এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_57 🍁🍁

0
768

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_57
🍁🍁

আমি যদি আর মেঘকে ভালবাসতে না পারি।আমার মেঘটা যে খুব কষ্ট পাবে।আমি মাকে কথা দিয়ে মেঘকে কষ্ট পেতে দিবো না।আমি পারবো না এই বাবুটা রাখতে!আমি মেঘের আদরের ভাগ বসাতে দিবো না..!! মেঘই আমার সন্তান আর সন্তান লাগবেনা আমাদের।
–যদি মেঘ এই বাবুটা রাখতে বলে তাহলে??তাহলেও কি মেঘকে এই কথায় বলবে??(রোদ)
–মানে?
–ওয়েট..

রোদ মেঘের রুমে গিয়ে মেঘকে তুলে আনে! আজকে মেঘও কেন জানি তারাতারি ঘুম থেকে উঠে শুয়ে শুয়ে গেম খেলছিলো।রোদ মেঘকে কোলে তুলে ওদের রুমে নিয়ে আসে আর দুই ভাই আলোর সামনে বসে! মেঘ আলোকে কাঁদতে দেখে চোখ বড় বড় করে রোদের দিকে তাকিয়ে থাকে। রোদ একবার আলোর দিকে তাকিয়ে মেঘের দিকে তাকালো!রোদ মুচকি হেসে মেঘকে বললো….!!

–মেঘ তুই মনে কর যে তোর বউমনির পেটে ছোট্ট একটা বাবু আছে। বেশ কিছুদিন পর আমাদের ঘর আলো করে আমাদের বাসায় আসবে। তাহলে কি তুই কষ্ট পাবি??(রোদ)
–কষ্ট কেন পাবো?আমি তো বাবুটাকে কোলে নিবো সবাইকে দেখাবো। আদর করবো, এত এত ভালবাসবো।
–কেউ যদি বাবুটাকে এখন মেরে ফেলতে চাই তাহলে তুই কি করবি??মনে কর আমিই মেরে ফেললাম তাহলে কি করবি?
–তাহলে আমি তোমার সাথে কোনদিন আর কথা বলবো না দাভাই! কেন বাবুটাকে মারবে তুমি বলো?সে তো কোন দোষ করেনি তাহলে কেন মারবে?(মেঘ)
–যদি তোর বউমনি মারতে চাই তখন??(রোদ)
–আমার বউমনি এমন কাজ করতেই পারেনা।আমি জানি আমার বউমনি বেস্ট।(আলোর গলা জড়িয়ে)
–মেঘ তুই সত্যি কষ্ট পাবি না তো??
–না দাভাই আমি একটুও কষ্ট পাবো না। বরং একটা বাবু আসলে আমার ভালো হবে বাসায় একটা খেলার সাথী তো পাবো।বাসায় একা একা ভালো লাগেনা আর আমার বন্ধুদের সবার ছোট ভাই বা বোন আছে আমার তো নেই (মন খারাপ করে)
–তোর খেলার সাথীও আসছে খুব তারাতারি (রোদ)
–সত্যি দাভাই! সে কোথায় এখন?
–তোর বউমনির পেটে(ছলছল চোখে আলোর দিকে তাকিয়ে)
–বউমনি দাভাই কি সত্যি বলছে বউমনি??বউমনি বলো না প্লিজ (খুশিতে লাফালাফি করে)
–হুম মেঘুসোনা (আলো)
–ইয়াহু!

আলো ওর উওর পেয়ে গেছে! মেঘ খুশিতে এক দৌড়ে ওর রুমে গিয়ে ওর বন্ধু ফোন দিতে গেল।আর আলো রোদের বুকে হামলে পড়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।রোদ অবাক হয়ে গিয়েছিলো তখন কারন আলো মেঘকে ঠিক কতটা ভালবাসলে তাদের নিজেদের সন্তানকে ত্যাগের কথা বলতে চাইতো।আজকে রোদ আবার প্রমান পেলো ওর আম্মু বেস্ট একজন জীবন সঙ্গী খুঁজে এনে দিয়েছে। আলোর কথাগুলো শুনে রোদ প্রথমে রাগ করলেও পরে কথাগুলো ভেবে আলোর জন্য গর্ববোধ হচ্ছে। আলোর মত কতজনই বা পারে এমন করে ভাবতে…!!


সকালে ব্রেকফাস্ট করতে করতে রোদ আর মেঘ যে কি গুজুর গুজুর করছে ওরাই জানে….!আলো শুনতে গেলে দুজনেই চুপ। শিউলি (কাজের মেয়ে)কে আলো খুশির খবরটা জানালো! উনি এখানে আছেন অনেক বছর ধরে। উনি কথাটা শুনে খুব খুশি হয়েছে।আলো ব্রেকফাস্ট করে ওর কাজের রুমে চলে গেল কারন দুইদিন পর ওর জন্য সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। আলো ওর পেটের উপর হাত রেখে বললো…!!
–আল্লাহ তোকে আমাকে কাছে পাঠিয়েছে।আল্লাহ তোকে হেফাজত করবে।

আলো সাফিনকে ফোন দিলো। তারপর ওর মত ও কাজে লেগে গেল।এর মধ্যে মেঘ বা রোদ একটু পর পর এসে আলোকে এটা ওটা খাইয়ে যাচ্ছে। রোদেরটা না খেলেও মেঘ মুখের সামনে খাবার ধরলে আলো সেটা ফিরিয়ে দিতে পারেনা। তাই বাধ্য হয়ে খেয়ে নেয় আর এইখানে এই চালটা রোদ দেয়। বার বার মেঘ আলোকে কোন না কোন খাবার দিয়েই আসে…!!

যেহেতু ঢাকাতেই অনুষ্ঠানটা হবে তাই সব ডিজাইনারদের তিনদিনের জন্য থাকার জন্য কতৃপক্ষরা সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আলো ওর সব কাজ কম্পলিট করে ফেলছে।আগে ১০ জন ডিজাইনার বেঁছে নেওয়া হবে তারপর সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে বেস্ট ডিজাইনারকে খুঁজে নেওয়া হবে।

আলো রোদের একটা হাত ধরে চুপটি করে বসে আছে।আলো যে প্রুচুর পারিমানে কাপছে সেটা রোদ খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে।রোদ আলো দুই গালে হাত রেখে মুখটা তুলে বললো..!!
–এভাবে কাপছো কেন তুমি?
–না মানে এমনি
–ভয় পাচ্ছো,কিসের ভয় বলো তো?আমি তো আছি তোমার পাশে তাই না।আলোমনি ভালবাসি তো খুব(চোখে চোখ রেখে)
–হুমম
সামনে জাজ রা বসে আছে!একজন ছেলে আর মেয়ে এংকারিং করছে। ছেলেটার আর মেয়েটার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে এরা যথেষ্ট স্মার্ট। এর মধ্যেই
৫০ জন ডিজাইনারদের মাঝে ১০ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে।এর মধ্যে আলোর নাম আছে।এই ১০ জন ডিজাইনার ১৫ টা করে ড্রেস বানিয়ে নিয়ে এসেছে।এই সেই ড্রেস গুলো মডেলরা পড়ে র‌্যাম্প শো করবে!তিন জন ডিজাইনার এর ড্রেস নিয়ে মডেলরা র‌্যাম্প শো করে ফেলছে এবার আলোর ড্রেস গুলো নিয়ে র‌্যাম্প শো করার পালা!আলো গিয়ে মডেলদের ড্রেস দেখিয়ে দিলো।তারপর শুরু হলো র‌্যাম্প শো….!!

জাজ রা পোশাকের ধরণ, ডিজাইন এর উপর মার্ক করছে!পর পর ১৩ টা ড্রেস পড়ে র‌্যাম্পে হাটা শেষ করলো!এর পর হঠাৎ করে রোদকে স্টেজের উপর দেখে আলো হতভম্ব হয়ে হা করে তাকিয়ে থাকে!কারন রোদের এক্সপেশনটা ছিলো সবাইকে পাগল করার মত। রোদের পরনে আলোর তৈরী ডিজাইনার করা ব্ল্যাক কালার পান্জাবী আর আর কালো জিন্স আর ব্ল্যাক কালার সানগ্লাস ।রোদ র‌্যাম্প শো করে চলে গেল এর পর মেঘ এন্টি নিলো।মেঘেরও ডিজাইনার পান্জাবী তবে মেঘ পড়ছে হালকা আকাশি রঙ এরটা। মেঘ র‌্যাম্প শো করতে করতে পেছনে ফিরে একদিক ওদিক তাকিয়ে একটু ভাব নিয়ে চলো গেল। এর মধ্যে রোদ আবার এসে দুই ভাই একসাথে হাটলো!উফফ! দুইজনেই লেডি কিলার লুকে আছে। রোদ আর মেঘ চলে যেতেই সব মডেলগুলো এক সাথে এসে আবার হেটে গেল…..!!
রোদ আর মেঘের এই এন্ট্রি হবে আলো জানতো না কারন রোদ সাফিনকে বলে ম্যানেজ করছে।এভাবে পর পর সব ডিজাইনারদের ড্রেস দেখানো শেষ।
এবার ফলাফলের পালা…!!

৩০মিঃ পর ফলাফল দিলো যে ১০ মাঝে ৫ জনকে সিলেক্ট করছে আর এই ৫ জনই ফাইনালে যেতে পারবে।এই ৫ জনের মাঝে আল্লাহর রহমতে আলোর নাম আছে। সাফিনের স্টুডেন্টের মধ্যে আলো আর সাবা ফাইনাল পর্যন্ত এসেছে।এর মধ্যে একজন জাজ এনাউন্স করলো যে এভাবেই পরীক্ষাটা হবে একটু অন্যরকম কারন ডিজাইনরা যে অন্য কারো থেকে ড্রেস বানিয়ে এনে সেটা শো অফ করছে না এর কোন গ্যারান্টি নেই। তাই জাজদের মতে এখন এই ৫ জনকে ৩ ঘন্টা করে সময় দেওয়া হবে! আর এই সময়েই মধ্যে যে একদম ইউনিক ড্রেস বানাতে সক্ষম হবে! সেই হবে এই এখানকার ডিজাইনার গুলোর মধ্যে একজন বেস্ট ডিজাইনার..!! এই কথা শুনে সবাই বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে। আলো ছলছল চোখে রোদের দিকে তাকালো। রোদ ইশারায় বোঝালো রিল্যাক্স হয়ে কাজ করতে কারন তাড়াহুড়ো বা হাইপার হয়ে গেলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। জাজ রা একটা রুম দেখিয়ে দিলো আর ওই ৫ জনকে বললো যার যা দরকার সেগুলো নিয়ে ওই রুমে চলে যেতে।

আলো গুটি গুটি রোদের কাছে আসলো রোদ আলোকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক সাপোর্ট করলো।রোদ আলোর কপালে একটা আদর দিয়ে চোখ মুছে দিলো। মেঘও আলোকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিলো। রোদ আর মেঘ আলোকে বেস্ট অফ লাক জানালো। আলো ওর প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ওই রুমে যেতে যেতে রোদ আর মেঘের দিকে ঘুরে তাকালো। রোদ আর মেঘ একসাথে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিলো আলো সেটা দেখে হেসে দিলো আর মনে মনে জোর বাড়িয়ে বললো…!!
“জানি আমি পারবো! আর পারতেই হবে আমার কলিজা দুইটার জন্য হলেও আমাকে পারতেই হবে।হে আল্লাহ আমি তোমার নামে শুরু করছি। আল্লাহ তুমি আমাকে রহম করো। আমি যাতে রোদ আর মেঘের ইচ্ছে পূরণ করতে পারি..!!

তারপর আলো সেই রুমটাই চলে গেল।ওরা সেই ঢোকার সাথে সাথে স্টেজে বড় পর্দার লাইট জ্বলে উঠলো আর বাকি সব লাইট বন্ধ হয়ে গেল।আলোরা যেই রুমে গেল সেখানে কে কি করছে এই পর্দায় সেটা দেখানো হচ্ছে আর সেটা সিসি ক্যামেরার মাধ্যম।কারন ওই রুমের পুরোটাই পুরো সিসি ক্যামেরার আয়ত্বে। ওখানে কে কি করছে সেটা এখানে বসেই দেখা যাবে আর এটার কারন কেউ যাতে চুরি করতে না পারে তাই।

রোদ তো আলোকে বোঝালো বাট রোদের বুকের ধুকপুকানি বেড়ে হাই হয়ে গেছে। রোদেরও কেন জানি একটা ভয় কাজ করছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে! রোদ রুমাল দিয়ে ঘামটা মুছে ফেলে চেয়ারে বসে একটা কথায় মনে মনে বললো…!

!! _______ধৈর্য্যশীল, সৎ আর পরিশ্রমীরা নিশ্চয়ই তারা তাদের কাজের সুমিষ্ট ফল পাবেই। আল্লাহ তোমার ভরসায় আছি…! কারন আল্লাহ তুমি যা কর আমাদের ভালোর জন্যই করো_____!!

To be continue…!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here