স্পর্শানুভূতি #writer_Nurzahan_Akter_Allo #part_13 🍁🍁

0
661

#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_13
🍁🍁

পরেরদিন সকালবেলা মিষ্টু ঘুম ভাঙে ৫ঃ৩০টার দিকে!এখন জর আর নেই বললেই চলে।মিষ্টু ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে বাগানে যায়।আর……
রাসেলের ঘুম ভাঙে কারো ঝগড়ার আওয়াজ শুনে!রাসেল হুড়মুড়িয়ে ঘুম থেকে ওঠে কারন চিৎকার শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটা মিষ্টুর গলার আওয়াজ…রাসেল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৬ঃ৪৯ বাজে…

রাসেল একলাফে বিছানা থেকে উঠে আর রুম থেকে বের হয়!আর মিষ্টুর কথা অনুসরণ করেই বাগানের দিকে যায়।বাগানে গিয়ে দেখে মিষ্টু দাড়িয়ে আছে আর একটা মহিলাও সাথে আছে।মহিলাটাও চিৎকারে করছে আর মিষ্টুও চিৎকার করছে।রাসেল দ্রুত পায়ে ওদের দিকে এগিয়ে গেল!রাসেল চোখ বড় বড় করে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে আছে কারন মিষ্টুর দুই হাতে দুটো খরগোশ। আর মিষ্টু দুটো খরগোশের পা ধরে আছে! আর খরগোশ দুটো ঝুলছে…

রাসেল বুঝলো খরগোশ দুটি ওই মহিলার।রাসেল গিয়ে মিষ্টুর পাশে দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে?মিষ্টু রাসেলকে দেখে গড়গড় করে বলতে শুরু করলো..

মিষ্টুঃরাসেল ভাইয়া এই শুটকি মহিলার খরগোশ দুটো এসে প্রতিদিন আমার বাগানে এসে লেটুস পাতা খেয়ে যায়।আমি ধরতে পারি না বাট আজ হাতে নাতে ধরছি এই শুটকি মহিলার আর সাথে এই দুটো খরগোশের ছাও দুটোকেও।(রেগে গিয়ে)

রাসেলঃ এবার ছেড়ে দাও ওরা আর আসবে না মেবি।ওদের তো বুদ্ধি নেই।(মিষ্টু দিকে তাকিয়ে)

মহিলাটিঃআমি খেয়াল রাখবো ওরা আর আসবে না তোমার বাগানে!আমার খরগোশ দুটো ফেরত দাও।

মিষ্টুঃআমি এই খরগোশ আর দিবো না মানে দিবো না।আমার লেচুস পাতা কেন খেলো?(রেগে রেগে)

মহিলাঃএমন করো না প্লিজ! আমি ওদের খাচাতে বন্ধি করে রাখবো আর আসবে না।এবাবের মত ফেরত দাও (মুখ কাঁচুমাচু করে)

রাসেলঃ মিষ্টু ওনার খরগোশ ফেরত দাও উনাকে! আমি তোমাকে আজকেই খরগোশ কিনে দিবো প্রমিস করছি।

মিষ্টুঃনা আমার এই দুটোকেই খুব পছন্দ হয়েছে!আপনি বরং ওই শুটকি মহিলাটাকেই কিনে দিন।আমি গেলাম (উল্টো ঘুরে)

মহিলাঃ না প্লিজ ওদের ফিরিয়ে দাও!এই খরগোশ দুটি আমার হাজবেন্ড আমাদের বিবাহ বার্ষিকী উপহার দিয়েছে আর আমি ওদের খুব যত্নে রাখি। ( কেঁদে কেঁদে)

রাসেলঃ মিষ্টু ওনাকে ওনার জিনিস ফিরিয়ে দাও প্লিজ।
(ওহ্ আল্লাহ এই কোন ঝামেলাতে পড়লাম আমি।আর বিবাহ বার্ষিকীতে কেউ খরগোশ উপহার দেয় আজ প্রথম শুনলাম।আর মিষ্টু টাকে কেমনে সামলাবো যে রেগে আছে আমি কিছু বলতে গেলে আমাকেই না কামড়ে দেয়।মনে মনে)

মিষ্টু খরগোশ দুটোর পা ধরে ঝুলাতে ঝুলাতে বাসায় দিকে যাচ্ছিলো!রাসেল এক দৌড় খরগোশ দুটি ধরে মহিলার হাতে দিলো।মহিলাটি ধরতে না পারায় খরগোশ দুটি এবার বাগানে দৌড়ানো শুরু করলো মিষ্টু খরগোশ ধরতে যেতেই রাসেল মিষ্টুকে ধরলো।আর মিষ্টু জোর করে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো!মহিলাটি অনেক কষ্টে খরগোশ দুটিকে ধরে এক প্রকার দৌড় চলে গেল।মিষ্টু তখন রাসেল দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় রাগি চোখে।মিষ্টুর তাকানো দেখে রাসেল মিষ্টুকে ছেড়ে দেয়। আর মিষ্টু দুই হাত দিয়ে রাসেলের চুল ধরে ঝাকাতে শুরু করে নিজের শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে..

রাসেল মিষ্টুকে সরাতে পারছে না।রাসেল অনেক চেষ্টা করেও নিজের চুল ঝাড়াতে না পেরে বললো..

রাসেলঃআউচচচ্! মিষ্টুওওও চুল ছাড়ো।আমি ব্যাথা পাচ্ছি তো।আর আমি এখনো বিয়ে করি নি! এখন টাকলা হয়ে গেলে কেউ আমাকে বিয়ে করবে না।

মিষ্টুঃএত বড় সাহস আপনার!আমার কাজে বাঁধা দিচ্ছেন। আমার হাত থেকে খরগোশ কেড়ে নিয়েছেন..

রাসেলঃআমার বউয়েরও আমার চুল ছেড়ার অধিকার আছে!তাই বলছিলাম যে কিছু চুল বাকি রাখো।আমার বউকেও তো একটা সুযোগ দিতে হবে আমার..

মিষ্টুঃদাড়ান আপনার বিয়ে করার শখ মেটাচিছ😠

মিষ্টু রাসেলের চুল ছেড়ে আশপাশ তাকিয়ে কি যেন খুজলো?আর রাসেল মাথা ঝাঁকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ওর মাথা ফাঁকা হয়ে গেছে কি না?রাসেল সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে মিষ্টু একটা লাঠি নিয়ে এগিয়ে আসছে।রাসেল বুঝে গেছে এই মেয়ে দুম করে মেরে দিতেও পারে তাই রাসেল উল্টো ঘুরে দৌড় দিলো। মিষ্টুও ওর পেছন পেছন দৌড়ানো শুরু করলো।

মিষ্টুর আম্মু তখন ডায়নিং টেবিলের ব্রেকফাস্ট সাজাচ্ছিলো!রাসেলের এভাবে দৌড়ে আসা দেখে উনি চোখ বড় বড় করে রাসেলের দিকে তাকিয়ে আছে।রাসেল দৌড়ে গিয়ে ওর রুমে ঢুকে গিয়ে ডোর লক করে দিসে। আর মিষ্টু রাসেলকে ধরতে না পেরে শেষ পযন্ত রাসেলের রুমের দরজাটাকে ইচ্ছে মত বারি,, লাথি,ঘুষি দিলো।মিষ্টু আম্মু হা করে তাকিয়ে আছে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে কি হচ্ছে?মিষ্টুর আম্মু মুহিতকে ফোন দিয়ে এসব বললো কারন রাসেল এখন ওদের বাসার গেস্ট না জানি রাসেল কি ভাবলো?মুহিত রাসেলকে সাথে সাথে ফোন দিলো।রাসেল ফোন রিসিভ করেই হাঁপাতে হাঁপাতে হ্যালো বললো…

মুহিতঃহ্যালো রাসেল!!!
রাসেলঃহ্যা ভাই বল (হাঁপাতে হাঁপাতে)
মুহিতঃকি হয়েছে?মিষ্টু কি করছে এসব?আর তোকে নাকি লাঠি নিয়ে দৌড়ানি দিসে।সকাল বেলা কি হয়েছে?

রাসেলঃ তাহলে শুন (সব খুলে বললো)

মুহিতঃকি বলবো বলতো?তুই কিছু মনে করিস না ভাই।আমি মিষ্টুর এমন ব্যবহারে সত্যি খুব লজ্জিত।

রাসেলঃআরে ধুর!আমি কিছু মনে করি নি। আর এবার কিন্তু বেশি হয়ে গেলো আর তোকে এত লজ্জিত হবে না।এসব বাদ দে আর তুই কবে ফিরবি তাই বল।

মুহিতঃকালকে রাতে
রাসেলঃওকে! বাই
মুহিতঃবাই

রাসেল কল কেটে দিয়ে বিছানা উপর ধপ করে বসে পড়ে আর নিজের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে..

রাসেলঃকত যত্ন করি আমি আমার চুলের!কাউকে হাত পযন্ত দিতে দেয় না আমি।আর এখন কি না এই চুলে উপরেই এত হামলা হচ্ছে।আর আমি দৌড়ে কোনদিন ওয়াশরুমে যায়নি।আর আজ কি না আমি বাগান থেকে দৌড়ে রুমে আসলাম।তাও যাকে ভালবাসি তার মারের ভয়ে।এই ছিলো আমার কপালে ভাবা যায়
(এসব বলে নিজেই হেসে দিলো)

১০ মিঃ পর মিষ্টুর আম্মু রাসেলকে খেতে ডাকে। রাসেল গিয়ে খেতে বসে মিষ্টু তখন খাচ্ছিল।মিষ্টু একবারো রাসেলের দিকে তাকায়নি!রাসেল মিষ্টুর সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো বাট মিষ্টু রাসেলকে এড়িয়ে গেছে।রাসেল খেয়ে ওর রুমে চলে যায়! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে কেবল ৮ টা বাজে। রাসেল রেডি হয়ে মিষ্টুর আম্মুকে বলে বাইরে চলে যায়।বেশ কিছু সময় ঘোরাঘুরি করে একা একা তারপর যখন ১০ঃ৩০ টা বাজে তারপর একটা শপিংমলে গিয়ে ওর কিছু জামা কাপড় কেনাকাটা ওর ফ্ল্যাটে যায়।রাসেল ওর ফ্ল্যাটটা সাজানো দেখে খুব খুশি হয়!

মিষ্টু ওর কলেজে যায় তারপর ক্লাস করে কিছুক্ষন একটা গাছের নিচে বসে থেকে রাসেলের গুষ্ঠী উদ্ধার করে তারপর বাসায় চলে যায়।মিষ্টুর আম্মু মিষ্টুকে বকা দিসে এজন্য মিষ্টুর মন খারাপ! মিষ্টু সাওয়ার নিয়ে খেতে যায় আর তখন ওর আম্মুর থেকে শুনে রাসেল বাইরে গেছে এখনো ফেরে নি।মিষ্টুর কেমন জানি খারাপ লাগলো। কারন ওখানে তো রাসেলের কোন দোষ ছিলো না।তারপর মুহিতের থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে রাসেলকে ফোন দিলো বাট ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।

মিষ্টু কোন রকম খেয়ে ওর রুমে চলে গেল।আর গিয়ে টেডির দিকে চোখ পড়লো!টেডিটাকে জড়িয়ে ধরতেই মিষ্টি একটা গন্ধ ওর নাকে আসলো!মিষ্টু বেশ কয়েকবার সেই গন্ধটা নিলো।তারপর পাশ ফিরতেই তাকাতেই একটা অচেনা হালকা আকাশি কালারের একটা টাওয়াল দেখতে পেলো সাথে একটা বাটিতে মধ্যে রুমাল দেখতে পেলো।রুমালটা আর টাওয়ালটা শুকাতে দিলো! মিষ্টুর টেডিকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বলছে…

মিষ্টুঃরাসেল ভাইয়ার সাথে এমন করা উচিত হয়নি!উনি মোটেও খারাপ না।যথেষ্ট ভদ্র একটা ছেলে।ইসসস সত্যি খুব খারাপ লাগছে আজ সকালে এমনটা করা ঠিক হয় নি..

আম্মুঃ মিষ্টু তুই কি ঘুমিয়েছিস?
মিষ্টুঃ না আম্মু এসো! আমি ঘুমায় নি

আম্মুঃরাসেল তো দুপুরে খেতেও এলো না।মুহিত শুনলে খুব রাগ করবে।

মিষ্টুঃহয়তো কোন কাজে আটকে পড়ছে!চিন্তা করো না।ফিরে আসবে সময় হলে।আর ভাইয়াকে বলো না আমাকে বকবে।

আম্মুঃহুমম! তুই তাহলে একটু ঘুমিয়ে নে।কোচিং আছে তো।
মিষ্টুঃহুমম।

মিষ্টু রাসেলের সাথে এমন বিহেভ করার জন্য গিলটি ফিল করছিলো।তারপর এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।

মিষ্টু ৪ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে কোচিংয়ে যায়।আর গিয়ে শুনে আজ কোন ক্লাস হবে না।মিষ্টু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৪ঃ৩০ টা বাজে কেবল।হুট করে মিষ্টুর রাসেলের কথা মনে হলো ফোন বের করে ফোন দিলো বাট বন্ধ দেখাচ্ছে। মিষ্টু একটা রিকশা নিয়ে রাসেলের ফ্ল্যাটে চলে গেল।তারপর সত্যি গিয়ে দেখে ভেতর থেকে ডোর লক করা…।মিষ্টু মিষ্টি হেসে দেয়! দুই বার কলিংবেল বাজালো। কিন্তু কারো কোন সাড়া শব্দ নেই।এবার মিষ্টু রাগ করে কলিংবেলটা চেপে ধরে থাকলো।অনবরত বেজেই যাচ্ছে কলিংবেল।কারো কোন সাড়াশব্দ নেই।

রাসেল আজকে অনেক ঘোরাঘুরি করছে তার উপরে কাল রাতে ঘুম হয়নি এজন্য বাইরে থেকে খেয়ে এসেই ঘুমিয়ে পড়ছিলো।রাসেল নিজের রুমে সব সময় খালি গায়ে থাকে! ওটা ওর অভ্যাস আর কি। বাট মিষ্টুর দের বাসায় আসার পর কেমন একটা আনইজি ফিল করছিলো।এজন্য সব সময় গেন্জী পড়তে থাকছিলো। বাট এখন তো কেউ নেই তাই শুধু সাদা একটা থ্রী কোয়াটার প্যান্ট পরেই ঘুমিয়ে পড়ছে।

ওদিকে…
মিষ্টুঃ এতক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছি তাও ডোর খোলার নাম নেই।ওকে আমিও দেখি কতক্ষণ ডোর না খুলে থাকেন।আমিও দেখতে চাই আপনার সহ্য শক্তি কতো।দাঁড়ান দেখাচ্ছি মজা!আমার সাথে বিটলামি. …😠

কলিংবেলের শব্দ থামছে না দেখে!রাসেল একটা বালিশ ওর কানের সাথে চেপে ধরলো।বাট তাও শব্দ কমলো না।রাসেল এবার রেগে গিয়ে ডোর খুলে দেখে একটা মেয়ে দেওয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে কলিংবেলের সুইচটা চেপে ধরে রাখছে।আর অনবরত কলিংবেল বেজেই যাচ্ছে। রাসেল মেয়েটার মুখ দেখতে পাচ্ছে না চুলের জন্য।রাসেল মেয়েটা দেখার বৃথা চেষ্টা না করে! রাসেল রেগে গিয়ে বললো..

চলবে…
(কেমন লাগছে পড়তে গল্প টা 😭😭😭😭😭)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here