#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_22
🍁🍁
রাসেল বুঝতে পারলো মিষ্টু কোন কারণে রেগে আছে!রাসেলও ওর কাপড় দিয়ে শুকাতে দিলো আর নিচে নেমে এলো।তারপর সবাই এক সাথে খেতে বসে…।আর সবাই খেয়ে ড্রয়িংরুমে আড্ডা দিতে বসে!বেশ কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে মুহিতকে রেস্ট নিতে বলে কারন মুহিত রাত্রির গায়ের হলুদের স্টেজ সাজাবে তাই ওখানে যাবে!রাসেলেও গেল মুহিতের সাথে কারন একা একা বোরিং লাগছে।মুহিত আর রাসেল ওখানে গিয়ে কাজে লেগে পড়লো!রাসেলেও কাজে লাগালো মুহিতের সাথে সাথে।
–
রাসেলরা এটা ওটা করছে আর মিষ্টু ওর রুমের জানালা দিয়ে সব দেখছে!কারন রাত্রির গায়ে হলুদের স্টেজ মিষ্টুদের বাগানেই করা হয়।মিষ্টু নিরবের হাতে কুট্টুশতকে দিয়েছে ঘাস খাওয়ানো জন্য কিন্তু নিরব কোথায় যাবে তাই নিরব কুট্টুশকে রাসেলের হাতে দেয়।রাসেল মুছকি হেসে কুট্টুশকে কোলে নিয়ে ঘাসের উপরে বসে পড়ে আর কি কি যেন বলছে?রাসেল একটা করে ঘাস তুলে কুট্টুশের মুখের সামনে ধরছে আর কুট্টুশ কুটকুট করে খাচ্ছে।
–
এভাবে বেশ কিছু সময় কেটে যায় আর স্টেজও সাজানো হয়ে গেছে!রাসেল কুট্টুশ নিয়ে বাসায় ঢুকতেই দেখে মুহিত কোথায় যেন যাচ্ছে?মুহিত রাসেলকেও শুধু প্যান্ট টা বদলে আসতে বললো!কারন বকুলদের বাসায় থেকে কয়েকজন এসেছে রাত্রিকে গায়ে হলুদ দিতে আর তাদেরকেই আনতে মুহিত যাচ্ছে।
–
রাসেল মুহিতের হাতে কুট্টুশকে দিলো আর মুহিত কুট্টুশকে খাঁচায় আটকে রাখলো।তারপর ওরা দুজনই রেডি হয়ে বের হয়ে গেল।মিষ্টু রাসেলেকে বের হতে দেখে নিরবকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলো কিছু মেয়েরা আসছে বকুলদের বাড়ি থেকে তাদেরই আনতে গেল।
–
এবার মিষ্টু চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ টাকে কনট্রোল করে মনে মনে বলছে।
মিষ্টুঃফেস দেখে মনে হয় ইনসেন্টের এর ডিব্বা! বাট সেই লুচু!আর এই লুচু নামটা দিয়েও আমি ভুল কিছু করি নি।
–
মিষ্টু রাত্রির কাছে গিয়ে দেখলো পার্লার থেকে লোক রাত্রিকে সাজাতে। রাত্রি মিষ্টুকে ওর কাছেই বসে থাকতে বললো! মিষ্টু বলে দিলো রাত্রিকে কি করে সাজাবে! মিষ্টুর কথা অনুযায়ী মেয়ে গুলো রাত্রিকে সাজাতে শুরু করলো আর মিষ্টু কাঁচা ফুল দিয়ে গয়না বানাতে শুরু করলো!প্রায় ২ঃ৩০ ঘন্টা পর রাত্রির সাজ কমপ্লিট হলো।রাত্রি মিষ্টুকে অনেক জোরাজুরি করলো যাতে শাড়ি পড়ে আর একটু সাজগোজ করে। বাট মিষ্টু কিছুতেই সাজগোজ করলো না।বরং যে ড্রেসে আছে ওই ড্রেস পড়েই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
–
মিষ্টু বাগানের দিকে চোখ গেল দেখছে রাসেল একটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে খুব কথা বলছে!মুহিত হঠাৎ মিষ্টু আর রাসেলকে ডাকলো বাসায় যাওয়ার জন্য! অলরেডি গেস্ট আসা শুরু করে দিসে চারদিকে মানুষে গমগম করছে।রাসেলে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে দেখে মিষ্টু আগের ড্রেস বদলায়নি!রাসেল মিষ্টুকে উদেশ্য করে বললো..
রাসেলঃ মিষ্টু তুমি এখনও রেডি হও নি কেন?সবাই তো অলরেডি রেডি হয়ে এসেও পড়ছে।
মিষ্টুঃআমি রেডি হয়ে কি করবো?বিয়ে কি আমার হচ্ছে নাকি?আর সাজগোজে করে লোক দেখিয়ে দাঁত ক্যালানোর কোন প্রয়োজন আমি দেখছি না।যাদের প্রয়োজন পড়বে তারাই না হয় বেশি করে সাজগোজ করে লোক দেখিয়ে বেড়াক।(রাসেলকে উদেশ্য করে)
–
মিষ্টুর রেগে গিয়ে কথাটা বলে চলে গেল!রাসেল বুঝলো না কিছুই।মিষ্টু আর রাসেল বাসায় ঢুকে দেখে! মুহিতের সব বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে! মিষ্টু ওর আম্মুর কাছে গিয়ে দেখে ওর আম্মু বিভিন্ন ধরনের নাস্তা রেডি করছে!আর আর বেশ কয়েকটা মগে কফি ঢালছে।মিষ্টুর আম্মু মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে খাবার গুলো মুহিতের বন্ধুদের দিতে বলে!মিষ্টু বিরক্ত মুখে নাস্তা গুলো দিয়ে আসবে ঠিক তখনই মুহিত মিষ্টুকে পিছু ডাকে।আর শপিং ব্যাগ গুলো সবাইকে দিতে বলে।
–
মিষ্টু শপিং ব্যাগ গুলো সবাইকে হাতে হাতে দিলো।আর মুহিত সবাইকে আবার এই ড্রেসে রেডি হয়ে নিতে বললো!কোথায় থেকে একটা মেয়ে এসে রাসেলের পাশে ধপ করে বসে পড়লো। আর রাসেল প্রায় এক লাফে উঠে দাড়ালো।মিষ্টু আবার রাগি চোখে তাকিয়ে হনহন করতে করতে চলে গেল!মিষ্টুর রাগ টা রাসেলের চোখ এড়ায় নি। একটা মেয়েটা সেই কখন থেকে রাসেলের পেছনে পড়ে আছে!মেয়ে খুব গায়ে পড়া টাইপের! রাসেল মুহিতের থেকে জানতে পেরেছে এটাই রাবেয়া খালার মেয়ে।রাসেলের এভাবে লাফ দিয়ে উঠে দাড়ানো দেখে সবাই মুখ টিপে টিপে হাসছে!রাসেল শপিং ব্যাগটা নিলো এক মগ কফি তুলে ওর রুমে চলে গেল।মেয়েটাও সেদিকে যাচ্ছিলো বাট রাসেল ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয় ভেতর থেকে।
–
মিষ্টু রাগে দুঃখে এবার সাজতে শুরু করলো!একটা পিংক কালারের গাউন পড়লো।তারপর চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে বেশ কয়েকটা লাল গোলাপ নিয়ে আটকে দিলো ওর কানের পাশে!চোখে মোটা করে কাজল দিলো হাতে গাউনের সাথে মেচিং করে চুরি পড়লো।ঠোঁটে হালকা করে গোলাপী লিপস্টিকও দিলো আর গলাতে চিকন একটা চেন লকেট সহ আর কপালে একদম ছোট্ট একটা কালো টিপ।মিষ্টু আয়নাতে একবার দেখে নিলো তারপর রাগি চেখে তাকিয়ে বললো..
মিষ্টুঃ আমিও সাজতে পারি!শুধু ছেলেরা মাথা ঘুরে পড়ে যাবে ভেবে সাজি না।😏
–
মিষ্টু রুম থেকে বের হয়ে কাউকে পেলো না!তাই নিজেই একা একা রাত্রির স্টেজের কাছে গিয়ে রাত্রির পাশে বসে পড়লো।আয়ান, জয়,শুভ্র,মুহিত আর রাসেল সহ সবাই একই ড্রেস পড়ে রেডি হয় তারপর বাকিরা নিচে যায় আর রাসেল রুমে কিছু একটা করে তারপর ওর ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে নিচে গেল।
–
তারপর নিচে গিয়ে আশ পাশ তাকিয়ে মিষ্টুকে খুজে না পেয়ে স্টেজের দিকে গেল। আর ওখানে গিয়ে মিষ্টুকে দেখে রাসেলের হার্ট বিট দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করলো!চারদিকে ময়দা সুন্দরীর মাঝে মিষ্টুকে দেখে মনে হচ্ছে সদ্য ফোটা কোন ফুলের কলি।
–
সবাই একে একে রাত্রিকে হলুদ লাগাচেছ আর মিষ্টি খাইয়ে যাচ্ছে!মুহিত ওর সব বন্ধুদের ডাকলো রাত্রিকে হলুদ ছোয়ানোর জন্য! সবাইকে একে একে হলুদ ছুইয়ে কিছু না কিছু উপহার দিলো।এবার রাসেলের পালা রাসেলে মুছকি হেসে রাত্রির হাতে একটা গয়নার বক্স দিয়ে হলুদ ছুঁয়ে দিলো রাত্রিকে! তারপর কি মনে করে আর একটু হলুদ নিয়ে মিষ্টুর গালে লাগিয়ে দিলো!মিষ্টু চমকে উঠে রাসেলের দিকে তাকিয়ে আছে!
–
রাসেল রাত্রিকে মিষ্টি খাইয়ে আবার মিষ্টুর সামনে মিষ্টি ধরলো।মিষ্টু অবাক হয়ে শুধু রাসেলের দিকে তাকিয়ে আছে!আর রাসেল মুছকি মুছকি হাসছে মিষ্টু খেতে গেলে রাসেল দেয় না খেতে । এভাবে দুইবার রাসেল মিষ্টুকে ঠকায় বাট তার পরের বার আর ঠকায় না।রাসেলের এমন কাজে সবাই হাসতে শুরু করে তিনবারের বেলাতে মিষ্টুর মুখে মিষ্টি দেয়। তারপর রাসেল একটা কমলা নিয়ে রাত্রি খাইয়ে দেয় আর মিষ্টুর দিকে তাকায় আর মিষ্টু রাসেলের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থাকে।মিষ্টুর এভাবে তাকানো দেখে রাসেল আরেক পিচ কমলা তুলে নিয়ে মিষ্টুকে আর দেওয়ার সাহস পায় না।তাই নিজেই খেয়ে ফেলে….
–
এভাবে রাত প্রায় ১২ঃ৩০ পযন্ত রাত্রিকে হলুদ দেওয়া হলো! তারপর মিষ্টুরা সবাই মিলে ডান্স নিয়ে একটা একটা প্রোগ্রাম করবে। দুইটা চিরকুট তুলবে যার যার নাম উঠবে তারা দুজন স্টেজে এসে ডান্স করবে।তারপর খেলা শুরু হলো প্রথমে নাম উঠে জয় আর পাপড়ির! জয় তো সেই উরাধুরা ডান্স করছে!মিষ্টু খুব ইনজয় করছে আর রাসেল একটা চেয়ারে বসে বসে মিষ্টুকে দেখতে থাকে!এভাবে প্রায় ৬ জন ডান্স করে যায় এবার মিষ্টু নিরবকে দুটো চিরকুট তুলতে বলে! মিষ্টু নিরবের হাতে থেকে চিরকুট নিয়ে একটা নাম খুলে দেখে রাসেলের নাম! সাথে সাথে মিষ্টুর মুখের হাসি চলে যায়।আরেকটা চিরকুট নিরব খুলে যার নাম বলে তাতে সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে।
–
রাসেল আল্লাহ আল্লাহ করছে যাতে মিষ্টু ছাড়া কোন মেয়ে নাম না ওঠে!নিরব চিৎকার করে দুটো নাম বললো আর রাসেল আর মুহিত চেয়ার থেকে সাথে সাথে দাড়িয়ে যায়।কারন রাসেল আর মুহিতেরই নাম উঠছো।
(সব গল্পে হিরো -হিরোইন এর নাম উঠবে এর কোন মানে নেই!এজন্য…..)
মুহিত আর রাসেল দুজন দুজনের দিকে হা করে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মিষ্টু তো খুব খুশি…
–
মিষ্টু দুষ্টু হাসি দিয়ে ওদের স্টেজে ডেকে নিলো!মুহিত তো পারছে না শুধু কেদে দিতে কারন এত মেয়ের সামনে নাচতে না পারলে পুরাই ইজ্জতের ফালুদা!আর মুহিত লজ্জা পাচ্ছে কারন ওর বাসার সবাই এখানে উপস্থিত এজন্য!আর রাসেল তো পারছে না উল্টো ঘুরে দৌড় দিতে।মিষ্টু এসে রাসেল আর মুহিতকে জোর করে হাত ধরে টেনে স্টেজে নিয়ে গেল!মিষ্টু তো খুব খুশি কারন রাসেলের সাথে কোন মেয়ে নাচবে না তাই।
–
রাসেল মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে দেখলো মিষ্টুর মুখে দুষ্টু হাসি!রাসেলও কম যায় না। রাসেলও যে হার মানার পাএ নয় এজন্য রাসেল মুহিতের কানে কানে বললো।
রাসেলঃভাই মিষ্টু আমাদের মাইনকার চিপায় ফেলছে!পালানোর রাস্তা নেই চল শুরু করি।আর বোকার মত দাড়িয়ে থাকলে সবাই আমাদের লুজার ভাববে.. …
এবার মিষ্টু আতিফ আসলামের তেরে লিয়ে গানটা দিল…রাসেল আর মুহিত দুজন দুজনেরই দিকে তাকিয়ে তারপর ডান্স শুরু করলো।দুইটা দামড়া দামড়া ছেলে ডান্স শুরু করতেই পুরো স্টেজ নড়ে উঠছে…..তার ওদের দিকে সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।কারন ওরা একদম ফুল মুড নিয়ে ডান্স শুরু করছে…
চলবে….