#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_24
🍁🍁
মেয়েদের সৌন্দর্য ভালো কিন্তু অতিরিক্ত সৌন্দর্য মেয়েদের জীবনে কাল হয়ে দাড়ায়! আলোর জন্য কি বিপদ অপেক্ষা করছে আলো কল্পনাও করতে পারছে না!
বেশ কিছুক্ষণ আলো উঠানেই দাড়িয়ে থাকার পর হেটে ওর রুমে চলে গেল!রোদের বড় মামীরা সবাই একসাথে বাড়ির এক সাইডে বড় শান বাঁধানো পুকুরে সবাই মিলে গোসলে করতে চলে গেল!এই দিকটাই ছেলেদের আসার নিয়ম নাই!আজকে রোদের আম্মুও পুকুরে গোসলের জন্য এসেছে! অনেকদিন পুকুরে গোসল করে না তাই আজকে লোভ সামলাতে পারেনি!রোদের মেঝমামী রোদের মাকে উদ্দেশ্য করে বললো…
মেঝমামীঃ আপা আপনি আলোকে খোঁজ
কোথায় থেকে পেলেন!ওকে দেখে আমি নিজেই চোখ ফেরাতে পারিনা।
বড় মামীঃ আমি তো ওর চুল দেখে অবাক হয়ে গেছি!একটুকু মেয়ে এত বড় চুল সামলায় কিভাবে??
রোদের আম্মুঃশুধু চুল আর ওর রুপ না! সত্যি কথা হলো আলো অনেক সহজ সরল আর খুব ভালো মনের একটা মেয়ে।তুমি যতই ওকে কটু কথা বলবে দেখবে তোমার সাথে হেসে হেসেই কথা বলবে! খুব মিশুক স্বভাবের মেয়েটা…..!!
ছোট মামীঃওহ সাথে কথা বলেই বুঝতে পেরেছি আমি!তবে আপা এখানকার জায়গা মোটেও ভাল না আলোকে চোখে চোখে রাখবেন।
রোদের আম্মুঃ আলো ঘরকুনো মেয়ে ওকে নিয়ে একদম চিন্তা করো না।
মেঝ মামীঃরোদের সাথে খুব মানাবে আলোকে!একদম পারফেক্ট কাপল যাকে বলে।
রোদের আম্মুঃতোমরা দোয়া করো যাতে আমার মেয়েটা এবার সুখের নাগাল পায়!
রোদের আম্মু মুখে যত কথায় বলুক উনার মনেও একটা ভয় এসে বাসা বেঁধেছে।রোদ ওর রুমে গিয়ে গোসল সেরে আলোর রুমে আসে!আলো তখন বেডের উপর মাথা নিচু করে বসেছিলো।রোদ আলোর পাশের এসে বসে বলে উঠলো…!!
রোদঃএই যে রাণী এলিজাবেথ আপনি এখানে ভুলেও ছোট হাতে কামিজ পড়বেন না! আর আম্মু যদি গায়ে হলুদের জন্য শাড়ি পড়তে বলে তাহলেও পড়বেন না। কথাটা ঠিকমত মাথায় ঢুকিয়ে নিন…
আলোঃ….
রোদঃ আর চুল শুকানোর পর চুল বেঁধে রুম থেকে বের হবেন! চুল দেখিয়ে আর কাউকে পাগল বানাতে হবে না…!!
আলোঃ….
রোদঃ এই মেয়ে আমি কি বলছি তুমি শুনতে পাচ্ছো না?কানের নিচে ধাপ দিলে দিলে তখন বুঝবে।
রোদের ফোনের কল আসাতে রোদ চলে যায় আর আলো ঝিম মেরে বসে থাকে!তারপর সবাই দুপুরে একসাথে খেতে বসে!মেঘ আর রোদ চেয়ারে বসতে যাবে ঠিক তখনই আলো ওদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে নিজে বসে পড়ে!রোদ মেঘকে ধরে ফেলে তা না হলে মেঘ মুখ থুবকে মেঝেতে পড়তো।আলো চেয়ারের উপরে দুই পা তুলে বসে আর একটা প্লেট নিয়ে ভাত, গরুর মাংস, ইলিশ, চিংড়ি গপাগপ খেতে থাকে!বাড়ির উপস্থিত সবাই আলোর কান্ড দেখে অবাক হয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে!আলোর এমন ব্যবহার দেখে বাচ্চারা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে আর বড়রা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।সবার মনে খটকা লাগে! আলোকে দেখে মনে হচ্ছে কত বছর সে অভুক্ত। দীদান সবাইকে চুপ থাকতে বললো…!!
দীদানঃ আর কিছু খাবে তুমি?আর কিছু লাগবে তোমার(আলোর দিকে তাকিয়ে)
আলোঃ হুমম! আমি মিষ্টি খাবো!মিষ্টি! মিষ্টি!
রোদের বড় মামা এসে আলোর সামনে মিষ্টি এনে রাখতেই আলো হামলে পড়ে মিষ্টি খেতে লাগলো!একহাতে মিষ্টির প্যাকেট আর অন্য হাতে পাঁচ পিচ ভাজা ইলিশ মাছ নিয়ে খেতে খেতে গটগট করতে করতে উপরে চলে গেল!এর মধ্যে আদিলের নানু বাসায় লোক আসাতে সবাই ওদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো! আর আলোর বিষয়টা আপাতত ধামাচাপা পড়ে গেল!সকালে থেকেই আলো অস্বাভাবিক বিহেভ করছে! এটা রোদ অনেক আগে থেকেই খেয়াল করছে!রোদের গলা দিয়ে খাবার নামছে না তাও অল্প করে খেয়ে উঠে চলে গেল…!!
বিকেলবেলা থেকেই বাসায় আরো লোক এসে এড হলো!বিয়ে বাড়িতে লোকজন বেশি হবে এটাই তো স্বভাবিক!আর গ্রামের বিয়ে তারপরে উপরে এই গ্রামের জমিদারের নাতির বিয়ে বলে কথা! পাঁচ গ্রামের মানুষ তো দেখতে, খেতে তো আসবেই।আলো চুল ছেড়ে বেডে শুয়ে ছটফট করছে পুরো শরীর কেন জানি জ্বলে যাচ্ছে। বিশেষ করে রোদ যতবার আলোর রুমে এসে আলোকে দেখে যাচ্ছে ততই আলোর শরীর জ্বালাপোড়ার পরিমান বেড়েই যাচ্ছে।সাপের খোলস ছাড়ানোর সময় সাপ যেমন ব্যাথাতে ছটফট করে! আলোও বেডের উপর শুয়ে ছটফট করছে।
রোদের দীদান রোদকে ডেকে পাঠায় উনার রুমে!রোদ নক করে ওর দীদানের রুমে আসে!দীদানে ওর হাতে একগ্লাস যমযমের পানি দিয়ে বলে আলোর শরীরে ছিটিয়ে দিয়ে আসার জন্য! রোদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই রোদের দীদান রাগী চোখে দিকে তাকাতেই রোদ আর কিছু না বলে পানি নিয়ে রোদের রুমে হাটা ধরে!
রোদঃ দুপুরেই তো গোসল করে উঠলো! আবার এখন পানি দিলে ভেজে যাবে তো!দীদান যে মাঝে মাঝে কি করে না।ধুর এখানে আসাটাই উচিত হয়নি। আর তিলোকন্যা এমন বিহেভ ই বা করছে কেন কে জানে??ওয়েট ওয়েট আমার উপর রেগে গিয়ে এমন করছে না তো!ধুর বাবা কিছু ভাল লাগছে না আর…!!
রোদ আলোর রুমে গেল!রোদকে দেখে আলো ক্ষেপে গিয়ে আশেপাশে থাকা জিনিস দিয়ে রোদকে আঘাত করতে থাকে!আলো রোদকে কিছুতেই ওর কাছে ঘেষতে দিচ্ছে না তাই রোদ রেগে গিয়ে দুরে থেকেই আলোর গায়ে পানিটা ছুঁড়ে মারে আর আলো শান্ত হয়ে বেডে বসে পড়ে…!!
রোদ আলোর কাছে দিয়ে আলোর গাল চেপে ধরে!আর রাগী চোখে তাকিয়ে বলে…
রোদঃ খুব সাহস বেড়েছে তাই না!বাসায় চলো
একবার! তারপর তোমাকে মজা বোঝাবো।ফাজিল মেয়ে একটা…!!(রাগী চোখে তাকিয়ে)
মেঘঃ দাভাই বউমনিকে ব্যাথা দিচ্ছো কেন?
রোদঃ এই তুই সবসময় এর পাশে থাকবি!একে মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না।মনে হচ্ছে জটিল কোন ঝামেলা পাকাবে…!!(দাঁতে দাঁত চেপে)
মেঘঃ আচ্ছা
আলোঃ…
যমযমের পানি ছিটানোর পর থেকে আলো স্বাভাবিক আছে!সন্ধ্যায় দিকে আদিলের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো!শত শত গ্রামের মানুষ এসে আদিলের গায়ে হলুদ দিয়ে যাচ্ছে! রোদ, মেঘ, আলো, আর সব কাজিনরা মিলে চেয়ার নিয়ে গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর হাসাহাসি করছে!সবাই কত সুন্দর করে সেজেগুজে আছে আর আলো হলুদ কামিজ আর সবুজ চুরিদার আর সবুজ ওড়না আর চুলে হাত খোঁপা করে বসে আছে!তারপরেও আলোকে সবার মাঝে আকষর্ণীয় দেখাচ্ছে! মেঘ একটা গোলাপ এনে আলোর খোঁপাতে গুজে দিলে….!!আলো মেঘকে জড়িয়ে ধরে চকাস করে আদর দিলো…!!
রোদঃ আমি যে পাশে বসে আছি এটা তো এখন চোখে পড়বে না!আর এই মেঘটাও হচ্ছে ফাজিল।এসে বলবে দাভাই বউমনির খোঁপাতে গোলাপটা গুঁজে দাও তো! তা না উনি এসে দুম করে নিজেই গোলাপটা পড়িয়ে দিলো!আমি মাঝে মাঝে ভাবি বউটা আমার নাকি মেঘের!দাড়া তুই বিয়ে কর আমার ছানাগুলোকে তোর বউয়ের পেছনে লাগিয়ে রাখবো! যাতে তুইও যখন তখন রোমাঞ্চ করতে না পারিস!তখন বুঝবি কেমন লাগে (মনে মনে)
মেঘ রোদের গিটার এনে দিয়ে বললো একটা গান গাইতে!রোদের এখন গান গাইতে ইচ্ছে করছে না তাই রাজি হলো না!রোদ বিরক্তকর একটা ভাব নিয়ে চেয়ারে বসে আছে!মেঘ রোদের কানে কানে এসে বললো…
মেঘঃ দাভাই এখন গান গাইতে শুরু করো তা না হলে আমি কিন্তু বউমনিকে বলে দিবো তুমি একটা মুটকি মেয়েকে কিসি করতে গিয়ে গণপিটুনি খেয়েছিলে। তখন দেখবে বউমনি তোমার মুখ দেখা তো দুরে থাক! তোমার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবে।(কানে কানে)
রোদঃ মাঝে মাঝে আমি কনফিউজড হয়ে যায় তুই কি আমার নিজের ভাই? বিশ্বাস কর মেঘ তোর মত ভাই যার আছে বাইরের শএুর দরকার হবে না।
মেঘঃ এবার আমার পছন্দের গানটা শোনাও তো!
রোদঃ তোর পছন্দ মানে তো ওই বাজে গানটা…লাল গেন্দা ফুল!উফফ বিরক্ত লাগে আমার গানটা।(বিরক্তের সুরে)
মেঘঃবেশি ফকফক করো না তো দাভাই! দাড়াও আমি আসছি..!!
মেঘ এবার একদৌড়ে ওর ছোট মামার রুমে গিয়ে কলির একটা গোলাপি গেন্জী পড়ে নিলো!কলি তো ছোট তাই গেন্জীটা মেঘের নাভির উপর পর্যন্ত হলো।আর মেঘ ওর সাদা জিন্সটা পড়ে নিলো! তারপর আলোর রুমে গিয়ে আলোর একটা কালো ওড়না নিয়ে মাথায় দিয়ে চুলের মত করে ছেড়ে রাখলো আর মুখে একটু পাউডারও দিয়ে নিলো!দুই কানের পেছনে দুইটা করে চারটা গাঁদা ফুল গুঁজে নিলো!তারপর কোমর দুলাতে দুলাতে রুমে থেকে বের হলো!মেঘকে যে যে দেখেছে সবাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে!রোদরা যেখানে আছে মেঘ মেয়েদের মত হেলে দুলে হেঁটে হেঁটে সেখানে দাঁড়াতেই সবাই মেঘকে দেখে হো হো হাসতে শুরু করলো!আলোও মেঘকে দেখে হাসতে থাকে!রোদ তো মেঘকে দেখে হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে ঘাসের উপর পড়ে গেল! তারপরেও রোদের আজকে হাসি থামছে না…!!
রোদঃহা হা হা আমার আর আপসোস নাই মেঘ!তুই মেয়ে সেজে আমার বোনের অভাবটাও পূরণ করে দিলি আজকে! দারুণ লাগছে তোকে.. (হাসতে হাসতে)
মেঘঃ হ্যায় মরণ!(হিজরাদের মত করে মুখ ভেংচি দিয়ে)
আলো রোদের দিকে তাকিয়ে আছে!রোদের হাসির শব্দটা আলো মনে অন্যরকম অনূভূতির আলোড়ন সৃষ্টি করছে! এখানে না আসলে হয়তো আলোর জানাই তো না যে রোদ এত সুন্দর করে হাসতে পারে!আলো মনে মনে বলে…!!
আলোঃ ছেলেদের যে এভাবে হাসতে নেই হুঁকোমুখো! তোমার এই হাসি যে কত মেয়েকে ঘায়েল করার হাতিয়ার সেটা তুমি হয়তো জানোনা! তবে আমি যে ঘায়েল হয়ে গেছি তোমার হাসির প্রতিধ্বনিতে হুঁকোমুখো। আর এমন কিলার লুকে দেখে তো আমার বার বার মনে হয় ……
তোমারে চুম্মায় মাইরাল্লাই…..!!
To be continue…..!!
(আমি আবারও বলছি গল্পের আলোর মত আমি রুপবতী বা গুনবতী কোনটাই না!গল্পে শুধু আমার নামটাই ব্যবহার করছি তাই বার বার এসব বলে আমাকে লজ্জায় ফেলবেন না!আর রোদের উপর যারা ক্রাশ তারা রোদকে নিয়ে যা ইচ্ছে কমেন্ট বা পোষ্ট দিতে পারেন আমার কোন সমস্যা নাই!অনেকে নাকি আমার জন্য রোদকে নিয়ে কোন পোষ্ট বা কমেন্টে কিছু লিখতে পারে না।তাই আমি বলছি গল্পের আলো,রোদ, মেঘ সব তোমাদের জন্য! এখানে আমার বলে কিছু নেয়…!! আর গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাতে ভুলবেন না…😊)