#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_14
🍁🍁
–
কলিংবেলের শব্দ থামছে না দেখে রাসেল একটা বালিশ ওর কানের সাথে চেপে ধরলো।বাট তাও শব্দ কমলো না।রাসেল এবার রেগে গিয়ে ডোর খুলে দেখে একটা মেয়ে দেওয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে কলিংবেলের সুইচটা চেপে ধরে রাখছে।রাসেল মেয়েটার মুখ দেখতে পাচ্ছে না চুলের জন্য। রাসেল রেগে গিয়ে বললো..
–
রাসেলঃহেই ইউ! এসব কোন ধরনের ফাজলামি।(রেগে গিয়ে)
মিষ্টুঃআমিও তো সেটাই বলছি? (দাঁতে দাঁত চেপে)
রাসেলঃতুমি এখানে?তুমি এখানে কখন এলে?আর কি মনে করে এলে?(অবাক হয়ে)
মিষ্টুঃএসেই তো দাড়িয়ে আছি!আর খুশির ঠেলায় কাজ পাচ্ছিলাম না।তাই এখানে চলে আসলাম।(দাঁতে দাঁত চেপে)
–
মিষ্টু রাসেলকে সরিয়ে রুমে ঢুকে যায় আর সোফাতে দুম করে বসে পড়ে।রাসেল ডোর লক করে আসে। মিষ্টু রাসেল দিকে একবার তাকিয়ে আরো দুইবার আড় চোখে তাকায় আর রাসেলের চোখে চোখ পড়ে!আর মিষ্টু সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয়!আর মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।রাসেল মিষ্টুর এভাবে চোখ নামিয়ে নেওয়া দেখে নিজের দিকে তাকায় আর মুছকি হেসে রুমে চলে যায়। রাসেল রুমে যেতেই মিষ্টু রাসেলের দিকে তাকিয়ে বলে..
–
মিষ্টুঃকি অসভ্য ছেলেরে বাবা!কেমন খালি গায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইসস একটু লজ্জাও নেই।একটা মেয়ের সামনে এভাবে কেউ আসে।তবে উনার বুকের পশম গুলো…..। ইসস ছিঃ! এসব আমি কি ভাবছি?(নিজের মাথায় নিজে টোকা দিয়ে)
–
ওদিকে রাসেল রুমে গিয়ে কাবাড খুলে একটা গেন্জী নিয়ে পড়ে!আর বিরবির করতে করতে বলে…
রাসেলঃলুচু মেয়ের মত তাকিয়ে ছিলো আবার দেখছি লজ্জাও পায়।দাড়াও মিষ্টু রাণী একবার নিজের করে নেই তারপর তোমাকে বোঝাবো মজা।তুমি বড্ড বেশি দুষ্টু। ইসস মন চাচ্ছে এখন বিয়ে করে নেই আর আমার আমার পিচ্ছি বউটাকে মুখের সামনে বসিয়ে রেখে সারাদিন দেখি। নিজের মনের কথাটাই জানাতে পারলাম না আর বউ বানানোর আশা করে আছি হা হা হা(বিরবির করতে করতে)
রাসেল এসব বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে আসো।
–
মিষ্টু এবার রাসেলের দিকে তাকিয়ে দেখে মেরুন কালারের গেন্জী আর সাদা থ্রীকোয়াটার পড়ে রাসেল ওর সামনে দাড়িয়ে আছে।রাসেল মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে কিচেনে যায় আর ঝটপট দুই মগ কফি করে আনে আর ইশারায় মিষ্টুকে বারান্দায় আসতে বলে।মিষ্টুর হাতে একমগ কফি ধরিয়ে দেয়!মিষ্টু কফিতে একটু চুমুক দিয়ে সাথে সাথে রাসেলের দিকে তাকালো।রাসেল মিষ্টুর দিকেই তাকিয়ে ছিলো কিছু শোনার জন্য। বাট মিষ্টু কিছু বললো না শুধু একটা মুছকি হাসি উপহার দিলো।রাসেল মিষ্টুকে ইশারার ওর পাশে তাকাতে বললো।মিষ্টু তাকাতেই তাকিয়ে দেখে একটা সাদা খরগোশ ছানা একটা খাচাতে…
–
মিষ্টু কফির মগ টা পাশে রেখে দৌড়ে খরগোশ টা কোলে তুলে নিলো।মিষ্টু খরগোশটা কোলে নিয়ে রাসেলের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে আবার ঘুরে গেল কারন রাসেল কফির মগ বদল করছিলো।মিষ্টু দেখেও না দেখার ভাণ করে থেকে গেল।এখন মিষ্টুর মনে অনেক কৌতুহল জমা হলো।রাসেল মিষ্টুর মগটা নিয়ে খুব তৃপ্তি সহকারে কফি খাচ্ছে!আর মিষ্টু হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।মিষ্টু রাসেলের চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয় কারন সরাসরি কোন ছেলের চোখ তাকাতে নেই কারন ছেলেদেরও চোখেও যে বড্ড বেশি মায়া লুকিয়ে থাকে,….
–
মিষ্টু অনেক খুশি হয়েছে আর রাসেলকে ধন্যবাদও দেয়। আর রাসেলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে বাসায় কখন ফিরবে।রাসেলের মন চাচ্ছে না এখন বাসায় ফিরতে!রাসেল চাচ্ছে মিষ্টুর সাথে কিছুক্ষন সময় কাটাতে।মিষ্টু খরগোশটাকে দেখিয়ে রাসেলকে বললো…
–
মিষ্টুঃরাসেল ভাইয়া!এটা আমাকে উপহার দিলেন কেন?
রাসেলঃ এমনিতেই মন চাইলো তাই!আর একটাই খরগোশ দিলাম কারন খরগোশ জোড়া থাকলে খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করে। (দুষ্টু হেসে)
মিষ্টুঃহুমম! একটাই ঠিক আছে!তবে এর নাম কি দেওয়ায় বলুন তো?(লুচু একটা মনে মনে)
রাসেলঃহুম কি নাম দেওয়া যায়? পেয়েছি এর নাম কুট্টুশ দাও
মিষ্টুঃওকে!নামটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে?(অনেক খুশি হয়ে)
রাসেলঃহুমম!
(এই হাসিটাই দেখার জন্য অধীর বসে থাকি রে পাগলী! এজন্য কত কষ্ট করে ঘুরে ঘুরে এই খরগোশটা কিনছি।)
মিষ্টুঃভাইয়া চলেন বাসায় যায়।সন্ধ্যা হয়ে গেছে আম্মু টেনশন করবে কারন আমি কোচিং থেকে এখানে এসেছে।
রাসেলঃএক কাজ করো মামনিকে বলে দাও তুমি আমার সাথে আছো তাহলে টেনশন করবে না।
মিষ্টুঃওকে
–
মিষ্টু ওর আম্মুকে ফোন দিয়ে বললো রাসেল ওর সাথে আছে।মিষ্টু ফোনে কথা বলা শেষ করে! রাসেল মিষ্টুকে বলে।
রাসেলঃ মিষ্টু তোমাদের রাজশাহী শহরটা আমার তো ঘোরায় হলো না।মুহিতও নেই যে ওর সাথে ঘুরবো। বাবা এখানে এই ফ্ল্যাট টা কিনছে আমি এই প্রথম রাজশাহীতে এসেছি।এজন্য এখনকার কিছুই আমি চিনিনা।
মিষ্টুঃআমি আছি তো ভাইয়া! চলেন আমরা বেরিয়ে পড়ি আজ আপনাকে কিছু কিছু জায়গাতে নিয়ে যাবো।
রাসেলঃতাই বুঝি!ওকে
মিষ্টুঃহুমম! আজ আপনাকে…রাজশাহীর কিছু খাবার খাওয়াবো।
রাসেলঃতা কি কি খাওয়াবে শুনি?
মিষ্টুঃআজকে মানে এখন আমরা কয়েটা জায়গায় যাবে।আর বাকি গুলো কালকে সারাদিন ঘুরে দেখাবো কেমন।আজকে তো হাতে বেশি সময় নেই। আপাতত এখন যাবো…
রাজশাহী নিউ মার্কেটের -বার্গার
বেলদার পাড়ার_শিক কাবাব/ডাল পুরী/চপ/ফুচকা
জিরো পয়েন্টের-লেবু চা
–
আর কালকে যাবো….
বিরোন কাকু সিংগাড়া খেতে
আম চত্বরের ছোট পুরি
তালাইমারি, ফুলতলার চটপটি
বাটার মোড়ের জিলাপি
সি.এন.বি. মোড়ের ডালপুরি আর মিষ্টি (সফট্ মিষ্টি)
আর বর্ণালীর মালাই চা…..
আর নাটরের কাঁচা গোল্লা, চমচম, এগুলো খাওয়াবো যদি আপনার ভাগ্যতে থাকে তো।হা হা হা
(আর আপনারা রাজশাহী আসলে অবশ্যই এগুলো টেস্ট করবেন😋😋)
রাসেলঃ ওকে 😊
–
ওরা বেরিয়ে গেলো! রাজশাহীতে শীতের সময় শীত বেশি আর গরমের সময় গরম বেশি! শীতের কারনের জায়গা পিঠা বিক্রয় করা শুরু করছে অনেকে।রাজশাহী শহরটা ছোট হলেও সবসময় জাঁকজমকপূর্ণ থাকে সময়।আর শিক্ষা নগরী বলে কথা।রাসেল আর মিষ্টু রিকশা করে ঘুরছে দুজনে পাশাপাশি বসে আছে কারো মুখে কোন কথা নেই।মিষ্টু ওদের ড্রাইভার আংকেল ফোন দিয়ে ডেকে নেয় আর কুট্টুশকে বাসায় নিয়ে যেতে বলে!মাঝে মাঝে মিষ্টুর শরীরের সাথে রাসেলের শরীর টার্চ করাতে মিষ্টু আনইজি ফিল করে।রাসেল এটা বুঝতে পেরে একটু চেপে বসে যাতে মিষ্টু আনইজি ফিল না করে..
–
ওরা নিউ মার্কেটে গিয়ে বার্গার খেলো,চিংড়ির চপ,ধনেপাতার চপও খেলো।সত্যি এখান এই মুখরোচক খাবার গুলো খুব টেস্টি। রাসেল খেয়ে খুব প্রশংসা করলো মিষ্টু নিউ মার্কেটে কাছে একটা মসজিদ দেখালো আর ওই রাস্তার দিকে হাটা ধরলো।রাসেলও মিষ্টুর দেখে হাটা ধরলো! তারপর রাসেলকে অনেক গুলো মেডিসিনের দোকান দেখিয়ে বললো…
মিষ্টুঃএটা হচ্ছে মুন লাইট!মুনলাইট এটা এই জায়গার নাম।এখানে সব ধরনের মেডিসিন পাওয়া যায়। আর একটু সামনে হেটে গেলে পদ্মা গার্ডেন।আর সামনে একটা খাবারের হোটেল আছে…নাম বিন্দু হোটেল।
রাসেলঃওহহ!তোমার কথা শুনেই বুঝেছি যে ওখানে ভাল কিছু পাওয়া যায়। কারন এখানে অনেক গুলো হোটেল দেখছি বাট ওই হোটেলটার নাম বললে কেন?
মিষ্টুঃওখানে সিংগারা পাওয়া যায়।ওটা কলিজা দিয়ে বানায় অসম্ভব ভালো খেতে…ইসস মুখে পানি চলে আসলো।
রাসেলঃতাহলে চলো আমরা ওখানে যায়।তোমার ব্যাখা করা দেখে আমারও খেতে ইচ্ছে করছে..
(যদিও আমি এসব খায় না!শুধু তোমার সাথে সময় কাটানোর জন্য আজ এগুলোও খাচ্ছি। জানিনা পরে আমার পেটের অবস্থা কি হবে?)
মিষ্টুঃআসলে এখন সিংগারা পাওয়া যাবে না।ওরা শুধু সকালেই সিংগারা বানায়।এত পরিমান ভীড় হয় যে সিংগারা পাওয়াটা মাঝে মাঝে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতে হয়।যার ভাগ্য ভালো সেই পাবে সিংগারা।হা হা হা
রাসেলঃহা হা হা তাই নাকি!তুমি এত পেটুক তোমাকে দেখলে বোঝা যায় না।
মিষ্টুঃনজর দিবেন না তো (মুখ ভেংচি দিয়ে)
–
ওরা দুজন পাশাপাশি হাটছে আর মিষ্টু অনেক কিছু ওকে দেখাচ্ছে। রাসেল খুব মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনছে!রাসেল একহাত ওর পকেটে ঢুকিয়ে হাটছে।মিষ্টু রাসেলকে পুরো বাজার টা ঘুরে ঘুরে দেখালো।বাজারে ঢুকেই মিষ্টুকে কিছু কিনে দিতে চাইলে মিষ্টু না করে!বাজারে ঢুকতেই অনেক কিছু দোকান বসিয়েছে!সব মেয়েদের সাজগোজের জিনিস নিয়ে।রাসেল মিষ্টুকে এক প্রকার জোর করেই কয়েক ডজন চুরি কিনে দিলো!রাসেলের চোখ পড়ে একজোড়া নুপূরের উপর! রাসেল মিষ্টু দিকে তাকিয়ে দেখে মিষ্টু পুতুল ওয়ালা একটা চুলের কাটা দেখছে।রাসেল মুছকি হেসে কাটাটা মিষ্টুর হাত থেকে নিয়ে দোকানদারকে প্যাক করতে বলে আর মিষ্টুর পায়ের কাছে বসেই রাসেল মিষ্টুকে নুপূর পড়িয়ে দেয়।
–
রাসেল এমনটা করবে মিষ্টু ভাবতেই পারে নি!মিষ্টু রাসেলের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।রাসেল নুপূর পড়িয়ে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে বলে..
রাসেলঃসেদিন বলেছিলাম না একটা উপহার বাকি রইলো এটা দিয়ে শোধ করে দিলাম।(ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে)
মিষ্টুঃহুমম (অবাক হয়ে)
–
তারপর ওরা নিউ মার্কেটে লেবু চা খায়!রাসেল খুব ইনজয় করছে মিষ্টুর সাথে এভাবে খাওয়া,, হাটা,,এসব নিয়ে।বাট মিষ্টু এবার খুব আনইজি ফিল করছে রাসেল বুঝে পেরে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে বললো।
রাসেলঃ মিষ্টু লেবু চা টা খেতে অসাধারণ! আমি লেবু চা এর আগে খেয়েছি কিন্তু এত টেস্টি চা খাইনি।
মিষ্টুঃরাজশাহীর কিছু কিছু খাবার আছে!যেগুলো খেলে ভুলতে পারবেন না।কালকে আরো অনেক কিছু খাওয়াবো কেমন।
রাসেলঃওকে
মিষ্টুঃএবার বাসায় ফেরা যাক!অলরেডি ৯ টা বাজে।
রাসেলঃওকে!তার আগে মামনির জন্য কিছু খাবার কিনে নাও।
-.
মিষ্টুর আম্মু পিয়াজু খুব পছন্দ করে এজন্য পেয়াজুর সাথে আরো কিছু খাবার কিনে ওরা বাসায় ফেরে। মিষ্টু রাসেলকে নিয়েই কিছু ভাবছে!ওরা বাসায় ফিরে তারপর ফ্রেশ হয়ে নেয়!মিষ্টু ওর আম্মুকে দেখায় রাসেল ওকে কি কি কিনে দিয়েছে?মিষ্টুর আম্মুও খুব খুশি হলো।১০ঃ৩০ দিকে সবাই ডিনার করে নেয় আর যে যার রুমে চলে যায়…আর শুয়ে পড়ে।আর রাসেল শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে…
–
রাসেলঃমুহিতের সাথে আমার কথা বলতেই হবে!এভাবে আমি থাকতে পারছি না।আমি মিষ্টুর প্রতি মারাত্মক ভাবে দূবল হয়ে পড়ছি…মুহিত ফিরলেই আমি মুহিতের সাথে কথা বলবো।ওকে আমি বলবো যে আমি মিষ্টুকে খুব ভালবেসে ফেলেছি…
চলবে..