#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_58
🍁🍁
ধৈর্য্যশীল, সৎ আর পরিশ্রমীরা নিশ্চয়ই তারা তাদের কাজের সুমিষ্ট ফল পাবেই।আল্লাহ তোমার ভরসায় আছি…!!কারন আল্লাহ তুমি যা করে আমাদের ভালোর জন্যই করো!(রোদ)
ওই রুমের মধ্যে কে কি করছে সেটা এখানে বড় পর্দায় দেখা যাচ্ছে! ওই রুমে যারা গেল তারা নিজেরা নিজেদের কাজে ব্যস্ত। রোদ এটাও দেখলো যে আলো একটা লং কাপড় নিয়ে কিছু একটা করতে গিয়ে দুম করে মেঝেতে পড়ে গেল।তবে কেউ ওকে তোলা তো দুরে থাক ফিরেও কেউ তাকালো না ওর দিকে! কারন এখন কারো দিকে তাকানোর কোন সময় নেই। রোদ যখনই দেখলো আলো পড়ে গেছে তখনই রোদ আল্লাহকে ডাকতে থাকে।যাতে আলো বেশি ব্যথা না পায় বা পেটে যাতে কোন কোন চাপ না লাগে!আলো মেঝে থেকে নিজে নিজেই উঠে দাঁড়ালো ! আর একটা চেয়ারে বসে আগে নিজেকে রিলেক্স করে নিতে বেশ কয়েকবার জোরে নিঃশ্বাস নিলো! তারপর চেয়ার থেকে উঠে ওর কাজ শুরু করলো!তবে এর মধ্যে কোন ডিজাইনার কার প্রতি জেলাস সেটাও বড় পর্দায় পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে! কারন একে অন্যের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচানোটাও এখানে দেখা যাচ্ছে। এই ৫ জনের মধ্যে একজন মাএ ছেলে! আর সে বার বার আড়চোখে আলোর ড্রেসটার দিকে তাকাচ্ছে। তবে আলোর কারো দিকে মন নাই সেই নিজের কাজে মনোনিবেশ করছে।জাজ রা নিজেদের মাঝে গুজুর গুজুর করছে। আর আলো এ্যাশ কালারের কাপড় দিয়ে ডিজাইনার একটা গাউন বানাচ্ছে! আর সেটা আর্কষনীয় করে তুলে যা লাগবে আলো সেগুলোই করতেই ব্যস্ত।
৩ ঘন্টা পর_______!!
সবাই যে যার মত করে হাত চালিয়ে কাজ করছে!জাজ রা উঠে দাড়িয়ে ওদের টাইম শেষ বলে ঘোষণা করলো।ওই ৫ জনের ড্রেস ৫টা মডেলকে পড়িয়ে স্টেজে দাঁড় করানো হলো।রোদ দুর থেকে আলোকে ইশারায় বোঝাচ্ছে টেনশন না করতে !আলো একদৃষ্টিতে ছলছল চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে কারন আলোও এখন ভয় হচ্ছে। ৫ জন মডেল কোমরে হাত রেখে স্টাইল করে দাঁড়িয়ে আছে।আলো দুরুদুরু বুকে বার বার আল্লাহকে সরণ করছে। আর জাজ রা খুঁটিনাটি পরখ করে ৫ জনের মধ্যে দুইজনকে বাদ করে দিলো।তার মধ্যে দুইজনের মধ্যে সাফিনের আরেক স্টুডেন্ট সাবা বাদ হয়ে গেল।আলো আর একটা ছেলে পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে! এই দুইজনের মধ্যেই এখন একজনকে বেস্ট ডিজাইনার হিসেবে উল্লেখ করবে।ফাইনাল ফলাফল জানার জন্য টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে উপস্থিত সবার মাঝে।
৪ জন জাজ তাদের চেয়ার থেকে উঠে স্টেজে এসে দাড়ালেন আর তাদের মাঝে একজনে হাতেই আছে সেই অমূল্য রেজাল্ট। যেটা জানার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে চাতক পাখির মত আলো জাজদের দিকে তাকিয়ে আছে !চারদিকে স্তব্ধ হয়ে গেছে!মেঘ চোখ বন্ধ করে রোদের কোলে উঠে রোদের বুকের সাথে লেপ্টে আছে।মেঘ ওর ছোট্ট হাত দিয়ে রোদের শার্টের একপাশ মুঠ করে ধরে আছে।রোদ একবার আলোকে ইশারায় বলছে রিলেক্স থাকতে একবার মেঘর পিঠে হাত রেখে মেঘকে বলছে টেনশন না নিতে।মেঘ রোদের কথা শুনেও না শোনার ভান করে চুপ করে আছে মনে মনে বলছে…!!
–আল্লাহ দাভাই বলছে তুমি যা করো আমাদের ভালোর জন্য করো। আল্লাহ আমার বউমনিকে ফাস্ট করে দিও!আমার বউমনি হেরে গেলে বউমনি অনেক কষ্ট পাবে। আর বউমনি কষ্ট পেলে আমিও খুব কষ্ট পাবো।আমি আমার বউমনিকে খুব ভালবাসি। প্লিজ আল্লাহ তুমি আমাদের উপর সহায় হও।(মেঘ)
একজন জাজ উনার হাতের কাগজটার দিকে আর একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।তারপর মাইক্রোফোনটা মুখের কাছে নিয়ে আলোর পাশে থাকা ছেলেটাকে বললো..!!
–তোমার নাম কি??তোমার বাসায় কোথায়? (জাজ)
–ম্যম আমার নাম শাহরিয়ার আলম। আমার বাসা রাজশাহী।
–আচ্ছা তুমি যদি ফাস্ট হও তাহলে কি করবে??
–যদি আমি ফাস্ট হই তাহলে তো আমি অনেক খুশি হবো!আর সবাইকে বলবো যে আমি পেরেছি বেস্ট ডিজাইনার হতে।
–ওহ্
–এবার আমি তোমার সাথে কথা বলি (আরেকজন জাজ আলোর দিকে তাকিয়ে)
–আসসালামু আলাইকুম (আলো)
–ওয়ালাইকুম সালাম! সালামের উওরটা নিলাম যদিও আমি তোমার ধর্মের না।যাই হোক তোমার নাম কি??
–স্যার ধন্যবাদ আমার সালামের উওরটা নেওয়া জন্য! আর আমার নাম আতকিয়া ইবনাত আলো
–আলোর মত দেখতে বলেই কি তোমার নাম আলো নাকি? (হেসে)
–আমি যতটুকু জানি আমি সকালের আলো ফোটার পর পরই নাকি পৃথিবীর আলো দেখেছিলাম তাই আমার নাম আলো।(আলো)
–বাসায় কোথায়?? (জাজ)
–ঢাকাতেই
–তুমি কি নার্ভাস ফিল করছো??
–একটু একটু (মাথা নিচু করে)
— তুমি বলো তো! এখন তুমি যদি ফাস্ট হও তো তুমি কি করবো??
–স্যার আমার দুইটা প্রাণপাখির সাপোর্ট পেয়েই আমি এতদূর পর্যন্ত এসেছি।আমি যদি আল্লাহর রহমতে ফাস্ট হতে পারি তাহলে আগে আমার প্রাণপাখি দুইটার মুখের সেই তৃপ্তির হাসিটা দুচোখ ভরে দেখবো।কারন ওদের মুখে তৃপ্তি হাসিটা দেখার জন্যই আমি আজ এখানে দাড়িয়ে। আমার মনোবল শক্তি, সাপোর্ট, ভাল থাকার পাসওয়ার্ড, আমার মুখের হাসি সব ওরা।ওদের মুখের সেই হাসিটা দেখার জন্যই আমি এখন পর্যন্ত চেষ্টা করে যাচ্ছি ।(আলো)
–হুমম বুঝলাম!আর খুশিও হলাম কারন তুমি অনেস্ট আনসার দিয়েছো!তবে সত্যি বলতে তোমরা সবাই খুব ভালো করেছো বাট সবাইকে তো ফাস্ট করা যায় না।এজন্য আমাদের নাম্বার অনুযায়ী আমাদের পরখ করতে হয়।তবে মন খারাপ করার কিছু নেই! বাবার যেমন বাবা থাকে তেমনি ভালোরও ভালো থাকে!কারো কাজ উনিশ তো কারোটা বিশ।একটা দুই নাম্বার তফাত আর কি!তোমরা ফাস্ট হতে না পারলে হাল ছেড়ে দিবে না নতুন করে শিক্ষার আগ্রহ প্রকাশ করবে। আর একটা কথা সব সময় মনে রাখবে!
“যেখানে শেষ হয় সেখান থেকেই নতুন করে শুরুর আগমন ঘটে” (জাজ)
তারপর আরেকজন জাজ শাহরিয়ার আর আলো রেজাল্ট বললো।আলো পেয়ে ৯৯৬ আর শাহরিয়ার পেয়েছে ৯৯৮! পুরো স্টেজ সহ সবার মাঝে টানটান উত্তেজনা করছে।শাহরিয়ার আলোর থেকে দুই মার্ক বেশি পেয়েছে! শাহরিয়ার সাপোর্টরা হইহুল্লোড় শুরু করে দিয়েছে।আলো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে আর অঝোর ধারায় গাল বেয়ে পানি পড়তেই আছে।মেঘ রোদের গলা জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। রোদেরও মনে হচ্ছে ওর হার্ট কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে! বার বার নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে। রোদের মাথায় একটা কথা বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে যে রোদ এখন আলোকে সামলাবে কি করে?কি বলে শান্ত করবে আলোকে।
টেলিভিশনে এই প্রোগ্রামটা সরাসরি দেখানো হচ্ছে।রোদের সব বন্ধুরা বসে দেখছে আবির, আকাশ, রিধি,আশা, আবৃতি এরা কেঁদে দিয়েছে।কারন ওরা জানে আলো ঠিক কতটা কষ্ট করেছে এই পর্যন্ত আসতে।বন্ধুদের সবার মাঝে একটা চিন্তায় কাজ করছে সেটা হলো আলোকে কিভাবে সামলাবে??আর মেঘ সে তো….
আলো মাথানিচু করে মনে মনে একটা কথায় আড়তাতে লাগলো..!!
–সাফল্যের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আবার পিছু ফিরে যাওয়াটাই মনে হয় আমার ভাগ্যতে ছিলো।আমি ভাগ্যের উপর সব ছেড়ে দিয়েছলাম আর ভাগ্য আবার আমাকে ধোঁকা দিলো।পারলাম না মেঘুসোনা তোমাদের ইচ্ছে টা পূরণ করতে। আমি হেরে গেলাম! ভাগ্যের কাছে বার বার হেরে যেতে যেতে আমিও এবার ক্লান্ত।প্রতিবারের মত আজকেও ভাগ্য আমাকে ধোঁকা দিলো! আমি সরি রোদ আমি পারলাম না তোমার কথা রাখতে।আমি পারলাম না তোমাদের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটাতে।আমি ব্যর্থ! আমি ব্যর্থ! আমার সব কষ্ট স্বার্থকতা নামক অমূল্য জিনিসটার ধারে কাছেও ঘেষতে পারলো না ! আমি আবার ভাগ্যের কাছে পরাজয় স্বীকার করলাম। আমি বার বার উঠে দাঁড়াতে চাই কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে বার বার আমি মুখ থুবকে পড়ে যায়। আজকেও আমি আমার ইচ্ছেপূরণের সাফল্যের চুড়াতে এসেও খালি হাতে ফিরবো।(আলো মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলে)
জাজদের কথা অনুযায়ী আলো ৯৯৬ নম্বর আর শাহরিয়ার ৯৯৮ পেয়েছে!আর রেজাল্ট অনুযায়ী শাহরিয়ার দুই নাম্বার বেশি পেয়েছে।আর এই রেজাল্ট অনুযায়ী শাহরিয়ার প্রথম স্থানে আছে। তাহলে আলো কি এতদূর এসেও খালি হাতে ফিরে যাবে???সত্যিই কি আলো আবার ভাগ্যের কাছে হেরে যাবে??
To be continue…!!
(আজকে আপনাদের কাছে জানতে চাচ্ছি আপনাদের মতামত…!!আর আলো হেরে যাওয়াতে আপনারা খুশি তো..!!)