#আধারে_তুমি,৩৩,৩৪
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৩৩
এদিকে আজ সোহার ভার্সিটির এডমিশন টেস্ট এর রেজাল্ট দেবে সেটা নিয়ে সোহা মারাত্মক দুশ্চিন্তায় রয়েছে। শান তার ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে রেজাল্ট এর জন্য অপেক্ষা করছে। সোহা পাইচারি করতে করতে চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো
” এখন দিয়েছে ?” শান গম্ভীর চাহনি দিয়ে তাকালো। সোহা সেদিকে খেয়াল না দিয়ে আবারও পাইচারি করতে থাকে। সালমা রান্নাঘর থেকে শানের জন্য কফি নিয়ে আসলো। শানের সামনে রাখতেই শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” মা কোথায় ?” সালমা বড়সড় হাসি দিয়ে বললো
” খালাম্মা বড় ভাবিরে নিয়া মিষ্টি কিনতে গেছে সোহা ভাবির জন্য।” শান কফি খেতে বলে
” আবার কিসের জন্য মিষ্টি দুইদিন আগেই তো পুরো পাড়ায় মিষ্টি বিলিয়েছে সুখবর পেয়ে।”
সালমা মাথা নেড়ে উত্তরে বলে
” হ, তব্দ ওইটা শেষ আজকে তো সোহা ভাবির রেজাল্ট দিবো সেটার জন্য মিষ্টি আনতে গেছে।” শান সোহার দিকে তাকিয়ে রাশভারী কণ্ঠে বললো
” দেখেছো ? বাড়ির সবাই রেজাল্ট না দেখেই মিষ্টি আনতে চলে গিয়েছে আর তুমি টেনশনে মরে যাচ্ছো। তুমি এক্সাম দিয়েছো নিজের উপর ভরসা তো রাখা উচিত নাকি ? ১০ মিনিটে ১৫ বার জিজ্ঞেস করেছো রেজাল্ট পাবলিশ হয়েছে কিনা।”
সোহা শানের কথা কানের তুললো না বলা যায়। এক্সাম দেবার সময় বা কখনোই এতো টেনশন করে নাসোহা, যেমনটা রেজাল্ট এর জন্য করে। সোহা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে শানের সামনে বসে বলে
” আবার দেখুন না ! ২০ মিনিট পেরিয়ে গিয়েছে রেজাল্ট পাবলিশ তো অনেক আগেই হয়ে যাওয়ার কথা।”
শান সোহাকে বসিয়ে আবারও চেক করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর শান হঠাৎ চোখ মুখ শক্ত করে সোহার দিকে তাকালো। সোহার অন্তর কেঁপে উঠে শানের চাহনি দেখে। সোহা কাঁপা কাঁপা স্বরে শানকে জিজ্ঞেস করলো
” কি হয়েছে ? পাশ করিনি ?” সোহা এখনই কেঁদে দেবে বুঝে শান হেসে দেয়। হাসতে হাসতে বলে
” আরে বোকা পাশ করবে না কেনো ? তুমি পাশ করেছো।” সোহা বিস্ময় চাহনি দিয়ে তাকালো। চোখের জ্বলজ্বল করা পানি হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিয়ে ধরা গলায় বললো
” সত্যি ! আমি পাশ করেছি ? মানে ভার্সিটিতে chance পেয়ে গিয়েছি আমি?” শান আলতো হেসে সায় জানায়। সোহার চোখ মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। সালমাও সোহাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শাহানাজ বেগমার নিলা প্রবেশ করে বাড়িতে। শাহানাজ বেগম ঢুকতে ঢুকতেই জিজ্ঞেস করে
” কিরে রেজাল্ট দেখেছিস ?” সোহা দৌঁড়ে শাহানাজ বেগমকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে খুশিতে চেঁচিয়ে বলে
” মামনি আমি পাশ করেছি। আমি ভার্সিটিতে chance পেয়ে গিয়েছি।” সোহা নিলাকেও জড়িয়ে ধরে একি কথা বলতে থাকে। শান ল্যাপটপ রেখে উঠে দাঁড়ায়। নিজেও টেনশনে ছিলো কিছুটা সোহাকে এতো খুশি দেখে মনটা ভালো হয়ে গিয়েছে শানের। শাহানাজ বেগম হেসে তার হাতে থাকা মিষ্টির প্যাকেট খুলে সোহাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে বলে
” তো রেজাল্ট এর জন্যই মিষ্টি আনতে গিয়েছিলাম। তোর পছন্দের মিষ্টিও রয়েছে। এবার তুই সবাইকে খাইয়ে দে।” সোহা শাহানাজ বেগম, নিলা, সালমাকে খাইয়ে দিলো। শাহানাজ বেগম আড়চোখে শানের দিকে তাকিয়ে বললো
” আমার ছেলে কি দোষ করলো ? ওকে ও একটু খাইয়ে দে !” সোহা জোড়পূর্বক হেসে শানের কাছে গেলো। মুখের সামনে মিষ্টি ধরতেই শান সোহার হাতে ঠোঁট ছুঁয়ে মিষ্টি মুখে পুড়ে নেয় কিছুটা।শানের ঠোঁটের ছোঁয়া সোহার হাতে লাগায় সোহার হাত থরথর করে কাঁপতে থাকে। সোহা লজ্জায় চোখ মুখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে রেখেছে। শান সোহাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঠোঁট চেপে হেসে বললো
” আরো খাওয়াবে নাকি মিষ্টি ? আমার তো খাওয়া শেষ।” শানের কথায় সোহা হুশ ফিরে পেয়ে দ্রুত পায়ে নিলার কাছে এসে আমতা আমতা করে বললো
” নাইসা কোথায় আপু ?” নিলা রুমের দিকে তাকিয়ে বললো
” আরে আর বলো না নাইসা রাতে অনেক দেড়ি করে ঘুমিয়েছে তাই এখনও উঠেনি ঘুম থেকে।”
শান উপরে যেতে যেতে বললো
” মা আমি বেড়িয়ে যাবো একটু পর।” শাহানাজ বেগম সালমাকে ঠেলে রান্নাঘরে পাঠাতে পাঠাতে বললো
” যা তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট সার্ভ কর এখনও ছেলেটা খায়নি।” সোহা রান্নাঘরের দিকে যেতে নিলে নিলা তাকে আটকে অবাক হয়ে বলে
” আরে তুমি কোথায় যাচ্ছো ?” সোহা অবুঝ গলায় বললো
” কিচেনে যাচ্ছি। আমিও একটু হেল্প করতে চাই।”
শাহানাজ বেগম চোখ বড়বড় করে ধমক দিয়ে বললো
” এই তোকে না এসবের কাছে যেতে না করেছি ? তুই যা রুমে যা শানের কিছু লাগবে কিনা সেটা দেখ আর শানের কয়েকটা পছন্দের মিষ্টি নিয়ে এসেছি সেগুলো শানের জন্য নিয়ে যা। তোকে রান্নাঘরের আশেপাশে যেনো না দেখি আমরা।” সোহা মুখ ফুলিয়ে মিষ্টির প্যাকেট থেকে শানের জন্য মিষ্টি নিতে থাকে।
নিলা শাহানাজ বেগমকে বললো
” মা সিমিরা গিয়ে পৌঁছেছে ?” শাহানাজ বেগম চিন্তিত স্বরে বলে
” এখনও ফোন আসেনি ওদের।” সোহা শানের জন্য মিষ্টি বেড়ে আঙুল চাটতে চাটতে বলে
” আরে তোমরা যাওয়ার পর ভাইয়ার ফোন এসেছিলো। ভালোভাবে পৌঁছে গিয়েছে ওরা।” নিলা শব্দ করে হেসে দিয়ে বলে
” হ্যা তুমি এবার উপরে যাও তাড়াতাড়ি নাহলে শান চলেও যাবে থানায়।” সোহা মাথা নেড়ে চলে যায়। সামিরকে অফিস থেকে ইম্পরট্যান্ট কাজে চট্টগ্রাম যেতে হয়েছে শাহানাজ বেগম সিমিকেও পাঠিয়ে দিয়েছে সাথে যাতে মন ভালো থাকে। আর সামিরের উপর দায়িত্ব দিয়েছে খুবই সাবধানে রাখতে হবে সিমিকে। এদিক থেকে ওদিক হলেই সামিরকে বাড়ি থেকে বিদায় নিতে হবে।
শান তৈরি হতে হতে টমির সাথে ঝগড়া করছিলো। প্রতিদিনই হয় এই ঝগড়া। শান একা একাই টমিকে বকাঝকা করে আর টমি বারবার শানের কাছে আসতে চায়। এখনও ঝগড়া করতে করতে শান দেখে টমিকে তার দিকে আসতে দেখে শান কড়া গলায় বললো
” এই ! একদম আগাবি না। তোর বোনকে বলে আমি তোর বিয়ের ব্যবস্থা করছি দাঁড়া।” সোহা রুমে ঢুকতে ঢুকতে শানকে টমির কাছে দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয়। রাগি গলায় বললো
” আপনি আবার আমার টমিকে বকছেন !”
শান সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গম্ভীর গলায় বললো
” তুমি দেখেছো আমাকে বকতে ?” সোহা থতমত খেয়ে যায়। আমতা আমতা করে বললো
” দেখিনি তো কি হয়েছে আপনি বকেনই সব সময়।” শান এগিয়ে এসে বুকে দুই হাত গুঁজে এক ভ্রু উঁচিয়ে বললো
” তাই নাকি ?” সোহা ঢোক গিলে মিষ্টির প্লেটটা শানের সামনে ধরে বললো
” মামনি বলেছে খেতে।” শান সোহার দুই কাধের উপর হাত রাখলো সোহা চোখ বড়বড় করে নিলো শানের এমন কাজে। শান ধীর গলায় বললো
” আজ তো সবাই খুব খুশি তবে আজকে আমার মন খারাপ। তো আজকে কি আপনার থেকে কিছু চাইতে পারি মিসেস ?” সোহা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালো। শান বাকা হেসে বলে উঠে
” তো মিসেস ! ফটাফট আমাকে কিস করুন।” সোহার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। সোহা চোখ বড়বড় করে তাকায় শানের দিকে আর শানের ঠোঁটের কোণের বাকা হাসিটা তো রয়েছেই তা দেখে সোহা ঢোক গিললো। সোহা মনে মনে শানকে ইচ্ছে মতো বকতে থাকে
” কেমন ছেলে এটা ? এতো দিন তো বারবার আমাকে লজ্জায় ফেলে দিতো কিন্তু আজ ! এটা কেমন চাওয়া ? কিস ! কিভাবে করবো আমি এসব ? বিয়ের পর এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয় জানলে আমি কোনোদিন বিয়েই করতাম না।”
শান সোহার চুল গুলো কানে গুঁজে দেয়। সোহা কম্পিত চাহনি নিয়ে শানের দিকে তাকিয়ে আবারও মাথা নিচু করে নেয় লজ্জায়। শান সোহাকে দেখে ঠোঁট চেপে হেসে বললো
” কি হলো আর কতো দেড়ি করবে ? আমার কিন্তু দেড়ি হয়ে যাচ্ছে !” সোহা মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে লজ্জা আর অস্বস্তি নিয়ে অনেক কষ্টে বললো
” সরি। আমি পরবো না।” শান নিঃশব্দে হাসলো। শান ভালো করেই জানতো সোহা পারবে না। শান গম্ভীর গলা করে বললো
” কেমন মেয়ে তুমি ? একটা সামান্য কিস করতে পারো না স্বামীকে !” সোহা অসহায় চাহনি তাক করলো শানের দিকে। শান আরো এগিয়ে এসে সোহার দিকে কিছুটা ঝুকে ধীর গলায় বলল
” কিন্তু আমি তো করতে পারি আমার বউকে।” সোহার মনে হলো তার হার্ট-বিট মিস হয়ে গিয়েছে। সোহা চমকিত ভাবে শানের দিকে তাকায়। শান সোহার কোমড়ে তার বলিষ্ঠ হাত জোড়া রাখতেই সোহার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেলো। সোহার হাতের থাকা প্লেট টাও কাঁপতে থাকে। সোহা যথাসম্ভব শক্ত করে ধরে রাখার চেষ্টা করে। শান সোহাকে নিজের শরীর সাথে মিশিয়ে নেয় কিছুটা না। শান শুধু সোহাকেই দেখে চলছে। সোহার কাঁপাকাঁপির দৃশ্য তাকে আরো টানছে। শান ডিপলি সোহার ঠোঁটের উপর নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো শুধু। তারপর গালে চুমু দিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে দেখে। সোহার নিশ্বাস বন্ধ করে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। শান মুচকি হাসলো সোহাকে দেখে। মুখ এগিয়ে সোহার কানে ফিসফিস স্বরে বললো
” আজ প্রথম তাই এতোটুকুই রইলো। সাবধানে থাকবে, আসছি আমি !” শানের ফিসফিসানী কথা সোহার পুরো শরীরে ঝংকার তুলে দেয়। শান সোহার ধরে রাখা প্লেট থেকে একটা মিষ্টি নিয়ে সোহাকে কিছুটা খাইয়ে দেয়। সোহা একটু খেলে শান পুরোটা নিজের মুখে পুড়ে বললো
” হুম খুবই দারুণ মিষ্টি গুলো। বাকিগুলো এসে খাবো রেখে দিও ফ্রিজে।” শান সোহার কোমড় থেকে হাত সরিয়ে নিলো। ড্রেসিংটেবিলে থাকা ক্যাপটা মাথা পরে বেড়িয়ে গেলো। কিন্তু সোহা তখনও মূর্তির মিতো দাঁড়িয়ে থাকে।
চলবে……….
#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৩৪
ড্রেসিংটেবিলে থাকা ক্যাপটা মাথা পরে বেড়িয়ে গেলো। কিন্তু সোহা তখনও মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। সোহা ঠোঁটের উপর হাত রেখে বিরবির করতে করতে মিষ্টি মুখে ঢুকিয়ে নিচে চলে গেলো।
রাতে শান বাড়ি ফিরে সোহাকে ঘরের আনাচেকানাচে কোথাও দেখতে পেলো না। পরে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে নিলাকে দেখকে পেলো। নাইসাকে পড়াচ্ছে আর খাওয়াচ্ছে। শান নাইসাকে কোলে তুলে আদর করে নিলাকে জিজ্ঞেস করে
” ভাবি সোহা কোথায় ? ঘরে নেই যে !” নিলা নাইসাকে খাওয়াতে খাওয়াতে মজার স্বরে বললো
” কেনো গো বউ ছাড়া এখন আর থাকতে ইচ্ছে করে না বুঝি ? কয়েকদিনেই বউ পাগল হয়ে গেলো আমাদের শান !” শান ঘাড়ে হাত রেখে আলতো হাসলো। নাইসা একবার শানের চুল টানতে থাকে আরেকবার গালে চুমু দেয়। শান নাইসার গালে চুমু দিয়ে বললো
” সব ছেলেরাই তাদের বউদের জন্য পাগল। ভাইয়াও তো বাড়িতে থাকলে তোমাকে চোখে হারায় আর হসপিটালে ফ্রি হলেই যে তোমাকে ফোন করে বারবার ভালোবাসি বলে সেই খবরও কিন্তু জানা !” নিলা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়। শান ফিক করে হেসে দিলো নিলাকে দেখে। নিলা লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বলে
” হয়েছে ভাই বুঝেছি আমি এখন তুমি আমাকে লজ্জা দেওয়ার চেষ্টা করছো। যাও তোমার বউ ছাঁদে বসে লুডু লেখছে তামিমের সাথে।” শান ভ্রু কুঁচকে বললো
” এতো রাতে ছাঁদে লুডু খেলছে ? এই পাগল মেয়ের মাথায় কখন কোন ভূত এসে হানা দেয় বুঝতে পারি না এখন আবার আরেক পাগলও ওকে সঙ্গ দেয়।” নিলা হাসতে হাসতে বলে
” হ্যা তোমারই বউ এখন সে।” শান হেসে নাইসাকে আবার তার জায়গায় বসিয়ে দিয়ে ছাঁদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে চললো।
এদিকে সোহা আর তামিম দুই রাউন্ড খেলে ফেলেছে যার মধ্যে তামিম দুইবার জিতেছে। সোহা লুডুতে তেমন পারদর্শী না হওয়ায় পরপর দুবার হেরে গিয়েছে তবে এবার জিতেই ছাড়বে বলে পন করেছে। খেলা যখন জমজমাটের পর্যায়ে তখন দুজনের ধ্যান ভাঙে শানের গলা শুনে। শান দুজনকে দেখে এগিয়ে আসতে আসতে বলছিলো
” রাতের বেলায় কেউ ছাঁদে এসে লুডু খেলে ? ড্রইংরুম, রুম নেই নাকি ?” সোহা আলতো হেসে নিশ্বাস নিয়ে বলে
” রাতের বেলায় ছাঁদে বসে খেলার অনুভূতিটাই অন্যরকম। সব কিছু নতুন নতুন লাগবে। মাঝে মাঝে ট্রাই করতে পারেন। Feelings not bad.”
শান ছাঁদে বিছানো পাটিতে বসতে বসতে মাথা নেড়ে বললো
” তুমি যখন বলেছো তখন তো ট্রাই করতেই হবে। আজকে থেকেই নাহয় ট্রাই করি। তো তোমরা কতদূর এগোলে খেলায় ? কে হারলো কে জিতলো ?” সোহার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সোহা মুখ লটকিয়ে বসে থাকে। তামিম বড়সড় হাসি দিয়ে বললো
” আমি জিতেছি দুবার। এখনও আমিই জিতবো।” সোহা চোখ রাঙিয়ে বললো
” এই এবার আমি জিতবো।” তামিম কিটকিট করে হেসে বললো
” সেটা তো বারবারই বলছো, তুমি জিতবে কিন্তু প্রত্যেকবার তো আমিই জিতছি। এবারও আমি জিতবো।” সোহা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো
” হ্যা খেলা শুরু করো এবার তো আমিই জিতবো।” তামিম আর সোহার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শুরু হয়। বলা চলে খেলার শেষ পর্যায়ে এসে তামিমের সব গুটি রুমে ঢোকানো হয়ে গিয়েছে শুধু মাত্র একটা গুটিই রয়েছিলো সেটা সোহার গুটিকে পাস করে গেলে সোহা ভাগ্যক্রমে তামিমের সেই পাকা গুটি খেয়ে দিলো আর সাথে খুশিতে একটা চিৎকার দিলো। শান আর তামিম সোহার চিৎকারে ভয় পেয়ে যায়। শান সোহাকে হালকা ধমকের স্বরে বলে
” এই মেয়ে এই রাত বিরেতে এভাবে কেউ চিৎকার দেয় ! মানুষ কি ভাবব্দ ?” সোহা মুখ কুঁচকে বলে
” ইশশ ! আপনার জন্য দেখি এখন চিৎকারও দেওয়া যাবে না।” শান বিরক্তির সাথে বললো
” শোনো মেয়ে ! চিৎকার না দিয়েও খেলা যায়। চুপচাপ খেলো।” সোহা ভেংচি কেটে খেলা শুরু করে। তামিমের শেষ গুটি উঠাতে অনেক সময় লেগে যায় এরমধ্যে সোহা জিতেও গেলো। সোহা শানের ধমকের ভয়ে এবার আর চিৎকার দিলো না। তবে তামিমের মুখ দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে থাকে।
ইশান ছাঁদে আসতে আসতে বলে
” আমকে ছাড়াই সবাই আনন্দ করছো ? সবাই আমাকে ভুলে গেলে নাকি ?”
সোহা হেসে বলে
” আরে ভাইয়া তোমাকে ভুললে চলবে ? বসো বসো এখানে !” সোহা কিছুটা সরে বসে ইশানকে বসতে বললো। ইশান হেসে তার পাশে বসে লুডুর দিকে তাকিয়ে বলে
” বাহ ভালোই তো আয়োজন। তো আমি কি খেলতে পারি তোমাদের সাথে ?” তামিম কিছু বলার আগেই শান ফোড়ন কেটে বললো
” আমিও তাহলে খেলছি। অনেক দিন খেলা হয়নি।” তামিম উৎসাহিত হয়ে বললো
” তাহলে গ্রুপ হয়ে খেলি ! শান ভাইয়া আমার সাথে আর ইশান ভাইয়া মিষ্টিআপুর সাথে !” শানের কান জ্বলে উঠলো তামিমের কথায়। বেটা তাকে ফাঁসিয়ে নিজের দলে তো নিলোই আবার সোহাক্র মিষ্টিআপু বলে ডাকছে ! ভাবতে ভাবতে শান দাঁত কিড়মিড় করে তাকালো তামিমের দিকে কিন্তু তামিম সেটা দেখেও পাত্তা দিলো না উল্টো দাঁত কেলিয়ে হেসে দিলো।
খেলা শুরু হওয়ার আগে নিলা আর শাহানাজ বেগমও এসে পরলো তাদের খেলা দেখতে কিন্তু সবাইকে মিলে তাদের দুজনকেউ খেলায় যোগ দেওয়ায় আর আরেকটা গ্রুপ করে। তিনি গ্রুপের খেলা শুরু হয়। সোহা নাইসাকে খেলনা দিয়ে পাশে বসিয়ে রাখে। খেলায় কে জিতবে কে হারবে কিছুই বোঝা যায় না। সোহা বাদে এখানে সবাই মোটামুটি লুডু খেলায় পারদর্শী।
রাতের ডিনার শেষ করে সবাই যার যার রুমে চলে যায়। সোহা রুমে এসেই সিমি, সামিরের সাথে কথা বলে বাড়িতে কথা বলে নেয়। সকালে ইতির সাথে অনেক্ষণ কথা হয়েছে। শুধু সকালে নয় প্রায় প্রতিদিনই তাদের কথা হয়। শান রুমে ঢুকতেই টমির সাথে তার মুখোমুখি হয়। শান কোমড়ে হাত রেখে রাগি গলায় বলে
” কি ! কোথায় যাওয়া হচ্ছে আপনার ? গিয়ে নিজের জায়গায় ঘুমিয়ে পড়ুন নাহলে দরজা লক করে দেবো আর ভেতরে ঢুকতে দেবো না।” টমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে এদিক ওদিক করে বের হওয়ার সাহস করতে পারলো না। লেজ নেড়ে ঝুড়িতে গিয়ে বসে পরলো। সোহা রাগ দেখিয়ে বললো
” এই আপনার ভালো লাগে না ? আবার আমার টমিকে বকেছেন কেনো?”
শান গম্ভীর গলায় বললো
” তুমি কথা বললে এবার তোমাকে মাথায় তুলে আছাড় মারবো।” সোহা নাক ফুলিয়ে তাকালো। শান গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। সোহা লাগেজ খুলে তার কিছু খুঁজতে থাকে। শান সেটা দেখেই ভ্রু কুঁচকে নেয়। সোহাকে বললো
” তুমি এখনও তোমার জিনিস আলমারিতে রাখোনি কেনো ?” সোহা বোকার মতো তাকিয়ে বললো
” আপনি তো বলেননি কিছু।” শান রাগি গলায় বললো
” অদ্ভুত কথা তো ! এটা আমাকে বলে দিতে হবে ? সেন্স নেই তোমার ? তোমার জিনিসপত্র তো এই কাপবোর্ডেই রাখবে নাকি তোমার এটা তে হবে না ! আরেকটা কাপবোর্ড কিনে আনবো তোমার জন্য?” সোহা চোখ বড়বড় করে বললো
” আরে আমি সেটা কখন বললাম ! আপনিই তো একদিন বলেছিলেন আপনার আলমারি টাচ করতে না, তাই তো করিনি।” শান ভাবনায় পরে যায় সোহার কথায়। কিছুক্ষণ পর বুঝতে সক্ষম হলো সোহা কখনের কথা বলছে। শান বিরক্তস্বরে বললো
” তোমাকে ইচ্ছে করছে বারান্দা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই। এই কথা আমি বিয়ের আগে বলেছিলাম। আর এখন আমরা বিবাহিত। আমার প্রত্যেকটা জিনিসে তোমার অধিকার রয়েছে। সময় নষ্ট না করে সব কিছু কাপবোর্ডে গুছিয়ে রাখো।” সোহা যেনো আকাশের চাঁদ ধরার সুযোগ পেয়েছে। শান অন্যকিছু বলার আগেই সোহা লাফিয়ে কাপবোর্ড খুললো আর কেউ লক করা ড্রায়ারটা খোলার চেষ্টা করতে থাকে। শান মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে। এই মেয়ের মাথা থেকে এখনও এটার ভূত নামেনি। শান ল্যাপটপ সোফার উপর রেখে সোহার পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো
” ম্যাডাম এটা কখনো খুলতে পারবেন না। এটা লক করা। শোনো পুরো আলমারি লণ্ডভণ্ড করে দাও, দখল করে নাও কিচ্ছু বলবো না আমি। তবে এই ড্রয়ার দেখবে না এটাতে আমার অনেক ইম্পরট্যান্ট ফাইল থাকে তাই এটা দেখার মতো কিছু নেই।” সোহা মুখ ফুলিয়ে নেয়। লোকটা কি হ্যা ! সোহা শানকে কিছুতা বকে কাপবোর্ডে নিজের জিনিস গুছিয়ে রাখতে শুরু করে। শান আগে থেকে নিজের জিনিস একপাশে সরিয়ে রেখেছে তাই কোনো অভিযোগ রইলো না।
কাজ শেষ করে দুজন নিত্যদিনের মতো ঘুমিয়ে পরলো।
আজ সোহা প্রথম ভার্সিটিতে যাচ্ছে। কয়েকদিনে সোহার ভার্সিটিতে এডমিশন, বই কেনা এসবেই ব্যস্ত ছিলো। আজ ভার্সিটির প্রথম ক্লাস হবে ফার্স্ট ইয়ারের। ইতিরও আজ প্রথমদিন তাই সোহা আর শান, ইতিকে তাদের বাড়িতে আসতে বলেছে। প্রথম দিন নাহয় এক সঙ্গেই যাবে। শান গাড়ি বের করে দুজনকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
চলবে……….