#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_49
🍁🍁
রোদ ওর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে আবির আকাশকে নিয়ে বেরিয়ে গেলে কি একটা কাজের জন্য….!!
২ ঘন্টা পর রোদ, আবির আর আকাশ বাসায় আসলো তারপর তিনজন হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলো।সবাই অনেক মজা করে খেলো।তারপর আবির, আবৃতি, রিদি,আশা সবাই যে যার বাসায় চলে গেল।আলো মেঘকে আগেই খাইয়ে দিয়েছে তাই মেঘ অনেক আগেই উপরে গিয়ে ওর রুমে শুয়ে পড়ছে।মেঘের রুমের মেঝেতে রকিও শুয়ে আছে।আলো আর শিউলি মিলে ডায়নিং টেবিল গুছিয়ে নিলো,এটো প্লেট পরিষ্কার করে নিলো,রান্নাঘর পরিষ্কার করে সব কিছু ঠিকঠাক করে আলো মেঘের রুমে গেল।মেঘ গেম খেলতে খেলতে ওর বুকের উপরে ফোন রেখেই ঘুমিয়ে গেছে।আলো মেঘকে সুন্দর করে শুইয়ে দিলো, তারপর এসির পাওয়ার কমিয়ে দিয়ে মেঘের শরীরে চাদর টেনে দিলো!আর মেঘের কপালে আদর দিয়ে দিলো….!!
আজকে এশার নামাজটা আলো পড়তে পারেনি তাই আলো ওর রুমে এসে ওয়াশরুমে গিয়ে অজু করে নামাজে দাড়িয়ে গেলো।রোদ ওর রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে দূর আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো!তারপর রোদ ওর রুমে এসে একটা বই নিয়ে আধশোয়া হয়ে শুয়ে বই পড়তে মনোযোগী হলো।এভাবে বেশ কিছুক্ষন পরেও আলো আর মেঘের সাড়া না পেয়ে রোদ উঠে মেঘের রুমে গিয়ে দেখলো মেঘ ঘুমাচ্ছে! তাই রোদ আর কিছু না বলে মেঘের কপালে আদর দিয়ে দিলো! আর মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।তারপর রোদ আলোর রুমের দিকে গেল।
রোদ আলোর রুমে ঢুকে দেখে আলো ওর চুলের সাথে যুদ্ধ করছে!রোদ আলোর রুমের দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আলোর কান্ড দেখতে থাকলো। আলোর চুলে গিট্টু লাগছে কিভাবে কে জানে?বড় চুলে এই একটা সমস্যা! গিট্টু লাগলে সেটা ছাড়াতে গিয়ে জান ন্যাতা ন্যাতা হয়ে যায়!বড় চুলে তেল দেওয়া, শ্যাম্পু করা যে কি জ্বালা সেটা যার বড় চুলে সেই শুধু বোঝে।আলো অনেকটা সময় চেষ্টা করলো! কিন্তু শেষ পর্যন্ত অধৈর্য হয়ে চিরুনী টা বেডের উপর ছুঁড়ে মারলো!তারপর ওর গুলোকে হাত খোঁপা করে হনহন করতে করতে বারান্দায় চলে গেল।রোদ মুচকি একটা হাসি দিয়ে বেডের উপর থেকে চিরুনী নিয়ে বারান্দায় গেল!আর আলোর পেছনে দাড়িয়ে আলোর চুলের খোঁপা খুলে দিলো!আলো আড়চোখে রোদকে দেখে কিছু বললো না চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলো।রোদ এই প্রথম আলোর চুলে হাত দিলো কেমন একটা ভালোলাগা কাজ করছে ওর মধ্যে।তবে রোদের মত প্রতিটা ছেলের মনে তাদের বউয়ের চুল নিয়ে কোন ইচ্ছে আছে কি না জানি না? তবে অনেক ছেলেই চাই তাদের বউয়ের চুল হবে দীঘল কালো কেশ।
রোদ আলোর চুল গুলো দুই ভাগ করে নিলো তারপর যত্নসহকারে আলোর চুলের জট ছুটাতে লাগলো।আলো কিছু বলছেনা চুপটি করে বাধ্য মেয়ের মত দাড়িয়ে আছে!রোদ এর আগের কোন মেয়ের শরীর ঘেষে পর্যন্ত দাঁড়ায় নি আর চুল ধরা তো দূরে থাক।!আলোর চুল বেশি বড় হওয়ার জন্য রোদও একটু হিমশিম খাচ্ছে। তারপরেও রোদ ভালবাসার সাথে অতি দায়িত্ববান হাজবেন্ডের মত আলোর চুল গুলো খুব সুন্দর করে ব্রাশ করে দিলো।রোদের মনের একটা অন্য রকম ভাল লাগার কাজ করছে! সেটা প্রকাশ করলো না। কারন রোদের মতে, সব অনুভূতির কথা মুখে বলে বউয়ের জানাতে নেই! কিছু কিছু কথা অজানা থাকাটাই শ্রেয়!রোদ মুচকি হেসে আলোকে বললো..!!
–মেয়েদের ধৈর্য যে খুব কম এটাই তার প্রমাণ
–মানে??(ভ্রু কুচকে)
–মানে এই যে নিজের চুলের জট খুলতেই তুমি অধৈর্য হয়ে! নাক ফুলিয়ে কি একটা অবস্থা করছো..!! (মুচকি হেসে)
–আপনার এমন চুল থাকলে বুঝতেন(মুখ ভেংচি দিয়ে)
তাই বুঝি!তা কি বুঝতাম শুনি??(গ্রিলের সাথে হেলান দিয়ে)
–এত বড় চুলে শ্যাম্পু করা,তেল দেওয়া, গোসল পর চুল শুকানো,চুল ভেজা থাকলে তো অল্পতেই ঠান্ডা লাগে আমার।আপনি বুঝবেন না এসব কত জ্বালা..!
–আচ্ছা !এবার থেকে আপনার সাথে আপনার চুলের দায়িত্বও আমি নিলাম কেমন..!!(মুচকি হেসে)
–মানে?
–মানে হলো এই যে, চুলে তেল দেওয়া, শ্যাম্পু করা,চুল শুকানোর ব্যবস্থা করা এসব আমি করবো এবার থেকে কেমন।তাও এমন মুখ ফুলিয়ে থাকবেন না। (পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে আলোর কাঁধে থুতনি রেখে)
আলো হালকা কেঁপে উঠলেও রোদকে কিছু বললো না! চাঁদনী রাত,সাথে ভালবাসার মানুষটি,বাগান থেকে ভেসে আসা বেলি আর হাসনাহেনা ফুলের সুগন্ধে চারদিকে মৌ মৌ করছে।রাতের অন্ধকারে ঢাকা শহরটা যেন আরো বেশিই সুন্দর দেখায়!মাথার উপরে জ্বলজ্বল করছে লক্ষ কোটি তারকার মেলা।এটা যেন খুব সুন্দর একটা মুহূর্তে ওদের কাছে।রোদ আলোর কানের কাছে স্লো ভয়েজে বললো…!!
–আমি যদি কিছু চাই এখন তোমাকে কাছে থেকে!তাহলে কি আমাকে সেই জিনিসটা পেতে দিবো?
–ক ক কি চাই??(কাঁপা সুরে)
-তোমাকে..??(স্লো ভয়েজে)
–কালকে পরীক্ষা আছে না আপনার.?
–না ২দিন পর পরীক্ষা আছে!আর এখন কথা কাটানোর চেষ্টা করে লাভ নেই?(মুচকি হেসে)
–কই কথা কাটালাম
–হুম বুঝলাম!কি হলো বলো??
–কি বলবো??
–আমি তোমাকে পরিপূর্ণ ভাবে এখন চাই। এতে কি তোমার আপত্তি আছে??এখনো কি বলবে তোমার সময় চাই??(আলোকে ওর দিকে ঘুরিয়ে)
–ইয়ে মানে আসলে আমি তো পালিয়ে যাচ্ছিনা তাই না।তাহলে এত তাড়া কিসের??(মাথা নিচু করে)
–তাড়া তো আমার নেই! যদি আমার তাড়া থাকতো আমাদের বিয়ের পরেও এতদিন ওয়েট করতাম না তাই না।তোমাকে আমার সাথে ফ্রি হওয়া জন্য এতটা সময় দিতাম না।আমি জানি নিজেকে কেমন করে কনট্রোল করতে হয়!তাই বলে বিয়ের পরেও কি বিবাহিত ব্যাচেলার হয়েই থাকবো?আর এটাই বা কেমন বিচার?আমি এতদিন কিছু বলিনি বাট আজকে বলছি তার কারনটা হলো তুমি??
–আমি মানে??(রোদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে)
–মেয়েদের মনের রং পাল্টায় গিরগিটির মতো?তুমি হয়তো মনে করতে পারো?তোমাকে আমি এতদিন কাছে টেনে নেই না কেন??হাজিবাজি এসব তোমার মনে আসতেই পারে!আমিই তোমাকে তোমার সেই ভাবনার আনসার দিচ্ছি সেটা হলো…!! আমাদের তো হুট করে বিয়ে হয়ে গেছে, তুমি আমার সাথে তখন এতটা ফ্রি ছিলে না।আমি যদি তোমার কাছে যেতাম তুমি আনইজি ফিল করতে,আমি এমনটা চাইনি। জোর করলে অনেক আগেই তোমার শরীরটা পেতাম!এর সাথে আমাকে নিয়ে তোমার মনে একটা খারাপ ধারনাও সৃষ্টি হতো। তুমি আমার বিয়ে করা একমাত্র বউ! তিনটা শব্দের মাঝে তোমাকে আমি সারাজীবনে জন্য আমার করে নিয়েছি! তাই এত তাড়াহুড়ো করতো বা জোর করতে মন চাইনি..!! কিন্তু এখন…??(আলোর মুখের দিকে তাকিয়ে)
–এখন আপনি যদি চান তো আমারও আর কিছু বলার নেই!কারন আপনিও একটা পবিএ সম্পর্কের অধিকার নিয়েই আমার কাছে আসতে চাইছেন।(মাথা নিচু করে)
–মন থেকে বলছো তো?(মুচকি হেসে)
–হুমম!আমি তো বলছি আপনি আর মেঘ আমার কাছে যখন যা চাইবেন আমার সার্মথ্যের মধ্যে থাকলে আমি আপনাদের ফিরাবো না। আমি সিনেমা বা গল্পের হিরোইন মত এত ন্যাকামি করতে পারবো না।আর বড় কথা হলো আপনি আমার হাজবেন্ড। (মাথা নিচু করে)
রোদ আর কিছু বলে নি একটানে আলোকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে কোলে তুলে নিয়েছে।রোদ জানে আলো রোদকে খুব ভালবাসে আর সেটা রোদ খুব ভাল করেই ফিল করে।রোদকে আজকে ফিরিয়ে দেওয়া মত দুঃসাহস এখনো আলোর হয়নি! কারন আলো জানে কোন হাজবেন্ড যদি তার ওয়াইফকে কাছে টানতে চাই! আর সে ওয়াইফ যদি কোন সমস্যা ছাড়াও তার হাজবেন্ডের ডাকে সাড়া না দেয়! তাহলে ফজরের আজান হওয়া না অবধি রহমতের ফেরেশতা সেই ওয়াইফকে অভিশাপ দিতে থাকে।
তবে আলো যদি “না “শব্দটা করতো তাহলে রোদ আর কথা বাড়াতো না! রোদ আর আলো দুজনেই মনে অস্বস্তি নিয়ে কেউ কাউকে আপন করতে চাইনি।কেনই বা চাইবে কারন দুজনের মনেই তো আছে দুজনের জন্য অসীম ভালবাসা।রোদ আলোকে বেশি কিছু না বললেও আলো বুঝেছে রোদ কি চাইছে?আর হাজবেন্ড ওয়াইফের সম্পর্ক টা তো এমনই হওয়া উচিত যে মুখের কোন কথা না বললেও সেটা মুখে বলার আগেই দুজন দুজনের মনের কথা
বুঝে নিবে।আর মনের কথা বুঝে নেওয়া জন্য মনে থাকতে হবে নিঃস্বার্থ ভালবাসা!আর পবিএ ভালবাসার নিয়েই! আলো আর রোদ আজকে ওদের পবিএ সম্পর্কটা আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল।
কবুল শব্দটার মাঝে যেমন অদৃশ্য একটা টান থাকে। তেমনি পবিএ বন্ধন আবদ্ধ হয়ে দুজন দুজনকে আপন করে নেওয়ার মাঝেই অদৃশ্য এটা টানের সৃষ্টি হয়।আর এই অদৃশ্য টানের জন্যই ভালবাসার মানুষটার হাত ধরে সারাটাজীবন পার করে দেওয়া যায়।বিয়ে নামক বন্ধন মানে বিশ্বাস,ভালবাসা,চাহিদা,রাগ,অভিমান আর এইগুলো মানিয়ে নিয়েই আমাদের চলতে হয়।আর বিয়ের পর দুটো শরীর একে হওয়ার মাঝেও রয়েছে আল্লাহর রহমত। আর আমরা কখনোই আল্লাহর এই রহমতকে অস্বীকার করতে পারবো না! কারন পৃথিবীতে
নর-নারীর সৃষ্টির পরে থেকেই এই নিয়মই চলছে।
ওরা এত বিপদ আপদ পেরিয়ে এখন নিজেদের সামলে নিতে শিখেছে! আলো আর রোদ আজকে এরা ভালবেসে দুজনকে দুজনকে আপন করে নিলো…!!
পরেরদিন সকাল বেলা………!!
আজকে আবার নতুন করে ওদের জীবনে নতুন একটা সকালের আর্বিভাব হলো..!
আলো ঘুমিয়ে আছে রোদের বুকে মাথা রেখে! আর রোদ আলোর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।রোদ মুচকি মুচকি হাসছে আর মনে মনে হাজারটা বুলি আওয়াচ্ছে।রোদ আলোর কপালের আদর দিয়ে দিলো….!! আর মনে মনে বলতে থাকলো..!!
–বিয়ের পর কি আসলেই শারীরিক,মানসিক,সৌন্দর্যের বদল ঘটে?যদিও আমি এই কথাতে বিশ্বাসী ছিলাম না ! এখন কেন জানি মনে হচ্ছে কথাটা মিথ্যে নয়।কোন সাজ নেই,এলোমেলো চুল, আর গভীর নিন্দায় আচ্ছন্ন একটা মেয়েকে এতটা সুন্দর লাগার কারন কি?আসলেই আমার বউটা কি এই সুন্দরী নাকি আমাকে চোখে ওকে এত সুন্দর দেখাচ্ছে?নাকি আমার ছোয়াতে সৌন্দর্য দিগুন হয়ে গেছে।(মনে মনে কথাগুলো বলছে আর মুচকি হাসছে)
To be continue…!!