স্পর্শানুভূতি #writer_Nurzahan_Akter_Allo #part_51 🍁🍁

0
616

#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_51
🍁🍁

..পরেরদিন সকালবেলা…
ডাক্তার বলে মিষ্টু ভেতরের নালির সেলাই শুকিয়ে গেছে!এখন অপারেশন করে উপরের সেলাই করে দিতে হবে…এতদিন তো ফাঁকা ছিলো।সেটা দেখলে যে কেউ শিউরে উঠতো।ডাক্তার কথা গুলো বলছিলো! আজকেই মিষ্টুর শেষ ড্রেসিং করবে। ড্রেসিং করার জন্য হাত বাড়াচ্ছিলো…তখন মিষ্টু ডাক্তার যা বললো তাতে সবাই হা করে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে ছিলো…..


মিষ্টুঃ ডাক্তার আংকেল আপনি বসুন! আমি আমার পেট থেকে গজ বের করছি!!!!!


সত্যি সত্যি মিষ্টু একা একা ওর পেট থেকে গজ বের করে শুয়ে পড়ছে।আজকে ওকে ড্রেসিং করার সময় ধরা লাগে নি।আসলে ড্রেসিং করতে করতে সেলাই শুকিয়ে গেছে যার কারনে ব্যাথা কম। আজকে মিষ্টু আবার আরেকটা অপারেশন করে মুক্তি পাবে।সন্ধ্যায় মিষ্টু যথারীতি অপারেশন করে পেট সেলাই করা হলো। প্রায় এক সপ্তাহ পর মিষ্টুকে হসপিটালে রেখেছিলো তারপর রিলিজ করে দিলো। মিষ্টু কে মুহিতদের বাসায় নিয়ে গেল!কারন মিষ্টুর এখন সাবধানে থাকতে হবে।সবার সাথে থাকলে মনটাও ভালো থাকবে।মুহিত রাসেল কে বলে এখন থেকে এখানে থাকতে…কারন রাসেল যে মিষ্টুকে ছাড়া থাকতে পারে না এটা সবার জানা….


রাসেল মিষ্টুকে খাইয়ে দেয়,চুল বেধে দেয়, আস্তে আস্তে ধরে ধরে হাটায়, এভাবে প্রায় ১০ দিন যায়।আর সেলাই কেটে আনে,,আর ডাক্তার মিষ্টুকে বলে সাবধানে চলাফেরা করতে….রাসেল মিষ্টুকে নিয়ে কোন রিস্ক নিতে চাই না।তাই সব সময় ওর পাশে থাকে আর বাসায় বসেই ওর অফিসের কাজ গুলো করে…..


৬ মাস পর…

মিষ্টু এখন সুস্থ তাই রাসেলের ফ্ল্যাটে থাকে!মিষ্টু আর রাসেল আজকে মুহিতদের বাসায় এসেছে! সাথে মিতু,জয়,আয়ান,শুভ্র সবাই আড্ডা দিচ্ছে। মিষ্টু মিতু আর মুহিতের দিকে তাকিয়ে বলে..

মিষ্টুঃ ভাইয়া তোমার কাছে আমার কাছে চাওয়ার আছে!

মুহিতঃ কি চাই বল?

রাসেলঃতোমার মাথা নিশ্চয়ই কিছু একটা ঘুরছে বুঝতেই পারছি।

মিষ্টুঃমিতু কে আমার ভাবি বানাতে চায়।আমি আর কোন কথা শুনবো না…

মুহিতঃকি!!!!! আমি ওকে বোনের মত দেখছি এতদিন।

মিষ্টুঃএখন থেকে বউয়ের মত দেখবে তাহলেই তো হলো।

মিতুঃ এসব কি বলছিস তুই!!!!??

মিষ্টুঃতুই চুপ থাক!তোর বাবা মায়ের সাথে অলরেডি সব কথা শেষ। সবাই জানে শুধু তোরাই জানতি না…


মিষ্টু এই কথা বলার পর থেকে মুহিত মিতুর দিকে তাকিয়ে বলে…

মুহিতঃ মিতু আমি সোজাসাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করি।আমার বোন চেয়েছি তোমাকে ভাবি বানাতে সো তুমি না চাইলোও রাজি হতে হবে।কারন আমি আমার বোনের কোন চাওয়া অপূর্ণ রাখি নি আর ইনশাআল্লাহ রাখবোও না।

রাসেলঃ মুহিত তুই মিতু কে প্রোপোজ করলি নাকি থ্রেট করলি…

মুহিতঃ সহজ করেই বলে দিলাম।না শুনলে থ্রেট করবো..

মিতুঃ বড়রা যা চাইবে তাই হবে…আমার কিছু বলার নাই(মাথা নিচু করে)

মিষ্টুঃ হুম হুম দেখবো বিয়ের পর আমাদের কথা মত চলো… (দুষ্টু হাসি দিয়ে)


তারপর বড়রা মিলে মুহিত আর মিতুর বিয়ে ঠিক করে।মিতুর বাবা মায়ের অবস্থা তেমন ভালো না আর মুহিত কড়া ভাবে জানিয়ে দিসে যে,মিষ্টুর কথা রাখবে বাট কোন অনুষ্ঠান হবে না।কারন অনুষ্ঠান করলে মিষ্টু দৌড়াদৌড়ি করবে এটা মুহিত চাচ্ছে না।মুহিতকে এতবার বোঝানোর পরেও মুহিত ওর কথায় শেষ বলে জানিয়ে দিয়েছে। তারপর মিতুর দের বাসায় গিয়ে বিয়ে পড়ানো হবে বাট কাছের রিলেটিভ ছাড়া কেউ থাকবে না। মুহিত আর ওর বন্ধুরা একটা গাড়িতে আর মিষ্টুর আম্মু সহ রাত্রি আব্বু আম্মু আর ওর ফুপুরা একটাতে আসে,,,, রাসেল আর মিষ্টু আসে বাইকে।রাসেল খুব ধীর গতিতে বাইক চালায় যাতে মিষ্টু আঘাত না পায়….
মিষ্টুঃএই ছ্যামড়া তুমি ব্রেক মারছো না কেন?
রাসেলঃ তুমি ব্যাথা পাবে তাই..

মিষ্টুঃ আরে ধুর! ব্রেক মারবা আর আমি তোমার গায়ের সাথে ধাক্কা খাবো।হিরো -হিরোইন ব্যাপারটা থাকবে বাট তুমি ব্রেক মারছো না কেন?তুমি আসলেই বুইড়া হয়ে গেছো…

রাসেলঃ থাক আমার এতো হিরো সাজার দরকার নাই!পরে পেটে ব্যাথা করবো।তুমি আমার কাঁধে হাত রাখছো এর মধ্যে পৃথিবীর সব চেয়ে ভাল ফিলিংস আমি ফিল করতে পারছি! তাই ইচ্ছে করে ব্রেক মারার দরকার নাই…

মিষ্টুঃ আনরোমান্টিক খাটাশ একটা (মুখ ভেংচি দিয়ে)

রাসেলঃ সেটা রুমের মাঝেই বুঝিয়ে দিবো।বাইরে এভাবে পাবলিক প্লেসে নয়..বুঝলেন।


তারপর ঘরোয়া ভাবেই মুহিত আর মিতুর বিয়ে টা হয়ে যায়।তারপর খেয়ে আর একটু থেকে মিতুকে নিয়ে ওদের বাসায় সবাই চলে আসে।জয় রা সবাই মিতুদের জন্য বাসর ঘর সাজিয়ে দেয় সুন্দর করে। সবাই একসাথে রাতে খেয়ে নিলো… রাসেল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১২ঃ৪৫ বাজে। রাসেল মুহিতকে বললো রুমে যেতে আর নিজেও রুমে চলে গেল।মুহিত রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিতেই মিতু চমকে উঠলো…


মুহিত বেডে কাছে এসে বসতেই দেখে মিতু কাঁপছে! মুহিত মিতুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে…

মুহিতঃ আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছো কেন?
মিতুঃ ন ন ন না মা মা মানে ভাইয়া….

মুহিতঃ ভাইয়া ডাকছো কেন?আমি এখন তোমার হাজবেন্ড
মিতুঃহুমম!আর হবে না…

মুহিতঃ আজকে থেকে আমাদের নতুন ভাবে পথচলা শুরু…আমাকে আর ভাইয়া ডাকবে না।


এর মাঝেই জয়ের কাশি উঠে গেল।মুহিত হুড়োহুড়ি করে বেডে থেকে নেমে যায়।তারপর খাটের নিচে কে কাশলো সেটা দেখার জন্য নিচু হয়।আর নিচু দেখে মিষ্টু আর জয় খাটের নিচে ঘাপটি মেরে বসে আছে।ওদিকে রাসেল হন্য হয়ে মিষ্টুকে খুজে বেড়াচ্ছে! আয়ান রা বারবার জয়কে ফোন দিচ্ছে বাট জয়ের ফোন বন্ধ… মুহিত রাসেলকে ফোন দিয়ে বলে আয়ান রা মুহিতের রুমে আসতে।রাসেল এসে মুহিতের দরজা নক করলো,,,মুহিত দরজা খুলতেই শুভ্র রাসেলকে বললো।

শুভ্রঃ রাসেল তো খাট ভেঙ্গে ছিলো!তুই কি আকাম করলি যে বাসর ঘরে আমাদের ডাকলি??

আয়ানঃতুই কি ভয় পাচ্ছিস নাকি ভাই??

মুহিতঃ শালা তোরা মানুষ হবি না!!!

রাসেলঃ ওদের কথা বাদ দে!কি হয়েছে বলবি তো…
মুহিতঃ আয় রুমে আয়…


ওরা রুমে ডুকে দেখে মিতু ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।সবাই ভ্রু কুচকে মুহিতের দিকে তাকালো! মুহিত ইশারা করে খাটের নিচে দেখতে বললো!শুভ্র আর আয়ান নিচু হয়ে দেখে মিষ্টু আর জয় ঘাপটি মেরে বসে আছে।রাসেলও দেখে আর ওদের বের হতে বলে…মিতু জানেই না খাটের নিচে কে??তারপর দুইজন বের হতেই মিষ্টু মুখ কাচুমাচু করে দাড়িয়ে থাকলো….


রাসেলঃ তুমি এখানে কি করছো?আমি তোমাকে কত খুজে বেড়াচ্ছি জানো??

মিষ্টুঃ আমি এখানেই ছিলাম আর কি..

রাসেলঃ এখানে কি করছো তুমি??খাটের নিচে কেন তুমি???

মিষ্টুঃমিতুকে কথা দিয়ে ছিলাম ওর বাসর ঘরে খাটের নিচে আমি লুকিয়ে থাকবো।এই নিয়ে ওর সাথে বাজিও ধরছিলাম এজন্য….. ( কাঁদো কাঁদো মুখ করে)

রাসেলঃ তোমার বড় ভাইয়ার রুম এটা রে গাধী,….

মিতুঃ তুই ওটা মনে রাখছিস… (অবাক হয়ে)

শুভ্রঃ সে যাই হোক মুহিত তুই কিছু শুরু করিস নি তো।আই মিন এরা কিছু দেখে নি তো…

মুহিতঃ বোনের সামনে এসব কি বলিস তুই???তোদের বুদ্ধি হবে কবে.. (দাঁতে দাঁতে চেপে)

মিষ্টুঃ আমি আসতে চাই নি জয় ভাইয়া এই বুদ্ধি টা প্রথমে দিসে।

জয়ঃ মিষ্টু তুই ফাসাবি না একদম!নিজেই তো ডেকে আনলি…এখন আমার ঘাড়ে দোষ দিচ্ছিস

রাসেলঃ ওকে চল এবার সবাই যায়!অনেক রাত হয়ে গেছে। আর অনেকের অনেক কাজ কাম বাকি আছে (মুহিতের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে)

মুহিতঃ শালা তুমি আমার বোনকে বিয়ে বেঁচে গেছো।আর এখন তুই বাঁশ আমাকে দিচ্ছো…

মিষ্টুঃ থাক তাহলে মিতু কেমন!একদম ভয় পাস না..

মিতুঃ হুমমম

মিষ্টুঃ ভাইয়া গেলাম আমি

মুহিতঃ আচ্ছা

মিষ্টুঃআমি সত্যি সত্যি যাচ্ছি কিন্তু

মুহিতঃহুমম! যা

মিষ্টুঃআমি সত্যি সত্যি গেলাম।

মিতুঃ হুমম যা (কাঁদো কাঁদো মুখে)
মিষ্টুঃ গেলাম

মুহিতঃ….

মিষ্টুঃ সত্যি যাবো

মিতুঃ…

মিষ্টুঃ তাহলে যাই..

এবার মিতু ভ্য ভ্য করে কেদে দিয়ে বললো…

মিতুঃ যাস না মিষ্টু আমার ভয় লাগছে!তোর এই ডাকাত ভাইয়া আমাকে মনে হয় আজকে মেরেই ফেলবে।আমি যাবো তোর সাথে…..(কেঁদে কেঁদে)

রাসেলঃ মুহিত তোরটা তুই সামলা!আর আমরা টা আমি নিয়ে গেলাম।এরা দুজনেই মাথা পাগল করে ছাড়বে আমাদের! বাই (মুহিতের দিকে তাকিয়ে! মিষ্টুকে কোলে নিয়ে)

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here