স্পর্শানুভূতি #writer_Nurzahan_Akter_Allo #part_25 🍁🍁

0
605

#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_25
🍁🍁

রাবেয়া খালাঃরাসেল বাসায় তো কেউ নেই আর আপাতত কেউ থাকবেও না। রাত্রির বাবা মায়ের মন খারাপ তাই ওখানে গেছে সবাই!বুঝোই তো মেয়েরা যখন বাসায় থেকে চলে যায় তখন বাসাটা কেমন ফাকা ফাকা লাগে।তাই তোমার মামনি তোমাকে বলছে…

রাসেলঃ কি বলছে মামনী?

রাবেয়া খালাঃমুহিত রাও তো ছাদে আর মিষ্টুর রুমে তো গয়না ঘাটি আছে!তাই তোমাকে মিষ্টুর রুমেই শুয়ে পড়তে বলছে।

রাসেলঃতাহলে মিষ্টু কোথায় ঘুমাবে?আর বাসার সবাই ফিরবে কখন…

রাবেয়া খালাঃ মিষ্টু নাকি রাত্রিদের বাসাতেই থাকবে!তাই তোমাকে ওর রুমেই শুয়ে পড়তে বললো তোমার মামনি।

রাসেলঃ আচ্ছা

রাবেয়া খালাঃতাহলে থাকো কেমন!আমি বাইরে থেকে আটকে দিচ্ছি! আর চাবিটা তোমার মামনির হাতে
দিচ্ছি। গুড নাইট

রাসেলঃহুমম! গুড নাইট

রাসেল মিষ্টুর রুমে গিয়ে ড্রিম লাইট অন করে শুয়ে পড়ে!রাসেলের একটা ব্যাড হেবিট ও গেন্জী পরে ঘুমাতে পারে না!রাসেল গেন্জীটা খুলে রেখে শুয়ে পড়ে আর ভাবছে…

রাসেলঃবউয়ের রুমে শুয়ে আছি বাট বউ ছাড়া!কি সোনা বাঁধানো কপাল আমার।আর পাগলিটা কই অগ্রিম বিয়ের জন্য তো কেঁদে নিলো বাট সেই মহারানী কই আছে এখন?সব সময় পালিয়ে বেড়ায় আমার থেকে! আমার আশ পাশে যদি থাকে তাহলে কি এমন ক্ষতি হবে কে জানে?ওর রুমে শুয়ে আছি কোথায় ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো। ধুরর সেই সৌভাগ্য কোনদিন হবে কি না কে জানে?পাগলীরে তোকে কত টা যে ভালবাসি যদি দেখাতে পারতাম!কবে যে বুঝবি রে আমার মনের কথা।আই লাভ ইউ মিষ্টু!আই রিয়েলি লাভ ইউ।তোমাকে ছাড়া এখন আমি কিছু ভাবতে পারি না!তুমি নামক ব্যাধিতে আমি ভুগছি….


রাসেল এসব ভাবছিলও! মাথা ব্যাথার কারনে একটা সময় ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে!


মিষ্টুর করা আজকে কাহিনী নিয়ে সবাই ওকে পচাচেছ! মুহিতরা ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছে।মিষ্টু ওর ফোনটা হাতে নিয়ে সবার আড়ালে চলে গেল।তারপর রাত্রির নাম্বারে ফোন দিলো!কল হচ্ছে বাট ধরছে না।মিষ্টুও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী না ও অনবরত কলে দিয়েই যাচ্ছে! মিষ্টুর কল কেউ রিসিভ করলো।আর মিষ্টু..

মিষ্টুঃহ্যালো আপু!

বকুলঃনা শালিকা আমি তোমার জিজু!তোমার আপু তো.

মিষ্টুঃভাইয়া ভালো আছেন!আর একদম ঘুমের বাহানা করে ফোন রাখবেন না।আমার কিছু বলার আছে…আর আপু কি করছে? (মুখ টিপে হাসছে)

বকুলঃবইন রে বাসর রাত আজকে আমাদের! আর তুমি ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করছো কি করছি?এটা কোন জন্মের প্রতিশোধ নিচেছা বলো তো।

মিষ্টুঃওই একটু খোঁজ খবর নিলাম আর কি?বললেন না তো আপু কি করে?আপু কি রাতে খেয়েছে?

বকুলঃহুমম খেয়েছে!আর অনেক জার্নি করার পর নাকি মাথা ব্যাথা করছিলো।আর খুব টায়ার্ডও হয়ে গিয়েছিলো। এজন্য আমি মাথা টিপে দিচ্ছিলাম এখন ঘুমিয়ে গেছে।কয়েকদিন খুব ধকল গেলো তো।

মিষ্টুঃ আচ্ছা থাক ঘুমাক!ভাইয়া গুড নাইট

বকুলঃতুমিও ঘুমিয়ে পড়ো! অনেক রাত হয়ে গেছে।গুড নাইট

মিষ্টুঃওকে

মিষ্টু ফোন রেখে গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসলো।মিষ্টু আপাতত গভীর চিন্তায় চিন্তিত।

মিষ্টুঃভাইয়া টা কত ভালো!ভাইয়ার জায়গাতে অন্য কোন ছেলে থাকলে কি আসলেই আপুকে ঘুমাতে দিতো!সত্যি আপু তোর ভাগ্যটা অনেক ভাল বকুল ভাইয়ার মত একটা বর পেয়ে!আচ্ছা ভাইয়া আমাকে ঢপ মারলো না তো।এমনও তো হতে পারে ওরা রোমাঞ্চ করছে বাট আমাকে ঢপ মারলো।ধুরর! আমিও যে কি না ওদের বাসর রাতে ওরা তো রোমাঞ্চই করবে এতে এত ভাবা ভাবির কি আছে?আর বাসর ঘরে রোমাঞ্চ করবে না তো কুতকুত খেলবে? আমিও না আসলেই একটা গাধী!তবে তারা কুতকুত খেলুক বা অন্য কিছু একটা খেলুক তাতে কি!ইসস দিন দিন আমি এত ফাজিল হয়ে যাচ্ছি ক্যারে!(নিজের মাথায় নিজেই টোকা দিয়ে)


মিষ্টু উঠে রান্না ঘরে চলে গেল!ড্রয়িং রুমে এসে দেখে এখনো সবাই গল্প করছে!মিষ্টু এক প্যাকেট মিষ্টি এনে রাত্রির ঘরে বসে বসে খাচ্ছে আর চিন্তা করছে!

মিষ্টুঃআমারও বাসর রাত আসবে!আমি রোমাঞ্চ করবো!আচ্ছা আমার বরটা যদি রোমাঞ্চ না করে তখন আমি কি করবো?ওহ করবে না তো কি হয়েছে আমি করবো?আচ্ছা আমার বরটা যদি রোমান্টিক না হয় তখন কি হবে?আচ্ছা ওই লুচু টা কোথায় অনেকক্ষণ ধরেই তো দেখছি না!ওই লুচু রাসেল টা কি রোমান্টিক নাকি হাবলা কে জানে? (এসব ভাবছে আর মিষ্টি গুলোকে সাবাড় করছে)


মিষ্টি খেয়ে মিষ্টু হাত ধুতে রান্না ঘরে গেল!মিষ্টু আজকে লেডিস গেন্জী পড়ছে আর লেডিস থ্রীকোয়াটার প্যান্ট বাট সেই সন্ধ্যায় থেকে শরীরের মধ্যে মনে হচ্ছে কি যেন ফুটছে!মিষ্টু ওর আম্মুকে গিয়ে বললো..

মিষ্টুঃ আম্মু আমার এই গেন্জীটাই সূচ ফুটে আছে নাকি দেখো তো।

আম্মুঃকেন? সুচ ফুটে থাকবে কেন? এটা তো পরশুদিনই মুহিতের সাথে গিয়ে কিনে এনেছিস।

মিষ্টুঃউফফ রে আমার মনে হচ্ছে কে যেন সুচ ফুটাচেছ?আমার এই ড্রেসটা বদলে ফেলি চাবিটা দাও তো।আর আমি আর আসবো না ঘুম পাচ্ছে…

আম্মুঃহুমম!আর এই নে!(চাবিটা দিয়ে)


মিষ্টু চাবি নিয়ে ওদের বাসায় চলে যায় সাথে রাবেয়া খালাও চলে আসে ঘুম পাচ্ছে বলে।মিষ্টু ওর রুমে গিয়ে দেখে ড্রিম লাইটাটা জালানো তাই কিছু না ভেবে গেন্জীটা খুলে মেঝেতে ছুড়ে মারে।তারপর মিষ্টুও শুয়ে পড়ে..


রাসেল এমন ভাবে ঘুমিয়ে আছে কম্বল মুড়ি দিয়ে বোঝার উপায় নেই কেউ এখানে শুয়ে আছে!মিষ্টু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১ঃ১২ বাজে! তারপর মিষ্টু ওর আম্মুর কথা শুনতে পায় আর কথা শুনেই বোঝা যায়। ওর আম্মু রা বাসায় এসেছে!মিষ্টু পাশ ফিরে শুতে গিয়ে দেখে কেউ শুয়ে আছে!মিষ্টু ছিটকে দুরে সরে যায় আর ভয় পেয়ে একটা চিৎকার দেয়।রাসেল কারো চিৎকারের শব্দ শুনে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসে!আর বোঝার চেষ্টা করে কি হয়েছে?আর কে এমন করে চিৎকার দিলো ?বাসায় তো কেউ নেই??তাহলে??


রাবেয়া খালা এইটার জন্যই এতক্ষণ বাইরে দাড়িয়ে ওয়েট করছিলো!মিষ্টুর চিৎকারের সাথে রাবেয়া খালা মিষ্টুর রুমে ঢুকে পড়ে আর সাথে সাথে লাইট জালায়!রাসেল মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয়!কারন মিষ্টু তখন কালো রংয়ের লং টেন পরা ছিলো। মিষ্টু ওর বেডে রাসেলকে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে!মিষ্টু এবার নিজের দিকে তাকিয়ে এক প্রকার দৌড়ে মেঝেতে ফেলা সেই গেন্জীটা নিয়ে ওয়াশরুমে দৌড় দিল!রাসেলও ওর গেন্জীটা পড়ে বেডে থেকে উঠে দাড়াতে দাঁড়াতেই বাসার সবাই দৌড় আসে! আর কি হয়েছে সেটা জিজ্ঞাসা করে?


রাসেল কি বলবো বুঝতে পারছে না!রাসেল বুঝে গেছে গেছে ও একটা বাজে পরিস্থিতির মাঝে ফেসে গেছে!মিষ্টুর রুমে রাসেলকে দেখে তাও এত রাতে অবাক হয়ে সবাই রাসেলের দিকে তাকিয়ে আছে?মুহিতরা ছাদে থেকে নেমে দেখে ওদের বাসায় অনেক জন আর সবাই মিষ্টুর রুমে! মুহিরা সবাই মিষ্টুর রুমে গিয়ে দেখে সবাই রাসেলকে কি কি সব বলছে?বাট রাসেলকে কিছু বলার সুযোগ দিচ্ছে না।মিষ্টু তখন কাঁপতে কাঁপতে রুমে এসে মুহিতের পাশে দাড়ায়।মুহিত রাসেলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে..


মুহিতঃরাসেল কি হয়েছে?আর এত রাতে সবাই এখানে কি করছে?(অবাক হয়ে)

রাবেয়া খালাঃ কি আর বলবে? বলার মত কি সেই মুখ আছে?এই ছেলে আর মিষ্টু এক রুমে একই বেডে কি করছিলো জিজ্ঞাসা করো?তাও আবার মিষ্টু শুধু টেনটপ পড়ে….আমি ওদের নিজে দেখছি এই অবস্থায়।

এই কথা শোনার পর মুহিতের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে!রাসেলের চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়তে থাকে ও জীবনেও এত ছোট হয় নি কারো কাছে!মিষ্টুও কান্না করতে থাকে কারন সবাই ওদের ভুল বুঝছে!মিষ্টুর আম্মু মিষ্টুকে গিয়ে ঠাস্ ঠাস্ করে চড় বসিয়ে দেয়!মিষ্টু কে মারতে দেখে রাসেল সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়।ওরা যে দুজনেই আজ কারো পেতে রাখা ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছে।মিষ্টু খুব কাঁদছে আর আর বলছে ওদের দোষ নাই!বাট কেউ কোন কথা শুনছে না।


রাসেল পারছে না মাটি ফাঁক করে ঢুকে যেতে।মুহিত মেঝেতে ধপ করে বসে পড়ে!মিষ্টু মুহিতকে ধরতে গেলে মুহিত মিষ্টুকে দুরে সরিয়ে দেয়!রাসেল কিছু বলতে গেলে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয়!শুভ্র, আয়ান,জয়, মুহিতের আম্মু কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে।


রাসেল মুহিতের সামনে গিয়ে বসে বাট কিছু বলার আগেই মুহিত বলে উঠে..

মুহিতঃরাসে ল ল এভাবে বন্ধুতের দাম পরিশোধ করে দিলি?কেন ঠকালি আমাকে (ছলছল চোখে তাকিয়ে বলতে বলতে রাসেলকে কয়েকটা চড় মেরে দেয়)

রাসেলঃভাই বিশ্বাস কর তোরা যা ভাবছিস ভুল ভাবছিস!আমি এত নিম্নমানে কাজ করতে পারি না ভাই!আমার কথা টা তো শোন আমাকে তো পাপড়ির আম্মুই মিষ্টুর রুমে শুতে বলছিলো।কার ন…………

রাবেয়া খালাঃ ছিঃ! ছিঃ! এই ছেলে আমি তোমাদের কুকর্ম দেখে ফেলছি বলেই কি আমার ঘাড়েই দোষ চাপানোর চেষ্টা করছো?একদম মিথ্যা কথা বলবে না বলে দিচ্ছি (চিৎকার করে কান্না করার মত অভিনয় করে)

(রাবেয়া খালার চিৎকারে আশে পাশের লোকরাও ছুটে আসে!আর তারাও ওদের ভুল বুঝে অনেক কথা শুনাতে থাকে)

রাসেল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল রাবেয়া খালার দিকে!আর ছলছল চোখে মুহিতের দিকে তাকিয়ে বললো..

রাসেলঃআমি তোকে ঠকায় নি মুহিত!এখানে আমাদের দুজনেরই কোন দোষ নাই!আমাদের এমন বাজে ভাবে ফাসানো হয়েছে! আমরা কোন ভুল করি নি….আর রাসেল রাবেয়া খালার দিকে তাকিয়ে বললো…

আপনার নিজেরও তো একটা মেয়ে আছে!আর বড় কথা আপনি নিজেও একটা মেয়ে হয়ে আজকে একটা নির্দোষ মেয়েকে এমন করে ফাসালেন!আপনার বিবেকে বাধলো না।সত্যি বলতে কি জানেন আন্টি?
…আপনারা মেয়েরাই মেয়েদের শএু…..

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here