‘সিক্ত সুভানুভব’
[২১]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
আলোরা ওদের বাসায় পৌঁছে যায়,রোদ সবাইকে সারাম দেয় আর সবার সাথে কথা বলে। আলোর বাবা ও মা রোদের সাথে নিজের ছেলের মত ব্যবহার করছে রোদ আলোর বাবা মায়ের সাথে গল্প করছে কিছু সময় হয়ে গেল, বাট আলো আর মেঘের কোন খোঁজ নেই,রোদ আশপাশ তাকিয়ে ওরা আছে কি না বোঝার চেষ্টা করলো বাট ওদের সাড়া শব্দ নেই,আলোর বাবা রোদকে আলো রুমটা দেখিয়ে দিল আর একটু রেস্ট নিতে বললো,রোদ আলোর রুমে গিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
–
আলোর রুমে পুরো দেওয়ালে রোদের ছবি,সেগুলো বিভিন্ন জায়গাতে তোলা আর সেটা এক একটা একেক সময়ের।
রোদ ঘুরে ঘুরে সব দেখছে।আলো যে খুব গোছাগোছ একটা মেয়ে সেটা রুম দেখেই বোঝা যাচ্ছে,রুম কেউ খুব সৌখিন ভাবে খুব ভালবেসে সাজিয়েছে।রোদ বেডে আধাশোয়া হয়ে শুয়ে পড়লো,,আর মনে মনে ভাবতে লাগলো,,
–
রোদঃ কেমন বে আক্কেল মেয়েরে বাবা, আমাকে একা রেখে কোথা হারিয়ে গেছে?এমনিতেই অচেনা জায়গা তারপর এভাবে একা রেখে যাওয়ার কোন মানে হয়,আর বানর মেঘটাই বা কোথায় কে জানে?শশুড়বাড়ি এসে এই মেঘ কি না কি করে বসে আর আমাকে না লজ্জায় পড়তে হয়।উফফ আর এই মেয়েটার কমন সেন্স বলতে কিছু নাই।
–
রোদ ফোন বের করে ফেসবুকিং করা শুরু করলো,১৮মিঃ পর ও দুজনেই হাজির হয় ট্রে ভর্তি হরেক রকমের নাস্তা
নিয়ে,রোদ দুজনকে দেখেও না দেখার ভান করে থাকে, আলো আর মেঘ দুজনে বসে খাচ্ছে আর দুজনে কি জানি বিরবির করছে।রোদ উঠে বসে আর দুজনেই রোদের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দেয়, রোদ সিওর যে এরা দুজন কিছু ঘোট পাকিয়েছে।মেঘ কিছু খাবার নিয়ে আলোর বাবা আর মায়ের কাছে চলে গেল, মেঘ খুব মিশুক অলরেডি আলোর বাবা মাকে একটা মায়াতে ফেলে দিসে।মেঘ রুম থেকে বের হতেই রোদ আলোকে বেডের সাথে চেপে ধরে,রোদ এমন কিছুরই অপেক্ষায় ছিলো। রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে বলছে,,
–
রোদঃআমাকে একা রেখে কোথায় গিয়েছিলে?তোমাকে বলি নি আমাকে এভাবে একা রেখে যাবে না। তারপরেও গেলে কেন?
আলোঃ মেঘ এসে পড়বে ছাড়ুন, আমি তো মেঘকে আমাদের পুরো বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলাম।উফফফ আগে ছাড়ুন তারপর বলছি।
রোদঃ আমাকে বলে গেলে কি হতো শুনি?এর মাশুল তো দিতেই হবে তোমাকে?একটা কিস করো তা না হলে ছাড়া পাবে না।
আলোঃ মেঘঘঘঘ(চিৎকার করে)
রোদঃওকে ওকে থাক লাগবে না।
–
ওদিকে আলোর বাবা আর মা বসে আছে,আর আলোর বাবার কোলে বসে মেঘ মিষ্টি খাচ্ছে,আর হাজার রকমের গল্প জুরিয়ে দিচ্ছে।মেঘের কথা শুনে বাকিরা সবাই হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরার উপক্রম।রোদ আলোকে ছেড়ে দেয়,আলো খাবার গুলো খাওয়ার জন্য ইশারা করে। রোদ মুখ গোমরা করে উল্টো ঘুরে বসে পড়লো,আলোর রোদের গাল ধরে ওর দিকে ঘুরিয়ে একটা কিস করে দৌড় দেয়। রোদ হেসে দেয়,,,, রোদ উঠে খাবার গুলো সেন্টার টেবিলের উপর রেখে দেয় কারন ওর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।আলো মা আরো দুইজন বুয়া,আলো মেঘ,সহ রান্না ঘরে আছে সবাই গল্প জুড়ে দিয়েছে আর সবাই মধ্যে মনি হচ্ছে মেঘ, সাথে আলোর বাপিও আছে।
–
রোদ রুমে থেকে ওদের হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছে, রোদ উঠে ওদের কথার শব্দ অনুসরণ করে রান্না ঘরে যায়।রোদকে দেখে বুয়া দুইটা কেমন আনইজি ফিল করে। রোদ ও রান্না ঘরে ঢুকে আলোর বাবা মায়ের মত বুয়াদেরও সালাম দেয়,উপস্থিত সবাই চোখ বড় বড় তাকায় রোদের দিকে,,সবার তাকানো দেখে রোদও নিজের দিকেই তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ওকে এভাবে সবাই দেখছে কেন?
–
রোদঃআসসালামু আলাইকুম
খালা আমি আপনাদের সালাম দিলাম, উওর পেলাম না তো।
আলো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল।
রোদঃআমি কি এখানে এসে ভুল করলাম?এভাবে সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছ কেন?
সাহেদা আর রোকেয়াঃওয়ালাইকুমুস সালাম স্যার, ভালো আছেন।আরে না স্যার আপনি কোন ভুল করেন নি।
রোদঃখালা আমাকে স্যার বলে লজ্জা দিবেন না প্লিজ, আমাকে রোদ বলেই ডাকবেন।আর স্যার বলে এভাবে পর করে দিবেন না। আপনারা আমার অনেক বড়,,,তাই স্যার ডাকবেন না।
সাহেদা খালাঃআমরা এই বাসায় কাজ করি, আপনাকে নাম ধরে কেমন করে ডাকি স্যার।
রোদঃআমাদের বাসাতেও যে কাজ করে সাহেলা খালা অামাকে রোদ বাবা বলে ডাকে,আপনারাও তাই ডাকবেন, আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না এটাই ফাইনাল।
আলোঃ রোদ একদম ঠিক বলছে,,, আর কোন কথা না তোমরা ওকে রোদ বাবা বলেই ডেকো।
রোকেয়া খালাঃরোদ বাবা তুমি এত বড় ঘরের ছেলে হয়েও তোমার অহংকার নেই বাবা,আমরা নিম্নবিত্ত অন্যদের বাসায় কাজ করি আমাদের এত সন্মান কেউ দেয় না বাবা,অনেক অনেক খুশি হলাম বাবা।তোমার জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল।
রোদঃধন্যবাদ,,,,তা কি কি রান্না হচ্ছে শুনি?আমি কি কোন সাহায্য করবো তোমাদের।যদিও আমি কোন কাজই পারি না
আলোর আম্মুঃনা বাবা তোমাকে কোন সাহায্য করতে হবে না,আমাদের সব কাজ প্রায় হয়ে গেছে।তুমি গিয়ে বসো।
আলোঃ কাজ করবেন তাহলে আসুন আমার সাথে,এই শসার খোসা গুলো ছাড়ান তাহলেই হবে।
রোদঃওকে আজকে সালাডের প্লেট আমি সাজাবো,
আমি নিজে হাতে বানাচ্ছি কেমন,আমাকে শসা,টমেটো, গাজর,পেয়াজ, ধনেপাতা সব দাও।
মেঘঃ ভাল করে ধুয়ে করো দাভাই, আর খাওয়া যাবে তো,
,তুমি এই কাজ করো না ছেড়ে দাও দাভাই,পরে হাত কেটে কান্না করতে শুরু করলে আবার আমি লজ্জাতে পড়বো,,,,,
রোদঃ তোর মত ভাই থাকতে শএুর দরকার নাই ভাই,শশুড়বাড়িতে এসোও সবাই সামনে এভাবে ইজ্জতের ফালুদা করে দিচ্ছিস।
বাকিরা সবাই হাসতে লাগল।
আলোঃআমি আছি তো মেঘ চিন্তা করো না।
–
ওরা সবাই কত আনন্দ করছে সাথে হাসি, দুষ্টমি তো আছেই, আলোর বাবা মায়ের এসব দেখে ওদের প্রাণ জুরিয়ে যাচ্ছে। ওদের জীবনে যে এমনও দিন আসবে ওরা কল্পনা করে নি,আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায় আর রোদের আম্মুর/আব্বুর জন্য মন থেকে দোয়া করেন।আজ ওদের জন্য বাবা মা ডাক শুনতে পাচ্ছে, বাড়িতে এমন সুখের হাট বসেছে।ওদিকে ডায়নিং টেবিলে ওরা তিনজন রোদ,মেঘ আর আলো মিলে সালাড বানানোর কাজে লেগে পড়ছে,আর কি হাসাহাসি তাদের।রোদের তো পেয়াজ কাটতে গিয়ে অবস্থা খারাপ এটা দেখে বড়রা মুখ টিপে টিপে হাসছে,আলো আর মেঘ তো হেসে লুটোপুটি খাচ্ছি। আলোর আম্মু রোদকে নিষেধ করছে তাও রোদ শুনছে না।একটা সময় অনেক যুদ্ধ করে রোদ সব কাটে,যদিও শসা,গাজর,টমেটো সব এবড়োথেবড়ো করে কাটা,কোনটা মোটা কোনটা চিকন।
–
রোদের এমন এবড়োথেবড়ো করে কাটাতে, কারো কোন অভিযোগ নেই,রোদ যে নিজে থেকে ভালবেসে এটা করছে এটাই অনেক।রোদ যে এতটা সহজে কারো সাথে মিশতে পারে আলোর এটা জানা ছিলো না,আজকে আলো রোদের নতুন একটা রুপ দেখলো, আর রোদ যে বুয়াদের সাথে এত আন্তরিক ভাবে মিশবে সত্যি সবাই অবাক হয়েছে ।আলো সত্যি খুব প্রাউড ফিল করছে রোদের জন্য।রোদ আর মেঘ আলোর রুমে মারামারি তে বিজি আর আলো ওর বাবা মায়ের সাথে কথা বলে আর জানাই আলো অনেক ভাল আছে ওই বাড়িতে,,,এতে উনারাও সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কারন এখন উনারাই আলোর বাবা মা। আর প্রতিটা বাবা মা যেমন চাই তাদের মেয়ে ভাল থাকুক সুখে থাকুক তেমনি উনারাও চাই।
–
ওরা দুপুরে খাওয়া -দাওয়াত করে আর রেস্ট নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়ে রোদদের বাসার উদেশ্য। আলোর মনটা ভালো নেই বাবা মা ছেড়ে চলে আসছে, তার উপরে রোদও রাঙামাটি চলে যাবে,,,আলো সব ভেবে মনটা খুব খারাপ।মুখ গোমরা করে বসে আছে।রোদরা বাসায় পৌঁছে যায় রোদ আর মেঘ যে যার রুমে চলে যায় আর আলো রোদের আম্মুর সাথে কথা বলে ওই বাড়ি থেকে অনেক খাবার দিয়েছে সেগুলো রান্না ঘরে রাখে আর নিজেও ফ্রেস হতে রুমে যায়।আলো রুমে গিয়ে দেখে রোদ বেডে আছে, আর বেডের বাইরে পা রেখে দুইহাত মেলে দিয়ে শুয়ে আছে,, ড্রেস Changeও করে নি।আলো গিয়ে রোদের বুকের উপর শুয়ে পড়ে আর রোদের আলোর দিকে তাকায় আর একগাল হেসে বুকের সাথে চেপে ধরে, একটুপর রোদ ফিল করে আলো কাঁদছে। রোদ আলোর মুখটা তুলে আর আলোর দুই গালে হাত দিয়ে বলে,,,,,
–
রোদঃএই পাগলি কি হয়েছে তোমার?এভাবে নাকের পানি চোখের পানি ফেলছো কেন?
আলোঃএতদিন তো দুরে ছিলাম এই দশটা দিন আমি থাকবো কি করে?আমার তো এখুনি দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আমি পারবো না থাকতে। আমি আর একটা মুহূর্ত তোমাকে ছাড়া থাকবে ভাবলেই আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে ।
রোদঃঅারে পাগলী মন খারাপ করে না,অফিসের কাজে আমাকে যেতেই হবে।আর তুমি এমন করলে আমি যাবো কি করে বলতো?আমার তো কাজে মনই বসবে না।এভাবে কাঁদে না আলোমনি,,,(আলোর চোখ মুছে দিয়ে)
আলোঃহুমম তবে তারাতারি আসার ট্রাই করবে,একটা কথা মনে রাখবে কেউ তোমার ফেরার জন্য অধীর আগ্রহের সাথে বসে আছে।
রোদঃহুমম রে পাগলি আমি খুব তারাতারি আশা চেষ্টা করবো,আমি যে আমার জান কে রেখে যাচ্ছি, আমাকে তো ফিরতেই হবে,তুমি মন খারাপ করো না কেমন।আর এখন উঠো আর আমাকে কিছু জিনিস প্যাক করতে হবে,তুমি আমার কিছু ড্রেস বের করো, আর আমাকে সাহায্য করো।
–
আলো আর রোদ লাগেজ প্যাক করছে, রোদ এয়ার টিকিটের খাম খুলে দেখে নিলো সব ঠিক আছে কি না?রোদের আম্মু আলোকে ডাকছিলো, আলো রোদের আম্মু ডাকছে কেন সেটা দেখতে গেল?রোদ ওর জিনিস প্যাক করে নিল জরুরি কিছু ফাইল আরো যাবতীয় কিছু জিনিস।
–
পরেরদিন সকালে রোদের ফ্রাইট।
চলবে,,!!
(গল্প তে রেসপন্স পাচ্ছি না,তাই ভাবছি দুইদিন পর পর গল্প দিবো।)