#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_42
🍁🍁
মিষ্টুঃমন তো চাচ্ছে! এখন এই শাড়িটাই তোমাকে পড়িয়ে গায়ে হলুদের স্টেজে বসিয়ে দেয়!আর এই শাড়ি পড়লে বুঝতে শাড়ি সামলানো কতটা কঠিন কাজ!প্রতিটা ছেলে কে একবার করে শাড়ি পড়ানো উচিত!তাহলে তোমরা শাড়ির প্যারা বুঝতে আর শাড়ি পড়ার কথা মুখেও আনতে না….যওসব ঢং। (মুখ ভেংচি দিয়ে)
রাসেলঃ এটাও শোনার বাকি ছিলো আমার!আর কত কি শুনতে হবে আমাকে আল্লাহ মালুম।(বিরবির করে)
–
রাসেল এবার কোন কিছু না ভেবেই মিষ্টুকে একটান দিয়ে থামিয়ে কোলে তুলে নেয়!আর বাকিরা সিটি বাজাতে শুরু করে!মিষ্টু লজ্জায় রাসেলের বুকে মুখ লুকায়।তারপর ওরা দুজনেই পাশাপাশি বসে তারপর শুরু হয় গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান!বিভিন্ন ধরনের লাইট জলছে আর নিভছে এই সুযোগই রাসেল সবার আড়ালে হাতে হলুদ নেয়!আর রাসেল মিষ্টুর দিকে আর একটু চেপে বসে! রাসেল মিষ্টুর শাড়ির ভেতর হাত ঢুকিয়ে পেটে হলুদ লাগিয়ে দেয়…আর এমন ভাবে বসে আছে ওরা কারো বোঝার উপায় নেই…যে রাসেল কি করছে?
–
রাসেল এমন করাতে মিষ্টু সোজা হয়ে বসে গেছে!কোন নড়াচড়া নেই।রাসেল যে এমন কিছু করবে সেটা মিষ্টুর কল্পনাতেও আসে নি!মিষ্টুর মুখ দেখে রাসেল মুচকি মুচকি হাসছে! মিষ্টু অবাক হয়ে রাসেলের দিকে তাকিয়ে আছে। মিতু আর রাত্রি মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে বললো..
মিতুঃজানি তো আমার ভাইটা দেখতে সুদর্শন! তাই বলে জনসম্মুখে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবি..হা হা হা
রাত্রিঃতোর বরকে কেউ নিয়ে যাবে না রে বোন! এভাবে তাকিয়ে থাকিস না।সবাই কি ভাববে বলতো?হা হা হা
রাসেলঃ এভাবে তাকিও না প্লিজ! আমার লজ্জা লাগছে তো! আর দেখো তো সবাই তোমার তাকানো দেখে কেমন করে হাসাহাসি করছে(দুষ্টু হেসে)
মিষ্টুঃ থাক আর কিছু বললাম না!তবে তোলা রইলো..সময় মত সুদ সহ ফেরত দিবে।
(অসভ্য, ফাজিল পোলা,লুচু, উগান্ডার বুনো বানর, দাড়া তোর সাঁতার কাটার ব্যবসথা করছি। মনে মনে)
রাসেলঃআমার বউকে আমি আগে হলুদ লাগাবো!আমি সবার সামনেই লাগাতে পারতাম! বাট আমি চাইনি তুমি সবার সামনে লজ্জা পাও!তোমার লজ্জা মাখা মুখটা শুধু আমি দেখবো আর কেউ না!আর এজন্য আমিই সবার আড়ালে হলুদ ছোঁয়ালাম তোমারে শরীরে (ফিসফিস করে)
মিষ্টুঃতাই বলে এভাবে!!!
রাসেলঃহুমমম! তাতে সমস্যা কি???তুমি চাইলে আবার..
মিষ্টুঃথাক লাগবে না।
–
তারপর সবাই ওদের হলুদ লাগানো শুরু করলো!এভাবে প্রায় রাত ১ টা পযন্ত ওদের গায়ে হলুদ দেওয়া হলো।আয়ানরা সহ রাসেলের বাসায় চলে গেল।আর বাসায় গিয়ে সবাই ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে গেল!মিষ্টুও শাড়ি বদলে শুয়ে পড়লো আর রাসেলের করা কাজটার কথা মনে করে একা একা হাসতে লাগলো! মিষ্টুও একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ল…
–
রাত ২ টার দিকে মিষ্টু বুঝলো ওকে কেউ সাপের মত আষ্ঠেপিষ্ঠে ওকে জড়িয়ে ধরে আছে!মিষ্টুর বুঝতে বাকি রইলো না যে রাসেল এটা!কারন এই স্মেলটা যে ওর খুব চেনা!মিষ্টু রাসেলের দিকে তাকিয়ে দেখে রাসেল ওর দিকে তাকিয়ে আছে।তখন মিষ্টু রাসেলকে বললো..
মিষ্টুঃতুমি কখন এলে এখানে??আর তুমি বাসায় যাওনি তখন?
রাসেলঃহুম গিয়েছিলাম তো!আমার আসা আধা ঘন্টা হচ্ছে?? তোমাকে ছাড়া ঘুম আসছিলো না তাই চলে এসেছি।কেন আমি কি আসতে পারি না তোমার কাছে..
মিষ্টুঃআমি কখন বললাম আসতে পারবে না।আর তোমাকে কেউ দেখে নি তো??
রাসেলঃহুমম দেখছো তো!চুপিচুপি আসলাম তাও ধরা পড়ে গেছি একজনের কাছে।তাছাড়া আর কেউ দেখে নি…
মিষ্টুঃকে দেখছে তোমাকে?(অবাক হয়ে)
রাসেলঃ আম্মু
মিষ্টুঃকি?????
রাসেলঃ আম্মু কিছু বলে নি বরং মাথায় একটা টোকা মেরে আমাকে তোমার রুমে যেতে বলছে।
মিষ্টুঃ মান-সন্মান বলে আর কিছু থাকলো না আমার।শুধু তোমার জন্য… ছিঃ!আম্মু কি ভাবলো?
রাসেলঃআমি তো পরে চলে যেতেই চেয়েছিলাম!মামনিই কান ধরে টেনে বলছে ঢং না করতে।তাই আর না করতে পারি নি তোমার রুমে এসে তোমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ছি…
মিষ্টুঃঅসভ্য ছেলে একটা!একটা মাএ রাত তাও সহ্য করা যাচ্ছিলো না।আসতেই হতো! কেন না আসলে কি এমন হতো শুনি??(রেগে গিয়ে)
রাসেলঃএভাবে কথা বলছো কেন?তুমি তো জানো সব তার পরেও বারবার এসব বলো কেন?এত ভালবাসি বুঝছো না তো! যেদিন থাকবো না সেদিন বুঝবে। তখন চাইলেও আর পাবে না আমাকে (মন খারাপ করে)
মিষ্টুঃথাক আর ঢং করে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে না। ঘুমাও…
–
রাসেলকে মিষ্টু বকা দিলো। তাই রাসেল মুখ গোমরা করে শুয়ে থাকলো তারপর আবর মিষ্টুকে জড়িয়ে ধরলো। মিষ্টুও মুচকি হেসে রাসেলকে জড়িয়ে ধরলো!কারন রাসেল সত্যি এখন ওকে ছাড়া ঘুমাতে পারে না এটা মিষ্টু জানে!রাসেলের এমন পাগলামির করাতে মিষ্টুও মনে মনে খুশি হয় বাট মুখে শুধু শুধু বকা দেয়!তারপর আর কি এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায়।
–
পরেরদিন সকাল বেলা মিষ্টিরআগে ঘুম ভাংগে! আর দেখে রাসেল উপুড় হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।মিষ্টু রাসেলের দাড়িতে আঁকি বুকি করে,আদর দেয়,চুলে হাত বুলিয়ে দেয়।বাট মহারাজের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে মিষ্টু আস্তে আস্তে উঠে আর ফ্রেস হয়ে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসে।মিষ্টুর আম্মু মিষ্টুকে খেতে দেয় বলে..
আম্মুঃএত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই!ছেলেটা তোকে বড্ড বেশি ভালবাসে এজন্য তোকে ছাড়া থাকতে চাই না।একটা কথা মনে রাখিস এখন ওকে ভাল রাখার দায়িত্ব তোর!আমি জানি রাসেল এখন তুই ছাড়া কিছু বুঝে না।মিষ্টু ছেলেটা জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে তুই ওকে আর কষ্ট দিস না।আমি তোকে তোর মা হয়ে বলছি,এখানে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই বরং গর্ব করা উচিত এটা নিয়ে তোর।জানিস মেয়েরা ভাগ্য করে এমন ছেলেকে বর হিসেবে পাই!
মিষ্টুঃহুমমম!
আম্মুঃ খেয়ে নে আর রাসেল উঠলে ওকে খেতে দিস কেমন।আমি একটু বাইরে গেলাম…
মিষ্টুঃ আচ্ছা..
–
মিষ্টু খেয়ে উঠতেই মুহিত কোথায় থেকে তারাহুড়ো করে এসে মিষ্টুকে জিজ্ঞেস করে।
মুহিতঃ মিষ্টু রাসেল কি আমাদের বাসায় এখন?
মিষ্ঠুঃইয়ে মানে হ হুম!
মুহিতঃরাসেল কি এখনো ঘুমাচ্ছে? নাকি জেগে আছে?
মিষ্টুঃহুমম!না উঠে নি ঘুমাচ্ছে এখনও!আমি এখনই ওকে ডেকে দিচ্ছি
মুহিতঃনা না থাক ডাকতে হবে না।ওর পকেটে একটা চাবি আছে ওটা একটু এনে দে তো বোন।
মিষ্টুঃকিসের চাবি ভাইয়া?
মুহিতঃ তোর বরটা রাতে আয়ানদের রুমের ভেতরে রেখে দরজা বাইরে থেকে লক করে চলে এসেছে।এখন ওরা বের হতে পারছে না। আমাকে ফোন দিয়ে বলছে চাবিটা কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিতে হা হা হা
মিষ্টুঃওহহ্! দাঁড়াও আমি এখুনি এনে দিচ্ছি
মুহিতঃআমাকে না ড্রাইভার কাকাকে চাবিটা দিস তাহলেই হবে কেমন।আর আমি বাইরে গেলাম আমার কাজ আছে আর ওই গাধাটা ঘুম থেকে উঠলে ওরে খেতে দিস।
মিষ্টুঃহুমম দিবো! তুমি চিন্তা করো না।
(আল্লাহ গো আমারে তুলে নাও!এই ছেলেটা না জানি আর কত লজ্জায় ফেলবে আমাকে)
–
মিষ্টু রুমে গিয়ে রাসেলকে দেখে রাসেল উপুড় হয়েই শুয়ে আছে!মিষ্টু রাসেলকের পকেটে হাত ঢুকাতে চাচ্ছে বাট পকেটে হাত ঢুকছে না।মিষ্টু রাসেলকে ডাকে তাও সাড়া শব্দ নেই ওর!মিষ্টু তো এমন ওজনদার মানুষকে সরাতেই পারবে না। তাই আর কোন উপায় না পেয়ে এবার রাসেলকে কাতুকুতু দিতেই রাসেল হুড়মুড়িয়ে উঠলো মিষ্টুকে বললো…
রাসেলঃ আমারে ইচ্ছেমত কামড়াবে,খামছি বসাবে, দরকার হলে মারবে, মেনে নিবে তাও কাতুকুতু দিও না প্লিজ! আমার খুব কাতুকুতু… (মিষ্টু কাঁধে মাথা রেখে ঘুম ঘুম কন্ঠে)
মিষ্টুঃচাবিটা দাও আয়ান ভাইয়ারা নাকি বের হতে পারছে না। ওদের তো আটকে রাখছেন…ড্রাইভার কাকাকে চাবিটা দিতে বললো ভাইয়া। আমাকে দাও চাবিটা তারাতারি..
রাসেলঃওফফ শীট! আমার তো মনেই নেই। থাক ড্রাইভার কাকাতে পাঠাতে হবে না। আমি যাচ্ছি…আরো সকালে ডাকতে পারলে না! এখন সবাই আমাকে এখানে দেখলে কি ভাববে বলো তো।
মিষ্টুঃতুমি কি আমাকে ডাকতে বলছিলে! এখন উঠবে নাকি পানি ঢালবো তোমার গায়ে…তুমি ফ্রেস হয়ে এসো আমি খাবার আনছি খেয়ে তারপর যাও..
.
রাসেলঃনা না আমি এখন খাবো না!আমি লেট হয়ে যাবে তো।
মিষ্টুঃহবে না!একদম বেশি বকাবে না আমাকে
–
তারপর মিষ্টু খাবার আনে আর রাসেল ফ্রেস হয়ে আসে!রাসেল বিছানাতে বসে আর মিষ্টু রাসেলকে খাওয়াতে থাকে!মিষ্টু রাসেলের মুখে খাবার দিয়ে টাওয়াল এনে সামনের চুল গুলো মুছে দিতে থাকে!কারন রাসেল মুখে পানির ঝাপটা এত জোরে দিয়েছে যে সামনের চুল গুলো ও ভিজে গেছে….খাওয়া শেষ করে আর তারপর রাসেল মিষ্টুর কপালে আদর দিয়ে বলে।
–
রাসেলঃ আর কয়েক ঘন্টা পরে বর বেশে এসে নিয়ে একেবারের জন্য নিয়ে যাবো!রেডি থেকো…. আচ্ছা তুমি সাবধানে থেকো কেমন।আমি গেলাম…বাই
মিষ্টুঃহুমম!সাবধানে যাবে আর আবার আমার কাছে সাবধানে ফিরে আসবে…
রাসেলঃহুমমম (মুচকি হেসে)
চলবে..
(কেমন হচ্ছে গল্পটা…… 😊)