‘সিক্ত সুভানুভব’
[০৯]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
রোদ ওর রাগ কনট্রোল করতে পারছে না,সোফাতে থেকে উঠে ওর চেয়ারে বসে পড়ে, আর চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলতে থাকে,,
রোদঃআলো তুমি কোথায় হারিয়ে গেলে,আমাকে এভাবে কেন ফাঁকি দিলে,আমাকে একটা বার সুযোগ দিতে,তুমি তো হারিয়ে গেলে কিন্ত আমাকেও এভাবে বদলে দিলে কেন?হুট করে আমার জীবনটা কোন এত মায়াতে বেঁধে আবার চলে গেলে তুমি।
–
রোদ কিছুক্ষন থম মেরে বসে থাকে তারপর ফাইল দেখা শুরু করে,কারন কাজের মধ্যে ডুবে থাকলেই ও ভাল থাকবে।আর ওদিকে রোদের আম্মু মেঘকে বকতে আছে,একটা সময় উনি কেঁদে দেয় কারন না কথা শুনছে রোদ আর না মেঘ।ওর আম্মু কাঁদছে আর মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,মেঘ ওর আম্মু গলা জড়িয়ে ধরে,,
–
মেঘঃ আম্মু আমি বেশি ব্যাথা পায় নি,তুমি এভাবে কেদো না প্লিজ।তুমি কাদলে যে আমারো খুব কষ্ট হয় আম্মু,
–
আম্মুঃতোরা কেউ আমাকে ভালবাসিস না,যদি আমাকে ভালবাসতি তাহলে তোরা বার বার আমার কথা অমান্য করতে পারতি না,রোদও আর আগের মত আমাকে ভালবাসে না,ওকে বিয়ের কথা বললাম বাট রোদ হুট করে মুখের উপর না করে দিয়ে চলে গেল।
–
মেঘঃওহহ বিয়ে করলে হবে তাই তো,,আচ্ছা তুমি মেয়ে খোঁজো তুমি যতজন কে বলবে আমি ততজনকে বিয়ে করবো,তাও তুমি এখন এভাবে কেদো না,,
–
আম্মুঃ তোকে বিয়ে করতে বলিনি ফাজিল ছেলে,তোর দাভাইকে বলছি।
–
মেঘঃওহহ আমি ভাবছি আমাকে বিয়ে করতে বলছো,আচ্ছা দাভাইকে বিয়ে করার জন্য রাজি করাতে হবে তাই তো
–
আম্মুঃহুমম আমি চাই ও ভালো থাকুক সুখে থাকুক,কিন্ত রোদ তো বিয়ের কথা শুনতেই রাজি না,ওকে আমি কিভাবে রাজি করাবো
–
মেঘঃতুমি তো আমার আম্মু টিপিক্যাল মাদারের মত কেদো না তো,,তোমাকে হতে হবে আপডেট মাদার,আপডেট শাশুড়ি, আপডেট দেম্মা (দাদীমা),তোমার ছেলেকে রাজি করানোর জন্য বুকের ব্যাথার নাটক শুরু করে দিলেই তো পারো,এভাবে না কেঁদে মাথা বুদ্ধিতে শান দাও আম্মুনি,,
–
বাপিঃবাপ আমার তুই এত বুদ্ধি কই রাখিস,তোর মত হিটলার ছেলে থাকতে আমরা এসব নিয়ে চিন্তা করছিলাম এতক্ষণ বসে,,,রোদের আম্মু মেঘ কিন্ত একদম ঠিক বলছে,রোদের দূবল পয়েন্ট এখন হচ্ছো তুমি,, ছেলের ভালো জন্য আমাদের যতটুকু করার দরকার আমাদের করতে হবে।
–
আম্মুঃমেঘ তুই এত সহজে বুদ্ধি বের করলি কিভাবে?আমার মাথাতে তো আসে নি,,
–
মেঘঃ সন্ধ্যায় পড়তে বসার ভয়ে,তোমার পাশে বসে বসে সিরিয়াল গুলো দেখতে এখতে এসব অভিনয় মাথাতে এখন এমনিতেই চলে আসে।
–
বাপিঃ এটা ঠিক বলছিস
আম্মুঃতোকে এখন আর কিছু বললাম না,মাফ করে দিলাম
মেঘঃ আচ্ছা বাপি কিছু টাকা দাও এবার,আমার বুদ্ধি দাম নেই নাকি,,,শোন টাকা দাও তা না হলে, দাভাইকে বলে দিবো আমার থেকে বুদ্ধি ধার নিয়ে তোমরা দাভাইকে ফাসানোর চেষ্টা করছো,
–
বাপিঃ আচ্ছা রোদের আম্মু এই মেঘটাকি সত্যি আমাদের ছেলে,আমার মাঝে মাঝে ডাউট হয় জানো তো
–
আম্মুঃকি? তোমার এত বড় সাহস তুমি আমাকে অপবাদ দিচ্ছো,আমি আর থাকবো না তোমার সাথে তুমি থাকো তোমার দুই ফাজিল ছেলের সাথে,,তুমি এই বয়সে এসে আমাকে ডাউট করছো
–
বাপিঃআরে কিউটি তুমি আমাকে ভুল বুঝছো,আমি বোঝাতে চেয়েছি মেঘের মত এমন একটা ছেলে আমাদের হলো কি করে?আমাদের বংশে আর এমন একটা ছেলে হয়েছে কি না? আমার জানা নেই,,এজন্য বললাম আর তুমি উল্টো বুঝে বসে থাকলে,,,
তুমি বুঝতে ভুল করছো,,
–
মেঘঃএই যে কিউটির জামাই টাকা দাও নইতো দাভাইয়ের কাছে ফোন চলে যাবে
–
মেঘ ওর বাপির থেকে টাকা নিয়ে ওর মাকে বুকে ব্যাথার নাটক শুরু করতে বললো,মেঘের বাপি শুধু মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে,মেঘ ওর আম্মু দিকে তাকিয়ে রোদকে ফোন দিলো,,
–
রোদঃ আম্মু আমি একটু বিজি আছি,একটুপর তোমাকে ফোন দিচ্ছি আমি মিটিংয়ে আছি,,
–
মেঘঃদাভাই আমি মেঘ,তুমি তারাতারি বাসায় চলে এসো আম্মুর নাকি বুকে খুব ব্যাথা করছে,এতক্ষণ তোমাকে ফোন করতে চেয়েছি কিন্তু আম্মু করতে দেয়নি,আমি বাসাতে একা একা তুমি তারাতারি এসো,,আমার ভয় করছে দাভাই
–
রোদঃমেঘ আম্মু বুকে ব্যাথা কখন থেকে আর বাপি কোথায়?
–
মেঘঃবাপির নাকি চিংড়ি, ইলিশ মাছ খেতে মন চাচ্ছে এজন্য তুমি বের হওয়া পর পর নিজে বাজারে গেছে এগুলো আনতে,বাসায় ফোন রেখে গেছে এজন্য বাপিকে আমি জানাতে পারছি না।
–
বাপিঃ(এটাও দেখার বাকি ছিলো)
রোদঃমেঘ তুই আম্মু দিকে খেয়াল রাখ,আমি এখুনি আসছি বাসাতে তুই একদম চিন্তা করিস না আম্মুর কিছু হবে না।
–
মেঘঃ আচ্ছা দাভাই
–
মেঘ কল কেটে দেখে ওর বাপি আর আম্মু ওর দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে,মেঘ ওর বাবাকে বলে সত্যি বাজারের কাউকে পাঠাতে বললো,,
–
(মেঘের ওগুলো ইচ্ছে করছে এজন্য ওর বাবার ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দিল
রোদও যাতে এসবের কিছু ধরতে না পারে এজন্য),
–
মেঘ ওর আম্মুকে শুয়ে দিল আর রোদের গাড়ির শব্দ শুনলে কাঁদতে শুরু করতে বললো।
রোদ মিটিং করা এখন আর পসিবল না,আমার বাসায় যেতে হবে বলে ওর গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলো।রোদ খুব দ্রুত ড্রাইভ করে বাসায় আসলো, এসে দেখে ওর আম্মু বেডে চোখ বন্ধ শুয়ে আছে, আর পাশে মেঘ আর ওর বাপি বসে আছে।রোদ দৌড়ে ওর আম্মুর কাছে গিয়ে,,
–
রোদঃও আম্মু তোমার কি হয়েছে?আম্মু তোমার শরীর ঠিক আছে তো,, হুট করে এমন হলো কেন?আম্মু,, আম্মু,,
–
বাপিঃতোমার এসব না চিন্তা করলেও চলবে,তুমি যাও এখান থেকে তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে কে বলছে?,,(গম্ভীর হয়ে)
–
রোদঃবাপি এসব কি বলছে তুমি?আমি না ভাবলে কে ভাববে?আর তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেন?
–
বাপিঃতোমার আম্মু এই অবস্থা শুধু তোমার জন্য, তোমার কারণে এত টেনশন করে এখন অসুস্থ হয়ে পড়ছে,তুমি যাও এখান থেকে কারন তোমার কাছে তোমার জেদটাই বেশি, সো তোমাকে এবিষয়ে না ভাবলেও চলবে।আর ডাক্তার এসে বলে গেছে এভাবে চললে বড়কিছু একটা হয়ে যেতে পারে,,
–
রোদ ওর আম্মু পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
–
রোদঃ আম্মু তুমি যা বলবে তাই হবে,আমি আর একটা কথাও তোমার অমান্য করবো না আম্মু, তাও প্লিজ তুমি আর টেনশন করো না আম্মু, তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি মারা যাবো আম্মু।তুমি মেয়ে দেখো আমি বিয়ে করবো,,
–
এতটুকু বলে রোদ চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হয়ে গেলে,আজকে রোদের খুব কষ্ট হচ্ছে, একটা ছেলে এত সহজে কাঁদতে পারে না,যখন কষ্ট আর নিতে পারে না। তখন তাদের চোখে কয়েক ফোটা পানি গাড়িয়ে পড়ে,বিয়ে করবো কথাটা বলতে রোদের খুব কষ্ট হয়েছে, কারণ এই মনে যে অন্য কারো বসবাস, অন্য কাউকে নিয়ে বুনেছে না জানা,না বলা হাজারো সপ্ন।রোদ চলে যাওয়ার পর রোদের আম্মু উঠে বসে আর কাঁদত কাঁদতে বলে,,
–
আম্মুঃআমি সরি রোদ,এটা ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিল না বাবা,আমাকে মাফ করে দিস বাবা, তোর ভালোর জন্য আমাকে এত অভিনয় করতে হলো বাবা, আমি সত্যি সরি।
–
রোদ ওর রুমে গিয়ে বেডে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো, আর বিড়বিড় করে বলছে,,
–
রোদঃআজ কেন জানি তোমার কথা খুব বেশি মনে হচ্ছে, তোমার মায়াবি মুখটা বার বার মনে হচ্ছে, আমি কি করে তোমার জায়গাতে অন্য কাউকে বসাবো, আলো তুমি কোথায় চলে গেলা,আমি আর নিতে পারছি না।
–
রোদ এভাবে শুয়ে থেকে আলোর কথা ভাবতে ভাবতে ওইভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে,প্রায় দুই ঘন্টা ঘুমানোর পর,মেঘ এসে রোদকে ডাকতে থাকে,মেঘের ডাকে রোদের ঘুম ভাংগে, রোদের চোখ লাল হয়ে আছে,মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে, রোদকে বলে এর আম্মু নাকি ডাকছে,রোদ মেঘকে বলে রোদ ফ্রেস হয়ে আসছে,কারন রোদ জানে এইভাবে রোদ ওর আম্মু সামনে গেলে ওর আম্মু আরো মন খারাপ করবে,কষ্ট পাবে,রোদ উঠে ওয়াশরুমে গেল সাওয়ার নিতে।রোদ সাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে মনে মনে বলছে,,
–
রোদঃ আম্মু আমি তোমার আর কোন কথা অমান্য করবো না,তুমি যা বলবে তাই হবে।আমার যতই কষ্ট হোক, তোমাকে আমি বুঝতে দিবো না,আমি আমার সব কষ্ট আমার মাঝে রাখবো,আমার জন্য তোমার কোন ক্ষতি আমি হতে দিবো না।কথা দিলাম
–
রোদ সাওয়ার নিয়ে ওর আম্মু কাছে গেল,ওর আম্মু ওর দিকে তাকিয়ে আছে।রোদ ওর মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে,ওর আম্মু রোদের মাথা হাত বুলিয়ে দেয়।রোদ ওর আম্মুকে বলে,,
–
রোদঃ আম্মু তুমি মেয়ে দেখো আমি বিয়ে করবো,আমি তোমার সব কথা রাখবো তবুও তুমি আর টেনশন নিও না।
–
আম্মুঃ সত্যি রোদ, তুমি বিয়ে করতে রাজি,,, আছো,,আলহামদুলিল্লাহ,,
–
রোদঃহুমম যাকে বলবে আমি তাকেই বিয়ে করতে রাজি আছি,আমি আর কোন আপওি নেই।
–
আম্মুঃমেয়ে ঠিক করে রেখেছি আমি,ওকে খুব ভাল করে চিনি খুব ভালো একটা মেয়ে,তোমার জন্য পারফেক্ট একটা মেয়ে,,ওর ছবি আছে আমার কাছে দাঁড়াও তোমাকে দেখায়।
–
রোদঃআমার দেখতে হবে না,তোমার পছন্দ হলেই হবে।বিয়ের ডেট ঠিক করে আমাকে জানিও।
–
আম্মুঃহুমম তাহলে আমি ওর বাসায় কথা বলি কেমন,আর বিয়ের ডেট যত তারাতারি সম্ভব আমি ঠিক করতে বলি।
–
রোদঃহুম আর আম্মু চল লাঞ্চ করবে,আমি সাহেলাকে এখানে দিতে বলছি।আমি আমাকে একটু অফিসে যেতে হবে
–
(এটা বলে রোদ চলে যাচ্ছিলো,কিন্তু রোদের আম্মু রোদকে আবার পিছু ডাকলো,,)
–
আম্মুঃহুমম,,, রোদ
রোদঃজি আম্মু কিছু বলবে,,
–
আম্মুঃমেয়েটার নাম ইব,,,ন,,
রোদঃথাক বলতে হবে না,,,, পরেও তো জানা যাবে,,
–
রোদের আম্মুর রুম থেকে রোদ বের হয়ে লাঞ্চ করে অফিসে চলে গেল,রোদ কোন রকম খুব সীমিত খেয়েছে কারন ওর গলা দিয়ে কিছু নামছে না।আবার না খেলে ওর আম্মু কষ্ট পাবে।
রোদ অফিসে গিয়ে কিছু কাজ সেরে নিল তারপর বিকাল ৫ টার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে, একটা লেকের পাশে গিয়ে বসে পড়লো।
–
ওদিকে রোদের আম্মু পাএীর বাসায় কথা বলে,পাএী আম্মু রোদের আম্মুর বান্ধবী।রোদের আম্মুর খুশির শেষ নেই,রোদের আম্মু আর আব্বু মেয়ের বাসাতে গিয়ে বিয়ের ডেট ঠিক করে এলো,রোদকে ফোন দিয়ে যেতে বলছিলো কিন্ত রোদ না করে দিসে আর ওদের যেতে বলছে।রোদের বিয়ের ডেট ঠিক করছে আর চারদিন পর মানে শুক্রবার।রোদের বাপিরা ওখানে গিয়ে সবকিছু ঠিক করে আসলো।রোদ একা একা লেকের পাশে বসে আছে আর ভাবছে,,
–
রোদঃমানুষের জীবনটা বড়ই অদ্ভুত,যা চাই তা পায় না আবার যা চায়না সেগুলোই এসে হাতের কাছে ধরা দেয়।আমি নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি আলো,তবে তোমার নামটা আমার মনে খোদাই করা থাকবে,কোনদিন যদি দেখা হয় তোমার সাথে,তাহলে তোমার কাছে একটা কথার উওর চাইবো যে
,,,, এভাবে কেন হারিয়ে গেলে,আমার ভুলটা কি ছিলে,,,,
তোমাকে কখনো আমি অভিশাপ দেয়নি আলো,আর দিবোও না।যেখানে থাকো খুব ভাল থাকো, তোমার জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল।আর আমিও নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি, আমার জন্য দোয়া করো।তবে আল্লাহর কাছে আমি এই তিনটা বছর একটা জিনিসই চেয়ে এসেছি,আমার মৃত্যুর আগে যেন,তোমার সাথে আমার একটাবার দেখা হোক।আমি মন থেকে এটাই চাই।
–
রোদের আম্মুরা বাপি বাসায় এসে বিয়েতে কি হবে না হবে এসব আলোচনা শুরু করে দিল,আর বিয়ের কার্ড বানানোর অর্ডার করলো,রোদের বাপি রোদকে বিয়ের কার্ড চুজ করে দিতে বলছে বাট রোদ এড়িয়ে গেছে,রোদের আম্মু শপিংয়ের জন্য লিষ্ট করা শুরু করলো,,,
–
চলবে,,