“তোর মুখের দিকে তাকিয়ে তিতিক্ষাকে নিয়ে টু শব্দ করিনি। তিতিক্ষাকে ছেলের বউ না করে মেয়ের আসনে বসিয়েছি। ওর পরিববারের সবার মত সাথে আন্তরিকতার সাথে মিশেছি। ওরা কি আমাদের যোগ্য তুই বল? বল আমাকে, ওরা কি আমাদের সাথে যায়? শুধু তোর মুখের হাসিটার জন্য আমি কিছু বলিনি। তোর সব আবদার মেনে নিয়েছি। এজন্য আজকে এই প্রাপ্প, তাই তো? যার বোনের জন্য এত কিছু করলি, নিজের পকেট থেকে এত এত খরচ করে তার বোনের অনুষ্ঠান করলি। ওদের মুরোদ আছে এভাবে অনুষ্ঠান করার? ওরা দেখেছে এসব, ওরা বোঝে কিছু? বিবেকবোধ থাকলে কি ওই বেয়াদবটা এমন করতো? বল করতো? ওই পরিবারের সাথে আমি কোনো সম্পর্ক রাখবো না। আমি যখন না বলেছি, তো না’ই হবে।

নক্ষত্র চুপ করে আছে। কিছু বলার ভাষা ওর জানা নেই। মস্তিষ্কে কাজ করছে না। এখন কার সাপোর্টার হবে, আম্মু, বোনের, বউয়ের নাকি বউয়ের পরিবারের। সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য এত কিছু করা। কিন্তু সাজানো গুজানো সব ইচ্ছ, স্বপ্ন গুলো ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ন হয়ে গেলো। চাইলো হয়তো আর জোড়া লাগানো সম্ভব না। নক্ষত্রের আম্মু আবারো বলতে লাগলো,

–“এসব করে তুই আর তোর বোনের কলিজায় তো পানি নামলো। আমাদের মান সন্মান ধুলোয় মিশিয়ে তোরাই সুখে থাক, তাইলেই হবে। ভালো থাকার জন্যই তো আজকে আমাদের এতটা নিচে নামালি। যে ছেলে মেয়ের জন্য গর্বিত ছিলাম। আজকে সে ছেলে মেয়ের জন্য আঁচলে মুখ লুকিয়ে রুম বন্দী হয়েছি। তোর জন্য এত কিছু। তুই হলি সকল সমস্যা মূল। ওই বাসাতে না গেলে এত কিছু হতো না। তোকে আমি মাফ করবো না। তোর মত বেয়াদব ছেলের জন্য ওইরকম লেইম মেন্টালিটির মানুষদের বাসায় পা রেখেছিলাম। যার জন্য এখন আমাকে মূল্য চুকাতে হচ্ছে। তুইও বেরিয়ে যা এই বাসা থেকে, তোদের মত সন্তান থাকার চেয়ে না থাকায় ভালো। আমাদের কথা না ভেবেই এতটা অপদস্থ করলি, আমাদের কথা তোর আর ভাবাও লাগবে না। তোরা তোদের সুখ খুঁজে নে, ভাল থাক।

নক্ষত্রের আম্মু কথাটা বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। নক্ষত্র মুচকি হেসে শান্ত কন্ঠে বললো,

–“হুম! আমি এবার ভালো তো থাকবোই। আম্মুর চোখে পানি ঝরিয়েছে, বোনকে সেভ করতে পারিনি, কারো স্বপ্ন ভেঙে দেওয়ার কারণ হয়েছি। সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছি। আমারই ভালো থাকার দিন। ”

নক্ষত্র কথাটা বলে রুম ত্যাগ করলো। আর কি ই বলার থাকতে পারে। তিতিক্ষার আম্মু তিতিক্ষার কান্না থামাতে পারেনি। এজন্য ওনিও তিতিক্ষার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছে। কেন কাঁদবে তিতিক্ষা? কার জন্য কাঁদবে? ওর কি ছেলের অভাব পড়বে যে ও কাঁদছে? এসব যুক্তি দাঁড় করিয়ে উনারা তিতিক্ষার উপর রেগে গেছে। তিতিক্ষা কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতেই শুয়ে পড়ে। রাত প্রায় একটার দিকে তিতিক্ষার ঘুম ভেঙে গেল। ওর ফোনের রিংটোনের শব্দে। তিতিক্ষা দ্রুত উঠতে গিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সাথে বারি খেলো। দ্রুত পায়ে হেঁটে ওর ফোনটা হাতে তুলে নিলো। নক্ষত্রের কল দেখে তিতিক্ষা দেরী না করে ফোনটা রিসিভ করলো। কান্নারত কন্ঠে বলে উঠলো,
–” হ হ্যালো।”

নক্ষত্র শান্ত কন্ঠে বললো,

–“কাঁদছো কেন, মনোপ্যাথি?”

একথা শুনে তিতিক্ষা আর নিজেকে আটকাতে পারলো। শব্দ করে হেঁচকি তুলে সে কাঁদছে। নক্ষত্রও আর তিতিক্ষাকে কান্না থামাতে বলছে না। কেন বলবে? তিতিক্ষা কত সুখী, সে তো কান্না করতে পারছে। তার কষ্ট লাগার অনুভূতিটা প্রকাশ করতে পারছে। নক্ষত্র তো সেদিক থেকেও ব্যর্থ। না পারছে কাউকে কিছু বলতে, আর না পারছে ওর অনুভূতির কথা কাউকে শেয়ার করতে৷ কাকেই বা কি বলবে? সবাই তো ওর দিকেই আঙ্গুল তুলছে। এজন্য কি সুন্দর নিখুঁতভাবে নিজেকে স্বাভাবিক করে রেখেছে। কেন রেখেছে? শুধুমাত্র আপন মানুষগুলো জন্য? নাকি সে যে অনুভূতিহীন, এটা প্রকাশ করার জন্য? এই প্রশ্নের উত্তর নক্ষত্রের কাছে আপাতত নেই। তিতিক্ষা কাঁদতে কাঁদতে বললো,

–“আমাদের সম্পর্কটা কি পূর্ণতা পাবে না। আমি কি আপনাকে হারিয়ে ফেলবো?”

নক্ষত্র নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে, মুচকি হেসে বললো,

–“সব সম্পর্ক পূর্ণতা লাভের আশা করা বোকামি। কিছু কিছু সম্পর্ক না চাইলেও শূন্যের খাতায় জমা পড়ে যায়।”

তিতিক্ষা এই কথার সারমর্ম বুঝতে পেরে নিঃশ্চুপ হয়ে যায়। মাথা ঘুরছে, হৃদপিন্ডটা লাফাচ্ছে। কষ্টে নিঃশ্বাস আটকে আসছে। নক্ষত্র এটা কি বললো? এটা সে বলতে পারলো? তার বুক কাঁপলো না?
ওর সম্পর্ক টা কি সত্যিই শূন্যের খাতায় থাকবে?
সব অনুভূতি গুলো কি দীর্ঘশ্বাসের ভিড়ে চাপা পড়ে যাবে? তাহলে কি এখন নক্ষত্রকে প্রিয় থেকে অপ্রিয় হিসেবে অখ্যায়িত করতে হবে? সব অনুভূতি গুলো অনুভূতির শীর্ষস্থানে পৌঁছে এখন তার এমন নিষ্ঠুর পরিণতি।

তবে এতকিছুর মধ্যে তিতিক্ষার বাবা নক্ষত্রদের উপর মারাত্নক ভাবে রেগে গেছে। নক্ষত্রের আম্মুর ব্যবহার আর তিতিক্ষার চোখের পানি উনি সহ্য করতে পারছে না। উনার কাছে নক্ষত্রের আম্মুর কাজটা মোটেও শোভনীয়ও মনে হয় নি। নক্ষত্র আর তিতিক্ষার তো দোষ ছিলো না। এসব ভেবেই উনি কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিলো। উনিও এবার ওদের দেখিয়ে দিতে চান, উনার মেয়েও কোনো ফেলনা নয়। উনি নক্ষত্রের থেকে হাজার গুন ভালো ছেলে সাথে তিতিক্ষার বিয়ে দিবে। আর সেটা যত দ্রুত সম্ভব। তিতিক্ষার বাবা এটাই করবো বলে মনোস্থির করলেন।

To be continue…!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here