এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_18 🍁🍁

0
993

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_18
🍁🍁

______আলো বারান্দা থেকে রুমে চলে যায়! তারপর বেডে শুয়ে পড়ে!আর একটা সময় ঘুমের রাজা এসে আলোর চোখে ভর করে।আর আলো গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।রোদ আলোর রুমে উঁকি মারে! আলো ওর রুমের দরজা আটকে ঘুমায় না কারন আলো ভয় পায় তাই।রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে দেখে পুরো বেড জুড়ে চার হাত ছড়িয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে! রোদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে…!!!
.
.
.

রোদঃ আমার মেরিড বন্ধুদের কাছে থেকে যতটুকু শুনছি তাদের বউরাও নাকি পুরো বেড জুড়ে ঘুমায়।আচ্ছা পৃথিবীর সব মেয়েরাই কি এভাবে পুরো বেড দখল করেই ঘুমায় নাকি কে জানে?কই আমরা ছেলেরা সিঙ্গেল খাটেও তো বেশ গুছিয়ে ঘুমাতে পারি! বাট এই মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছে এত বড় বেডেও ওর হচ্ছে না।(মনে মনে)

রোদ ওর রুমে গিয়ে ডায়রী বের করলো!তারপর উপুর হয়ে শুয়ে ডায়রি লিখতে শুরু করলো….

এই তিলোকন্যা তুমি কি জানো টাওয়াল দিয়ে আগে তোমার মুখটা কেন মুছতে বলেছিলাম…!!

কারন আমি টাওয়ালটা অনেক গুলো আদর দিয়ে দিসিলাম!সেদিন দুপুরে কলেজ থেকে আসার সময় দেখেছিলাম!তোমার নাকে,ঠোঁটের নিচে আর থুতনীতে জমে থাকা সেই বিন্দু বিন্দু ঘাম!আর ঘামার্ত মুখে যে কাউকে এতটা সুন্দর দেখায় তোমাকে না দেখলে বুঝতাম না।জানো তিলোকন্যা ঘাম গুলোকে দেখে আমার খুব হিংসে হচ্ছিলো। বার বার মন চাচ্ছিলো তোমার কপালে একটা ভালবাসার পরশ একে দিতে!আমি তো দিতে পারছিলাম না তাই টাওয়ালে অসংখ্য আদর দিসিলাম!আর তুমি আমাকে অবাক করে দিয়ে তোমার নিজের অজান্তে টাওয়ালটা তুমি প্রথমে তোমার ঠোঁটের উপর রাখলে!আমি জাস্ট বলে বোঝাতে পারবো না! আমি ঠিক কতটা খুশি আর অবাক হয়েছিলাম______!!

এই তিলোকন্যা______!!

তুমি আমাকে দেখে এত ভয় পাও কেন?তুমি তো জানো না তোমার ভীতু ফেসটা আমি ঠিক কতটা পছন্দ করি!তুমি ভয় আর লজ্জা পেলে তোমার পুরো মুখ লাল টমোটোর মত হয়ে যায়!তখন তোমার ঠোঁট অনবরত কাঁপতে থাকে! তুমি জানো তোমার এই ভীতু ফেসটা দেখার জন্য আমি ইচ্ছে করে তোমাকে বকা দেই।আজকে “আই লাই ইউ বলার সময়” কত কষ্টে নিজের হাসি আটকে রেখেছি সেটা শুধু আমি জানি!বোকা মেয়ে দেখলে তো কি ভাবে টেকনিক খাটিয়ে তোমাকে দিয়ে… আই লাভ ইউ কথাটা বলতে বাধ্য করলাম।হা হা হা হা

রোদ ডায়রী বন্ধ করে আলমারীতে তুলে রাখে!তারপর বেডে শুয়ে মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে একটা সময় ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।

পরেরদিন সকালে_______!!

আজকে শুক্রবার তাই দুই রাজপুত্র পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে! আগে থেকে নিষেধ করছে কেউ যেন রাজপুত্রদের ডিস্টার্ব না করে!আলো নিত্যদিনের মত সকালে উঠে পড়ে! নিচে গিয়ে দেখে রোদের আম্মু নাস্তা বানাচ্ছে আলোও হাত হাতে কাজ করে সব খাবার ডায়নিং টেবিলে সাজিয়ে ফেলে।রোদের আবু, আম্মু আর আলো খেতে বসে।কারন মেঘ আর রোদ কখন ঘুম থেকে উঠবে তার ঠিক নেই….!!
.
.
.
১০টার দিকে রোদ ঘুম থেকে উঠে সাওয়ার নিয়ে তারপর নিচে আসে!রোদের আম্মু আলোকে বলে রোদের খাবারটা গরম করে দিতে!কারন রোদ ঠান্ডা খাবার একদমই পছন্দ করে না!আলো মাথা নিচু করে রোদকে খাবার বেড়ে দিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায়!রোদ আলোকে ডেকে বলে….

রোদঃ এই যে রানী এলিজাবেথ এদিকে আসুন!
আলোঃ…

রোদঃ কাউকে খেতে দিয়ে চলে যাওয়াটা অভদ্রতা। তাই আপনি আমার না খাওয়া পর্যন্ত বসে থাকবেন।

আলোঃ আপনি খাবেন তো আমি দাড়িয়ে থাকবো কেন?

রোদঃ খুশিতে ঠেলায় আর কি..!!

রোদের আম্মু রোদের কাছে এসে বললো…!!

রোদের আম্মুঃ রোদ কালকে তোমার মামা ফোন করছিলো!আদিলের(মামাতো ভাই) বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।পরশু গায়ে হলুদ। আমরা কালকে যাবো।

রোদঃ…আমরা মানে?? কে কে যাবে…(ভ্রু কুচকে)

রোদের আম্মুঃ আমি,আলো আর মেঘ কাল যাবো।

রোদঃ তুমি আর মেঘ যাচ্ছো যাও! বাট আলোকে নিয়ে যাওয়ার কি দরকার??

রোদের আম্মুঃ তো আলোকে বাসায় একা রেখে যাবো।এত বড় বাসায় ভয় পাবে তো।

রোদঃ দুই দিন কলেজ করলো কি করলো না এর মধ্যে ক্লাস মিস দিলে হবে?তোমার মেয়ে ডাব্বা মারবে পরীক্ষায়।

রোদের আম্মুঃ মারুক!তুই কবে যাবি তাই বল

রোদঃ আমি এসবের মধ্যে নাই!আমাকে একদম টানবে না।তোমাদের যা ইচ্ছে তোমরা তাই করো।

রোদের আম্মুঃ মানে কি?তার মানে তুই যাবিনা।

রোদঃ না! কারন ওখানকার বিয়ে মানে যত্তসব ফালতু রীতি নীতি।ওইসব দেখলে আমার মেজাজ বিগড়ে যায়।

রোদের আম্মুঃ মানে কি রোদ?তুই না গেলে তোর বড় মামা কষ্ট পাবে।

রোদঃ উফফ আম্মু আমাকে এসবের মধ্যে না টানলে এমন কিছু আসবে যাবে না।তাই আমার কথা বাদ দাও তো..!!

রোদের আম্মুঃ আমার মাথা গরম করবি না রোদ!!!!

রোদঃ আম্মু চিৎকার করছো কেন শুধু শুধু ?আর তুমি আলোকে মামার বাসায় নিয়ে যেতে চাচ্ছো বুঝলাম!বাট ওখানে ওর পরিচয় কি দিবে??একবার ভেবেছো??

রোদের আম্মুঃ কি পরিচয় দিবো মানে কি?বলবো তোর বউ! যা সত্যি তাই বলবো..!!

রোদঃ ওই পিচ্চি একটা মেয়ে আমার বউ!আমার বয়েই গেছে ওকে বউ বানাতে। আর যাতে তাকে আমার গলায় কেন ঝুলাচ্ছো ?

রোদের আম্মুঃ পিচ্চি মেয়ে কি বলছিস?আজকে তোদের বিয়ে দিলে কালকেই তো ওকে তুই বাচ্চার মা বানিয়ে দিবি ।বুঝি না সব বুঝি তাই বড় বড় কথা বাদ দে…!!

রোদঃ আম্মু এসব কি বলো তুমি??মুখে লাগাম দাও।

রোদের আম্মুঃ আমি কি ভুল কিছু বলছি!তুই আর তোর বাপ দুটোই এক রকম।সব সময় নিজেরা যা ভালো মনে করিস তাই করিস।

রোদঃ এখানে আব্বু কি করলো?আব্বু কে শুধু শুধু টানছো কেন??

রোদের আম্মুঃ কেন টানবো না!সব ওই লোকের দোষ। আজকে ওর জন্যই তুই আমার একটা কথা শুনিস না!আজকে ওরে ঝাটা দিয়ে মেরে ভূত যদি না ঝেড়ে দেই তো আমি স্বপ্না মেহবুব না।

রোদ আর ওর আম্মুকে কথা বলতে দেখে আলো অনেক আগে ওর রুমে দৌড় দিসে। তাই আলো কিছু শুনেতে পাইনি।বেচারা রোদের আব্বু কিছু না করলেও কেস খায়। রোদের আম্মু রোদকে আর কিছু না বলে উনার হাজবেন্ডকে উরাধুরা ঝাড়তে শুরু করলো!বেচারা রোদের আব্বু কি হয়েছে সেটাও বুঝলেও না!শুধু অসহায় বাচ্চার মত ওদিক ওদিক তাকাচ্ছে।রোদের আব্বু রুমে থেকে বের রোদের সামনে এসে বললো…!!

রোদের আব্বুঃ রোদ আমাকে একটা হেল্প করো তো আব্বু।

রোদঃ হুমম বলো আব্বু! কি করতে হবে আমাকে?

রোদের আব্বুঃ বলছি তুমি কালকেই তোমার আম্মুর সাথে তোমার মামার বাসায় যাও!প্লিজ আব্বু

রোদঃ আব্বু আমাকে এর মধ্যে টেনো না তো!ওখানে আমার ভালো লাগে না যেতে।

রোদের আব্বুঃ রোদ তুমি যদি না যাও তো তোমার আম্মু আমার জীবন ন্যাতা ন্যাতা করে দিবে।তুমি তো জানো! তোমরা কিছু করো আর সব দোষ আমার ঘাড়ে এসে পড়ে।

রোদঃ….

রোদের আব্বুঃ তাহলে তুমি যাচ্ছো কেমন..

রোদঃ হুমম না গিয়ে কি আর উপায় আছে!যেসব প্যারা থেকে আমি বাঁচতে চাই! ওগুলোই আমার ঘাড়ে এসে জোটে।

রোদের আব্বুঃ রাগ করে আব্বু। যা করবে মাথা ঠান্ডা করে করতে হয়।

রোদঃ ওখানে বিদ্যুৎ থাকে না,প্রচুর গরম,নেটের সমস্যা আর বড় সমস্যা হলো গ্যাদারিং…আর গ্রামের বিয়ে মানেই হাজিবাজি রীতি নীতি আমি এগুলো জাস্ট টলারেট করতে পারিনা আমি আব্বু।

রোদের আব্বুঃ ম্যানেজ করে মাত্র তো কয়েকটা দিন।

রোদঃ হুমম!ধুর শেষ মেষ আমাকে তুমি ফাঁসিয়ে দিলে আব্বু।


রোদের আম্মু হিটলারী বুদ্ধি কাজে দিয়েছে!রোদ খেয়ে ওর রুমে চলে গেল!রোদের আম্মু আবার আরেকটা বুদ্ধি বের করলো!সেটা হলো রোদ আর আলোকে শপিং করতে পাঠানোর! এজন্য উনি রোদের রুমে গেল।

রোদের আম্মুঃ আব্বু তুমি কি এখন ফ্রি আছো?

রোদঃ কেন?কিছু বলবে আম্মু

আম্মুঃ আলোকে নিয়ে শপিং করে এসো!ওর কিছু ভালো ড্রেস লাগবে।

রোদঃ উফফ!আম্মু তোমার কি মাথা গেছে। আমাকে এত টানাটানি করছো কেন??আর তোমার মেয়ের ড্রেস লাগবে তো তো তুমি যাও।আমাকে টানছো কেন শুধু শুধু! আর বড় কথা হলো আমি মেয়ে মানুষের কিছু কি জীবনে কিনছি যে এসব বুঝবো।এসবে আমার কোন ধারনাই নাই…!!

রোদের আম্মুঃ কিনো নি এখন থেকে কিনবে।বেশি কথা বলো কেন?আলোকে আমি রেডি হতে বলছি তুমিও রেডি হও।

রোদঃ আম্মু প্লিজ আমি যাবো না।তুমি যাও…!

আম্মুঃ না!তুমিই যাবে মানে তুমিই যাবে।

রোদঃ আচ্ছা তাহলে কালকে যায়।বাইরে এখন অনেক গরম।

আম্মুঃ না কালকে সকালে আমার বেরিয়ে পড়বো সুবর্ণপুর গ্রামে যাওয়ার জন্য।

রোদ রেডি হয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখে আলো রেডি হয়ে সোফাতে বসে পানি খাচ্ছে। রোদ আলোর মাথা থেকে পা পর্যন্ত তাকায় আর দেখে সবকিছু ঠিক আছে।তারপর রোদ ওর আম্মু বলে আর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো শপিং করার জন্য। একদিকে আলোও যে মনে মনে রোদকে কয়েক দফা গালি দিয়ে দিলো।যদি গালি গুলো রোদ শুনতো তাহলে এতক্ষণে বয়রা হয়ে যেত..!!

To be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here