#আধারে_তুমি,৪৫,৪৬
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৪৫
শানের গলা জড়িয়ে ধরে ঢুকড়ে কেঁদে উঠে সোহা। শানের চেহারায় বিস্ময়ের রেশের ছড়াছড়ি। শান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে চিন্তিত গলায় বললো
” সোহা ! এভাবে কাঁদছো কেনো ? আমি না আসায় তুমি কষ্ট পেয়েছো ? সরি সোহা আমি ইচ্ছে করে করিনি। আমি আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু কোনো ভাবেই আসতে পারিনি। সোহা ! কেঁদো না প্লিজ !” সোহা আরো শক্ত করে শানের গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। শান জোড় করে নিজের গলা ছাড়িয়ে সোহাকে সামনে বসিয়ে সোহার চোখে মুছিয়ে দিতে দিতে বললো
” তুমি ঘুরার জন্য এভবে কাঁদছো ? আমরা সত্যিই এবার ঘুরতে যাবো ঠিকাছে ? এখন কান্না বন্ধ করো।” সোহা ডানে বামে মাথা নেড়ে হিচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলে
” আ…মি ঘু..রার জন্য কাঁদছি না।” শান ভ্রু কুঁচকে বললো
” তাহলে কেনো কাঁদছো কেনো তুমি? আচ্ছা তুমি কি সকাল থেকে এখানেই বসে ছিলে ? তুমি দেখোনি ? তোমার জ্বর আবার বেড়েছে।” সোহা কোনো উত্তর না দিয়ে আবার শানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। শান বারবার জিজ্ঞেস করলেও সোহা উত্তর দেয়নি কোনো। সোহা কাঁদতে কাঁদতে আপন মনে ভাবতে থাকে
” এতোগুলো দিন ধরে লোকটা আমাকে আড়ালে ভালোবেসে গিয়েছে অথচ আমি একবারও বোঝার চেষ্টা করিনি। উনিও কোনোদিন আমাকে বুঝতে দেয়নি, শুধু ভালোই বেসে গিয়েছে। কখনো ভালোবাসার দাবি নিয়ে দাঁড়ায়নি আমার সামনে। এতো কেনো ভালোবাসে আমাকে ? একটা ডায়েরীর মাঝে তার ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতি দিয়ে প্রতিটি লিখা হৃদয় স্পর্শ করে গিয়েছে। এতো গভীর ভাবে কেউ কাউকে আড়াল থেকে ভালোবাসে জানতাম না।” সোহা মাথা তুলে অশ্রুসিক্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকালো শানের দিকে। চোখ থেকে বারবার পানি পড়ে যাচ্ছে, কান্নার সাথে হিচকিও এখনও থামেনি। শান সোহার চোখের পানি মুছিয়ে দিতে দিতে গম্ভীর গলায় বললো
” কিছু বলছোও না আর কান্নাও বন্ধ করছো না। কতো রাত হয়েছে খেলা আছে ? তুমি সকালের পর কিছু খাওনি কেনো এখনও ? তুমি বলবে কি হয়েছে ?” সোহা মাথা নেড়ে না করলো। শান রেগে গেলো কিন্তু কিছু বললো না। শান ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বললো
” চলো রুমে চলো। সারারাত এখানে বসে থাকা যাবে না।” সোহা কোনো রকমে উঠে দাঁড়ায় কিন্তু খুব জ্বর আর না খেয়ে থাকার কারণে দুর্বল শরীর নিয়ে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। সোহার মাথা ঘুরে উঠতেই সোহা পড়ে যেতে নিলে শান ভয় পেয়ে সোহাকে আগলে নেয়। সোহাকে বক্ষস্থলে আগলে নিয়ে বিচলিত কন্ঠে বললো
” সোহা ঠিকাছো তুমি ? সোহা !” সোহা পিটপিট করে চোখ খোলার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হলো। এবার পুরোপুরি জ্ঞান হারিয়ে শানের উপর ভর ছেড়ে দিলো। শান অস্থির হয়ে সোহাকে কোলে তুলে নেয়। অন্ধকারে আবৃত ব্যালকনি থেকে সোহাকে রুমে এনে বেডে শুইয়ে দেয়। শান সোহার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকালো। বিদ্ধস্ত চেহারায় কেঁদেকুটে চেহারার বেহাল দশা। চোখ মুখ ফুলে রয়েছে মুখে সকালের মেকাপ এক ফোটাও অবশিষ্ট নেই। চুলের খোঁপা খুলে গিয়েছে, সাদা বেলিফুলের গাজরাটাও বাদামি রঙ ধারণ করেছে। বেলিফুলের গাজরা চুলের সাথে কোনোরকমে আটকে রয়েছে। সকালের থেকে এখন একদমই অন্যরকম লাগছে। আর খুব সুন্দর লাগছে। কিউটনেসটা বেশিই মনে হচ্ছে।
শান সোহার অগোছালো শাড়ির দিকে তাকালো। জর্জেট কালো শাড়ি ভেদ করে সোহার পেট দেখা যাচ্ছে। শান চোখ সরিয়ে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে সোহার মুখের উপর ছিটিয়ে দেয়। দু একবার দেওয়ার পর সোহার চোখের পাপড়ি কিছুটা নড়েচড়ে উঠতে দেখে শান বিচলিত কন্ঠে সোহাকে ডাকলো
” সোহা!, সোহা চোখ খোলো !” সোহা পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায়। শানের দিকে তাকিয়ে উঠে বসতে নিলে শান উঠতে সাহায্য করে। শান থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মেপে চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। জ্বর আবারও ১০৩ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। শান অগ্নি চোখে তাকিয়ে বললো
” এভাবেই শরীর দুর্বল করে বসে থাকো তোমার আর ভালো হতে হবে না। একটু জ্বর কমেছিলো ম্যাডাম সেটাও আবার নিয়ে এসেছে তাও আবার ১০৩ ছিলো কমে গয়েছিলো কিন্তু এখন আবার ১০৩ হয়ে যাচ্ছে।”
সোহা দুর্বল হাসলো। সোহার হাসি দেখে শানের রাগ আকাশ ছুঁইছুঁই। শান রেগে ওয়াসরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ঢোকার আগে আদেশ শরূপ বলে গিয়েছে
” চুপ করে রেস্ট করবে। আমি না আসা পর্যন্ত বিছানা থেকে নামবে না।”
সোহা আধশোয়া হয়ে বসে থেকে চোখ বন্ধ করে নেয়। আজ শানের লিখা ডায়েরী দেখে কান্না ছাড়া আর কিছুই করেনি। ডায়েরীটা দেখে শান যে তাকে এতো ভালবাসে সেটা অবিশ্বাস্য লাগছিলো। শানের বিয়ের আগের সব বিহেভিয়ার দেখে সোহা ভেবেছিলো শান সোহাকে তখন সহ্য করতে পারতো না। বিয়ের পর সব ভুলে গেলেও আজকে তো সব ধারণাই পাল্টে দিয়েছে তার।
সোহা ব্যাথাতুর দৃষ্টিতে চোখ খুললো। এতো কান্না করায় মাথা ব্যাথায় জর্জরিত হয়ে রয়েছে। এরমাঝে দরজা খোলার শব্দ শুনে সোহা ওয়াসরুমের দিকে তাকালো। শান বেড়িয়েছে শাওয়ার নিয়ে। গায়ে শার্ট, টাওজার আর টাওয়াল দিয়ে চুল মুচছে। সোহা ভাবলো ছেলেটা টিশার্ট পরে না একদমই পড়লেও সেটা হঠাৎ একদিন। পুরো কাপবোর্ড ভর্তি খুঁজে সর্বোচ্চ তিনটি টি-শার্ট পাওয়া যাবে আর বাকি সব শুধু শার্ট আর হাতে গোণা কয়েকটা পাঞ্জাবী। সোহা ভাবনার মাঝে চোখ সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। দুই পা বাড়াতেই সোহা পড়ে যাবে ভেবে শান দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসলো। সোহাকে ধরে ধমক দিয়ে বললো
” ভালো লাগে না তোমার ? তোমাকে উঠতে না করেছিলাম না ? উঠেছো কেনো তুমি ? কি লাগবে?” সোহা কাচুমাচু করে বললো
” মাথা ব্যাথা করছিলো তাই ঔষধ আনতে যাচ্ছিলাম।” শান দাঁতে দাঁত চেপে বললো
” সারাদিন বসে বসে কাঁদলে মাথা ব্যাথা করবে না ?” সোহা ইনোসেন্ট ফেস করে তাকালো। শান সোহার মুখের সামনে থাকা দু একটা চুল কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে ধীর স্বরে বললো
” তোমাকে অন্যরকম লাগছে সোহা। সকালের এক রূপ আর এখন এক অসাধারণ অগোছালো অন্যরকম রূপ। তোমার এই রূপটা বড্ড টানছে আমাকে। এতো সুন্দর লাগছে কেনো তোমাকে বলো তো!”
সোহা শানের আরেকটু কাছে এগিয়ে গেলো। মিষ্টি হেসে বললো
” আমার কি মনে হয় জানেন ?
আপনি যাকে মন থেকে ভালোবাসবেন তাকে যেকোনো সাজেই আপনার কাছে অসাধারণ লাগবে। প্রিয় মানুষটাকে সবসময় অন্যরকম লাগবে আপনার কাছে। তাকে কারোর সঙ্গে তুলনা করতে পারবেন না। সে শুধু আপনার ভালোবাসার এবং প্রিয় মানুষ হয়েই থাকবে। যে কিনা সবার কাছে সাধারণ হলেও আপনার কাছে শুধু অন্যরকম।”
সোহার কথা শুনে শান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মিহি হেসে বললো
” অসাধারণ কথা বলেছো। কিন্তু আজ সোহা ম্যাডামের মুখে হঠাৎ ভালোবাসার নাম যে ? আগে তো কখনো ভালোবাসা নিয়ে কথা শুনিনি। আজ এতো সুন্দর কথা ? সোহা কি কারো প্রেমে পড়েছে ?” সোহা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বললো
” হয়তো প্রেমে পড়েছি।” শান অবিশ্বাস্য চোখ তাকালো সোহার দিকে। সোহা শানের চোখের দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলো। শান ঘোরের মাঝে হতবাক স্বরে বললো
” কার প্রেমে পরেছো তুমি ?” সোহা ভাবলেশহীন ভাবে বললো
” কি যেনো ! যার প্রেমে পরেছি সে আমার স্বপ্ন পুরুষ বুঝলেন ! তাই কে সেই স্বপ্ন পুরুষ সেটা এখনও খুঁজে পাইনি। শান হা করে তাকিয়ে থাকে। শানের আজ বিস্ময়ের শেষ সীমানা রইলো না সোহার কথা শুনে। সোহা শানকে অবাক হতে দেখে মনে মনে হাসলো পরমুহূর্তে দুর্বলতা ভর করতেই সোহা অসুস্থ গলায় বললো
” সরুন আমার মাথা ব্যাথা করছে আমি ঘুমিয়ে পড়বো।” শানের ঘোর কাটতেই ক্ষিপ্ত স্বরে বললো
” ঘুমাবে মানে ? এই অবস্থায় ঘুমাবে তুমি ? সকালে ব্রেকফাস্ট করেছিলে এরপর তো আর কিছুই খাওনি তার উপর কেঁদে মাথা ব্যাথা করে, জ্বর উঠিয়ে রেখেছো এখন ঘুমাবে তুমি ?”
সোহা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
” আর কি করবো ?” শান সোহাকে ধরে আবারও বিছানায় বসিয়ে দিলো। কাপবোর্ড থেকে সোহার জামা বের করতে করতে বললো
” এখন ফ্রেশ হবে, নিচে গিয়ে খাবার খাবে তারপর রেস্ট করবে।” সোহা যেতে না চাইলেও শান সোহাকে ওয়াসরুমে বসিয়ে রেখে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো
” তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি এখানেই দাঁড়িয়ে আছি। দেড়ি হলে আমি আজ তোমাকে হেল্প করবো।” ভেতর থেকে সোহা মুখ বাঁকালো শানের কথা শুনে।
ফ্রেশ হয়ে বের হতেই শান সোহাকে দেখে আলতো হেসে সোহার গালে অধর ছোঁয়ায়। সোহা লাজুক হাসি দেয়। সোহাকে নিয়ে নিচে চলে যায়।
চলবে……….
#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ৪৬
ফ্রেশ হয়ে বের হতেই শান সোহাকে দেখে আলতো হেসে সোহার গালে অধর ছোঁয়ায়। সোহা লাজুক হাসি দেয়। সোহাকে নিয়ে নিচে চলে যায়।
নিচে আসতেই শাহানাজ বেগম, নিলা, সিমি, নাইসা, সালমা সবাই ঘিরে ধরে তাকে। টমিও সারাদিন পর সোহাকে দেখতে পেয়ে ওর কোলে উঠে বসে থাকে। শাহানাজ বেগম রাগে রমরমা হয়ে বললো
” এখন তোর বের হতে ইচ্ছে করলো ? সারাদিন ধরে আমরা তোকে ডাকতে ডাকতে টেনশনে শেষ হয়ে গেলাম তাও মুখ পর্যন্ত দেখালো না মেয়ে। দরজা বন্ধ করেই বসে রইলো তুই ঢুকেছিস কিভাবে ?” মায়ের প্রশ্নক শুনে শান বললো
” আমি গিয়েই তো খোলা পেয়েছি।” সবাই চোখ ছোট ছোট করে তাকালে সোহা জোরপূর্বক হেসে বললো
” ওই… আমি উনার গাড়ির শব্দ পেয়ে খুলে দিয়েছিলাম।” নিলা অবাক হয়ে বললো
” তাই বলে আমাদের ঢুকতে দেবে না ? আমরা কতো টেনশন করছিলাম জানো ? তোমার আপু তো আরো বেশি টেনশন করছিলো।” সোহা সিমির দিকে তাকিয়ে মুখ ছোট করে নেয়। সবার উদ্দেশ্যে বললো
” সরি আর এমন করবো না।” সিমি সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই গায়ে জ্বর অনুভব করে আতকে বললো
” তোর দেখি আবার জ্বর উঠেছে।” শান গম্ভীর গলায় তাচ্ছিল্য করে বললো
” এই জ্বর নিয়েই তোমার বোন ব্যালকনির ফ্লোরে বসে ছিলো, ভাবি। তাও আবার সারাদিন ধরে।” শাহানাজ বেগম, নিলা, সিমি সবাই সোহাকে বকাঝকা করলো। বকা শেষে নিলা তাগাদা দিয়ে বললো
” তোমার আর বসে থাকা লাগবে না। চলো, গিয়ে টেবিলে বসো আমি খাবার দিচ্ছি।” শান এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো
” ১১টা বেজে যাচ্ছে বাবা, ভাইয়ারা কেউ আসেনি এখনও ?” সিমি বললো
” এসেছে সবাই ফ্রেশ হয়ে আসছে।” শান মাথা নেড়ে সোহাকে নিয়ে টেবিলে বসিয়ে দেয়। সোহার খাবার বেড়ে দিতে দিতে একে একে মুসফিক চৌধুরী, ইশান, সামির সবাই এসে পড়ে। সবাই খাওয়া শুরু করে। সোহাকে শাহানাজ বেগম খাইয়ে দিচ্ছে। শান খেতে খেতে সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। গলা ঝেড়ে বলে উঠে
” আমাকে কালকে একটা কেসের ব্যাপারে চট্টগ্রাম যেতে হবে। কতোদিন পর আসবো বলতে পারছি না।” সবাই খাওয়া বন্ধ করে শানের দিকে তাকায়। আর সোহা বিষম খেয়ে দম না নিয়ে কাশতে থাকে শানের কথায়। শান ব্যস্ত হয়ে সোহাকে পানি খাইয়ে দেয়। সোহার কাশি বন্ধ হলে সোহা শানের দিকে তাকালো। মুসফিক চৌধুরী খেতে খেতে বললো
” তো যাও বাধা দিচ্ছি না তবে সোহাকে নিয়ে যাবে।” শান সোহার দিকে একবার তাকিয়ে বললো
” বাবা আমি কেসের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি সোহাকে কি করে নিয়ে যাবো ? তার উপর সোহা এখনও অসুস্থ।” শাহানাজ বেগম সোহার মুখে খাবার দিতে দিতে বললো
” তো কি হয়েছে ? বিয়ের পর তো এখনও মেয়েটাকে কোথাও নিয়ে যাসনি। কালকে সোহাকে নিয়ে যাবি আর কাজ শেষ হলে কয়েকদিন ঘুরে আসবি। ঘুরাঘুরি করলে সোহারও মন ভালো হয়ে যাবে সুস্থও হয়ে যাবে।” সোহা শানের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকায় শানের উত্তরের আশায়। শান মাথা নেড়ে বললো
” ঠিকাছে নিয়ে যাবো। কালকে সকালেই বেড়িয়ে যাবো আমরা।”
সোহা অর্ধেক খাবার খেয়ে আর খেতে পারলো না। ইশান সোহাকে বললো
” তোকে সোহার জন্য যেই মেডিসিন দিয়েছিলাম সেগুলো খাইয়ে ছিলি ? মেডিসিন খেলে তো ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা।” নিলা আড়চোখে সোহার দিকে তাকিয়ে বললো
” তোমার গুনোধর বোন সারাদিন ঘরের দরজা আটকে বসে ছিলো। মেডিসিন খাওয়া তো দূড় খাবারই খায়নি সারাদিন। শান এসে সোহাকে বের করতে পেরেছে। সারাদিন নাকি জ্বর নিয়ে ব্ল্যাকনিতে বসে ছিলো।” ইশান রাগি চোখে সোহার দিকে তাকায়। সামির ভ্রু কুঁচকে বললো
” কেনো সোহা ? কিছু কি হয়েছে ? এভাবে দরজা বন্ধ করে বসে ছিলে কেনো ?” সোহা আমতা আমতা করে বললো
” মাথা ব্যাথা ছিলো তাই আর রুম থেকে বের হতে ইচ্ছে করেনি।” ইশান ঝাঁঝালো স্বরে বললো
” তাই বলে না খেয়ে থাকবে নাকি ? সব কিছুর এতো অবহেলা করে করে নিজেরই ক্ষতি করছো। শোনো ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করবে নাহলে পরের বার অসুস্থ হলে মেডিসিনএর নাম লিখে দেওয়ার সাথে হসপিটালাইজডও করে দেবো।তারপর সারাবছর সেখানেই থাকবে তুমি।” সোহা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। টমি সোহার মন খারাপ দেখে নাইসার কোল থেকে নেমে সোহার কোলে এসে বসে।
রুমে এসে শান সোহাকে মেডিসিন খাইয়ে দেয়। সোহা সব পিল নিয়ে বসে ছিলো। এতো গুলো ঔষধ খেতে হয় দেখে খাবে না বলেছিলো শান ধমক দিয়ে খাইয়েছে। সোহা শুয়ে গেলে শান লাইট অফ করে সোহার পাশে শুয়ে পড়লো। সোহার মাথার হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। শানের হাত সরিয়ে সোহা ধীরেধীরে সোহার কাছে এসে শানের বুকে মুখ লুকিয়ে শুয়ে থাকে। শান অন্ধকারে মুচকি হেসে সোহাকে জড়িয়ে ধরে মাথা হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
সকাল হয়ে যেতে সোহা, শান ব্যাগপত্র গুছিয়ে বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। মুসফিক চৌধুরী আর শাহানাজ বেগম বলেছে পথিমধ্যে সোহা আর শান যেনো ইমতিয়াজ রহমান এবং রিয়ানা রহমানের সাথে দেখা করে যায়। সোহা আর শান তাদের সাথে দেখা করেই বেড়িয়ে যায়। সাথে ইমনও যাচ্ছে তাকে নিয়ে
চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলো তারা।
তিনজনই হাসিমজা করে গেলো। রাস্তায় সোহা বমি করে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
চট্টগ্রামে পৌঁছতেই তারা তাদের জন্য ঠিক করা হোটেলে দুটো রুম ঠিক করে রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
সোহা হোটেল রুমের ব্যালকনি থেকে ঘুরে এসে বসে থাকে। শান ইতিমধ্যে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছে। সোহা শানের দিকে তাকিয়ে বললো
” আজকেই বের হবেন ?” শান হাতের ঘড়ি পড়তে পড়তে বললো
” হুম। এসেছিই তো কেসের উদ্দেশ্যে। কেস শেষ করি আগে তারপর নাহয় হানিমুন হবে। কি বলো !” সোহা লজ্জা পেয়ে মাথা নুইয়ে হাসলো শানের কথায়। শান সোহার সামনে বসে শান্ত ভাবে বললো
” আমি সেই গ্যাং এর কেস এর উদ্দেশ্যেই আমরা এখানে এসেছি। তারা এখানেই রয়েছে তাই তুমি সাবধানে থাকবে। তোমার খবর পেলে ক্রিমিনালরা হয়তো আমার অনুপস্থিতিতে তোমাকে অপহরণ করার জন্য বা ক্ষতি করার জন্য আসবে তাই সাবধানে থাকবে। আমি ম্যানেজারের সাথে কথা বলবো। সার্ভেন্ট বা রুম সার্ভিসরা কেউ আসলে আগে তোমাকে ল্যান্ডলাইনে ফোন করবে। কথা বলে তারপর দরজা খুলবে। আর আমি আসলে তো আমার কাছে চাবিই রয়েছে। ভয় লাগলে বাড়িতে ফোন করে কথা বলবে।” সোহা মাথা নেড়ে সায় দেয়। শান বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে যায়।
পরদিন সকাল হতেই শান আর ইমন বেড়িয়ে পড়ে। গ্যাং দের মূল লোকেশন জানতে পেরেছে । আজই সবাইকে ধরে ফেলবে কিন্তু অর্ধেক রাস্তায় আসতেই পরপর দুটো গাড়ি যেতে দেখলো উল্টো রাস্তায় যেদিন থেকে শানরা এসেছে। শান গাড়ির ড্রাইভারকে দেখতে পেয়ে চমকে উঠে। সাথে সাথে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। ইমন আতকে বলে উঠে
” আরে কি করছিস কি ? গাড়ি ঘুরাচ্ছিস কেনো ? এখন যাওয়াটা ইম্পরট্যান্ট আমাদের জন্য।”
শান গাড়ি ঘুরিয়ে স্প্রিডে গাড়ি চালাতে চালাতে বললো
” থানায় জানিয়ে দে এখনই কিছু পুলিশ ফোর্স লাগবে আমাদের আর আমাদের লোকেশন দেখে আসতে।” ইমন জলদি করে এখাননের থানায় ফোন করলো। শান স্প্রিডে গাড়ি চালিয়ে সেই গাড়ি গুলোকে পিছু ধরতে পারে। তারা শানের হোটেলের সামনেই গিয়ে গাড়ি থামিয়ে হোটেলে ঢুকে গেলো। ইমনও ওদের দেখে বুঝে গেলো এরাই সেই গ্যাং এর লোকজন। ইমন আর শান দৌঁড়ে হোটেলে ঢুকলো। ভেতরে ঢুকতেই সবাইকে একে একে লিফটের ভেতরে ঢুকতে দেখে। শান ম্যানেজারের সাথে আড়ালে গিয়ে বললো
” এখনি লিফট অফ করে দিন কিছুক্ষণের জন্য। আর সব রুমে ফোন করে বলেদিন কেউ যাতে এখন রুম থেকে বের না হয়। এখানে একটু ঝামেলা হবে পুলিশও আসবে। আরো অনেক কিছু হবে তাই কেউ যাত বাইরে না থাকে।” ম্যানেজার গিয়ে দৌঁড়ে চলে যায় লিফট আটকে দেওয়ার জন্য শান ইমনকে নিয়ে সিরি দিয়ে উপর চলে গেলো সোহার কাছে যাওয়ার জন্য।
চলবে………