এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_43 🍁🍁

0
831

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_43
🍁🍁

রোদ আবার সেই পাহাড়ে কাছে আসে আর দেখে ওদের গাড়ির কোন চিহ্ন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।গাড়িটা পাহাড় থেকে একদম পাহাড়ের নিচে পড়ছে!রোদ ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো!রোদ মেঘ দুইজনেই আহাজারি করে কাঁদতে শুরু করলো!আলো কাকে সামলাবে রোদকে নাকি মেঘকে নাকি নিজেকে…!!

আলো মেঘকে জড়িয়ে ধরে আছে আর মেঘ হাউমাউ করে কাঁদছে! মেঘ বুঝে গেছে ওর আম্মু আর কোনদিন ফিরে আসবে না।রোদ মাটি থেকে উঠে স্থানীয় লোক জন পুলিশ সবার কাছে ছুটে গেল যদি পাহাড়ের নিচে গিয়ে একবার দেখা যেত।কিন্তু পুলিশ জানালো এই পাহাড়ে নিচে দিয়ে নাকি একটা নদী বয়ে গেছে। রোদ অনেক চেষ্টা করলো বাট আর কোন উপায় পাওয়া গেল না।রোদ আবার সেই জায়গাতে এসে স্তব্ধ হয়ে বসে পড়লো।

রোদঃ আম্মু তুমি আমাদের একা ফেলে এভাবে যেতে পারো না!আম্মু আব্বু প্লিজ তোমরা ফিরে এসো।আমাদের এভাবে এতিম করে দিও না।প্লিজ তোমারা ফিরে এসো (মাথা নিচু করে কেঁদে )

এর মধ্যে আলো মেঘ বলে চিৎকার করে উঠলো..!!আলোর চিৎকার শুনে রোদ দৌড়ে আলোর কাছে গিয়ে দেখলো মেঘ অতিরিক্ত কান্না কারনে সেন্স হারিয়ে ফেলছে!রোদ দৌড় গিয়ে গাড়ি থেকে পানির বোতল এনে মেঘের মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো…!!

রোদ বার বার মেঘকে ডাকছে কিন্তু মেঘ কোন সাড়া দিচ্ছে না!রোদ মেঘকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসলো। আলো মেঘকে কোলে নিয়ে আছে রোদ ড্রাইভ করছে আর রোদের পাশে ড্রাইভার বসে আছে!রোদ রামগড়ে একটা হসপিটালে মেঘকে নিয়ে গেল। তারপর ডাক্তার মেঘকে চেকআপ করে বললো অতিরিক্ত কান্না আর ভয়ের জন্য এমন হয়েছে…!!আর ছোট একটা বাচ্চা এত চাপ নিতে পারেনি তাই সেন্স হারিয়েছে।

এদিকে রোদের পাগল হওয়ার উপক্রম একদিকে বাবা মা আরেক দিকে মেঘ। রোদ মেঘের কেবিনের মেঝেতে বসে হাটু গেড়ে বসে কাঁদতে শুরু করলো..!!

রোদঃ আব্বু আম্মু আমাদের একা ফেলে যেও না তোমরা প্লিজ! আমরা পারবো না তোমাদের ছাড়া থাকতে আম্মু! আম্মু আব্বু তোমরা এতটা নিষ্ঠুর হয়ে চলে যেতে পারো না। আম্মু! আম্মু গো আমি মেঘকে কি উওর দিবো আম্মু! আমি মেঘের কাছে কি করে বলবো তোমাদের আমরা চিরতরের জন্য হারিয়ে ফেলছি! এত কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের ফেলে তোমরা চলে যেও না ফাঁকি দিয়ে।আমি তোমাদের মত করে কিছু সামলাতে পারবো না আম্মু।এত কষ্ট দিও না তোমরা আমাদের…!! (কেঁদে কেঁদে)

আলো রোদের কান্না দেখে রোদের কাঁধে গিয়ে হাত রাখে!রোদ ওর কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আলো!রোদ আলোকে দেখে রোদ মাথা নিচু করে ফেলে আর কাঁদতে থাকে।বাবা মা হারানোর কষ্টটা ভুলে রোদ যে কি করে নিজেকে কিভাবে সামলাবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেনা।আলো রোদকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে রোদের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে..!!

আলোঃ আপনি এমন করলে মেঘকে সামলাবো কি করে?আপনি প্লিজ শান্ত হন।(কেঁদে কেঁদে)

এর মধ্যে মেঘ পিটপিট করে চোখ খুলে!আলো মেঘকে তাকাতে দেখে দৌড়ে মেঘের কাছে গেল!রোদও ওর চোখ মুখ মুছে মেঘের কাছে গেল।মেঘ রোদকে দেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। রোদ মেঘকে জড়িয়ে ধরে আর বলে…!!

রোদঃ আমি আছি তো সোনা!কাদবি না তুই (বুকের জড়িয়ে ধরে)

মেঘঃ আমি আম্মুর কাছে যাবো দাভাই!আমি আর দুষ্টুমি করবো না! আম্মুর সব কথা কথা শুনবো তুমি আম্মুকে তারাতারি চলে আসতে বলো দাভাই!আমার কষ্ট হচ্ছে দাভাই তুমি আম্মু কে বলে দাও (কেঁদে কেঁদে)

রোদঃ হুমম বলবো তো!তুই যদি কাদিস তাহলে আম্মু আর আসবে না।তুই কাঁদিস না ভাই আমার। (রোদ ওর চোখের পানি মুছে)

রোদ আর কোন উপায় না পেয়ে বাসায় ফিরে গেল!আলো আর মেঘকে বাসায় রেখে তারপর কোন উপায় বের করবে!মেঘ কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে আলোর কোলেই ঘুমিয়ে গেল!আলো সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে আর চোখের কোণা বেয়ে অঝোরে পানি পড়তে আছে..!!আলো চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলছে!

আলোঃ অভাগীদের কপালে যা থাকেনা সেটা জোর করে পাওয়া যায় না।নিজের বাবা মায়ের ভালবাসা পায়নি কোনদিন!এখানে এসে বাবা মায়ের ভালবাসা একটু পেয়েছি আল্লাহ তুমি সেটাও কেড়ে নিলো।আমাকে এত অভাগী কেন বানালে অাল্লাহ!আমার কপালে কেন সুখ সহ্য হয় না!কেন এত বিপদ আসে আমার জীবনে?আমি কেন সবার মত একটু সুখে থাকতে পারিনা!আর কত বার আমাকে আমার আপনজন হারানো কষ্ট সহ্য করতে হবে আল্লাহ! আর
আমি এই নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে এখন সামলাবো কি করে?এ কেমন নিষ্ঠুর তোমার লীলা অাল্লাহ।এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের কেন ফেললে আল্লাহ??(কেঁদে কেঁদে)

রোদের মনে হচ্ছে এখনই যদি ওর নিঃশ্বাসটাও এখানে থমকে যেত তাহলে ভালো হতো!রোদ ড্রাইভার আংকেলকে উনার বাসার কাছে নামিয়ে দিয়ে রোদ ওদের বাসায় চলে গেল।রোদ গাড়ি থেকে নেমে মেঘকে কোলে নিয়ে বাসায় ঢুকে একটা রুমে শুইয়ে দিলো!তারপর ড্রয়িং রুমে এসে আকাশ, আবির, কে ফোন দিয়ে ইমিডিয়েট ওর বাসায় আসতে বললো।আবির আর আকাশ একসাথে ছিলো তাই তারাতারি চলে আসে!রোদের মুখে সব শুনে ওরাও অবাক হয়ে যায়!আর কিছু বলার ভাষা হারিয়ে গেছে ওদের!তারপর তিন জন মিলে যে যার মত করে চেষ্টা চালাতে থাকে যাতে রোদ ওর বাবা মায়ের মৃত দেহটা যেন অত্যন্ত পায়।রোদ, আবির, আকাশ অনেক চেষ্টা করেও কোন আশার আলো খুঁজে পেল না।রোদের করা সব আশায় এক নিমেষই শেষ হয়ে গেল।এখন বাসাটা একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে..!!

আবিরের বড় ভাই পুলিশের বড় কর্মকর্তা সে ড্রাইভারকে সন্দেহ করে এবং ড্রাইভারকে অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করে!কিন্তু ড্রাইভারের কোন দোষ নেই সে সব সত্যি কথায় বলছে! এবং আবিরের বড় ভাই রামগড়ের স্থানীয় মানুষের কাছে খোঁজ নিয়েও জানতে পারে যে হ্যা সত্যি এক্সিডেন্ট হয়েছে!আলো, রোদ, মেঘ এদের কাছে এই বাসাটাই আজকে সকাল অবধি সুখের রাজ্য ছিলো!কিন্তু এখন এই বাসাটাই এখন কেমন থমকে গেছে চারদিকে শূন্যতা বিরাজ করছে।আস্তে আস্তে সবাই জেনে যায় যে রোদের বাবা মা মারা গেছে..!!দূরে কাছের সব আত্মীয় স্বজনরা রোদের বাসাতেও চলে আসে…!!

আকাশ, আবির,আশা, রিদি সব বন্ধুরা মিলে রোদের রুমে যায়! আর গিয়ে দেখে রোদ মেঝেতে বসে বেডের সাথে হেলান দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে!আবির গিয়ে রোদের কাঁধে হাত রাখতেই রোদ ওর চোখের পানি মুছে নিলো।আবির রোদকে উদেশ্য করে বললো…!!

আবিরঃ আমার জানা নেই ভাই এখন তোকে কি বলবো!রোদ নিজেকে সামলানোর চেষ্টা কর!তুই এমন করলে মেঘের কি হবে?(কেঁদে কেদে)

রিদিঃ রোদ ভাই আমার এত ভেঙ্গে পড়িস না।পৃথিবীতে কেউ চিরদিনের জন্য বেঁচে থাকো না।কেউ আগে যায় আর কেউ পরে যায়।এটাই যে সৃষ্টিকর্তার নিয়ম। কারো বাবা মা বেঁচে থাকবে না চিরদিন…!! (কেঁদে কেঁদে)

রোদঃ সেদিন আসার সময় যদি জানতাম যে , ওইটাই হবে আমার জন্য শেষ বারের মত আমার আব্বু আম্মুকে জড়িয়ে ধরা!আর সুযোগ পাবো না আমি তাদের জড়িয়ে ধরার! তাহলে বিশ্বাস কর তোরা আমি তাদের আমার বুকে থেকে কখনোই ছাড়তামই না।আমিই মনে হয় পৃথিবীর সব থেকে অভাগা সন্তান রে! যে শেষ বারের মত বাবা মায়ের মুখটা দেখারও সুযোগ পেলো না। (আবিরকে জড়িয়ে ধরে)

আশাঃ একটা অসহায় মেয়ে যার সব দায়িত্ব আন্টি তোকে দিয়ে গেছে!তুই নিজেকে শক্ত কর রোদ!তোকে শক্ত হতে হবে!আন্টি আংকেলের মত তোকে ওদের সামলে রাখার (ছলছল চোখে তাকিয়ে)

আবিরঃ আমরা সবাই তোর পাশে আছি ভাই!তুই ভেঙ্গে পড়িস না।তোকে ভেঙ্গে পড়তে দেখতে আলো আর মেঘকে সামলানো যাবেনা!

আকাশঃ আন্টি আংকেল তোর কাছে তাদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলোকে আমানত হিসেবে রেখে গেছে!তুই যদি শক্ত না হস তাহলে তাদেরকে কি করে দেখে রাখবি বলতো।আলো আর মেঘের কথা ভেবে নিজেকে শক্ত কর ভাই!তুই ছাড়া ওরা যে একেবারেই নিঃস্ব।

রিদিঃ মেঘ আলো তোমরা এদিকে এসো!ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন??(দরজার দিকে তাকিয়ে)

রোদ ছলছল চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আলো আর মেঘ কেঁদে কেঁদে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে!রোদ ওদের দিকে তাকাতেই দুজনই একসাথে রোদের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে!উপস্থিত সবাই ওদের তিনজনের কান্না দেখে ওরাও হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।আলো আর মেঘ শব্দ করে হাউমাউ করে কাঁদছে আর রোদ ওদের বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে…..!!

আবির আর আকাশ বাসায় কুরআন পড়ানো,আর দোয়া করানোর ব্যবস্তা করে!এতিম বাচ্চাদের বাসায় এনে ওদের দিয়ে দোয়া করানো হয়! যাতে রোদের বাবা মায়ের আত্মা শান্তি পায়!তারপর দোয়া পড়ানো শেষ হতেই পরিপূর্ন বাসাটা একে একে শূন্য হতে থাকে!আবির আর আকাশ মিলে রোদকে জোর করে একফোটা পানিও খাওয়াতে পারেনি……!!

রাত ১২ টার দিকে রোদের সব বন্ধুরাও চলে যায়।শুধু রোদ, আলো আর মেঘ থেকে যায় নিশব্দ এই প্রানহীন বাসায়……!!

To be continue ….!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here