#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_22
রুহি পাশে তাকাতেই দেখে মুগ্ধ বাইক থেকে নামছে!মুগ্ধকে দেখে রুহি ভৌ দৌড় দেওয়া শুরু করলো!সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,মুগ্ধ আবার বাইকে উঠে আবার বাইক স্টাট দিলো!রুহি দৌড়াতে দৌড়াতে হাপিয়ে যায়।রুহি রাস্তা বসে পড়ে আর হাঁপাতে থাকে!তারপর মুগ্ধ রুহির পাশে এসে রুহির ধরে টেনে বাইক বসায় আর বাইক স্টাট দেয় আর
বলে…
–
মুগ্ধঃ এবার ড্রামা করা ছাড়!অনেক তো হলো তাই না।আচ্ছা কান ধরছি আর কোনদিন কোন মেয়েকে বাইকে তুলবো না।এবারের মত মাফ করে দে..আর এমন হবে না। ইভাকে বসিয়েছি তাই এমন করছিস নাকি অন্য কোন কাহিনী আছে! সত্যি করে বল…
রুহিঃ তোমার পাশে কোন মেয়েকে আমি সহ্য করতে পারি না!যদি বলো আমি হিংসুটে,নিচু মাইন্ডে তাহলে আমি তাই! তাও আমি তোমাকে কোন মেয়ের পাশে সহ্য করবো না।ইভা তোমাকে পছন্দ করে সেটা তুমিও জানো আর আমিও জানি…মুগ্ধ আমি যতদিন বেঁচে আছি কোন মেয়েকে তোমার পাশে আসতে দিবো না।কারন কি জানো??ভালবাসি এত বেশি ভালবাসি যে হারানোর ভয়টা বেশি! সত্যি কথা বলতে কোন মেয়েকে তোমার পাশে দেখলে আমার দম বন্ধ হয়ে যায়!আমার বুকের বাম পাশে খুব কষ্ট হয়….(পেছন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
মুগ্ধঃ……
–
মুগ্ধ রুহিকে নিয়ে নদীর পাড়ে আসে!এটা জায়গাটা রুহির খুব পছন্দের। নদীর ধার টা সিমেন্টের ব্লক দিয়া বাঁধানো!আর পানির মধ্যে কয়েকটা ব্লক রাখা পানিতে পা ঢুবিয়ে বসার জন্য! রুহি আর মুগ্ধ জুতা খুলে !নদীর পানিতে পা ঢুবিয়ে ব্লকের উপর বসে আছে।কারো মুখে কোন কথা নেই!রুহি পানির নিচে বালি গুলোকে ঘোলা করছে আর মুগ্ধ রুহির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে!
–
মুগ্ধ আকাশের দিকে তাকাতেই পশ্চিম দিকে চোখ যায় সূর্য টা ডুবে যাবে এজন্য রক্তিম আভা ছড়িয়েছে…পড়ন্ত বিকেলে নদীর পাড় টা খুব ভালো লাগছে!বাতাসের সাথে সাথে টেউ আসছে ছোট্ট ছোট!আর মাঝে মাঝে কচুরিপানা ভেসে যাচ্ছে! মুগ্ধ ওর জিন্স প্যান্টটা তুলে জড়িয়েছে যাতে প্যান্টটা ভিজে না যায়।মুগ্ধর পায়ের পশম গুলো পানিতে ভিজে আছে! আর রুহি সেটার দিকেই আড়চোখে তাকিয়ে আছে।রুহিও সূর্যটার দিকে তাকিয়ে বললো…
–
রুহিঃ আমি কিন্তু রাগ করছি..??
মুগ্ধঃ…
রুহিঃআমার সাথে কথা বলবে না!আমি কিন্তু রাগ করছি। (শুনিয়ে শুনিয়ে)
মুগ্ধঃ এত গুলো কামড় দিলি,এতক্ষণ কষ্ট দিলি,তারপরেও যদি রাগ না কমে তাহলে আর কি করবো?? (শান্ত কন্ঠে)
রুহিঃ কামড় তো আস্তে দিসি!আমি তো বাচ্চা মেয়ে তোমার মত জলহস্তী’কে কামড় দিলে তুমি ব্যাথা পাবে না আমি জানি???
মুগ্ধঃতুই বাচ্চা বুঝি!বাচ্চারা কি এভাবে কামড় দেয় (শার্টের বোতাম খুলে গলা দেখিয়ে)
রুহিঃ এইটা আমি কখন করলাম?এটা আমি করি নি…
মুগ্ধঃতাহলে কে করলো শুনি??
রুহিঃতুমি একা একাই করে এখন আমার দোষ দিচ্ছো।একদম মিথ্যে অপবাদ দিবে না আমাকে বলে দিলাম…
মুগ্ধঃ ওহহ হো আমার তো মনেই নাই আমি তো নিজেই নিজের গলা কামড় দিচ্ছিলাম।সরি সরি আমার মনে ছিলো না! তাই তোর দোষ দিচ্ছিলাম(দাঁতে দাঁত চেপে)
রুহিঃমনে পড়লেই ভালো!আমি কিন্তু রাগ করছি…
মুগ্ধঃ হুমম জানি তো!তা কি করলে আপনার রাগ কমবে! আমি কি জানতে পারি??
রুহিঃ আপাতত কিছু করতে হবে না! শুধু একটা কথা মনে রাখবে!আমি রাগ করলে তুমি আমার রাগ ভাঙাবে! আর তুমি রাগ করলে তুমিই আমাকে সরি বলবে…
মুগ্ধঃআমি রাগ করলে তোকে সরি বলবো কেন??এটা কেমন হিসাব…
রুহিঃ আমি রাগ করে থাকলে মনে করবে সব তোমারই দোষ! কারন আমি নিষ্পাপ বাচ্চা আমি ভুল করতেই পারি না!তাই আমাকেই সরি বলবে…
মুগ্ধঃওহহহহ!বাহ দারুন তো।নিজের বেলায় ষোল আনা আর আমার বেলায় কানা কড়িও না।সময় আসুক…
রুহিঃ টাওয়াল ভিজিয়ে কিছু সময় কামড়ের দাগ গুলোর উপরে রাখলেই হয়!এভাবে সবাইকে দেখানোর মানে কি!!!
মুগ্ধঃ ভাবছিলাম যে রুম থেকে বের হবো না!কিনতু তুই তো…
–
রুহি নদীর পানিতে ওর ওড়না ভিজিয়ে হালকা করে কামড় গুলোর উপর চেপে রাখলো!মুগ্ধ কিছু বলছে না শুধু রুহির কাজ কর্ম দেখছে!মুগ্ধ ওর শার্টের কলার তুলে রাখছিলো যাতে কামড় কেউ না দেখে!বাট বাসায় থেকে বের হওয়ার সময় ওর আম্মু জিজ্ঞাসা করছিলো মুগ্ধর ঠোঁটে কি হয়েছে?মুগ্ধ লাল পিঁপড়া কথা বলে কেটে পড়ছে!মুগ্ধর আম্মুও কি ভেবে আর কিছু জিজ্ঞাসা করে নি।রুহি পানি হাত ভিজিয়ে ঠান্ডা হাত মুগ্ধর ঠোঁটে উপর রাখে..মুগ্ধ শিহরে উঠছিলো বাট মুখে কিছু বলে না।
–
দুইজন মান অভিমানের পালা শেষ করে বেশ কিছু সময় ঘুরা করে বাসায় ফিরলো।মুগ্ধ আর রুহিকে দেখে মুগ্ধর আম্মু দুইজনকে বসতে বললো।রুহির সোফা বসতে গিয়ে আবার উঠে পড়ে তারপর হনহন করতে করতে রান্নাঘরে গিয়ে ফ্রিজ খুলে দই নিয়ে আসে!রুহি রান্না ঘরে চামচ আনতে গিয়ে দেখে মুগ্ধর আম্মু নুডলস রান্না করছে!মুগ্ধর আম্মু সবার জন্য সার্ভ করছে! তখন রুহি বলে ওকে আরো দিতে হবে।মুগ্ধর আম্মু একটা বাটিতে নুডলস দিলো আর রুহি দইয়ের কথা ভুলে! তিরি বিরিং করতে করতে সোফায় এসে বসে নুডলস খাওয়াতে মন দিলো…
–
মুগ্ধ, মুগ্ধর আম্মু, ইভা, রুহি সবাই খাচ্ছে আর টিভি দেখছিলো!ইভা ফট করে মুগ্ধকে উদেশ্য করে বললো..
ইভাঃ মুগ্ধ কালকে আমার সাথে একটু শপিং করতে যাবে! আমি কিছু জিনিস খুব দরকার…
মুগ্ধঃ না আমার সময় নেই!আম্মুর সাথে যা।
রুহিঃ…..
(হা হা হা আলাভু জানু!ইসস মন চাচ্ছে এক দৌড়ে গিয়ে চটাস করে একটা আদর দিয়ে আসি।ইভা, কুওী,ডায়নীর শখ কত আমার জানুর সাথে শপিং করবে!যা ভাগ হুশ হুশ,, মুগ্ধ বেটুয়া তোমাকে আজকে যা আদর দিসি আমি জানি তুমি ভুলেও আর ইভা সাথে কোথাও যাবে না।ইসস কি যে খুশি লাগছে মন চাচ্ছে উরাধুরা নাচতে!মনে মনে)
মুগ্ধর আম্মুঃওর অফিসে নাকি জুরুরি কি কাজ আছে??এজন্য বাসায় বসে কাজ গুলো করবে।মুগ্ধ তুই ফ্রি হবি কখন সেটা আমাকে আগে বল তো!আমার দরকার আছে…
মুগ্ধঃকেন কি করতে হবে আমাকে বলো??
মুগ্ধর আম্মুঃতোদের বিয়ের শপিং গুলো তো করতে হবে তাই না!তুই আর রুহি গিয়ে পছন্দ মত শপিং করবি কেমন!আমি একা হাতে সব সামলাতে পারবো না…
রুহিঃ বড় আম্মু বিয়ের আর কতদিন বাকি গো!দিন মনে হচ্ছে যাচ্ছেই না।(খেতে খেতে)
মুগ্ধর আম্মুঃ হা হা হা হা! পরশুদিনই তো গায়ে হলুদ রে পাগলি শুধু মাঝখানে শুধু একটা দিন।
মুগ্ধঃ কোথায় কি বলতে হয় তোকে কি হাতে ধরে নতুন করে শেখানো লাগবে নাকি???
ইভাঃএই অসভ্য মেয়ের মাঝে তুমি কি যে দেখছো জানে?না আছে কথা বলার ঢং আর না আছে কোন ভদ্রতা।সারাদিন শয়তানি বুদ্ধি নিয়ে চলে।
মুগ্ধর আম্মুঃইভা এভাবে কথা বলছিস কেন??রুহি আমার সাথে ফ্রি এজন্য সব কথা আমাকে সহজে বলে দেয়।
ইভাঃবিয়ে বিয়ে করে যে হারে লাফাচ্ছে লজ্জা ল ও নাই সেটা ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। খালামনি তুমি দেখ একদিন খুব আফসোস করবে এই মেয়েটার জন্য…
মুগ্ধঃ ইভা প্রথমত আমার সামনে বসে আমার বউকে অপমান করার সাহস আর দেখাস না!রুহি কি আর কেমন সেটা তোর না জানলেও আমার চলবে।রুহি এখন চুপ করে আছে বলে মনে করিস না রুহি কথা জানেনা!আমি আর আম্মু এখানে আছি আর তোকে কিছু বললে আম্মু কষ্ট পাবে তাই রুহি কিছু বলছে না।তোর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এতক্ষণ দুই চারটা থাপ্পড় খেয়ে ফেলতি।আর রুহি চুপ আছে মানে যে আমিও তোর কথা গিলবো তাহলে তোর ভুল জানিস….আমি আমার বউকে বকবো,মারবো বাট অন্য কাউকে না বলতে দিবো আর না ওকে টিজ শুনতে দিবো ।কথাগুলো মনে রাখিস!এমন ভুল যেন আর না হয়…(কথাটা বলে উঠে চলে গেল)
–
মুগ্ধর আম্মু রুহির হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে মুগ্ধর পেছন পেছন যাওয়ার জন্য ইশারা করলো।রুহি কফির মগ নিয়ে মুগ্ধর রুমে গিয়ে দেখলো মুগ্ধ রুমে নাই!রুহি বারান্দা গিয়ে দাড়াতেই মুগ্ধ ড্রেস বদলে আসলো!শুধু থ্রীকোয়াটার পড়ে!রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো তারপর আবার তাকালো।রুহি মুগ্ধর হাতে কফি ধরিয়ে দিলো আর ড্রয়ার থেকে মলম এনে কামড় গুলোর উপর আলতো করে দিতে শুরু করলো!মুগ্ধ কফির মগটা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে রুহিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো…
–
রুহিও মুগ্ধর উন্মুক্ত বুকে মুখ লুকালো!বেশ কিছু সময় পর রুহি মুগ্ধকে ছাড়তে চাইলো বাট মুগ্ধ ছাড়লো না খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো।মুগ্ধ জড়িয়ে ধরে বললো…
–
মুগ্ধঃ যেদিন থেকে আমাদের বিয়ে হয়েছে সেদিন থেকে আমার মনে তোর উপর নতুন করে ভালবাসা জন্মেছে!আমি নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছি কারন আমি তো এই রকম ছিলাম না। এখন মন চাই সবসময় তোকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখি!
রুহিঃ কবুল শব্দটা টা অক্ষরের! কিন্তু এর মাঝে আল্লাহর রহমত আছে! আর এই শব্দটা দিয়ে সবার মনে পবিএ ভালবাসার সৃষ্টি করে বুঝলেন মিঃ বর।
মুগ্ধঃহুমমম!
রুহিঃছাড়ো আমি বাসায় যাবো।
মুগ্ধঃআগে জড়িয়ে ধরতাম না তাই কত বাহানা করতি আর এখন একটু জড়িয়ে ধরতে চাই তো ছাড়ো ছাড়ো করিস কেন শুনি???
রুহিঃ আর দুইটাদিন তারপর এর উওর পেয়ে যাবে!গেলাম আমি…
–
রুহি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মুগ্ধ রুহির হাত ধরে টেনে আবার জড়িয়ে ধরে!তারপর মুগ্ধ রুহির হাত ছেড়ে দিয়ে রুহির কপালে আদর দেয়! আগের মত রুহি দুই গাল,নাক আর থুতনী দেখায়। মুগ্ধও মুচকি হেসে রুহির আবদার পূরণ করে!রুহি ওর বাসায় যাচ্ছে আর মুগ্ধ সেটা ওর রুমের বারান্দা থেকে দেখছে!রুহি বাসায় ঢুকে গেলে মুগ্ধও রুমে চলে আসে।তারপর রুহি বাসায় গেলে ওর আম্মু ওকে কয়েক দফা বকা দেয় আর ওর বাপি জোর করে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
–
ভালবাসার মানুষ গুলো অদ্ভুত তাই না!যাকে আমরা ভালবাসি মন তো বলে সেই শুধু আমার আর কারো না!রুহি জায়গায় রুহি ঠিক আছে কারন ভালবাসার মানুষটির ভাগ আমরা কেউ কাউকে দিতে চাই না।তবে আমরা মেয়েরা বড্ড বেশি হিংসুটে কারন আমরা বাবা আর বরকে কারো সাথে ভাগাভাগি করতে পারি না। আর কেনই বা করবো?? কারন এরা দুইজনই তো আমাদের নিরাপদ স্থান।আর আম্মু তো সবার উপরে তাই আম্মুর কথা নাই বা বললাম। তবে আমরা প্রত্যেকটা মেয়ে ভাবি বাবার প্রতিচ্ছবি আমাদের বর!বিয়ের আগে বাবার ছায়াতলে আর বিয়ের পরে বরের!এই দুই জনকে আমরা শুধু আমাদের প্রোপার্টি ভাবি!আর যাকে নিজের চেয়ে ভালবাসি তার পাশে অন্য মেয়ে সহ্য করবো এটা মানা যায় না।
–
পরেরদিন সকালে মুগ্ধ আর রুহিকে পাঠানো হয় ওদের বিয়ের শপিং করতে!আর ওখানে গিয়ে রুহি আরেক কান্ড বাধিয়ে বসে থাকে!মুগ্ধ শুধু পারছে রুহিকে তুলে আছাড় দিতে!রুহি ওর কাজ করে যাচ্ছে আর মুগ্ধ দাঁতে দাঁত চেপে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে….
To be continue…