#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_8
🍁🍁
মুহিতঃএবার কি বলবেন স্যার!আমার বোন গুন্ডী গিরি করতেই কলেজে আসে।আমার বোন কিনতু ছেলেটার গায়ে হাত দেয় নি বরং বুঝিয়ে বলছে! আপনি না জেনে এত কথা তাহলে কেন শুনালেন আপনি তো একজন প্রোফেসর! আপনি চোখে যা দেখলেন তাই সত্যি বলে ধরে নিলেন এর পেছনেও কিছু থাকতে পারে এটা একবারো ভাবলেন না।তবে যাই বলেন এই অসভ্য বোনটাকে নিয়েই আমি গর্ববোধ করছি।আমি নিজে ওখানে থাকলে ওই রিমনকে মেরে ফেলতাম বাট আপনার ভাষার এই অসভ্য মেয়েটাই তার বুদ্ধি দিয়ে সমাধান করেছে..আজ আপনি আমার সামনে আমার কলিজার টুকরো বোনকে অসভ্য. অভদ্র, বেয়ারা,গুন্ডী বলছেন! আপনার জায়গাতে অন্য কেউ থাকলে তার কি করতাম নিজেও জানিনা। (স্যারের দিকে তাকিয়ে)
–
স্যারঃসরি মিষ্টু মা!আমি সত্যি জানতাম না এর পেছনে এত কিছু ঘটেছে।আমি সত্যি অনুতপ্ত (মুখ কাচুমাচু করে)
মিষ্টুঃনা না স্যার সরি বলতে হবে না।আমি যেটা করতে চেয়েছিলাম সেটা করতে পেরেছি এতেই খুশি আমি!আমি বিলিভ করি যে!ভালোর মাঝে খারাপ আছে বলেই তো ভালোর কত কদর সেটা বুঝতে পারি ! সেই কয়েকজনের খারাপ ছেলের জন্য ছেলে জাতটাই খারাপ বলতে পারি না!আমি জোর গলাতে বলতে পারি ছেলেরা যদি খারাপ হতো কোন ভাইয়ার কাছে বা বাবার কাছে কখনই কোন নিরাপদ থাকতো না!(স্যারের দিকে তাকিয়ে)
মুহিতঃ সহমত বোন!আজ তোকে দেখে অবাক হচ্ছি তুই আমার ছোট্ট মিষ্টু সোনাটা এত বুঝতে শিখেছিস।তুই এরকমই থাক বোন।আমি তোর পাশে আছি…
আর রিতু আজ থেকে তোমার সব দায়িত্ব আমি নিলাম!তোমাকে আর টিউশনি করতে হবে না।আমি আমার আরেকটা বোনের দায়িত্ব নিলাম।ওহ হ্যা এই বিষয়ে আর কোন কথা আমি শুনতে চাই না।
রিতুঃভাইয়া এতদিন মিষ্টুই আমাকে অনেকে সাহায্য করছে এজন্য আজও খেয়ে বেঁচে আছি ভাইয়া। এভাবে আমি টাকা নিতে পারবো না ভাইয়া (মাথা নিচু করে কেঁদে কেঁদে )
মুহিতঃআমি তোমার থেকে মতামত চায়নি!তুমি মিষ্টুর মত আমার বোন সো আর কোন কথা না।আর রিমা রিমনকে দুরে সরিয়ে দিও না বোন ওকে শুধরানোর সুযোগ দাও!কিছু ভুল করলে তাকে দুরে সরিয়ে দিতে নেই বরং পাশে থেকে বোঝালে সেই নিজের ভুল গুলো থেকে শুধরাতে পারবে।একটা কথা তোমরা সবাই মনে রাখবে “পাপী নয় পাপকে ঘৃণা করো”
রিমাঃজি ভাইয়া! (মাথা নিচু করে)
মুহিতঃরিমা তুমি এভাবে মাথা নিচু করে থেকো না বোন!তোমার ভাইকে বুঝাও যে এসব ঠিক না।তোমার কোন দোষ নেই তুমি কেন মাথা নিচু করে থাকবে বলো।
রিমাঃজি ভাইয়া!
–
মুহিত মিষ্টুকে নিয়ে বাসায় চলে যায়! মিষ্টু ওর আম্মুকে এসব ব্যাপারে জানাতে না করে! কারন আম্মু জানলে উল্টে ওকেই বকবে। মিষ্টু জোর করেই মুহিতকে গাড়ি থামিয়ে আইসক্রিম কিনে নিলো তারপর আইসক্রিম খেতে খেতে বাসায় চলে গেল।মিষ্টু বাসাতে গিয়ে সাওয়ার নিয়ে সবাই একসাথে খেয়ে নিলো তারপর একটা গল্পের বই নিয়ে পড়া শুরু করলো।আজকে দুপুরে মিষ্টু ঘুমাবে না কারন কালকে রাত্রির এনগেজমেন্ট এজন্য কিছু কেনাকাটা দরকার।
–
মিষ্টুর হুট করে আজকে সকালের কথা মনে পড়ে গেল!রিমন তখন এভাবে বলছিলো বাট এখন খারাপ লাগছে।মিষ্টু উঠে রিমাকে ফোন দিয়ে জানতে পারলো রিমন নাকি দুপুরের ফ্রাইটে কানাডা চলে গেছে,আবার নতুন করে পড়াশোনাটা শুরু করবে তাই!মিষ্টু বুঝতে বাকি রইলো না রিমন সত্যি ওর ভুলটা শুধানোর জন্য ও সবার আড়াল হতে চাচ্ছে।মিষ্টু রিমার সাথে কথা বলে আল্লাহ কাছে এটাই দোয়া করে যাতে রিমন সত্যি ভালো একটা ছেলে হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে।
সন্ধ্যায় মিষ্টু আর মুহিত কেনাকাটা করতে যায়!রাত্রিকে ডাকে বাট রাত্রি যেতে রাজি হয় নি।
–
পরেরদিন সকালে…
আজ রাত্রির এনগেজমেন্ট বাড়িতে কাছের কিছু রিলেটিভরা এসেছে।রাতে রাত্রি কেদেছে এজন্য চোখ ফুলে আছে!ওদিকে বকুলের মা বকুলকে কিছুতেই রাত্রিদের বাড়িতে আসার জন্য রাজি করাতে পারছে না।
–
বকুলের আম্মুঃবকুল তারাতারি রেডি হও!রাত্রির বাবা আমাদের ইনভাইট করছে রাত্রির এনগেজমেন্টে এটেন্ড করা জন্য। ওরা আমাদের রিলেটিভ না গেলে খারাপ দেখায়।
বকুলঃআমি যাবো না আম্মু! তোমরা যাও।আমি বাসাতেই থাকি (মাথা নিচু করে)
বকুলের বাবাঃবকুল কোন কথা শুনতে চায় না!সবাই একসাথে যাবো আনন্দ করবো। আমি আর কোন কথা শুনবো না।
বকুলঃবাবা আমি গিয়ে ওখানে কি করবো?আমি ইচ্ছা করছে না যেতে।
বাবাঃতোমার থেকে কৈফিয়ত চায়নি!অর্ডার করছি তোমাকে! আশা করি এখন মুখে মুখে তর্ক করবে না।
বকুলঃজি বাবা!
–
বকুল মনমরা হয়ে রেডি হয়ে মিষ্টুর ফুপিরা সহ রওনা দিলো রাত্রিদের বাসায় যাওয়া উদেশ্য করে।মিষ্টুর ফুপি বকুলের দিতে তাকিয়ে বার বার হাসছে বেচারা বকুলের মনে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে এটা ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ওদিকে রাত্রির সহ অনেকেই বসে আড্ডা দিচ্ছিস রাত্রির বাবা এসে বললো ছেলেরা নাকি বাসা থেকে বের হয়ে গেছে!মিষ্টু ইচ্ছে করে ওর চাচ্চুকে জিজ্ঞাসা করলো ওর ফুপিরা আসছে কি না?তারপর এটা জেনে নিলো বকুলরা আসছে কি না?বকুল আসছে শুনে রাত্রি ওখান থেকে উঠে রুমে গিয়ে কাঁদতে শুরু করলো!
–
মিষ্টু গিয়ে রাত্রিকে কি হয়েছে কাঁদছে কেন জানতে চাইলো?রাত্রিও আর নিজের মনের কথা আড়াল করতে পারে না মিষ্টুকে সব বলে দেয়।বাট মিষ্টু না জানার ভান করে বলে..
–
মিষ্টঃআপু ছেলের বাসার সবাই চলে আসছে!এখন তুই আমাকে এসব বলছিস?
–
রাত্রিঃ মিষ্টু আমি আর পারছি না রে বোন! আমি সত্যি বকুলকে খুব ভালবাসি (কাঁদতে কাঁদতে)
–
মিষ্টুঃএখন আর এসব মনে রাখিস না!তুই আজকে থেকে অন্য কারো আমানত।বকুল ভাইয়াকে ভুলে যা আর নতুন করে শুরু কর।আমারও আর কিছু করার নেই যদি আগে বলতি তাহলে কিছু একটা করা যেত।
রাত্রিঃহুমম (কাঁদতে কাঁদতে)
–
মিষ্টু রাত্রিতে সাওয়ার আসতে বললো কারন রাত্রিকে রেডি করতে হবে।দুপুরের এনগেজমেন্টটা করে ফেলবে কারন বকুলদের আবার ফিরতে হবে।মিষ্টু রাত্রিকে একটা সবুজ জামদানি শাড়ি দিয়ে পরতে বললো। তারপর চোখে কাজল আর চুল চুলকে খোপা করে কপালে একটা ছোট্ট কালো টিপ দিয়ে দিল আর শাড়ির আঁচল দিয়েই ঘোমটা টেনে দিল।রাত্রি চোখ ছলছল করছে পানিতে….
–
বকুলরা এসে রাত্রিদের বাসায় পৌঁছায় বকুলের যেন পা চলছে না বাসার ভেতরে যাওয়ার জন্য!সবাই বাসার ভিতরে গেল আর ড্রয়িং রুমে সোফাতে বসলো। তার কিছুক্ষন পরে রাত্রিকে নিয়ে যাওয়া হলো। বকুল ওর আম্মুকে বললো..
বকুলঃবাকিরা কই!আই মিন যে রিং পড়বে মেয়েকে সেই পাএ কই(আম্মুর দিকে তাকিয়ে)
আম্মুঃআছে আছে তোকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে।সেই গাধা আছে কোথাও হয়তো!তোকে এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে।
তারপর মিষ্টু রাত্রিকে নিয়ে বকুলের পাশে বসায়! বকুল অবাক হয়ে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে আছে! রাত্রিকে বকুলের পাশে বসানোর জন্য রাত্রিও অবাক হয়ে বকুলের দিকে তাকিয়ে আছে।ওদের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে বড়রা সবাই হো হো করে হেসে দেয় আর ওর লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে দুজনেই।বড়রা যে ওদের জন্য এভাবে সারপ্রাইজ দিবে সেটা ওরা কল্পনাও করে নি।
–
অবাক হওয়ার পালা শেষ করে ….
তারপর দুজন দুজনকে রিং পড়িয়ে দিলো!কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই বাড়িটা খুশিতে গমগম করা শুরু করছে!বকুল আড়চোখে রাত্রির দিকে তাকিয়ে আছে।মিষ্টু এসে দুম করে ওদের মাঝখানে বসে পড়লো!বকুল মিষ্টুর মাথা টোকা দিল কারন এর পেছনে যে মিষ্টু আছে ওদের বুঝতে বাকি নেই!তারপর খাওয়া -দাওয়াত করে বড়রা বিয়ের ডেট ঠিক করতে বসলো আর ওদের অন্য রুমে যেতে বললো! মিষ্টু বকুলদের কথা বলার সুযোগ করে দিল আর ওদের নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া করতে বললো।আর নিজে গেল খাবার সন্ধানের কাজে।
–
রাত্রি আর বকুলেরএকমাস পরেই বিয়ের ডেট ঠিক করলো!তারপর সন্ধ্যার দিকে বকুলরা চলে গেল।মিষ্টু ওদের কথা বলতে দিয়ে তার কিছুক্ষন পর উঁকি দিয়েছিলো তখন তারা নামাজ পড়ছিলো!মিষ্টু ওদের জন্য দোয়া করলো যাতে ওরা সারাজীবন এভাবেই থাকতে পারে।
–
পরেরদিন সকালে খাবার টেবিলে মুহিত বলে ওর নাকি কোন বন্ধু ওদের বাসায় এসে কিছুদিন থাকবে!অনেক ভালো বন্ধু মুহিতের।কয়েক বছর যোগাযোগ ছিলো না বাট কালকে রাতে ফেসবুকের মাধ্যমে আবার তাদের যোগাযোগ হয়….মুহিতের আম্মু জানে মুহিত যাকে তাকে বাসায় আনে না! এজন্য মুহিতের দিকে তাকিয়ে বললো…
আম্মুঃকে সে? আর কবে আসবে?
মুহিতঃপরশুদিন আসবে!আর কে সেটা আসলে দেখতে পাবে তবে সে তোমার খুব ভক্ত ছিলো আম্মু। হা হা হা
মিষ্টুঃদেশি ফকিরের ভাত নাই! বিদেশী ফকিরের আমদানী (মুখ ভেংচি দিয়ে)
মুহিতঃএসব কেমন ধরনের কথা মিষ্টু!তুই কিন্তু আজকাল বড্ড পাকা পাকা কথা বলিস।
মিষ্টুঃএটা হচ্ছে খাঁটি বাংলা কথা(হা হা)
মুহিতঃতাই না!মিষ্টু তোর পাশের রুমটা একটা গুছিয়ে রাখ তো বোন খুব সুন্দর করে!কারন আমার সেই বন্ধুটা খুব খুতখুতে নোংরা বা অগোছালো কিছু পছন্দ করে না।মিঃ পারফেক্ট বলতে পারিস,,,(হা হা হা)
মিষ্টুঃতোমার বন্ধু কেমন এত জেনে আমার লাভ নাই!কারন আমার ভাইয়াই হচ্ছে মিঃ পারফেক্ট আর আমার ভাইয়ার মত কেউ হতেও পারবে না।(মুখ ভেংচি দিয়ে)
মুহিতঃ মিষ্টু আজকাল বড্ড বেশি পাকা পাকা কথা বলো তুমি!হ্যা তুই একদম ওর পেছনে লাগতে যাবি না।ও কিন্তু খুব ঠান্ডা মেজাজের বাট যার উপরে রেগে যায় তার দফারফা করে ছাড়ে!এখানে নাকি ফ্ল্যাটও আছে ওর বাট আমিই ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসছি! জিগার কা বন্ধু বলে কথা(খুব খুশি হয়ে).
চলবে….