#আধারে_তুমি,২৯,৩০
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ২৯
ইমন চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেলো। শান ফোন নিয়ে সোহাকে ম্যাসেজ করলো।
সিমি দুই পক্ষের হওয়ায় তাদের গায়ের হলুদ আগে শানদের বাড়িতে হয়ে তারপর সোহাদের বাড়িতে হচ্ছে যাতে সিমি দুই বাড়িতেই থাকতে পারে। সিমি, সামির, ইমন, নাইসা সহ আরো দুই কয়েকজনের মতো কাজিন সোহাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পরে।
সোহার হলুদের সাজগোজ শেষ হওয়ার পর ক্যামেরাম্যান এর জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে ছবি তুলতে তুলতে। সোহা এবার বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো
” আর কতোক্ষণ লাগবে ভাইয়া ? একটু শান্তিতে বসতে দেবেন কবে ?” ক্যামেরাম্যান থতমত খেয়ে বললো
” না ম্যাম সব কাজ শেষ। তবে আপনি চাইলে আরো তুলতে পারি।” সোহা রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললো
” আপনার বউকে এনে ছবি তুলতে থাকেন।” সোহা হনহন করে নেমে গেলো স্টেজ থেকে। ক্যামেরাম্যান মুখটাকে তেতো করে রেখে দেয়। ইতি দৌঁড়ে সোহার পিছু গেলো। সোহা মুখ ফুলিয়ে একটা চেয়ারে বসে পরে। ইতি এসে বললো
” কি হয়েছে তোর ? বিয়েতে কেউ এমন করে ?” সোহা ঠোঁট উল্টে বলে
” ধুর আমার একদমই এসব ভালো লাগছে না। বিয়ে এতো নিরামিষ নিরামিষ হয় !” ইতি কপাল চাপড়ে বললো
” হায়রে ! তুই নিরামিষ কোথায় দেখছিস ? আমি তো সবার এতো চেঁচামেচির জন্য শান্তিতে বসতেই পারছি না আর তুই নিরামিষ বলছিস ?” সোহা চারপাশে চোখ বুলালো। সোহার মা, বাবার যতো আত্মীয়, প্রতিবেশি যা রয়েছে সবাই এসেছে। সোহার সব কাজিনরা বিয়ের আনন্দে মেতে রয়েছে তাও তার কিছুই ভালো লাগছে না। সব কিছুই বিরক্ত লাগছে। সোহার কানে গাড়ির হর্ণ এর শব্দ আসতেই সোহা তাকিয়ে দেখে ওই বাড়ির গাড়ি এটা। সিমি এসে বুঝেই সোহা ইতিকে নিয়ে সেখানে ছুটলো। সবাই অবাক হয়ে দেখতে থাকে সোহাকে। সোহা স্টেজ রেখে এখানে ঘুরঘুর করছে। গাড়ি থেকে সিমিরা একে একে সবাই নামতেই সোহা গিয়ে আগে নাইসাকে কোলে তুলে আদর করতে থাকে। সিমি চোখ বড়বড় করে জিজ্ঞেস করে
” কিরে তুই এখানে কি করছিস ?” ইতি হতাশার সাথে বলে
” তোমার বোনের নাকি ভালো লাগছে না সব কিছুই তার নিরামিষ লাগছে তাই ক্যামেরাম্যান কে ধমকিয়ে ধামকিয়ে চলে এসেছে।” সামিরসহ সবাই হেসে দেয়। সোহার কোনো হেলদোল নেই সে তার মতো নাইসার সাথে কথা বলছে। সিমি চোখ রাঙিয়ে বলে
” চল জায়গায় গিয়ে বস। বাদরের মতো শুধু নাচানাচি করা ! নিজের বিয়েতেও একটু বসে থাকতে পারছে না ! ঘুরঘুর করছিস দেখেছিস সবাই কেমন করে তাকাচ্ছে !”
সোহা নাক ফুলিয়ে বলে
” বিয়েতে তো আমার নাকি ! ওদের সমস্যা কোথায় ! আমার যা ইচ্ছে তাই করবো আমি।” সিমি ধমকিয়ে সোহাকে নিয়ে স্টেজে বসিয়ে দিলো। সোহা এবার নাইসাকে তাকে পাশে বসিয়ে বসে থাকে। নাইসাও সোহার গায়ের সাথে লেপ্টে বসে থাকে। হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হতেই একে একে সিমিরা সবাই হলুদ লাগালো। ইমন একবার সামিরের সাথে গেলেও আরেকবার ইতিকে টেনে নিয়ে গেলো। হাত ভরে হলুদ নিয়ে সোহার গালে লাগাতে নিলেই সোহা চেঁচিয়ে বললো
” একদম এসব করবেন না ভাইয়া ! আপনার বিয়েতে কিন্তু ছাড়বো না আপনাকে !” ইমন দাঁত কেলিয়ে বললো
” আমিও তো চাই যেনো না ছাড়ো আমাকে ! শালি আধি ঘর ওয়ালি বলে কথা ! আই ডোন্ট মাইন্ড।” কথা বলতে বলতে সোহাকে হলুদ দিয়ে ভুত বানালো। ইতিও হাতে হলুফ নিয়ে সোহার গালে আর হাতে দিতে দিতে বলে
” আমার বেষ্টুকে আমি ভালো করে হলুদ না লাগালে তো বিয়েই হবে না। ভালো করে হলুদ দিতে হবে অনেক ভালো করে !” সোহা কাঁদোকাঁদো চেহারা নিয়ে বসে থাকে। নাইসা সোহাকে দেখে খিলখিল করে হাসতে থাকে। চারপাশের সবাইও হাসতে থাকে তাদের দেখে।
একে একে বাড়ির আত্মীয়-স্বজনরাও হলুদ দিতে এগিয়ে যায়। ইতি সোহার পাশে থাকছে সবসময় কোনো সমস্যা হলে দেখবে। এতো ব্যস্ততার মাঝেও তার চোখ ইমনের থেকে সরেনি। ইমনকে একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখে রণচণ্ডী রূপ ধারণ করে। ইতি তার কাছে যেতে যেতে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বিরবির করে বলে
” অসভ্য ! এটাকে নাকি আমি ভালোবেসেছি ! আমার সাথে কথা বলার সময় থাকে না তার আর সে এখন অন্য মেয়েদের সাথে লেগে রয়েছে !”
ইতি ইমনের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই মেয়েটা বলে উঠে
” কি গো তোমার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে কেনো? রেগে আছো নাকি লজ্জা পেয়েছো ?”
ইমন মজার স্বরে বলে
” হ্যা, মনে হচ্ছে লজ্জাই পেয়েছে আপনাকে দেখে।” মেয়েটা অবাক হয়ে বলে
” ওমা আমাকে দেখে কেনো লজ্জা পাবে ? আমি এমন কি করলাম শুনি !” ইমন আড়চোখে ইতির দিকে তাকিয়ে মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বললো
” আপনাকে বেশি সুন্দর লাগছে তো তাই। হয়তো ভাবছে আপনি এতো সুন্দর কিভাবে হয়েছে ! সেটাই বোধয় জিজ্ঞেস করতে লজ্জা পাচ্ছিলো।”
মেয়েটা লজ্জায় লাল নিল হতে শুরু করে। লজ্জায় মাথা নিচু করে বলদ
” কি যে বলো না তুমি! লজ্জা করছে অনেক আমার। কিন্তু তুমি বুঝলে কি করে ও কি বলতে চায়!” ইতি এবার বাকা হাসি দিলো সুযোগের সৎ ব্যাবহার সব সময় প্রযোজ্য প্রত্যেকের জন্যই। ইতি ইমনের হাত জড়িয়ে ধরে বললো
” আরে আমায় ভালোবাসার মানুষটা আমার মনের কথা বুঝবে না তো আর কে বুঝবে শুনি !” মেয়েটা আকাশ থেকে ধুপধাপ করে পরলো। হতবাক স্বরে ইতিকে বললো বলে
” তোমার কে হয় ও !” ইতি লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বললো
” আমার বয়ফ্রেন্ড। ইনশাআল্লাহ কয়েকদিন পর বিয়েও হবে।”
মেয়েটার মুখটা একেবারে ছোট্টখানি হয়ে গেলো। মেয়েটা দুটো কথা বলে কোনো রকমে পালিয়ে গেলো। ইতি ইমনের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ইমন আমতা আমতা করে বললো
” আমি কিছু করিনি। আসার পর থেকে পিছু লেগেছিলো তারপর ভাবিকে ডেকে এনে কথা বলা শুরু করলো তবে ভাবি চলে গেলেও এই মেয়ে যায় না।” ইতি আর কিছু বললো না। কারণ মেয়েটাকে ভালো করেই চিনে। সোহাদের প্রতিবেশির মেয়ে। দুইদিন পরপর বয়ফ্রেন্ড দের সাথে ব্রেকাপ করে আর নতুন খুঁজে নেয়। সুন্দর ছেলে দেখলেই বাদরের মতো গলায় ঝুলতে চায়।
হঠাৎ ইতির সামনে তার বাবা এসে দাঁড়ালো। ইতি চমকে যায় তাকে দেখে। ইতির বাবা জিজ্ঞেস করো
” এখানে কি করছিস ?” ইতি ঘাড় ঘুরিয়ে ইমনের দিকে তাকালো। ইমন মুচকি হেসে তাকিয়ে রয়েছে। ইতির বাবাকে সুন্দর করে সালাম দিয়ে বললো
” একটু কথা বলছিলাম আর কি আংকেল।” ইতির বাবা সালামের উত্তর দিয়ে ইমনের সাথে টুকটাক কথা বলতে থাকে। তারা কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে হাসিহাসি শুরু করে ইতি সব ঠিকঠাক বুঝতে পেরে ব্যস্ততায় সরে যায় সেখান থেকে।
হলুদের সব কাজ কর্ম শেষ হতেই সোহা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে প্রায়। সিমিরা চলে গিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। সোহা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসতেই ইতি কড়া গলায় বলে
” এই চুল শুকিয়ে ঘুমাবি নাহলে খারাপ হবে বলে দিলাম ! জ্বর উঠলে আমার আর রক্ষে থাকবে না।” সোহা হাই তুলে বলে
” আমার অনেক ঘুম পেয়েছে তো আমি কিছু করতে পারছি না !” সোহা ব্ল্যাংকেট টেনে ধুপধাপ করে ঘুমিয়ে পড়লো কিন্তু ইতি থাকতে তা অসম্ভব ব্যাপার। ইতি টেনে সোহাকে উঠিয়ে হাতে হেয়ার ড্রায়ার ধরিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকলো। সোহা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে ইতিকে বকা শুরু করলো
” শয়তান মহিলা কোনোদিন বিয়ে হবে না তোর। একটা নিষ্পাপ মেয়ের ঘুম ভাঙিয়েছিস তুই কোনোদিন ভালো হবে না তোর। দেখবি ইমন ভাইয়া অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলেছে তোকে বরখাস্ত করে।” উল্টো পাল্টা প্রলাপ বকতে থাকে আর চুল শুকাতে থাকে। কোনো রকমে অর্ধেক চুল শুকিয়েই ইতিকে বকতে বকতে ঘুমিয়ে গেলো সোহা। ইতি ফ্রেশ হয়ে এসে রুমে লাইট অফ করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। এখনও নিশ্চিন্তে ঘুমানো যাবে না বাড়িতে মেহমানদের জায়গা ঠিক করে দিয়ে আসতে হবে।
শান মই বেয়ে কোনো রকমে সোহার রুমে বারান্দায় এসে পৌছলো। বারান্দার দরজা খোলা থাকায় সোজা ঢুকে গেলো শব্দহীন পায়ে। সোহা ইতিমধ্যে ঘুমে তলিয়ে গিয়েছে। শান হাটু গেরে সোহার মুখোমুখি হয়ে বসলো। নিজের হাতে থাকা একটু হলুদ সোহার গালে লাগিয়ে দিলো। সোহা সাথে সাথে কেঁপে উঠে ঠাণ্ডা হলুদের ছোঁয়া পেয়ে। শান আলতো হেসে সোহার হাত ধরে উল্টো পাশে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে ধীর গলায় বলে
” কালকে আমি আমার ভালোবাসাকে নিজের করে পাবো। তারপর আর কোনো বাধা থাকবে না আমাদের মাঝে। আগে কথা বলার জন্য যেই অজুহাত খুঁজতে হতো সেটাও করতে হবে না। তুমি চাইলেও এখন আমার না চাইলেও আমারই। আমার জীবনের বাকি প্রত্যেকটা মুহূর্তে আমি তোমাকে চাই। আমার #আধারে_তুমি হয়ে থাকবে আমার হৃদয়ে।”
চলবে………
#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৩০
আজ শান আর সোহার বিয়ে। সকাল থেকেই বাড়িতে হইচই শুরু হয়েছে। সোহার মা, বাবা আর ইতির মা, বাবাই সব কিছু দেখছে বলা যায়। সোহার বাবার কোনো ভাই নেই তাই দেখার মতো ইতির বাবাই তার একমাত্র বন্ধু রয়েছে আর বাকিরা তো রয়েছেই আত্মীয়তার পরিচয়ে। ইতির মা তার কাজের ব্যস্তার মাঝে সোহাকে উঠিয়ে দিয়ে গেলো। ইতি অনেক রাতে ঘুমিয়েছে এখন ডাকলেও কাজ হবে না সোহা নিজেই তাকে টেনে হিচরে ডেকে তুলবে তাই আর ডাকার প্রয়োজন মনে করলো না। সোহা ঘুম থেকে উঠে হাই তুলতে তুলতে মিরের সামনে দাঁড়ায়। চোখ খুলে নিজের গালে হলুদ দেখে সোহা অবাক হয়ে যায়। ইতি ঘুমে কাতর সেদিকে পাত্তা না দিয়েই সোহা ইতিকে ডাকতে ডাকতে বলে
” ইতি ! দেখ আমার গালে হলুদ কিভাবে এসেছে আমি তো রাতে শাওয়ার নিয়েই ঘুমিয়েছিলাম। রাতে তো ছিলো না হলুদ এখন কিভাবে আসলো ? তুই দিয়েছিস নাকি ?” ইতির নড়চড় না দেখে সোহা ইতির কাছে গিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে ঘুম থেকে উঠালো। ইতি সোহাকে কুশন দিয়ে বারি মেরে বলে
” ধুর ! দূড়ে গিয়ে মর পাগলনি ! একটু ঘুমাতে দিচ্ছিস না আমাকে। ” সোহা চোখ বড়বড় করে অবাক হয়ে বললো
” কি বললি তুই আমাকে ! আমি পাগলনি ? তুই শাঁকচুন্নি। ঘুম থেকে উঠ বলছি !” সোহা টেনে টেনে ইতিকে ঘুম থেকে উঠালো। ইতি উঠে বসে সোহার চুল টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” বিয়ে করে শশুড় বাড়ি চলে যাচ্ছিস আজ আর এখনও ঠিক হলি না!” সোহা দাঁত কেলিয়ে বললো
” আমি ঠিক হয়ে গেলে তোদের জ্বালাবে কে ? আর সোহা তো সোহাই। সোহা বদলাবে না কখনো। এবার বল আমার গালে এতো হলুদ এসেছে কি করে ?” ইতি সোহার মুখ ধরে চোখ ছোট ছোট করে এদিক ওদিক দেখে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো
” আমার কি মনে হচ্ছে বলতো ! রাতে তুই ঘুমানোর পর শান ভাইয়া চুপিচুপি এসে তোকে হলুদ লাগিয়ে দিয়েছে। আহা ! কতো রোমেন্টিক আমার দুলাভাই টা।”সোহা ক্ষেপে বলে
” তুই মজা করছিস আমার সাথে ? উনার কি আর কাজ নেই রাত বিরেতে আমাকে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে যাবে !” ইতি সোহার গাল টিপে বলে
” হলুদ লাগিয়ে যেতেই পারে। আমার কথা তো সত্যিও হতে পারে। হবু বউ কে একটু হলুদ ছোঁয়ানোর ইচ্ছা তো জাগতেই পারে। অসম্ভব কিছু তো নয় তাই না !” সোহা ভাবনায় পরে গেলো। ইতি সোহাকে ভাবনায় রেখে ওয়াসরুমে ঢুকে পরে।
এদিকে শান সেই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে। তার নিজের বিয়েতে সে নিচেই তদারকি করছে সব কিছুর। ঘুরে ঘুরে বাড়ির ডেকোরেশন দেখছে, বাকি সব কিছু ঠিক রয়েছে কিনা সবই দেখছে। মুসফিক চৌধুরী শানের কাজকর্ম দেখে বিরক্ত হয়ে বললো
” মনে হচ্ছে আমরা বাড়ির লোকজন সব মরে গিয়েছি ? আমরা তো সবই দেখছি তুমি আবার এসব করছো কেনো ? অন্যকাজ করো গিয়ে যাও !” শান মুখ ছোট্ট করে বললো
” আর কি করবো বাবা ! বিয়ের দিন তো আর থানার কাজ করবো না ! ছুটি নিয়েছি তো তাই আর কোনো কাজ নেই।” মুসফিক চৌধুরী মুখ দিয়ে শ্বাস ফেলে বিরক্তির চেহারা নিয়ে চলে গেলো।
শান তামিমের পাশে সোহায় গিয়ে বসলো। তামিম সোফায় বসে বসে ঘুমাচ্ছে। সোহার বাড়ি থেকে এসে রাত সব গুলো ছেলে ভোর রাত পর্যন্ত নাচ গান করেছে। বলতে গেলে ব্যাচেলর পার্টি ছিলো। শান তামিমের চোখে মুখে পানি দিয়ে বলতে থাকে
” কিরে তামিম ! সোহাকে বিয়ে করে বাসরও করে ফেললাম আর তুই এখনও ঘুমোচ্ছিস ? এই তো ক্রাশের প্রতি ভালোবাসা ! ছিঃ ছিঃ ছিঃ !” আধো আধো ঘুমে শানের কথা কানে ঢুকতেই তামিম হুরমুরিয়ে বসে বলতে থাকে
” কি বলছো কি ভাইয়া ! আমি এতো ঘুমিয়েছি ? তোমাদের বিয়ে কখন হয়েছে ? আমাকে ডাকোনি কেনো তুমি ?” তামিম শানকে ভাবলেশহীন ভাবে বসে থাকতে দেখে মুখ কুঁচকে বললো
” তুমি মিথ্যা বললে কেনো ? আমার কাঁচা ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলে কেনো ?” শান ধমকে বললো
” ভাঙাবো না তো আর কি করবো ? এটা বিয়ে বাড়ি? সব গুলো ছেলে মরার মতো ঘুমাচ্ছে এখনো। আর দেখ তাকিয়ে মেয়েরা সেই সকালে উঠেই সাজগোছ শুরু করে দিয়েছে।” তামিম সোজা হয়ে বসে বললো
” হ্যা তোমারই তো বিয়ে । তুমিও গিয়ে একটু সেজে নাও !” শান বিরবির করে বললো
” থাক আমি ছেলে হয়ে সাজলে মেয়েদের আর খোঁটা দিতে পারবো না তাদের মেকাপ নিয়ে। তাছাড়া আমার আর সাজের কি দরকার ? আমি কি সুন্দর না নাকি ? এবার গিয়ে ছেলেদের ডেকে তোল। কোথায় না ঘুমিয়ে কাজ করবে ! কিন্তু মহাশয়রা ঘুমাচ্ছে।”
শানের কথা শুনতে শুনতে সিরি দিয়ে নেমে আসে সবাই। ইশান শার্টের হাতা উপরে বটতে বটতে শানের পাশে এসে বসলো। সামিরসহ সব কাজিনরা যা আছে সবাই ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে এসে বসে। ইমন হাই তুলে বললো
” রাতে যে এতোবড় হেল্প করেছি সেটা পাওনা দিয়েছিস ?” শান পা নাচাতে নাচাতে বললো
” কিসের পাওনা ? হাত, পা দেখেছিস ? দুই ঘা বসিয়ে দেবো তখন সব পাওনা পেয়ে যাবি।” ইশান ভ্রু কুঁচকে বললো
” কিসের পাওনা? কি করেছিস তোরা ?” ইমন জায়গা থেকে উঠে এসে ইশানের কাছে আসলো বলার জন্য তা দেখে শান এক লাফে উঠে গেলো। ইমনের কাছে গিয়ে ইমনকে দূড়ে নিয়ে সাবধান করে বললো
” ভেবে চিনতে কাজ করবি কিন্তু ! নাহলে খবর আছে তোর !” ইমন মুখ বাকিয়ে বললো
” সোহার বারান্দায় মই ধরার বদলে কোনো পাওনা দিয়েছিস তুই আমায় ! আবার বলছিস ভেবে চিনতে কাজ করতে ?” শান ভ্রু কুঁচকে বললো
” তুই তো জাস্ট মই ধরেছিস তাও কয়েক মিনিট এর জন্য। তোর হলুদের সময় আমি কয়েক ঘন্টা পাহারা দেবো তোকে।” ইমন খুশি হয়ে বলে
” এই নাহলে আমার বন্ধু !”
” ওহ এই ব্যাপার তাহলে ?” শান আর ইমন চমকে পেছনে তাকায়। সামির আর ইশান সবই শুনে ফেলেছে। শান অগ্নিদৃষ্টিতে ইমনের দিকে তাকালো। ইমন অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। সামির বললো
” তোরা কি রে ? আমি নিজের বিয়েতেও এমন কিছু ভাবিনি আর তুই আমার ভাই হয়ে এতো ফাস্ট ? এবার তো মনে হচ্ছে তোকেই আমার আগে বিয়ে দেওয়া প্রয়োজন ছিলো তাহলে কিছু শিখতে পারতাম।” ইশান সামিরের মাথায় চাটা মেরে বললো
” ছাগল তোর বিয়ে হয়ে গিয়েছে এখন এসব বলে নিজের মান-সম্মান খাচ্ছিস কেনো ? তবে শানকে নিয়ে আমার সন্দেহ হচ্ছে। আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে বিয়েটা এরেঞ্জ ম্যারেজ নয়।” ইশানের সন্দেহী কণ্ঠ শুনে শান ঢোক গিললো। তখনই শাহানাজ বেগম ডাকলো শানকে। শান আলতো হেসে বললো
” আমি যাচ্ছি।” শান কোনো রকমে পালিয়ে গেলেও ইশান আর সামির ইমনকে চেপে ধরে।
কিছুক্ষণের মধ্যে নাইসা আসলো দৌঁড়ে ইশানের আঙুল ধরে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বললো
” পাপা মামনি অসুস্থ, মাম্মা ডাকছে তোমাকে।” সামিরের ভ্রু কুঁচকে যায় সিমির কি হয়েছে হঠাৎ ? সামির ছুটে চলে যায়। ইশানও ইমনকে ছেড়ে নাইসাকে নিয়ে গেলো রুমে।
সিমির হাত পা ঘষছিল নিলা আর সামিরের এক ফুফাতো বোন। সামির সিমির পাশে বসতে বসতে অস্থির হয়ে বললো
” সিমির কি হয়েছে ভাবি ?” ইশান আসতেই ইশানকে বসার জায়গা দিয়ে উঠে দাঁড়ায় নিলা আর বললো
” জানিনা কথা বলতে বলতে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলো। সকাল থেকে দুর্বল লাগছিলো মেয়েটাকে।” সামির অস্থির হয়ে পড়ে সিমিকে নিয়ে। নিলা সেই মেয়েটাকে বললো
” শোনো মাকে ছাড়া বাইরে আর কাউকে বলার দরকার নেই। ঠিকাছে ?” মেয়েটা মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেলো। ইশান রুম থেকে তার স্টেথোস্কোপ আর কিছু জিনিস এনে সিমির চেকাপ করতে থাকে। নিলা কয়েকবার চোখে মুখে পানি ছিটালে সিমির জ্ঞান ফিরে আসে। ইশান চেকাপ করে মিটমিট হাসতে থাকে। সামির করুণ স্বরে বললো
” ভাইয়া তুমি হাসছো কেনো ? কি হয়েছিলো বলবে তো !” ইশান মুচকি হেসে বললো
” সুখবর এসেছে। ফ্যামিলিতে আরো একজন নতুন ম্যামবার আসতে চলছে।” সিমি অবুঝ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সামির বললো
” তা তো আসছেই আজ সোহা।” নিলা বুঝতে পেরে শব্দ করে হেসে দেয়। ইশানও তালমিলিয়ে হাসলো। নিলা সিমির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
” আরে বোকারা ! তোদের দুজনের মাঝে একজন নতুন ম্যামবার আসছে মানে সিমি প্রেগন্যান্ট।” সামির আর সিমি চোখ বড়বড় করে তাকালো একে অপরের দিকে। শাহানাজ বেগমও রুমে এসেছিলো শানকে নিয়ে। দুজন এই কথা শুনেই আটকে যায় সেখানেই। খুশির বন্যা বয়ে যায় সবার মাঝে। শাহানাজ বেগম সিমির কাছে এসে কিছুক্ষণ কথা বলে একে একে সবাই বেরিয়ে গেলো। সবাই যেতেই সিমি ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়। সামির অস্থির হয়ে বলে
” কি হয়েছে তোমার ? কাঁদছ কেনো তুমি? তুমি কি খুশি না সিমি !” সিমি সামিরকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে
” খুব খুশি আমি, খুব খুশি।” সামির হেসে সিমির মুখ তুলে বলে
” তো কাঁদছ কেনো ? তুমি জানো না আজ কতো খুশি হয়েছি আমি।” সামির সিমি দুই গালে হাত রেখে ছোট ছোট চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিলো। সিমি লজ্জা পেয়ে সামিরের বুকে মাথা রাখে।
সোহার তিন কবুল বলা হলে শান তিন কবুল বলে দুজনে এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো। তাদের এই বন্ধনে শত মানুষ সাক্ষী হয়। বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শান সোহার ঘোমটা উঠিয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে দুচোখ জুরিয়ে দেখতে থাকে। এতো গুলো মানুষের মাঝেও কেমন বেহায়ার মতো কাজ করছে শান। মুগ্ধা হয়ে তাকিয়ে রয়েছে সোহার দিকে। সোহার লজ্জা মাখা সেই চেহারা শানের সোহাকে দেখার তৃষ্ণা আরো বাড়িয়ে তুলছে। আর সোহা মাথা নিচু করে তাকিয়ে রয়েছে। লজ্জায় তার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
চলবে……….