আধারে_তুমি,০৫,০৬

0
393

#আধারে_তুমি,০৫,০৬
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ০৫

” চোরের আর আসার দরকার কি ? তুমি নিজেই তো চোর হয়ে এসেছো। বাদর চোর কে দেখলে আসল চোরও পালিয়ে যাবে।” সোহা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে যায়। সোহা ঢোক গিলে সামনে তাকাতেই শানকে দেখে তার হাত পা কাপাকাপি করতে থাকে।
বুকে দুই হাত গুঁজে কঠিন চাহনি দিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সোহার তো প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সোহা হাতের উল্টো পিঠে কপাল থেকে ঘাম মুছে নিলো। জোড়পূর্বক হাসি দিয়ে বলে
” আআপনিইইই এএএএখানে ?”
শান এক ভ্রু উঁচু করে বলে
” তুমি এই প্রশ্ন আমাকে করছো ? প্রশ্নটা কি আমার, তোমাকে করা উচিত নয় ?”
সোহা কাঁপতে কাঁপতে বললো
” আআমি ! আআআমি তো টটমিকে খুঁজতে এএসেছিলাম।”
শান এগিয়ে এসে আলমারিটা বন্ধ করে দিলো। আলমারির উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পকেটে দুই হাত গুঁজে নিয়ে বললো
” আমার রুমে তুমি তোমার টমিকে খুঁজতে এসেছো ? তাও আবার কাপবোর্ডে ? টমিকে তেলাপোকা নাকি যে কাপবোর্ড লাগানো থাকার পরও ভেতরে ঢুকে যাবে ?”
সোহা শানের দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। হাত কচলাতে কচলাতে ঢোক গিলে উত্তরে বললো
” নাহ খুঁজে দেখছিলাম ভুলক্রমে ঢুকে গিয়েছে কিনা।”
শান অবাক স্বরে বলে
” রিয়েলি ? আমি এতোদিন তোমাকে শুধু বাদর জানতাম আর এখন বাদর চোর মনে হচ্ছে। আমাকে তোমার এতোটা বোকা মনে হয় ? যা ইচ্ছে বলবে আর আমি মেনে নেবো বলে তোমার মনে হয় ? নিজের পায়ের কাছে টমিকে রেখে তুমি তাকে কাপবোর্ডে খুঁজছিলে ? হাউ ফানি ইয়ার !”
সোহা জিভ কেটে টমির দিকে তাকালো। সোহার তাকানো দেখে টমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করলো। সোহা টমির কথা উপেক্ষা করে চোখ উপরের দিকে উল্টে শানের দিকে তাকালো। শান অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। সোহা ধীরে ধীরে দুই পা পিছিয়ে গেলো। দৌঁড় দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কিন্তু শান সেটা বুঝে গেলো। শান বড় বড় পা ফেলে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সোহার এবার মনে হলো শান তাকে মেরেই ফেলবে। সোহা ভয়ে ভয়ে বলে
” এটা কেমন অসভ্যতামি ? আমাকে বাইরে যেতে না দিয়েই দরজা বন্ধ করে ফেললেন কেনো ?”
শান এক পা এক পা করে এগিয়ে আসতে আসতে বলে
” এবার তোমাকে আমার কথা অবাধ্য হওয়ার শাস্তি দেবো। Special punishment for you darling.”
সোহা তব্দা খেয়ে গেলো শানের কথা শুনে।
সোহা অবাক হয়ে বলে
” ককিকিসের পানিশমেন্ট ?”
আচমকা শান সোহার বাহু ধরে টেনে দেয়ালে চেপে ধরে। সোহা চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে মনে হচ্ছে এখনি চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে। শান এক হাত দেয়ালে রেখে অন্য হাত দিয়ে সোহার কপাল থেকে গালে স্লাইড করতে থাকে। শানের কাজের সোহা বরফের মতো জমে গেলো। শান নিজেকে আরো এগিয়ে নিয়ে এলো। মুখে বাকা হাসি দিয়ে সোহার ভীতু চাহনিকে পর্যবেক্ষণ করছে। সোহা খিঁচে চোখ বন্ধ করে রেখেছে শানকে এগোতে দেখেই। সোহা শানকে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু কথা বলতে গিয়ে দেখলো মুখ দিয়ে আ আ ছাড়া কোনো কথা বের হচ্ছে না তার। সোহা ঢোক গিলে নিজের গলায় হাত দেয়। কথা কেনো বের হচ্ছে না বুঝতে পারলো না সোহা। সোহার কাঁদো কাঁদো অবস্থা দেখে শানের বড্ড হাসি পেলো। শান এবার নিজেদের মধ্যে কয়েক ইঞ্চি দূরত্বটাও মিটিয়ে দিলো। সোহার মুখের উপর এবার শানের নিশ্বাস বারি খেতে থাকে। সোহার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে শানকে এতোটা কাছে দেখে। শান সোহার কানে ফিসফিস করে বললো
” আজকের জন্য তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। তাই আজকে আর কোনো শাস্তি দিচ্ছি না। আজকের শাস্তিটা এখানেই শেষ করা হলো কিন্তু পরেরবার আর শাস্তি মাঝরাস্তায় বন্ধ করা হবে না। ফুল এন্ড ফাইন ভাবে শেষ করা হবে। মাইন্ড ইট। আমার কথা না শুনলে কি হয় পরের বার দেখবে।” শান তার কথা শেষ করে দূড়ে সরে আসে। সোহার কানে শানের কথা গুলো বাজতে থাকে। হুশ আসতেই কোনো কিছুর অপেক্ষা না করে দরজা খুলেই ভো দৌঁড় দিলো সোহা আর পেছনে টমিও দৌঁড়ে ছুটে গেলো।
শান নিশ্বাস ফেলে কাপবোর্ড লক করে তার ফোন নিয়ে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে।
এদিকে সোহা রুমে ঢুকে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। শানের কাজে একেবারে হতবাক হয়ে গিয়েছে সোহা। শান এমন কিছু করতে পারে তার ধারণার বাইরে ছিলো। সোহা বিরবির করে বলে
” এবার তো আমি পাক্কা সিউর আলমারিতে কিছু তো একটা আছেই। কিন্তু আমি আর কখনো যাবো না ওই লোকটার রুমে। আমি যেন আর উনার রুমে না যাই তাই আমার সাথে ইচ্ছে করে এমটা করলো। বজ্জাত লোক একটা !”
সোহা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর সালমা আর শাহানাজ বেগম এলো সোহার রুমে। সোহা ফোনে তার একমাত্র বেস্টফেন্ড ইতির সাথে কথা বলায় ছিলো ব্যস্ত ছিলো বিধায় তাদের লক্ষ করলো না। সোহা কথা বলতে বলতে ব্যালকনিতে চলে গেলো। শাহানাজ বেগম বেডে বসে রুমটা পর্যবেক্ষণ করলো। শাহানাজ বেগম নিঃশব্দে গা দুলিয়ে হাসলো রুম দেখে। মেয়েটা বড্ড অগোছালো। একদিনেই রুমের নকশা বদলে দিয়েছে। কথা বলতে বলতেই সোহা ব্যালকনি থেকে রুমে আসার পথে শাহানাজ বেগমকে দেখে থেমে গেলো। ইতিকে বলে ফোন কেটে দিলো। শাহানাজ বেগম সোহাকে দেখে মুচকি হেসে বলে
” কথা বলা শেষ ?” সোহা শাহানাজ বেগমের কাছে এসে বলে
” হ্যা। আপনি এসেছেন আমাকে ডাকবেন তো আন্টি !” শাহানাজ বেগম আলতো হেসে বললো
” নাহ আমি তো এমনি এসেছি। আচ্ছা বলো এই বাড়িতে কেমন লাগছে তোমার ?”
সোহা হেসে বলে
” আমার তো ভালোই লাগছে। তবে নাইসাকে দেখলাম না আজ।” সালমা তড়িঘড়ি করে বলে
” নাইসা তো পাশের বাড়ির ছেলেটার ধারে খেলতে গেছে ঘুম থেকে উঠেই। ছোটভাবি গেলো নাইসাকে আনতে গেছে। আর বড় ভাবি রান্না করতাছে। আপনার কিছু লাগলে আমারে বলবেন আপামনি। আমি সব করে দিমু।” সোহা খিলখিল করে হাসলো সালমার দ্রুত কথা বলা দেখে। শাহানাজ বেগম বলে
” সোহা রুমেই তো বসে আছো তাই তোমাকে ডাকতে এলাম। সালমা ছাদে যাচ্ছে কাপড় আর আচার নিয়ে আসতে। তুমি তো ছাদে যাওনি তাই গিয়ে ছাঁদে ঘুরে আসতে পারো তোমার ইচ্ছে হলে। বা অন্যসময় তোমার যখন ইচ্ছে যেতে পারো।” সোহা হেসে বলে
” না আন্টি আমি এখনই যাচ্ছি ছাদটা চিনে আসি। পরে যাওয়া যাবে।” শাহানাজ বেগম মাথা নেড়ে সায় দিলো।
সোহা সালমার পেছন পেছন ছাদে পৌছে গেলো।
ছাদে এসেই সোহা মুখ হা করে ফেললো। এটা ছাদ নামে কলঙ্ক বলদ মনে হলো সোহার। সোহা অবাক হয়ে বলে
” সালমা আপু ! এতোবড় আর সুন্দর একটা জায়গায় একটা গাছের অস্তিত্ব নেই ! এটা কি মানা যায় ?”
সালমা ছাঁদের অন্যপাশ থেকে কাপড় তুলতে তুলতে জোড়াল গলায় বললো
” আরে আপামনি এই ছাদেই আগে গাছের অভাব ছিলো না। প্রচুর গাছ ছিলো কিন্তু কয়েক মাস আগেই ছাদে এই গাছ ঝোপঝাড়ে একটা সাপ বেরিয়ে এসেছিলো তাই বড় বাবা সব পরিষ্কার করে ফেলেছে একদিনেই। ছোট ভাইয়ের গাছের শখ তিনিই এসবের যত্ন নিতেন সময় করে। ছাদ পরিষ্কার করার পর নিজের রুমের ছোট ছোট কয়েকটা ফুলের টব নিয়ে রেখেছেন।”
সোহা আচারের বয়াম গুলো এক তুলতে থাকে। অনেক গুলো আচারের বয়াম। এদিকে আকাশও কালো হয়ে আসছে। সালমা কাপড় গুলো নিচে রেখে এসে আচারের বয়াম গুলোও একে একে নিয়ে গেলো সোহার সাহায্যে। সালমা ঝাড়ু এনে ওড়নাটা কোমড়ে বাধতে বাধতে সোহাকে বলে
” আপা আপনি ঘরে যান। আমি ছাদটা পরিষ্কার করে আসতাছি।”
সোহা ভ্রু কুঁচকে আকাশের দিকে পর্যবেক্ষণ করে বলে
” একটু পর বৃষ্টি হবে আর তুমি এখন ছাদ পরিষ্কার করবে ? কালকে করো আজকে করা লাগবে না।”
সালমা ইতিমধ্যে ঝাড়ু দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। ব্যস্ততার সঙ্গে বলে
” না আপা আকাশের অবস্থা তো কয়েকদিন ধরেই খারাপ যাচ্ছে। দিবো দিবো করে আর পরিষ্কার করা হয়নি ছাদটা। আজকে করেই যাবো।”
সোহা ছাদের ছোট রুমটায় এরেকটা ঝাড়ু দেখতে পেয়ে সেটা এনে নিজেও ঝাড়ু দেবে বলে। সালমা মাথায় হাত দিয়ে হায় হায় করতে করতে বলে
” আরে আপা কি করেন ? খালাম্মা দেখলে আমারে ঝাড়ু দিয়ে পিটাইবো। আপনি ঘরে যান আমি করতাছি।” সোহা আগ্রহ নিয়ে বলে
” আরেহ না আমি একটু করি। আমার ছাদ পরিষ্কার করতে খুবই ভালো লাগে।” সালমা কয়েকবার বাধা দিলেও সোহা তার জেদ ছাড়লো না। সোহাও ছাদ পরিষ্কার করতে থাকে। সালমা হার মেনে নিজেও কাজে গেলে পরলো।
কিছুক্ষণ পর দুজনের কাজ শেষ হতেই সোহা ঝাড়ু ফেলে হাফ ছেড়ে বলে
” দেখোতো আমার কাজ হয়েছে কিনা !” সালমা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো সব জায়গা কিন্তু সোহা খুবই ভালো করে পরিষ্কার করেছে। সালমা বাহবা দিয়ে বলে
” আমি তো ভাবছিলাম আপনি পারবেন না কিন্তু অনেক সুন্দর করে করছেন।”
সোহা মিটমিট হেসে বলে
” আমাকে কি এতোটা অকর্মা মনে করো ? আমি তো সবই পারি তবে করি না। আচ্ছা আমি গিয়ে শাওয়ার নিয়ে আসি গায়ে ময়লা লেগেছে।”
সালমা মাথা নেড়ে সায় দিলো। সোহা রুমে এসে সাথে সাথে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো। ধুলো বালিতে বেশিক্ষণ থাকলে সোহার এলার্জি হয় তাই বেশি দেড়ি করলো না। কিছুক্ষণ পর ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে চুল মুছতে মুছতে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। কিন্তু তখনই বৃষ্টি শুরু হয়েছে একটু একটু করে। সোহা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। বৃষ্টির ধুম বাড়তেই সোহার কিছু না ভেবে হাতের টাওয়াল বেডে ছুরে ফেলে দিয়ে দৌড়ে ছাদে ছুটে গেলো। ছাদে গিয়ে সোহা বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। একটু আগেই শাওয়ার নিয়েছে সেদিকে খেয়াল নেই তার। নিজের হুশ হারিয়ে বৃষ্টিতে মেতে উঠেছে।

চলবে……….

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ০৬

একটু আগেই শাওয়ার নিয়েছে সেদিকে খেয়াল নেই তার। নিজের হুশ হারিয়ে বৃষ্টিতে মেতে উঠেছে। অনেক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজলো। ভিজতে ভিজতে ছাদে বসে পড়লো ক্লান্ত হয়ে। বৃষ্টির বেগে তাকিয়ে থাকাও খুব কঠিন হচ্ছে। পিটপিট করে আশেপাশে তাকাতেই পাশের ছাদে চোখ পড়লো সোহার। ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে হা করে একটা ছেলে তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে। সোহা ভ্রুকুটি কুঁচকে তাকিয়ে মুখটাকে লটকিয়ে ফেলে। নিজের দিকে একবার তাকিয়ে এবার নিজেও উঠে ছাদের কোণায় গিয়ে দাঁড়ালো। সেই ছাদ থেকে শানদের ছাদ প্রায় তিন, চার হাতের দূরত্ব রয়েছে। সোহা রেলিং এ হাত রেখে কিছুটা এগিয়ে জোড় গলায় বলে উঠে
” এই ছেলে এখানে হ্যাবলার মতো হা করে তাকিয়ে আছো কেনো হ্যা ?” সোহার কথা শুনে ছেলেটা ভদ্র ছেলের মতো দাঁড়িয়ে মাথা চুকলে লাজুক হাসি দিয়ে বললো
” আপু আপনি দেখতে খুবই সুন্দর। আমার আপনাকে অনেক ভালো লেগেছে।” সোহা অবাক হয়ে গেলো ছেলের কথা শুনে। ছেলেটা দেখতে লম্বা, সুন্দর আর একদম পারফেক্ট বডি তবে তাকে আপু ডাকছে কেনো বুঝতে পারলো না।
সোহা ভ্রু হাতের ইশারায় ছেলেটাকে ছাদের আরো কাছে আসতে বলে। ছেলেটাও ইশারা মতো ছাস ঘেঁষে দাঁড়ালো। সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে
” আমাকে যখন ভালোই লেগেছে তখন আপু ডাকছো কেনো আমাকে ?”
ছেলেটা মুখটা কালো বানিয়ে ফেললো। মাথা নিচু করে বললো
” আসলে আপু আমি মাত্র এসএসসি এক্সাম দিয়েছি। আর আপনি তো কলেজে পড়েন। আমার থেকে বড় আপনি তাই আপু বলেছি। নাহলে তো আপনাকে আরো আগেই প্রপোজ করে ফেলতাম।”
সোহা খিলখিল করে হেসে দিলো। ছেলেটা অনেকটা লজ্জা অনুভব করলো নিজের বোকামির জন্য। জেছে এসে বলার কি দরকার ছিলো যে পছন্দ করে !
সোহা অনেক কষ্টে নিজের হাসি কন্ট্রোল করলো। মুখে চাপা হাসি রেখে বলে
” তোমার নাম কি বলো তো ? আর আমি কলেজে পড়ি তুমি কি করে জানো ?” ছেলেটা উৎসাহিত হয়ে বলে
” আমার নাম তামিম। আমি আপনাকে সামির ভাইয়ার বিয়েতে দেখেছিলাম। তখন শান ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার কথা তিনিই বলেছেন আপনি কলেজে পড়েন আর…”
তামিমের আধকথা শুনে সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে
” আর ! আর কি ? থেমে গেলে কেনো ?”
তামিম আমতা আমতা করে বলে
” মানে ভাইয়া বলেছিলো আপনি নাকি বাদর। যেকোনো সময় খামঁছি দিয়ে বসেন তাই আপনার থেকে দূরে থাকতে।” সোহা হা করে তাকিয়ে থাকে কথা শুনে। শান তাকে এতোবড় কথা বলেছে ? কথাটা শুনে সোহার মাথা গরম হয়ে গেলো। রেগে বলে
” আমি বাদর ? উনি নিজেই তো একটা লম্বু, খাটাশ, খচ্চর, বজ্জাত লোক একটা। আমার সাথে পুলিশ গিরি দেখাতে আসে। চিড়িয়াখানায় যখ বাঘের সাথে রাত্রি যাপন করতে রেখে আসবো। তখন দেখা যাবে সাহস কতো উনার।” তামিম হা হা করে হেসে উঠে। সোহার খেয়াল আসে আরেক বাচ্চার সামনে সে শানকে বকছে। সোহা তামিমকে উদ্দেশ্য করে বলে
” এই এসব কিন্তু একদম উনাকে বলবে না। লোকটা তো খুবই খারাপ। আচ্ছা তুমি বৃষ্টিতে এখানে কি করছো সেটা বলো !”
তামিম আবারও লাজুক একটা হাসি দিয়ে বললো
” আসলে আপু আমি আপনাকে দেখেই এসেছি।”
সোহা গলা ঝেড়ে বলে
” শোনো তামিম ! আমি তোমার বড় আপু তাই সেই দৃষ্টিতেই দেখবে আমাকে। আর পড়াশোনায় মন দাও। আমি আমার মতো কিউট মেয়ের সাথে বিয়ে দেবো তোমাকে।”
তামিম এবার হাসতে থাকে। সোহা কড়া গলায় বলে
” হাসছো কেনো তুমি ?” তামিম সঙ্গে সঙ্গেই হাসি থামিয়ে ফেললো। সোহা আবারও ইশারায় একি কথা জিজ্ঞেস করতেই তামিম মিটমিট করে হেসে বলে
” আপনাকে তো আমি আপুর চোখে দেখতে পারবো না। আপনি তো আমাকে ক্রাশ। সম্মান করে আপু ডেকেছি। তবে চিন্তা করবেন না আমি অন্যদৃষ্টিতে দেখি না আপনাকে। আপনি আমার অনেক সিনিয়র। জুনিয়র হলে কিছু হলেও হতে পারতো।” তামিমের কথা শুনে সোহা আবারও হেসে দিলো। সোহা হাসতে হাসতে বলে
” যাই বলো তোমার কথা গুলো আমার খুবই ভালো লাগছে। ঠিকাছে আজকে বাসায় যাও। বেশি বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর এসে পরবে। পরে তোমার এই ক্রাশ আপু আবার তোমাকে নিয়ে চিন্তায় পরে যাবে।” তামিম লাজুক হাসি দিয়ে মাথা নেড়ে দৌঁড়ে চলে গেলো। সোহাও কাঁপতে কাঁপতে নিচে আসলো। সোহার জন্য বরাদ্দকৃত গেস্ট রুমে ঢোকার আগেই সিমি এসে সোহাকে ভেজা অবস্থায় দেখে ফেললো। সিমি।অবাক হয়ে হালকা চেঁচিয়ে বলে উঠে
” তুই বৃষ্টিতে ভিজে এসেছিস ?” সোহা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। সিমি এখনই তার বারোটা বাজাবে। সিমি দ্রুত পায়ে সোহার কাছে এগিয়ে আসে। সোহাকে টেনে রুমে নিয়ে গেলো খাটের উপর থেকে টাওয়াল দেখেই হাতে তুলে নেয়। টাওয়াল ভেজা দেখে সিমি সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
” তুই শাওয়ার নিয়ে তারপর বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়েছিলি ?” সোহা তার জিভ কাটলো। তার একদমই মনে ছিলো না সে শাওয়ার নিয়েছিলো। তবে সিমির থেকে বাঁচার জন্য জোড়ে জোড়ে মাথা নেড়ে বললো
” না, না আমি তো শাওয়ার নেইনি।” সিমি রেগে বলে
” তো টাওয়াল কি নিজেই ওয়াসরুম থেকে গা ভিজিয়ে এসে এখানে শুয়ে পরেছে ?” সোহা কথা ঘোরানোর জন্য খিলখিল করে হেসে বলে উঠে
” কি যে বলো আপু ? টাওয়াল কি একা একা ভিজতে পারে ? আর ওরা কি শুয়ে থাকতে পারে নাকি ? আমি তো ফ্রেশ হয়ে ছিলাম তাই টাওয়াল ভেজা।”
সিমি সোহার চুল মুছিয়ে দিতে দিতে বলে
” তোর কাছে কিছু থাকলে সেটা জড় বস্তু হলেও শুয়ে থাকা, নাচ, গান সব শিখে যাবে। তোর জিনিস তো তোর মতোই হবে।” সোহা মুখ বাকালো সিমির নীতিবাক্য শুনে। সিমি কাপড় বের করে সোহাকে টেনে ওয়াসরুমে ঢুকালো।

দুপুর হয়ে এসেছে কিন্তু এখনও বৃষ্টি থামার কোনো নাম নেই। রান্না শেষ হতেই বাড়ির ছেলেদের জন্য টিফিন পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ড্রাইভার কে দিয়ে। এদিকে শাহানাজ বেগমের দেওয়া আচারের বয়াম কোলে নিয়ে সোহা সোফায় বসে বসে আচার খাচ্ছে। সাথে নাইসাও রয়েছে। নাইসা একটু একটু করে আচার খেয়ে শেষ করে বার বার বলছে
” আর একটু দাও মিষ্টিপাখি।” সোহাও নাইসার মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে বার বার আচার দিচ্ছে। দুজন সোহায় হেলান দিয়ে বসে বসে টিভি দেখছে আর সোহার পাশে টমি লেপ্টে শুয়ে আছে আরামে। শাওয়ার থেকে বের হয়েউ সোহা শীতের জন্য চাদর বের করে পরে নিয়েছে। বাড়ি থেকে দূড়ে কোথাও গেলে চাদর আর টমি দুটো জিনিস সোহা কাছে থাকবেই।
নিলা রুম থেকে বের হয় নাইসাকে খোঁজার উদ্দেশ্যে। সোহা আর নাইসাকে একসাথে দেখে নিলা এগিয়ে আসে তাদের কাছে। দুজনকে চেটেপুটে আচার খেতে দেখে নিলা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে
” তোমরা এখনও আচার খাচ্ছো ? নাইসা ! তোমাকে না তোমার বাবা বেশি আচার খেতে না করেছে !” নাইসা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। সোহা ফিকফিক করে হেসে দিলো নাইসার কিউট ফেস দেখে। নিলা কড়া গলায় বলে উঠে
” তুমি হাসছো কেনো ? সিমি আমাকে বলেছে তোমার আচার, ফুচকা এসব খেলে মাঝে মাঝেই তলপেটে মারাত্মক ব্যাথা হয় আর তুমিও কেয়ারলেস এর মতো আচার খেয়ে যাচ্ছো ? এতোবেশি খেলে দেখবে পেটে ব্যাথা করছে। পরে খাবে আবার এখন একদমই না।” নিলা আচারের বয়াম নিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিলো। সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” আরে আমি তো কালকেও আসার সময় কত্তো ফুচকা খেয়েছি আমার কিছুই হয়নি।”
নিলা এক ভ্রু উঁচু করে বলে
” শানের সাথে খেয়েছো নিশ্চই !” সোহা মাথা নেড়ে হ্যা বোঝালো। নিলা মাথা নেড়ে বলে
” আগেই বুঝেছি। শান নিজেই মেয়েদের মতো ফুচকা পাগল তাই খেতে দিয়েছে। কিন্তু কালকে কিছু হয়নি বলে আজকে হবে এটার কি সম্ভবনা আছে বলো তো ?” সোহা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে
” বুঝেছি বুঝেছি তোমরা সব আপুরই দলের মানুষজন।” নিলা শব্দ করে হাসলো। নিলাও সোহা আর নাইসার সাথে টিভি দেখায় যোগ দিলো।
কিছুক্ষণ সময় কাটতেই হঠাৎ শাহানাজ বেগমের রুম থেকে কান্না আওয়াজ ভেসে আসে। সোহা আর নিলা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছুটে গেলো সেই রুমে। উপর থেকে সিমিও দৌঁড়ে নেমে এলো। শাহানাজ বেগম আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে বললো
” মায়ের অবস্থা অনেক খারাপ। আমাদের এখনই যেতে হবে। নিলা তোমার বাবাকে জানাও।” নিলা মুসফিক চৌধুরী, ইশান আর শানকে জানিয়ে দিলো। সামির মুসফিক চৌধুরীর সাথেই রয়েছে তাই আর তাকে আলাদা করে জানালো না। গাড়ি বের করতে করতে সবাই শাহানাজ বেগমের বাবার বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলো। সোহাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু অনেক জোড় করার পরও সোহা থেকে গেলো। সোহার শরীর খারাপ লাগছিলো তাই সেই বাহানায় থেকে গেলো। নিলা আর সিমি সালমা ভালো করে বুঝিয়ে গেলো আর সোহাকে দেখে রাখতে বলে সবাই প্রবল বৃষ্টির মাঝেই তাড়াহুড়োয় বেরিয়ে গেলো।
সন্ধ্যা শেষ হয়ে এসেছে। বাড়ির কলিং বেলের শব্দে সালমা ছুটে আসে। দরজা খুলতেই শানকে চোখে পড়লো। সালমা তাড়াহুড়ো করে জিজ্ঞেস করে
” ভাই নানির কি অবস্থা ? এখন কেমন আছে ? খারাপ কিছু হয়ছে ? আচ্ছা খালাম্মারা কোথায়?”
শান বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে শান্ত গলায় বলে
” আরে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস কর সব। নানির অবস্থা বেশি ভালো না তাই আজ কেউ আসবে না। মা বলেছে একটু সুস্থ হলে আসবে।”
শান সোফায় বসতেই সোহার দিকে চোখ পড়লো। টিভি চালু কিন্তু সোহা সোফায় ঘুমিয়ে রয়েছে। শান সালমাকে বলে
” কিরে সোহা এখানে কি করছে ? রুমে না ঘুমিয়ে এখানে ঘুমাচ্ছে কেনো ? তাও আবার টিভি ছেড়ে রেখে।”
সালমা সোহাকে দেখে বলে
” আপার নাকি শরীর খারাপ লাগতাছিলো তাই যায় নায় খালাম্মাদের সাথে। টিভি দেখতে দেখতে ঘুমাইছে মনে হয়। আমি ডাকতাছি।”
সালমা হাক ছেড়ে ডাকতে নিলেই শান বাধা দিলো তাকে। শান বললো
” তুই যা আমি ডাকছি।” সালমা মাথা নেড়ে চলে গেলো। শান ধীরে ধীরে দুইবার ডাকলো সোহাকে। দ্বিতীয়বার একটু নড়ে কিছু বিরবির করে আবার ঘুমিয়ে গেলো।
” সোহা !”
শান এবার গলা ঝেড়ে ডেকে উঠে। সঙ্গে সঙ্গে সোহা লাফিয়ে উঠে বসে। সোহা শানের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে নিক্ষেপ করে মাথা চেপে ধরে বসে থাকে। শান চিন্তিত হয়ে বলে
” কি হয়েছে ? মাথা ব্যাথা করছে ?” সোহা আলতো স্বরে
” হুমমম” বললো। শান বলে
” সরি। ঘুম থেকে উঠিয়ে দিলাম আমি। তুমি বসো সালমাকে বলছি কফি করে দিতে।”
সোহার মতে সোহার একটা বাজে স্বভাব রয়েছে। সেটা হলো সোহা অন্যকারোর বানানো কফি খেতে পারেনা একদমই। সোহা মাথা ধরে উঠে দাঁড়িয়ে ঘুম ঘুম গলায় বলে
” নাহ আমিই করতে পারবো। আমি অন্যকারোর বানানো কফি খেতে পারি না।” সোহা ঢুলতে ঢুলতে রান্নাঘরে চলে গেলো। শান গিয়ে রান্নাঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। সোহা শানকে খেয়ালই করেনি।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here