#আধারে_তুমি,০৭,০৮
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ০৭
সোহা ঢুলতে ঢুলতে রান্নাঘরে চলে গেলো। শান গিয়ে রান্নাঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। সোহা শানকে খেয়ালই করেনি। কফি বানানো শেষ করে সোহা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই শান তার সামনে এসে দাঁড়ালো। সোহা চমকে বলে
” কি চাই ?” শান কফির দিকে তাকিয়ে বলে
” আমিও একটা মানুষ। নিজে একা একা না খেয়ে আমাকেও তো একটু দিতে পারো ?”
সোহা মুখ বাকিয়ে বলে
” এহ ! শখ কত আপনার ! আমাকে সারাদিব বাদর বলে বেড়ান আবার আমি আপনাকে কফি বানিয়ে দেবো ? হুশ নিজেই বানিয়ে খেয়ে নিন।” শান চোখ ছোট ছোট করে তাকালো কিন্তু সোহা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে উপরে চলে গেলো। শান রুমে গিয়ে ইউনিফর্ম চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ফ্রেশ হয়ে ওই বাড়িতে ফোন দিয়ে কি অবস্থা জেনে নিলো। অনেক্ষণ ফোনের মাঝে ডুবে থাকে।
সালমা ডিনারের জন্য ডাকতেই শান ডিনার টেবিলে গিয়ে বসে। সোহাকে না দেখে সালমাকে জিজ্ঞেস করলো
” কিরে সোহা কোথায় ? ডেকে নিয়ে আয়। সোহার ভালো করে খেয়াল রাখ মা জানলে কিন্তু রাগারাগি করবে।” সালমা মাথা নাড়ালো। শানকে খাবার দিয়ে উপরে চলে গেলো। শান খাবার নিয়ে বসে থাকে। শানের একা খাওয়ার অভ্যাস নেই। থানায় ইমন এর সাথে খায় আর বাড়িতে সবাই একসাথে বসে খায়। তাই সোহার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। পায়ের শব্দ শুনেই মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে সালমা একাই এসেছে। শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” কিরে সোহা কোথায় ?” সালমা চিন্তিত হয়ে বলে
” আপামনিরে কেমন জানি লাগছে। খাবারের কথা জিজ্ঞেস করতেই বলছে মাথা ব্যাথা করে এখন খাইবো না কিছু পরে ঘুমাইয়া গেছে। গলাও কেমন শুনা গেছে।” শান চিন্তিত হয়ে বলে
” কি হয়েছে ?” সালমা মাথা নেড়ে বুঝালো জানে না সে। সালমা শানকে খাবার খেয়ে নিতে বললো। শান কিছুটা খেয়ে আর খেতে পারলো না। একা একা একদমই খেতে পারে না। সালমাকে উদ্দেশ্য করে বলে
” তোর খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আমাকে কফি দিয়ে যাবি আর সব লাইট অফ করে ঘুমিয়ে যাবি। আমি দরজা লাগিয়ে যাচ্ছি।”
সালমা মাথা নেড়ে হ্যা বোঝালো। শান তার সব কাজ শেষ করে রুমে চলে গেলো।
এখনও ঝিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছে। আজ পুরোটো দিনই বৃষ্টি হয়েছে। কিছুক্ষণের জন্যেও থামেনি। অবশ্য বৃষ্টির দিনটা খুবই মুগ্ধকর থাকে। সালমা কফি দিয়ে গেলো। শান আলমারি খুলে সেই লক করা ড্রয়ার খুলে একটা সুন্দর ডায়রী বের করলো। সেটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে বসে কফি খেতে থাকে। ডায়রী খুলতেই একটা শুখনো গোলাপ ফুলের দেখা দিলো আর সাথে কিছু লিখিত অনুভূতি। যেগুলো আজও লুকোনো ভালোবাসার এক অনুভূতি শুধু। গোলাপ ফুলটা আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো শান। পরের কিছু পেজ উল্টাতেই কয়েকটা শুখনো বেলি ফুলের দেখা পেলো। ডায়রীটাতে কিছু ফুলের সাথে কারোর প্রতি লিখিত অনুভূতি মিশ্রিত ভালোবাসা লুকিয়ে রয়েছে। সেই ব্যাক্তিটা হলো সোহা। শান পুরো ডায়রীটা একবার দেখে মুচকি হেসে ডায়রীটা বন্ধ করে নিলো। চোখ বন্ধ করে বড় একটা নিশ্বাস নিলো। ডায়রী দেখতে দেখতে কফিও শেষ হয়ে এসেছে। শান উঠে তার ডায়রীকে নিজের স্থানে রেখে দিলো। কফির শেষ চুমুক দিয়ে কফির মগ রেখে আসার জন্য বের হতেই কাচ ভাঙার শব্দ কানে বাজলো। শান পা চলা থামিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। শব্দটা কোথা থেকে এসেছে বুঝতে পেরে সোহার রুমে ছুটে গেলো। রুমের দরজায় আলতো ধাক্কা দিতেই দরজা পুরোপুরি খুলে গেলো। রুমে ঢুকতেই পায়ের সামনে ভাঙা কাচের গ্লাসটা দেখলো। শান সাবধানে জায়গাটা পেড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো। সোহার দিকে তাকাতেই দেখলো সোহা হাটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে। শান আলতো স্বরে বললো
” সোহা গ্লাস ভেঙেছে কিভাবে ?”
সোহা শানের গলা শুনেই মাথা তুলে তাকালো। সোহার চোখ জোড়া লাল হয়ে রয়েছে। সোহা কাঁপাকাঁপা গলায় বললো
” পানি খাওয়ার জন্য নিচ্ছিলাম পড়ে গিয়েছে।”
সোহার কন্ঠস্বরও অস্বাভাবিক মনে হলো শানের কাছে। শান এগিয়ে এসে সোহার মাথায় হাত রাখলো। ঠান্ডায় সোহার গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। শান বিস্ময়ের স্বরে বলে
” এতো জ্বর আসলো কি করে ?” সোহা ঠোঁট উল্টে বলে
” ওই একটু বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম তাই।” শান রাগান্বিত চাহনি দিয়ে ধমকের স্বরে বললো
” একটু ভিজলে এমন অবস্থা হতো ? জ্বরে বসে থাকতে পারছো না এখনই পরে যাবে মনে হচ্ছে আর বলছো একটু ভিজেছো ?”
শানের কথা শেষ হতে হতেই সোহার মাথা ঘুরে যায়। পরে যেতে নিলেই শান কোনো রকমে ধরে নিলো সোহাকে। শান অস্থির গলায় বলে
” দেখলে তো কি হলো ! না ধরলে এখনই মাথা ফাটতো।” শান ধমকে সোহাকে শুয়ে ব্ল্যাংকেট দিয়ে দিলো গায়ে। সোহা দুর্বল চাহনি দিয়ে বলে
” পানি খাবো আমি।” শান মাথা নেড়ে কফির মগটা হাতে নিয়ে চলে গেলো। কফির মগ রেখে সোহার জন্য পানি আর খাবার নিয়ে নিলো সাথে মেডিসিনও। রুমে আসতেই দেখতে পেলো সোহা ঘুমিয়ে গিয়েছে। শান ভাঙা কাচগুলো সরিয়ে রাখলো সাইডে। সোহাকে কয়েকবার ডাকলো কিন্তু সোহা উঠলো না। শান সোহার মুখে দুইবার পানি ছিটিয়ে দেয়। সোহা কাঁদোকাঁদো চাহনি দিয়ে শানের দিকে তাকালো। শান শান্ত ভাবে বলে
” উঠো পানি খাবে।” সোহা ভালো করে উঠে বসতে পারছে না দেখে শান ভালো করে বসিয়ে দিলো সোহাকে। পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়তে নিলে শান বাধা দিয়ে বলে
” খাবার খেয়ে মেডিসিন খেয়ে ঘুমাবে।”
সোহা মাথা নেড়ে না করলো কিন্তু শান সোহাকে জোড় করে নিজেই খাইয়ে দিতে থাকে। সোহা জ্বরে আধঘুমন্ত অবস্থায় খেতে থাকে। খাওয়া শেষে মেডিসিন খাইয়ে দেয়। সোহা পুরোই নেতিয়ে পরে। শান সব রেখে সালমাকে গিয়ে ডেকে তুললো। সালমা দরজা খুলে ঢুলতে ঢুলতে বলে
” কি হয়ছে ভাই ?” শান চিন্তিত হয়ে বলে
” সোহার জ্বর উঠেছে। আজকের রাতটা সোহার কাছে থাক। ওর কিছু দরকার হতে পারে।” সালমা মাথা নেড়ে বিনাবাক্যে সোহার কাছে চলে গেলো।
শান তার রুমে গিয়ে বসে থাকে। সোহার চিন্তায় আর ঘুমালো না।
মাঝরাতে সালমার ডাক পড়লো সোহার আগের থেকেও জ্বর মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়েছে। শান ছুটে এসে দেখে সোহা জ্বরে অতিরিক্ত কাঁপছে। আর সোহার গায়ের তাপে ছোঁয়াও যাচ্ছে না। শান সালমাকে দিয়ে পানি এনে সোহাকে জল পট্টি দিতে থাকে আর আরেকটা ব্ল্যাংকেট বের করে সোহার গায়ে দিয়ে দিলো। সোহা জ্বরের ঘরে বিরবির করে যাচ্ছে আর শান অস্থির হয়ে উঠেছে। জ্বর একদমই কমছে না সোহার। ভোর হয়ে আসতেই সোহার জ্বর ধীরেধীরে কমতে থাকে। শানের দেহে প্রাণ ফিরে আসে।
সকালে সালমার ঘুম ভাঙতেই দেখতে পায় শান সোফায় আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে আছে আর সোহা এখনও ঘুমে কাতর। সালমা ঘরির দিকে একপলক তাকিয়ে নিচে চলে গেলো। অনেক কাজ রয়েছে তার আজ আবার শাহানাজ বেগম, নিলা, সিমি কেউ নেই।
গভীর ঘুমের মাঝেই শান হঠাৎ করে চোখ খুলে ফেললো। মাথা ঝেড়ে সোহার কাছে এগিয়ে আসে। সোহার মুখটা দেখে শানের মায়া লাগলো। একদিনেই জ্বরে চোখ মুখ নেতিয়ে পড়েছে। শান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো।
ব্রেকফাস্ট করে শান সালমাকে বলে
” সোহার খেয়াল রাখিস আর ভাবি, মা কেউ আজকে আসবে না। আমার কাজ শেষ হলে তাড়াতাড়ি চলে আসবো।”
” আচ্ছা ভাই চিন্তা করবেন না। আমি আপামনির ভালো করেই খেয়াল রাখমু।” শান থানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।
সোহা একদম ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। সালমা সোহাকে দেখেই বলে
” আপা আপনার শরীর কেমন এখন ? জ্বর কমছে ? কিছু খাবেন আপা ?”
সোহা মলিন হাসি দিয়ে বলে
” না কিছু খাবো না আমি। শরীরও এখন ভালো কিছুটা।”
সালমা তাড়াহুড়ো করে রান্নাঘরে যেতে যেতে বলে
” আপনে বসেন আমি আপনার খাবার দেই পড়ে ঔষধ খাইতে হবে।” সোহা হেসে বলে
” আচ্ছা আমি গার্ডেন থেকে ঘুরে আসছি। তুমি ধীরেধীরে কাজ করো।”
সোহা হাটতে হাটতে গার্ডেনে চলে গেলো। গার্ডেনে হাটতে হাটতে গেটের বাইরে তামিম কে দেখতে পেলো সোহা। সোহা এগিয়ে গিয়ে তামিম কে ডাকলো। সোহাকে দেখেই তামিমের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। তামিম হাসিমুখে এগিয়ে আসলো।
চলবে……….
#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ০৮
সোহাকে দেখেই তামিমের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। তামিম হাসিমুখে এগিয়ে আসলো। তামিম সোহার কাছে এসে মুচকি হেসে বলে
” কেমন আছো আপু ?” সোহা বাকা হেসে বলে
” বাহ কালকে আপনি ডাকলে আর আজকেই তুমি !” তামিম হেসে বলে
” ক্রাশকে আপনি ডাকতে কেমন লাগে তাই ভাবলাম তুমিই ডাকবো। তবে আপনি চাইলে তুমি বলবো না।” সোহা শব্দ করে হেসে বলে
” আরে না না ঠিকাছে। যা ইচ্ছে বলতে পারো। তো বলো কেমন আছো ?”
তামিম ঘারে হাত রেখে বলে
” আমি তো ভালোই আছি কিন্তু আপনি তো অসুস্থ। তাই আমার মন খারাপ।” সোহা অবাক স্বরে বলে
” আমি অসুস্থ তুমি কি করে জানলে ?” তামিম এদিক ওদিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে
” আসলে আপু আমার রুমের ব্যালকনি থেকে তোমার ব্যালকনি পর্যন্ত দেখা যায়। কালকে তোমার ব্যালকনির দরজা খোলা ছিলো। মাঝরাতে এসেছিলাম ব্যালকনিতে তখন দেখেছি শান ভাইয়া তোমার পাশে বসে বসে জলপট্টি দিচ্ছিলো আর সালমা আপু তোমার হাত পা ঘষছিল।” সোহা হেসে এক ভ্রু উঁচিয়ে বললো
” বাহ তুমি দেখি আমার সব খোঁজ খবরই রাখো। আমি তো জানতামই না সামনের ব্যালকনিটা তোমার রুমের। তো মাঝরাতে ব্যালকনিতে কি করছিলে ? গার্লফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছিলে বুঝি ?” তামিম শব্দ করে হেসে বলে উঠে
” না গো আপু গার্লফ্রেন্ড নেই আমার। আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো তাই ব্যালকনিতে গিয়েছিলাম। আমি তো ভেবেছি বিয়েও করবো তোমার মতো একটা মেয়ে না পেলে।” সোহা তামিম বাচ্চামো কথাই খিলখিল করে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে বলে
” আচ্ছা চলো বসে কথা বলি।” তামিম মাথা নেড়ে সোহার সাথে হাটতে থাকে। কালকে সারাদিন বৃষ্টি হওয়ায় গার্ডেনের অবস্থা কিছুটা খারাপ। ছোট ছোট ঘাস না থাকলে এখানে সবাই পা পিছলে পড়তো। সোহা তামিমকে নিয়ে গার্ডেনের বেঞ্চে গিয়ে বসে। এখনও রোদের কোনো আভাস নেই চারদিকে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। সোহা ঠান্ডায় কাঁপতে থাকে। তামিম চিন্তিত হয়ে বলে
” আপু তুমি বাসায় চলে যাও ঠান্ডা লাগছে তো তোমার !” সোহা হাত ঘষতে ঘষতে জোড়পূর্বক হাসি দিয়ে বলে
” এইটুকু বাতাসে কিছু হবে না। এসব ছাড় আর বলো তো কলেজে কোথায় এডমিশন নিচ্ছো ?”
তামিম বড় একটা হাসি দিয়ে বলে
” আমি তো এক্সাইটেড। আমার পছন্দের কলেজে এডমিশন টেস্ট দিয়েছিলাম সেটাতে সিলেক্ট হয়ে গিয়েছে তো সেটাতেই এডমিশন নিয়েছি।”
সোহা ভ্রু কুঁচকে বলে
” একটাতেই সিলেক্ট হয়েছো নাকি ?” তামিম মাথা নেড়ে বলে
” নাহ ৬ টাতেই সিলেক্ট হয়েছি তবে দুটো অনেক দূড়ে আর বাকি এখানে তিনটা আশেপাশেই তবে আমি তো আমার পছন্দের কলেজেই এডমিশন নেবো।” কথা বলতে বলতে জানলো তামিম সোহার কলেজেই এডমিশন নিবে। সোহা খুশি হয়ে বলে
” বাহ তাহলে তো ভালোই হলো মাঝে মাঝে আমরা দেখা করতে পারবো। কি বলো ?”
তামিম সোহার কথা বুঝতে না পেরে তাকিয়েই থাকে। সোহা হেসে বলে
” আমার কলেজ লাইফ তো শেষ তবে কলেজেই খুব কাছেই আমার বাড়ি।” তামিমের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। অবাক হয়ে বলে
” সত্যি আপু তোমার বাসা সেখানেই ? তাহলে তো আমি প্রতিদিন তোমার সাথে দেখা করতে যাবো।”
সোহা চোখ বড় বড় বলে
” এএ ! আমি কি তোমার গার্লফ্রেন্ড ? একদমই এসব ভাববে না। ওকে ?” তামিম মুখ ফুলিয়ে বলে
” আরে বললাম তো ভাববো না। আচ্ছা ঠিকাছে তুমি যখন বলবে তখনই।” সোহা মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো। দুজন বসে বসে গল্প করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর সোহা অনুভব করলো তার শরীর দুর্বল হয়ে পরছে জ্বরও আসছে আবার। সোহা তামিমকে উদ্দেশ্য করে বলে
” তামিম চলো আমার সাথে বাসায় চলো।” তামিম বলে
” না আপু অন্যদিন আসবো। আজ যাই আমি।”
সোহা তামিমকে জোড় করে কিন্তু তামিম আসতে চায় না। শেষে এতো জোড় করায় তামিম রাজি হয়ে যায় ভেতরে যাওয়ার জন্য। কিছু পথ হাটতেই সোহার মাথা ঘুরে উঠে। সোহা তামিমের হাত ধরে ফেলে। তামিম সোহাকে ধরে ব্যস্ত হয়ে বললো
” আপু ঠিকাছো তুমি ? আপু !” সোহা চোখ খিঁচে বন্ধ করে মাথা নেড়ে হ্যা বোঝায়। তামিম সোহাকে ধরেই বাড়িতে নিয়ে আসে। সালমা তামিমকে দেখেই এগিয়ে এসে বলে
” তামিম ! কেমন আছো ? এতোদিন পর আমাদের কথা মনে পড়ছে তোমার ? ২ আড়াই মাস ধরে তো দেখাই নাই তোমার।”
তামিম ব্যস্তার সঙ্গে বললো
” আরে আপা আমি ভালো আছি তুমি আগে আপুকে বসাও। আপুর মাথা ঘোরাচ্ছে।” সালমা দ্রুত এসে সোহাকে ধরে। দুজন সোহাকে সোফায় বসিয়ে দেয়। সালমা সোহার মাথায় হাত রেখে বলে
” আরে আপা আপনার জ্বর বেড়ে গেছে আবার। দাঁড়ান আমি ছোট ভাইরে জানাইতাছি।”
সোহা সালমাকে আটকে বলে
” আরে আপা উনাকে ফোন করবে কেনো ? রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবো আমি।” সালমা কথা শুনলো না রান্নাঘরে গিয়ে শানকে ফোন করে গরগর করে সব বললো। খাবার এনে বসতেই সোহা বিরক্ত হয়ে বলে
” কেনো বললে উনাকে ? বাড়িতে কেউ নেই আবার উনি যদি থানার সব কাজ ফেলে চলে আসে, উফফ ! আচ্ছা আমার খাবার খাচ্ছি আগে তামিমকে কফি, চা কিছু দাও।” সালমা যেতে নিলেই তামিম বলে
” আরে আপা আমি খেতে পারবো পরেও আগে তুমি আপুকে খাওয়াও।” সোহা কিছুটা আবার মুখে দিয়ে সালমাকে বলে
” আমি খাচ্ছি তুমি যাও তো !” সালমা দোটানা পেড়িয়ে রান্নাঘরে ছুটে গেলো। তামিম সোহাকে বলে
” তুমি না জেদি একটা মেয়ে।” সোহা খাওয়া রেখে হা করে তাকিয়ে থাকে তামিমের দিকে। অবাক হয়ে বললো
” তুমি আমাকে এতোবড় কথা বলতে পারলে ? আমি কি জেদ করেছি?”
তামিম হেসে বলে
” এই যে যা বলো তাই করতে হয় সবাইকে।” সোহা ভাব নিয়ে বলে
” এটাই তো আমার ক্রেডিট বোঝনা? তোমার ক্রাশ বলে কথা।” তামিম হেসে দেয় সোহার কথায়। সালমা তামিমের জন্য নাস্তা নিয়ে আসে। তিনজন অনেক্ষণ গল্প করলো তবে সোহা গল্প করতে করতে সেখানেই ঘুমিয়ে গেলো। তামিমও কিছুক্ষণ থেকে সালমাকে বলে চলে গেলো।
দুপুর ৩ টায় শান বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে ঢুকেই সোহাকে সোফায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখে। শান সালমার দিকে বিরক্তিকত চাহনি দিয়ে বলে
” আজও এখানে ঘুমাচ্ছে ? তুই রুমে দিয়ে আসতি পারলি না ?” সালমা বললো
” আরে তামিম আসছিলো। তিনজন গল্প করতাছিলাম তখন গল্পের মাঝেই এখানেই ঘুমিয়ে গেছিলো।” শান উপরে চলে যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে সোহার জ্বরের তাপমাত্রা চেক করে ইশানকে ফোন করে জানালো সোহার জ্বরের কথা। ইশান অনেক কিছু সাজেস্ট করলো আর বললো আজকে বাড়িতে চলে আসবে সোহাকে দেখার জন্য।
শান সালমাকে বলে সোহার জন্য টেবিলে খাবার দিতে। সালমা মাথা নেড়ে চলে যায়। শান সোহার কাছে গিয়ে সোহাকে ঘুম থেকে উঠালো। সোহা শানকে দেখে কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে
” এই সমস্যা কি আপনার ? কালকেও ঘুম থেকে উঠিয়ে দিয়েছিলেন আজও ! আগে তো আমার শত্রু ছিলেন এখন আমার ঘুমেরও ?” শান হালকা ধমকে বলে উঠে
“একদম চুপ ! একটা কথাও বলবে না। কিছু না জেনে বুঝে শুধু বকবক করা !” সোহা মুখ ফুলিয়ে আবার ঘুমাতে নিলেই শান বলে
” এই আবার ঘুমাচ্ছো কেনো ? চলো খাবে মেডিসিন নিতে হবে। জ্বরের বাসা বেধে রেখেছো শরীরে।” সোহা রেগে ফুসঁতে থাকে শানের কথায়। শান সোহাকে নিয়ে টেবিলে বসিয়ে দেয়। সোহা একটু একটু করে খেতে থাকে। শান তার খাওয়া শেষ করে ফেলে কিন্তু সোহার হাফ প্লেটও শেষ হয়নি এখনও। শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” পিঁপড়ের গতিতে খেলে এই জনমে আর তোমার খাবার শেষ হবে না।” সোহা মুখ কুঁচকে বলে
” আমি আর খেতে পারবো না।” শান চোখ রাঙিয়ে বলে
” খেতেই হবে তোমাকে। শরীর বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছে তোমার।” শান সালমাকে বললো খাইয়ে দিতে সোহাকে। সালমা জোড় করে সোহাকে কয়েক লোকমা খাইয়ে দিতেই সোহা বমি করে ভাসিয়ে দিলো। সালমার অবস্থা বেহাল চেহারাটাও দেখার মতো হয়েছে। শানের জোড় করা করিতে তার ক্ষতি হয়ে গেলো। শান সালমার চেহারা দেখে কোনো রকমে হাসি আটকে সোহাকে বলে
” আচ্ছা আর খেতে হবে না। উপরে চলো রেস্ট করবে।” সোহা মাথা নেড়ে দুর্বল কন্ঠে বলে
” আমি পারবো না যেতে।” শান আর কোনো উপায় না দেখে কিছু না ভেবেই সোহাকে কোলে তুলে নিলো। সালমার মুখ হা হয়ে গেলো। সাথে সোহা নিজেও অবাক হয়ে গেলো। শান সোহার চাহনি দেখে বলে
” কি এভাবে তাকাচ্ছো কেনো ? হেল্প করছি ভালো লাগছে না ?” সোহা অবাক হয়েই বলে
” নাহ হজম হচ্ছে না।” শান চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে সোহাকে উপরে নিয়ে যেতে থাকে।
চলবে……….