#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_56
🍁🍁
তারাতারি দাভাই এর রুমে এসে দেখো দাভাই কি সব নাংঙ্গু পাংগু মুভি দেখছে। বউমনি ঝাড়ু টা সাথে করে নিয়ে এসো..(চিৎকুর দিয়ে)
–চুপ চুপ! ভাই আমার চুপ কর।এটা জানলে আমাকে আস্ত রাখবে না
–কি হয়েছে মেঘ??(আলো দৌড়ে এসে)
–বউমনি দাভাই নাংঙ্গু পাংগু মুভি দেখছে
–(আলো রোদের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে)
–এই না না আমি কিছু করিনি! মেঘই ইচ্ছে করে পানি পানি গানটা দিয়ে আমাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। আমি সত্যি বলছি(মুখ কাচুমাচু করে)
–আর দাভাই আমাকে একটা কথা শিখিয়ে দিচ্ছে বউমনি(মেঘ)
–কি কথা?(ভ্রু কুচকে)
–দাভাই বলছে আমাদের বাসায় নাকি একটা বাবু থাকলে নাকি আরো ভালো লাগবে।
আলো রোদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে গটগট করে চলে গেল!আর রোদ অসহায় মাসুম বাচ্চার মত আলোর চলে যাওয়া দেখলো আর মেঘের মুখে বিশ্বজয় হাসি ফুটে উঠলো।স্কুল থেকে আসার সময় মেঘ রোদকে আইসক্রিম কিনে দিতে বলেছিলো রোদ দেয়নি তাই মেঘ এভাবে রোদকে জব্দ করলো।
–
আলো এখন নিজের মত করে বিভিন্ন রকম ডিজাইনের ড্রেস বানাতে পারে!ওই রুমটাতে আলো ওর মনমত কিছু ড্রেস বানিয়ে হ্যাংগারে সাজিয়েও রেখেছে! আলো একটা করে ড্রেস বানাই আর রোদ আর মেঘকে দেখায়। আলো আজকে থেকে প্রোগ্রামের জন্য ড্রেস বানানো শুরু করবে কারন এখন যে ড্রেস গুলো বানাবে সেগুলো পড়েই মডেলরা র্যাম্পে হাটবে। আলো খাওয়া দাওয়া ঘুম সব তুঙ্গে তুলে একমনে এখন কাজ নিয়ে পড়ে থাকে!তবে মেঘের দিকে ঠিকই খেয়াল রাখে। রোদ এখন আলোর খেয়াল রাখে!
আলো একটা মেয়ে বাচ্চার খুব সুন্দর গাউন বানালো! কালো আর খয়েরী নেটের কাপড় দিয়ে!বুকের এক সাইডে বড় বড় তিনটে গোলাপ আর গাউনের ঘের অনেক। আলোর এই গাউনটা বানাতে ৪ ঘন্টা সময় লেগেছে। আলো আর মেঘ রুমে ঢুকেছে ৩ মিঃ হয়ে গেলো। রোদ আলোর কাজের রুমে নক দিলো সাথে সাথে দরজা খুলে দিলো।রোদ খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে রুমে ঢুকে দেখে সোফাতে একটা বাচ্চা মেয়ে অনেক সুন্দর একটা গাউন পড়ে সোফাতে বসে আছে!রোদ খাবার প্লেটটা সাইডে রেখে বাচ্চা মেয়েটির দিকে তাকালো তারপর বাচ্চা মেয়েটির গাল টেনে দিয়ে বললো..!!
— এই যে মিস এ্যাঙ্জেল আপনার নাম কি?(রোদ)
–(নিঃশব্দ)
–আপনাকে তো দেখতে খুব সুন্দর লাগছে!এই আলো আমাদের যখন মেয়ে হবে এই রকম একটা গাউন বানিয়ে দিবে আমার মেয়েকে।আলো এই বাচ্চাটা কে?? কথা বলতে পারে না কি??
–হুমম পারে (আলো)
–কথা বলছে না যে!এই যে মামনি কথা বলো (রোদ)
–কি কথা বলবো দাভাই??(বাচ্চাটি)
বাচ্চাটির কথা শুনে রোদ টাসকি খেয়ে চোখ বড় বড় করে হাবলার মত হা করে তাকিয়ে আছে!আর মেঘ থুক্কু বাচ্চা মেয়েটি ঠোঁটের সাথে ঠোঁট বার বার ঝষে লিপস্টিক ঠিক করছে!আলো মুচকি হাসছে আর পেন্সিল হাজিবাজি জিনিস গুলো গুছিয়ে রাখছে।রোদ বেশকিছু সময় চুপ থেকে তারপর গগন ফাটানোর মত হাসতে শুরু করলো!রোদ হাসতে হাসতে পেট হাত রেখে ফ্লোরে বসে পড়ছে কারন মেঘকে দেখলে কেউ চিনতেই পারবেনা এটা মেঘ কারন আলো মেঘকে মেকাব করে সাথে মাথায় মেয়েদের চুলও লাগিয়ে স্টাইল করে চুলও বেঁধে দিয়েছে!এদিকে রোদের হাসি দেখে আলোও হেসে দিলো আর মেঘ কিছু বলতে পারছেনা লিপস্টিক চারপাশে লেগে যাওয়ার ভয়ে।
মেঘ সাদা ফর্সা আর গোলগাল মুখোশ্রী সাথে গুলমলু গালের সাথে চিকন ঠোঁট তার উপরে এত সুন্দর একটা গাউন আর মেয়েদের মত স্টাইল করে বাধা চুল আর হাসলে থুতনি দুইপাশে মারাত্মক সুন্দর ভাবে টোল পড়ে এজন্য ওকে একটা রাজকন্যার মত লাগছে দেখতে।রোদ হাসি থামিয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে বললো..!!
–গাউনটা অসম্ভব সুন্দর হয়েছে একদম ইউনিক মডেল(রোদ)
–সত্যি
–হুমম
–
এই দুইদিনে আলো সারাদিন ওই রুমে থাকে আর মেঘ রোদকে জ্বালিয়ে রোদের জীবনটা অতিষ্ঠ করে তুলেছে!কিছুক্ষণ আগে আলো সাওয়া নিয়ে বের হয়েছে রোদ এসে আলোর চুলের টাওয়াল খুলে চুল মুছে দিচ্ছে আর আলো রোদের বুকের সাথে লেগে আছে!রোদ আলোকে ওর বুক থেকে সরিয়ে চুলগুলোকে ভালো করে মুছে চিরুনি করে হেয়ার ড্রায়ার নিয়ে চুলগুলো ড্রায় করতে লাগলো! আর মাথায় হাত রেখে ধপ করে বেডে বসে পড়লো।রোদ ড্রায়ার রেখে আলোর ধরে জিজ্ঞাসা করলো
–কি হয়েছে এভাবে বসে পড়লে কেন?
–মাথা ঘুরাচ্ছে খুব (দূর্বল গলায়)
–চলো এখন খেয়ে ঘুম দিবে তাহলেই ঠিক হয়ে যাবে। আর
বলছিলাম যে তোমার পিরিয়ডের ডেট কবে??
— মানে কি??(ভ্রু কুচকে)
–যা জানতে চাচ্ছি বলো! (শান্ত কন্ঠর)
–ভুলে গেছি কাজের চাপে
–লুকাচ্ছো নাকি সত্যি ভুলে গেছো??
–সত্যি মনে নেই
–ওকে
–
তিনজন দুপুরে খেয়ে ভাত ঘুম দিলো!আলো ওর কাজ করতে চেয়েছিলো কিন্তু রোদ আলোকে কাজ করতে দেয়নি জোর করে ঘুম পাড়িয়েছে কারন কয়েকদিন একনাগাড়ে কাজ করছে। আর ওর শরীরটাও ভালো না সেটা রোদও খেয়াল করছে।বিকালে ঘুম থেকে উঠে বাগানে হাটাহাটি করলো, বাগানের আগাছা পরিষ্কার করে, সব গাছে পানি দিলো। তারপর সন্ধ্যায় হালকা নাস্তা খেয়ে রোদ মেঘকে নিয়ে পড়াতে বসলো আর আলো ওর কাজে লেগে গেল।আলো ওর কাজ করছে মন দিয়ে আর রোদ মেঘকে কিছুক্ষণ পড়িয়ে মেঘকে নিয়ে বাইরে গেল দুইভাই ঘুরতে……!!! রাত ১০ টার দিকে যে যার কাজ শেষ করে হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে শুয়ে পড়লো।
–
পরদিন ভোরবেলা______!!
আলো বেডে থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই রোদ উপুড় হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করেই বললো…!!
–ওয়ার্ড ড্রপের উপর কিট আছে সাথে নিয়ে যাও
–কিসের কিট (ভ্রু কুচকে)
–প্রেগনেন্সি কিট (আলোর দিকে তাকিয়ে)
–কিইই!
–ওরে বাবা রে বাবা আস্তে কাক ডাকা ভোরে তুমি এভাবে চিৎকুর দিচ্ছো কেন?যা বলছি ফটাফট তাই করো..!!
–আমি পারবো না! আপনি যা ভাবছেন তা না
–আমি কিছু ভাবিনি!এখন আমি আপনাকে যা বলছি তাই করবেন। একটা বাড়তি কথা বললে আপনার খবর আছে…!!
আলো কিটটা হাতে নিয়ে শব্দ করে ওয়াশরুমে দরজা আটকে দিলো!রোদ উঠে বসে ওর বুকে হাত দিলো কারন ওর হার্ট দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে ওর বুকের উপর হাত রেখে মনে মনে বললো…!!
–আল্লাহ তুমি যা করো মঙ্গলের জন্য করো!রেজাল্ট যেটাই আসুক আমি খুশি মনে মেনে নিবো।
একটু পর আলো ওয়াশরুমে থেকে বের হয়ে মাথা নিচু করে রোদের সামনে এসে দাঁড়ালো! রোদ রেজাল্ট জানার জন্য অধীর আগ্রহে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে!আলো ছলছল চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে বললো..!!
–আমার হাত কাঁপছে! আমি পারবো না টেস্ট করতে
–ধুর বোকা মেয়ে ভয় পাচ্ছো কেন? আল্লাহ ভরসা।
–আমার একটা রিকুয়েস্ট রাখবেন প্লিজ (কেঁদে)
–কাঁদছো কেন??কি রিকুয়েস্ট বলো??(আলোর চোখ মুছে)
–আপনি আমার জন্য খুব লাকি!আমি চাই এই টেস্ট টা আপনি আপনার শুভ হাতে করুন, প্লিজ।
— হুমম
ওর পেছনে লুকানো কিটটা রোদের হাতে দিলো!রোদ আলোর মুখের দিকে তাকালো!আলো মাথা নিচু করে ইউরিন ভরা টিউবটা রোদের হাতে দিয়ে উল্টো ঘুরে মুখ ঢেকে দাড়িয়ে রইল!রোদ আলোকে ওর দিকে ঘুরিয়ে আলো কপালে আদর দিয়ে বললো..!!
–ভয় পাচ্ছো কেন??আমি আছি তো পাশে,প্লিজ কাঁদো না।
–হুম
রোদ আলোকে নিয়ে হাটু গেড়ে মেঝেতেই বসে পড়লো।সেন্টার টেবিলে কিটটা রেখে রোদ কাঁপা কাঁপা হাতে কিটের মাঝে কয়েক ফোঁটা ইউরিন দিলো।তারপর দুজন দু’জনের মুখের দিকে তাকালো। আলো কান্না করে চোখ মুখ লাল করে দিয়ে ফেললো এরি মধ্যে। আলো আর রোদ ওদের দুজনের থেকে দুজনের চোখ সরিয়ে কিটের দিকে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেছে। কারন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দুই দাগ ভেসে উঠেছে…!আলো আর রোদ কিটের দিকেই তাকিয়ে আছে।কয়েক সেকেন্ডের জন্য ওদের ব্রেণ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে! রোদ আচমকা আলোকে জড়িয়ে ধরাতে আলোর হুশ আসে আর সে প্রচন্ড পরিমানে কাঁপছে। রোদ কি বলবে ভাষা হারিয়ে ফেলছে।রোদ খুশিতে পাগলপ্রায় অবস্থা । রোদ আলোর পুরো মুখে টুকরো টুকরো আদর দিয়ে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে।কিন্তু আলো চুপচাপ আছে কারন আলোর মাথায় অন্য কিছু ঘুরছে।আলো রোদের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো..!!
–আমি এই বাবুটা চাই না রোদ!
–ম মানে কি বলছো এসব তুমি?? (রোদ অবাক হয়ে)
–আমি এই বাবুটা চাই মানে চাই না ব্যস্।আমি মায়ের ওয়াদা ভঙ্গ করতে পারবো না। আমি চাই না! আমি চাইনা এই বাবুটা। তুমি কি শুনতে পাচ্ছা আমি সত্যি চাই না এই বাবুটা।আমি পারবো না মেঘকে কষ্ট দিতে।(উওেজিত হয়ে)
–আলো! আলো রিলেক্স! শান্ত হও প্লিজ!এটা আমাদের ভালবাসার একটা অংশ। তুমি কেন এভাবে ভাবছো??শোনো আমার কথাটা তুমি আগে শোনো। (আলোর শান্ত করতে)
–প্লিজ রোদ প্লিজ (আলো কেঁদে কেঁদে)
–আমাকে বলো কি হয়েছে??কেন চাওনা তুমি বাবুটা?বাবুটা কি দোষ করছে বলো?(রোদ)
–বাবু আসলে যদি আমার মেঘের আদর কমে যায়!আমি যদি আর মেঘকে ভালবাসতে না পারি।আমার মেঘটা যে খুব কষ্ট পাবে।আমি মাকে কথা দিয়েছি মেঘকে কষ্ট পেতে দিবো না।আমি পারবো না এই বাবুটা রাখতে!আমি মেঘের আদরের ভাগ বসাতে দিবো না..!! মেঘই আমার সন্তান আর সন্তান লাগবেনা আমাদের।
–যদি মেঘ এই বাবুটা রাখতে বলে তাহলে??তাহলেও কি মেঘকে এই কথায় বলবে??(রোদ)
–মানে??
To be continue…!!
(কালকে থেকে রেগুলোর গল্পটা দিবো! তবে তোমরা রেসপন্স করো কেমন ☺☺)