#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_7
🍁🍁
পরের দিন সকালে…
মিষ্টুর কলেজ থেকে মুহিতকে ইমারজেন্সি ভাবে ডেকে পাঠিয়েছে কলেজের প্রোফেসর!মুহিতও দেরি না করে কলেজে ছুটে এসেছে!আপাতত মুহিত চেয়ার বসে আছে আর মিষ্টু দাড়িয়ে নখ কামড়াচেছ।মুহিত মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছে মিষ্টু কিছু একটা ঘটিয়েছে!মুহিত চেয়ার থেকে উঠে মিষ্টু সামনে দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করে..
–
মুহিতঃ মিষ্টু সোনা!কি হয়েছে আমি আগে তোমার থেকে জানতে চাই?
স্যারঃমুহিত চোরকে জিজ্ঞেস করছে চুরি করছে কি না?তোমার গুনোধর বোন কি আর করবে গুন্ডীমি করছে?(রেগে গিয়ে)
মুহিতঃ প্লিজ স্যার!আমি আগে আমার বোনের সাথে কথা বলে তারপর আপনার কথা শুনবো।
স্যারঃতোমার বোনের সাথে গল্প করতে দেওয়ার জন্য আমি তোমাকে এখানে আসতে বলি নি।যা কথা বলার বাসায় গিয়ে বলো….
মুহিতঃজানি স্যার!তারপরেও আমি আর পাঁচটা বাবা-মা-ভাইয়ের মত অন্যের কথা শুনে নিজের বোনকে শাষণ করবো না।কারন আমি জানি আমার বোন আগ-বাড়িয়ে কারো পেছনে লাগতে যায় না।
স্যারঃএবার বুঝেছি তোমার বোন কেন এত বেয়ারা?শোন মুহিত আমার কলেজে আমি এসব সহ্য করবো না।
মুহিতঃ মিষ্টু বলো তো!আসলে কি হয়েছে?আমি জানি তুমি আমার থেকে কিছু লুকাবে না।
মিষ্টুঃআসলে আমি রিমার (ক্লাসমেট)ওড়না ধরে টান দিসিছিলাম স্যার এটাই দেখছে!এজন্য আমাকে অফিসে ডেকে এনেছে।
মুহিতঃহুম তারপর বলো!তুমি কেন রিমার ওড়না ধরে টান দিয়েছো সেটাই জানতে চাচ্ছি (মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে)
স্যারঃকেমন অসভ্য বোন তোমার দেখছো?নিজে একটা মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের ওড়না ধরে টান দিলে। এই মেয়ে তোমার একবারো বিবেকে বাধলো না।(রেগে গিয়ে উঠে দাড়িয়ে)
মুহিতঃএটা কেন করলে সেই কারণটাই জানতে চাচ্ছি আমি?চুপ করে না থেকো বলো..(মিষ্টু সামনে এসে মিষ্টুর মুখ তুলে)
মিষ্টুঃআসলে ভাইয়া! রিমার একটা বখাটে ভাই আছে যে আমার বান্ধবী রিতুকে খুব বাজে বাজে কথা বলতো কিন্তু কালকে সে তার লিমিট ক্রস করে ফেলছে।এজন্য আমি…
স্যারঃ এজন্য তুমি প্রতিবাদী মেয়ে সেজে প্রতিবাদ করতে গেছো তাই তো।
মিষ্টুঃহুম রাইট স্যার!তবে আমি যা করছি তার জন্য আমার কোন আফসোস নেয়। কলেজ থেকে টি.সি দিবেন দেন।তবে আজ যদি আপনার মেয়ের সাথে এমন কেউ করতো আমি কিন্তু সেইম কাজই করতাম।(স্যারের দিকে তাকিয়ে)
মুহিতঃতোমার বানধবী মিতুকে ফোন করে এখানে আসতে বলো।আমি পুরো ঘটনা জানতে চাই….
মিষ্টুঃজি ভাইয়া!
–
মিষ্টু মিতুকে ফোন করে অফিসে আসতে বললো!রিতু কাঁপতে কাঁপতে মুহিতের সামনে গিয়ে দাড়ালো।রিতু মাথা নিচু করে দাঁড়ালো! আর মুহিত রিমার ভাই ওকে কবে থেকে ওকে ডিসট্রাব করে জানতে চায়লো।স্যার রিমাকেও অফিস রুমে আসতে বললো!তারপর পুরো ঘটনা খোলাসা করে মিষ্টু স্যার আর মুহিতকে বলে।
–
রিতুকে রিমার ভাই রিমন প্রতিদিন কলেজে আসার সময় বিরক্ত করে!খুব নোংরা নোংরা কথা বলে..এটা বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছে।তবে…
১১/১১/২০১৯..
রিমনঃউফফ বেবি তোমার কি ফিগার মাইরি?পুরাই আগুন (হা হা হা)।(টিজ করে বলছে)
রিতুঃভাই প্লিজ আমিও আপনার বোন (রিমার) মত!এসব বলবেন না প্লিজ। বাসায় জানলে আমার কলেজে আসা বন্ধ করে দিবে (আকুতি মিনুতি করে)
রিমনঃতাহলে তোমার বাসায় যায় চলো!মজা বেশি নেওয়া যাবে।সত্যি বলছি কেউ জানবে না।তোমার সুখের সাগরে ভাসিয়ে দিবো হা হা হা।
–
১৩/১১/১৯..
রিমনঃবেবি কালো টেনটপে (হাত কাটা গেন্জীতে) দারুন লাগবে।একটা টেনটপ পড়া হট পিক দাও আর ডিসট্রাব করবো না।তোমার একটা হট পিক দেখে চোখ জুরায়। হা হা হা
১৬/১১/১৯..
রিমনঃরিতু বেবি চলো না রুম ডেট করি!কেউ জানবে না আমরা এই পাঁচজন ছাড়া(ওর সাথে গুলোকে দেখিয়ে) তবে ওরা কিন্তু খুব ভদ্র আমার মত।তুমি ওদেরও মজা নিতে দিবে কেমন তাহলে ওরাও আর কাউকে বলবে না।(হা হা হা)
১৮/১১/১৯..
রিমনঃএই মিতু সোনা চলো না আজ যায় তোমার বাসাতে!তোমাকে দেখলেই আমি পাগল হয়ে যায় বেবি।একদম চিন্তা করবে না বেবি তোমাকে ইমারজেন্সি পিল কিনে দিবো তো হা হা হা হা( রিতুর হাত টেনে ধরে )
রিতু কোন রকম হাত ছুটিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে পালিয়ে আসে।
২২/১১/১৯
রিমনঃএই মেয়ে তোর এত চোপা কিসের রে!এতদিন ভদ্র ভাবে ডেকেছি শুনিস নি তবে দেখ আজ রাস্তাতেই তোর কি অবস্থা করি (ওড়না কেড়ে নিয়ে রাস্তার মাঝে।)
–
রিতু কাদছে আর রাস্তার কিছু লোক দেখে চলে যাচ্ছে!
রিমণ রিতুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় টার্চ করতে থাকে! তবে আজো রিতুর ভাগ্য সহায় ছিলো তাই রিমন দেখে রিমা(রিমনের বোন) কলেজে আসছে। তাই রিতুকে ওড়না দিয়ে ওখান থেকে সরে যায়।আজ মিষ্টু কলেজে এসে দেখে রিতু কাঁদছে তারপর সব শুনে।রিমাকে সাথে করে মিষ্টু রিমনের কাছে যায় আর কলেজের ভেতরে ডেকে আনে আর নিরিবিলি জায়গাতে যায়।তারপর রিমার ওড়না ধরে টান দিতেই রিমা ওর ওড়না ধরে ফেলে! আর রিমন মিষ্টুর দিকে তেড়ে যায়..
–
রিমনঃএই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না!আমার সামনে আমার বোনের ওড়ানাতে হাত দিসো।এসব কেমন ধরনের সভ্যতা(রেগে গিয়ে)
রিতুঃ মিষ্টু এসব কেমন ধরনের বেয়াদবি ভাইয়ার সামনে এসব কি করছিস তুই?আশে পাশে কেউ দেখলে কি হবে?(রেগে গিয়ে)
মিষ্টুঃতা মিঃবখাটে নিজের বোনের ওড়ানাতে হাত দিলে খুব জলে তাই না!আর আজকে যে একটা মেয়ের ওড়না কেড়ে নিয়েছিলেন তার বেলাতে।অন্য মেয়েকে রাস্তায় এভাবে মজা নিতে পারলে বোনের সাথে মজা নিতে সমস্যা কি?(ঠান্ডা মেজাজে)
রিমনঃএই মেয়ে ভদ্র ভাবে কথা বলো!রিমা আমার বোন
হয়(চোখ রাঙিয়ে)
রিমাঃ ভাইয়া মিষ্টু এসব কি বলছে? (অবাক হয়ে তাকিয়ে)
মিষ্টুঃরিমা তোর ঘুনোধর ভাই রিতুকে নোংরা নোংরা কথা বলে!নোংরা প্রোপোজাল দেয় হট পিকও চায়।রুম ডেট করে ইমারজেন্সি পিলও নাকি কিনে দিবে!রিমা তোর ভাইই না শুধু তার বন্ধুদের মজা নিতে বলছে রিতুর থেকে!রিমা আমার ভাই তোর ভাইয়ের মত জানোয়ার না তারপরেও বলছি যে,যদি আমার ভাই এসব বলতো তাহলে তুই কি করতি?রিমা তুই রিতুর জায়গাতে নিজেকে বসিয়ে দেখ তাহলে বুঝবি?তবে রিমন তোর ভাই বলে বেঁচে গেছে তা না হলে জান নিয়ে ফিরতে পারতো না,,,,( রেগে গিয়ে)
রিমাঃ ভাইয়া তুই এত নোংরা মনের!এতটা নোংরা মাইন্ডে চলিস ছিঃ ভাইয়া। আজ থেকে তোর মত ভাইকে আমার আর দরকার পড়বে না (কাঁদতে কাঁদতে)
মিষ্টুঃ তা মিষ্টার রিমন আপনার বোনের টেনটপ পড়া পিক কি দেখবেন?আশা করি আপনার বোনকে দেখেও পাগল হবেন।কারন মেয়েদের ফিগার তো পুরাই আগুন মাইরি তাই না! চাইলেই পাওয়া যায়।দেখবেন নাকি? (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
রিমনঃ মিষ্টু চুপ কর বোন প্লিজ আর বলিস না!আমি আর সহ্য করতে পারছি না।(মাথা নিচু করে)
মিষ্টুঃকেন চুপ করবো!রিতুকে কালো টেনটপে যদি আগুন লাগে!তাহলে নীল কালারে রিমাকেই পুরাই পানি লাগবে।কি ভাইয়া ম্যানেজ করে দিবো নাকি(তাচ্ছিল্যের সুরে)
রিমনঃ মিষ্টু প্লিজ চুপ করো!আর সহ্য করতে পারছি না।রিমার আমার বোন হয় মিষ্টু…(মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে)
মিষ্টুঃকেন? অসহ্য কর কিছু বলছি নাকি?শুধু আপনার কথা গুলোই তো আমি রিপিট করছি।
রিমাঃ( মাটিতে বসে কাঁদছে..).
মিষ্টুঃআজ আপনি শুধু রিতুকে না নিজের বোনকে আর মাকে সাথে যে আপনার বউ হবে তাকেও অপমান করছেন!নিজের বোন মেয়ে আর অন্যের বোন মাল তার ফিগার পুরাই আগুন তাই না!আমি মেয়ে হয়ে আপনার বোনের ওড়নাতে দিয়েছি তাই তেড়ে আসছেন আর আজকে একটা অসহায় মেয়েকে রাস্তাতে ওড়নাটাই কেড়ে নিয়েছিলেন। জানেন মেয়েটি কত কষ্ট করে টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালায়!বাবার খান আর বখাটে সেজে মেয়েদের ফিগার দেখে বেড়ান আচ্ছা আপনাদের বিবেকে বাঁধে না।একবারো মনে হয় না আপনার বাড়িতেও বোন আছে…..।আপনি যে আজ এমন করে রিতুকে কাদালেন রিতুর চোখের পানি আপনার বোনের জীবনে অভিশাপ হয়ে আসবে না বা কাল রিমা রেপ হবে না এর গ্যারান্টি দিতে পারবেন।ভাইয়া পারবেন না…(রিমনের দিকে আঙ্গুল তুলে!রেগে গিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো)
রিমনঃআমি সরি আর এমন হবে না( মাথা নিচু করে কাঁদছে,সাথে ওর চ্যালাপ্যালা গুলোও)
রিমাঃ( মাটিতে বসে কাঁদছে! কারন ওর ভাই এভাবে মেয়েদের সাথে নোংরা বিহেভ করে।আর সেটা ওরই ক্লাসমেটের সাথে!এটা ভেবেই ওর মরে যেতে ইচ্ছে করছে)
–
পরে রিমন রিতুর পায়ে ধরে মাফ চাই! রিতু শুধু একটা কথায় বলে
রিতুঃবাবা অন্যের জমিতে কাজ করে!অনেক কষ্ট করে পড়াশোনার খরচ চালায় আমি!এখানে এসেছি পড়াশোনা করে কিছু করে সংসারের হাল ধরবো এজন্য! ভাইয়া আমরা মেয়েরা খুব অসহায় তাই বলে এভাবে বেইজ্জত করবেন না।আমরাও মানুষ ভাইয়া! আজ আপনাদের মত কিছু ছেলে পুরুষত্বের জোর দেখিয়ে মজা লুটে! একটা কথায় মনে রাখবেন আপনি যাকে যা করবেন! আল্লাহ তা থেকে দিগুন সেই কাজের ফলাফল আপনার উপর চাপিয়ে দিবে।একটাই অনুরোধ ভাইয়া আর এমন করবেন না।(কেঁদে কেঁদে)
–
রিমনঃতোমার দিকে চোখ তাকিয়ে কথা বলার মত মুখ নেই!মাফ করে দিও পারলে এই মানুষরুপী জানোয়ারটাকে..(রিতুর সামনে মাথা নিচু করে)
মিষ্টুঃযদি নিজেকে শুধরে নেন তাহলে সব থেকে বেশি খুশি হবে রিমা! কারন কোন বোন তার ভাইয়ের এমন রুপ কখনোই দেখতে চাই না ভাইয়া!নিজের ভাইয়ের এমন একটা রুপ দেখার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।কারো টিজ করার আগে নিজের মা-বোনের মুখটা মনে করবেন!(রিমনে দিকে তাকিয়ে)
রিমনঃহুমম! আমাকে মাফ করে দিও তোমরা।আর বোন(রিমা) কোনদিন যদি একজন ভাল ছেলে হয়ে আর ভাল ভাই হিসেবে নিজেকে গড়তে পারি তাহলেই তোর সামনে আসবো তার আগে না।
(চোখ মুছতে মুছতে চলে যায়)
–
(রিতুর কথা ভেবেই কলেজের কাউকে জানতে দেয় নি মিষ্টু! আর মিষ্টুর উদেশ্য রিমনকে অপমান করা না শুধু বোঝানো যে একটা মেয়েকে তো এমন ভাবে নোংরা কথা বললে মজা নিতে ভালোই লাগে বাট সেইম জায়গাতে বোনকে দেখলে কেমন লাগে। মিষ্টু চাইলে আরো বড় ধরনের স্টেপ নিতে পারতো বাট এটা জানাজানি হয়ে গেলে রিতু, রিমন,রিমা তিনজনই সমালোচনার পাএ হতো। এজন্য মিষ্টু এভাবে সমাধান টা করছে)
–
রিমাকে মিষ্টু মাটি থেকে তোলে তারপর জড়িয়ে ধরে সরিও বলে।রিমা রিতুর সামনে হাত জোড় করে মাফ চাই,এগুলো নিরিবিলি একটা গাছের নিচে হলেও মিষ্টু যখন রিমা ওড়না ধরে টান দিবে তখনই স্যার দেখে আর উনার কেবিনে গিয়ে পিয়নকে দিয়ে মিষ্টুকে ডাকতে পাঠায়!মিষ্টু গিয়ে দাড়াতেই মুহিত আসে আর বাকিটা তো উপরে পড়ে বুঝছেনই।মুহিত স্যারের দিকে তাকিয়ে বললো…
–
মুহিতঃএবার কি বলবেন স্যার!আমার বোন গুন্ডী গিরি করতেই কলেজে আসে।আমার বোন কিনতু ছেলেটার গায়ে হাত দেয় নি বরং বুঝিয়ে বলছে! আপনি না জেনে এত কথা তাহলে কেন শুনালেন আপনি তো একজন প্রোফেসর! আপনি চোখে যা দেখলেন তাই সত্যি বলে ধরে নিলেন এর পেছনেও কিছু থাকতে পারে এটা একবারো ভাবলেন না।তবে যাই বলেন এই অসভ্য বোনটাকে নিয়েই আমি গর্ববোধ করছি।আমি নিজে ওখানে থাকলে ওই রিমনকে মেরে ফেলতাম বাট আপনার ভাষায় এই অসভ্য মেয়েটাই তার বুদ্ধি দিয়ে সমাধান করে দিয়েছে..আজ আপনি আমার সামনে আমার কলিজার টুকরোকে অসভ্য. অভদ্র, বেয়ারা,গুন্ডী বলছে আপনার জায়গাতে অন্য কেউ থাকলে তার কি করতাম নিজেও জানিনা। (স্যারের দিকে তাকিয়ে)
চলবে…
(আমি কিন্তু রিমনের মত ছেলেদের কিছু কথা তুলে ধরছি!সব ছেলেকে দোষারোপ করি নি।তাই কেউ বকবেন না!আর কোন ভুল কিছু বললে মাফ করবেন)