#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_50
🍁🍁
রোদ মুচকি মুচকি হাসছে আর মনে মনে হাজারটা বুলি আওয়াচ্ছে।রোদ আলোকে কপালের আদর দিয়ে দিলো….!!
–বিয়ের পর কি আসলেই শারীরিক,মানসিক,সৌন্দর্যের বদল ঘটে।যদিও আমি এই কথাতে বিশ্বাসী না !তবুও এখন কেন জানি মনে হচ্ছে কথাটা মিথ্যে নয়।কোন সাজ নেই,এলোমেলো চুল,আর গভীর নিন্দ্রায় আচ্ছন্ন একটা মেয়েকে এতটা সুন্দর লাগার কারন কি?আসলেই আমার বউটা কি এই সুন্দরী নাকি আমাকে চোখে ওকে এত সুন্দর দেখাচ্ছে?নাকি আমার ছোয়াতে ওর সৌন্দর্য আরো দ্বিগুন হয়ে গেছে।(মনে মনে)
একটুপরে আলো পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে রোদ ওর দিকেই তাকিয়ে আছে!আলো রোদের দিকে থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।রোদ মুচকি হেসে এক হাতের উপর ভর দিয়ে আলোর দিকে ঘুরে মুখে দুষ্টু হাসির রেখার টেনে বললো..!!
–মিসেস রোদ মেহবুব শুভ সকাল!কেমন আছেন?
–শুভ সকাল!ভালো আছি!আপনি??(মিষ্টি করে হেসে)
–আলহামদুলিল্লাহ আমিও অনেক ভাল আছি..!!
–তারপর বলুন আপনার ভুল ধারণা কাটলো কি না?
–কিসের ভুল ধারণা??(ভ্রু কুচকে)
–এই যে আপনি বিয়ের আগে যে ভুল ধারণা গুলো আপনার মনে পোষণ করে রাখতেন ফাস্ট নাইট নিয়ে!সেটাই কথায় আমি বলছি…!!(দুষ্ট হেসে)
–আমি কিছু ভাবতাম সেটা আপনি কি করে জানলেন?(অবাক হয়ে)
–জানা টা কি স্বাভাবিক নই।প্রতিটা ছেলে মেয়েই ভাবে তাই না..!!
–হুম ভাবতাম তবে আপনি আমার ধারণাটা ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছেন??
–হা হা হা! যেমন??
–আমি জানতাম ফাস্ট নাইট মানে হ..(বলতে না দিয়ে)
— ফাস্ট নাইট মানে জোর করা,বাইট দিয়ে পুরো শরীরে দাগ করে দেওয়া , বর রা তাদের হিংস্র রুপ ধারণ করে,আর শারীরিক ভাবে খুব কষ্ট দেয় এটাই তো মনে করেছিলো তুমি তাই তো।শুধু তুমি না তোমার আমার মত সব ছেলে মেয়েরাই এমনটা ভাবে।আর এসব ভাবার কারন গল্প, মুভি,নাটক এসব দেখেই এমন ধারণা করে থাকে।আসলে রিয়েল লাইফটা তা না!যদি ভালবাসা বলে কিছু থাকে তো কেউ এমন করবে না! বউটা তো আমার তাহলে এত হিংস্র হওয়া কি আছে?তবে কোন কোন ছেলে মনে করে মেয়েদের শরীর মানেই আছড়ে,কামড়ে,কষ্ট দেওয়ার মাঝেই সুখ।তারাই হয়তো এমন করেই পৈশাচিক আনন্দ পায়!কিন্তু যাকে ভালবাসি এত কষ্ট দেই কিভাবে?শরীরে দাগ না করে কি আপন করা যায় না..??(আলোর নাক টেনে)
–সবাই যদি আপনার মত ভাবতো তাহলে অনেক ভালো হতো??
–ভালো হতো বলতে?
–আপনার মত করে যদি প্রতিটা ছেলে এমন করে ভাবতো! তাহলে বৈধ ধর্ষণ বলে কিছু থাকতো না।বিয়ের রাতে মুখ বুঝে শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে হতো না।বিয়ের পরের দিন সকালে শরীরে কামড়ে দাগ গুলো লুকানোর জন্য কোন মেয়েকে লজ্জায় কুকড়ে থাকতে হতো না।আর আপনার মত করে কোন ছেলে যদি ভাবতো তাহলে বিয়ে রাতেই এত এত লোককে জানিয়ে লজ্জার মাথা খেয়ে নববধূকে হসপিটালে এডমিট করতে হতো।আশ্চর্য হলেও এটাই আমাদের সমাজে অহরহ ঘটে থাকে।(রোদের দিকে তাকিয়ে)
–তাই বুঝি (মুচকি হেসে)
–হুমম!তবে শরীরে দাগ নিয়ে রুম থেকে বের হওয়া আর বিয়ের রাতেই হসপিটালে এডমিট হওয়া এসব যে কতটা লজ্জার সেটা শুধু একটা মেয়েই জানে।(আলো)
–সবাই তো আর এক না তাই না!কেউ বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করে! আর কেউ কোন কিছু না ভেবে হুট করে যেকোন কাজ করে ফেলে।এর ফলাফল পরে তাকে ভুগতে হয়। এটা যদিও বোকামি…!! (রোদ)
–হুমম..সেই তুলনায় আমি খুব লাকি!!(মুচকি হেসে)
তারপর রোদ আর কিছু না বলে আলোর কপালে আদর দিয়ে দেয়।আলো উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে সাওয়ার নিয়ে একেবারে অজু করে বেরিয়ে আসে।আলো ওয়াশরুমে থেকে বের হয়ে দেখে রোদ উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে! আলো বারান্দায় টাওয়াল মেলে রুমে আসতেই রোদ চোখ বন্ধ করেই বললো…!!
–পুরো রুমে বউ বউ গন্ধে মো মো করছে..!!
–বউ বউ গন্ধ এটা আবার কি??(ভ্রু কুচকে)
–এখন যেটা রুমে পুরো ছড়িয়ে গেছে সেটা
–জ্বি না! এটা ডাভ সাবানের গন্ধ হাদারাম(মুচকি হেসে)
–ওইটা তো আমার বউয়ের শরীর থেকেই আসছে তাই না।এজন্য এটাকে বউ বউ গন্ধ বললাম! বুঝলেন ম্যম
–হুমম!এবার উঠে ভদ্র ছেলের মত সাওয়ার নিয়ে নামাজ পড়ে নিন।
–জ্বি অবশ্যই কেন নই…!!(মুচকি হেসে)
তারপর রোদ ওয়াশরুমে চলে গেল আর আলো নামাজে দাড়িয়ে গেল।রোদ সাওয়ার নিয়ে মেঘের রুমে গেল আর মেঘকে ওর রুম থেকে টেনে তুললো।মেঘকে সাথে নিয়ে রোদ অজু করে নিলো।তারপর দুইভাই একসাথে নামাজ পড়ে নিলো….।
আলোর নামাজ পড়ে রান্না ঘরে গেল! তারপর ব্রেকফাস্ট বানানোর কাজে লেগে গেল।শিউলি আলোর ভেজা চুল গুলো মুচকি হেসে কাজে মনযোগ দিলো।রোদ আর মেঘ নিচে এসে বাগানের দিকে গেল তারপর কিছুক্ষন হাটাহাটি করে ব্রেকফাস্ট সেরে নিলো।রোদ আলোকে রান্না ঘরের কাজ তারাতারি শেষ করে ফেলতে বললো” কারন রান্না করার জন্য কিছু লোক আসবে। এর মধ্যে আরো কিছু লোক এসে বাড়িটা অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়ে চলে গেল।আলো রোদের কথা মত কাজ শেষ করে রান্নাঘর থেকে চলে গেল!সকাল ১১ঃ৩০ টা মধ্যে রোদের সব বন্ধুরা, আশে পাশের প্রতিবেশিরাও চলে আসলো।আলো আর মেঘ কিছু বুঝতে পারছেনা ওরা শুধু বসে বসে কি হচ্ছে তাই দেখছে।রোদ রিদি, আশা আর আবৃতিকে ইশারা করে বললো আলোকে উপরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। রিদিরা আলোকে নিয়ে উপরে চলে গেল।রোদ একটু পর গিয়ে লাল আর গোল্ডেন কম্বিনেশনের একটা কাতান শাড়ি,আর হালকা কিছু গয়না দিয়ে গেল!একটু দুরে দাড়িয়ে রিদি রোদকে কিছু বলতেই রোদ রিদির মাথায় চাট্টি মেরে হাসতে হাসতে চলে গেল।রোদের কথা মত রিদিরা আলোকে সাজিয়ে দিতে শুরু করলো।
শাড়িটা আলোকে বাঙালিভাবে পড়িয়ে কোমরে একটা কোমর বন্ধনী,গলায় খুব সিম্প্যাল ডিজাইনের একটা নেকলেস,কানে দুল,সাইডে সিঁথি করে চুল খোঁপা করা আর কপালের মাঝখানে চুলের ভেতর দিয়ে কপালে টিকলি দেওয়া। দুই হাতে সোনার চুর আর হালকা মেকাব চোখে টানা কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। আর আলোর চুলের খোঁপাটাতে ২১ টা গোলাপ ফুল দেওয়া! আর খোঁপার পাশে বেলি ফুলে গাজরা দেওয়া। চুল অনেক তাই খোঁপাও হয়েছে অনেক বড় এজন্য ২১টা গোলাপ লাগছে। রোদ এনেছিলো ২৫ টা গোলাপ….!! আলোর খোঁপার চুল দেখা যাচ্ছে না কারন চুল তো গোলাপে ঢাকা আর রোদ এভাবে রিদিকে সাজাতে বলছে।রিদি, আবৃতি, আশা আলোর সাজানো শেষ করে তিনজন তিনজনের দিকে তাকিয়ে আছে!ওরা কেউ কল্পনা করেনি রোদের কথা মত আলোকে সাজালে আলোকে এতটা সুন্দর দেখাবে….!!(আপনারা কেউ নজর দিয়েন না)
রোদ মেঘও রেডি হয়ে গেল!রোদ ব্লু পান্জাবী আর কালো জিন্স পড়ছে!আর মেঘের পুরো ড্রেসআপ ব্ল্যাক..!!রিদি,আশা, আবৃতি সবাই একসাথে সিঁড়ি দিয়ে নামছে।যাদের ইনভাইট করা হয়েছিলো তারা সবাই এসে গেছে।রোদ আলোর দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হলো।রোদ আলোর দিকে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো! কারন উপস্থিতি এত গুলো মানুষের সামনে নিজের বউয়ের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকাটা বেমানান।মেঘ দৌড়ে আলোর কাছে যেতে নিলে কার্পেটে বেঁধে দুম করে পড়ে গেল!আলো দ্রুত পায়ে হেটে মেঘকে তুলে মেঘের ড্রেস ঠিক করে দিলো।রোদ এগিয়ে এসে একে একে সবার সাথে আলোর পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। আর আলো মুচকি হেসে সালাম দিয়ে সবার সাথে কথা বলছে!এর মধ্যে মেঘ আলোর হাত ধরে একটু দুরে নিয়ে গেল আর দুইটা মহিলাকে দেখিয়ে বললো..!!
–বউমনি ওইটা লাবলু কাকুর বউ(আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে)
–আঙ্গুল দিয়ে দেখিও না!উনারা পঁচা মনে করবে
–বউমনি ওরা কি লোভী তাই না??
–কেন??
–আমাদের বাসায় পোলাও এর গন্ধ পেয়ে কেমন হ্যাংলার মত চলে এসেছে।(দাঁতে কটমট করে)
–বড়দের নিয়ে এভাবে কথা বলতে নেই মেঘ সোনা!উনারা তো আমাদের বড় তাই না।
–বড় হলেও ওরা কুটনি,ডাইনি শুধু পঁচা কথা বলে।
–আবার..!!
–সরি! সরি! (এক কান ধরে)
–হুমম
রোদ এসে আলোকে নিয়ে এবার লাবলু আংকেলরা যেখানে আছে সেখানে গেল।উনারা যে রোদ আর আলোকে নিয়েই ফিসফিস করছিলেন সেটা ওদের আড়চোখে তাকানো দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রোদ উনাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো….!!
–আসসালামু আলাইকুম!কেমন আছেন
আংকেল -আন্টি..??(মুচকি হেসে)
–আলহামদুলিল্লাহ আমরা ভাল আছি!তোমরা কেমন আছে??
–আলহামদুলিল্লাহ আমরাও অনেক ভাল আছি..!!
–তা রোদ তুমি বিয়ে করলে কবে? না শুনলাম আর না দেখলাম..?
–সূবর্ণপুর গিয়ে আমাদের বিয়ে হয়েছে!এখানে তো আমাদের কোন রিলেটিভ নেই। এজন্য জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি..!!(মুচকি হেসে)
–তা মেয়ের তো দেখছি ভালোই ভাগ্য!রাজকুমার আর রাজত্ব একেবারেই পেয়ে গেছে!(আন্টি)
–হুমম !তবে আমি মনে করি আমাদের ভাগ্য ভালো যে, আমরা ওর মত মেয়েকে এই বাড়ির বউ হিসেবে পেয়েছি।এদিক থেকে আমাদের ভাগ্যও অনেক ভাল বলতে পারেন।(রোদ মুচকি হেসে)
–এই মেয়ে তোমার নাম কি?(আন্টি)
–আতকিয়া ইবনাত আলো (আলো)
–তা আন্টি আপনার বাসার রক্ষিতারা আসেনি?ওদের যে দেখতে পাচ্ছি না(রোদ আশেপাশে তাকিয়ে)
–রোদ এসব কি বলছো?আমাদের বাসার রক্ষিতা মানে কি??ভদ্র ভাবে কথা বলো..(আংকেল রেগে গিয়ে)
–আপনার দুই ছেলের বউয়ের কথা বলছি আংকেল?
–তোমার সাহস কি হয়ে আমার ছেলের বউদের রক্ষিতা বলার?(আন্টি উঠে দাড়িয়ে)
–শরীরে খুব ফুটছে কথাগুলো তাই না!আমার কলিজাতে হাত দিয়ে কথা বললে আমি চুপ থাকবো আপনারা ভাবলেন কি করে?তা এবার বলুন আপনার সাহস কি করে হয় আমার বউকে রক্ষিতা বলার!আগে নিজের ভাষা আর ব্যবহার ঠিক করুন! তারপর অন্যের দিকে আঙ্গুল তুলতে আসবেন।আপনার বাসার বউরা যদি রক্ষিতা না হয়! তাহলে আমার বাসার বউকে রক্ষিতা বলার অধিকার আপনাকে কে দিলো?বড় হয়ে যদি নিজের সন্মান নিজে ধরে রাখতে না পারেন! তো ছোট হয়ে আমরাই বা আর কি করবো?আংকেল আপনার ওয়াইফ মেঘকে জিজ্ঞাসা করছে? আলো আমার বাসার রক্ষিতা কি না?মেঘ এক বাচ্চা সে তো এই লেইম কথাটার গভীরতা বুঝতে পারেনি। আর একটা বাচ্চাকে এসব কথা বলবে কেন উনি??লাস্ট ওয়ানিং দিলাম আপনাদের সেইম ভুল করলে এখানে থাকাটা আপনাদের জন্য দুষ্কর হয়ে যাবে!এখন যদি বলেন যে হুমকি দিচ্ছি কি না তাহলে বলবো হ্যা তাই…!!আর হ্যা আলো আমার বিয়ে করা বউ! ওর দিকে আঙুল তোলার আগে এবার থেকে দশ বার ভাববেন।আর অবশ্যই দুপুরে লান্চ করে যাবেন! আর আমাদের জন্য দোয়া করে যাবেন..!!(রোদ মুচকি হেসে ঠান্ডা মাথায় বাঁশটা দিলো)
আলো রোদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে!রোদের মনে যে এমন কিছু ছিলো আলো কল্পনার ক করেনি!এমন হেঁসে হেঁসে যে কাউকে এত সুন্দর করে বাঁশ গিলানো যায়! সেটা রোদকে না দেখলে বোঝা যেত না!মাশাল্লাহ দুই ভাই পুরাই বারুদ।কেউ কারো কথা গিলতে পারেনা!একজন সাথে একশন নেই আর আরেজন ভেবে চিন্তে ঠান্ডা মাথায় বাঁশ দেই!এদের দুই ভাইকেই অস্কার দেওয়া উচিত।
To be continue…!!
(আপনারা চাইলে এবার থেকে রেগুলার গল্প দিবো!তবে আপনাদের রেসপন্স করতে হবে।আপনাদের জন্যই তো লিখি তাই না…😊😊)