এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_23 🍁🍁

0
966

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_23
🍁🍁

_______মেঘ আর আলো গল্প করছে হাসাহাসি করছে!বাট সবার চোখের আড়ালে কারো তীক্ষ্ণ নজর আলোর দিকে পড়েছে!আলো এখানে বেড়াতে তো আসলো! বাট এখানে আসার পর সব ঠিক থাকবে তো!এখানে আসাটা আলোর জন্য আবার কাল হয়ে না দাড়ায়…..!!!

পরেরদিন সকালে______!!

ঘুম ভেরে আলোর ঘুম ভেঙে যায়!আলো পাশে তাকিয়ে দেখে মেঘবাবু কোলবালি জড়িয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে আর মাঝে মাঝে মিটিমিটি হাসছে!হয়তো স্বপ্নেও কোন দুষ্টুমি করছে!আলো ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মেঘের পায়ে কাতুকুতু দিয়ে মেঘকে ঘুম থেকে টেনে তুলে!তারপর মেঘকে জোর করে ফ্রেশ করিয়ে আলো আর মেঘ ছাদে যায়!কারন সকালের সৌন্দর্য মন ভাল করার একটা চাবিকাঠি। আলো ছাদে এসে দুই হাত মেলে দিয়ে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয়!আলোর দেখে মেঘেও দুইহাত বাড়িয়ে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে!

আলো খালি পায়ে হাটছে আর চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে!আর মেঘ টবে থাকা ফুলের উপর প্রজাপতি বসেছে ওটাকে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আলো ঘুরে ঘুরে দেখে ছাদের পাশের বাগানটাই সব ধরনের ফলের গাছ আছে আর ঝোপঝাড়ে ভরা!কিন্তু একদূরে চোখ যেতেই সবুঝ আর সবুজের সমারোহ! ফসলি জমিগুলো বিভিন্ন ধরনের আবাদ লাগানো!দুর থেকে জমিগুলো বেশ ভালো লাগছে! মাঝে মাঝে বাতাস এসে ধানের জমিগুলোকে ঢেউ খেলিয়ে চলে যাচ্ছে।

আলো হাটতে হাঁটতে ছাদের কিনারায় নিম গাছের নিচে এসে দাঁড়াতেই আলোর শরীরে ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে আর আলো থম মেরে দাড়িয়ে যায়।আলো যেন নড়াচড়া করতেও ভুলে গেছে।একটুপর রোদও ছাদে আসে আর এসে আড়মোড়া ভাঙ্গতে শুরু করলো!আলো একবার আড়চোখে রোদকে দেখে নিলো!কালো টাওজার আর সাদা একটা গেন্জী পড়া আর মহারাজের চুল গুলো এলোমেলো হয়ে কপালে পড়ে আছে।রোদ দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাত -পা নাড়িয়ে ব্যায়াম করছে! মেঘ এসে রোদের কাছে বায়না ধরলো মেঘকে নিয়ে রোদ যাতে এখন বুক ডাউট দেয়!মেঘ ঘ্যান ঘ্যান করতেই আছে তাই রোদ রাজি হলো….!!

রোদ মেঘকে পিঠের উপর নিয়ে বুক ডাউন করা শুরু করলো আর মেঘ রোদকে আকড়ে ধরে আছে যাতে পড়ে না যায়!মেঘের কাছে বুকডাউনটাকে একটা খেলা মনে হয় আর মেঘ খুব মজাও পায়!মেঘ যখন আধো আধো বুলিতে কথা বলা শিখছে তখন থেকে রোদ মেঘকে পিঠের উপর নিয়ে বুক ডাউন দিতো!মেঘ তখন বেশিছোট থাকায় পড়েও গিয়েছিলো! পরে রোদ মেঘকে বেল্ট দিয়ে বেধে তারপর বুকডাউন করতো তখন মেঘ খিলখিল করে হাসতো!আর মেঘের হাসি দেখে রোদও হাসতো…..!!!এখন মেঘ খিলখিল করে হাসছে আর রোদকে বললো…!!

মেঘঃ আর দশবার দাভাই প্লিজ! প্লিজ!

রোদঃ ২০ বার হয়ে গেছে তো এখন আর না..!!

মেঘঃ আর ১০ দশবার দাভাই! বউমনি দাভাইকে বলো না আর দশবার করতে।

আলো দাড়িয়ে দাড়িয়ে দুইভাইয়ের কান্ড দেখছে!মেঘ যে খুব মজা পাচ্ছে সেটা ওর হাসি দেখা বোঝা যাচ্ছে! আলো মেঘ আর রোদের দিকে তাকিয়ে ভাবছে…!!

আলোঃমেঘ গুলুমলু এজন্য হাসলে দারুন দেখায় মন চাই গালদুটো টেনে দেই!যেমন দেখতে তেমন মিশুক আবার তেমনই দুষ্টু!এই বয়সেই এইরকম বড় হলে যে কত মেয়েকে ঘায়েল করবে তার হিসাব নেই।তবে বড় গাধাটাও কোন দিক দিয়ে কম না!না জানি জীবনে কতখান প্রেম করছে কে জানে?না এর দ্বারা প্রেম করা সম্ভব না কারন সবসময় তো উনার রাগ উঠেই থাকে আর এ করবে প্রেম।আমার তো মনে হয় এর বউ একদিন এর কাছে থাকবে কিনা সন্দেহ! না জানি এভাবে কতটা বিয়ে করবে।আমিও না বোকার মত কি যে ভাবছি!তবে আল্লাহ শুধু মেয়েদের কে দুইহাত ভরে সৌন্দর্য দান করে না! ছেলেদেরকেও করে।এর প্রমান রোদ আর মেঘ….!!

মেঘ আলোর দিকে তাকিয়ে চিৎকুর দিয়ে ফট করে বলে উঠলো….

মেঘঃ বউমনি তুমি এসো..!! দাভাইয়ের অনেক শক্তি দাভাই তোমাকেও নিতে পারবো।

আলোঃ না না আমি মহিষের পিঠে উঠবো না।তুমিই উঠো..!!

আলোর কথা শুনে রোদ ঘাড় ঘুরিয়ে ভ্রু কুচকে রোদ বামপাশে আলোর দিকে তাকায়! আলো রোদের তাকানো দেখে একদৌড়ে নিচে চলে যায়!সকালে বেলা রান্না ঘরে তোরজোড় চলছে রান্নার জন্য! এখানের সবাই জয়েন্ট ফ্যামিলি তাই সদস্যও বেশি তাই রান্নাও করতে হয় বেশি বেশি!আলো ওর রুমে ঢুকে মাথা চেপে ধরে বসে আছে!শরীরের মধ্যে কেমন জানি আনচান আনচান করছে!আলো একা রুমে না থেকে গুটি গুটি পায়ে নিচে গিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেল!আলোকে দেখে সবাই খুশি হয়ে ওর সাথে কথা বলতে শুরু করলো!আলোও সবার তাড়াহুড়ো দেখে নিজেও কাজে হাত লাগালো!সবাই এত নিষেধ করার পরেও কোন শুনলো না……!!

রোদ আর মেঘ ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দীদানের সাথে কথা বলছে!রোদ ওর দীদানকে জড়িয়ে ধরে তখন ওর দীদান বলে ওঠে…!!

দীদানঃ কি বড়কর্তা এতদিন পর আমাকে মনে পড়লো বুঝি..

রোদঃ দীদান তুমি আমার একমাএ সুইটহার্ট তোমার কথা ভুলতে পারি।

দীদানঃ হা হা হা! কি গো ছোটকর্তা আমাকে তোমার মনে আছে..!!

মেঘঃ না দীদান তুমি আমার একমাএ বুড়ি বউ তোমার কথা ভুলতে পারি (মেঘের কথা শুনে সবাই হাসতে শুরু করলো)

দীদানঃ ছোটকর্তা একদম আমাকে বুড়ি বলবে না।
মেঘঃ তাহলে কি বলবো??

রোদঃহা হা হা মেঘ দীদান কেবল কিশোরী! তুই দীদানকে কিশোরী বলে ডাকতে পারিস।

রোদের কথা শুনে দীদান রোদের কান টেনে ধরলো!রান্নাঘর থেকে সবাই ওরে কান্ড দেখছে আর হাসছে!বড় মামার এক ছেলে এক মেয়ে আদিল(যার বিয়ে) আর মায়া, মেজো মামার দুই ছেলে এক মেয়ে সজল, সাদ আর নিহা।আর ছোট মামার এক মেয়ে কলি।বাড়িটাতে এখন সবাই মিলে হাসি ঠাট্টা মজা করে বাড়িটা মাতিয়ে রাখছে!বাচ্চারা রোদকে ঘিরে ধরেছে গল্প শুনবে সবাই তাই!রোদকে একজন একদিকে টানছে তো আরেকজন টানছে অন্যদিকে । রোদ পড়ছে বিপদে আর মেঘ তো চারপাশে বসার জায়গা পায়নি তাই গাল ফুলিয়ে আলোর কাছে চলে গেল।

মেঘ আলোর কাছে গিয়ে দেখলো আলোর চোখ লাল হয়ে আছে!আলো সবার আড়ালে ওর রুমে চলে যায়। মেঘ যে আলোকে দেখছে এটা আলো খেয়াল করে নি!আলো রুমে গিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় আর বমি করতে শুরু করে! সকালে বেলা খালি পেটে বমিও হচ্ছে না….!!আলো চোখ মুখে পানি দিয়ে বেডে এসে বসতেই মেঘ এসে দাঁড়ালো আলোর কাছে।আলো মেঘকে বলে উঠলো….

আলোঃ মিষ্টি খাবো আমি (মাথা নিচু করে)

মেঘঃ বউমনি আমারও খুধা লাগছে!আমিও খাবো তোমার সাথে! আচ্ছা তুমি দাড়াও আমি এক্ষুনি মিষ্টি আনছি।

মেঘ ফ্রিজ থেকে দুই প্যাকেট মিষ্টি এনে আলোর সামনে রাখলো!মিষ্টির প্যাকেট খুলে মেঘ একটা মিষ্টি নিতে যাবে তখন আলো মেঘের থেকে সব মিষ্টি কেড়ে দুইহাত দিয়ে গপাগপ খেতে শুরু করলো!আলোর খাওয়া দেখে মেঘ খিলখিল করে হাসতে হাসতে মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে….!! হঠাৎ সজল মেঘকে ডাকলো নিচে থেকে তাই মেঘ দৌড়ে নিচে চলে গেল।রোদ বাচ্চাদের সাথে অনেকটা সময় গল্প করছে ঠিকই বাট ওর চোখ আলোকে খুঁজছে! কোন রকম বাচ্চাদের থেকে মুক্ত হয়ে রোদ উপরে চলে গেল আলোকে খুঁজতে। রোদ গিয়ে দেখে আলো ঘুমাচ্ছে আর চারদিকে মিষ্টির প্যাকেট পড়ে আছে!পিঁপড়া উঠবে ভেবে রোদ প্যাকেট গুলো তুলে বারান্দা দিয়ে পাশের ঝোপ জঙ্গলের দিকে ছুড়ে মারলো…!!

আলো ঘুমাচ্ছে তাই রোদ আর ডাকলো না নিচে চলে গেল!সকালের খাবার এক সাথে খেতে বসেছে অনেক বড় ডায়নিং টেবিল! আগে বাড়ির সব ছেলেরা সহ বাচ্চারা খাবে তারপর মেয়েরা।রোদের মামীরা সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে।রোদের আম্মু আলোকে ডেকে আনে! আদিল সিড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সবুজ কালার কামিজ আর লাল চুড়িদার আর লাল ওড়না পড়া মেয়ে সিড়ি দিয়ে নামছে।আদিল তখন ফট করে বলে উঠে….!!

আদিলঃ উনি কে?(আলোর দিকে তাকিয়ে)

বড় মামীঃ ও আলো! রোদের বউ…!!

আদিলঃরোদ তুই বিয়ে করলি কবে ভাই

রোদের আম্মুঃ করে নি তবে করবে খুব তারাতারি!

দীদানঃএই মেয়ে এইদিকে এসো(আলোকে ডেকে)

আলোঃ আসসালামু আলাইকুম…!!

দীদান অদ্ভুত ভাবে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে!এই ব্যাপারটা কারো দৃষ্টি এড়ালো না।আলোর পুরো মুখ লাল হয়ে আছে তার উপরে লাল ওড়না দেওয়া মাথায়।আদিল সহ প্রথমে সবাই আলোকে দেখে অবাকই হয়েছে ওর সৌন্দর্য দেখে!দীদানের এভাবে তাকানো দেখে মেঘ ফট করে বলে উঠলো….!!

মেঘঃ দীদান আমার বউমনি দেখতে অনেক সুন্দর না!আমি নিজে খুঁজে এনেছি আমার দাভাইয়ের জন্য! আর তুমি এভাবে আমার বউমনির দিকে তাকিও না।আমার বউমনির মুখে পিম্পল বের হবে(মুরগির রানে কামড় দিয়ে)

মেঘের কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে দিলো!কিন্তু দীদান ভ্রু কুচকে এখনো আলোর দিকে তাকিয়ে আছে!আলোরও এবার অস্বস্তি লাগছে!রোদ কিছু বলতে চাচ্ছিলো বাট রোদের আম্মু রোদকে ইশারায় চুপ করে থাকতে বলছে!দীদান আর কিছু বলে না….!!

আজকে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান তাই সবাই সকালের খাবার খেয়ে দুপুরের রান্নার কাছে লেগে পড়ে!সবাই গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে আর কাজ করছে!মায়া আর নিহা এরা রোদের মামাতো বোন এরা আলোর সাথে থাকছে! আলো নিহা আর মায়া মিলে মাদুর বিছিয়ে বসে মটরশুটির খোসা ছাড়াচ্ছে!মেঘ আলোর কাছে এসে আলোকে কানে কানে ফুসফাস কি যে বললো আলো কিছুই বুঝতে পারলো না!আলো কিছু বলার আগেই মেঘ দুই মুঠো মটরশুঁটি নিয়ে দৌড়! মেঘের আসল কাহিনী বুঝতে পেরে ওরা তিনজন হো হো করতে হাসতে শুরু করলো।

আজকে অনেক মানুষ তাই বড়মামীরা মাটির চুলায় পাশের রান্না ঘরে রান্না শুরু করলো!রান্নাঘরটা বেশ বড়!বাসার সামনে বড় একটা উঠান আছে তারপাশে আছে বড় ফুলের একটা বাগান!উঠানের পাশেই আছে কল ঘর!দুপুর ১ টার মধ্যে উনারা রান্না শেষ করে নিলো!রোদের আম্মু আলোকে অনেক আগেই গোসলের জন্য ওকে ওর রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে!আলো গোসল সেরে ভেজা কাপড় নিয়ে আর ছাদে না গিয়ে বাড়ির উঠানে এক বড় রশি টানানো সেখানে কাপড় মেলে দিলো!রোদের বড় মামী সহ সব মহিলা রান্না ঘর পরিষ্কার করতে করতে আলোর দিকে চোখ পড়ে তাদের! আলোর চুল দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে…!!আলো এখানে আসার থেকে ওর চুলে খোঁপা করা এবং মাথায় ওড়না ছিলো এজন্য কেউ ওর চুল দেখতে পায় নি!রোদরা সব কাজিন মিলে তখন বাগান থেকেও আলোকে দেখে!কাজিনরাও ওর চুলের দিকে তাকিয়ে থাকে..!!রোদের খুব রাগ লাগছে সবার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে..!!আলোও এজন্য চুল ছাড়া রাখে না কারন অনেকে ভাবে ভাব দেখানোর জন্য চুল ছেড়ে রাখে! কিন্তু ভেজা চুল তো বেঁধে রাখা যায় না! আলো ভেজা চুল বাদে অন্য সময় অকারনে চুল খুলেও রাখেনা।

আলো ব্লু কামিজের সাথে গোলাপি চুরিদার আর গোলাপি ওড়না পড়েছে!ব্লু আর গোলাপি কালারটা ফর্সা শরীরে একটু বেশিই ভালো দেখায়! রোদেরও যেন আজকে আলোর থেকে দৃষ্টি সরাতে কষ্ট হচ্ছে!রোদের ওর পাগলামির কথা ভেবে মনে মনে হাসে।
আলো টাওয়াল দিয়ে ওর চুলের আগাটা ভালো করে মুছে টাওয়াল রোদের শুকাতে দিয়ে মাথায় ওড়না তুলে দিয়ে বাসার দিকে পা বাড়াতেই আবার সকালের মত ওর শরীরটা পুরো ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে ওঠলো! আর আলো সাথে সাথে থমকে দাড়িয়ে গেল…..!!

মেয়েদের সৌন্দর্য ভালো কিন্তু অতি সৌন্দর্য মেয়েদের জীবনে কাল হয়ে দাড়ায়!কারন অতিরিক্ত কোন কিছুই সুখকর নই!এখানে আসার পর থেকে আলোর জন্য কি কি বিপদ অপেক্ষা করছে! সেটা রোদ বা আলো কল্পনাও করতে পারছে না!

To be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here