#এলোকেশী_কন্যা২
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_1
🍁🍁
_________ ফজরের আজান শুনে আলোর ঘুমটা ভেঙে যায়!ঘুম ঘুম ভাব নিয়েই চোখ টিপ টিপ করে খুলে।আর মন দিয়ে আজান টা শুনে!তারপর আলো আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে উঠে আর অযু টা সেরে নামাজে বসে!নামাজ শেষ করে কুরআন নিয়ে এসে জায়নামাজের উপর বসে আর সুরেলা কন্ঠে কোরআন তেলাওয়াত করে….
.
.
.
রাতের অন্ধকারকে বিদায় জানিয়ে আলো ফুটে কেবল সকাল হচ্ছে______
পূর্ব দিকে সূর্যটা কেবল লাল আভা ছাড়িয়ে উঁকি দিচ্ছে উঠার জন্য! আলো কোরআন পড়ে জায়নামাজ টা সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে! তারপর রুম থেকে বের হয়! খালি পায়ে ওদের বাড়ির বড় উঠানে এসে দাড়ায়ে! খালি পা তার উপরে ঠান্ডা মাটি শরীরে শিরশির করে উঠে!আলো মুচকি হেসে দুই হাত বাড়িয়ে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয়।চারদিকে নীরব একটা পরিবেশ শুধু পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ আর সকালে মন ভালো করার মত ফ্রেশ মৃদু বাতাস। আলো চোখ বন্ধ করেই প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিচেছ আর মন দিয়ে পরিবেশটাকে উপভোগ করছে। আলো বেশ কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করেই সকালটা উপভোগ করে! তারপর রোজকার দিনের মত আজকেও ওর কাজে লেগে পড়ে!!
.
.
.
______হুমম আপনাদের অনুমান ঠিক আলোই হচ্ছে আমার গল্পের এলোকেশী কন্যা!আলোর নামটাই শুধু আলো কিন্ত জীবনটা অদ্ভুত কিছু নিয়মের মাঝেই সে সীমাবদ্ধ!আলো একটা ছোট গ্রামের বাস করে আর গ্রামটির নাম আনন্দপুর গ্রাম!মা, আর দীদাকে নিয়েই তার পারিবার।আলো গ্রামের সহজ সরল একটা মেয়ে যার মাঝে এখনো আধুনিক যুগের কোন ছোঁয়াই লাগেনি!গ্রামের সাধারণ একটা স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করছে অনেক কষ্টে!আর কষ্টে বলার কারন সারাদিন বাসার সব কাজ করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা মোটেও সহজ কথা না।হুমম আলোকেই বাসার সব কাজ করতে হয়! আলো থাকে তার সৎ মায়ের সাথে! কারন আলোর নিজের মা ওই দুর আকাশে পাড়ি জমিয়েছে।আলোর মা মারা যাওয়ার ৯ মাস পর আলোর বাবাও মারা যায়।এজন্য আলো ওর সৎ মায়ের সাথেই থাকে!আলোদের কোনরকম চলার মত জমিজমা আছে!ওই জমিগুলোতে অন্য মানুষকে দিয়ে আবাদ করানো হয়! ওই আবাদ বিক্রি করে যা টাকা পাওয়া যায়!সেগুলো দিয়েই ওদের সংসার চলে।আলোর দীদা আলোকে খুব ভালবাসে আর কিন্তু আলোর ছোট মা আলোকে সহ্য করতে পারে না। সৎ শব্দটি সৎ হলেও সৎ মা আসলে কেমন হয় !এটা নিয়ে হয়তো আপনাদেরও কিছু ধারণা আছে!আর বাকিটা পরে বলবো..!!
.
.
.
______আলোর মাঝে একটি নজরকাড়া জিনিস আছে!আর সেটা একবার দেখাতেই যে কারো নজর কেড়ে নিতে পারে! আর সেটা হলো আলোর চুল।আলোর চুল গুলো অনেক লম্বা আর হাটুর নিচে পযর্ন্ত পড়ে!আর চুল গুলো যেমন ঘন আর তেমনি কুচকুচে কালো।আলোর দুধে আলতা গায়ের রং, বোচা একটা নাক,মায়াবী চোখ আর হাসলে দুই গালেই টোল পড়ে! আর আলোর একটা বাঁকা দাঁত আছে! যখন হাসে সেই বাঁকা দাঁতটি দেখা যায়।যত কষ্ট, আর যতই মন খারাপ থাকুক না কেন আলোর মুখে হাসিটা সবসময় থাকে!দুঃখ আর কষ্ট লুকানোর জন্য আলো ওর মুখের হাসিটাকে সব সময় অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগায়!যাতে কেউ তার মনের কষ্টটাকে ধরতে না পারে।আর আল্লাহ যখন যাকে সৌন্দর্য দেয় তখন দুই হাত ভরেই দেয়! আল্লাহ আলোকেও সৌন্দর্য দিয়েছে দুই হাত ভরে!!!শুধু জীবনটাই দান করেছে অগোছালো ভাবে..!!
.
.
.
______আলোর সঙ্গী পারু আর পুটি(ছাগল ছানা)!পারু আর পুটি আলোর সব সময়ের সঙ্গী! যাদের কাছে আলো ওর মনের সব গল্প বলে!আরো একজন আছে আর সে হলো ধবলি (গরুর বাছুর)। ওদের সাথেই বকবক করতে করতে ওর দিন কাটে!পারু, পুটি আর ধবলির সাথে মনের সব কথা না বললে আলো মনে হয় শান্তিও পায় না..!!
.
.
সকাল বেলা আলো নামাজ আর কোরআন পড়ে উঠে! তারপর পুটি আর পারু কে গোয়ালঘর থেকে বের করে! ঘর উঠান ঝাড়ু দিয়ে রান্নার কাজে লেগে পড়ে!আলো রুটি আর আলুর ভাজি করার জন্য আগে আলু গুলো ভাজি করার জন্য কেটে নেয়! তারপর চুলায় উপরে কড়াই বসিয়ে তেল দেয়! তারপর পেঁয়াজ, চেরা কাচা মরিচ, হলুদ গুঁড়া, লবণ, দিয়ে আলু ভাজিগুলো কড়াইয়ে দিয়ে নাড়াচাড়া করে চাকনা দিয়ে ঢেকে দেয়! যাতে আলু গুলো তারাতারি সেদ্ধ হয়ে যায়!তারপর ময়দা মাখিয়ে রুটি বেলতে শুরু করে!আলো রুটি বেলতে বেলতে গুনগুন করে গান গাইতে থাকে!আলোর এখন আর খারাপ লাগে না বরং ভালোই লাগে কাজ গুলো করতে! তাই আলো মন দিয়েই ওর কাজ গুলো করে…!!
.
.
______ মেঘ মেহবুব আর রোদ মেহবুব দুই ভাই দাড়িয়ে আছে কানাডার এয়ারপোর্টে!রোদের এক আঙুল ধরে মেঘ ঘুরে ঘুরে চারপাশটা দেখছে!মেঘ এটা ওটা দেখছে আর রোদকে প্রশ্ন করছে! আর রোদ সেটার উওর দিচ্ছে!মেঘ একবার এয়ারপোর্টের নামটাতে চোখ বুলালো!এই এয়ারপোর্টের নাম winning James Armstrong Richardson International Airport…..এই এয়ারপোর্ট টা দেখতে স্বর্ণের তৈরী বিশাল ম্যানশনের মত! যেন উজ্জ্বল কোন সোনালী আভা ছড়াচ্ছে!অনেক সুন্দর এয়ারপোর্ট টি!
মেঘ সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে..!!
.
.
_______রোদ মেহবুব আর মেঘ মেহবুব কানাডা এসেছে ওদের অফিসের কাজের জন্য! রোদ মাস্টার্স করছে আর মেঘ ক্লাস থ্রি তে পড়ে !রোদ দের অফিস দেখা শোনা করে রোদের বাবা।রোদের বাবার কানাডা আসার কথা ছিলো কিন্ত হঠাৎ উনি অসুস্থ হয়ে পড়ার কারনে রোদকে আসতে হয়েছে!আর রোদের আসার কথা শুনে মেঘ আসার জন্য জেদ ধরেছিলো।এজন্য রোদের বাবা দুই ভাইকে একসাথে কানাডা পাঠিয়েছিলো!কাজটাও হবে আর দুই ভাইয়ের একসাথে বেড়ানোও হবে এজন্য ।রোদ আর মেঘ চারদিন আগে কানাডা এসেছে! ওরা ওদের কাজ শেষ করে আজকে ওরা বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছে!!যেদিন ওরা কানাডাতে এসেছিলো সেদিন মেঘ ঘুমিয়েছিলো এজন্য সেদিন এয়ারপোর্ট টা দেখতে পায় নি! এজন্য আজকে মনোযোগ দিয়ে দেখছে..!!
.
.
মেঘআশে পাশে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলো! তারপর রোদকে উদেশ্য করে বললো…
মেঘঃ দাভাই একটা কথা বলার ছিলো??
রোদঃ এই নিয়ে তুমি কয়টা কথা বললে!১ মিনিটের জন্য কি তুমি চুপ করছো??
মেঘঃ তাহলে আর একটা বলি?বলছি যে দাভাই একটা কাজ করলে কেমন হয়??
রোদঃ কি কাজ??
মেঘঃ এই জায়গাটা অনেক সুন্দর! আমার আর বাংলাদেশে ফিরতে ইচ্ছে করছে না।চলো তুমি আর আমি এখানেই বিয়ে করে সারাজীবনের জন্য থেকে যায়।
রোদঃএই এয়ারপোর্ট টা আমার কিংবা তোমার বাবা বানায় নি যে এখানে আমাদের থাকতে দিবে!!আর এটা কেউ শুনলে তোমার সাথে আমাকেও মেরে ভর্তা বানিয়ে দিবে।
মেঘঃদাভাই আমাদের বাবা বানাইনি মানলাম! কারো না কারো বাবা তো বানিয়েছে! যে বানিয়েছে সেই বাবাটাকে পটালেই তো!! (বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে)
রোদঃ আর কিছু বলার বাকি আছে তোমার??
মেঘঃহুমম আর একটা কথা বলার বাকি আছে??এটা শেষ কথা!
রোদঃ বলো!!
মেঘঃওইদিকে তাকিয়ে দেখো!উনারা হাতে ওইসব কি নিয়ে দাড়িয়ে আছে??(আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে)
রোদঃ ওদের হাতে যেটা আছে ওটাকে প্ল্যাকার্ড বলে!
মেঘঃ প্যাক কার্ড (মাথা চুলকিয়ে)
রোদঃওটাকে প্যাক কার্ড না ওটাকে বলে প্ল্যাকার্ড!!(দাঁতে দাঁত চেপে)
মেঘঃ থাক আমার আর এই শব্দটা বলার দরকার নাই!এটা বলতে গেলে আমার যদি সব দাঁত ঝুরঝুর করে পড়ে যায়! তখন আবার আরেক সর্বনাশ।
রোদঃ……
মেঘঃ আচ্ছা দাভাই এরা প্যাক কার্ড হাতে নিয়ে হাবলার মত নিয়ে দাড়িয়ে আছে কেন?? (পাশের কয়েক জনকে উদেশ্য করে)
রোদঃ উনাদের চেনা মানুষগুলো নাম লিখা আছে প্ল্যাকার্ডে। যারা এখন ফ্লাইটে আসলো তারা যাতে খুব সহজে ওনাদের চেনা মানুষ গুলোকে খুঁজে পায়!এজন্য এরা হাতে প্ল্যাকার্ড হাতে দাড়িয়ে আছে।এবার বুঝলে…
মেঘঃ ওহহ!! এবার বুঝেছি!!আসলে আসল কাহিনী হলো চোখ থাকতেও অন্ধর মত ব্যাপার স্যাপার!
রোদঃ মানে?? (ভ্রু কুচকে)
মেঘঃ চেনা মানুষ গুলোকে আবার চিনার জন্য প্যাক কার্ড নিতে হবে।আসল কথা কি জানো দাভাই এদের আসলে কাজ নাই এজন্য এমন করে দাড়িয়ে আছে।
রোদঃ তোকে কিছু বোঝানোই উচিত না!আসলেই তুই একটা গরু!!!
মেঘঃ দাভাই তুমি ভুল বললে!আমি এখনো গরু হয়নি আমি তো কেবল বাছুর।(দাঁত বের করে)
রোদঃ…..
মেঘঃ দাভাই আমি ঠিক কথা বলছি না!হুমম আমি জানি তো আমি সবসময় যা বলি ঠিকই বলি।
–
আলো সকালে খাবার সব রেডি করে ফেলে! তারপর সবাইকে খেতে দেয়।সকালের কাজ শেষ করে আলো পানি নিয়ে পারু আর পুটির কাছে যায়! ওদের পানি খাওয়ানোর জন্য। আলো পুটি আর পারুকে পানি খাইয়ে ওদের সাথে গল্প জুড়ে দেয়__!!
.
.
আলোঃএই পুটি তোরা পেট পুরে ঘাস খাইয়া ল!হ আমিও এহনই পেট পুইরা পান্তা ভাত কাঁচামরিচ দিয়া খাইয়া আসলাম!ছোট মা কইলো পান্তা ভাত গুলান খাইতে!শুধু শুধু খওন নষ্ট করা ভালা না! এজন্য ছোট মা কথা শুইনা আমি পান্তা খাইলাম আর ছোট মা রুটি খাইলো।হ দীদাও খাইছে! এখন তোরাও পেট পুরে খাইয়া ল! না হলে পরে আমারেও কইলেও কিন্ত আমি তোগোরে খওন দিতে পারুম না।(পুটিতে কোলে নিয়ে)
To be continue…..